মহাপ্রয়াণ পর্ব ৭+৮
নাফিসা তাবাসসুম খান
গোঙ্গানির শব্দ ভেসে আসছে কামরার ভেতর থেকে। দরজার সামনে আসতেই এই শব্দ শুনে বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে ক্যামিলো। দরজা খুলে কামরায় প্রবেশ করতেই সে দেখতে পায় অর্ধনগ্ন একটি কিশোরীকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে ম্যাথিউ। সে আপাতত নিজের রক্ততৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। মেয়েটা ছটফট করছে গলা কাটা মুরগির মতো। নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছে। ক্যামিলো হাওয়ার বেগে ম্যাথিউর কাছে গিয়ে একহাতে তাকে ছুড়ে দূরে নিয়ে ফেলে। ম্যাথিউ দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যায়।
সেই মেয়েটির দেহও নিস্তেজ হয়ে নিচে লুটিয়ে পড়ে। একহাতে ঘাড় চেপে ধরে রক্তপাত বন্ধ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে। ব্যথায় মুখ দিয়ে এখনো রা আওয়াজ করে যাচ্ছে। ম্যাথিউ মুহূর্তেই ক্ষুদার্ত প্রাণীর মতো হিংস্র শব্দ করে উঠে দাঁড়ায়। ক্যামিলোকে দেখে দৃষ্টি কিছুটা শিথিল করার চেষ্টা করে। হাত দিয়ে মুখে লেপ্টে থাকা রক্ত মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” উফফ মা। আমাকে ক্ষমা করো। তোমার জন্য কোনো শিকার নিয়ে আসি নি। তুমি চাইলে এই মেয়েকে আমি তোমার অধীনে ছেড়ে দিতে পারি। এর সব রক্ত এখনো শেষ করি নি আমি। ”
” ম্যাথিউ! তোকে কতবার মনে করাতে হবে যে প্রাসাদের ভিতরে নিজের কোনো শিকার নিয়ে আসবি না। তোর ভাইয়ের নিষেধ কি তুই ভুলে যাস? ”
” তোমার ছেলে গত দু সপ্তাহ ধরে রোমানিয়ায় নেই। কোথায় গিয়েছে সেই খোঁজও কেউ জানেনা। শুধু শুধু তার ভয় আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই। ”
” সম্মান দিয়ে কথা বল ম্যাথিউ। সে শুধু তোর ভাই না কোভেনদের কাউন্টও। ”
” সে কি আদৌ কাউন্ট হওয়ার যোগ্য মা? যার কোভেনদের নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই সে কিভাবে আমাদের কাউন্ট হওয়ার ক্ষমতা রাখে? আর তোমার এসব নীতিবাক্য তোমার প্রাণপ্রিয় পুত্রর জন্য জমিয়ে রাখো। আমাকে একা ছেড়ে দাও। ”
” এই মেয়েকে ছেড়ে দে। ক্ষুধা মেটানোর হলে কোনো পশুর রক্ত পান কর শিকার করে। ”
ম্যাথিউ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ঘাড় বাকা করে চোখ বন্ধ করে। ক্যামিলো কিছু বলবে তার পূর্বেই ম্যাথিউ তীব্র বাতাসের গতিতে এসে সেই মেয়েটার পাশে বসে। ক্যামিলো আঁতকে উঠে মানা করে। ম্যাথিউ সেদিকে তোয়াক্কা না করে সেই মেয়েটির ঘাড় ভেঙে ফেলে। ক্যামিলো চেঁচিয়ে উঠে।
” আমার সন্তানদের এতো অধঃপতন দেখার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয় ছিলো। ”
” এতে অধঃপতনের কি দেখলে মা? আমাদের অস্তিত্ব ও পরিচয় কি তুমি ভুলে গিয়েছ? এটাই তো স্বাভাবিক। তাই নয় কি? ”
” আমি জানি আমি আমাদের স্বত্তা বদলাতে পারবো না। তাই বলে কারো ক্ষতি না করেও তো টিকে থাকতে পারি। তাই না? ”
ম্যাথিউ বিছানায় আরাম করে গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুটা বিদ্রুপের সুরে বলে,
” মানুষের মতো আচরণ আমাদের মানায় না। ”
” আমরাও একটা সময় মানুষই ছিলাম। ”
” ছিলাম। কিন্তু এখন আর নেই। তাই অযথা অতিতের কথা বলে আমায় বিরক্ত করো না। আর ভুলে যেও না আমি আজকে যা হয়েছি তা তোমার কারণেই হয়েছি। এই হিংস্র জীবন তুমি আমাকে দিয়েছো। ”
ক্যামিলো আর কিছু বলতে পারে না। সে তাকিয়ে থাকে অবিকল তার মতোই দেখতে শ্যামবর্ণের ও রেশমের মতো কালো চুলের ছেলের দিকে। দেখতে ক্যামিলোর মতো হলেও যার স্বভাব ও অভ্যাস একদমই তার উল্টো। তার কথা গলায় এসে আটকে যায়। কিছু না বলে কামরা থেকে বেরিয়ে পড়ে সে। ক্যামিলো বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই ম্যাথিউ চোখ মেলে তাকায়। কিছুক্ষণ শূন্যে তাকিয়ে থেকে পাশ ফিরে নিচে পড়ে থাকা সেই মেয়েটির লাশের দিকে তাকায়। সেই দৃষ্টিতে না আছে কোনো মায়া আর না আছে কোনো মনুষ্যত্বের ছায়া।
জঙ্গলের গহীনে ঘুটঘুটে অন্ধকার যেন চাঁদের আলোয় কিছুটা ঘুচেছে। লম্বাটে গাছগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেই গাছের ডালপালার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছে উজ্জ্বল নক্ষত্রপুঞ্জ। কিন্তু এসবের দিকে ক্যাথরিনের কোনো ধ্যান নেই। সে যতটা সম্ভব হচ্ছে রাস্তা মনে রাখার চেষ্টা করছে মুখস্থ বুলির মতো। এতোদিন পর সেই বন্দী প্রাসাদ থেকে মুক্তি পেয়েও প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেওয়ার ফুরসত পাচ্ছে না সে। আরোণ যখন তাকে খবর পাঠালো যে এই মধ্যরাতে এই মুহুর্তে তাকে আরোণের সাথে বাহিরে যেতে হবে তখন সে মানা করতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে যায়। মূলত তার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাসাদের বাহিরে বের হওয়ার রাস্তা ও জঙ্গলের ভেতরটার সাথে পরিচিত হয়ে থাকা।
যেন পরে পালানোর সময় সহজেই সে এখান থেকে পালাতে পারে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে কোনো গোলকধাঁধার মাঝে ঘুরছে। চারিদিক তার কাছে দেখতে একই মনে হচ্ছে। আরোণের তার দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে নিজের মতো সামনে হেঁটে চলেছে। ক্যাথরিনের মাথায় অনেক চিন্তাও ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন সে অনেকক্ষণ যাবত বুঝার চেষ্টা করছে তাকে এখানে নিয়ে আসার পিছনে আরোণের উদ্দেশ্য কি। আরোণ কি তাকে মারার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে? কিন্তু এই অসভ্য জানোয়ার তাকে মারার হলে আরো আগেই মেরে ফেলতো। এখনো বাঁচিয়ে রাখার পিছনে উদ্দেশ্য বুঝতে পারে না ক্যাথরিন।
হঠাৎ পিছনে ধপ করে পড়ার শব্দ হয়। আরোণ থেমে পিছনে না তাকিয়েই বলে,
” নিজের ধ্যান আমার প্রতি মননিবেশ করলে প্রতি কদমেই হোঁচট খেয়ে পড়বে। ”
ক্যাথরিন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকায় সামনে। এই অসভ্য কি মস্তিষ্কের ভাবনাও পড়তে পারে? পড়লে পরুক। তার কিছু যায় আসে না। ক্যাথরিন নিজের হালকা বেগুনী রঙের গাউনটা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আরোণ নিজের মতো আবার সামনে হেঁটে চলেছে। পিছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজনও মনে করে নি। আরোণের এমন ভাব দেখে ক্যাথরিন মনে মনে কিছু একটা ভাবে।
হাঁটতে হাঁটতে অনেকক্ষণ পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোনো শব্দ না পেয়ে খটকা লাগে আরোণের। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। কেউ নেই। স্মিত হাসে সে। কিছুটা উচ্চস্বরে বলে সে,
” আমার সাথে খেলার ইচ্ছে জেগেছে তারমানে। কিন্তু আলফার সাথে এসব বাচ্চাদের লুকোচুরি খেলাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত নিজেই ভেবে দেখো। ”
কোনো উত্তর না পেয়ে আরোণ আবার বিদ্রুপের সুরে বলে,
” এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করাটা বোকামি। তাই শুধু শুধু ব্যর্থ প্রয়াস করো না আর। আমি তোমাকে খোঁজা শুরু করার আগেই নিজ থেকেই বেরিয়ে আসো সামনে। ”
কোনো প্রতুত্তর না পেয়ে আরোণের মুখের হাসি মলিন হয়ে আসে। ভ্রু জোড়ার মাঝে সুক্ষ্ম ভাজ স্পষ্ট হয়। চোখ বন্ধ করে জোড়ে শ্বাস নেয়। না। ক্যাথরিনের গন্ধ পাচ্ছে না সে। চোখ মেলে আশেপাশে তাকায়। ধীর স্বরে বলে,
” ক্যাথ! ক্যাথ! আমি কিভাবে এই ভুল করলাম? ”
ড্যানিয়েল ও ক্যামিলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাথিউ। মাঝরাতে তাকে এভাবে ডেকে পাঠানোর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। ম্যাথিউ বিরক্তিমাখা কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
” আমাকে কেন ডেকেছো কারণটা কি জানতে পারি? ”
ড্যানিয়েল বলে,
” তুমি ভালো করেই জানো যে তোমার ভাই গত দু সপ্তাহ ধরে এখানে উপস্থিত নেই। সে কোথায় সেটাও কাউকে বলে যায় নি৷ এতদিন কোভেনদের এভাবে ফেলে রেখে দূরে থাকাটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। শত্রুরা তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। ”
” এখন আমি এই বিষয়ে কি করতে পারি? ”
” আমি চাই তুমি সবার অগোচরে এখান থেকে গিয়ে তোমার ভাইকে যেখান থেকে পারো খুঁজে আনো। তুমি ছাড়া আর কাউকে আমি চোখবন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারবো না। ”
” তুমি জানো যে তোমাদের ছেলের কোনো বিষয় নিয়েই আমি পরোয়া করি না। তাই আমার থেকে এই আশা করো না। ”
ক্যামিলো কিছুটা রেগে ধমকে উঠে,
” ম্যাথিউ। হয় ভাই বল নাহয় কাউন্ট। বারবার তোমাদের ছেলে তোমাদের ছেলে এটা কোন ধরনের আদব? ”
” আদব, মায়া ও করুণা এই তিনটা জিনিস আমার মাঝে নেই তা তুমি ভালো করেই জানো মা। তাই অযথা আমাকে এসব বলে সময় অপচয় করো না। ”
ক্যামিলো কিছু বলতে নিবে তার আগেই ড্যানিয়েল বলে,
” তুমি কক্ষের বাহিরে অপেক্ষা করতে পারো ক্যামিলো। আমি ম্যাথিউর সাথে একা কথা বলতে চাই। ”
ক্যামিলো আর কিছু না বলে ম্যাথিউর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ড্যানিয়েল বিশাল জানালার পাশে রাখা দুটি গদির একটিতে পায়ের উপর পা তুলে বসে আরেকটিতে ম্যাথিউকে বসার জন্য ইশারা করে। ম্যাথিউ কথা না বাড়িয়ে বসতেই ড্যানিয়েল তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” তোমার নিজের মা এবং ভাইয়ের প্রতি রাগ ও ক্ষোভ সম্পর্কে আমি অবগত। কিন্তু তোমাকে এখন তাকে খুঁজতে যেতেই হবে। ভুলে যেও না আমাদের অস্তিত্বও তার সাথে জড়িত। শত্রুরা চারিদিকে ওঁত পেতে বসে আছে। সবাই তার গোলাম। কিন্তু এই মূর্খের দল এটা বুঝতে পারছে না যে তারা যা করছে ভুল করছে। যে কাউন্টের কোভেনদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই তাকে নিয়ে কিসের এতো আদিখ্যেতা? কাউন্ট হওয়া উচিত এমন কারো যে কোভেনদের ও আমাদের সর্বপ্রথম প্রাধান্য দেয়। যেমন তুমি। ”
ড্যানিয়েলের কথার অর্থ বুঝতে পারে ম্যাথিউ। সে আর কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায়। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবার পিছনে ফিরে বলে,
” আমি নিজের মতো যথেষ্ট ভালো আছি। কোভেনদের কাউন্ট হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমি পোষণ করছি না। আর বাকি রইলো আমাদের কাউন্টের বিষয় আমি এখনই বেরোচ্ছি তাকে খুঁজতে। এদিকটা আশা করছি তুমি ও মা সামলে নিবে। ”
ম্যাথিউ এই বলেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। ড্যানিয়েল জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে হতাশ দৃষ্টি মেলে।
চারিদিকের অন্ধকার ছাপিয়ে আরোণের লাল চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে। বিচলিত চোখ মেলে বাতাসের বেগে এক এক বার এক এক দিকে ছুটছে সে। নিজের উপর চরম বিরক্ত সে। তার সাজানো ফাঁদে শত্রু পা ফেলে নি৷ ক্যাথরিনের ক্ষতি করার জন্য যে শত্রু উঠে পড়ে লেগেছে তার মূল সূত্র যে আরোণকে ঘিরে সেটা আরোণ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। ক্যাথরিন হতে দূরে থাকার আদেশ দিয়েছিলো সে সবাইকে। ক্যাথরিন শুধু মাত্র আরোণের একান্ত শিকার। সেই শিকারকে অন্য কেউ বাগে নেওয়ার চেষ্টা করাটা নেহাৎই আরোণকে বিচলিত করার জন্যই। আরোণ যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। সে মোটেও চায় না তার শত্রুর ইচ্ছে সফল হোক। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার নিজের উপর রাগ হচ্ছে এই ভেবে যে সবে মাত্র জ্বর সেড়ে উঠা ক্যাথরিনকে নিয়ে বাহিরে আসাটা তার ভুল ছিলো। জ্বর সাড়লেও এখনো বেশ দূর্বল ছিলো তার শরীর। এমতাবস্থায় সেই শত্রু তার উপর আক্রমণ করলেও সে প্রতিরোধ করতে পারবে না। ক্যাথরিনের মুখ চোখে ভেসে উঠতেই সে আগের তুলনায় বেশি উদগ্রীব হয়ে খুঁজতে শুরু করে।
হঠাৎ বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় পরিচিত একটি ঘ্রাণ পায় আরোণ । ঘুরে পিছনে ফিরে আরোণ। চোখ বন্ধ করে আবার জোড়ে শ্বাস নেয় সে। একই পরিচিত ঘ্রাণ পায় সে। আরোণ এক পা দু পা করে সামনে আগায়। যতই সামনে এগোচ্ছে ততই ঘ্রাণটা আরো স্পষ্ট অনুভব করতে থাকে সে। আরো কিছুটা সামনে এগোতেই সে একটি গাছের আড়াল হতে হালকা বেগুনী রঙের গাউনের কিছুটা অংশ দেখতে পায়। আরোণ দ্রুতপায়ে সে গাছের সামনে যেতেই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায়।
সাদা বরফের উপর একটি মেয়ের দেহ পড়ে আছে। হালকা বেগুনী রঙের গাউনের জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া হওয়ার ফলে শরীরের অধিকাংশই দৃশ্যমান। পা, হাত সহ শরীরের সব জায়গায় আঁচড়ের দাগ। সেই আঁচড়গুলো থেকে রক্ত বেরিয়ে সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে আছে। আরোণের চোখ যেয়ে নিবদ্ধ হয় সেই মেয়েটির মুখশ্রীর উপর। দু কদম পিছিয়ে যায় সে। রক্তিম লাল চোখ শীতল হয়ে আসে। বরফকুচির ভীড়ে পড়ে থাকা এই রক্তাক্ত নিথর দেহটি কার বুঝতে পেরেই সে সেখানেই বসে পড়ে। আরোণের কাছে এই মুখশ্রী বড্ড অপরিচিত। তেজের বদলে অসহায়ত্বের ছায়া এই মুখশ্রীতে। এটাই তো দেখতে চেয়েছিলো আরোণ। ক্যাথরিনের অসহায়ত্ব। আরোণের এখন পৈশাচিক আনন্দ হওয়ার কথা। কিন্তু অদ্ভুৎ হলেও সত্যি তার বিন্দুমাত্র আনন্দ হচ্ছে না। উল্টো তার চোখ থেকে একবিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ে। ধীর স্বরে বলে,
” ক্যাথ! ”
হাঁটুর উপর ভর দিয়ে ক্যাথরিনের কাছে এসে বসে আরোণ। হাত বাড়িয়েও সরিয়ে ফেলে। তার মনে হচ্ছে তার সামান্য ছোঁয়াতেও ক্যাথরিন ব্যথা পাবে। তবুও সাহস করে হাত বাড়িয়ে একহাতে ক্যাথরিনকে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে। সাথে সাথে তার হাত রক্তে মাখামাখি হয়ে যায়। অপর হাত দিয়ে ক্যাথরিনের হাতের নাড়ি পরীক্ষা করে সে। নাড়ি সচল চলছে। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সে। কয়েকবার ক্যাথ বলে ডাকে। কোনো উত্তর না পেয়ে তাড়াতাড়ি নিজের গলা থেকে ক্লকের বাধন খুলে তা নিয়ে ক্যাথরিনের গায়ে জড়িয়ে দেয়। তারপর তাকে পাজকোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করে।
লিয়ামকে সেই বিকেল থেকে খুঁজছে আনাস্তাসিয়া। পাশের বাসার এরিকের সাথে খেলতে খেলতে কোথায় গিয়েছে লাপাত্তা। অফিলিয়া আনাস্তাসিয়াকে তাগাদা দিয়েছে লিয়ামকে নিয়ে আসতে বাসায়৷ সন্ধ্যা নেমে যাবে। বর্গেসদের বাসার সামনে আসতেই এরিককে নিকোডিমাসের সাথে দেখে আনাস্তাসিয়া। দু জন উঠোনে খেলছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে লিয়ামকে খুঁজে সে। উহু। লিয়াম কোথাও নেই। কাঠের বেষ্টনী দেওয়া ছোট দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে আনাস্তাসিয়া। এরিককে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,
” এরিক, লিয়াম কোথায়? তোমার সাথে ছিলো না ও? ”
” না। লিয়াম তো আমার সাথে আসে নি। অর্ধেক পথ আমার সাথে এসে ফিরে যায় সে। বাসায় পৌঁছায় নি এখনো? ”
কিছুটা চিন্তিত হয় আনাস্তাসিয়া। বাসার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে দেলিলাহ বর্গেস। আনাস্তাসিয়াকে দেখে হাসিমুখে প্রশ্ন করে,
” আরে আনাস্তাসিয়া, কখন এলে তুমি? ”
” দেলিলাহ থিয়া। আমি লিয়ামকে খুঁজছিলাম। এরিক, নিকোডিমাস ওদের সাথেই ছিলো। ভেবেছিলাম হয়তো এখানে এসেছে কিন্তু এরিক বললো ও ওদের সাথে আসে নি। তাই চিন্তা হচ্ছে। ”
দেলিলাহকেও চিন্তিত দেখা গেলো। সে নিকোডিমাসকে প্রশ্ন করে,
” লিয়ামকে কোথায় গিয়েছে তুমি জানো? ”
” ও বলেছিলো বাসায় ফিরে যাবে মা। তাই আমি আর এরিক একা এসেছি। হয়তো ও বাসায় পৌঁছে গিয়েছে। ”
আনাস্তাসিয়া বলে,
” আমি বাসায় গিয়ে খোঁজ করি দেলিলাহ থিয়া। হয়তো রাস্তায় আমার সাথে ওর দেখা হয়নি। ”
দেলিলাহ আনাস্তাসিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
” দাঁড়াও। একা যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সন্ধ্যা নেমে আসছে। আমি ওরিয়নকে ডেকে দিচ্ছে। সে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিবে। ”
” আমি একা যেতে পারবো থিয়া। সমস্যা নেই। ”
” তুমি অপেক্ষা করো। আমি এখনই ওরিয়নকে পাঠাচ্ছি। ”
এই বলে দেলিলাহ বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। বেশ কিছুক্ষণ পর একটি যুবক মাথায় ম্যাডিভাল টুপি পড়তে পড়তে বেরিয়ে আসে। যুবকটির সাথে নিকোডিমাসের চেহারার খুব মিল রয়েছে। এটাই যে নিকোডিমাসের বড় ভাই ওরিয়ন বর্গেস তা বুঝতে পারে আনাস্তাসিয়া। ওরিয়ন আনাস্তাসিয়ার সামনে এসে চমৎকার হেসে বলে,
” যাওয়া যাক চলো। ”
ওরিয়নের হাসি দেখে কিছুক্ষণ থমকে যায় আনাস্তাসিয়া। ওরিয়ন হাসলে তার বাম গালে টোল পড়ে। হুবুহু ক্যাথরিনের মতো। নিজেকে সামলে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনাস্তাসিয়া বলে,
” জ্বি। ”
রাস্তায় ওরিয়নের সাথে টুকটাক কথা হয় আনাস্তাসিয়ার। বর্গেসরা এই মেসিডোনিয়ায় অন্যতম সুপরিচিত বণিক পরিবারদের একটি। আনাস্তাসিয়ার বাবা মার্টিন অ্যালভেজের সাথে ওরিয়নের বাবা গিলস বর্গেসের ভালো সম্পর্ক ছিলো। অনেকবার একসাথে ব্যাবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেছে তারা একসাথে। মার্টিনের মৃত্যুতে তারা সবাই কতোটা শোকাহত তাই বলছিলো ওরিয়ন। কিন্তু আনাস্তাসিয়াকে চুপ দেখে সে বলে,
” আমি দুঃখিত। তুমি হয়তো এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছো না। ”
” না। আসলে লিয়ামকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো। এখনো বাসায় পৌঁছিয়েছে নাকি সেটাই ভাবছিলাম। ”
” চিন্তা করো না আমরা প্রায় এসেই পড়েছি। ”
সন্ধ্যা থেকে বসার ঘরে বসে অপেক্ষা করছেন অফিলিয়া। কখন আনাস্তাসিয়া লিয়ামকে নিয়ে আসবে ভেবে একটু পর পর দরজার দিকে তাকিয়ে খেয়াল রাখছেন। বাহিরের উঠোনের সদর দরজার শব্দ শুনতেই উঠে দরজার দিকে এগিয়ে আসেন। বাড়ির দরজা খুলে প্রবেশ করতেই অফিলিয়া আনাস্তাসিয়াকে প্রশ্ন করেন,
” লিয়াম কোথায়? ”
আনাস্তাসিয়া ও তার পাশে থাকা ওরিয়নের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। আনাস্তাসিয়া বলে,
” লিয়াম তারমানে বাসায় ফিরে নি গ্র্যানি। ”
সারাগ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। লিয়ামকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অফিলিয়া বসার ঘরে বসে অনবরত কেদে চলেছে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে দেলিলাহ বর্গেস, এরিকের মা হানাহ জোনাস সহ গ্রামের বেশ কিছু মহিলা। সকলে মিলে অফিলিয়াকে শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু অফিলিয়ার চিন্তা এখন দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। লিয়ামকে খুঁজতে আনাস্তাসিয়াও বেড়িয়ে পড়েছে লণ্ঠন ও ঘোড়া নিয়ে। দেলিলাহ বর্গেস অফিলিয়ার চিন্তা বুঝতে পেরে বলে,
” আপনি চিন্তা করবেন না থিয়া। লিয়ামকে পাওয়া যাবে। গ্রামের সকলে মিলে খুঁজছে তাকে। সম্পূর্ণ কাস্টোরিয়ায় তন্য তন্য করে খুঁজবে সকলে মিলে। আর বাকি রইলো আনাস্তাসিয়া ওকে নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। ওরিয়ন তার পিছনে গিয়েছে। সে আনাস্তাসিয়াকে নিরাপদ ফিরিয়ে আনবে। ”
” আমার বাচ্চা দুটো মাত্র শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলো। আমি চাইনা ওদের সাথে সেই ভয়ংকর রাতের মতো কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। ”
বলতে বলতে চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে অফিলিয়ার।
বনের যত গভীরে যাচ্ছে ততই চিন্তা বাড়ছে ওরিয়নের। পিছন থেকে বার কয়েক আনাস্তাসিয়াকে ডেকেও বিশেষ একটা লাভ হয় নি৷ আনাস্তাসিয়া একবার শুধু প্রতুত্তরে বলেছে,
” তুমি ফিরে যাও ওরিয়ন। আমি লিয়ামকে নিয়েই ফিরবো। ”
গহীন বনের গভীরে এই রাত্রিবেলায় আনাস্তাসিয়াকে একা ছাড়তে মন সায় দেয় না ওরিয়নের। তাই ঘোড়ায় লাগাম টেনে আনাস্তাসিয়ার পিছনে সে ছুটে চলেছে। আরো কিছুক্ষণ সামনে যাওয়ার পর একটি জায়গায় এসে আনাস্তাসিয়া ঘোড়া থামিয়ে নিচে নেমে আসে। ওরিয়নও তার পিছন পিছন ঘোড়া থামিয়ে নেমে আনাস্তাসিয়ার কাছে এসে প্রশ্ন করে,
” এটা তো সেই জায়গা যেখান হতে সেদিন তোমার মা ও বাবার লাশ উদ্ধার হয়েছিল। ”
” আমার মন বলছে লিয়াম এখানেই কোথাও আছে। ”
এই বলে আনাস্তাসিয়া আশেপাশে লিয়ামকে খুঁজতে থাকে। ওরিয়নও আর কথা না বাড়িয়ে আনাস্তাসিয়ার পিছন পিছন লণ্ঠন হাতে এগিয়ে আসে।
লিয়ামকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ কিছু একটার শব্দ পেয়ে আনাস্তাসিয়া কোমড় শৃঙ্খল হতে একটি চাকু বের করে শক্ত করে হাতে ধরে। ওরিয়নও হাতে একটি চাকু বের করে আনাস্তাসিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। জোরে গলা চেঁচিয়ে প্রশ্ন করে,
” কে? কেউ আছো এখানে? ”
আনাস্তাসিয়া অনুভব করে তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সে পিছনে ফিরে দেখে কেউ নেই। ওরিয়ন আনাস্তাসিয়ার দিকে ফিরে বলে,
” আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত আনাস্তাসিয়া। এখানে কেউ নেই। হয়তো বন্য পশুর শব্দ ছিলো। ”
আনাস্তাসিয়া ওরিয়নের দিকে ফিরে তাকাতে তাকাতে বলে,
” আমি এখন ফিরতে….. ”
আনাস্তাসিয়ার কথা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। ওরিয়নের পিছনে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ। আনাস্তাসিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে ওরিয়ন পিছনে ফিরে দেখে তাদের থেকে কয়েক হাত দূরে একটি যুবক দাঁড়ানো। ছাই রঙের একটি ম্যাডিভাল টিউনিক শার্ট ও কালো ব্রীচেস প্যান্ট পরিধান করে আছে সে। সাধারণ পোশাক পড়ে থাকলেও চেহারায় কিছুটা রাজকীয়ভাব লক্ষনীয়। সামনে এগোতে এগোতে সে আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” কিছু খুঁজছো তোমরা? ”
” আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ”
আনাস্তাসিয়া প্রতুত্তর করে। ওরিয়ন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেই যুবককে বলে,
” তোমাকে এই গ্রামে আগে দেখি নি। নাম কি? কোথায় থাকো? এখানে কি করছো? ”
সামনের যুবকটির দৃষ্টি এখনও আনাস্তাসিয়ার উপর থেকে সরছে না বিধায় ওরিয়ন আনাস্তাসিয়াকে আড়াল করে দাঁড়ায়। এই দেখে যুবকটি ক্রুর হেসে বলে,
” আমি এই গ্রামের না। আমি মেসিডোনিয়ার বাহির থেকে এসেছি। আমিও আমার ভাইকে খুঁজতেই এসেছি। ”
আনাস্তাসিয়া চোখ কুচকে প্রশ্ন করে,
” তোমার ভাইও হারিয়ে গিয়েছে? তার বয়স কত? ”
” আমার ভাই আমার থেকে এক বছরের বড়। ”
বলে আরেকটু কাছে এগোতে নিলেই ওরিয়ন হাতের চাকু সামনের দিকে ধরে বলে,
” দূর থেকেই কথা বললে খুশি হবো। ”
যুবকটি বলে,
” আমি কাছে আসবো না। ভয়ের কোনো কারণ নেই। তোমরা যাকে খুঁজতে এসেছো একসাথে মিলে আমরা তাকে খুঁজতে পারি। ”
” আমাদের তোমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আর তাছাড়া তুমি তোমার ভাইকে খুঁজতে এসেছো। ”
ওরিয়ন এর এই কথায় আবার হালকা হেসে আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে যুবকটি বলে,
” এতো বড় জঙ্গলে একা খুঁজলে কখনোই তোমরা তাকে খুঁজে পাবে না। আর যেহেতু আমি আমার ভাইকে খুঁজছি তাই পাশাপাশি তোমার ভাইকেও খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারি। ”
আনাস্তাসিয়া ওরিয়নের দিকে তাকিয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়। ওরিয়ন আর কিছু বলেনা। যুবকটি নিজেই প্রশ্ন করে,
” তোমার ভাইয়ের বয়স কত? আর সে দেখতে কেমন? ”
” লিয়াম তার নাম। আট বছর বয়স। দেখতে কিছুটা স্বাস্থ্যবান। তার চুলও আমার মতো সোনালী রঙের। ”
” আচ্ছা চিন্তা করো না। তাকে পেয়ে যাবে তুমি। ”
আনাস্তাসিয়া যুবকটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” তোমার নাম কি? ”
” ম্যাথিউ। তোমাদের? ”
” আমি আনাস্তাসিয়া। ও আমার প্রতিবেশী ওরিয়ন। ”
ম্যাথিউ আর কিছু বলে না উত্তরে। সে তাকিয়ে থাকে আনাস্তাসিয়ার গলায় পড়ে থাকা ক্রুশের দিকে।
অন্ধকার কক্ষে মোমবাতির টিমটিমে আলোর থেকেও অধিক জ্বলজ্বল করছে আরোণের লাল চোখ দুটি। সে একটি ছোট কাঁচের পেয়ালা হাতে করে বিছানায় বসে আছে। তার পাশেই বিছানায় ক্যাথরিন অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে। এখনো তার জ্ঞান ফিরে নি৷ মার্থা এসে ক্যাথরিনের জামা বদলে দিয়ে ও জখমে পট্টি করে দিয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। ক্যাথরিনের চেহারায় বিভিন্ন জায়গায় ও ঘাড়ে আঁচড়ের জায়গায় মার্থার বানানো ভেষজ উপকরণের একটি ঔষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে আপাতত আরোণ। কক্ষ জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। আরোণ ক্যাথরিনের ঘাড়ে স্পর্শ করার সাথে সাথেই ক্যাথরিন হালকা কেপে উঠে। আরোণ হাত সড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে বারান্দার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গভীর ধ্যানে কিছু একটা চিন্তা করতে থাকে। এভাবে কতো সময় পেরিয়ে যায় তার খেয়াল নেই৷ আরোণের ধ্যান ফিরে ক্যাথরিনের ঘুমের মাঝে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলার শব্দ শুনে।
সে পিছনে ফিরে বিছানার কাছে এগিয়ে যায়। ক্যাথরিনের পাশে বসে তার দু হাত দিয়ে ক্যাথরিনের হাত আগলে ধরে। হঠাৎ করেই তরতর করে ঘামতে থাকে ক্যাথরিন। আরোণ বিছানার পাশে থাকা ছোট ক্যাবিনেটের উপর রাখা একটি পানি ভরা পাত্র ও রুমাল হাতে নিয়ে তা ভিজিয়ে ক্যাথরিনের ঘাম মুছে দিতে থাকে। হঠাৎ বিকট চিৎকার করে ক্যাথরিন উঠে বসে কাপতে থাকে। ভয়ে, আতংকে সে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। আরোণ কোনো কথা না বলে শক্ত করে তাকে বাহুডোরে আলিঙ্গন করে নেয়। একহাতে ক্যাথরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে ও বলতে থাকে,
মহাপ্রয়াণ পর্ব ৫+৬
” ভয় পেয়ো না ক্যাথ৷ শান্ত হও। তুমি এখন আমার কাছে আছো। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না আমি থাকতে। তোমার পর্যন্ত পৌঁছাতে হলে এখন তাকে আরোণের ঢাল আগে ভাঙ্গতে হবে। ”
এভাবে অনেকক্ষণ থাকার পর ক্যাথরিন নিশ্চুপ হয়ে গেলে আরোণ বুঝতে পারে সে ঘুমিয়ে পড়েছে আবার৷ সে অবস্থাতেই ক্যাথরিনকে জড়িয়ে রেখেই আরোণ মনে মনে বলে,
” জীবনহানির কারণ থেকে জীবনরক্ষক হয়ে প্রতিজ্ঞা করছি তোমার দিকে যে দৃষ্টি দিয়েছে নিজ হাতে তার চোখ খুলে তাকে জ্যান্ত খুন করবো আমি৷ ”
