মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৫১
মুসতারিন মুসাররাত
মূহুর্তেই টকটকে লাল র*ক্তে সাদা টাইলস ভেসে যেতে লাগল। প্রীতির বাহু থেকে গলগল করে র*ক্ত ছিটকে বেরোচ্ছে। সার্থক ফ্লোরে বসে দু’হাত দিয়ে বোনকে আঁকড়ে ধরল। তার সাদা শার্ট বোনের র*ক্তে ভিজে চপচপে হয়ে গেল। কাঁপা হাতে প্রীতির গালে হাত বুলিয়ে বলল। কণ্ঠ ভারী হয়ে উঠল,
-” প্রীতি বোন আমার কষ্ট হচ্ছে? খুব কষ্ট হচ্ছে, না? ভাইয়া এখানে আছে। তোর পাশে আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি এক্ষুনি তোকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। একদম কষ্ট পেতে দিবো না। একটু সহ্য কর।”
প্রীতির চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। ঘন পাপড়িগুলো নিভুনিভু হয়ে বুঁজে আসতে চাইছে। ব্যথায় ভেতরটা মুষড়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস ভারী হতে হতে থেমে যাচ্ছে যেন। হা করে শ্বাসটুকু টেনে নিতে চাইল। হঠাৎই শরীর নিস্তেজ হয়ে গেল। বোনের গাল আলতো করে চাপড়ে অস্থির গলায় বলল সার্থক,
-” প্রীতি, প্রীতি তাকা। বোন আমার শোন ভাইয়া আছি তো তোর পাশে।”
এক ঝটকায় বোনের নিস্তেজ শরীরটা বুকের সাথে আঁকড়ে ধরল সার্থক। চোখের কোল ঘেঁষে দুফোঁটা নোনতা জল গড়িয়ে পড়ল। উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ।
নীরবের বুক থেকে ধীরেধীরে মাথাটা তুলল প্রত্যাশা। ঘাড়টা কিঞ্চিৎ ঘুরিয়ে প্রীতির নিস্তেজ দেহটা দেখেই বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠল। নীরবের একটা হাত এখনো প্রত্যাশার হাতে রোমালটা চেপে ধরে আছে। প্রত্যাশার হাতে রোমালটা সযত্নে পেঁচিয়ে দিল নীরব। অতঃপর পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল করল। রিসিভ হতেই কণ্ঠে আদেশ নামিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” এএসপি নীরব মাহবুব স্পিকিং, ইমার্জেন্সি কেস। আই নিড আন অ্যাম্বুলেন্স ইমিডেটলি। লোকেশন…।”
কী থেকে কী হয়ে গেল উপস্থিত সবাই যেন এখনো ধাতস্থ করতে পারছে না। সার্থক পালস রেট চেক করল। চলছে খুব ক্ষীণ। প্রীতি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। রক্তক্ষরণ থামছেই না। সার্থক বোনের হাতটা নেড়েচেড়ে দেখতে নিল। বুকের ভেতরটা কষ্টে ভেঙে যাচ্ছে ওর। বোনের হাত ধরে মুখ উঁচিয়ে অসহায় স্বরে বলল,
-” প্লীজ, এক টুকরো সুতি কাপড় দিন। জাস্ট আ পিস।”
যদিও প্রীতির উপর এতক্ষণ ঘৃ*ণা হচ্ছিল। তবুও এহেন দৃশ্যে খারাপ লাগছে। শর্মিলা দ্রুত একটি সুতির ওড়না এগিয়ে দিল। সার্থক বোনের ক্ষ*ত স্থানে চেপে ধরল। বলল,
-” বুলেটটা হাড়ে আটকে গেছে মেবি। কুইকলি, হাসপাতালে নিতে হবে। ওটি রেডি করতে হবে। আমি এক্ষুনি ফোন করে সব ব্যবস্থা করব।”
এই বলে বাম হাত দিয়ে ফোন বের করতে নেয় সার্থক। নীরব থামিয়ে দিল। বলল,
-” স্টপ, তুমি কিছু করার চেষ্টা করো না। সব হবে অফিশিয়ালি। ওকে মেডিকেলে নেয়া হবে।”
সার্থক তড়িৎ বলল,
-” মেডিক্যালে নিলে সময় লাগবে। ওখানে চিকিৎসা ডিলে হয়। এতে ক্ষ*তি হতে পারে। ইমার্জেন্সি বুলেট রিমুভাল না করলে হাতটা ফরএভার ড্যামেজ হওয়ার শঙ্কা থাকে। তারপর বুলেট যদি ধমনিতে লাগে, এক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য লাইফ রিস্ক হাই।”
কথাটা বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠল সার্থকের। এক মূহুর্ত থেমে ফের আকুল হয়ে অনুরোধ করল,
-” নীরব অন মাই রিকুয়েস্ট, প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোক। প্রীতি অনেক আদরের আমার। ছোট থেকেই ও যা চেয়েছে তাইই দেয়া হয়েছে। চাওয়ার সাথে সাথেই ওর আবদার পূরণ করা হয়েছে। ওর জন্য বেস্টটাই দেয়া হয়েছে। কোনো কিছুর জন্য ওকে কষ্ট দেয়া হয়নি। অথচ আমার মনেহয় সবার অগোচরে ও খুব বেশিই কষ্ট পেয়েছে। কষ্টে থেকেছে। প্রীতির ভুলগুলোকে আমি উপেক্ষা করছি না। তবুও একজন ভাই হিসেবে বোনের জন্য এতটুকু চাওয়া অপরাধ নয়; সী নিডস বেস্ট কেয়ার।”
নীরব ঠাণ্ডা কণ্ঠে প্রত্যুত্তরে বলে,
-” সী ইজ আন অ্যাকিউজড। এখন যা হবে, তা আইন দেখবে।”
সার্থক ব্যাকুল চিত্তে বলল,
-” আমি জানি সে ভুল করেছে, কিন্তু চোখের সামনে আমার আদরের বোন কষ্ট পেতে পারে না। আই ওয়ান্ট দ্য বেস্ট ফর হার, প্লীজ।”
নীরব সোজাসুজি বলল,
-” রুলস আর রুলস। নো এক্সকিউজ।”
নীরবের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় কিছু বোঝাতে চাইল প্রত্যাশা। নিঃশব্দে যেন রিকুয়েস্ট রাখল। হঠাৎ নিহারিকা বলে উঠলেন,
-” নীরব আমি চাই না আমার ছেলের হাতে কারো প্রাণ যাক। ওর অপরাধ কম নয়। শাস্তি হোক, তবে মৃ*ত্যু নয়। আজ ওর প্রাণ গেলে কোনো না কোনোদিন ইচ্ছে তোকে ভুল বুঝবে। কারন মানুষ না থাকলে তার করা ভুলও কেমন জানি ঢাকা পরে যায়। তার পা*পের কথা ভুলে তার অসহায়ত্বের কথাই স্মরণে আসে। তাই বলছি, যা করলে ভালো হয় তাই করিস। আর উপরওয়ালা তো আছেনই। যার যার কৃতকর্মের ফল তাকে দিবেন। ইহকালে সাময়িক ছাড় দিলেও পরকালে ঠিকই পাকড়াও করা হবে।”
এরমধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে পরে। প্রীতির মুখে অক্সিজেন মাস্ক, স্ট্রেচারে নিস্তেজ দেহটা পরে আছে। একটা হাত ঝুলছে। সার্থক সাথে যেতে চাইলে নীরব বাঁধা দেয়। সার্থক হাতজোড় করে বলল,
-” প্লীজ নীরব,অন্তত ওটি পর্যন্ত আমাকে এলাউ করো। আমি থাকতে চাই।”
নীরব সোজাসাপ্টা বলল,
-” নো ওয়ে।”
তারপর ড্রাইভারকে যেতে ইশারা করতেই অ্যাম্বুলেন্স শব্দ তুলে ছুটতে থাকে। এক অসহায় ভাই ভেজা চোখে তাকিয়ে রইল যতদূর দেখা গেল। জীবনে এর থেকে বেশি কখনো নিজেকে অসহায় লাগেনি সার্থকের। বোনের র*ক্তে মেখে আছে শার্ট, হাতজোড়া। র*ক্তে মাখা হাতজোড়া সামনে তুলল। চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল। মনে হচ্ছে বোনকে এই র*ক্তে মাখা দু’টো হাতেই একটু আদর করতে পারলে অশান্ত মনটা একটু শান্ত হতো।
অসহায় হৃদয় নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন রাখল—আর কী কখনো বোনের সাথে বসে একসাথে নাস্তা করা হবে না? ব্রো বলে ডাকটা কী আর শোনা যাবে না?
গলার কাছে নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে সার্থকের। প্রীতির বলা একটা কথা কানে বাজছে,
-” ভাইয়া তুই খুব মহান, আমি আবার তোর মতো মহান নই।”
সার্থক হাঁটু ভেঙে ধপ করে বসে পড়ল। হাঁটুদ্বয় মাটিতে ঠেকল। মুখটা উঁচিয়ে আকাশের দিকে একপল তাকাল। সমস্ত প্রার্থণা মহান রবের কাছে রাখল। পরপর একহাতে কিছু চুল মুষ্টিবদ্ধ করে দৃষ্টি নিচু করল। নিঃশব্দে বুকের ভেতর থেকে আর্তনাদ, অসহায়ত্ব বেরিয়ে এল,
-” প্রীতি, একটু মহান যদি তুই হওয়ার চেষ্টাটুকু করতিস না, তাহলে আর কিছু না হলেও অন্তত সুখী হতিস তুই। আফসোস সুখ যেন তোর ভাগ্যেই নেই। সব থেকেও শুণ্য তুই। অবশ্য তোর একার দোষ না। তোকে বোঝানো দূর, তোকে উস্কানো হয়েছে। খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ভাই হিসেবে লজ্জিত আমি। নিজের বোনকে বোঝাতে পারিনি, সঠিক পথে আনার চেষ্টাটুকু করা হয়নি। এটা শুধুই আমার ব্যর্থতা নয়, এটা আমার অন্যায়।”
অ্যাম্বুলেন্সে ওসিসহ লেডি কনস্টেবলও আছে। নীরব বাইকে বসতে বসতে ফোন করল। সময় ব্যয় অন্যান্য ঝামেলা ছাড়াই ট্রিটমেন্ট দেয়ার কথা বলা হয়। ওদিকে বারবার ফোন আসছে। নীরব ছুটল সেখানে।
এক পলকের এক দেখাতেই প্রীতির মন ধস করে সেদিন পিছলে পড়ে। নীরবের দাঁড়ানোর ভঙ্গি, চোখেমুখে সাহসী নির্লিপ্ত ভাব, অতি সুদর্শন একজন যুবকের এসব কিছু প্রীতিকে অদ্ভুতভাবে টেনে নেয়। ধীরেধীরে সেই টান আরও প্রবল হয়। শেষ পর্যন্ত নিজের অহংকার ভেঙে, জেদি আর দাম্ভিক প্রীতিই নিজ থেকে প্রপোজ করে নীরবকে। কিন্তু নীরব সরাসরি রিজেক্ট করে। ভার্সিটির আ*গু*ণ সুন্দরী, ওভার স্মার্ট, কথা বলার সময় দাম্ভিকতা, অহংকার চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরে। দিনে কয়টা প্রপোজাল পায় হিসেব নেই। কেউ তাকে রিজেক্ট করতে পারে দাম্ভিক প্রীতি তা ভাবতেই পারেনি। নীরবের বন্ধুরা বিষয়টা নিয়ে হাসাহাসি করে, মজা নেয়, যা প্রীতির আত্মসম্মানে গভীর আ”ঘাত হানে। রিজেকশন প্রীতি কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। একদিন এক বান্ধবী ঠাট্টার ছলে বলে ওঠে,
-” নীরবকে ভুলে যা দোস্ত, ও খুব রিজার্ভ টাইপ। তবে ওর জমজ ভাই নীবিড় কিন্তু আলাদা। একটা চান্স নিতে পারিস। দেখতে তো একই, তাহলে আর প্রব্লেম কী?”
প্রীতি কথাটা মনে গেঁথে ফেলে। সিদ্ধান্ত নেয় নীরবের স্ট্যান্ড ইন হিসেবে তার ভাই নীবিড়কে টার্গেট করবে। দেখতে তো একই। ফিলিংস সৃষ্টি হতেও পারে। সেটা না হলেও ব্যাপার না। প্রেমে ফেলে ছুঁড়ে দেবে। যাতে একটু হলেও নীরব বুঝতে পারে প্রীতি কী জিনিস! তাকে রিজেক্ট করেছিল না, তার ভাইকে প্রেমের জলে হাবুডুবু খাইয়ে ছেড়ে দিবে। কিছুটা হলেও নীরবের রিজেকশনের শাস্তি দেয়া যাবে।
এরপর থেকে ক্যাম্পাসে নীবিড়কে দেখলে আলতো চাহনি, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানো, ঠোঁটে হালকা হাসি এসব দিয়ে ধীরেধীরে প্রভাবিত করতে থাকে প্রীতি। দুদিন পরেই সরাসরি নীরবের সামনে দাঁড়িয়ে ‘স্যরি’ বলে জানায় প্রীতি— আসলে তার পছন্দ নীরব নয় নীবিড়। জমজ বলে ভুল করে প্রপোজ করেছে।
এদিকে ধীরেধীরে প্রীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে নীবিড়। প্রীতির গ্রিন সিগন্যালে সাড়া দিয়ে দু’জনে রিলেশনে যায়। ক-মাসের মধ্যেই প্রীতির মা তানিয়ার কানে আসে মেয়ের প্রেমের খবর। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, নীরব আর নীবিড় হচ্ছে মাহবুব সিদ্দিকী ও নীহারিকার ছেলে। এটা জেনে তার বহু পুরোনো ক্ষত আবারও জেগে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করেন, তার জমজ বোনের মৃ*ত্যুর জন্য দায়ী মাহবুব সিদ্দিকী আর নীহারিকা। মনে করেন, ওরাই আ*গুন লাগিয়ে তার বোনকে মে*রেছিলো। সেই দিনের স্মৃতি আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। বোনের অকাল মৃ*ত্যুতে আজও তার চোখের জল শুকোয়নি।
এই আক্রোশ থেকেই তানিয়া পরিকল্পনা করেন– মেয়ে যদি নীবিড়কে বিয়ে করে ওই পরিবারে ঢোকে, তাহলে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ আসবে। ওই পরিবার কীভাবে ঘুরে দাঁড়াল তানিয়ার বোধগম্য হয় না। তাদের সুখশান্তি তানিয়ার সহ্য হলো না। প্রীতির সাথে নীবিড়ের বিয়ের কথা বলতেই প্রীতি সাথে সাথে নাকোচ করে। প্রীতি বলে— নীবিড়কে বিয়ে করা অসম্ভব মা। নীবিড়ের প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই। ওরা দু’জন দেখতে এক হলেও, কথা বলা, চলার ভঙি, এটিটিউড সব ভিন্ন। নীরবের সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করে। নীবিড়ের মাঝে মুগ্ধতা খুঁজতে গিয়েও ব্যর্থ হই। যার প্রতি ফিলিংস নেই তাকে বিয়ে করা প্রীতির জন্য ইম্পসিবল।
ভালো স্টুডেন্ট, দেখতেও সুদর্শন। এমন একটা ছেলে মেয়ের জামাই হলে মন্দ হয় না। এদিকে উদ্দেশ্য ওদের জমজ সন্তানকে আলাদা করা। একজন সন্তানকে আলাদা করলে মাহবুব-নীহারিকা বুঝবে আরেক জনকে আঁকড়ে ধরা কতটা কষ্টের। একসাথে সবই হবে। এইভেবে মেয়েকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। বোঝাতে থাকেন— বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মায়ের বোঝানোতে একসময় প্রীতি সত্যি সত্যিই নীবিড়কে স্ট্যান্ড ইন হিসেবে নিতে চায়। যদি বিয়ের পর ঠিক হয়ে যায়। তাছাড়া নীরব আসলেই রিজার্ভ টাইপ। এরকম না হলে তার মতো সুন্দরী মেয়েকে রিজেক্ট করে।
এদিকে প্রীতির মা নীবিড়কে ডেকে বিয়ের কথা বলেন। স্টুডেন্ট, কিছু করে না। তাই এখনই বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয় নীবিড়। তানিয়া বলেন– প্রীতিকে নেয়ার জন্য তাদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে লাইন পরে গেছে। কেউ কেউ খুব জোর করছে। এক আত্মীয়ের ছেলে বুয়েট থেকে পড়াশোনা কমপ্লিট করেছে ইউএসএ থাকে। তারা এক প্রকার প্রেশার দিচ্ছে। নাও করতে পারছি না। প্রীতি যেহেতু তোমাকে পছন্দ করে, তাই।
ভালোবাসায় উন্মাদ নীবিড় বাবা-মাকে ম্যানেজ করে আনে। কিন্তু ঘটনা উল্টো ঘটল। প্রীতির মা’কে দেখেই নীহারিকা শকড্ খায়। কোনোকিছু না দেখেই উনি উনার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। ডিসিশন ফাইনাল— এই বাড়ির মেয়েকে মানতে পারবেন না।
নীরবের রিজেক্ট, নীহারিকার এমন কথা সবকিছু মিলিয়ে প্রীতির জেদ হলো এবার। এই পরিবারে আছে টা কী? তাকে রিজেক্ট করছে। প্রীতি এবারে নিজেই জিদ হিসেবে নেয়— নীবিড়কে বিয়ে করে ছাড়বেই।
বিয়ে ঠিকই হলো। তবে মায়ের কথার অমান্য করে নীবিড়কে বাড়ি ছাড়তে হলো। তানিয়ার প্ল্যানে নীহারিকা বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি ঢেলে দেয়। তানিয়া মেয়েকে কান পড়া দিলেন, ওই নীহারিকার জিদ ভাঙতে হবে। প্রীতি ও বাড়ির চৌকাঠ মারিয়ে একদিন প্রবেশ করবেই। প্রীতিকে নীবিড়কে মানিয়ে নিতে বলেন। নীবিড় হলে থেকে টিউশনি করে পড়াশোনা চালাতে থাকে। প্রীতি নিজ বাড়িতে থাকে। বিয়ে হলেও কাছে যেতে চাইলে প্রীতি শরীর খারাপ লাগছে, অসুস্থ এটাসেটা অজুহাত দিতো। তবে পরবর্তীতে প্রীতির অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাছে আসা হতো। প্রীতির কাছে স্পর্শগুলো সুখকর লাগতো না। অসহ্য লাগতো।
তারপর ইচ্ছের আসার বার্তা পায়। প্রীতি অ্যাবরশন করতে চায়। তানিয়া বাঁধা দেয়। বাচ্চাটা থাকলে ওই বাড়ি যাওয়া সহজ হবে।
এরপর অনার্স কমপ্লিট করেই নীবিড় কর্পোরেট জবে ঢোকে। এক বছর বয়সী মেয়েসহ প্রীতিকে বাসায় নেয়। প্রীতি মন থেকে নীবিড়কে মানতে পারেনি। তবুও কিছুটা অভিনয় করে একসাথে থাকে। প্রীতি মেয়ের প্রতি উদাসীন, নীবিড়কেও এড়িয়ে যেতে একটা প্রজেক্টে ঢোকে। সারাদিন অফিশিয়াল কাজে ডুবিয়ে রাখতে চায় নিজেকে। নীবিড় ভাবে প্রীতি জব করে তাই অন্যান্য মেয়েদের থেকে একটু আলাদা। সংসারে সময় দিতে পারে না। আয়া রাখা হয় ইচ্ছের জন্য। নীবিড় মেয়েকে সময় দেয়। অফিশিয়াল কাজ শেষ করেই বাসায় চলে আসে। ইচ্ছে বড় হতে থাকে, পাপার নেওটা হয় সে। নীবিড়ও মেয়েকে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
এদিকে প্রীতি নীবিড়কে মেনে নিতে চেয়েও পারে না। তার মন আজও যেন নীরবে পরে আছে। মনেহয়— কারো পূর্ণতা তার মতো কাউকে দিয়েও হয় না। আসলে তার পূর্ণতা তো কেবল সে নিজেই হয়, অন্যকেউ নয়।
নীবিড়ও ধীরেধীরে উপলব্ধি করে প্রীতির মন তার উপর নেই। কিছু একটা সমস্যা আছে। তারপরেও মেয়েটাকে নিয়ে দিন চলছিল। ইচ্ছের বয়স যখন চার বছর। সেইসময় প্রীতিদের বাড়িতে এসে নীবিড়ের তানিয়ার উপর সন্দেহ হয়। স্টোররুমে কিছু একটা আছে। পরপর দু’দিন রাতে তানিয়াকে বের হতে দেখা যায়। নীবিড় ফলো করছে এটা দেখেই তানিয়া তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তার গোপন খবর আজ পর্যন্ত ঘরের ছেলে-মেয়েকে জানতে দেয়নি। আর এ সন্দেহ করে বসল। তিনদিন থেকেই চট্টগ্রামে নীবিড়দের চলে যেতে হয়। এরমধ্যে কিছুদিন পর তানিয়া ঘুরতে যায় মেয়ের কাছে। সরাসরি কিছু করলে সমস্যা হতে পারে, এদিকে নীরব ট্রেনিংয়ে আছে। মাহবুব পরিবার এখন বেশ ক্ষমতাশালী। ছেলে পুলিশের অফিসার। তাই যা করতে হবে বুদ্ধি দিয়ে। ড্রাগ যাদের ব্যবসা সেই ড্রাগই বানালেন হাতিয়ার। সুকৌশলে খাবারের মাধ্যমে নীবিড়কে দেয়া হয়। তানিয়া মাসখানেক মেয়ের বাসায় থাকেন। প্রীতি একদিন মা’কে দেখে ফেলে। তবে নীবিড়ের প্রতি অনুভূতি না থাকায় কিছুই বলে না। মনেহয় লাইফে নীবিড়ের উপস্থিতি না থাকলেই বোধহয় বেটার হবে।
ছ-সাত মাসের ব্যবধানেই নীবিড় অসুস্থ হয়ে পরে। নীরব ট্রেনিং শেষ করে ভাইয়ের অসুস্থতার কথা শুনে আসে। এদিকে ছোট্ট ইচ্ছেও বাবাকে আগের মতো না পেয়ে ধীরেধীরে ট্রমায় চলে যেতে থাকে। নীবিড়কে হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে ইচ্ছে মানসিক ট্রমায় চলে যায়। নীরবকে ফাস্ট দেখে ইচ্ছে পাপা ডেকে ওঠে। তারপর একদিন ডক্টর বলেন— জমজ হওয়ার জন্য ইচ্ছে যেহেতু আপনাকে পাপা ভাবে। আপনার সংস্পর্শে থাকলে হাসে,কথা বলে। তাই কয়েকমাস এভাবেই চলুন। এটাও একটা থেরাপি।
প্রীতি পাপীষ্ঠ মন তো সেই নীরবেই আঁটকে আছে। তারপর নীরবের সাথে প্রত্যাশাকে সহ্য হতো না। সেই থেকে পাপের পরিমাণ বাড়তে লাগল। তবে পা*পে যে ধ্বং*স অনিবার্য। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আজ স্বয়ং প্রীতি। চাইলেই লাইফটা সুন্দর করে সাজানো যেতো।
অভিযান শুরুর পূর্বে নিরাপত্তাজনিত কারণ, এবং সকল প্রকার তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ করতে খান বাড়ির বিদ্যুৎসহ সকল নেটওয়ার্ক সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বস্তা ভর্তি টাকা, স্টোররুমের গোপন সিক্রেট কক্ষ থেকে ড্রাগও পাওয়া যায়। এখনো তল্লাশি চলছে।
তানিয়া হুইলচেয়ারে মাথা নত করে বসে। হাতে হ্যান্ডকাফ। দুজন লেডি কনস্টেবল পাশেই ঘিরে দাঁড়িয়ে। নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় কোনো আপডেটই আর পায়নি তানিয়া। এরমধ্যে আচমকা পুলিশ ফোর্সের আগমনে ভড়কে যান। বাড়ির গার্ডরা পুলিশের জিম্মায়। বাইরে কোনো খবরও পৌঁছানোর সময়টুকু পাওয়া যায়নি। লহমায় সব যেন হাতের বাইরে চলে গেছে।
গটগট পা ফেলে গম্ভীর মুখে ভেতরে ঢুকল নীরব। তানভীর তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসে স্যালুট ঠুকল। নীরব সোজা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
-” ইচ্ছে কোথায়?”
তানভীর দ্রুত জবাব দিল,
-” স্যার, ইচ্ছেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উপরে আছে। ওর সাথে ওকে দেখার আয়াটা আছে। আর একজন লেডি কনস্টেবলকেও রাখা হয়েছে নজরদারির জন্য।”
নীরব মাথা নাড়ল। ঠাণ্ডা গলায় বলল,
-” গুড।”
সামনে এগোতেই তানভীরের কথায় থেমে যায় নীরব। কপালে ভাঁজ ফেলে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,
-” স্যার, আপনার ইউনিফর্মে ব্লাড। আ”ঘা”ত পেয়েছেন নাকি?”
পিঠের দিক ইশারা করতেই নীরব এক সেকেন্ডে বুঝে নিল। প্রত্যাশার হাতের র*ক্ত লেগে আছে। সংক্ষিপ্ত এক শব্দে উত্তর দিল নীরব,
-” না।”
বাড়তি শব্দ উচ্চারণ না করে এগিয়ে এসে তানিয়ার সামনে গিয়ে সোফায় বসল নীরব। পায়ের উপর পা-টা তুলে আরাম করে বসল। ভ্রুতে তির্যক ভাঁজ, ঠোঁটে বাঁকা ব্যঙ্গের রেখা। বলল স্পষ্ট গলায়,
-” মিসেস খান গেম ওভার। অনেক খেলেছেন ছলচাতুরি, অনেক জমিয়েছেন পাপের হিসাব। এবার আপনার জন্য আলাদা আসন রেডি জেলের চার দেয়ালের ভেতর। আত্মীয়স্বজনের খাতিরে একটু বাড়তি যত্নের ব্যবস্থা অবশ্য করিয়ে দেব। চিন্তা নেই।”
তানিয়া ধীরে মাথা তুলল। চোখে আ*গু*নের দ্যুতি। অথচ শীতল কণ্ঠে বলল,
-” খানদের খেল কোনোদিন শেষ হয় না, অফিসার। শুধু সময়ের সাথে সাথে হাতবদল হয়।”
নীরব ঠাণ্ডা হেসে জবাব দিল,
-” আপনি ভুল করছেন। এই খেলাটা আমি শেষ করতে এসেছি। যত বড় সিন্ডিকেটই হোক, ছায়ায় লুকিয়ে থাকা মাথাটা কে”টে না ফেললে খেলা সত্যিই খতম হয় না। আর আজ সেটাই হতে চলেছে।”
তানিয়া দাঁত কটমট করে চুপ হয়ে নিজেকে সামলে নেয়। নীরব চোয়াল শক্ত করে ফের বলল,
-” আমার নিরপরাধ, নির্দোষ বাবাকে মিথ্যে আসামী বানিয়ে জেল খাটানো, আমার মা’কে অসহায় বানিয়ে কষ্টে রাখার জন্য, আমার নিরীহ ভাইটার ফুলের মতো জীবনটা ধ্বং*স করার শাস্তি দেয়ার জন্য ব্যাকুল আমি। সবের প্রতিশোধ আমি নিতে চাই। এতদিন অনেক ধৈর্য্য দেখিয়েছি। আর অবশেষে সেই প্রতীক্ষিত দিনটা আজ এসেছে। খান সিন্ডিকেটের পা*পের হিসাব আমি একেবারেই শেষ করব। ধৈর্যের ফল মিঠা হয়; আজ সেটা প্রমাণ হবে।”
কণ্ঠে অহংকারের নিয়ে বলে উঠল তানিয়া,
-” তুমি হয়তো ভাবছো সবটা নিজের মতো করে শেষ করতে পারবে। কিন্তু ভুল করছো অফিসার। খানদের ক্ষমতা কখনো পুরোপুরি শেষ হয় না। যারা ছায়ায় লুকায়, তাদের কৌশল আর ক্ষমতা সময়ের সাথে বদলায়।”
নীরব চোখ সরিয়ে না নিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-” আপনাদের ছায়া যত গভীরই হোক, আলো ঢুকিয়ে সেই গভীরতম কোণেও ধরা হবে। আর আজ সেই আলোই আপনাকে, আপনার মেয়েকে শেষের দিকে ঠেলে দেবে।”
মেয়ের কথা শুনে কিছুটা আঁতকে উঠল তানিয়া। বললেন,
-” প্রীতি…আমার মেয়ে কই?”
-” মেয়ে বেঁচে গেলে, জেলে দু’জনের একবেলা সাক্ষাৎ এর ব্যবস্থা করে দিবো।”
তানিয়া বারবার প্রীতির কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। নীরব বলল,
-” মেয়েকে ন’ষ্ট করার পিছনে এইট্টি পার্সেন্ট হাত আপনার। মেয়ের এই পরিণতির জন্য আপনি দায়ী মিসেস খান।”
এরমধ্যে লেডি কনস্টেবলের সাথে ইচ্ছে নেমে আসতে থাকে। সিঁড়ির নিচের ধাপে দাঁড়িয়েই উচ্চ স্বরে ডেকে উঠল,
-” পাপা।”
নীরব এগিয়ে ইচ্ছের সামনে উবু হয়ে দু’হাতে মুখটা আঁজলা করে ধরল। কপালে চুমু খেতে খেতে বলল,
-” ইচ্ছে সোনা, তুমি ঠিক আছো তো?”
-” পাপা তুমি এসেছো। জানো আমার খুব ভয় করছিলো। বাজে লোক আমার হাতে ব্যথা দিয়েছে।”
ইনজেকশন পুশ করার স্থান দেখিয়ে বলে ইচ্ছে। নীরব আদুরে গলায় বলল,
-” বাজে লোকদের শাস্তি দেয়া হবে। এই তো আমি এসে গেছি। আর ভ’য় নেই সোনামণি।”
আশেপাশে পুলিশ দেখে ইচ্ছে ভয়ে সিটকে রইল। বলল,
-” এত লোক কেনো? আর নানুর কাছেও ওরা। কেনো পাপা?”
নীরব উত্তর দেয়ার আগেই একজন কনস্টেবল এসে বলল,
-” স্যার, সাংবাদিকরা এসে পড়েছে। বাইরে প্রবেশের জন্য হট্টগোল করছে। তল্লাশি, উদ্ধার প্রায় শেষ, স্যার।”
নীরব কপালে ভাঁজ ফেলে ঠাণ্ডা চোখে তাকাল। বলল,
-” ডোন্ট ওয়ারি, সবকিছুর উত্তর আছে আমাদের। সাংবাদিকরা ভিড় করুক। আমরা করব আমাদের কাজ। ক্রিমিনাল কে পুলিশ ভ্যানে তোলো।”
নীরব ইচ্ছের হাত ধরে এগোতে লাগল। বাইরে আসতে না আসতেই সাংবাদিকরা ভনভন করে মাছির মত ঘিরে ধরল। ইচ্ছে ভয়ে নীরবকে আঁকড়ে ধরল। নীরব এক ঝটকায় ইচ্ছেকে কোলে তুলে নিল। মৃদু হেসে বলল,
-” ভ’য় নেই মামণি, আমি আছি তো।”
সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো। কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্নও উঠে এল। নীরব কিছু এড়িয়ে যায়। কিছু প্রশ্নের জবাব অল্প কথায় দেয়। পাশ থেকে এক সাংবাদিক চড়া কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
-” স্যার, এত বড় অট্টালিকা, কোটি কোটি টাকা সব অবৈধ। এই বিশাল সম্পত্তি কী হবে? সাধারণ মানুষ কি ভাবছে, এর কোনো হিসাব থাকবে না?”
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে শব্দগুলো সাজিয়ে নিল। দৃঢ় গলায় বলল নীরব,
-” এই টাকা, এই সম্পত্তি যেটা বছরের পর বছর অবৈধ পথে জমেছে, সব সরকারের নিলামে উঠবে। দেশ এবং জনগণই এর অধিকারী। আর যারা ভাবছে, ক্ষমতার ছায়ায় সব কে*টে যাবে। তাদের জন্য বার্তা, কোনো কোণে নিরাপদ আশ্রয় নেই। আলো সবসময় অন্ধকারের কোণে পৌঁছায়। দ্রুত সুষ্ঠু বিচার করা হবে, অপরাধী সাজা ভোগ করবে।”
ভিড় কাটিয়ে নীরব বেরিয়ে এল। ইচ্ছে বাইকে বসে জিজ্ঞেস করল,
-” মাম্মা কই?”
নীরব এড়িয়ে গেল। উত্তরে বলল,
-” বাসায় চলো সোনা। তোমার দিদুন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারপর বাসায় তোমার জন্য অনেক চকলেট রেখেছি। নিবে না?”
-” হুম, নিবো তো।”
এতক্ষণে টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিউজে সয়লাব। টিভির স্ক্রিনে নীরবের সাথে ইচ্ছেকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন নীহারিকা। যাক, মেয়েটা সুস্থ আছে। তবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে, মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে কী উত্তর দিবে? কীভাবে বুঝিয়ে রাখবে? যদিও ইচ্ছের অনেকটা অভ্যাস আছেই মা’কে ছাড়া থাকার। তবুও তো কখনো না কখনো মায়ের কাছে যেতে চাইবে।
প্রত্যাশা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে ভেজা চুল মুছে আঁচড়াতে থাকে। ঠিক তক্ষুনি ড্রয়িংরুমে হৈচৈ শোনা গেল। এগিয়ে গিয়ে ইচ্ছেকে দেখেই ঠোঁটে হাসি ফুটল। ডেকে উঠল,
-” ইচ্ছে?”
ইচ্ছে এগিয়ে আসতেই প্রত্যাশা হাঁটু মুড়ে বসে দু’হাতে জাপটে ধরল। ইচ্ছের মাথাটা প্রত্যাশার কাঁধে। প্রত্যাশা বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। অপরাধীর সুরে বলল,
-” মামণি খুব পঁচা। তোমাকে দেখে রাখতে পারিনি। এবারের মতো মামণিকে মাফ করে দাও। তবে প্রমিজ করছি, এরপর থেকে তোমাকে দেখে রাখব। একটুও কষ্ট পেতে দেবো না। আর এ-ও প্রমিজ করছি, তোমাকে এত্ত এত্ত আদর দিবো সোনা।”
ইচ্ছে মাথা তুলে তাকাল,
মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৫০
-” সত্যি?”
ইচ্ছের সারা মুখে চুমু খেয়ে বলল প্রত্যাশা,
-” একদম সত্যিই। তোমাকে সবসময় কাছেই রাখব। একদম আদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখব। পাক্কা প্রমিজ।”