মন ফাগুন পর্ব ২৫

মন ফাগুন পর্ব ২৫
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া

নিহান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে আর মিহি ওর জন্য খাবার নিয়ে আসে নিহান খেতে বসে যায়। তবে দুটো থালা দেখে নিহান বুঝতে পারে মিহি ও খায় নাই সত্যি মেয়েটা যে কি করে না। নিহান বলে –
“- মিহি আপনি খাবার খান নাই কোনো এখনো? আপনাকে না বলেছি কালকে মিহি কখনো আমার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করবেন না “।
খাবার খাওয়ার কথাটা নিহান বেশ ধমক সুরে বলে মিহি একটু বাচ্চাদের মতো ভয় পেয়ে নিহানের দিকে দেখে। কালকে নিহানের একটা মিটিং ছিলো যার জন্য তার বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায় তখন দেখে মিহি ওর জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে। অনেক রাত অবধি না খেয়ে থাকার কারণে নিহান রাগ করে ওকে বলে যাতে আর কখনো ওর জন্য অপেক্ষা না করে বা না খেয়ে থাকে। কিন্তু মিহি সেটা শুনে নাই।মিহি বলে –

“- আসলে ওই মানে আমার খিদে পাই না তাই খায় নাই। তাছাড়া বাড়ির সবাই তো তাদের জামাইদের না খায়িয়ে খায় নাহ তাহলে আমি কি করে খাবো “।
নিহান এই জামাই কথাটা শুনে বেশ খুশি হয় তবে সেটা প্রকাশ করে না কারণ এই মেয়ের সাথে যদি একটু হেঁসে কথা বলে তাহলে কালকে থেকে এইরকম আবার করবে। নিহান বলে –
“- বাড়ির সবাই তার জামাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে কারণ তারা তাদের বিয়ে মন থেকে মেনে নেয় আর আপনি তো আমাকে কেউ মনে করেন না। নিবার্চনের পর ছেড়ে চলে যাবেন শুধু শুরু একটা অপরিচিত মানুষের প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ কি বলুন মিহি “।
মিহি এখন নিহানের কথার মানে বুঝতে পারছে মানে নিহান ইচ্ছে করে তাকে যাতে মিহির মনে নিহানের উপর কি ফিলিংস রয়েছে সেটা বুঝতে পারে। কিন্তু মিহি কি কম শয়তান মিহি বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- হুম সত্যি আমি নিবার্চনের পর চলে যাবো তবে টেনশন করবেন না আমি যাওয়ার আগে আপনাকে একটা বিয়ে করিয়ে দিয়ে যাবো। সুন্দর একটা বউ থাকবে আপনার সে সবসময় আপনার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করবে। তখন আপনি আমার কথা মনে করবেন না “।
“- চুপচাপ খাবার খান মিহি খাবার সময় অতিরিক্ত কথা বলা আমার পছন্দ না “।
মিহি কোনো কথা না বলে খাবার খেতে থাকে নিহান বুঝতে পারে ধমক দেওয়ার কারণে হয়তো মিহি রাগ করেছে। ওরা দুইজনে খাবার খাওয়া শেষ করে মিহি রেস্ট নেওয়ার জন্য যখন সোফায় ঘুমাতে যাবে তখন নিহান বলে –
“- মিহি আপনি সোফায় কোনো ঘুমাতে যাচ্ছেন আমরা তো এখন একসাথে বেডে ঘুমাতে পারি কালকে ও তো একসাথে থেকেছি সমস্যা কি? এখানে আসুন ঘুমিয়ে পড়ুন “।
নিহানের কোনো কথা না শুনে মিহি সোফায় শুয়ে পড়ে নিহান একটু মিহির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে –

“- এই মেয়েটা এমন কোনো নিজেই উল্টো পাল্টা কথা বলবে আর নিহানের রাগ তুলে দিবে পরে নিজেই বকা খেয়ে মুখ ফুলিয়ে রাখবে।
নিহান উঠে গিয়ে মিহির সোফার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় এরপর মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে আসে। হঠাৎ করে নিহানের এইরকম করায় মিহি ভয় পেয়ে যায় নিহান ওকে তুলে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় কিন্তু মিহির উপর থেকে সরে না। মিহির বেশ কাছে রয়েছে নিহান যেটা মিহি অনুভব করতে পারছে নিহান মিহির উড়ন্ত চুল কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে –

“- কি হয়েছে আপনার মিহি একটু বকা দিলে মুখটা এইরকম করে রাখতে হবে কি হুম? তখন বিয়ে কথাটা না তুললে বকা দিতাম না। আচ্ছা বাদ দেন এখন ঘুমিয়ে পড়ৃন আর রাগ করে থাকতে হবে না। সরি “।
মিহি কোনো কথা বলতে যাবে এর আগে ওর হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠে। মিহি দেখে তার আম্মু কল করেছে মিহি সাথে সাথে নিহানের মুখ চেপে ধরে আর ফোন রিসিভ করে বলে –
“- হ্যালো আম্মু কি হয়েছে বলো? তুমি এখন কোনো ফোন করলে?
“- আরে মিহি তোর কি অবস্থা? আচ্ছা শোন না তুই কবে বাড়ি আসবি তোর বাবা তোকে আসতে বলেছে “।
নিহান মিহির মুখের দিকে দেখে নিহান মনে করে মিহি হয়তো চলে যেতে চাইবে কিন্তু মিহি সেটা করে না। মিহি বলে

“- আম্মু তোমাকে আগে বলেছি এখন বাড়ি আসা সম্ভব নয় আমার পরীক্ষা শেষ কিন্তু ক্লাস রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাড়ি ফিরতে আরো অনেকদিন লাগবে “।
“- মিহি তুমি আর তোমার আব্বুতো কথা বলেই শেষ এখন আমি কি করব। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কয়েকদিন পর বাড়িতে আসো কিন্তু কালকে তোমাকে একটা ছেলের সাথে দেখা করতে হবে। ওর সাথে কথা বলে ভালো লাগলে তার সাথে তোমার আব্বু তোমার বিয়ে ঠিক করবে “।
বিয়ের কথাটা শুনে মিহি এখন নিহানের দিকে তাকায় নিহান রাগী দৃষ্টিতে মিহির দিকে তাকিয়ে দেখে। মিহির হাতটা নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে কোনো শব্দ না করে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। মিহি একটা শুকনো ঢুক গিলে তার মাকে বলে –
“_ আম্মু তুমি কি বলছো এইসব বিয়ে মানে ছেলের সাথে দেখা করব মানে। তোমাকে না বলেছি এইসব বিয়ে করতে চাই না আমি তাহলে কোনো বলছো এইসব কথা আর আমি কোনো ছেলের সাথে কালকে দেখা করতে পারব না। আব্বুকে বলো বিয়ের কথা মাথায় না আনতে এখন “।
“- দেখো মিহি আমি তোমার আব্বুকে কোনো কথা বলতে পারব না তুমি বলো ফোন করে ওনাকে। আর যদি বাড়িতে এখন না আসতে চাও তাহলে চুপচাপ ছেলের সাথে দেখা করো তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না আর। সেই ছেলের ছবি আর ঠিকানা তোমার ফোনে দিয়ে দিবো কালকে গ্রিন রেস্টুরেন্টে দেখা করবে তোমরা “।

“- ওকে আম্মু ঠিক আছে “।
মিহি ঠিক আছে কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় নিহান এখনো ওপাশে শুয়ে রয়েছে। মিহি একটু ভয় করছে তবুও নিহানকে ডেকে বলে –
“- নিহান আপনাকে আগে বলেছি আমার আব্বু অনেক রাগী তাই যেতে হবে কি করার আছে। কিন্তু টেনশন করবেন না ছেলে ভালো হলেও আমি রিজেক্ট করে দিবেন কিন্তু যেতে হবেই “।
“- মিহি আপনি আপনার হবু স্বামীর সাথে কি করবেন সেটা আমি কি করে জানি। আর বেশি টেনশন করবেন না ছেলে পছন্দ হলে বিয়ে করতে পারেন। নিবার্চন চলে এসেছে সামনে তাই বেশি দিন আমার সাথে থেকে সাফার করতে হবে না “।

মন ফাগুন পর্ব ২৪

“- না আমি সেটা বলতে চাই নাই। আচ্ছা আপনি কি কালকে আমার সাথে যাবেন “।
“- কোনো আপনার ভাই হয়ে ছেলের সাথে মিট করতে হবে কি। সামনে নিবার্চন আমার অনেক কাজ রয়েছে সো আমি বিজি থাকবো অন্য কাউকে নিয়ে যান “।
মিহি বুঝতে পারে সে একটা ঝামেলায় ফেঁসে গেছে এখন যে কি হবে তার নিহানের যা রাগ.

মন ফাগুন পর্ব ২৬