মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫৭+৫৮

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫৭+৫৮
নাফিসা তাবাসসুম খান

দুটি কল্লা কাটা দেহ আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে। হিংস্র দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে আরোণ। অন্যান্য দিনের মতো তার চোখের দৃষ্টি নম্র, স্বাভাবিক নয়। রক্তিম লাল চোখজোড়া পাষণ্ড রূপ ধারণ করেছে। যেখানে মায়া দয়ার ছিটেফোঁটা নেই। হলরুমে উপস্থিত সকল নেকড়েরা সামান্য ভয়ে আছে৷ এমন নয় যে আরোণের এই রূপ তারা প্রথমবার দেখছে৷ উল্টো আরোণ তার সমগ্র জীবন হিংস্রই ছিলো। তার বর্বরতার বর্ণনা অনেকটা লোমহর্ষক বটে। কিন্তু ক্যাথরিন আসার পর আরোণ বদলায়। হিংস্র থেকে নম্র হয় ক্যাথরিনের কারণে। সেই ক্যাথরিন এবং তার সন্তান হলো ক্যামেলিয়া। যাকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়েছে। এক কথায় বলা যায়, যে ক্যামেলিয়াকে অপহরণ করেছে সে আরোণের সবথেকে দূর্বলতার জায়গায় হাত দিয়েছে। আরোণ এখনও মোটেও শান্ত হয়ে থাকবে না। নিজের হিংস্র রূপে ফিরেই সে সর্বপ্রথম তার কক্ষের দুই প্রহরীকে হত্যা করেছে। তার কথা অনুযায়ী এরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ছিলো।

ক্যামেলিয়াকে কে অপহরণ করতে পারে তা বুঝতে বাকি নেই কারো। আরোণের কক্ষে একটি চিরকুট পাওয়া গিয়েছে। যেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে,
” মেয়েকে জীবিত চাও তো সেই জায়গায়ই আসো যেখানে আমার ভাইয়ের লাশ পুড়িয়েছিলে। আর ভুলেও সাথে কাউকে আনবে না আরোণ রদ্রিগেজ। নাহলে তোমার মেয়ের লাশ টুকরো টুকরো করে তোমার প্রাসাদের সামনে ফেলে আসবো। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই চিরকুটটা যে মার্থারই লেখা তা স্পষ্ট। আরোণের কোনো শত্রু এখনো জীবিত থাকলে তা হচ্ছে মার্থা। নিশ্চয়ই নিজের ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই কাজ করেছে সে। আরোণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাই যাবে সে। নিজের মেয়ের জীবন নিয়ে সে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না৷ সকল নেকড়েরা আরোণকে নিষেধ করে। কিন্তু আরোণ নিজের সিদ্ধান্তে অটল। ক্যাথরিন এখনো জ্ঞানহীন অবস্থায় আছে নিজের কক্ষে। ক্যাথরিনের জ্ঞান ফিরে আসার আগেই আরোণ বেরিয়ে পড়বে৷ একবার ক্যাথরিনের জ্ঞান ফিরলে আর আরোণের একা যাওয়া সম্ভব হবে না।
যাওয়ার আগে একবার আরোণ নিজের কক্ষে আসে। ক্যাথরিন বিছানায় শুয়ে আছে। আরোণ এগিয়ে এসে ক্যাথরিনের পাশে বসে। ক্যাথরিনের চোখের কোণে এখনো অশ্রু জমে আছে। আরোণ একহাত বাড়িয়ে প্রথমে ক্যাথরিনের চোখের কার্নিশে জমে থাকা পানি মুছে দেয়। তারপর ঝুকে ক্যাথরিনের কপালে চুমু খায় আলতো করে। নিচে এতক্ষণ সকলের সামনে হিংস্র রূপে থাকা আরোণ যেন হঠাৎই খুব নরম হয়ে গিয়েছে। যার চোখে জমে আছে হারানোর ভয়। আরোণ ক্যাথরিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

” ক্যামেলিয়ার কিছু হতে দিবো না আমি৷ ওকে ফিরিয়ে আনবো। ”
এটুকু বলেই আরোণ ক্যাথরিনের হাতের উল্টো পিঠে একটা চুমু খেয়ে উঠে পড়ে। দরজার কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে তাকায়। তার অবচেতন মনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বুকের ভেতর উথাল-পাতাল চলছে। আরোণ সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। এই মুহুর্তে তার মেয়ের তাকে প্রয়োজন। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সে এই ধূলিঝড়ের মধ্যেই বেরিয়ে পড়ে। বেরোনোর আগে সে সকলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় কেউ যেন তার পিছনে না আসে। আর আনাস্তাসিয়াকেও খবর জানানোর জন্য ক্রিয়াসকে পাঠায়৷ জ্ঞান ফিরতেই ক্যাথরিনকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে৷ এই মুহুর্তে খুব আপন কারো তার পাশে থাকা প্রয়োজন। সেই চিন্তা করেই আরোণ এই কথা বলে। নাহলে সে নিজেও চাচ্ছিলো না মাত্র বিয়ের একদিনের মাথায় আনাস্তাসিয়াকে এভাবে ডেকে আনতে।

উগ্র ধূলিঝড় বয়ে চলেছে বাহিরে৷ ঝড় বয়ে চলেছে রিকার্ডো এবং আনাস্তাসিয়ার মনেও৷ আনাস্তাসিয়া এখনো রিকার্ডোর সাথে কোনো কথাই বলে নি। চুপচাপ একইভাবে বসে আছে। রিকার্ডোও আর কিছু বলে না। সময় দেয় আনাস্তাসিয়াকে। চুপচাপ আনাস্তাসিয়ার কোলে মাথা রেখে বসে রয় সে। বেশ কিছুক্ষণ পর রিকার্ডো নিজের মাথায় আনাস্তাসিয়ার হাত অনুভব করে। সাথে সাথে সে মাথা তুলে তাকায়। আনাস্তাসিয়া তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। রিকার্ডো তাকাতেই তাদের চোখাচোখি হয়। আনাস্তাসিয়া থমথমে গলায় বলে উঠে,
” আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ”
রিকার্ডো প্রশ্ন করে,
” কি? ”
” আমার সন্তান চাই। ”
রিকার্ডোর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সে জানে আনাস্তাসিয়া এতো সহজে রাজি হওয়ার মেয়ে নয়। তবুও ভেবেছিলো রিকার্ডোর কথার কিছুটা হলেও প্রভাব তার উপর পড়েছে। কিন্তু তেমন কিছুই হয় নি। রিকার্ডোর চেহারার ভাব পরিবর্তন হয়। রাগী স্বরে সে প্রশ্ন করে,

” তুমি জানো তুমি কি বলছো? ”
” আমি জেনে বুঝেই বলছি। ”
” তুমি জেনে বুঝে বলছো না নাসিয়া। একটু আগে আমি তোমাকে যা বলেছি হয়তো তুমি ঠিকঠাক শুনতে পাও নি বা বুঝতে পারো নি। তুমি বাচ্চা চাইছো কিন্তু সেই বাচ্চা তোমার মৃত্যুর কারণ হবে। ”
” ক্যামিও একজন নেকড়ের সন্তান। ভুলে যাচ্ছো? কিন্তু তার জন্ম একজন মানুষের গর্ভে। ক্যাথরিনেরও বেশ কিছু ঝুঁকি ছিলো। কিন্তু ক্যাথরিন এখন সুস্থ আছে সম্পূর্ণ। ঝুঁকি থাকতেই পারে। তাই বলে আমি ভয় পেয়ে তা নিষিদ্ধ করে দিতে পারিনা। ”
রিকার্ডো ক্ষুব্ধ স্বরে বলে উঠে,

” তুমি বুঝতে পারছো না নাসিয়া। নেকড়েরা চাইলে সাধারণ মানুষের খাবারও খেতে পারে। ওদের এতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আরোণ ওরা পশু আর মানুষ খেয়েই অভ্যস্ত। যার ফলে ওরা কখনো সাধারণ মানুষের খাবার খায়না। তাই ক্যামেলিয়া পেটে থাকা অবস্থায় ক্যাথরিন সাধারণ খাবার খেলেও বিনিময়ে ক্যাথরিনের কোনো ক্ষতি হয় নি। কিন্তু ভ্যাম্পায়ারদের একমাত্র খাদ্যই হচ্ছে তাজা রক্ত। তোমার গর্ভে আমার সন্তান আসলে সে বেড়ে উঠার জন্য কেবল রক্ত খুঁজবে। আর তখন তার বেড়ে উঠার উৎস হবে কেবল তোমার রক্ত। তোমার দেহের একবিন্দু রক্ত অবশিষ্ট থাকবে না। ”
আনাস্তাসিয়া কোনো কথা মানতে নারাজ। রিকার্ডো যতই বুঝাচ্ছে আনাস্তাসিয়া কোনো কথাই কানে তুলছে না। রিকার্ডো ক্রোধে চিৎকার করে বলে উঠে,
” যথেষ্ট হয়েছে। তোমার কোনো কথা শুনবো না আমি। তোমার ভালো তুমি বুঝা বন্ধ করে দিয়েছো বলে আমিও নিজের জ্ঞানশক্তি হারিয়ে বসি নি। তাই এই বিষয়ে আর কোনো কথা হবে না। ”
আনাস্তাসিয়া রেগে বলে উঠে,
” তুমি স্বার্থপর। ”

” তোমার ভালোর জন্য চিন্তা করাকে স্বার্থপরতা বললে আমি স্বার্থপর হতেও রাজি৷ ”
রিকার্ডোর কথা শেষ হতেই দরজায় করাঘাতের শব্দ হয়। আনাস্তাসিয়া আর রিকার্ডো দুজনেই ভ্রু কুচকে তাকায়। এতো রাতে কে এসে কড়া নাড়ছে? দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ে। রিকার্ডো অনুমতি দেয় ভেতরে আসার। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন প্রহরী মাথা নত করে ভেতরে প্রবেশ করে বলে উঠে,
” দুঃখিত কাউন্ট। কিন্তু ক্রিয়াস নামের একজন আপনার এবং কাউন্টেসের সাথে দেখা করতে চাইছে। ”
ক্রিয়াসের নাম শুনতে রিকার্ডো এবং আনাস্তাসিয়া আরো বেশি অবাক হয়। এই মুহুর্তে ক্রিয়াস কেন এসেছে? আনাস্তাসিয়া কোনো কথা না বলে সোজা কক্ষ হতে বেরিয়ে পড়ে। রিকার্ডোও চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে। নিচে নেমে দাঁড়াতেই প্রধান দরজার সামনে ক্রিয়াসকে দেখতে পায় তারা। আনাস্তাসিয়া এগিয়ে এসে চিন্তিত সুরে প্রশ্ন করে,
” ক্রিয়াস! তুমি এতো রাতে এই ধূলিঝড়ের মাঝে এখানে কি করছো? সব ঠিক আছে? ”
ক্রিয়াসের চেহারার অবস্থা দেখে ভালো মনে হচ্ছে না রিকার্ডোর। সে প্রশ্ন করে,

” কি হয়েছে ক্রিয়াস? ”
ক্রিয়াস কাপা কাপা স্বরে বলে উঠে,
” ক্যামেলিয়া অপহরণ হয়েছে। ”
ক্রিয়াসের কথা শুনে আনাস্তাসিয়া এবং রিকার্ডো দুজন আঁতকে উঠে। আনাস্তাসিয়া বিচলিত গলায় প্রশ্ন করে,
” অপহরণ হয়েছে মানে? আমার ক্যামি? ”
ক্রিয়াস বলে,
” মার্থা জ্যাকসনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ক্যামেলিয়াকে অপহরণ করেছে। আলফা গিয়েছে ওকে ফিরিয়ে আনতে৷ কিন্তু ক্যাথরিনের অবস্থাও ভালো নয়। দয়া করে আপনি চলুন কাউন্টেস। ”
আনাস্তাসিয়া দৌঁড়ে বেরিয়ে যেতে নেয়। রিকার্ডো তার হাত ধরে থামায়। আনাস্তাসিয়া রিকার্ডোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

” দয়া করে আমাকে আটকাবে না৷ আমার ক্যাথরিনের কাছে যেতে হবে। ”
রিকার্ডো উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠে,
” আমি তোমাকে নিয়ে যাবো। ”

মাথার উপর দিয়ে একঝাঁক পাখি উড়ে যেতেই আরোণ দৌঁড় থামিয়ে মাথা তুলে উপরে তাকায়। সে এখন সম্পূর্ণ নেকড়ে রূপে আছে। ধূলিঝড় মনে হয় আজ রাতে আর থামবে না। প্রকৃতি যেন ধ্বংসের লীলাখেলায় মত্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে পথে বেশ কিছু বড় গাছ ভেঙে পড়ে আছে। সেগুলোকে পেরিয়েই আরোণ আবার বড় বড় লাফ মেরে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। মনে মনে একটাই প্রার্থনা ক্যামেলিয়া যেন সম্পূর্ণ ঠিক থাকে।

এই প্রবল ঝড়ের মাঝেও রিকার্ডো আনাস্তাসিয়াকে নিয়ে ঠিকই বাসকোভ প্রাসাদে পৌঁছে গিয়েছে। তাদের সাথে ম্যাথিউও এসেছে। তারা প্রাসাদ থেকে বের হওয়ার সময়ই ম্যাথিউর সাথে দেখা হয়৷ সব শুনে ম্যাথিউও তাদের সাথে আসে। প্রাসাদে পৌঁছাতেই আনাস্তাসিয়া দৌঁড়ে উপরে ক্যাথরিনের কাছে চলে যায়। ক্যাথরিনের সবে মাত্র জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফিরার সাথে সাথেই সে ক্যামেলিয়ার একটি জামা বুকে জড়িয়ে কাদছে। ক্রিনা তাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছে না। কেবল পাশে দাঁড়িয়ে তাকে আগলে রেখেছে। আনাস্তাসিয়া কক্ষে প্রবেশ করতেই বোনকে এই অবস্থায় দেখে সে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে। আনাস্তাসিয়ার চোখও অশ্রুসিক্ত। নিজের সন্তান না হলেও সে ক্যামেলিয়াকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসে। আনাস্তাসিয়া বলে উঠে,

” কিচ্ছু হবে না আমাদের ক্যামির। তুই শান্ত হ। ”
কিন্তু এই সামান্য শান্তনা বাক্য ক্যাথরিনের কান্না কমায় বৈকি আরো বাড়ায়। তার মন খুব অশান্ত এবং ছটফট করছে। ক্রিনা বলে উঠে,
” আলফা এবং পালের নেকড়েরা গিয়েছে ক্যাথরিন। চিন্তা করো না। ক্যামেলিয়াকে নিয়েই ফিরবে তারা। ”
ক্রিনার কথা শুনে আনাস্তাসিয়া ক্রিনার দিকে ফিরে তাকায়। সে যতদূর জানে ক্রিয়াস তাকে জানিয়েছে আরোণ একা গিয়েছে। মার্থা বাকি কাউকে নিয়ে যেতে মানা করেছে। ক্রিনা চোখের ইশারায় আনাস্তাসিয়াকে বুঝায় যে ক্যাথরিন এই বিষয়ে কিছু জানে না। আরোণ একা গিয়েছে শুনলে সে আরো অশান্ত হয়ে পড়বে। তাই আরোণ সকলকে নিষেধ করেছে ক্যাথরিনকে এই বিষয়ে জানাতে। ক্রিনা ক্যাথরিনের জন্য খাবার আনবে বলে বেরিয়ে পড়ে। আনাস্তাসিয়া ক্যাথরিনকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে পাশে। হঠাৎ একজন প্রহরী এসে তাকে ডেকে বলে যে রিকার্ডো আনাস্তাসিয়াকে ডেকেছে। আনাস্তাসিয়া ক্যাথরিনকে বলে,

” আমি এখুনি আসছি। ”
কক্ষ থেকে বের হতেই আনাস্তাসিয়া দেখে রিকার্ডো করিডরে পায়চারি করছে। আনাস্তাসিয়াকে দেখতেই থেমে দাঁড়ায় সে। আনাস্তাসিয়া চোখের পানি মুছে এগিয়ে যায় রিকার্ডোর দিকে। রিকার্ডো বলে উঠে,
” আরোণ একা গিয়েছে। যেটা মোটেও ঠিক হয়নি। আমি সেখানে যাচ্ছি। ”
আনাস্তাসিয়া আঁতকে উঠে বলে,
” কিন্তু মার্থা বলেছে অন্য কেউ গেলে সে ক্যামির ক্ষতি করবে। ”
” মার্থা একজন বিশ্বাসঘাতক নাসিয়া। বিশ্বাসঘাতকের কাজই বিশ্বাসঘাতকতা করা। আরোণ ক্যামেলিয়ার পিতা হিসেবে চিন্তা করেছে। তাই সে একা গিয়েছে। কিন্তু সে একা গেলেও যে মার্থা তাদের সহজেই ফিরতে দিবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমার সেখানে যাওয়া প্রয়োজন। ”
আনাস্তাসিয়া প্রশ্ন করে,

” কিন্তু তুমি কিভাবে জানবে ভাই কোথায় গিয়েছে? ”
” আমার ক্রিয়াসের সাথে কথা হয়েছে। জ্যাকসনের লাশ সিন্ড্রেল পর্বতের চূড়ায় নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। তারমানে মার্থা, আরোণ এবং ক্যামেলিয়াকে সেখানেই পাবো। ”
আনাস্তাসিয়া কিছু বলার পূর্বেই রিকার্ডো বলে উঠে,
” ক্যাথরিনের সাথে থাকো। ওকে সামলাও। ম্যাথিউ প্রাসাদে থাকবে। কিছু প্রয়োজন হলে ওকে জানাবে। কিন্তু তুমি বা ক্যাথরিন প্রাসাদ ছেড়ে বের হবে না। ”
আনাস্তাসিয়া কিছু বলে না। কেবল মাথা নাড়ায়। রিকার্ডো যাওয়ার জন্য ফিরতে নিলেই হাতে টান অনুভব করে। ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে তাকায় সে। আনাস্তাসিয়া তার হাত ধরে ছলছল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রিকার্ডো শান্ত স্বরে বলে,

” ক্যামেলিয়ার কিছু হবে না। ওকে নিয়েই ফিরবো। ”
আনাস্তাসিয়া বলে উঠে,
” তুমিও ফিরে এসো। ”
রিকার্ডো নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে আনাস্তাসিয়ার দিকে। কিছু না বলে এগিয়ে আনাস্তাসিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আনাস্তাসিয়াও রিকার্ডোকে আঁকড়ে ধরে। রিকার্ডো আনাস্তাসিয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেই বলে উঠে,
” আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার উপর তখন রাগ দেখিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কেবল তোমায় চাই। এজন্যই তোমার কথা শুনে রেগে গিয়েছিলাম। ”
আনাস্তাসিয়া বলে উঠে,
” আমি জানি রিক। ”
রিকার্ডো আনাস্তাসিয়াকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

” এখন যাই। দেরি করা সমীচীন হবে না। ”
আনাস্তাসিয়া এবার আর রিকার্ডোকে বাধা দেয় না। রিকার্ডোর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। যতক্ষণ না রিকার্ডো চোখের আড়াল হয় ততক্ষণ একইভাবে তাকিয়ে থাকে। রিকার্ডো চোখের আড়াল হতেই সে হেঁটে ক্যাথরিনের কক্ষে ফিরে আসে। কিন্তু দরজা খুলে কক্ষে প্রবেশ করতেই আনাস্তাসিয়া একটা ধাক্কা খায়৷ সম্পূর্ণ কক্ষ খালি। ক্যাথরিন কোথাও নেই। আনাস্তাসিয়া চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে কক্ষের একপাশের দেয়াল খুলে একটি সুরঙ্গ পথ দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে বিছানার পাশের দেয়ালের একটি চিত্রকর্ম নিচে পড়ে আছে। সেই দেয়ালের একটি বড়সড় পাথরও নিচে পড়ে আছে। আনাস্তাসিয়া কিছু বুঝতে না পেরে বেরিয়ে সকলকে ডাকতে যাবে তখনই সে দেখতে পায় মেঝেতে একটি কাগজের টুকরো পড়ে আছে। আনাস্তাসিয়া এগিয়ে এসে কাপা হাতে সেই কাগজটি তুলে নেয়। মার্থার লেখা সেই কাগজটি এটা। তারমানে ক্যাথরিন জেনে গিয়েছে আরোণ একা গিয়েছে?
আনাস্তাসিয়া দৌঁড়ে কক্ষ থেকে বের হতে নিবে কিন্তু দরজায় ম্যাথিউর সাথে দেখা হয়। আনাস্তাসিয়া ম্যাথিউকে উদ্বিগ্ন গলায় সব জানিয়ে বলে,

” আমাদের এখনই যেতে হবে। ক্যাথরিনকে যেতে দেওয়া যাবে না। ”
ম্যাথিউ আনাস্তাসিয়াকে বাঁধা দিয়ে বলে,
” তুমি কোথাও যাবে না। আমি সকল নেকড়েদের খবর দিচ্ছি। ওরা মুহুর্তেই গিয়ে ক্যাথরিনকে ফিরিয়ে আনবে। ”
আনাস্তাসিয়া রাগ হয়ে বলে,
” আমার বোন একা আরোণ ভাইয়ের জন্য চলে গিয়েছে এই ধূলিঝড়ের মধ্যে আর তুমি আমাকে বলছো যেন আমি কোথাও না যাই? ”
ম্যাথিউ শান্ত স্বরে বলে,
” আমি কেবল তোমার ভালো চাই আনাস্তাসিয়া। ”
আনাস্তাসিয়া রাগে চেঁচিয়ে বলে,
” তোমাদের দুই ভাইয়ের সমস্যা কেবল এই একটাই। তোমরা আমার ভালো চাও। ”
ম্যাথিউ জবাব দিতে পারে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়। এই মুহুর্তে আনাস্তাসিয়ার রাগ সে সয়ে নিবে তবুও তাকে কখনই প্রাসাদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি দিতে পারবে না।

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫৫+৫৬

ঝড়ের মাঝে ভ্যালেন্টাইনকে সহ সামনে এগোতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে ক্যাথরিনকে। তবুও সে নিজেকে সামলে এগিয়ে যাচ্ছে সিন্ড্রেল পর্বতের দিকে। সে ভিন্ন পথে যাচ্ছে যেন কেউ তাকে বাধা দিতে না পারে। মনে মনে আরোণের চিন্তায় কাতর সে। নিজে একা ক্যামেলিয়াকে আনতে চলে গেলো। যদি মার্থা আরোণের কোনো ক্ষতি করার ফন্দি এঁটে বসে থাকে? আজকে মার্থাকে ক্যাথরিন নিজ হাতে শেষ করবে। এই উদ্দেশ্যেই আরোণের সেই খঞ্জর হাতিয়ার হিসেবে সাথে নিয়ে নিয়েছে সে। যেই খঞ্জরে আরোণের মৃত্যু নিশ্চিত সেই খঞ্জর নিশ্চিত মার্থার জীবন নিতেও সক্ষম? মার্থা মরলেই কেবল তারা শত্রু মুক্ত হতে পারবে। ক্যাথরিন মনে মনে বলে উঠে,
” যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আমার আরোণ এবং ক্যামেলিয়াকে ঠিক রেখো তুমি ঈশ্বর। ”

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫৯+৬০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here