মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৯
সৌরভ চৌধুরী
চৌধুরী বাড়ির সবাই ডিনার করে খোশগল্পে মেতে উঠেছে।
তবে প্রত্যেকদিনের মতো আজ ও বিপরীত কিছু হয় নি। আজও আবরাজ, আবরার,আরহাম গম্ভীর হয়ে নিজেদের ভেতর আলোচনা করতেছে। অন্যদের গল্প শোনার বা অন্যদের সাথে গল্প করার মতো কোনো আগ্রহ ওদের নেই।
তবে আবরাজ নিজেদের ভেতর আলোচনা করতে করতে বার বার আড় চোখে মেহেকের দিকে তাকাচ্ছে।
ঠিক তখনি আছিয়া চৌধুরী আবরাজের উদ্দেশ্যে বলল,
আছিয়া _____ তা বাবা আবরাজ ভাবি মা এর থেকে তো সবই শুনলাম তবে আমি একটা বিষয় বুঝতেছি না।
আবরাজ ____ কোন বিষয় ফুপি।
আছিয়া _____ হঠাৎ তোমার আর মেহেকের বিয়ের বিষয়টা।
আছিয়া চৌধুরীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবরাজ একটু চুপ করে থাকলো,
অতঃপর নিরবতা ভেঙ্গে বলতে শুরু করলো,
আমি যখন দেশে আসি তারপরই চলে যায় মেহেকের খোঁজে কারণ আমি জানতে পেরেছি মেহেক এখন দিনাজপুর হিলি স্থল বন্দরের পাশে শ্যামপুর গ্রামে থাকে।
আমি যখন যায় তখন মেহেক মাত্র SSC দিয়ে রেজাল্ট হাতে পেয়েছে। তবে ওর মামা – মামি মেহেক কে কলেজে ভর্তি করে দিবে না। আমি এই বিষয়টি জানতে পারি।
তারপর ওর এক বান্ধবিকে বলি আমি মেহেক কে পছন্দ করি বিয়ে করতে চাই তবে এই কথা যেন সে মেহেক কে এখনি না বলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তারপর ওর সহযোগীতায় আমি মেহেকের সাথে পরিচিত হই। তারপর ধীরে ধীরে কথা বলি এবং আমি ও ওর সম্পর্কে জানি। তবে মেহেক কে কোনো দিন ও বলি নি যে আমি ওর চাচাতো ভাই।
কারণ আমার জানা মতে, মেহেকের ওপর তখন ও আমাদের শত্রুরা নজর রেখেছিলো৷
কেন নজর রেখেছিলো এই কথাটি আমি এখনি বলবো না।
ঐ কারণটা মেহেক নিজেও জানে না।
তারপর থেকে কথা বলতে বলতে এক প্রকার আসক্ত হয়ে যায়। আমি তো মেহেক কে বিয়ে করবোই কারণ ভালো মা কে কথা দিয়েছিলাম। তবে মেহেক কে তো আমার প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি করতে হবে।
তবে আমি জানতাম না মেহেকের ও কথা বলতে বলতে আমার প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।
এভাবে চলে সময় দেখতে দেখতে মেহেক HSC পরিক্ষা দেয়। ওর সকল খরচ আমি বহন করি তবে কলেজ থেকে মেহেক কে বলেছে ওর সকল খরচ কলেজ কতৃপক্ষ বহন করবে। কথাটা আমিই বলতে বলেছিলাম।
মেহেকের পরিক্ষার রেজাল্ট দেয় মেহেক গোল্ডেন পায়। তবে ওর মামাতো বোন পায় 4.30 এতে ওর মামি ক্ষিপ্ত হয়ে এক বুড়োর সাথে মেহেকের বিয়ে ঠিক করে।
মেহেকের থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছিলো ওর মামি। আর আমিও ব্যাস্ত ছিলাম।সব মিলিয়ে ওর বিয়ের বিষয় জানতে আমার দেড়ি হয়। যখন জানতে পারি দ্রুত চলে যায় শ্যামপুর।
তারপর মেহেককে পালিয়ে নিয়ে আসি ঢাকায়।
আবরাজের মুখ থেকে এমন কথা শুনে সবাই তো অবাক হয়ে যায়।
তখনি আরিশা বলে,
আরিশা _______পুরাই ঝাক্কাস ভাইয়া।। একদম সিনেমা ফেল।
জিও ভাইয়া জিও
আরিশা মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবরার আরিশার মাথায় চাটি মারে।
আরিশা আবরারের হাতে চাটি খেয়ে বুঝতে পারে, আবারো ভুল সময় ভুল ডাইলোক দিয়েছে। ও সাথে সাথে জিহ্বায় কামড় দেয়।
আরিশার এমন রিয়াকশন দেখে সবাই হাসতে শুরু করে।
তবে আসিফ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিশার দুষ্টমিভড়া মুখের দিকে।
এই বিষয়টা কেউ খেয়াল না করলেও রুশা খেয়াল করেছে।
রুশা মনে মনে ভাবতেছে _____ আমরা ২ ভাই বোনই ফেসে গেলাম। ভালোবাসা নামক ফাঁদে আটকে গেলাম।
তবে এই সম্পর্ক আমাদের কোথায় নিয়ে দাড় করাবে আল্লাহ জানে।
আমাদের জন্য অভিশাপ হিসেবে বলি আর ভিলেন হিসেবেই বলি, সমস্যা একটাই শেখ বংশের রক্ত আমাদের শরীরে।
কথাটি ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। সবার আড়ালে রুশা সেই পানি মুছে নিলো তবে তা মেহেক ঠিকি দেখেছে।
মেহেক ভাবতেছে _____ রুশার হঠাৎ কি হলো। ও কান্না করতেছে কেন? যায় হোক এই বিষয়ে পরে রুশার সাথে কথা বলা যাবে। সবার সাথে মজা করতেছি আগে মজা করে নি।
কথাটি ভেবেই আবারো সবার সাথে খোশগল্পে মজে গেলো।
আসিফ _____ তা আরহাম ভাইয়া তোমার আর জারিন আপুর প্রেম কাহিনীটা বলো শুনি?
আরহাম বিদ্রুপের স্বরে বলল,
আরহাম _____ যেখানে প্রেমই ছিলো না সেখানে আবার কিসের গল্প 😆।
আরহামের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আসিফ অবাক হয়ে গেলো,
আসিফ _____ মানে আমি শুনলাম জারিন আপু আর তোমার নাকি লাভ ম্যারেজ।
আরহাম তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
আরহাম ______ শেখদের সাথে আবারো ভালেবাসা। ভালোবাসা মাই ফুট।শেখরা ভালোবাসতে জানে না। শেখরা শুধু কেড়ে নিতে জানে। ( ঘৃণার সাথে বলল)
আরহামের মুখ থেকে এমন কথা শুনে, জারিন মাথা নিচু করে নিলো। আসিফ,রুশার মুখ থেকে হাসি উধাও হয়ে গেলো।
আসাদ মির্জা আড় চোখে ভাতিজির নিচু মাথার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাতিজির শুকনো মুখ, শরীর ছোপ ছোপ লাল দাগ, আর মাথা নিচু করতে দেখে তার বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো,
সেই সাথে রাগ উঠে গেলো আরহামের প্রতি।
রাগি চোখ নিয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
আসাদ ____ ও আচ্ছা চৌধুরীদের ভালোবাসার নমুনা তো ভালোই দেখতে পাচ্ছি। শরীরে ফোসকার দাগ, কথায় কথায় বাড়ির বউকে অপমান। এটাই বুঝি চৌধুরীদের ভালোবাসার নমুনা।
আসাদ চৌধুরীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবরাজ,আবরার,আরহাম একসাথে হেঁসে উঠলো,
তাদের হাসি দেখে আসাদ মির্জা ভড়কে গেলো। তিনি ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে এই ৩ ছেলে কোনো সাধারণ ছেলে না, আর এরা মুখের ওপর অপমান করতে ভালোবাসে।
আরহাম বিদ্রুপের সাথে উত্তর দিলো,
আরহাম ____ ওহহ রিয়েলি!! চৌধুরীদের ভালোবাসা নিয়ে আপনার সন্দেহ আছে?
আসাদ মির্জা নিজের রাগকে বজায় রেখেই উত্তর দিলো,
আসাদ _____ চোখের সামনে প্রমাণ থাকলে তো সন্দেহ থাকবেই।
আবারো হেঁসে উঠলো ৩ ভাই।
বাকিরা নিরব দর্শকের মতো ঠান্ডা যুদ্ধ দেখতেছে। তবে জারিন অবাক হয়ে তার চাচ্চুকে দেখতেছে, তার চাচ্চু তার জন্য লড়াই করতেছে। হ্যা এটা বুঝি রক্তের টান।ভাতিজির এই অবস্থা দেখতে না পেরে এই ঠান্ডা যুদ্ধ লাগিয়েছে তার চাচ্চু।
আরহাম _____ আহহ ফুপি। তুমি কার সাথে এত বছর সংসার করলে। যে এখনো তোমার ভালোবাসায় বুঝলো না। দেখো প্রমাণ চাচ্ছে, তা প্রমাণ দাও ফুপি।
আরহামের এমন বাঁকা কথায় ভড়কে গেলো আসাদ মির্জা। এই ছেলে তো ধুরন্দর চালাক।
এ তো এখন বউ এর সাথে তার লড়াই বাঁধাবে।
তখনি পাশ থেকে আবরার বলল,
আবরার _____ বুঝলে ভাইয়া সে কিন্তু শেখ পরিবারের সকল অস্তিত্ব মুছে দিয়েছে। অথচ শেখ পরিবারের নামে একটু কটু কথা শুনতেই রেগে আগুন। পরলো কথা হাটের মাঝে যার কথা তার গায়ে বাধে।
তাই না ফুপাজান ( শেষের কথাটা একটু টেনে বলল)
আসাদ মির্জা নিজের বিব্রত অবস্থা বুঝতে দিলেন না, গম্ভীর স্বরে বললেন,
আসাদ ______ তাহলে তো আমি বলতে পারি, আমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তোমার ফুপিকে দেখলেই বুঝতে পারবে। আমরা ভালোবাসতে জানি কি না।
এতক্ষণ সবকিছু নিরবে শান্ত ভাবে শুনতেছিলো আবরাজ।
এখন বাকা হাসি দিয়ে বলল,
আবরাজ _____ ওওও তাই নাকি। তা আমার ফুপি দিকে তাকিয়ে কি দেখবো তার কনুই এর নিচের ক্ষতটা, নাকি গলায় হাতের নখ বসে যাওয়ার আচড়টা।
কোনটা একটু বলেন শুনি
আবরাজের মুখে এমন কথা শুনে চৌধুরী বাড়ির সবার সাথে সাথে আসিফ, রুশা ও অবাক হয়ে আসাদ আর আছিয়ার দিকে তাকালো।
রেহেনা চৌধুরী সাথে সাথে উঠে গিয়ে আছিয়া চৌধুরীকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে হুংকার ছেড়ে বলল,
মা ______ তুমি আমার আছিয়ার শরীরে আঘাত করেছো। তোমার এত বড় সাহস।
রেহেনা চৌধুরী রেগে আগুন হয়ে আছে।সাথে সাথে আছিয়া চৌধুরী তার ভাবি মা কে জড়িয়ে ধরে শান্ত করলো।
তবে আছিয়া চৌধুরী নিজেও ভাবনায় আছে, সে তো মেকাপ দিয়ে গলার দাগ টা ঢেকে রেখেছিলো। আর ফুল হাতা ব্লাউজ পড়েছিলো তাহলে তার ভাতিজারা কীভাবে বুঝতে পারলো তার এই ক্ষতের কথা।
আছিয়া চৌধুরী ভাতিজাদের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আতকে উঠলো।
এই চোখ দিয়ে যেন তারা আসাদ মির্জাকে ভৎস করে দিচ্ছে।
এখানে বাড়ির লোকজন না থাকলে উনি সিওর আজ আসাদ মির্জার শরীরে হাত তুলতেও তার ভাতিজারা ২ বার ভাবতো না।
উনি সাথে সাথে তার ভাতিজাদের কাছে চলে গেলো আর তাদের শান্ত করতে লাগলো।
আবরাজ গম্ভীর স্বরে মেহেক কে ফার্স্ট এইড বক্স আনতে বললো।
মেহেক সাথে সাথে দৌড়ে চলে গেলো।
আসিফ তড়িৎ গতিতে উঠে গিয়ে দাড়ালো বাবার সামনে,
আসিফ ______ বাবা তুমি মায়ের শরীরে আঘাত করেছো কেন?
ছেলের মুখে সরাসরি এমন কথা শুনে আসাদ মির্জা ঘামতে লাগলো।
সে জানে তার ছেলে তার মা কে কত ভালোবাসে।
এর আগে ছেলের চোখে তার জন্য যে সন্মান দেখেছিলো আসাদ মির্জা আজ থেকে হয়তো সেই সন্মান তিনি আর দেখতে পাবেন না।
তবে তিনি এটাও ভালো করেই বুঝে গেছেন।
তার সামনে বসে থাকা ৩জন যুবকের সাথে শত্রুতা বাড়ানো মানে নিজের পায়ে নিজেরই কুড়াল মারা।
আসাদ মির্জার নিরবতা দেখে আসিফ যা বুঝার বুঝে গেছে, তার বাবা যে তার প্রশ্নের উত্তর দিবে না, সে ভালো ভাবেই বুঝে গেছে।
তাহলে কি চৌধুরী বাড়ির ছেলেদের কথা সত্যি? শেখ পরিবারের কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না? তাহলে তার মনে যে বসন্তের ফুল ফুটেছে এটার কি হবে?
চৌধুরী ৩ ছেলে মরে গেলেও তার বোনকে শেখ পরিবারের কারো সাথে বিয়ে দিবে না।
আসিফের এসব ভাবনার মধ্যেই মেহেক দৌড়ে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো।
আবরাজ নিজ হাতে ফুপির হাতটা জিবাণুমুক্ত করে লিকুইড ব্যান্ডেজ করে দিলো।
সবাই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখলো, ফুপির প্রতি ভাতিজার ভালোবাসা।
ভাতিজার এমন যত্ন দেখে আছিয়া চৌধুরী আবেগ আপ্লুত হয়ে আবরাজকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো,
এখন আবার কে এলো ______ ভাবতে লাগলো সবাই। ঠিক তখনি আরহাম গম্ভীর স্বরে বলল,
আরহাম _____ জারিন গিয়ে দেখো কে এলো?
তখনি পাশ থেকে মেহেক বলে উঠলো,
মেহেক ______ ভাইয়া ভাবি তো অসুস্থ। ভাবি থাকুক আমি গিয়ে দেখতেছি।
তখনি আরহাম গম্ভীর স্বরে বলল,
আরহাম _____ বনু। যাকে যেতে বলেছি সে যাবে। আমি ১ কথা ২ বার বলতে পছন্দ করি না।
আরহামের মুখ থেকে এমন কথা শুনে জারিন কষ্ট পেলো তবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো,
জারিন দরজা খুলে দেখতে পেলো তার সামনে দাড়িয়ে আছে, তার বাবা আমজাদ শেখ, চাচা আজাদ শেখ, বোন এরিন শেখ
তাদের এই সময় এই বাড়িতে দেখে জারিন শুকনো ঢোক গিলল।
আমজাদ ______ কেমন আছিস মা?
বাবার কথা শুনে জারিন তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ,
জারিন ______ তা শুনে আপনার কাজ আছে বলে তো মনে হয়।
কি জন্য এসেছেন তাই বলেন।
পাশ থেকে আজাদ শেখ বলল,
আজাদ __ জারিন বাবার সাথে এভাবে কেউ কথা বলে। তোমাকে কি এই শিক্ষা দিয়েছি আমরা।
জারিন বিদ্রুপের সাথে বলল,
জারিন ______ অবশ্য কোনো ভালো শিক্ষা দিছো বলে তো আমার মনে পরে না।
মেয়ের মুখে এমন তেড়া কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে আমজাদ শেখ। তবে এখন মেয়ের সাথে ঝামেলা করার সময় না।
এখন যা করতে হবে বুদ্ধি দিয়ে করতে হবে, বুঝে শুনে করতে হবে।
জারিন _______ আসুন ভেতরে আসুন।
আমজাদ শেখ, আজাদ শেখ, এরিনকে দেখে সবাই অবাক হলেও কোনো ভাবান্তর হলো না ওদের ৩ ভাই এর। যেন ওরা জানতো এদের আগমনের কথা।
আমজাদ শেখ আর আজাদ শেখ এত বছর পর তাদের ছোট ভাইকে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আসাদ ও তার বড় ভাইদের জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে আলাপ করলো।
আমজাদ শেখ যখন ভাতিজা আসিফের দিকে এগিয়ে যাবে, তখনি আসিফ তাদের উদ্দেশ্যে বলল,
আসিফ _____ ঐখানেই থেমে যান। আপনাদের সম্পর্ক আসাদ শেখ পর্যন্তই আসিফ মির্জা বা রুশা মির্জার সাথে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভাতিজার মুখে এমন কথা শুনে আমজাদ এবং আজাদ অপমানিত বোধ করলো।
তবে আসাদ মির্জার বুকের ভেতর ধক করে উঠেছে,
ছেলে আজ তাকে বাবা বলে ডাকে নি, নামের শেষে মির্জা ও বলে নি, শেখ বলেছে।
তাহলে কি তার সাথে তার ছেলের সম্পর্কের ফাটল ধরতেছে।
বাবা ছেলের সম্পর্ক ও কি ফিকে হয়ে যায়। হয়তো যায়, না হলে আসিফ কেন এত পরিবর্তন হবে?
বাবার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
আমজাদ আর আজাদ আসিফকে কিছু না বলে আয়ান চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল,
আমজাদ _____ তা ভাই সাহেব, কথা ছিলো আবরাজের সাথে আমার ছোট মেয়ে এরিনের বিয়ে দিবো আমরা। আবরাজ যেহেতু বিয়ে করে নিয়েছে।
তাই আমরা চাচ্ছিলাম নিজেদের ভেতর সম্পর্ক নষ্ট না করে, অন্য ভাবে সম্পর্কটা আরো মজবুত করি।
আয়ান চৌধুরী গম্ভীর স্বরে বলল,
বাবা _______ যা বলবেন সোজাসাপটা বলেন, এরকম হেয়ালি করে কথা না বলে।
আমজাদ শেখ মৃদু হেসে বলল,
আমজাদ _____ আমার বড় মেয়ে জারিন এই বাড়ির বউ, আমার ছোট মেয়ে এরিন অনেক আদরের, ও ম্যাচিউর ও না, তাই আবরাজের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম যেন ২ বোন একসাথে থাকে।
কিন্তু আবরাজ যেহেতু বিয়ে করেই নিয়েছে সেহেতু আমি বলি কি আমরা আপনাদের ছোট ছেলে আবরারের সাথে এরিনের বিয়ে দি তাহলে আমাদের ভেতরে যতটুকু ভুল বুঝাবুঝি ছিলো তা নিজেদের ভেতরই মিটে যাবে। ছেলে মেয়ে ২জনই আমাদের। কি বলেন ভাই সাহেব?
আয়ান চৌধুরী কি বলবেন ভেবে পেলেন না। আড় চোখে তিনি ছেলেদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ওদের মুখে রহস্যময়ী হাসি, যেন ওরা এই দিনের অপেক্ষা ছিলো।
ছেলেদের মুখে রহস্যময় হাসি দেখে উনি বুঝে গেলেন, এটা ঝড় আসার পূর্বাভাস।
ঠিক তখনি পাশ থেকে আসাদ বলল,
আসাদ _____ অতি উত্তম প্রস্তাব। ২ বোন একসাথে থাকলে সংসারে ঝগড়া ঝামেলা ও কম হবে।
ভাই এর মুখে এমন কথা শুনে আমজাদ শেখ মৃদু হেসে সায় জানালো।
কিন্তু বাবার মুখে এমন কথা শুনে রুশা বুকটা জ্বলে যাচ্ছিলো। এই তার বাবা, যে বাবা রুশা বলতে পাগল ছিলো আর আজ তার বাবা তার মেয়ের কথা চিন্তা না করে তার ভাতিজির কথা ভাবতেছে। আর কেউ না জানলেও তো তার বাবা অন্তত জানে যে তার মেয়ে রুশা আবরার কে ভালোবাসে।
তারপরেও তার বাবা কীভাবে পারলো এই কাজটা করতে।
রুশার চোখ টা জ্বালা করতেছে। তার বাবার দিকে তাকতেও তার ঘৃণা হচ্ছে।
আয়ান চৌধুরী গম্ভীর স্বরে বলল,
বাবা ______ আমরা আপতত আবরারের বিয়ের বিষয়টা নিয়ে ভাবতেছি না।
আমজাদ ____ ছেলে মেয়ে যেহেতু বড় হয়েছে বিয়ে তো দিতেই হবে। তাহলে দেড়ি করে কি হবে বলেন। এতদিন ভাবেন নি, আজ না হয় ভাবলেন।
কি বলেন ভাইসাব।
আমজাদ শেখের কথা শুনে আবরার তাচ্ছিল্যের সাথে বলল,
আবরার _______ বুঝলেন আংকেল। কয়েকদিন আগে সেকেন্ড হ্যান্ড একটা ফোন কিনেছিলাম বলে, আপনার বড় মেয়ে আমাকে নিয়ে মজা নিলো।
অথচ যাকে বিয়ে করবো আমার সেই বউই যদি সেকেন্ড হ্যান্ড হয় তাহলে শুধু আপনার মেয়ে কেন? পুরো ঢাকা শহরের মানুষ আমার সাথে মজা নিবে? বলবে দ্যা গ্রেট আবরার আয়ান চৌধুরী অন্যের ব্যাবহার করে ফেলে দেওয়া জিনিস বিয়ে করে তা আবার সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে।
আবরারের মুখে এমন কথা শুনে আমজাদ শেখ রেগে অগ্নি শর্মা হয়ে বলল,
আমজাদ ____ হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কীভাবে হয় আমার মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার।
তোমাকে তো আমি
আমজাদ শেখের কথা শেষ হওয়ার আগেই আরহাম পাশ থেকে সিটি বাজিয়ে উঠে,
আরহাম _____ আবরার রে আমার শশুর তো চেতে গেছে। এক কাজ কর আমার অনেক দিনের শখ জামাই শশুর একসাথে রোমান্টিক মুভি দেখবো।
যা পেনড্রাইভ নিয়ে এসে টিভি তে রোমান্টিক মুভি দে। আজ জামাই শশুর একসাথে রোমান্টিক মুভি দেখে, শশুরের মাথা ঠান্ডা করবো।
আরহামের মুখে এমন কথা শুনে আমজাদ, আজাদ বিব্রত হয়ে গেলো, যতই হোক জামাই তো।
অপর দিকে,
ছেলের এমন লাগামহীন কথা শুনে আয়ান চৌধুরীর কাশি উঠে গেলো।
রেহেনা চৌধুরী ভাবতে লাগলো, তার ছেলে এই কথা দ্বারা কি বুঝালো?
অপরদিকে,
আরহামের দিকে তাকিয়ে আবরার বাঁকা হাসি দিয়ে পেনড্রাইভ আনতে গেলো।
আমজাদ শেখ আড়চোখে আবরাজের দিকে তাকালো দেখতে পেলো,
আবরাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে, যেন এসবে তার কোনো যায় আসে না।
আবরার পেনড্রাইভ এনে টিভিতে কানেক্ট করলো।
আরহাম আমজাদ শেখের হাত ধরে তার পাশে বসালো আর বলল,
আরহাম _____শশুর মশাই যা কথা হবে পরে হবে। আজ আগে জামাই শশুর রোমান্টিক মুভি দেখবো।তারপর বাকি কথা হবে।
তখনি আবরার টিভিতে একটা ভিডিও ক্লিপ চালু করলো,
ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে এরিন রাতের বেলা মদ খেয়ে একটা ছেলের হাত ধরে হোটেল রুমে ঢুকতেছে।
এতটুকু দেখেই রেহেনা চৌধুরী মেহেক, আরিশা আর রুশা কে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো, পেছন পেছন আছিয়া চৌধুরী ও গেলো।
তারপরের সিনে দেখা যাচ্ছে ঐ ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত কাটাচ্ছে এরিন। আমজাদ,আজাদ,আসাদ আর আয়ান চোখ খিচে বন্ধ করলো।
আমজাদ ______ বন্ধ করো এসব। আর আজাদ একটা কাজ আছে আমাকে দ্রুত সেখানে যেতে হবে চল।
আরহাম আমজাদ শেখের হাত ধরে বলল,
আরহাম ______ আরে শশুর মশাই ১ ঘন্টার মুভি ২ মিনিট দেখেই আপনি এত উত্তেজিত হলে হবে।আরে বসুন না জামাই শশুর একসাথে রোমান্টিক মুভি দেখি।
আমজাদ শেখ আরহামের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত চলে গেলে চৌধুরী বাড়ি থেকে তার পেছন পেছন আজাদ শেখ এবং মাথা নিচু করে এরিন গেলো।
তারা চলে যেতেই আবরাজ, আরহাম, আবরার জোরে হেঁসে দিলো।
আয়ান চৌধুরী রেগে বলল,
বাবা ____ হতচ্ছাড়া এসব ছাড়বি আগে ইশারা দিলেই তো আমি উঠে যেতাম।
আবরাজ বিদ্রুপ করে বলল,
আবরাজ _____ কেন বাবা তুমি কি বেয়াই এর সাথে বসে রোমান্টিক মুভি দেখতে চেয়েছিলে?
বাবা _______ চুপপপ থাক বেয়াদব।
আমি তোর বাপ হই বাপ। একটু তো সন্মান দে।
আমজাদ শেখ, আজাদ শেখ, এরিন চলে যেতেই রান্না ঘর থেকে সবাই ড্রয়িং রুমে এলো।
রুশা তার বাবার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
মেয়ের মুখে এমন হাসি দেখে আসাদ বুকের ভেতর জ্বালা করতেছে।
সবদিকে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কি তাহলে সে তার নিজের ছেলে মেয়ের চোখেই খারাপ বাবা হয়ে গেলো।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আয়ান চৌধুরী বলল,
বাবা ______ কাল সকালে আমরা দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে বের হবো।
যেহেতু আছিয়া ও এসেছে। সবাই মিলে দিনাজপুর গিয়ে আয়মানের কবর জিয়ারত করে আসবো। আর ঐখানে কিছু কাজ আছে শেষ করে আসবো।
সবাই আয়ান চৌধুরীর কথায় সন্মতি জানাই।
অপরদিকে,
মেহেক পরেছে মহা চিন্তায়, মেহেক কে চিন্তিত দেখে আবরাজ গিয়ে বসলো মেহেকের পাশে।
ঘোর লাগা গলায় বলল,
আবরাজ _____ মায়াবতী তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তুমি এখন একা না। তোমার পুরো পরিবার আছে। তোমার পাশে তোমার মন্ত্রীমশাই আছে।
এখন একটু শক্ত হও। তোমার ওপর করা প্রত্যেকটা অন্যায়ের হিসাব নিতে হবে।
মেহেক ______ ওরা যদি সবার ক্ষতি করে দেয়।
আবরাজ _____ মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীর বউ এতটুকুতে ভয় পেয়ে গেলে চলবে। তোমাকে সাহসী হতে হবে।
কি হবে না সাহসী।
মেহেক একটা দম নিয়ে বলল,
মেহেক _____ হ্যা হবো সাহসী।আমার ওপর করা প্রত্যেকটা অন্যায়ের হিসাব নিবো আমি।
এরপর সবাই ঘুমাতে গেল,
সবাই ঘুমিয়ে গেলেও ঘুম নেই আসাদ মির্জার চোখে।
সে লক্ষ্য করেছে তার ছেলে মেয়ে এখন তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখতেছে।
ছেলে মেয়ের চোখে বাবার প্রতি ঘৃণার দৃষ্টি দেখে কোনো বাবাই স্থির থাকতে পারে না, তেমনি আসাদ মির্জা ও পারতেছে না।
বাংলাদেশে আসার পূর্ব মুহুর্তে স্ত্রী ওপর করা অত্যাচার ও তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
এতগুলো বছর স্ত্রী কে স্বসন্মানে রেখে বাংলাদেশে আসার পূর্ব মুহুর্তে আঘাত করে চৌধুরী পরিবারের ৩ ছেলের চোখে বিষ হয়ে আছে সে।
আয়ান চৌধুরী ও সন্তুষ্ট না আবার ছেলের চোখের দিকেও তাকাতে পারতেছে না।
সব মিলিয়ে আসাদ মির্জা অপরাধ বোধে ভুগতেছে,
সকাল বেলা চৌধুরী বাড়িতে রেহেনা চৌধুরী সবাইকে তারা দিচ্ছে দ্রুত বের হওয়ার জন্য।
সবাই রেডি হলেও ঘুম পাগলা আবরারের খবর নেই। গভীর রাত পর্যন্ত তিন ভাই আলোচনা করেছে দিনাজপুর গিয়ে কিভাবে কি করতে হবে না করতে হবে। এজন্য ঘুমাতে দেরি হয়েছে তাই এখনও আবরার ঘুম থেকে উঠতে পারিনি।
রেহেনা চৌধুরী তো আর এই বিষয়টা জানে না, তিনি আবরারকে বকেই যাচ্ছে বকেই যাচ্ছে।
রেহেনা চৌধুরীর এই অবস্থা দেখে রুশা বলল,
রুশা _____ মামি তুমি শান্ত হয়ে বসো। আমি দেখতেছি, আমি আবরারকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসতেছি
রেহেনা চৌধুরী ক্লান্ত মুখে বলল,
মা _____ যা মা গিয়ে কান ধরে তুলে নিয়ে আয়।
রেহেনা চৌধুরীর মুখে এমন কথা শুনে সবাই ঠোঁট চেপে হাসি আটকে রাখতেছে,
এদিকে রুশার মনের ভেতর তো ঘন্টা বাজতেছে।
রুশা চলে গেলো আবরারের রুমের দিকে।
আবরারের রুমের সামনে গিয়ে দরজার কয়েকবার শব্দ করলো তবে আবরারের ওঠার নাম নেই, কোনো সাড়া শব্দ ও দিচ্ছে না।
হঠাৎ রুশার মাথায় দুষ্টমি বুদ্ধি আসিলো,
রুশা ______ হেই হ্যান্ডসাম, তুমি কি প্লান করেছো, ঢাকায় থেকে যাবে। কোনো সমস্যা নেই, তাহলে আমিও মামি কে বলে আমি ও ঢাকায় থেকে যায় তারপর শুধু তুমি আর আমি, আমি আর তুমি ( কথাটা বলেই দুষ্ট হাসি দিলো)
রুশার মুখের এমন কথা আবরার শোনা মাত্র জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল,
আবরার ______ বেয়াদব মেয়ে, যদি তুমি এখান থেকে এখনি না যাও তাহলে বেলকনিতে নিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো। ( রাগিস্বরে বলল)
আবরারের মুখে এমন কথা শুনে রুশা যেন মজা পেলো, তাই আবরারকে আরো রাগিয়ে দিতে বলল,
রশা ______ এই হ্যান্ডস্যাম তুমি কি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি রুমে ডাকতেছো, দেখো আমি কিন্তু ঐ রকম মেয়ে না।
রুশার মুখে এমন কথা শুনে আবরার বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলো, এরপর ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসলো।
ভোর ৬টায় তারা সবাই রওনা দিলো দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে,
আবরাজের গাড়িতে আছে,
আবরাজ, মেহেক, আবরার,আরিশা,আরহাম,জারিন, রুশা আর আসিফ।
বাকিরা অন্য গাড়িতে বসেছে। ঐ গাড়ি চালাচ্ছে আবরাজের পিএস রিশান।
তবে সবার আড়ালে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আসছে স্যাডো গ্যাং এর লোকজন, ও আরহামের গ্যাং এর লোকজন।
এত এত নিরাপত্তা কেউ দেখতে না পেলো ও আবরার ঠিকি দেখতে পেয়েছে,
DGFI এর ডিরেক্টর বলে কথা, চোখ কান খোলা তো রাখতেই হবে।
তখনি আরহাম চিন্তিত কন্ঠে বলল,
আরহাম ______ আবরাজ ঐদিকে কি সব রেডি করে রেখেছিস। বাড়ির সবাইকে নিয়ে যাচ্ছি, যেতে যেতে সবাই ক্লান্ত হয়ে যাবে। সবাই তো রেস্ট নিবে।
আবরাজ ______ তোর চিন্তা করতে হবে না। ঐখানে একটা বাগান বাড়ি আমি ১০ দিনের জন্য ভাড়া নিয়েছি। ঐখানে সব ব্যাবস্থা আছে।
ঠিক তখনি মেহেক পাশ থেকে বলল,
মেহেক ____ আমরা ভাড়া বাসায় উঠবো কেন?
ঐখানে আমার বাবার নিজের তৈরি করা বাসা থাকতে ভাড়া বাসায় উঠবো কেন?
পাশ থেকে আবরাজ বলল,
আবরাজ ______ ঐখানে তো এখন তোমার মামা – মামি থাকে।
মেহেক ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
মেহেক ______ তো, ওরা থাকে বলে কি আমরা যাবো না। আমার থেকে কেড়ে নেওয়া সকল কিছু আমি ফেরত চাই মন্ত্রীমশাই।
মেহেকের এমন কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো, তখনি আরহাম বলল,
আরহাম _____ আমার বনু টা দেখতেছি অনেক সাহসী হয়ে উঠেছে।
মেহেক ______ সাহসী তো হতেই হবে।
আমি একজন মন্ত্রীর বউ, আমার নরম হয়ে থাকলে চলবে না, আর তাছাড়া যার তোমার আর আবরারের মতো ভাই আছে তার আবার কিসের ভয়।
আমি জানি তো আমার সকল বিপদে আমার ভাইরা আমার সামনে দাড়িয়ে যাবে।
তখনি আবরাজ টিটকারীর সাথে বলল,
আবরাজ ______ হ সব তো তোমার ভাইরাই করে আর আমি শুধু দেখি।
মেহেক _______ আরে মন্ত্রীমশাই আপনি এত হিংসুটে হলেন কবে থেকে।
আবরাজ _______ আমি আমার বউ এর জন্য সব সময় হিংসুটেই হবো।
আবরাজ আর মেহেকের খুনসুটি দেখে জারিন আড়চোখে আরহামের দিকে তাকালো।
আরহামের চোখ মেহেকের দিকে৷ তার মুখে তৃপ্তির হাসি, তার বোনটা যে সুখে থাকবে সেজন্য।
তবে জারিনের মুখে কষ্টের হাসি, সে কেন এমন ভালোবাসা পায় নি, সে তো বড় হয়েছে কীভাবে অন্যের থেকে ছিনিয়ে নিতে হয়, কীভাবে চৌধুরীদের ধ্বংস করতে হবে এসব শুনে শুনে।
তার ও কি প্রাপ্য ছিলো না একটা সুন্দর সুস্থ পরিবেশ। তারও কি প্রাপ্য ছিলো না মেহেকের মতো ভালোবাসা।
মেহেকের ক্ষতি করতে চাইলে কি সে বা তার পরিবার পারবে,
যেখানে আবরাজের মতো বলিষ্ঠ পুরুষ তার সামনে দাড়িয়ে যাবে।
আরহামের মতো ঘুমন্ত হিংস্র মানুষ ও জাগ্রত হয়ে যাবে যদি শুনে তার বোনের ক্ষতি করবে,
আবরার মতো বুদ্ধি দিপ্ত, সাহসী ভাই আছে মেহেকের।
সেখানে তারা কীভাবে মেহেকের ক্ষতি করবে।
উল্টো মেহেকের ভাইরা যদি বুঝতে পারে তাহলে শেখ পরিবারের সাথে সাথে তাকেও ধ্বংস করে দিবে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে জারিনের বুক চিঁড়ে বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘ নিশ্বাস।
তখনি পাশ থেকে রুশা বলল,
রুশা _______ ভাইয়া আমরা দিনাজপুর গিয়ে একশন সিন দেখতে পাবো কি?
রুশা মুখে এমন কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো, ঠিক তখনি আবরাজ আবরারের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
আবরাজ ______ আমাদের হ্যান্ডসাম একশন সিন দেখাতেও পারে।
আবরাজের মুখে এমন কথা শুনে রুশা এবং আবরার ২জনেরই কাশি উঠে গেলো।
মেহেক আর আরিশা সন্দেহের চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আবরার ইনোসেন্ট ভঙ্গিতে আরিশা আর মেহেকের দিকে তাকিয়ে আছে,
আবরারের ইনোসেন্ট ভঙ্গি দেখে, আরিশা আর মেহেক উচ্চস্বরে হেসে দিলো।
আবরাজ অপলক দৃষ্টিতে মেহেকের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।
আর ঠিক তখনি পেছন থেকে আবরাজের মাথায় আরহাম চাটি মারল,
আরহাম _______ আরে ভাই ওইটা তোর বউই পরেও দেখতে পাবি। এখন আপাতত চোখটা সামনের দিকে দে, না হলে তো আমরা সবাই অক্কা পাবো। আমার এখানও আরেকটা বিয়ে করা বাকি আমি আমার এই মনের আশা পূরণ না করে মরতে চাচ্ছি না।
আরহামের কথা যেন আবরাজ কানেই নিল না উল্টো বিরক্ত হয়ে বলল,
আবরাজ _____ আমার বউকে আমি দেখব তাতে তোর কি? তোর এত জ্বলে কেন?
আরহাম ______ তোর বউকে তুই দেখ তাতে আমার সমস্যা নেই তাই বলে অ্যাক্সিডেন্ট করিস না। আমার কিছু হলে আমার হবু বউয়ের কি হবে?
আরহাম এর মুখে এমন কথা শুনে আবরাজ ঠিকই বুঝতে পারল তার ভাই যে জারিনকে জালানোর জন্য এসব কথা বলতেছে।
অন্যদিকে, আরহাম এর মুখে এমন কথা শুনে জারিনের চোখ যেন জ্বালা করতে লাগলো।
গাড়ির এই গুমট পরিবেশ পরিবর্তন করার জন্য চঞ্চল রুশা তখনই গেয়ে উঠলো “এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো” গানটি।
রুশার সাথে বাকি রাও গেয়ে উঠলো একই গান।
হাসি মজা দুষ্টুমি করতে করতে সবাই পৌঁছে গেল দিনাজপুরের হিলি বর্ডার সংলগ্ন শ্যামপুর গ্রামে।
শ্যামপুরের গ্রাম্য রাস্তা দিয়ে আবরাজদের গাড়ি ছুটে চলতেছিল আর গ্রামের মানুষরা অবাক দৃষ্টিতে গাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল। কারণ তাদের গ্রামে এর আগে এত দামি গাড়ি আসেনি। সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে এলো তাদের গ্রামে?
গাড়িগুলো মহাসিন শিকদারের (মেহেকের মামা) বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।
বাড়ির উঠোনে এত দামি গাড়ি থামতে দেখে মহাসিন শিকদার ভড়কে গেল। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে ছুটে গেল গাড়ির কাছে কে এসেছে তা দেখার জন্য।
সবার প্রথমে আবরাজের পাশ থেকে মেহেক দরজা খুলে পা রাখল বাড়ির উঠোনে।
মেহেককে এত দামি গাড়ি থেকে নামতে দেখেই মহসিন শিকদার এবং তার স্ত্রী রাবেয়া সিকদার অবাক এর চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেল।
পরমুহূর্তেই মেহেকের প্রতি রাগ রাবেয়া সিকদারের মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।
রাবেয়া সিকদার তেরে গেল মেহেককে আঘাত করার জন্য যেই মেহেককে থাপ্পর মারতে যাবে তখনই তার হাত আবরাজ ধরে ফেলল,
আবরাজ রাগী কন্ঠে রাবেয়া শিকদারের উদ্দেশ্যে বলল,
আবরাজ _____ এই হাত যদি আর একবার আমার বউয়ের শরীরে আঘাত করতে আসে তাহলে এই হাত আমি আপনার শরীর থেকে আলাদা করে ফেলব।
আবরাজের মুখে এমন কথা শুনে রাবেয়া সিকদার ভয় পেয়ে গেল। তিনি ভয়ে তার স্বামী মহাসিন শিকদারের পেছনে লুকালো।
মহাসিন শিকদার যেন একের পর এক ঝটকা খাচ্ছে এবারের ঝটকা তার জন্য অনেক বড় ছিল। কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরী আর তার মুখ থেকে মেহেক তার স্ত্রী শোনার পর থেকে সে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীকে সামনে দেখে মেহেকের মামাতো বোন রেশমা সিকদার নিজেকে আর সামলাতে না পেরে আবরাজ আর মেহেকের সামনে গিয়ে বলল,
রেশমা ____ কিরে মেহেক তুই তো অনেক বড় খেলোয়াড়। তুই কি দিয়ে মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীর মত একজন মানুষকে বশ করলি। নিশ্চয়ই রূপ দিয়ে, তাছাড়া আর তোর কি আছে না আছে বংশ পরিচয় না আছে বাবা-মা। তোর মত মেয়েকে কি দেখে দ্য গ্রেট আবরাজ আয়ান চৌধুরী বিয়ে করবে।
রেশমার মুখে থেকে আর কোন কথা বের হওয়ার আগে ঠাসসস করে একটা শব্দ হলো আর রেশমার সিটকে পড়ল কয়েক হাত দূরে।
সবাই অবাক হয়ে থাপ্পর মারা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছে।
আর তিনি রাগে অগ্নি মূর্তি ধারণ করে আছে। যেন সে চোখ দিয়ে সবাইকে ভৎস করে দেবে। তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে এই চোখেই সিকদারদের ধ্বংস অনিবার্য।
মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৮
কে হতে পারে সেই ব্যাক্তি যে রেশমা কে থাপ্পর মারলো? মেহেক নিজে নাকি অন্য কেউ? কি হতে চলেছে শিকদারদের সাথে? শ্যামপুরে চৌধুরী পরিবারের আগমন কি শত্রুদের রাজত্ব ধ্বংস করে দিবে? শ্যামপুরের প্রত্যেকটি মানুষ নতুন মেহেক কে দেখতে পারবে নাকি আগের সেই ভাঙ্গা, আশ্রয়হীন খড়কুটোর মতো বেচে থাকে মেহেক কে দেখতে পাবে?
