মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৬

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৬
নুজাইফা নূন

-” সাইফান নামাজ শেষ করে মুরব্বিদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে একা একাই হাঁটতে বের হয়।সকালের স্নিগ্ধ বাতাস এসে গায়ে লাগছে তার।মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে।সাইফান হাঁটতে হাঁটতে কিছু দূর এগিয়ে এসে একটা পুকুর দেখতে পায়। পুকুরের ঘাটে বসার জন্য বেঞ্চ পেতে রাখা হয়েছে।সাইফান বেঞ্চের উপর বসে সারজিসের নাম্বারে কল করে। কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলছে।

গতকাল থেকে সারজিসের সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে সাইফান। কিন্তু ফলাফল শূন্য। দুপুর পর্যন্ত সারজিসের ফোন অন থাকলেও কল রিসিভ করছিলো না। দুপুরের পর থেকেই সারজিসের ফোন সুইচ অফ বলছে।বিয়ে বাড়িতে থেকেও সাইফান বারবার সারজিসের ফোনে ট্রাই করেছে।বাড়ি ফিরে এসে সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও সারজিস কে পায় না দেখে হতাশ হয়ে যায় সাইফান।সাইফান কে বিচলিত হতে দেখে হালিমা বেগম জানান,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” সারজিস একটা কাজে আটকে গিয়েছে।সকালে ফিরবে।এটা শুনে একটু স্বস্থি পায় সাইফান। কিন্তু সকাল হয়ে গেলেও সারজিস ফিরছে না দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে সাইফানের।
বড্ড টেনশন হয় সারজিসের জন্য।সাইফান পুকুর পাড় থেকে সোজা হালিমা মঞ্জিলে এসে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসতেই সারজিসের আগমন ঘটে।সারজিস কে দেখা মাত্রই সাইফান দৌড়ে এসে সারজিস কে জড়িয়ে ধরে বিচলিত হয়ে বললো,

-” কোথায় ছিলি তুই?গতকাল থেকে তোর কোনো খোঁজ খবর নেই।তুই জানিস তোর জন্য বাড়ির সবাই কতো টেনশন করছিলো? আমি কতোবার তোকে কল করেছি ।একটা বার কল ব্যাক করার ও সময় হয় নি তোর।আসলে পর তো পর‌ই হয়।আমি তোকে আপন ভাবলেও তুই আমাকে আপন ভাবতে পারছিস না।আমি পর পর‌ই থেকে গেলাম তোর কাছে।”
-” কাম অন ব্রো।লেট মি স্পিক।”
-” কি বলবি তুই? এতো গুলো মানুষ কে টেনশনে রাখতে খুব ভালো লাগছিলো না তোর?”

-” তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয় ব্রো।তোমাকে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারি নি বলে আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগছিলো।বাট বিলিভ মি আই হ্যাভ নাথিং টু ডু।আমি এমন একটা সিচুয়েশনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।যেখান থেকে কোনো ভাবেই বের হয়ে আসা পসিবল ছিলো না।গতকাল তোমাকে বলে আমি রুমে যাওয়ার পর পরই রামিমের কল আসে।রামিমের বাবা অনেক দিন থেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসা চলছিলো। গতকাল হুট করে তার শরীর পূর্বের তুলনায় অনেক খারাপ হয়ে যায় ।নাক , মুখ এমনকি মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।রামিমের কল পেয়েই আমি ছুটে যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না।

রামিমের বাবার অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপ হতেই থাকে। ডক্টররাও হাল ছেড়ে দেন। দুপুরের দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তার মৃত্যুতে রামিম প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে।আমি চাইলেও রামিম কে ঐ অবস্থায় রেখে আসতে পারছিলাম না।রামিমের বাবা কে গ্ৰামে নিয়ে যাওয়া গোসল করানো, দাফন ,কাফন জানাজা সম্পন্ন হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়। আমার গাড়ি টাও খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।যার জন্য গতরাতে বাড়ি ফিরতে পারি নি। গতরাত রামিমের সাথেই ছিলাম।ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। বড্ড খারাপ লাগছে।এখনো আসতে দিতে চাইছিলো না।আমি এক প্রকার জোর করেই চলে এসেছি।ব্যস্ততার জন্য ফোন চেইক করার সময় পায় নি।পরে দেখি ফোনের ব্যাটারি ডাউন হয়ে গিয়েছে।যার দরুন ফোন সুইচ অফ ছিলো।রামিমের ফোন থেকে দাদু কে কল করে বলেছিলাম টেনশন না করতে। অবশ্য এ বাড়িতে আমার জন্য টেনশন করার মানুষ খুব কমই রয়েছে। তবু ও বলেছিলাম।”

-” এভাবে বলছিস কেন ভাই?গতকাল থেকে আমারা প্রত্যেকে তোর জন্য টেনশন করেছি। এমনকি তুই ফিরিস নি দেখে মা রাতে খায় ও নি।আমি মাত্রই ভেবেছিলাম তোর ফোন ট্র্যাক করে তোর লোকেশন খুঁজে বের করবো। তুই ভালোই ভালোই ফিরে এসেছিস দেখে সবাই স্বস্তি ফিরে পাবে। কিন্তু আমার সারাজীবন আফসোস থেকেই যাবে।”
-” আমি তো যেতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল !”
-”মানুষের মৃত্যুর কথা বলা যায় না।কখন যে কার ডাক আসবে কেউ জানে না।যাই হোক গতকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করছিস ।এখন একটু ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর।বিয়েটা তো মিস করেই ফেলছিস।আজকে বৌভাতের অনুষ্ঠান আছে। বৌভাত যেন কোনো ভাবেই মিস না হয়।”
-” হবে না ব্রো বলে সারজিস সবে মাত্র জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে মুখে দিবে তখনি সিজদা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে।সিজদা কে নিচে নামতে দেখে সামিরা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
-” ঐ তো ব‌উমণি চলে এসেছে।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৫

-” সামিরার কথা শুনে সারজিস সামনে তাকাতেই সারজিসের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে। বুকের বাঁ পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয়। বুক ফুঁড়ে হৃদয় বেরিয়ে আসতে চায়।কণ্ঠনালী শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে আসে। তার হাত থেকে গ্লাস নিচে পড়ে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়।।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৭