মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২
নুজাইফা নূন
” আমি ঐশ্বর্য কে না বরং সিজদা কে আমার নাতি সারজিস মির্জার বউ করতে চাই।।সিজদা ই আমার সারজিসের বউ হয়ে হালিমা মঞ্জিলে পা রাখবে।কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই চমকে উঠে সিজদা।তার হাত পা অনবরত কাঁপতে থাকে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হয়।
সিজদা সন্তপর্ণে কপালের ঘাম মুছে বিথী চোধুরীর দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি তার দিকেই র’ক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ।যা দেখে কেঁপে উঠে সিজদার জীর্ণশীর্ণ বুক।সিজদা জানে আজকে তার কপালে শনি আছে।বিথী চোধুরী বারবার বলেছিলো সে যেন কোনোভাবেই পাত্রপক্ষের সামনে না যায়। সিজদা ও ভেবেছিলো এতে ভালোই হবে।এই সুযোগে সে কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতে পারবে।তাই তো সিজদা তাড়াতাড়ি সব কাজকর্ম শেষ করে ঘুমোতে এসেছিলো ।তখনি ঐশ্বর্য এসে সিজদা কে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” বাহ্! বাড়িতে এতো কাজকর্ম রয়েছে।আর তুই কিনা এখানে আরাম করে ঘুমোচ্ছিস ?”
-” কোনো কাজ বাকি নাই আপামণি।আমি সব কাজ কইরা আইছি।ম্যাডাম কইছে আমি যেন পোলার পক্ষের লোকদের সামনে না যাই।সেই সকাল থেকে কাজ করতে করতে শরীল ডা আর চলতেছে না।তার লাইগা ভাবলাম এট্টু চোখ দুইডা বন্ধ করে পড়ে থাকি।।তাইলে ভাল্লাগবো।”
-” আমি এতো ইতিহাস জানতে চাই নি।তোকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।”
-” কি কাজ আপামণি?কন না । আমি করে দিতাছি।”
-” মম সব কথা আমার সাথে শেয়ার করে। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে সবটা বলতে চাচ্ছে না।বলছে যে এটা সারপ্রাইজ থাকবে।আরে বাবা যার সাথে সংসার করবো তার নাম টা পর্যন্ত এখনো জানি না। শুধু শুনেছি ছেলে দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম , চকলেট বয়।আমার আর তর সইছে না রে। বাইরে পাত্রপক্ষ এসে গিয়েছে।ছেলে ও নিশ্চয় এসেছে।তুই আমার ফোন টা নিয়ে একটা ছবি তুলে এনে দে। প্লিজ সিজদা প্লিজ।”
-” ঐশ্বর্যের আকুতি মিনতি দেখে সিজদা মনে মনে বললো, আপামণি আপনে এতো ভালো কইরা আমার লগে কথা কইতাছেন? আমার তো বিশ্বাসই হইতাছে না। সিজদার থেকে রেসপন্স না পেয়ে ঐশ্বর্য সিজদার কাঁধে হাত রেখে বললো,
-” কি রে এতো কি ভাবছিস ?”
-” ম্যাডাম যে পোলার পক্ষের লোকদের সামনে যাইতে না করছে ?”
-” আরে কিছু হবে না। তুই যা।মম কে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিবো।”
-” আচ্ছা ঠিক আছে বলে সিজদা ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু বাইরে গিয়ে জানতে পারে পাত্র আসে নি।তার পরিবারের সদস্যরা এসেছে। সিজদা কি মনে করে মাথায় ঘোমটা টেনে গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে মতবিনিময় করে।আর সেটাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় ভুল।এই ভুলের মাশুল স্বরুপ সিজদা কে হয়তো তার শেষ আশ্রয়স্থল টুকু ও হারাতে হবে ভাবতেই সিজাদার অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠে। হালিমা বেগম সিজদা কে নিয়ে ঐশ্বর্যের পাশে বসিয়ে দেয়। ঐশ্বর্য রাগে গজগজ করতে করতে সোফা ছেড়ে উঠে এসে বিথী চোধুরী কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” এসব কি হচ্ছে মম?”
-” প্লিজ ডোন্ট ক্রাই বেবি।এখানে ভুলটা তোমার হয়েছে।আমি তো ঐ মেয়েটাকে পাত্রপক্ষের সামনে যেতে বারণ করেছিলাম। তুমি ওকে পাঠিয়েছো তাদের সামনে।”
-” আমি কি জানতাম নাকি তাদের রুচি এতো নিচে হবে।তারা আমার মতো সুন্দরী, স্মার্ট , এডুকেটেড মেয়ে রেখে যে কাজের মেয়েকে পছন্দ করবে এটা আমি ভাবতেও পারি নি মম।”
-” আমি ঠিক এই ভয় টা পাচ্ছিলাম বেবি।আমরা না মানলেও এটাই সত্যি যে সিজদা রুপবতী ,গুণবতী, মায়াবতী মেয়ে। যে কেউ ওকে দেখলে পছন্দ করবে। এজন্যই আমি ওকে একটা রং চটা সুতির থ্রি পিস পরতে দিয়েছিলাম।চুলে তেল দিতে বলেছিলাম।যাতে করে ওকে দেখতে বিশ্রী লাগে।বাই এনি চান্স পাত্রপক্ষের কেউ দেখলেও যাতে ওকে পছন্দ না করে। কিন্তু কি লাভ হলো?সব প্ল্যান ভেস্তে গেল।এখন যদি তারা কোনো ভাবে জানতে পারে সব রান্না সিজদা করেছে।তাহলে তো আরো বড় কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
-” তুমি ও না মম একটু বেশি বেশি করো।কি দরকার ছিলো এতো বাড়িয়ে বলার?আমি কোন ক্লাসে বৃত্তি পেয়েছি মম? আমি তো কোনো মতো টেনেটুনে পাশ করেছি। তুমি আমার প্রশংসা করতে গিয়ে উল্টো পাল্টা যা নয় তাই বলে দিয়েছো মম।ইন্টারে কেউ ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট কিভাবে হয় মম?”
-” আমি এতো কিছু জানি নাকি?আমি নিজেই তো এসএসসি ফেল। বিয়ের আগে তোমার পাপা কে মিথ্যা বলেছিলাম যে আমি গ্ৰাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি।”
-” এখন কি হবে মম? আমার জায়গায় ঐ কাজের মেয়েটা হালিমা মঞ্জিলের বউ হয়ে যাবে?”
-” ডোন্ট প্যানিক বেবি।আমি দেখছি কি করা যায়।”
-” কিছু হবে না মম। কিছু দিন আগে রাস্তায় ঐ বুড়ির টার সাথে আমার ঝামেলা হয়েছিলো।বুড়ি নিশ্চিয় আমাকে চিনতে পেরেছে।”
-” তোমার মুখটা একটু বন্ধ রাখো বলে বিথী চোধুরী হালিমা বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
-” আপনাদের রুচি এতো নিচে জানতাম না।একটা কাজের মেয়েকে বাড়ির বউ করতে চাইছেন? ছিঃ!”
-” এতো দিন শুনে এসেছি চোরের মায়ের বড় গলা।আজ বাস্তবে তার প্রমাণ পেলাম।সিজদা কাজের মেয়ে হলেও আপনার মেয়ের মতো অসভ্য, চরিত্রহীন নয়।”
-” মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।আপনি অপমান করছেন আমাদের।”
-” খুব তো বড় মুখ করে বলেছিলেন চাঁদের খুঁত থাকলেও আপনার মেয়ের কোন খুঁত নেই।আসলে আপনার মেয়ের তো পুরোটাই খুঁত।হালিমা বেগমের কথা শুনে ফারুক মির্জা বললেন,
-” এসব কি বলছেন আম্মা?”
-” কিছু দিন আগে তোকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম মনে আছে?”
-” হ্যাঁ। ছাত্রলীগ নেত্রী না কি জানি একটা বলেছিলেন।রাস্তায় আপনাকে অপমান করেছিলো মেয়েটা।”
-” হ্যাঁ।এই সেই বেয়াদব মেয়ে। অসংখ্য ছেলেদের সাথে মেলামেশা তার।কথাটা শুনে হতবাক হয়ে যান বিথী চোধুরী।তার মেয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। কিন্তু মেয়ের যে এতো অধঃপতন হয়েছে সেটা ভাবতেও পারেন নি বিথী চোধুরী। মেয়ের এমন অধঃপতনের কথা শুনে ও দমে যান নি তিনি। বরং তিনি গলা উঁচিয়ে বললেন,
-” শুনেছি সারজিস একজন কার্ডিওলজিস্ট।হাজার হাজার মেয়েদের ক্রাশ।সারজিস কি আদৌ একটা কাজের মেয়েকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে?”
-” হালিমা মঞ্জিলের কর্ত্রী আমি।সেখানে আমার কথায় শেষ কথা।সারজিসের কিসে ভালো হবে কিসে মন্দ হবে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হবে।তাছাড়া সারজিস কে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না।সারজিস তার দাদু কে অনেক ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস আমি যা বলবো সারজিস সেটাই মেনে নিবে।”
-” এতোক্ষণ চুপচাপ সবটা শুনছিলেন সারজিসের মা শান্তা মির্জা।তবে তিনি আর চুপ থাকতে পারলেন না।তিনি গর্জে উঠে বললেন,
-” আপনি আমার ছেলের উপর সবটা জোর করে চাপিয়ে দিতে পারেন না আম্মা।আমি সারজিসের মা। কিন্তু এখানে তো আপনি আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগ ই দিচ্ছেন না। হ্যাঁ মানছি ঐশ্বর্য ভালো মেয়ে না।ব্যাপার না আমরা অন্য মেয়ে দেখবো।”
-” অন্য মেয়ে বলতে তুমি যে তোমার বোনের মেয়ে তাথৈ এর দিকে ইঙ্গিত করছো সেটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি বউমা।”
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১
-”তাথৈ কে নিয়ে আপনার এতো সমস্যা কোথায় আম্মা? তাথৈ সুন্দরী, শিক্ষিত বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে। তাছাড়া তাথৈ সারজিস কে ভালোবাসে।আমি একটা কাজের মেয়েকে কিছুতেই আমার সারজিসের বউ হিসেবে মেনে নিবো না আম্মা। কিছুতেই না।শান্তা মির্জার কথা শেষ হতে না হতেই পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠে ভেসে আসে,
-” যাকে আপনারা কাজের মেয়ে বলে অপমান করছেন সে এই বাড়ির কাজের মেয়ে না।”