মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৪
সৌরভ চৌধুরী
বর্তমানে চৌধুরী বাড়ির ড্রইং রুমে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতেছি।
কারণ বিকেলে আবরাজ এবং আরহাম একসাথে বাড়ি ফেরার পর তারা আয়মান চৌধুরীর স্টাডি রুমে যায়। আয়মান চৌধুরী চলে যাওয়ার পর এই রুমটা বন্ধই থাকতো। কেননা ঐ রুমে দরজা খোলা দেখলেই রেহেনা চৌধুরী ফুপিয়ে কেঁদে উঠতো।
তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই আয়ান চৌধুরী রুমটি তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখতো।
বাড়ির সবাই দুজন কে এক সাথে আসতে দেখে অনেকটা অবাক হয়। কারণ তারা দুজন তো এই সময় বাড়ি আসে না। বিশেষ করে আবরাজ তো এত তারাতারি বাড়ি আসে না।
তাদের এভাবে দেখে সবচেয়ে বেশী চিন্তিত হয়েছে মেহেক।কারণ সে লক্ষ্য করেছে তাদের দুই ভাই এর মুখে ছিলো গভীর চিন্তার রেশ।
মেহেক কে এভাবে এক মনে ভাবতে দেখে আরিশা বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিশা ____ ভাবি কোনো সমস্যা?
মেহেক ____ না মানে……. (আমতা আমতা করে বলল)
আরিশা ____ আরে ভাই কুল। আমি বাঘ, ভাল্লুক না যে এত ঘাবড়াতে হবে। আমি তোমার ননদ + ছোট বোন তাই চিল মুডে বলো।
মেহেক _____ আসলে তোমরা ভাইরা ঐ রুমে ঢুকলো প্রায় ২ ঘন্টা হতে চলল।কিন্তু তারা এখনো বের হচ্ছে না।
তারা কি এর আগেও অমন করতো।
আরিশা ____ সত্যি বলতে আমিও বিষয়টি নিয়ে ভাবতেছি। ভাইয়ারা ও তো এর আগে এমন করতো না।তারা তো ঐ রুমে ঢুকতোও না।
আরেকটি কথা (শেষের কথাটি চমকে উঠে বলল)
মেহেক ____ কি কথা আরিশা
আরিশা ____ ঐ রুমের চাবি তো ভাইয়াদের কাছে নেই।তাহলে তারা কীভাবে রুমটা খুলল, তারা চাবি পেলো কই?
মেহেক ____ তাহলে চাবি কার কাছে থাকে? (অবাকের স্বরে জানতে চাইলো)
আরিশা____ চাবিতো আমার কাছে। আমি মাঝে মাঝে ঐ রুম থেকে বই নিয়ে এসে পড়ি।কালও আব্বুর থেকে চাবি নিয়ে বই নিয়েছে। তবে এখনো চাবি ফেরত দেয়নি।
আরিশার কথা শুনে মেহেকের কপালে চিন্তার ভাজ পরলো। চাবি যদি তাদের কাছে না থাকে, তাহলে তারা রুম খুলল কীভাবে? আর ২ ঘন্টা হতে চলল তারা এত সময় ঐ রুমে কি করে? তারা ঠিক আছে তো?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মেহেক হাটতে লাগলো ঐ রুমের দরজার উদ্দেশ্যে,
মেহেক ____ মন্ত্রীমসাই (আবরাজকে ডাকলো)
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসলো না।
মেহেক আরো চিন্তায় পড়ে গেলো।
মেহেক কে ডাকতে দেখে,
আরিশাও ডেকে উঠলো,
আরিশা ____ ভাইয়া (উচ্চ শব্দে ডেকে উঠলো)
এবারও ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসলো না।
ওপাশ থেকে উত্তর না আসিলেও তাদের ডাকাডাকিতে সবাই আয়মান চৌধুরীর স্টাডি রুমের কাছে এসেছে।
আবরার ____ কি হয়েছে গাঁধি । এভাবে চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?
আরিশ ___ আমি গাঁধি না তোর বউ গাঁধি। তোর ১৪ গুষ্ঠি গাঁধি। (দাঁতে দাঁত চেপে বলল)
আবরার ___ আমার ১৪ গুষ্টির ভেতর তুই ও আছিস।
কথাটা শুনে আরিশা আরো রেগে গেলো।
তাদের এভাবে ঝগড়া করতে দেখে মেহেক কপাল চাপড়ালো।
সে এই ৩দিনে বুঝতে পেরেছে এদের ২জনের সম্পর্ক সাপে নেউলে। তবে এরা ২ ভাই বোন একে অপরকে খুব ভালোবাসে। আবরাজ ও আরহাম যেমন গম্ভীর, ঠিক তার উল্টো হলো আবরার। আবরার প্রচুর দুষ্ট এবং চনচল।
মেহেক __ আবরার (গম্ভীর হয়ে বলল)
মেহেকের গম্ভীর কন্ঠে ডাক শুনে আবরার কপাল কুচকে মেহেকের দিকে তাকালো আর বললো,
আবরার ____ ওয়েট ওয়েট ভাবি। আমার জানা মতে তুমি আর আবরাজ ভাইয়া তো একসাথে থাকো নি।তাহলে এই লং ডিস্টেন্সে আবরাজ ভাইয়ার ভুত তোমার ভেতর কীভাবে এলো?
আবরারের কথা শুনে আরিশা অতি উৎসাহি হয়ে বলল,
আরিশা ___ ভালোবাসা থাকলে সব হয়। এসব সাইন্স তোর মতো ফাটা বাশ বুঝবে না।
আবরার ____কি বললি তুই? আমি ফাটা বাশ। তোকে তো আজকে আমি………
তাদের কথা বার্তা আর ঝগড়া দেখে মেহেক কপাল চাপড়ালো
কই ভাবলো গম্ভীর কন্ঠে ডাক দিয়ে তাদের সিরিয়াস করবে, তা না এরা তো উল্টো এই গম্ভীর কন্ঠকে টেনে কোথায় নিয়ে গেলো। নিয়ে গেলো তো গেলো আবার এটা নিয়ে ঝগড়াও শুরু করে দিয়েছে।
মেহেক ____ চুপপপপপপ (মেহেক ধমকে বলল)
মেহেকের ধমকে ২জনেই চুপ হয়ে গেলো।
তখনি জারিন বলল,
জারিন ____ কি হয়েছে এখানে? আবরার আর আরিশা তোমরা সারাদিন এরকম ঝামেলা করো কেন? ভদ্র ঘরের ছেলে মেয়ে এমন ভাবে ঝগড়া করে না।
জারিনের মুখে এসব কথা শুনে আবরার রেগে আগুন হয়ে গেলো চিল্লিয়ে বলল,
আবরার ___Shut up! How dare you say that?
আরিশা ____এই কথা দ্বারা যদি তুমি আমাদেরকে বলো তোমার বোনের মতো ভদ্র হতে তাহলে আমি বলবো মাফ ও চাই, দোয়াও চাই আমরা তোমার বোনের মতো ভদ্র হতে পারবো না। (হাত জোড় করার ভঙ্গিতে বলল)
আরিশা কথা শুনে জারিনের মুখ অপমানে থমথমে হয়ে গেলো।
তখনি পেছন থেকে রেহেনা চৌধুরী বলল,
মা ___ এখানে কি হয়েছে মেহেক?
রেহেনা চৌধুরীর কন্ঠ কানে আসার সাথে সাথে জারিন কাঁদো কাঁদো মুখে পেছনে তাকিয়ে রেহেনা চৌধুরী কে বলল,
জারিন ___ দেখেন না মা, আমি আবরার আর আরিশা কে শুধু ঝগড়া করতে নিষেধ করেছি। তাই ওরা আমাকে আর আমার বোনকে অপমান করলো।
জারিনের কথা শেষ হতেই রেহেনা চৌধুরী এক প্রকার জারিনকে ইগনর করে মেহেকের পাশে গিয়ে দাড়ালো,
মা ____ কি হয়েছে মেহেক। তোমরা এখানে কেন?
মেহেক ____আসলে বড় মা ২ঘন্টা হতে চলল আরহাম ভাইয়া আর মন্ত্রীমশাই এই রুমে ঢুকেছে।তাদের এত ডাকতেছি ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসতেছে না।
মা ___ কি বলছো এসব!! আবরাজ আর আরহাম এই রুমে মানে!! (অবাক হয়ে বলল)
ওরা তো এত তারাতারি বাসায় ফেরে না।
মেহেক ___ বড় মা ওনারা মনে হয় কোনো বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তায় ছিলো।
মা ___ আবরার রুম খোলার ব্যাবস্থা কর।
আবরার ____ঠিক আছে মা।
এরপর আবরার রুমের দরজায় ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো।
আরিশা _____ এ কি দরজা খোলাই ছিলো!!
সবাই তো অবাক হয়ে গেলো, দরজা যদি খোলাই থাকে তাহলে এত ডাকাডাকির পর ও দরজা কেন খুলল না? কথাটি ভেবেই রেহেনা চৌধুরী আরো চিন্তায় পরে গেলো।
তারাতারি রুমে প্রবেশ করে সবাই অবাক হয়ে গেলো,
একি রুমে তো কেউ নেই,
কোথায় গেলো তারা।
কথাটি ভেবেই যেন মেহেকের কপালে চিন্তার আরেকটি ভাজ পড়লো।
সবাই পুরো স্টাডি রুম খুজে দেখলো কোথাও তাদের ২ ভাইকে না পেয়ে চলে গেলো ড্রয়িং রুমে।
রুমে থাকলো শুধু মেহেক।
মেহেক ছলছল চোখে দেখতে লাগলো, পুরো স্টাডি রুমটা, সে শুনেছে তার বাবা নাকি গভীর রাত পর্যন্ত এই রুমে বসে বই পড়তো। এই রুমের প্রত্যেকটি বই এ তার বাবার ছোঁয়া রয়েছে।
কতগুলো বছর হয়ে গেলো, সে তার বাবাকে ছুঁয়ে দেখতে পারে না।
তার বাবার আদুরে ডাক শুনতে পায় না।
বাবার ছোঁয়া বইগুলো ধরে ধরে সে তার বাবার ছোঁয়া অনুভব করতেছে আর চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে পরতেছে।
তখন সবার সাথে রেহেনা চৌধুরীও বের হচ্ছিলো।
তখন উনিও তার আদরের ছোট ভাইটির প্রিয় রুমটা আরেকবার দেখার জন্য পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখতে পেলো,
তার আদরের ছোট ভাই এর আদুরে মেয়েটা তার বাবার রেখে যাওয়া বইগুলো ছুঁয়ে তার বাবার ছোঁয়া অনুভব করতেছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ফেলতেছে।
রেহেনা চৌধুরী ধীর পায়ে মেহেকের কাছে গেলো,
কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
মা ____ বাবার ছোঁয়া অনুভব করতেছিস মেহেক
মেহেক __………………
মেহেকের নিশ্চুপতা দেখে রেহেনা চৌধুরী মৃদু হেসে বলল,
মা ____ জানিস তোর বাবাকে যখন তোর বড় বাবা বের করে দিলো।আমি চেয়েও তখন আয়মানকে আটকাতে পারি নি। পারি নি তোর বড় বাবাকেও মানাতে।
তখনকার একেকটা দিন যেন আমার কাছে একেকটা বছর মনে হতো।
আরহাম আর আবরাজ তো কারো সাথে কথা বলতো না। চুপচাপ রুমে বসে থাকতো।আমার হাসি খুশী ছেলেরা গম্ভীর হয়ে গেলো।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
আমি সারাদিন এই রুমে বসে কাদতাম আর আয়মানের জন্য অপেক্ষা করতাম, এই বুঝি আয়মান এসে বলবে, ভাবি মা মাথা ব্যাথা করছে, আমাকে কড়া করে একটা কফি বানিয়ে দাও।
কিন্তু আয়মান আর আসলো না।
এভাবে আমি দিন দিন মানসিকভাবে অসুস্থ হচ্ছিলাম।তারপরেই তোর বড় বাবা এই রুম তালা দিয়ে দেয়।
কথাগুলো বলতে যেন, তার গলা ধরে আসতেছিলো,গলা দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছিলো না।
মেহেক ___ বড় মা আমরা এক সাথে থাকলে কত ভালো হতো।
মা _____ আয়মানকে আটকাতে না পারার অপরাধবোধটা আমাকে ভেতরে থেকে ভেঙ্গে ফেলেছে।
মেহেক ____ এতে তোমার কোনো দোষ নেই বড় মা। এটা আমার ভাগ্যে লেখা ছিলো। ভাগ্য মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায়। এই যে দেখো, আমার চৌধুরীর বাড়ির রাজকণ্যা হয়ে থাকার কথা সেখানে আমি নাম মাত্র মামার বাড়ির কাজের মেয়ে হয়েছিলাম।
যেখানে আমার বাবার কোটি কোটি টাকা সেখানে আমি শীতের রাতে কম্বলের অভাবে ঘুমাতে পারতাম না।
যেখানে আমার বাবার বাড়িতে আলিসান খাট।সেখানে আমি ঘুমাতাম রান্নাঘরের মেঝেতে।
যেখানে আমার পরিবারের টাকায় কয়েকটি এতিমখানা চলে, সেখানে আমি ২ মুঠো খাওয়ার জন্য কতটা অত্যাচার সহ্য করেছি। কতটা কটু কথা সহ্য করেছি।
শেষে দেখো সেই ভাগ্যই আমাকে আমার পরিবার ফিরিয়ে দিয়েছে।
হয়তো বাবা,মা কে কেড়ে নিয়েছে তবে বাবার ভাষ্যমতে সে যদি পরের জন্মে জন্ম নেয় তাহলে সে যেন তার ভালো মায়ের কোল আলো করেই জন্ম নেয়। অথচ আমরা জানি পরের জন্ম বলে কিছু নেই। তাও বাবা সে আশাই করতো। দেখো আজ আমি আবার বাবা মায়ের জায়গায় তোমাদের পেয়েছি।
মা ___ তুই চিন্তা করিস না মা। তোর চেখ দিয়ে যারা এক ফোঁটা পানি ঝড়িয়েছে আমি তার চোখটাই তুলে নিবো।
মেহেক ___ বড় মা আমি চাই না, আর কাউকে হারাতে। ভাগ্য আমার থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমি আর হারাতে চাই না। ওরা অনেক ভয়ংকর বড় মা অনেক ভয়ংকর।
মা ___ তোর এত ভাবতে হবে না। আমাদের আল্লাহ ব্যাতিত কেউ কিছু করতে পারবে না।
মেহেক __ বড় মা আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো। আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমি অতীত মনে করতে চাই না। আমি অতীতের বিভৎস অতীত ভুলতে চাই।
কথাটি বলেই রেহেনা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলো।
রেহেনা চৌধুরী মনে মনে বলল,
মা __তুই ভুলে গেলো ও আমি ভুলবো না মা। আমি প্রতিশোধ নিবো।আমি জানি আমার ছেলেরা ওদের ধ্বংস করে দিবে।
ওদের শেষ করে দিবে আরহাম, আবরাজ,আবরার।
বোকা মেয়ে কান্না করতেছে, হারানোর ভয় করতেছে, অথচ সে জানেই না তার মাথার ওপর ছায়া দিয়ে আছে ৩জন রহস্যময়ী ছেলে।
হ্যা আমার ছেলে, এই পরিবারের রহস্যে ঘেরা ছেলে।
আবরাজ, আরহাম কোথায় চলে গেলো। এই রুম থেকে তারা উধাও কীভাবে হলো? এখানেও কি কোনো রহস্য আছে? এগুলা কি বাবাকে জানাবে _ কথাগুলো ভাবতেছিলো জারিন।কিন্তু পর মুহূর্তেই ভাবলো __ না এই বাড়ির আর কোনো কথা বাবাকে বলবো না। এমনিতেও এই বাড়ির কেউ তেমন একটা পছন্দ করে না আমাকে।বাবা যদি এই বাড়ির মানুষের কোনো ক্ষতি করে আরমান আমাকে শেষ করে ফেলবে।
অনেক হয়েছে বাবার হাতের পুতুল হয়ে থাকা আর না, সবাই আমাকে নিয়ে পুতুল খেলা খেলতেছে।
যেভাবে খুশি নাচাতে চাচ্ছে।
এবার দেখাবো আমি খেলা।এইবার আমি সবাইকে নিয়ে খেলবো — কথাটি বলেছি রহস্যময়ী হাসি দিলো।
এ কোন খেলায় মত্ত হলো জারিন। সে কি করবে এখন? সে কি চৌধুরী বাড়ির হয়ে লড়বে নাকি শেখ বাড়ির হয়ে লড়বে? সে কাকে বেছে নিবে বাবাকে নাকি স্বামী কে?
অপরদিকে,
আরহাম এবং আবরাজ বসে আছে একটা গোপন রুমে।
এই গোপন রুমের খবর শুধু আবরাজ, আরহাম এবং আয়মান জানতো।
এই রুম ছিলো আয়মানের গোপন রুম। এর পাশে রয়েছে প্রশিক্ষণ কক্ষ। আরহাম আর আবরাজ একটু বড় হতেই। আয়মান তাদের এই গোপন প্রশিক্ষণ রুমে আনতো। তাদের ফায়ারিং, কুংফু, Karate সহ সকল রণ কৌশল শেখাতো।
হয়তো আয়মান ভবিষ্যতে আসন্ন ঝড়গুলোর কথা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলো, তাই তার আদরের ভাতিজাদের ঐ ঝড় মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত করতেছিলো।
আরহাম ____ কিছু ভাবলি?
আবরাজ ___ভাবতেছি সরাসরি বাবাকে প্রশ্ন করবো
আরহাম ____আমার ও তাই মনে হয়।
এটা করাই ঠিক হবে।
আবরাজ ____তবে ভাইয়া বাবাকে প্রশ্ন করলে আমাদের পরিবারের অতীত না হয় জানতে পারবো। তোমার অতীত তো আর জানতে পারবো না।
এটা তো তোমাকেই বলতে হবে।
আরহাম অবাক হয়ে বলল,
আরহাম ____ আমার আবার কোন অতীত। আমার তো কোনো অতীত নেই।
আবরাজ ____ তুমি কেন আমজাদ শেখের মেয়ে জারিনকে বিয়ে করেছো।তুমি তো জানতে চাচ্চু আমাদের আগেই কিছুটা সতর্ক করেছিলো এই শেখ পরিবারের থেকে দূরে থাকতে।তাহলে তুমি কেন শেখ পরিবারের মেয়ে জারিনকে বিয়ে করলে।
আরহাম উচ্চ শব্দে হেঁসে উঠলো,
আরহাম ___ আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং মাফিয়া জগতের সম্রাট স্যাডো কিং আমার থেকে জানতে চাচ্ছে। তা স্যাডো কিং আসলেই জানে না কেন বিয়ে করেছি নাকি আমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিস।
আরহামের কথা শেষ হতেই আবরাজ ও উচ্চ শব্দে হেঁসে উঠলো,
আবরাজ ____ তাহলে কি ভাইয়া এবার আমরা বাবা মেয়ের যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছি।
আরহাম _____ হয়তো (রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলল)
আবরাজ _____এখন আমাদের যেতে হবে, অনেকটা সময় হয়ে গেলো৷ দেখতে হবে আমাদের প্লানটা সফল হয়েছে নাকি।
আরহাম _____ শেখ পরিবারের ধ্বংস হতে চলেছে। প্লান সফল হতেই হবে। আমাদের রহস্যের গোলক ধাঁধায় আটকে গেছে আমজাদ শেখ আর আজাদ শেখ 🤣
আবরাজ _____ শেখ পরিবারের ধ্বংস চৌধুরী পরিবারের রহস্যময়ী ৩ ছেলের হাতেই হবে।
কথাটি বলেই তারা তাদের গোপন রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,
কি হতে চলেছে এখন। তাহলে কি জারিনের ভাবনাটি আরহাম, আবরাজ আগে থেকেই জানতো? এখন তাহলে কে হবে এই রহস্যের পরিচালক জারিন নাকি আরহাম,আবরাজ।
অপরদিকে,
চৌধুরী বাড়িতে ড্রয়িং রুমে সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। আরহাম, আবরাজ কোথায় গেলো, তারা কীভাবে ঐ রুম থেকে উধাও হলো। তারা ঠিক আছে তো।
তবে সবাই চিন্তায় থাকলেও আবরারকে ডোন্ট কোয়ার মুডে বসে আছে।
রেহেনা চৌধুরী বারবার আবরারের ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে বসে থাকা দেখলো, তার মন বলছে এই ৩ ছেলে তাকেও রহস্যের গোলক ধাঁধায় ফেলতেছে।
যেভাবেই হোক আজ ৩ ছেলের সাথে তার কথা বলতে হবে।
তারা কতদূর এগিয়ে গেলো জানতে হবে?
রেহেনা চৌধুরীর ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে উঠলো।
সবাই ফোনের রিং এর শব্দ হওয়া জায়গায় দিকে তাকিয়ে দেখলো, আবরারের ঐখান থেকে শব্দ আসতেছে।
আবরার সবার তাকিয়ে থাকা দেখে শুকনো ঢোক গিলল,
পকেট থেকে তার আরেকটি গোপন ফোন বের করলো, যে ফোন দিয়ে সে অফিসের সকল কাজ করে। আরিশাদের চিল্লাচিল্লি শুনে ফোনটি রেখে আসতে ভুলে গিয়েছিলো।
আরিশা ____ এই তুই আরেকটি ফোন কবে কিনলি?
আবরার _____কাল রাতে কিনলছি। পুরাতন ফোন, এক বন্ধু বিক্রি করতে চেয়েছিলো কম দাম পেয়েছি কিনেছি।
আবরারের দিকে তাকিয়ে জারিন রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলল,
জারিন ______ দ্যা গ্রেট আবরার আয়ান চৌধুরী ও সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস ইউজ করে।
জারিনের মুখে রহস্যময়ী হাসি আর এই কথাটি শুনে আবরার বাঁকা হেসে বলল,
আবরার ______চোখের সামনে অনেক সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস দেখতে দেখতে হয়তো আমার ও মাঝে মাঝে মুড সুইং হয় এজন্য হয়তো কিনে ছিলাম।
আবরারের কথা শুনে জারিনের মুখটা চুপসে গেলো। সে ভালোই বুঝতে পেরেছে, আবরার যে এরিনকে ইঙ্গিত করে কথাটি বলেছে।
ঠিক তখনি আবরার বলল,
আবরার _____গায়েস আমার এখন উঠতে হবে। খুব ঘুম পাচ্ছে।
কথাটি বলেই আবরার চলে গেলো।
আবরার যেতেই আরিশা মেহেক কে বলল,
আরিশা ______ ভাবি আমার মনে হচ্ছে এই হতচ্ছাড়া প্রেম করতেছে।তা না হলে ও ফোন কেন লুকিয়ে রাখবে। ওর ফোন আমি মাঝে মাঝে ঘাটি আমি সিওর তাই ও এই ফোন লুকিয়ে রেখেছে।
মেহেক ______ আরিশা এটা কিন্তু ঠিক না। আবরার এখন বড় হয়েছে। আবরারের ও তো প্রাইভেসি আছে। আর আবরার যদি কাউকে পছন্দ করে আমাদের উচিত তা গ্রহণ করা।
আরিশা ______ আরে ভাবি তুমি ভাবতেছো এই গাধার কথা আর আমি ভাবতেছি এর সাথে যে প্রেম করে তার কথা। ঐ বেচারীর তো জীবন তেজপাতা। এ তো মেয়েদের সহ্যই করতে পারে না। তবে যাদের সাথে মিশে তাদের পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করে।
কথাটা বলেই তারা আবরার কে নিয়ে মজা করতে থাকলো।
অপরদিকে,
আবরার তার রুমে এসেছি কল দিলো ফিল্ড অফিসার আশিক কে,
আশিক ____ আসসালামু আলাইকুম স্যার
আবরার ____ ওয়ালাইকুম সালাম।
আশিক ____স্যার একটা চাঞ্চল্যকর খবর আছে।
আবরার ____ কি খবর বল?
আশিক _____স্যার আপনার একটা ফুফু ছিলো।কিন্তু সে এখন কোথায় কেউ জানে না?
আবরার _____ হোয়াট!!!!! কি বলছো এসব (অবাক হয়ে বলল)
আশিক _____সত্যি বলছি স্যার।
আবরার _____তুমি এসব কোথা থেকে জানলে।
আবরারের মুখ থেকে কথাটি শুনেই আশিক কাচুমাচু করতে থাকলো,
আবরার _____ কি হলো বলছো কেন? ( গম্ভীর হয়ে বলল)
আশিক ______যদি বলি আপনার ফুফুর এক তরফা প্রেমিকের থেকে।
আবরার _____ মানে!! হেয়ালি না করে পুরোটা বলো।
আশিক ______ আমি বাসায় বসে আপনার চাচ্চুর কেস গুলো নিয়ে কাজ করতেছিলাম। তখনি আমার গার্লফ্রেন্ড ভিডিও কল দেয়। আমি ল্যাপটপ স্কিন অফ না করে কলে কথা বলতে থাকি।
এক সময় আমার ফোনে ক্যামেরা ল্যাপটপ স্কিন দেখা গেলে সে আমাকে ফটো টা ভালো করে দেখাতে বলে।
এই কথাটুকু বলেই আশিক একটু দম নিলো।
তখনি আবরার বলল,
আবরার ______ কি হলো বলো!! তারপর কি হলো?
আশিক আবার বকা শুরু করলো,
আশিক ______ সে ফটো দেখে চিল্লিয়ে বলল ভালো বাবা।
হ্যা, ভালো বাবা। সে আপনার চাচ্চুকে ভালো বাবা বলে ডাকতো।
চলুন তাহলে আমরা জেনে আসি আশিক এবং তার গার্লফ্রেন্ড আফিয়ার সাথে কি কথা হয়েছিলো তখন,
আফিয়া ____ ভালো বাবা, ভালো বাবা। কতদিন পর ভালো বাবার ফটো দেখলাম।
আশিক ______ ভালো বাবা মানে তুমি কী আয়মান চৌধুরী কে চেনো?
আফিয়া _____ চিনবো না কেন? উনি আমার ভালোবাবা।
উনি আমাকে এত্ত এত্ত ভালোনাসতো (খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলল)
কিন্তি তুমি ভালো বাবার ছবি নিয়ে করছো?
আশিক ______ পরে বলবো?
আগে সব কাহিনী আমাকে বলো?
আফিয়া ___ ভালো বাবা আর বাবা ছিলো ২জন কোর্সমেট। একদিন ভালো বাবা একটা কেসের জন্য বাহিরে এলে তার বোন আছিয়া চৌধুরী তাকে ফলো করে।
বাবা একটু পরে আসায় বিষয়টি ধরতে পারে যে ভালো বাবাকে কেউ ফলো করতেছে। ভালো বাবা কে বিষয়টি বলল, তারা তাকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে আর সেই ফাঁদে আটক হয় আছিয়া চৌধুরী।
তখনি ভালো বাবা বলে সে তার বলন।
তখনি বাবা আছিয়া আন্টির ওপর ক্রাশ খায়। আর বাঁশ খায়।
এরপর চলে প্রেমে ফেলানোর প্রক্রিয়া কিন্তু বাবা সফল হয় না।
কোনো এক শেখ পরিবারের ছোট ছেলেকে সে ভালোবাসতো।
আশিক _____ নাম কি তার জানো?
আফিয়া _____ নাম তো ভুলে গেছি।
দাঁড়াও আগে বাবাকে বলি বাবা অনেক খুশী হবে।
কথাটি বলেই আফিয়া কল কেটে দেয়।
একটু পর আফিয়ার বাবা আকাশ মাহমুদ কল দেয় আমার ফোনে,
আশিক _____ আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
আকাশ _____ওয়ালাইকুম সালাম। আমি আফিয়ার বাবা বলতেছি।
আশিক ______জ্বি স্যার। কেমন আছেন।
আকাশ _____ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি আয়মান কে চেনো? আয়মান এখন কোথায় আছে?
আশিক _____ স্যার আসলে……. কীভাবে যে বলি বুঝতে পারতেছি না।
আকাশ _____ নিশ্চিন্তে বলো
আশিক _____ স্যার উনি আর বেচে নেই।ওনাকে খুন করা হয়েছে।
আশিকের মুখ থেকে কথাটি শোনা মাত্র ওপাশ থেকে কোনো কথা শোনা গেলো না প্রায় ৩ মিনিট।
দুই পাশেই পিনপতন নিরবতা চলতেছে।
আকাশ ______অপরাধী ধরা পরেছে কি? আর কোন জেলে আছে এখন?
আশিক ______আসলে স্যার, এই কেসটি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিলো।
আকাশ ______ আমাকে সব বলো।
আশিক ______ স্যরি স্যার। আমাদের ডিপার্টমেন্ট এই রুলস নেই।
আকাশ ______ তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি কে? আমি একজন মেজর।
আশিক ______ আসলে স্যার
আকাশ _______শোনো তোমরা প্রমাণ খুজতেছো। হয়তো কিছুটা আমিও হেল্প করতে পারি। আয়মানের অনেক কথা আমি জানি।
আশিক একটু ভেবে আবরারের মুখ থেকে শোনা সব কথা বলে দিলো,
আকাশ ______ আমি আবরারের সাথে দেখা করতে চাই। আবরারকে দ্রুত বান্দরবান আসতে বলো।এখানের পরিস্থিতি ভালো না। পরিস্থিতি ভালো থাকলে আমি নিজেই ঢাকায় যেতাম।
আশিক ______ঠিক আছে স্যার
কথা শেষ হতেই কল কেটে দিলো আকাশ।
আশিকের মুখ থেকে কথাটি শোনা মাত্র চুপচাপ কল কেটে দিলো আবরার।
আর সে ভাবতে লাগলো,
মেজর আকাশ কি এমন বলবে যে তাকে ইমার্জেন্সি বান্দরবান যেতে বলল।
আমার মনে হচ্ছে উনি কোনো রহস্য জানে।
অপরদিকে,
শেখ বাড়ির একটি গোপন কক্ষে চলছে রুদ্ধশ্বাস বৈঠক,
এরিনকে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না আবরার কে বিয়ে করতে।
আমজাদ _____ তুমি আবরারকে বিয়ে করলে আমি আবরাজকে তোমার করে দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিবো।
আমজাদের মুখ থেকে কথাটি শোনার সাথে সাথে এরিনের চোখ খুশীতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।
আপরদিকে, আজাদ শেখ তার ভাই এর বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে গেলো।
এরিন ______ কীভাবে?
আমজাদ _____ তুমি আবরার কে বিয়ে করার কয়েকদিিন পরে আমি আবরার এবং মেহেক কে মেরে দিবো।
এরপর চৌধুরী পরিবারের সিমপ্যাথি আদায় করে তোমার আর আবরাজের বিয়ে দিবো
কথাটি শুনেই এরিন খুশীতে গদগদ হয়ে রাজি হয়ে গেলো।
ঐ রুমের সবার মুখে তৃপ্তির হাসি।
মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৩
তবে কেউ খেয়াল করলো না, কেউ আড়াল থেকে তাদের গোপন কথাগুলো শুনতেছে আর বাঁকা হাসি দিচ্ছে।
অজানা ব্যাক্তি ____ পুরাতন টেকনিক। এাব কি আর চলে শেখ সাহেব। তাও রহস্যময়ী চৌধুরীদের কাছে।
এবারের হোলিতে মনে হয় রং এর বদলে রক্ত দিয়ে খেলা হবে।
কথাটি বলেই স্থান ত্যাগ করলো অজানা ব্যাক্তিটি।
কে এই অজানা ব্যাক্তি? কি তার পরিচয়? সে কি শেখ বাড়ির কেউ? চৌধুরী আর শেখ বাড়ির দ্বন্দে কার পতন হবে?
মেজর আকাশ কি বলার জন্য আবরার কে ডাকলো?দেখতে চোখ রাখুন আমাদের গল্পে।
