মন ফাগুন পর্ব ৪১

মন ফাগুন পর্ব ৪১
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া

পিছন থেকে ট্রাকটা এসে যখন আবার ধাক্কা দেয় তখন গাড়িটা উল্টো যায়। মিহি আর নিহান দুইজনে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যায় তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তিনদিন কেটে যায় মিহি এখন হাসপাতালে আইসিইউতে এডমিট রয়েছে মিহি আসতে আসতে পিটপিট করে চােখ খুলে। মিহি দেখে তার হাতে ক্যানেলা লাগানো চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে জায়গাটা নতুন। মিহি যখন কিছু মনে করতে যাবে তখন হঠাৎ করে ওর মাথায় একটু চাপ পড়ে তার কিছু ঘটনা মনে পড়ে।
মিহি যখন মনে পড়ে সেইদিন এক্সিডেন্টের ঘটনা তখন সে আশেপাশে নিহানকে খুঁজতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে –

“- নিহান নিহান কোথায় আপনি নিহান? কোথায় আপনি নিহান “।
মিহির চিৎকারে বাহির থেকে জামশেদ তালুকদার আর সানভি ছুটে আসে মিহি এখনো চিৎকার করছে। জামশেদ তালুকদার বলে –
“- মিহি তোমার জ্ঞান ফিরেছে। তুমি ঠিক আছো মিহি কোনো সমস্যা কি হচ্ছে বলো মিহি “।
মিহি জামশেদ তালুকদার আর সানভিকে দেখে নিহানকে খুঁজতে থাকে কিন্তু কোথাও নিহান নাই। মিহি বলে –
“- আব্বু নিহান কোথায়? ওনাকে কোনো দেখছি না বলো নিহান কোথায়? নিহান নিহান কোথায় আপনি?
নিহানের নাম শুনে জামশেদ তালুকদার আর সানভি একে অপরের দিকে তাকায় এখন তারা কি বলবে মিহিকে। সানভি বলে –
“- মিহি ম্যাম আপনি শান্ত হয়ে যান। আসলে সেইদিন এক্সিডেন্টের পর আপনারা সেখানে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তখন আশেপাশে লোকেরা আপনাদের একটা হাসপাতালে এডমিট করায়। পরে হাসপাতাল থেকে আমাদের সবাইকে খবর দেয় সেখানে যায় আমরা। হাসপাতাল টা অনেক ছোট ছিলো তাই শহরের ভালো একটা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় আপনাদের “।
“- হুম সেটা না হয় বুঝতে পারলাম কিন্তু আমার নিহান কোথায়? ওনাকে দেখছি না কোনো নিহান কোথায়?
সানভি একটা ঢুক গিলে যানে না মিহিকে সত্যিটা বললে মিহিকে কি করে রিয়েকশন দিবে। তবুও সানভি শান্ত স্বরে বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- আসলে মিহি ম্যাম এক্সিডেন্টের কারণে নিহানের স্যারের মাথায় অনেক বড়ো আঘাত লাগে যার জন্য ওনি কোমায় চলে গিয়েছেন। কখন সুস্থ হবে সেই বিষয়ে ডাক্তার কিছু বলতে পারছে না হয়তো সুস্থ হতে দুইদিন লাগতে পারে না হলে দুইবছর লাগবে বা সারাজীবন ও লাগতে পারে “।
সানভির কথাটা শুনে মিহি একদম চুপ হয়ে গেছে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার সবকিছু।নিহান যদি কখনো ঠিক না হয় তাহলে মিহি নিহানকে ছেড়ে কি করে থাকবে মিহি মরে যাবে নিহানকে ছাড়া।মিহি বলে –
“- সানভি নিহানকে কোন কেবিনে রাখা হয়েছে সেখানে যেতে চাই আমি। নিহানকে দেখতে চাই আমি “।
“- কিন্তু মিহি তুমি এই অবস্থায় কি করে যাবে?
“- আব্বু আমি ঠিক আছি। নিহানের কাছে নিয়ে চলো আমাকে “।
জামশেদ তালুকদার আর সানভি মিলে একটা হুইলচেয়ারে করে মিহিকে নিয়ে যায় নিহানের কেবিনের সামনে। একটা সিটে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে নিহানকে হাতে অনেক ক্যানেলা লাগানো। নিহানের মাথায় অনেক বেন্ডেজ করা মিহি গিয়ে নিহানের হাতে হাত রাখে আর বলে –

“- নিহান দেখুন আপনার মিহি এসেছে আপনার কাছে।নিহান আপনি না তখন ভালোবাসি কথাটা শুনে চেয়েছিলেন আমার মুখ থেকে। এখন বলছি আমি নিহান ভালোবাসি আপনাকে নিহান অনেক ভালোবাসি নিহান। আমার কথার উত্তর দেন নিহান বলুন আপনি ও আপনার মিহিকে ভালোবাসেন বলুন “।
মিহি কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করে নিহানকে কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। মিহি আবার বলেন –
“- নিহান কথা বলুন আমার সাথে।আপনি যদি মিহির সাথে কথা না বলুন তাহলে মিহি মারা যাবে নিহান। দয়া করে কথা বলুন নিহান কথা বলুন নিহান “।
সানভি মিহিকে তার কেবিনে নিয়ে যায় সেখানে মুরাদ শিকদার সহ আরো অনেকে মিহিকে দেখতে আসে। সবাই এই অবস্থায় দেখে কান্না করে দেয় তখন পুলিশ আসে আর বলে –
“- নিহান স্যারের এইরকম এক্সিডেন্ট কি করে হয়েছে সেটা জানতে হবে আমাদের তদন্ত করতে হবে। সেই জন্য মিহি ম্যাম আপনার সাহায্য দরকার “।
“- হুম অফিসার আমি সাহায্যে করব। অনেক হয়ে গেছে এইসব সয্য করা আগে যখন এই ঘটনা ঘটেছিলো তখন নিহান আমাকে এইসবের মধ্যে ঢুকতে দেয় নাই। কিন্তু এখন সত্যি জানতে হবে আমাকে আসলে এইসব ঘটনার পিছনে কে সেটা জানতে হবে “।

মিহি সবকিছু বলে এক্সিডেন্টের দিন কি কি হয়েছিলো পুলিশ সেইসব লিখে নেয় এরপর তারা চলে যায়। দুইদিন কেটে যায় মিহি এখন সুস্থ কিন্তু নিহান এখনো কোমায় রয়েছে ডক্টর বলেছে নিহানকে হাসপাতালে রাখতে সেখানে তার চিকিৎসা হবে। মিহি গিয়ে নিহানের সাথে প্রতিদিন দেখা করে আসে। মিহি যখন রুমে বসে ছিলো তখন সানভি ভিতরে আসে আর বলে –
“- মিহি ম্যাম আপনি আমাকে ফোন করে কোনো আসতে বললেন? কোনো দরকার ছিলো ম্যাম?
“- হুম সানভি দরকার ছিলো আচ্ছা তোমাকে যে কাজটা করতে বলেছি সেটা কতদূর হয়েছে। নিয়া আর রায়ানের বিষয়ে কি কোনো তথ্য জানা গেছে ওরা কোথায় আছে?
“- ম্যাম ওরা কোথায় আছে সেটা এখনো অবধি জানা যায় নাই ওদের লোকেশন ট্যাক করা যাচ্ছে না। শহর গ্রাম সব জায়গায় খোঁজা হয়ে গেছে বাট কোনো খবর পাই নাই “।
মিহির মাথায় একটা কথা মিহি বলে –

“- একটা কাজ করো সানভি এই শহরের যতো কাজি অফিস আছে সব জায়গায় গিয়ে নিয়া আর রায়ানের বিষয়ে জানার চেষ্টা করো। আর যদি আশেপাশে কোনো জঙ্গল থাকে তাহলে সেখানে গিয়ে খোঁজ করো “।
“- ওকে ম্যাম সমস্যা নাই এখুনি যাচ্ছি “।
মিহি কথা শুনে সানভি এখান থেকে চলে যায়। মিহি পুলিশ অফিসারের কথা বলে একটা বিষয় নিয়ে এরপর রেডি হয়ে গাড়ি করে কোথায় যেনো বেড়িয়ে পড়ে। মিহির গাড়ি থামে একটা বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি ও সেখানে আসে মিহি আর পুলিশ ভিতরে যায়। মিহি গিয়ে বাড়ির দরজা ধাক্কা দিলে একজন লোক এসে দরজা খুলে দেয় আর বলে –
“- আপনারা কারা কি চাই? আসুন ভিতরে আসুন “।
মিহি মহিলার রিয়েকশন দেখে অবাক হয় তবুও বাড়ির ভিতরে চলে যায় আর বলে –
“- আপনারা লিয়ার বাবা মা তাই না। যে গুলি লেগে মারা গিয়েছে কয়েকদিন আগে “।
লিয়া সেই মেয়েটা যে নিহানের বাড়ির মেডের চাকরি করতো যাকে গুলি করা হয়েছে। নিহান মিহিকে বলেছিলো লিয়া বেঁচে আছে কিন্তু সেইদিন গুলি লাগার কারণে লিয়া মারা যায়। মিহি এখন লিয়ার মা বাবার সামনে বসে তাদের এইসব কথা জিজ্ঞেস করছে। লিয়ার বাবা বলে –
“- হুম আমরা লিয়ার বাবা মা। কয়েকদিন আগে লিয়া মারা গেছে “।
কথাটা বলে ওনারা কান্না করে দেয় পুলিশ তাদের আরো কিছু লিয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে। মিহি ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি দেখতে থাকে সেখানে লিয়ার রুমে যায় কিন্তু দরজায় তালা লাগানো একটা লক ব্যবহার করা হয়েছে। মিহি বলে –

মন ফাগুন পর্ব ৪০

“- এই রুমে লক কোনো? পাসওয়ার্ড কি?
“- আমি জানি না লিয়া সবসময় লক ব্যবহার করতো রুমে। আর এইটা এমন লক যেটা শুধু লিয়ার ফিঙ্গার পিনট ছাড়া খুলা সম্ভব না “।
মিহি কথাটা শুনে হাসে এরপর পাশে থাকা একটা রডের জিনিস দিয়ে লকের মধ্যে ভারী দেয় সাথে সাথে লক ভেঙে যায়। মিহি রুমের ভিতরে ঢুকে যায় সেখানে গিয়ে সে কিছু চেক করে বাহিরে বের হয়ে আসে আর পুলিশকে বলে –
“- চলুন স্যার এখান থেকে যাওয়া যাক “।

মন ফাগুন পর্ব ৪২