মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১
সৌরভ চৌধুরী
নতুন বউ নিয়ে বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরী।😬 তার পাশে ভয়ে আর চোখে জল নিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তার সদ্য বিবাহ করা বউ মেহেরিন আয়মান চৌধুরী সবাই তাকে মেহেক বলেই ডাকে।
আবরাজ একবার তার সদ্য বিয়ে করা বউ এর ভিতু মুখ খানার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বাড়ির কলিং বেল চাপলো।🙂
কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ হতেই। মেহেক ভয়ে আবরাজের পান্জাবি চেপে ধরলো।
এদিকে আবরাজের মা দরজা খুলে সামনে তাকাতেই থমকে দাড়িয়ে যায়। দরজার সামনে তার ছেলে আবরাজ দাড়িয়ে আর তার পেছনে বউ সেজে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।
তখনি ভেতর থেকে শব্দ এলো।
আবরার (আবরাজের ছোট ভাই) – মা কে এসেছে? তুমি ঐভাবে থমকে দাড়িয়ে আছো কেন?🙄
মা – আ আ আ আয় য়ন
রেহেনা চৌধুরীর তুতলানো কথা শুনে বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে থাকা সবাই থমকে যায়। সবাই ভাবছে কে এমন এলো যে একজন সুনামধন্য উকিল পর্যন্ত তুতলাচ্ছে।
কে এসেছে দেখার জন্য সবাই এক প্রকার দৌড়ে গেলে দরজার সামনে।দরজার সামনে গিয়েই সবাই থমকে গেলো আবরাজ আর মেহেক কে দেখে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিশা (আবরাজের বোন) তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার ভাই এর দিকে। তার যে ভাই মেয়েদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকে। তাদের সে ভাই কি না সোজা বিয়ে করে বউ নিয়ে হাজির!! এটা কীভাবে সম্ভব।🤔
আরহাম (আবরাজের বড় ভাই) – আবরাজ এসব কী?এই মেয়ে কে? এই মেয়ে কেন এই সাজে তোর সাথে এভাবে দাড়িয়ে আছে।
জারিন (আরহামের ভাবি) – এসব কি নাটক আবরাজ। তুমি চুপ করে আছো কেন? এন্সার দাও।
আবরাজ – এটা কোনো নাটক না এখানে যা হচ্ছে সকল কিছু সত্যি। আর হ্যা আমার পাশে দাড়িয়ে আছে সে মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীর স্ত্রী।
আবরাজের মুখ থেকে কথাটা বের হওয়া মাত্রই সবই নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে গেলো যেন পাথর হয়ে গেছে
তখনি পেছন থেকে একজন গর্জে উঠলো
এলিন (জারিনের বোন) – আবরাজ তুমি এসব কি বলছো? তুমি আমাকে ঠকাতে পারো না। তুমি কি ভুলে গেছো তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। তুমি এটা করতে পারো না।
আবরাজ – ওহহ রিয়েলি, আমি আবরাজ আয়ান চৌধুরী তোমার মতো থার্টক্লাস মেয়েকে বিয়ে করবো ভাবলে কি করে।
জারিন – আবরাজ এই বাহিরের মেয়ের জন্য তুমি আমার বোনকে অপমান করছো
আবরাজ – ও বাহিরের মেয়ে না ও আমার স্ত্রী।
আবরাজের মুখ থেকে স্ত্রী শব্দটা শোনার সাথে সাথে মেহেক আবরাজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে তারা কথা কাটাকাটি করতে থাকলে কেউ খেয়ালই করলো না যে, তাদের সবার পেছনে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে এই চৌধুরী বাড়ির কর্তা আয়ান চৌধুরী।
তিনি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নব বধূ সেজে দাড়িয়ে থাকা মেহেকের দিকে।
মেহেকের মুখ দেখার সাথে সাথে তার বুকের ভেতর উথাল পাতাল ঝড় শুরু হয়েছে। সে এক মনে তাকিয়ে আছে মেহেকের দিকে।
এলিন – এই রাস্তার মেয়ে তুই আমার থেকে আবরাজ কে কেড়ে নিতে পারিস না।
এই কথা বলেই এলিন দৌড়ে গিয়ে মেহেক কে থাপ্পর মারলো।
আর এদিকে থাপ্পরের ব্যাথাটা যেন আয়ান চৌধুরীর বুকে লাগলো
এলিন যেই আরেকটি থাপ্পর মারতে যাবে তখনি এলিনের হাত আবরাজ ধরে ফেললো আর তার শক্ত হাতের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে থাপ্পর মারলো।
এলিন ছিটকে পরলো তার বোনের ওপর।
রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে আবরাজ বলল,
আবরাজ – তোর সাহস কত বড় তুই মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীর স্ত্রীর শরীরে আঘাত করিস। তোর হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো।
এলিন দৌড়ে চলে গেলো আয়ান চৌধুরীর কাছে।
এলিন – আংকেল আংকেল দেখেন আবরাজ ঐ রাস্তার মেয়েটার জন্য আমাকে থাপ্পর মার
লো।
এদিকে আয়ান চৌধুরী যেন এলিনের কথা কানেই তুললো না সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তার স্ত্রী রেহেনা চৌধুরীর কাছে। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,
বাবা – রেহেনা
রেহেনা চৌধুরী চমকে তাকালেন তার স্বামীর দিকে। তার শক্ত সামর্থ স্বামি এভাবে ভেঙ্গে পরলো কেন, আবরাজ এভাবে বিয়ে করেছে তাই, না এটা কীভাবে হবে আবরাজের সাথে তো তার বাবার তেমন সম্পর্ক না তাদের সম্পর্ক তো সাপে নেউলে! তাহলে উনি কেন এভাবে ভেঙ্গে পরলো।
রেহেনা চৌধুরী দ্রুত তার স্বামীর কাছে গিয়ে তাকে আকড়ে ধরলেন,
মা – কি হয়েছে তোমার। তোমার চোখে পানি কেন।
আয়ান – মেয়েটির মুখের দিকে তাকাও (কাপাকাপা কন্ঠে বলল)
স্বামীর মুখ থেকে কথাটা শোনা মাত্র রেহেনা চৌধুরী তার ছেলের সদ্য বিয়ে করা বউ এর দিকে তাকাতেই যেন থমকে গেলেন।
তার চোখ ও যেন পানিতে ভড়ে গেলো।
মা – তাহলে কি ও আমাদের……..
বাবা – আমি জানি না। হয়তো। আগে সিওর হতে দাও।
আমাকে একটু সোফায় বসাও আর ওদের ভেতরে আসতে বলো।
মা – আবরাজ নতুন বউকে নিয়ে ভেতরে আসো।
কথাটা বলেই তিনি আয়ান চৌধুরীকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলেন।
আয়ান চৌধুরী সবার মুখের দিকে একবার তাকালেন সবাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
অথচ তার ছেলে আবরাজ ডোন্ট কেয়ার ভাবে আছে যেন সে জানতো তার বাবার এরকম অবস্থা হবে।
সবাই চুপচাপ বসে আছে। কোনো শব্দ করতেছে না কেউ। শুধু নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আয়ান চৌধুরী বললেন,
বাবা — মামনি তোমার নাম কি?
মেহেক – জ্বী মেহেরিন আয়মান চৌধুরী (কাপাকাপা কন্ঠে বললেন)
মেহেকের নাম শোনা মাত্র আয়ান চৌধুরী স্থির হয়ে গেলেন বার বার উচ্চারণ করতেছেন আয়মান নামটা। তার বুকের ভেতর যেন কেউ হাতুরি চালাচ্ছে।
উনি নিজেকে সামলে নিলেম। নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রশ্ন করলেন,
বাবা — তোমার বাবার নাম কি?
মেহেক – আয়মান চৌধুরী
কথাটা শোনার সাথে সাথে আয়ান চৌধুরী আর রেহেনা চৌধুরীর চোখ খুশিতে জ্বল জ্বল করছে।
আয়ান চৌধুরী দৌড়ি তার স্টাডি রুমে চলে গেলেন।
তার দৌড়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই চমকে উঠলো।
এলিন – আন্টি এই রাস্তার মেয়ের কথা শুনে আংকেল এরকম অস্বাভাবিক ব্যাবহার করছে কেন?
মা – আগে সিওর হতে দাও তারপর সবাই জানতে পারবে।
রেহেনা চৌধুরীর কথার মানে যেন কোনো বুঝতে পারলো না কিন্তু ঐদিকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এক হাতে মেহেকের হাত ধরে আছে আবরাজ আরেক হাতে ফোন চাপতেছে।
যেন এদিকের কোনো বিষয়ে তার কোনো ধ্যান নেই।
তখনি আবার দৌড়ে এলেন আয়ান চৌধুরী তার হাতে একটা ছবি।
তিনি ছবিটি মেহেকের সামনে ধরে বললেন,
বাবা – ইনি কি তোমার বাবা।
মেহেক একবার ছবিটির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো।
মেহেক — জি উনি আমার বাবা। কিন্তু আপনি কি আমার বাবাকে চিনেন?
আয়ান চৌধুরী শুধু শুনলেন উনি আমার বাবা। আর কোনো কথা যেন উনি শুনলেন।
উনি জাপটে জড়িয়ে ধরলেন আবরাজ কে।
আবরাজ কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলেন।
যেন অপ্রত্যাশিত কোনো মূল্যবান জিনিস তিনি ফিরে পেয়েছেন।
আয়ান চৌধুরীর এই কান্ডে সবাই যেন আবারো চমকে উঠলো।
এটা তারা কি দেখতেছে, এটা কোনো আয়ান চৌধুরী। শত ঝড়েও যে আয়ান চৌধুরী বটবৃক্ষের মতো দাড়িয়ে থাকে সেই আয়ান চৌধুরী কান্না করতেছে তাও আবার তার সবচেয়ে অবাধ্য সন্তান কে জড়িয়ে ধরে।
আয়ান চৌধুরী নিজেকে স্বাভাবিক করে আবরাজ কে ছেড়ে দিয়ে।
মেহেকে কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে উঠলেন,
এলিন — আংকেল আপনি এই রাস্তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছেন ওর শরীর থেকে গন্ধ…..
কথাটা শেষ করতে পারলো না এলিন তার আগেই রেহেনা চৌধুরী তার সর্ব শক্তি দিয়ে থাপ্পর মেরেছে এলিন কে।
রেহেনা — এই মেয়ে চুপপ একদম চুপপ কাকে রাস্তার মেয়ে বলছিস তার সম্পর্কে ধারণা আছে তোর।
এলিন যেন নির্বাক হয়ে গেলো রেহেনা চৌধুরীর থাপ্পর খেয়ে।
এই রেহেনা চৌধুরী তাকে কত ভালোবাসতো আর এই রাস্তার মেয়ের জন্য তিনি তাকে থাপ্পর মারলো।
এই কথা ভেবেই এলিনের সকল রাগ গিয়ে পরলো মেহেকের ওপর। সে রাগে ভেতরে ভেতরে ফুলতেছে।
আরহাম — মা এই মেয়ে কে। আর বাবা এরকম করতেছে কেন।
তখনি পাশ থেকে আবরাজ বলে উঠলো,
আবরাজ – পৃথিবীর মানুষের কাছে কোহিনূর যেমন মূল্যবান, আজ বাবার কাছে আমার স্ত্রী ও তার চেয়ে অধিক মূল্যবান।
জারিন — এটা কি ধরনের নাটক। আমি ও তো এই বাড়ির বউ কই আমাকে তো বাবা কোনো দিন এরকম আদর করলো না, আমিও তো নতুন বউ হয়ে এসেছিলাম তখন তো উনি স্বাভাবিক অন্য শশুরদের মতো ছিলেন, তাহলে ঐ মেয়েকে দেখে এরকম করছে কেন?
অথচ আবরাজ সবাইকে না বলে বিয়ে করে এনেছে অথচ সবাই ওকে শাসন করার বদলে আদিক্ষেতা দেখাচ্ছে। যত্তসব ঢং
আবরাজ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
যদি মেহেক শুধু আমার স্ত্রী হতো তাহলে হয়তে বাবা এরকম করতো না, মেহেক আমার স্ত্রী ছাড়াও ওর আরেকটি পরিচয় আছে।
কথাটি শোনা মাত্র সবাই চমকে উঠলো।
তখনি আরিশা আবরারের কানে কানে বলল,
আরিশা – ভাইয়া আজ কি চমকানো দিবস।
আবরার – তোর হঠাৎ এটা মনে হলো কেন?
আরিশা – এই যে একের পর এক চমক পাচ্ছি।
আবরার – আর যাই বলিস ভাবি কে কিন্তু আমার হেব্বী পছন্দ হয়েছে।
আর এখন ডিস্টার্ব করিস না পরবর্তী সিন দেখতে দে।
মেহেক – কি বলছেন এসব!! আমার আরেকটি পরিচয় মানে!!
আয়ান — আমি বলছি।
আরহাম — হুম বলো বাবা কে এই মেয়ে আর তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক
রেহেনা — শুধু তোমার বাবার না তোমাদের ও সম্পর্ক আছে তার সাথে।
কথাটি বলে রেহেনা বেগম তার স্বামির কাছে থেকে মেহেক কে ছাড়িয়ে নিয়ে মেহেকের কপালে চুমু খেলেন।
আয়ান — মেহেক আর কেউ না, মেহেক আমার আদরের ছোট ভাই আয়মান চৌধুরীর মেয়ে।
কথাটা শোনা মাত্র মেহেক চমকে তাকালো আয়ান চৌধুরীর দিকে।
এজন্যই কি তিনি যখন জড়িয়ে ধরেছিলো তখন বাবা বাবা গন্ধ পাচ্ছিলো।
তাহলে কি তার ও পরিবার আছে, সে ও কি তবে নিজের মানুষদের কাছে পেয়েছে।নাকি তারাও মামা – মামির মতো তাকে অবহেলা করবে। কথাটি মনে মনে ভাবতেছিলো মেহেক।
আরহাম — কিহহহ ও চাচ্চুর মেয়ে। আমার চাচ্চুর মেয়ে। আমার হিরোর মেয়ে (ছলছল চোখে প্রশ্ন করলো আরহাম)
মা — হ্যা।
আবরার — কিন্তু মা আমরা তো জানতামই না আমাদের চাচ্চুর কথা।
আরিশা — হ্যা মা আমাদের চাচ্চু থাকলে উনি কেন আমাদের সাথে থাকেন না, আর কেনই বা উনাকে আমরা চিনি না।
মা – সে অনেক কথা।
আরহাম – কিন্তু মা তোমরা ওকে চিনলে কীভাবে।
মা – ওর দিকে ভালোভাবে তাকাও তাহলে তুমিই বুঝতে পারবে।
মায়ের কথাটি শোনা মাত্র আরহাম মেহেকের দিকে তাকালো। তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো এ যেন তার প্রিয় হিরো তার চাচ্চুর কার্বন কপি।
বাবা — আবরাজ
আবরাজ – এই দাড়াও বাবা, তুমি কি আবার আমাকে বউ ছাড়া করার ধান্দা করেছো। যদি এই ধান্দা তোমার মাথায় এসে থাকে এখনি ঝেড়ে ফেলো। আমি আমার বউ ছাড়া থাকতে পারবো না।
আবরাজ কথাটি বলার সাথে সাথে আবরার, আরহাম,আরিশা উচ্চ স্বরে হাসতে শুরু করলো।
আর মেহেক লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
মেহেক মনে মনে বলছে,
মেহেক – অসভ্য, নিলজ্জ মন্ত্রী
আবরাজ সবার হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো, যাক অবশেষে গুমট ভাবটা কেটে গেছে।
আয়ান — বেয়াদব ছেলে। আমি তোর বাবা।
আবরাজ – তো তার মানে এই না যে আমি তোমার কথায় আমার বউ ছেড়ে থাকবো।
আয়ান — এসব বাদ দে তুই কি আগে থেকেই মেহেক কে চিনতিস
আবরাজ বাবার কথায় একটু চুপ থাকলো তারপর একটা তপ্তশ্বাস ফেলে বলল,
আবরাজ — হ্যা। আমি যখন লন্ডনে ছিলাম। তখন থেকেই আমি চাচ্চুর খোজ নিতে শুরু করি। তোমরা তো জানতে চাচ্চু ছিলো আমরা আইডল। আমার কাছে সবার আগে ছিলো চাচ্চু। চাচ্চু যখন এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো আমি তোমাদের ওপর রাগ করে চলে গেলাম লন্ডন।
ঐখানে গিয়ে পরিচয় হয় তখনকার বিরোধী দলিয় নেত্রীর ছেলের সাথে।এরপর আমার সাথে তার সক্ষোতা। রাজনৈতিক বিষয়ে গল্পে গল্পে তাকে অনেক কথা বলতাম। সে আমার বিষয়ে তার মা কে জানায়। তার মায়ের সাথে আমার কথা হয় এবং কিছু ভুল তুলে ধরি। এরপর যখন তারা ক্ষমতায় এলো, আমি তাদের চাচ্চুর ফটো দি এবং খোজ নিতে বলি। এরপর চলে চাচ্চুর খোজ ১ বছর পর আমি চাচ্চুর খোজ পাই।
ততদিনে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে,
বাবা — অনেক দেড়ি হয়ে গেছে মানে??
আবরাজ –………………
আরহাম – কি হলো কথা বলছিস না কেন। দেড়ি হয়ে গেছে মানে কি আর চাচ্চু কোথায়। ( জোরে চিৎকার করে বলল)
মা — কি হলো আবরাজ বল
আবরাজের কথা যেন গলায় আটকে গেছে সে কোনো শব্দ মুখ থেকে বের করতে পারছে না।
আবরাজের অবস্থা দেখে মেহেক তপ্ত নিশ্বাস ফেলল,
অতঃপর মেহেক বললল,
মেহেক — ততদিন আমার বাবা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছে।
মেহেক কথাটা বলার সাথে সাথে, যেন একটা ঝড় বয়ে গেলো, বাড়ি একদম নিরব হয়ে গেলো,
এদিকে আয়ান চৌধুরী কোনো কথা না বলে সোফায় বসে পরলো। আরহাম চুপ করে যেখানেই দাড়িয়ে ছিলো ঐখানেই দাড়িয়ে থাকলো যেন পাথর হয়ে গেছে, অথচ তার চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ঝড়তেছে।
এদিকে রেহেনা চৌধুরী কথাটা শোনা মাত্র মাথা চক্কর দিয়ে জ্ঞান হারায়। আবরাজ গিয়ে তার মা কে ধরে ফেলে। মেহেক ও দৌড়ে আসলো রেহেনা চৌধুরীর কাছে।
আবরাজ তার মা কে ধরে সোফায় শুয়ে দিলো। আরিশা দৌড়ে গিয়ে পানি আনলো।
মেহেক তার শাড়ির আচল দিয়ে বাতাস করতেছে।
জারিন আর এলিন নিরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে।
আরহাম ঐভাবেই পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে, যেন তার এই জগতে খবর নেই।
আয়ান চৌধুরীও মাথা নিচু করে ঐভাবে সোফায় বসে আছে।
আবরাজ রেহেনা চৌধুরীর মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরালো।
তার জ্ঞান ফিরতেই উনি চিৎকার করে কান্না করতেছে আর বলতেছে, আমার আয়মান, আমার আয়মান কই, আমার আয়মান এতোটাই অভিমান করলো যে তার ভাবি মা র সাথে শেষ দেখাটা ও করলো না। সে তার ভাবি মা কে এভাবে ফাকি দিয়ে চলে গেলো।
বলেই তিনি আবারো জ্ঞান হারান।
মেহেক বাতাস করতেছে আর ভাবতেছে, তার বাবা যে বলতো তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা তার ভাবি মা। যিনি ছোট থেকে তার বাবাকে লালন পালন করেছে। তাহলে কি ইনিই সেই তার ভাবি মা।
আর উনিই কি আমার বাবার সেই রাজা। কথাটা ভাবতে ভাবতেই সোফায় বসা আয়ান চৌধুরীর দিকে তাকালো মেহেক।
মেহেকের কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে, উনি ঠিক আছে তো, উনাকে তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
মেহেক দৌড়ে আয়ান চৌধুরীর দিকে গেলো। আয়ান চৌধুরীর শরীর হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই আয়ান চৌধুরী সোফায় লুটিয়ে পরলো।
এটা দেখে আবরার দৌড়ে আসলো বাবার কাছে।
এদিকে আবরাজ পরেছে মছিবতে
একদিকে বাবা, আরেকদিকে মা। কাকে রেখে কাকে ধরবে।
আবরার — ভাইয়া দ্রুত হসপিটালের যেতে হবে। আমার মনে হয় আব্বু হ্যার্ট আট্যাক করেছে।
ততক্ষণে আরহাম নিজেকে স্বাভাবিক করেছে।
আরহাম – আবরার দ্রুত গাড়ি বের করে।
আমি বাবা কে নিয়ে যাচ্ছি, আবরাজ তুই মা কে নিয়ে আয়।
আবরাজ আর আরহাম ২টা গাড়ি করে তার বাবা মা কে নিয়ে রওনা দিলো হসপিটালে
একটা গাড়ি চালাচ্ছে আবরার, আরেকটা গাড়ি চালাচ্ছে আবরাজের পিএস রিশান।
সাথে সবাই এসেছে।
হাসপাতালে পৌঁছেই আয়ান চৌধুরী কে নিয়ে গেলো ওটি তে। আবরাজ আগেই কল করে সব কিছু রেডি রাখতে বলেছিলো।
আর রেহানা চৌধুরী কে নিয়ে গেলো একটা কেবিনে।
অপারেশন রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে সবাই। আর মেহেক এক পাশে চোখের পানি ফেলতেছে আর দোয়া দরুদ পড়তেছে, এই রকমই একটা দিনে সে তার বাবাকে হারিয়েছিলো।
আজ সে তার বড় বাবা কে হারাতে চায় না। এই মানুষটি যে তার বাবার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলো।
মেহেক বুঝতে পেরেছে তার বাবা এই মানুষটির নিকট কতটা আদরের ছিলো, যে তার মৃত্যুর সংবাদ সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করেছে।
এরিন — সব দোষ এই মেয়ের। না এই মেয়ে আসতো। না আংকেল আন্টির এই অবস্থা হতো।
এই মেয়েকে এখান থেকে বের করে দে আপু।
জারিন – ঠিক বলেছিস এরিন। সব দোষ এই মেয়ের।একে তো আমি
এই কথাটা বলেই যেন মেহের কে মারতে যাবে তার আগেই জারিনের গালে কেউ থাপ্পর মারে।
মেহেক মাথা উঁচু করে দেখতে পায় আরহাম জারিনকে থাপ্পর মেরেছে। মেহেক তো অবাক হয়ে যায় এই মানুষটা না তখন মেহেক কে আবরাজের সাথে দেখে আবরাজকে কথা শোনালো। সে জারিন ভাবিকে কেন মারলো?
আরহাম — তোর সাহস কত বড় তুই চৌধুরী বাড়ির মেয়ের গায়ে হাত দিস। তুই চৌধুরী বাড়ির প্রাণ ভোমরা আয়মান চৌধুরীর মেয়ের গায়ে হাত দিস।
তোর হাত আমি গুড়িয়ে দিবো।
এরিন — দুলাভাই আপনি এই থার্ট ক্লাস রাস্তার মেয়ের জন্য আপুকে মারলেন।
আরহাম — চুপপপপ কাকে থার্ট ক্লাস রাস্তার মেয়ে বলছিস, (চিৎকার করে বলল) যে চৌধুরী এম্পায়ারের ৫০% শেয়ার হোল্ডার আয়মান চৌধুরীর মেয়ে। যে চৌধুরী বাড়ির মেয়ে।
চৌধুরী বাড়ির মেয়ে যদি রাস্তার মেয়ে হয় তাহলে তোরা কি??
তখনি একজন নার্স সেখানে এসে বললো,
নার্স – দেখেন এটা হসপিটাল, এখানে চিৎকার করে কথা বলা যাবে না রোগীদের সমস্যা হবে
আরহাম – স্যরি সিস্টার৷
নার্স – ইটস ওকে।
বলেই নার্স চলে গেলো।
নার্স চলে যেতেই অপারেশন থিয়েটার সামনে আগমন ঘটলো আবরাজের। সে এতক্ষণ তার মায়ের কেবিনে ছিলো।
আরহাম — আবরাজ মায়ের এখন কি অবস্থা?
আবরাজ — মা চাচ্চুর মৃত্যুর শকড নিতে পারে নি তাই জ্ঞান হারিয়েছে, তাই ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে।
এরপর সবাই চুপ করে দাড়িয়ে থাকলো।
একটু পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসলো।
ডাক্তার কে বের হতে দেখে সবাই দৌড়ে গেলো ডাক্তারের কাছে।
আবরাজ — ডাক্তার সাহেব বাবার এখন কি অবস্থা? বাবা ঠিক আছে তো?
ডাক্তার — মন্ত্রী সাহেব রিল্যাক্স। আপনার বাবা এখন আউট অফ ডেন্জার।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো।
ডাক্তার চলে যেতেই আবরাজের চোখ গেলো তার সদ্য বিয়ে করা বউ মেহেকের দিকে।
বাবা মায়ের টেনশনে মেহেকের কথা তো ভুলেই বসেছিলো সে।
আবরাজ মেহেকের দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো মেহেকের মুখটা শুকিয়ে গেছে। হয়তো ক্ষুধা লেগেছে। সেই কাল খেয়েছে তারপরে তো আর খেতে পারে নি।
আবরাজ — মেহেক
আবরাজের ডাক শুনে মেহেক আবরাজের দিকে তাকালো
মেহেক — জী বলুন
আবরাজ — এদিকে আসো আর চেয়ারে বসো। আমি এখনি তোমার জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করতেছি। বাবা মায়ের চিন্তায় তোমার কথা তো ভুলেই বসেছিলাম।
মেহেক — না না আমার ক্ষুধা লাগে নি। আমি ঠিক আছি। আপনি ব্যাস্ত হবেন না।
মেহেকের মুখে না শুনে আরহাম বলে উঠলো,
আরহাম — বনু না বললে তো চলবে না। তুই আমার হিরোর শেষ চিহ্ন। তোর অসুস্থ হলে চলবে না, তোকে সুস্থ থাকতে হবে।
আরহামের মুখে বনু ডাক শুনে মেহেকের চোখ পানিতে টলটল করে উঠলো, আরহাম তা বুঝতে পেরে মেহেকের দিকে এগিয়ে গেলো।
আরহাম এগিয়ে যেতেই মেহেক আরহাম কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো।
আর আরহাম মেহেকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলল,
আরহাম — বনু এতটুকু তে ই চোখে পানি আনলে হবে, তোর এখন অনেক দায়িত্ব।
তুই এখন শুধু চৌধুরী বাড়ির মেয়ে না বরং চৌধুরী বাড়ির বউ ও। তার চেয়ে বড় কথা তোর স্বামী একজন মন্ত্রী। এর চেয়ে কত বড় বড় বিপদ আসবে, ঝড় আসবে তা তো তোকেই শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। এতটুকুতে ভেঙ্গে পড়লে চলবে।
মেহেক — হ্যা ভাইয়া আমি পারবো। এতদিন তো আমার পাশে কেউ ছিলো না। খড়কুটোর মতো বেঁচেছিলাম। পরিবার বলতে যে আমার কিছু আছে বাবা মারা যাওয়ার পর তো সব ভুলেই গেছিলাম।
মামা, মামি আর ও বাড়ির সবার সব অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে যেতাম, অথচ কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো না, আমি কেমন আছি জানতে চাইতো না, অসুস্থ থাকলে ও তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতাম না।
আরহাম — কাঁদে না বোন। এখন তোর পাশে তোর এই ভাই আছে।
এখন তোর শরীরে একটা আঘাত আসতে হলে চৌধুরী বাড়ির ৩টি ছেলের শরীর ভেদ করে তারপর তোর শরীরে আঘাত লাগতে হবে। (কথাটা জোর গলায় অগ্নি চোখে জারিন আর এরিনের দিকে তাকিয়ে বলল)
আরহামের রক্ত চক্ষু দেখে জারিন ভয়ে ঢোক গিলল, আর এরিন তো রাগে ফুসতেছে।
এর মধ্যেই আবরাজ সবার জন্য খাবার নিয়ে এলো, সবাইকে জোড় করে খাবার খাওয়াতে লাগলো।
তখনি মেহেক বলল,
মেহেক — আপনি খাবেন না।
আবরাজ — না, আমার ক্ষুধা নেই।আমার ক্ষুধা লাগলে আমি খেয়ে নিবো। তোমরা খাও।
মেহেক — আমরা সবাই খাচ্ছি যখন আপনাকেও খেতে হবে।
মেহেকের জোড়াজোড়িতে অগত্যা আবরাজকে খেতে হলো।।
খাওয়া শেষে সবাই অপেক্ষা করতেছিলো আয়ান সাহেবের জ্ঞান ফেরার।
ঠিক তখনি পাশ থেকে আরহাম বলে উঠলো,
আরহাম — আচ্ছা মেহেক চাচ্চু কীভাবে মারা গেলো?
আবরাজ — চাচ্চুর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলো না, চাচ্চু কে মেরে ফেলা হয়েছে।
আবরাজের কথায় যেন বাজ পরলো। সবাই আকষ্মিকভাবে চমকে উঠলো। সবার সাথে মেহেক ও চমকে উঠলো। সে তো জানতো তার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে।
আরহাম — কে মেরেছে চাচ্চু কে? আর কেন মেরেছে? (রক্ত চক্ষু নিয়ে শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো)
