মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৮

মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৮
ইয়াসমিন খন্দকার

আরাফাত ও অহনাকে আলাদা কথা বলার সময় দেয়া হয়েছে। আরাফাত অহনাকে একটা রুমে নিয়ে এসেছে। এসেছে থেকে অহনা কোন কথা বলছে না। আরাফাত দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙে বলে,”কি হলো ম্যাডান? কিছু বলছেন না যে?”
“কি বলবো? আমি বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার যদি কিছু বলার হয় তো বলুন।”
আরাফাত বুঝতে পারে অহনা তার উপর একটু রেগে আছে। সেও মুচকি হেসে বলে,”খুব শীঘ্রই তো আমাদের বিয়ে হতে চলেছে। তো আমি বলি কি, এসব আপনি, আজ্ঞে ছেড়ে আমরা কি তুমি বলতে পারি না একে অপরকে?”

“আপনার ইচ্ছা হলে আপনি আমাকে তুমি করে বলতেই পারেন। সেটা আপনার ব্যাপার৷ কিন্তু আমি এত সহজে কাউকে তুমি বলতে পারি না। কিছু সময় লাগবে।”
“বেশ। তোমার ইচ্ছা। তো যাইহোক, তোমার নাকি কি শপিং করার কথা?”
“সে আমি সময় মতো করে নেব।”
“ঠিক আছে,আমার নাম্বারটা নিয়ে রাখো। শপিং এর সময় কল দিলেই আমি চলে আসব।”
অহনা মাথা নাড়ায়। আরাফাত একটু থেমে বলে,”এই বিয়ে নিয়ে তোমার কোন আপত্তি নেই তো? আমার আসলে খুব তাড়াহুড়ো ছিল। আর তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে..”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“যাইহোক আমাকে আরো আগে জানাতে পারতেন। তাহলে আমি বিয়ে নিয়ে আর একটু প্রিপারেশন নিতে পারতাম। তবে অসুবিধা নেই। বিয়ে তো আজ নাহয় কাল একদিন করতেই হবে৷ পাত্র কে যখন পছন্দ তখন আমার আর কোন আপত্তি নেই।”
অহনার এহেন কথা শুনে আরাফাত মুচকি হাসে। অহনার হাসিমুখ দেখে আরাফাতও হেসে ফেলে।

অহনা সুনীতিকে নিয়ে বসে গল্প করছিল৷ কথায় কথায় হঠাৎ সুনীতি বলে,”কিরে? তুই তো বিয়ে করে ফেলছিস। তাহলে তোর ঐ অনলাইন আশিকের কি খবর?”
অহনা কিছু একটা ভেবে বলে,”আরে কিসের আশিক? আমি তো ওর প্রতি কোন অনুভূতিই রাখিনি কখনো। ওর একতরফা অনুভূতি।”
“তাও তুই চাইলে ছেলেটাকে নিজের বিয়ের খবর জানাতে পারিস। তোর কথা শুনে বুঝলাম ছেলেটা আমাদের থেকে ২/১ বছরের জুনিয়র। তো ওর মনটা তো ভেঙে যাবে। তাই ওকে বল, যাতে আর তোর আশায় বসে না থাকে।”
“ও,,কথাটা ভুল বলিস নি তো। অনেকদিন থেকে আমি অনলাইনে ঢুকি না। আজ একটু ঢুকে দেখি কি অবস্থা। ছেলেটা ম্যাসেজ-ট্যাসেজ দিয়েছে নাকি।”

বলেই অহনা অনলাইনে প্রবেশ করে। ডাটা অন করতেই ফোনের নোটিফিকেশন আসতে থাকে। অহনা ম্যাসেঞ্জারে প্রবেশ করতেই দেখতে পায়, ছেলেটার অসংখ্য ম্যাসেজ। অহনা সেই ম্যাসেজগুলো দেখে, অহনাকে অফলাইন দেখে ছেলেটা একদম ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। অহনা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ছেলেটাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে,”ডিয়ার ছোট ভাই, তোমাকে অতি দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে আগামীকাল আমার বিয়ে। তোমার অনুভূতিকে আমি কখনো সিরিয়াসলি নেই নি৷ তবে এবার মনে হয় তোমাকে ব্যাপারটা জানানো উচিৎ। তাই জানিয়ে দিলাম। তুমি আর আমার আশায় বসে না থেকে নিজের জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নাও।”
ম্যাসেজটা পাঠানোর সাথে সাথেই ছেলেটা সেটা সিন করে। অহনাকে সাথে সাথেই পাল্টা ম্যাসেজ দিয়ে বলে,”আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না?”

“না, সত্যি।”
“আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই সিনিয়র। দয়া করে আমার এই রিকোয়েস্ট টা রাখুন। মনে করুন এটাই আমার আপনার কাছে প্রথম এবং শেষ চাওয়া দয়া করে না করবেন না।”
“কিন্তু,,”
“দয়া করে না বলবেন না। আমি আর কখনো আপনাকে ডিস্টার্ব করব না। শুধু আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখুন।”
অহনা ছেলেটার করা ম্যাসেজগুলো সুনীতিকে দেখায়। সুনীতি অহনাকে বলে,”ছেলেটা যখন এত করে বলছে তখন দেখা করে নে। আমিও নাহয় যাব তোর সাথে। কোন ঝামেলা হবে না।”

“আচ্ছা।”
অহনা ছেলেটাকে ম্যাসেজ পাঠায়,”ঠিক আছে। আমি তোমার সাথে দেখা করতে প্রস্তুত। তুমি আমায় প্লেস এবং টাইম বলে দাও।”
ছেলেটা ফিরতি ম্যাসেজ করে বলে,”আজ বিকেল ৪ টায় মতিঝিলের কফি ক্যাফেতে সামনে চলে আসবেন। ওখানেই আমরা দেখা করব।”
“ঠিক আছে, আমি দেখা করতে প্রস্তুত।”

বিকেল ৪ টায় অহনা সুনীতিকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে গেছে মতিঝিলের কফি ক্যাফেতে। সেখানে উপস্থিত হয়ে অহনা বলে,’ছেলেটা কোথায়? এখনো আসে নি নাকি?’
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে অহনা বিরক্ত হয়ে বলে,”আমি আর পারছি না৷ ছেলেটা শুধু শুধু এত দূরে আসতে বলল। অথচ ওর আসার কোন কথা নেই। চল এখান থেকে যাই আমরা।”
বলেই অহনা উঠে দাঁড়ায়। এমন সময় হঠাৎ করে আরাফাতের সাথে দেখা হয়ে যায়। আরাফাতের সাথে অভিকও ছিল। আরাফাত ও অভিক, অহনা এবং সুনীতি সবাই একে অপরকে দেখে অবাক হয়। আরাফাত বলে,”তোমরা এখানে?”

সুনীতি বলে,”আমি আর অহনা এখানে আড্ডা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনারা?”
অভিক বলে,”আমরাও তো এখানে আড্ডা দিতে এসেছি। এখানকার কফির অনেক সুনাম শুনেছিলাম। তাই আজ খেতে চলে এসেছি।”
আরাফাত বলে,”যাইহোক, তোমাদের সাথে এখানে দেখা হয়ে গিয়ে ভালোই হলো। অহনা তো শপিং করতে চাইছিল। তো চলো এখন আমরা এখান থেকেই সবাই শপিং এ চলে যাই।”
অহনা বলে,”গুড আইডিয়া।”
সবাই মিলে শপিং এর জন্য বেরিয়ে পড়ে। ক্যাফে থেকে বের হবার সময় হঠাৎ করে সুনীতিদের মুখোমুখি হয় সাগর। সুনীতি সাগরকে দেখে অবাক হয়ে বলে,”সাগর, তুমি?”

সাগর মৃদু হেসে বলে,”আরে সুনীতি আপু যে?! কেমন আছ?”
“আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?”
“আছি কোনরকম। তা তোমরা এখানে?”
“কিছু জরুরি কাজে এসেছিলাম।”
সাগর কথা বলতে বলতে অহনার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। অহনা তখন আরাফাতের দিকে তাকিয়ে ছিল৷ সুনীতি সাগরকে বলে,”এখন তো তোমাদেরই দিন। এইচএসসি পরীক্ষায় তো অটো পাশ পেয়ে গেলা। তো এডমিশন নিয়ে কি ভাবছ?”

সাগর সামান্য হেসে বলে,”আমার আর্মিতে জয়েন করার ইচ্ছা আছে।”
অভিক সাগরের পিঠ চাপড়ে বলে,”এই তো আমাদের ব্রেভ বয়। তোমার মতো নতুন তরুণদের অপেক্ষাতেই তো আছি আমরা। কি বলিস আরাফাত?”
আরাফাত হেসে বলে,”একদম।”
সাগরের কাছে আরাফাতের হাসিটা ভীষণ বিরক্তিকর লাগে। সুনীতি সাগরকে জিজ্ঞেস করে,”তুমি কি এখানে একা এসেছে?”

“না, আমার ফ্রেন্ড আবিরও এসেছে আমার সাথে।”
“ওহ, সাজিদ ভাইয়ের ছেলে কেমন আছে?”
“আছে ভালোই।”
“ঠিক আছে, আমরা এখন শপিং এ যাচ্ছি তো পরে কথা হবে।”
বলেই সুনীতি, অহনারা সবাই বেরিয়ে যায়। সাগর করুণ চোখে অহনার দিকেই তাকিয়ে থাকে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সে দৃষ্টির অগোচরে চলে যায়। দৃষ্টিসীমার বাহিরে যেতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাগরের বন্ধু আবির এসে সাগরকে বলে,”কি রে? তুই এখানে দাঁড়িয়ে যে? তোর মিস সিনিয়রের সাথে দেখা করবি না?”
সাগর মলিন হেসে বলে,”না।”

“কিন্তু কেন? তুই তো আগ্রহী ছিলি তার সাথে দেখা করার জন্য। তাকে কতটা ভালোবাসিস সেটা জানানোর জন্য!”
“সব ভালোবাসা কি পূর্ণতা পায় দোস্ত? কিছু ভালোবাসা তো অবহেলিতই থেকে যায়। তেমনি মনে কর, আমার এই একতরফা ভালোবাসার গল্পটাও অপূর্ণ।”
“এভাবে হার মেনে নিস না। তাকে একবার জানাতি তোর ভালোবাসার কথা।”
“আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী দোস্ত। যদি ভাগ্যে থাকত আমি ওনাকে অবশ্যই পেতাম।”
“কার ভাগ্যে কি আছে সেটা তুই কিভাবে বুঝবি? মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায়।”

মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৭

সাগর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ভাবতে থাকে ২ বছর আগের সেই দিনের কথা যেদিন সুনীতির সাথে প্রথম অহনাকে দেখেছিল। প্রথম দেখায় ভালোবাসা, তারপর কত পাগলামি। কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করা, অনেক কষ্ট করে ফেসবুক আইডি খুঁজে পাওয়া৷ এত ভালোবাসা সব বৃথা গেল। তার ভালোবাসার মানুষ কাল অন্য কারো বধূ সাজবে। ভাবতেই সাগরের চোখে জল চলে এল।

মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৯