মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১৩
সৌরভ চৌধুরী
রাবেয়া সিকদার এবং মহাসিন সিকদার মেয়ের হাত ধরে দৌড়াচ্ছে। আর তাদের পেছনে দৌড়াচ্ছে শ্যামপুরের প্রভাবশালী দাদন ব্যাবসায়ী রফিক মিয়ার ছেলে রহিম মিয়া।
মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় রহিম দেখতে পায় গাছের নিচে বসে আছে সিকদার পরিবার।
আজ সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তার বাবা বলেছিলো, রেশমার সাথে তার বিয়ে হবে।
তাই এত রাতে রেশমাকে দেখে নিজের লালশা জাগ্রত হয়।
নিজের লালশা মেটানোর জন্য রেশমার ওপর আক্রমণ করে।
ঘটনার আকষ্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় রাবেয়া সিকদার এবং মহাসিন সিকদার।
মহাসিন সিকদার মেয়ে এবং বউ এর হাত ধরে দৌড়াতে শুরু করে।
দিক বেদিক ভুলে দৌড় লাগায়।
তাদের পেছনে রহিমকে আসতে দেখে।আল্লাহ এর কাছে সাহায্য চাইলো।
ঠিক তখনি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো রাফি।
শহুরে বড় গাড়ি দেখে মহাসিন সিকদার নিজেদের বাচানোর জন্য গাড়ির সামনে চলে যায়।
একজন লোককে হঠাৎ গাড়ির সামনে আসতে দেখে রাফি দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে।
দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়।
সামনে তাকিয়ে সিকদার পরিবারের সদস্যদের দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাফি ____ কি সমস্যা আপনাদের? এখন আবার কোন নাটক করতে চান?
মহাসিন সিকদার অসহায় চাহনিতে রাফির দিকে তাকিয়ে বলল,
মেহেকের মামা ___ বাবা আমাদের বাঁচাও। আমার মেয়ের ইজ্জত বাঁচাও। দয়া করো বাবা।
না হলে ঐ মাতাল আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করবে ( হাতের ইশারায় পেছনে আশা রহিম কে দেখিয়ে বলল)
রাফি ইশারা অনুযায়ী তাকিয়ে দেখতে পেলো পেছন থেকে দৌড়ে আসছে এক মাতাল মধ্যবয়স্ক পুরুষ।
রাফিকে সটান হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে।
আর সাথে ২জন বিদেশী মানুষকে দেখে রহিম ততক্ষণাক দাঁড়িয়ে যায়।সিকদার পরিবারের দিকে একটু তাকিয়ে চলে যায়।
রহিম চলে যেতেই সিকদার পরিবারের সবাই একটু সস্তি পায়।
রাফি ___ আপনারা এত রাতে এখানে কেন?
রাফির মুখে এমন কথা শুনে মহাসিন সিকদার চুপ করে গেলো, রাবেয়া সিকদার ডুকরে কেঁদে উঠলো।
রেশমা এখনো নির্বিকার।
মহাসিন সিকদার নিজেকে স্বাভাবিক করে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বলল।
তাদের মুখে সকল কথা শুনে রাফি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
রাফি _____ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
তা এখন কি করবেন ভেবেছেন?
মেহেকের মামা ______ আমাদের আর কোনো রাস্তা নেই, মাথা রাখার কোনো ঠাঁই নেই।
আমি মেহেকের কাছে একটু আশ্রয় ভিক্ষে চাইবো। অতীতের করা সকল পাপের জন্য মাফ চাইবো।
রাফি _______ আপনারা মাফ চাইলেই মাফ করে দিবে ভাবলেন কি করে?
মেহেকের মামা ______ তারপর ও আমি মাফ চাইতে চাই।আমার বিশ্বাস মেহেক আমাদের ফিরিয়ে দিবে না।
রাফি টিটকারী করে বলল,
রাফি ______ মেহেক ভাবি নরম মনের মানুষ হলেও রেহেনা চৌধুরী শক্ত খোলসে ঘেরা একজন মানুষ।
ওনার সন্তানদের কেউ আঘাত করলে রেহেনা চৌধুরী তাদের চোখ উপরে ফেলতেও ২ বার ভাববে না।
আর আপনারা তো
কথাটা বলেই থামলো রাফি। আড়চোখে সিকদার পরিবারের দিকে তাকিয়ে দেখলো ,
তারা মাথা নিচু করে আছে, তাদের চোখে অপরাধবোধ, অসহায়ত্ব।
রাফি একটু চুপ থাকলো অতঃপর বললো,
রাফি ______ আচ্ছা ঠিক আছে। আজ রাত টা আপনারা আমাদের গাড়িতে রেস্ট করুন।
আমরা গাড়ি রেখে যাচ্ছি।
কাল সকালে আপনারা ঐ বাড়িতে যাইয়েন।
মহাসিন সিকদার ও মাথা নাড়িয়ে সন্মতি দিলো।
রাফি ওনাদের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে,
ডেভিড আর এলেক্স কে সাথে নিয়ে হাটতে লাগলো উদ্দেশ্য জামতলী।
হাঁটতে হাঁটতে রাফি আবরাজকে কল দিয়ে সব জানালো।
আবরাজ ও কিছু কথা বলে কল কেটে দিলো।
অপরদিকে,
রাত ১১.৩০ হওয়াই ঢাকা শহরের মানুষদের জন্য তেমন একটা রাত না হলেও গ্রামের সবার জন্য গভীর রাত।
রাফি কল শেষে করে আবরাজ ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো চৌধুরী বাড়ির সবাই বসে আছে এবং মজা করতেছে,
আবরাজ সবার উদ্দেশ্যে রাফির বলা সকল কথা বলল ( সিকদার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া সকল কথা বলল)
সকল ঘটনা শুনে রেহেনা চৌধুরী রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
মা ______ তোদের কিছু ভাবতে হবে না। যা করার আমি করবো। চিন্তা নেই ওদের বর্তমান অবস্থা ও আমার ভাবনায় আছে।
সবাই রেহেনা চৌধুরীর কথায় সন্মতি দিলো।
রেহেনা চৌধুরীর সিদ্ধান্তকে সবাই সন্মতি জানাই। কারণ তারা জানে রেহেনা চৌধুরী কখনো খারাপ কিছু করবে না।
আকাশের কালো পর্দা সরিয়ে
পূর্ব দিগন্তে ফুটে উঠেছে সূর্যের কোমল আভা।
অন্ধকারের পিছু পিছু আলো এগিয়ে এসেছে—
দিনের প্রথম শ্বাসে জেগে উঠেছে পৃথিবী।
সিকদার পরিবারের সকল সদস্য দাড়িয়ে আছে মেহেকের বাড়ির সামনে।
তাদের পাশে দাড়িয়ে আছে রাফি।
মহাসিন সিকদার আর রাবেয়া সিকদার পুরো রাতে একবারো চোখ লাগাতে পারে নি। পুরো টা রাত তারা জেগেই ছিলো।
তাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে লাগলো।
দরজার খোলার শব্দ হতেই সিকদার পরিবারের সবাই স্বাভাবিক হলো।
আরিশা দরজা খুলতেই দেখতে পেলো সিকদার পরিবার দরজায় দাড়িয়ে আছে আর তাদের পাশে রাফি দাড়িয়ে আছে।
আরিশা ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলো,
এক রাতেই সিকদার পরিবারের সকল সদস্যদের চেহারা শুকিয়ে গেছে, চেহারায় মলিনতার ভাব এসেছে।
আরিশা _____ রাফি ভাইয়া তুমি কি দালালির দায়িত্ব নিয়েছো নাকি?
রাফি ঠাস করে একটা চাটি মারলো আরিশার মাথায়।
রাফি _______ আমি দালাল না তোর ভাই দালাল।
তোর ভাই তাদের আনতে বলেছে।
সরে যা দরজা থেকে ভেতরে যেতে দে।
আরিশা দাঁতে দাঁত চেপে সরে গেলো।
আরিশা সরে যেতেই সবাই বাড়িতে প্রবেশ করলো।
ড্রয়িংরুমে চৌধুরী বাড়ির সবাই বসে আছে আর তাদের সামনে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে সিকদার পরিবারে সকল সদস্য।
রেহেনা চৌধুরী ভাবলেশীন ভাবে পায়ের ওপর পা রেখে চা খাচ্ছে আর আড় চোখে সিকদার পরিবারের দিকে তাকিয়ে আছে।
মা _______ তা আপনাদের সকল কথাই তো শুনলাম। বুঝলাম আপনারা এখন লজ্জিত।
তা এখন আমাদের কি করতে বলতেছেন?
মেহেকের মামা _____ ভাবী সাহেবা আমরা একটু মাথা রাখায় ঠাঁই চাই। আপনারা যে শাস্তি দিবেন আমরা সব মাথা পেতে নিবো।
তবুও আমাদের একটু ঠাঁই দেন ( কথাটি বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো)
মা _______ বুঝলাম। বেশ আপনারা এই বাড়িতে থাকতে পারেন। তবে আমার কিছু শর্ত আছে।
মেহেকের মামা _____ আমরা আপনাদের সকল শর্তেই রাজি।
মা ______ বেশ। তাহলে শুনুন শর্তগুলো,
এই বাড়িতে আপনারা থাকতে পারবেন তবে কেয়ারটেকারের মতো, বাড়ির সকল কাজ আপনারা করবেন।
আমরা যখন আসবো, আমাদের সকল কাজের দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।
তবে এই বাড়ির কোনো জিনিস আপনাদের না, আপনারা জাস্ট কেয়ারটেকার।
তবে হ্যা, আমার জানা মতে আপনি কোনো কাজ পারেন না, ভাড়ার টাকা আর দাদণ দিয়ে খেতেন। এখন থেকে তা হবে না। জমির যত কাজ আছে সব আপনাকে করতে হবে তবে টাকা পয়সা আমরা দিবো। লাভের অর্ধেক আপনারা পাবেন।
রাজি থাকলে বলুন?
সিকদার পরিবারের সবাই সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো।
মা _____ তবে মাথায় রাখবেন যদি কোনো দিন ও শুনি আপনারা মেহেকের সাথে বাজে ব্যাবহার করেছেন বা অন্য কারো কাছে মেহেকের নামে বাজে কথা বলেছেন সেইদিনই হবে এই বাড়িতে আপনাদের শেষ দিন।
মেহেকের মামা _____ আমরা অতীতের কাজের জন্য লজ্জিত। আমরা অতীতের মতো ভুল আর করবো না।
মা ______ ঠিক আছে।
ঠিক তখনি পাশ থেকে রাফি রেহেনা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল,
রাফি ______ আন্টি সব না হয় হলো, তবে দাদণ দেওয়া ব্যাক্তির মাতাল ছেলের কি করবেন। ওরা তো ২দিন সময় দিয়েছে না হলে রেশমা কে তুলে নিয়ে গিয়ে রহিমের সাথে বিয়ে দিবে।
রাফির মুখ থেকে এমন কথা শুনে মেহেকের মামির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
রাবেয়া সিকদার মেহেকের পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো আর বলতে লাগলো,
মেহেকের মামি _____ মেহেক মা তোর বোন টা কে বাঁচা। ওর জীবনটা ধ্বংস হতে দিস না।
মেহেক কিছুক্ষণ চুপ থাকলো, এরপর রেহেনা চৌধুরীর দিকে তাকালো, এরপর মৃদু হেসে বলল,
মেহেক ______ ঠিক আছে তবে একটা শর্ত আছে।
মেহেকের মামি _______ কি শর্ত?
মেহেক ______ আপনিসহ সকলে জানে আমার বান্ধবি ইশার বড় ভাই ইশান রেশমাকে ভালোবাসে।
ইশান ভাইয়া কালো হওয়াই আপনারা তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছিলেন। ইশা আমার বান্ধবি আর ইশান তার ভাই হওয়াই আপনারা আমাকে সেদিন প্রচুর মেরেছিলেন। আমি চাই রেশমার সাথে ইশান ভাইয়ার বিয়ে হোক।
আপনারা রাজি থাকলে আমরা দাদণের সকল টাকা পরিশোধ করবো।
মেহেকের মুখ থেকে এমন শর্ত শুনে সিকদার পরিবারের সবাই ভাবনায় পরে গেলো,
ঠিক তখনি আবরাজ বলল,
আবরাজ ______ ভেবে দেখুন একজন মাতাল ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন নাকি শিক্ষিত শিক্ষকের সাথে বিয়ে দিবেন।
চেহারা সুন্দর হলেই যে আপনার মেয়ে সুখে থাকবে বিষয়টা তা নয় , সুন্দর একটি মনের মানুষকে পাশে পেলে আপনার মেয়ে সুখে থাকবে।
আমি ইশান সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে ও যথেষ্ট সুন্দর মনের মানুষ।
সিকদার পরিবারের সবাই এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার রেশমা মুখ খুলল,
রেশমা ______ আমি এই বিয়েতে রাজি। আমি ইশানকে বিয়ে করতে চাই৷ আমি এতদিন মোহের পেছনে ছুটে ভালোবাসা কে পায়ে ঠেলে দিয়েছি। আর এই ভুল করবো না।
রেশমার উত্তর শুনে সবাই খুশি হয়ে গেলো।
মা _____ যাও দুই তালায় ফাকা যে রুম ২টি আছে ঐগুলোই তোমরা থাকবে।
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাও।
সিকদার পরিবারের সবাই চলে যায় নিজ নিজ রুমে।
আবরার তার ভাই আবরাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,
আবরার ____ তা ভাইয়া তুমি কবে থেকে ঘটকালি শুরু করলে?
আবরাজ _____ আরে ঘটকালি হবে কেন? ইশান ছেলেটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে।
ইশা আর ইশান মেহেক কে আগলে রেখেছে। তাই ইশানের ভালোবাসা কে ফিরিয়ে দিতে আমি একটু সাহায্য করলাম।
মেহেক রেহেনা চৌধুরী আর আয়ান চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল,
মেহেক ______ বড় বাবা, বড় মা ওরা আমাকে নিজের আপন মানুষ মনে না করলেও আমি তো ওদের আপন মানুষ মনে করতাম।
আমি চাই রেশমা আর ইশান ভাইয়ার বিয়ে ধুমধাম করে হোক। পুরো এলাকার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে এই বিয়েটা হোক।
বাবা _____ আমার মা যখন চেয়েছে তখন তাই হবে।
যাও আবরাজ দাদণ দেওয়া ব্যাক্তির সাথে ঝামেলা মিটিয়ে দ্রুত বাড়ি আসো।
আমরা সবাই ইশানদের বাড়িতে যাবো।
আবরাজ _____ ঠিক আছে।
আবরাজ, আরহাম,আবরার,রাফি চলে যেতেই আসিফ ডাক দিলো,
আসিফ ______ ভাইয়া
সবাই থেমে গেলো পেছনে তাকালো
আসিফ ______ আমি কি তোমাদের সাথে যেতে পারবো। না মানে আমি এই পরিবেশের সাথে এডজাস্ট না। আর এতগুলো মেয়ের মাঝে আমি একজন ছেলে। একা একা ফিল হয়।
বোরিং লাগে।
তাই আর কি
আসিফের কথা শেষ করার আগেই আবরাজ বলল,
আবরাজ _____ ঠিক আছে আসো।
অতঃপর সবাই চলে গেলো রফিক মিয়ার বাড়িতে।
রফিক মিয়ার বাড়ির উঠানে বসে আছে সবাই।
রফিক মিয়া গম্ভীর মুখে বসে আছে,
রহিম চিল্লিয়ে বলল,
রহিম _____ আমি এসব মানি না। আমি রেশমা কে ই বিয়ে করবো।
আসিফ বুঝানোর উদ্দেশ্যে রহিমের কাধে হাত রেখে বলল,
আসিফ _____ দেখুন ভাইয়া, একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করে কি আপনি ভালো থাকতে পারবেন? পারবেন না? এর চেয়ে ভালো আপনাকে যে চায় তাকে বিয়ে করা
আসিফ কথাটা বলতেই রহিম আসিফের কলার চেপে ধরে ধাক্কা মারলো।
আসিফ কে ধাক্কা মারতে দেখে চৌধুরী বাড়ির ৩ ছেলে রেগে গেলো।
তারা দৌড়ে গিয়ে রহিমকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো আর ৩ ভাই বলতে লাগলো,
” তোর এত বড় সাহস আমাদের ভাইকে আঘাত করিস, আজ তোর হাত শরীর থেকে আলাদা করে নিবো ”
আসিফ অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, আর মনে মনে ভাবতেছে,
” ধন্যবাদ রহিম, তুই আমার অনেক বড় হেল্প করলি। তুই আঘাত না করলে তো আমি জানতেই পারতাম না চৌধুরী পরিবারের ৩ গম্ভীর ছেলে আমাকে ভাই বলে মনে করে, আমাকে একটু আঘাত করাই এতটা এগ্রেসিভ হতে পারে ”
কথাটি ভাবতেই একটা মুচকি হাসি দিলো।
রহিমকে মার খেতে দেখে রফিক সাহেব ছুটে গেলো, তার একমাত্র ছেলে এভাবে মার খাচ্ছে সে সহ্য করতে পারতেছে না।
সে দৌড়ে গিয়ে আবরাজের আটকাতে লাগলো কিন্তু বুড়ো মানুষ তাগড়া ৩ যুবকের সাথে কি আর পারে?
রফিক মিয়ার নাজেহাল অবস্থা দেখে আসিফ আর রাফি ও দৌড়ে গেলো আটকাতে।
অবশেষে অনেক কষ্টে তাদের শান্ত করলো।
আবরাজ রফিক মিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
আবরাজ ____ আজ থেকে এই এলাকায় কোনো সুদের ব্যাবসা চলবে না।
আর হ্যা তোর ছেলে মাদক ব্যাবসায়ী তার সকল প্রমাণ আমার কাছে আছে।
আবরার থানায় ফোন কর
আবরাজের মুখ থেকে এমন কথা শুনে রহিম ভয়ে চুপসে গেলো, একে তো এত মার খেলো, তার ওপর যদি পুলিশের ডান্ডার বাড়ি খায়, তাহলে তো আর সে বাঁচবে না।
রফিক মিয়া অনুনয় করে বলল,
রফিক _____ মন্ত্রী সাহেব হাত জোর করি এবারের মতো মাফ করে দেন।
আমি আমার ছেলেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিবো।
আমিও এই সুদের ব্যাবসা বন্ধ করে দিবো।
রফিক মিয়ার থেকে এমন কথা শুনে আবরাজ গম্ভীর হয়ে গেলো,
অতঃপর ভেবে বলল,
আবরাজ _______ ঠিক আছে। তবে শর্ত আছে?
রফিক _______ কি শর্ত বলুন। আমি সকল শর্তে রাজি।
আবরাজ _____ ২ দিনের ভেতর আপনারা বাবা ছেলে ৪০ দিনের চিল্লায় চলে যাবেন। আমি চাই আপনারা ধর্মের পথে আসুন।
রফিক _____ ঠিক আছে। আমরা কথা দিচ্ছি আমরা ২ দিনের ভেতর চিল্লায় যাবো আর নিজেদের সুদরে নিবো।
আবরাজ ______ ঠিক আছে।
অপরদিকে,
বস _____ আসিফ ( DG BGB) আজ সিমান্ত দিয়ে আমাদের RDX আর রাশিয়ান অস্ত্র আসবে।
এই অস্ত্র যেন বাংলাদেশে ঝামেলা ছাড়া প্রবেশ করে।
আসিফ (DG) _____ চিন্তা নেই বস। কাজ হয়ে যাবে। আমি আমার লোকদের বলে দিচ্ছি।
বস _______ সাবধানে করতে হবে। যে করেই হোক এই অস্ত্রগুলো KNF, JSS, UPDF পাহাড়ি সংগঠনের হাতে পৌঁছে দিতে হবে।
আসিফ (DG) _____ কাজ হয়ে যাবে বস।
তারা জানেও না তাদের ফোন কেউ ট্রেস করতেছে,
তাদের ২জনের সকল কথোপোকথন,
আবরারের বিশ্বসত্ব DGFI এর কয়েকজনের চৌকস টিম ট্রেস করেছে।
চৌধুরী বাড়ি,মির্জা বাড়ি,সিকদার বাড়ির সবাই রেডি হচ্ছে ইশানদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
ঠিক সে সময় আবরাজের ফোন বেজে উঠলো,
আবরাজ ফোন কানে ধরতেই শুনতে পেলো,
ঐপাশ থেকে ____ দেয়ালে বসে থাকা টিকটিকি বলছি,
আজ রাশেদ খানের চালান ঢুকবে সিমান্ত দিয়ে, RDX আর রাশিয়া অস্ত্র। এগুলো চলে যাবে পাহাড়ি অতঙ্কবাদীদের কাছে।
আর সিমান্তে সহযোগীতা করবে BGB এর DG আসিফের লোকজন।
আবরাজ _______ সমস্যা নেই।
সিংহের থাবায় হরিণ স্বিকার হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই কল কেটে দিলো।
সবাই আবরাজের দিকে তাকিয়ে আছে, ও কি বলল কেউ বুঝলো না।
কেউ না বুঝলেও আরহাম, আবরার ঠিকি বুঝেছে, তার ভাই কোডের ভাষায় কি বলেছে।
৩ ভাই চোখে চোখে কিছু ইশারা করে রহস্যময় হাসি দিলো।
সবাই বসে আছে ইশানদের বাড়ির উঠোনে,
মেহেক তো তার প্রিয় বান্ধবি ইশাকে এতদিন পর কাছে পেয়ে ছাড়তেছেই না।
তা দেখে ইশা বলল,
ইশা _____ কি রে তুই যদি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখিস।তাহলে আমি সিওর তোর মন্ত্রী বর আমাকে পুলিশে দিবে।
আমি জেলে যেতে চাই না বান্ধবি।
ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে মেহেক ইশার মাথায় চাটি মারলো আর বলল,
মেহেক ______ আমি মোটেও ঐ মন্ত্রী টন্ত্রীকে ভয় পাই না।
ইশা ______ সত্যি বলছিস তো ভয় পাস না ( সন্দিহান ভাবে বলল)
মেহেক _____ না মানে ঐ একটু একটু পাই।
যা ভাগ এখান থেকে।
মেহেকের পাগলামো দেখে ইশা হাসতে হাসতে চলে গেলো,
আয়ান চৌধুরী ইশানের বাবা ইলিয়াস হোসেনের উদ্দেশ্যে বলল,
বাবা _______ ভাই সাহেব, আমরা চাচ্ছিলাম। ৩ দিন পর গায়ে হলুদ আর পরেরদিন বিয়ে।
ইলিয়াস _____ আপনারা যা ভালো মনে করেন।
বাবা _____ তবে ভাই সাহেব এখানে আমার একটা আবদার আছে।
ইলিয়াস ______ বলুন।
বাবা _____ আমি চাই ইশান আর রেশমার বিয়ের অনুষ্ঠান একটা জায়গায় করবো যেহেতু এখানে কমিউনিটি সেন্টার নেই। তাই বড় মাঠ টা তে করবো।
ইলিয়াস ____ ঠিক আছে।
মা ______ আমরা বাকি কথা নিজেরা বলে নিয়।তার আগে ছেলে মেয়েকে একান্তে কথা বলার স্পেস দেওয়া হোক।
সবাই মাথা নাড়িয়ে সন্মতি দিলো। ইশান কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে রেহেনা চৌধুরীর দিকে তাকালো।
ইশান আর রেশমা একসাথে চলে গেলো পুকুর পাড়ে।
পুকুর পাড়ে বসে আছে রেশমা আর ইশান। ২ জনই চুপ করে আছে।
কারো মুখে কোনো কথা নেই।
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ইশান বলল,
ইশান _____ রেশমা তুমি কি এই বিয়েতে রাজি? আমি চাই না জোর জবরদস্তি করে তোমাকে বিয়ে করতে। তুমি যদি মন থেকে এই বিয়েতে রাজি থাকো তবেই আমি বিয়ে করবো। আমি চাই না তেমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু হোক।
ইশানের কথা শেষ হতেই রেশমা বলল,
রেশমা ______ জানেন, আমি এতদিন টাকা, পয়াসা আর সৌন্দর্যের মোহে আটকে ছিলাম। তবে কাল দিন -রাত টা আমাকে বাস্তবতা শিখিয়ে দিয়েছে। আমি বুঝে গেছি ভালোবাসা একটা মানুষকে কতটা পরিবর্তন আর সুখি করতে পারে।
তাই আমি ও আপনার ভালোবাসা কে নিজের করে নিতে চাই।
আমি এই বিয়ে মন থেকে রাজি।
ইশান ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে রেশমার কথাগুলো শুনলো।
তারা আরো কিছু কথা বললো।
সবাই ইশানদের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
অন্যদিকে,
সিলেটের তামাবিল সিমান্তে ব্যাস্ততা চলতেছে।
সিমান্তে নিয়োজিত বর্ডার গার্ডদের মধ্যেও ইত্তেজনা কারণ DG নিজে নির্দেশ দিয়েছে ২টি ট্রাক কে ছেড়ে দিতে হবে কোনো চেক না করে।
এতে অসন্তুষ্ট তরুন মেজর আসফিন। চেন অফ কমান্ড কে মেনে তাকে কাজটি করতেই হলো।
গাড়িগুলো সিমান্ত ক্রস করে বাংলাদেশে সিলেট শহরের দিকে ছুটতে লাগলো।
গাড়ি ক্রস করতেই আসফিন রহস্যময় হাসি দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে একটা টেক্সট করে দিলো কাউকে।
গাড়ি চলছে পাহাড়ি রাস্তা ধরে।
পাহাড়ি রাস্তায় একটা বিশাল গাছ পরে থাকতে দেখে গাড়ি দুইটি পরপর দাড়িয়ে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে এলো মেঘালয়ের ২জন বাসিন্দা।
এরা মূলত মেঘালয় থেকে চালান এনেছে।
২জনে গিয়ে যেই গাছ সরাবে তখনি তাদের শরীরে এসে লাগলো সুচালো কিছু।
তারা কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারালো।
ঠিক একই ভাবে গাড়ির ২জন ড্রাইভারকেও অজ্ঞান করা হলো।
তখনি ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো DGFI এর তরুন মেজর রাকিব। এবং স্যাডো গ্যাং এর ডেভিড।
টিলা থেকে নেমে আসতে দেখা যায় BGB এর তরুণ মেজর আসফিন।
সবাই বুঝতে পারলো সে দৌড়ে এসেছে।
মেজর আসফিন হাফাতে হাফাতে বলল,
আসফিন _____ স্যার কে জানিয়েছো হরিন শিকার হয়ে গেছে।
রাকিব _____ এখনো জানামো হয় নি।
ডেভিড ___ এখনি জানাতে হবে না।
ঐ যে স্যাডো গ্যাং এর লোকজন চলে এসেছে ওরা এখনি সকল মালামাল অন্য গাড়িতে নিয়ে দিবে।আর গাড়িটা খাদে ফেলে দিবে।
ঘটনা সাজাতে হবে এক্সিডেন্ট হয়েছে।
রাকিব ______ ঠিক আছে।
প্ল্যান অনুযায়ী তারা তাই করলো।
ঘটনা এক্সিডেন্ট হিসেবে সাজালো।
গাড়িতে থাকা ৪জন ব্যাক্তিকে স্যাডো গ্যাং এর লোকজন নিয়ে চলে গেলো।
আসফিন আর রাকিব বসে আছে পাহাড়ের টিলায়।
তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি।তারা তাদের ভাই এর দেওয়া কাজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছে।
ভাই এদেশ থেকে সব দেশদ্রোহীদের এবার শেষ করে দিবে।
আসফিন বারবার আবরাজকে কল দিচ্ছে কিন্তু আবরাজের ধরার নাম নেই।
ঐদিকে, মেহেক শুয়ে শুয়ে ভাবতেছিলো, বিয়েতে কীভাবে কি করবে?
তার ভাবনার বেঘাত ঘটিয়ে বিরক্ত করতেছিলো আবরাজের ফোন।
৩ বার কল কেটে গিয়ে যখন আবারো কল এলো মেহেক বিরক্ত হয়ে আবরাজের কল রিসিভ করলো,
মেহেক কিছু বলার আগে ঐপাশ থেকে আসফিন বলল,
আসফিন _____ মাটিতে থাকা পিপীলিকা বলতেছি, পিপীলিকা পিল পিল করে হরিণ শিকার করেছে।
আসফিনের কথার কিছু না বুঝে মেহেক ভাবলো মজা করার জন্য কেউ হয়তো কল করেছে,
তাই বিরক্ত হয়ে বলল,
মেহেক ______ আরে মজা করার জায়গা পান না। পিপীলিকা কোনো দিনও কথা বলতে পারে আর পিপীলিকা কিভাবে হরিণ শিকার করবে। যত্ত সব আজগুবি গল্প।
বলেই মেহেক কল কেটে দিলো।
ওপাশে রাকিব আর আসফিন বোকা বোনে গেলে, তারা বুঝতে পেরেছে এটা তাদের ভাবি।
তাদের রহস্যময় ভাই কি না এই বোকাসোকা বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলো,
কথাটি ভেবেই ২জনই হেঁসে উঠলো।
ঐদিকে,
মেহেক কল কেটে রেগে বম হয়ে আছে।।তার কল্পনার রাজ্য থেকে এই বিরক্তিকর ফোনটা বের করে এনে কি করলো তার সাথে মজা করলো
এসব ভাবতেছে রাগে ফুলতেছে ঠিক তখনি আবরাজ রুমে প্রবেশ করলো।
আবরাজ রুমে ঢুকে দেখতে পেলো তার বউ রেগে আগুন।
তাই মিষ্টি কন্ঠে বলল,
আবরাজ ______ বউ রেগে আছো কেন?
মেহেক _____ আরে রাখেন আপনার বউ।আপনি যেমন আজব আপনাকে কল ও করে আজব আজব মানুষ।
আবরাজ ভ্রু কুচকে জানতে চাইলো,
আবরাজ _______ কেন কি হয়েছে?
মেহেক _____ আরে কেউ একজন কল দিল, কল দিয়ে বলল,
মাটিতে থাকা পিপীলিকা বলতেছে আবার কিনা বলে পিপীলিকা পিল পিল করে হরিণ শিকার করছে।
আপনি বলেন এই কথার কোন আগা মাথা আছে, কিসব আজব কারবার।
মেহেকের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবরাজ খুশী হয়ে গেলো,
মেহেকের হাত থেকে ফোন নিয়ে কাউকে কল দিলো,
ঐ পাশ থেকে কল রিসিভ করতেই আবরাজ বলল,
আবরাজ _____ আকাশে উড়তে থাকা শকুন এবার সময় এসে গেছে বনে থাকা বাঘের রূপে থাকা শিয়াল কে শিকার করার জন্য। প্রস্তুতি শুরু করো।
বলেই কল কেটে দিলো।
মেহেকের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো,
মেহেক তার দিকে ভ্রু কুঁচকে আছে,
মেহেক ______ আমাকে সিওর পাবনা পাগলা গারদে যেতে হবে। কিসব আবোল তাবোল কথা বার্তা। আমি কাদের সাথে থাকি এরা তো সবকয়টা পাগল।
মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১২
ধুর
কথাটি বলেই মেহেক চলে গেলো।
মেহেক কে চলে যেতে দেখেই আবরাজ মুচকি হাসি দিলো।
এই শকুন কে? আর শিকারই বা করবে কাকে? কি হতে চলেছে? এবার কি বড় কোনো ধামাকা হবে? রেশমা আর ইশানের বিয়ে কি ঠিকভাবে হবে নাকি কোনো ঝামেলা হবে? রহিম কি সত্যি ভালো হবে নাকি রেশমার কোনো ক্ষতি করবে?
