মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১১

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১১
নুজাইফা নূন

-” তোর ডাক্তারবাবু দেখতে কি মেলা সুন্দর সিজদা?”
-” হ খালা একদম সিনেমার নায়কের মতো। অনেক বড় মনের মানুষ ডাক্তার বাবু।না হলে চেনা না জানা না সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মাইয়ার লাইগা কেউ এতোটা করে ক‌ও?”
-” যে ভালা তার লাইগা আল্লাহ ভালোই করে রে মা।তোর কপাল অনেক ভালা রে মা।কতো বড়লোক বাড়ির ব‌উ হতে যাচ্ছিস।তোর আর কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না।”

-” আমার দুঃখ কষ্ট কখনো শেষ হ‌বে না খালা।আমার যে একটাই দুঃখ।আমার মা জীবিত থাকতেও আমি আমার মায়ের চেহারা দেখি নি।আমার মায়ের আদর ভালোবাসা পাই নি।আমার মা আমাকে আদর করে মুখে তুলে খাইয়ে দেয় নি।রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি।এর থেকে আর বড় কষ্ট কি হতে পারে বলো?আজ বাদে কাল আমি এই বাড়ি ছাইড়া তোমারে ছাইড়া চ‌ইলা যামু।আমার একটা কথা রাখবা খালা?বিয়ার আগে আমারে একটু মায়ের কাছে ল‌ইয়া যাইবা ?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তোর মা তো মেলা অসুস্থ্য।পাগল।কাউরে চিনতে পারে না। অপরিচিত কাউরে দেখলি কামড় দেয়, হাতের কাছে যা পায় ,তাই ছুঁড়ে মারে।ঐহানে কারো যাওনের অনুমতি নেই।আল্লারে ডাক মা। আল্লাহ যদি চান তোর মা সুস্থ্য হ‌ইয়া তোর কাছে ফিরে আইবো। তুই তোর মায়ের ভালোবাসা ফিরে পাবি।”
-” সিজদা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাশেদ চৌধুরী এসে দরজায় কড়া নাড়ে। রাশেদ চৌধুরী কে দেখে সিজদা বিছানা থেকে নেমে বললো,
-” কিছু ক‌ইবা মামু?”
-”রাদেশ চৌধুরী কিছু না বলে সিজদার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়।সিজদা প্যাকেট টা নাড়াচাড়া করে দেখে বললো,

-” কি আছে এর মধ্যে?”
-” একটা বোরকা আর হিজাব।”
-”আমার তো বোরকা হিজাব আছে। শুধু শুধু এগুলো আনতে গেছো ক্যা তুমি?”
-” আগামীকাল সকাল দশটায় কাকিমা তোকে নিতে আসবে। এজন্য তোর জন্য একটা নতুন বোরকা নিয়ে এলাম।তুই আগে থেকেই রেডি হয়ে থাকিস।”
-” কোথায় যাবো?”
-” বিয়ের শপিং এ।”
-” আমি না গেলে হয় না মামু?”
-” না ।কাকিমা বারবার করে বলে দিয়েছেন সে তোর পছন্দ অনুযায়ী সব কিছু কেনাকাটা করবেন।তুই সকাল সকাল তৈরি হয়ে থাকিস। কাকিমার যেন অপেক্ষা করতে না হয়।”
-” ঠিক আছে‌‌ মামু।।”

-” তুই কি মেয়েটা কে ভালোবাসিস সারজিস?”
-” সারজিস শাওয়ার নিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছিলো‌ ।তখনি সারজিসের নিজের‌ই একটা প্রতিবিম্ব এসে সারজিস কে প্রশ্নবিদ্ধ করে।সারজিস কালবিলম্ব না করে উত্তর দেয়,
-” নো ।”
-” কিন্তু তোর চোখ মুখ যে অন্য করা বলছে সারজিস।তোর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুই তোর মায়াবতীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিস।”
-” একদম রাবিশ কথা বলবে না বলে দিলাম। মেয়েটাকে চিনি না জানি না। আজকেই প্রথম দেখা হয়েছে তার সাথে।প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয় নাকি?”

-” ভালোবাসা হতে দিন, সপ্তাহ,মাস , বছর লাগে না। ভালোবাসা মনের অজান্তেই হয়ে যায়।যেমন টা তোর হয়েছে। তুই মানিস বা না মানিস এটাই ঠিক যে তুই মেয়েটা কে ভালোবাসিস। তুই লক্ষ করেছিস আজকের দিন টা অন্য দিনের থেকে ভালো কেটেছে তোর? তুই আজ সারাদিন উৎফুল্ল হয়ে ছিলি? মেয়েটার কথা ভাবতেই হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে।মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।তাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লেগেছে।এমনকি তার ব্যবহৃত র’ক্ত মাখা রুমাল খানা ও নিজের কাছে যত্ম করে রেখে দিয়েছিস।রুমাল খানা কখনো ছুঁয়ে দিচ্ছিস, ঘ্রাণ নিচ্ছিস।এসব কি ভালোবাসার লক্ষণ না? বলেই প্রতিবিম্ব টা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।”
-” সারজিস র’ক্ত মাখা রুমাল খানা বুকের সাথে চেপে ধরে বললো ,

-”মেয়েটাকে ভালোবাসি কি না জানি না।তবে তার সাথে বাকি জীবন টা কাটানোর সাধ জেগেছে।তার হাতে হাত রেখে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে ইচ্ছে করছে।আমি তো এর আগে কখনো প্রেমে পড়িনি। কোনো মেয়েকে ভালোবাসি নি।তাই বুঝতে ও পারছি না আমার এসব ইচ্ছা, অভিলাষের নাম‌ই কি ভালোবাসা?মেয়েটা একটা চুন্নি।হুট করে এসে আমার মন চুরি করে নিয়ে চলে গেলো? চুন্নিটার নামে মামলা দেওয়া উচিত ছিলো আমার।”
-” একা একা কি সব আবোল তাবোল বকছো
ভাইয়া? তোমার রুমে তো তুমি ছাড়া কাউকে দেখতে পারছি না।”

-” মেয়েলি কণ্ঠস্বর শুনে সারজিস পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে দরজায় তার বোন সামিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে।সামিরা তার নিজের মায়ের পেটের বোন না হলেও সামিরা কে সারজিস অনেক ভালোবাসে।সামিরার সকল আবদার পূরণ করে। সামিরা দেখতে যেমন মিষ্টি তেমনি ব্রিলিয়ান্ট।সামিরা ক্লাস টেনে পড়ে। সামিরা ও ইচ্ছে তার ভাইয়ার মতো নামকরা একজন ডক্টর হবে।সামিরা কে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সারজিস বললো,
-” দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন পাগলী? ভেতরে আয়।”
-” তুমি কার সাথে কথা বলছিলে ভাইয়া?”

-” সামিরার প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় সারজিস।সারজিস কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো,
-” ফোন , ফোনে রামিমের সাথে কথা বলছিলাম।”
-”ওহ্।তাই বলো।আমি আরো ভাবছিলাম আমার নিরামিষ ভাইয়ের জীবনে হয়তো আমিষের সঞ্চার হয়েছে।”
-” সামিরার কথা শুনে সারজি সামিয়ার কান টেনে ধরে বললো, তবে রে পাকনী বুড়ি।”
-” উফ্ ছাড়ো।লাগছে ভাইয়া।”
-” সরি সরি।”

-” সরি কি ব্যাথা বড়ি? সরি লাগবে না আমার।তোমার সরি ধুয়ে তুমি পানি খাও।”
-” তাহলে কি লাগবে আমার মিষ্টি বোনটার?”
-”আমি তোমার নিজের বোন না বলে তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না ভাইয়া।”
-” এভাবে বলতে পারলি সামিরা? আমি কখনো তোকে তোর ভাইয়ের অভাব বুঝতে দিয়েছি? কখনো বলেছি তুই আমার আপন বোন না? তুই তো আমার কলিজা। তুই আমার দশটা না পাঁচটা না একটাই মাত্র বোন। তোকে ভালো না বাসলে আর কাকে ভালোবাসবো বল তো?”
-” একদম‌ই ভালোবাসো না ভাইয়া। যদি ভালোবাসতে তাহলে আগামীকাল যে আমার জন্মদিন সেটা ভুলে যেতে না।”

-” সারজিস সামিরা কে এক হাতে আগলে নিয়ে বললো,
-” আমি আমার মিষ্টি বোনটার জন্মদিনের কথা ভুলে যাবো।এটা কি আদৌ সম্ভব? আগামীকাল তোর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি।”
-” কি সারপ্রাইজ বলো না ভাইয়া?”
-” গাঁধী একটা।সারপ্রাইজের কথা বলে দিলে সেটা কি সারপ্রাইজ থাকে বলে?”
-” বলো না ভাইয়া।কি সারপ্রাইজ রেখেছো এটা জানতে না পারলে আমার সারারাত ঘুম হবে না। পেট ব্যথা করবে।”

-” কিচ্ছু হবে না।কালকের টা কালকে দেখতে পাবি।এখন যা গিয়ে পড়তে বোস।”
-” ওকে থাকলাম না বড়লোকের রুমে বলে সামিরা সারজিসের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু কয়েক কদম পা বাড়াতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। মূহুর্তেই অমানিশা অন্ধকারে ছেয়ে যায় গোটা বাড়ি।সামিরা ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালাতেই আবছা আলোয় ড্রয়িং রুমে একটা পুরুষ অবয়ব দেখতে পায়। লোকটা গুটি গুটি পায়ে ভেতরের দিকে এগিয়ে আসছে।সামিরা ফোনের ফ্ল্যাশ অফ করে মনে মনে বললো ,

-” বাড়িতে নিশ্চয় চোর ঢুকেছে। কিন্তু এতো কড়া সিকিউরিটির মধ্যে চোর কিভাবে বাড়িতে প্রবেশ করলো?আজকে চোরের একদিন কি আমার যতোদিন লাগে বলে সামিরা নিঃশব্দে হেঁটে ড্রয়িং রুমে এসে নিজের ওড়না দিয়ে লোকটার মুখ ঢেকে দিয়ে লোকটা কে জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বললো,
-” চোর চোর। বাড়িতে চোর এসেছে।মা , বাবা, ভাইয়া , দাদু কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি নিচে আস।চোর ধরেছি চোর। তাড়াতাড়ি আসো সবাই ।সামিরার চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে আসে সবাই। ততোক্ষণে কারেন্ট চলে আসে। বিদ্যুতের আলোয় চোরের অবয়ব দৃশ্যমান হয়।শান্তা মির্জার যেন চোর কে চিনতে অসুবিধা হয় না। শান্তা মির্জা কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন,

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১০

-” আরে আরে কি করছিস টা কি? এতো জোরে চেপে ধরেছিস কেন ছেলেটাকে।ছেলেটার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে তো।ছাড় বলছি।”
-” না ছাড়বো না।তুমি আগে ঝাঁটায় গোবর মাখিয়ে এনে পিটাও চোর কে।”
-” আগে চোর কে সেটা দেখে নে। তারপর না হয় পিটাবো।”
-”শান্তা মির্জার কথা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই সামিরা তড়িৎ গতিতে চোরের মুখের উপর থেকে ওড়না সরিয়ে দেয়।চোর কে দেখে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ে। সামিরা এক মূহুর্ত ও দেরি না করে চোরকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” তুমিইইইই?”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১২