মাই লাভ মাই লাইফ পর্ব ৮
নাবিলা ইষ্ক
মাথা নুইয়ে রাখা আমিটা যে কাঁপছি উনি বুঝতে পারছেন? শুনতে পারছেন আমার অনবরত বিট করতে থাকা হার্টবিট? কম্পিত কণ্ঠে কোনোমতো বললাম,
‘স-সরুন।’
তাশরিক ভাইয়া হাসলেন। গলা খাদে নামিয়ে আমার মতন করে বললেন, ‘স-সরতে চাই না। হোয়াট টু ডু, বেইবি?’
আমার বুজে থাকা চোখজোড়া খুলে গেল। ড্যাবড্যাব করে তাকালাম। তাশরিক ভাইয়া তাকিয়ে আছেন সাবলীলভাবে। আবার কেমন মিষ্টি করে হাসছেন! কতোবড় অসভ্য। উনি আমাকে ভেঙালেন! আমার রাগে মাথাই কাজ করল না কিছুক্ষণের জন্য। চোখ রাঙিয়ে এবারে পরিষ্কার কণ্ঠে দৃঢ়ভাবে বললাম,
‘আমি ভেতরে যাবো। সরুন ভাইয়া।’
তাশরিক ভাইয়া মোটেও আহত হলেন না আমার আচমকা ভাইয়া ডাকে। আরও বেশ আগ্রহ হলেন। উতলা হয়ে বললেন,
‘শুনতে ভালো লাগছে। তাশরিক ভাইয়া। সো সুইট। হোয়াই ডোন্ট ইউ সে ইট ওয়ান মোর টাইম, বেবিডল?’
আমি মাথা নুইয়ে ফেললাম ফের। অদ্ভুৎ একজন! আর উনি এসব উদ্ভট নামে ডাকা কবে থেকে বন্ধ করবেন? উনি কী জানেন আমার কী অবস্থা হয়? আমি ভেতরে কতটা এলোমেলো হই? আমি বিড়বিড় করে আওড়ালাম,
‘আপনার নামে আমি নালিশ করবো ভাইয়ার কাছে।’
তাশরিক ভাইয়া এবারে শব্দ করে হাসলেন। সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। অনুভব করলাম মাথায় স্পর্শ। মাথা ছুঁয়ে দিয়েছেন। এযাত্রায় তার হাতের ফুলের তোড়াটা বাড়িয়ে ধরলেন,
‘A bouquet of flowers, for the one who has been made for me, who has been raise for me to love and to be cherish forever.’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথাগুলো বুঝতে একটু সময়ের প্রয়োজন ছিলো। সেটুকুও দিলেন না। ফুলের তোড়াটা আমাকে ধরিয়ে দিয়ে অন্য হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন ভেতরে। বেশ সহজভাবে, অধিকারবোধ নিয়ে। যেন এভাবে তিনি আগে থেকে আমার হাত ধরে এসেছেন। শুন্য মস্তিষ্কে আমি পুতুলের মতো তার টানের সুরে পিছুপিছু ভেতরে এলাম। ভেতরে বেশ হৈ-হুল্লোড় হচ্ছে। এখনো অহনা আপু আসেননি। ভাইয়াকে স্টেজে বসানো হয়েছে। কালো-সাদার মিশ্রণে সাজানো হয়েছে স্টেজ। ভাইয়ার পাশে সুফিয়া বসেছিলো। ও বড়ো বড়ো চোখে তাকাতেই আমার খেয়াল হলো। দ্রুতো হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতেও পারলাম না। অনুভব করলাম তাশরিক ভাইয়া ফিরে তাকালেন। অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন আজ। উনাকে কেউ না কেউ ডেকে যাচ্ছে।
অগত্যা ওদিকেই কুশল বিনিময় করতে চলে গেলেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। অনুভব করতে পারলাম আমার হাতে তখনো উনার হাতের উষ্ণ ছোঁয়া রয়ে গেছে। ফুলের তোড়াটার দিকে চেয়ে আমি অন্যমনস্ক হলাম। উনি এতো ফুল দেন কেনো? আর ওমন ফিল্মি লাইন গুলো কোথার থেকে শিখে আসেন? সবসময়ই উনার ফটরফটর করে কিছু না কিছু বলে আমার হার্টব্লক করাই লাগবে। এরজন্য কী তিনি বাইরে থেকে কোর্স নিয়ে এসেছেন? আমি তাকালাম তার দিকে। বাবা, চাচা, মামারাও আছেন ওখানে। তাশরিক ভাইয়ার বাবা কিছু একটা নিয়ে কথা বলছেন আর হাসছেন। হাসতে হাসতে আমার দিকে চোখ পড়তেই হাত তুলে ডাকলেন। আমার ওখানে মোটেও যেতে ইচ্ছে হলো না। তাশরিক ভাইয়া আছেন যে। তারপরও যেতে হলো। বাবা তাকিয়েই ছিলেন। কাছাকাছি যেতে তিনি আগলে নিলেন নিজের পাশে। বললেন,
‘তোমার আংকেল জিজ্ঞেস করছিলেন আমার এই ফুলের জন্য এতো সুন্দর ফুলে্র তোড়া কে দিয়েছে?’
আমার শ্বাস গলায় এসে আটকে রইলো। আংকেল আর বাবা চেয়ে আছেন আমার উত্তরের আশায়। আমি হাঁসফাঁস করলাম। মিইয়ে গেলাম। বলতে পারছিলাম না তাশরিক ভাইয়ার নাম। তাশরিক ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন ওপাশে। তিনিই বললেন,
‘আমি ছাড়া কে দেবে? কার সাহস আছে?’
উপস্থিত সবাই হেসে উঠলেন। আমি লজ্জায় আরও চুপসে গেলাম। আংকেল হাসতে হাসতে বললেন,
‘কেনো? আদরের কাজিন তো মনে হচ্ছে ওকে পছন্দ করে। কী যেন নাম? সজীব। সাচ আ হ্যান্ডসাম ইয়ং বয়। ভাবলাম ওই ছেলেটা দিলো কি-না! দারুণ মানাতো ওদের, তাই না?’
আমি মাথা তুলে তাকালাম। তাশরিক ভাইয়া স্বাভাবিকভাবেই হাসলেন। সেই হাসি চোখ ছুঁলো না। কণ্ঠের সুরও অন্যরকম শোনালো,
‘Baba, Don’t you think you’re going too far? Do you want me to be honest? Should i say something?’
আমি আশ্চর্য চোখে তাকালাম আংকেলে দিকে। আংকেল শুকনো হাসছেন। দ্রুত গতিতে বললেন,
‘My son, I’m joking. ha ha ha! That was a simple joke. ha ha ha.’
তাশরিক ভাইয়া চলে যেতে নিয়ে বলে গেলেন, ‘I hate your jokes… you old man.’
আংকেল একটু উচ্চ গলাতেই বললেন, ‘কোথায় বুড়ো আমি? মাত্র ফিফটি সিক্স। আসো লড়াই করি। দেখি কে জেতে!’ কথাটুকু শেষ করে আংকেল আমার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হেসে শুধালেন,
‘মাই প্রিটিয়েস্ট ডটার, তুমিই বলো..কে জিতবে? আমি না তাশরিক?’
আমি স্তম্ভিত হয়ে কিছুক্ষণ আংকেলকে দেখলাম।চেহারার মিল না হলেও বাবা-ছেলের আচার-আচরণ, চালচলন, কথার ধরনে দৃশ্যমান মিল আছে। আমি এখন জানি ওই অসভ্য লোকটা কার থেকে এসব গুণগুলো কুড়িয়েছে। বাপ-ছেলে দুজনই তো একই নদীর মাঝি। আমি অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকালাম। বাবা আমার মাথা বুলিয়ে দিয়ে আংকেলকে চোখ রাঙালেন,
‘এসব ছেড়ে গিয়ে অতিথি আপ্যায়ন কর।’
এইসময়ে অহনা আপু এসে পৌঁছেছেন। সাদা গাউনে তাকে চমৎকার লাগছে। আমি আড়চোখে আমার ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছেন অহনা আপুর দিকে। কিছুক্ষণ তার চোখের পলক অবধি পড়েনি। আমি হাতের ফোন দিয়ে দ্রুতো কিছু ছবি তুলে ফেললাম। কয়েকটি ভিডিও করলাম। ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে ধরেছে অহনা আপুর জন্য। আপু তার হাত ধরে উঠল স্টেজে। আমরা সবাই তখন কড়োতালি দিচ্ছিলাম। সেসময়ে ভাইয়ার সব বন্ধুরা সিঁটি বাজাচ্ছিলো। তাদের জন্য মূলত আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ভাইয়ার এক বন্ধু চিৎকার করে গান গাইছে। এতে বাকিরা হাসছে। তাদের মধ্যে তাশরিক ভাইয়াও আছে। প্যান্টের পকেটে দু-হাত ভরে দাঁড়িয়ে আছেন। চোখমুখ এখনো অন্ধকার করে রেখেছেন। তখন আংকেলের সাথে কথা কাটাকাটি হলো মাত্র। এতে এতো রাগার কী আছে? আমি তাকাতেই চোখে চোখ পড়ল। হকচকালাম। দৃষ্টি সরিয়ে আনলাম। সুফিয়া কানের কাছে এসে বলল,
‘ভাইয়ারা বোধহয় নাচবেন।’
আমি আশ্চর্য চোখে তাকালাম। চোখ দিয়ে জিজ্ঞেস করছিলাম, আসলেই? রুমি আপুও ফিসফিস করে বললেন, ‘ওইযে আর জে কে গান ইনফর্ম করে এলো এক ভাইয়া। তারা দুষ্টি করে হাসছেন চুপিসারে। বোধহয় সারপ্রাইজ রেখেছেন নিশু ভাইয়ার জন্য।’
এরমধ্যে আংটি বদলের নিয়মকানুন শুরু হলো। দুজন, দুজানাকে আংটি পরিয়ে দিতেই হৈচৈ শুরু হলো। ফটোগ্রাফার ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন ঘুরে ঘুরে। হঠাৎ করে জোরসে গান চালু হলো। গানের টুন শুনেই সবাই চিৎকার করে উঠেছে। ভাইয়ার বন্ধুরা একেক করে হলের মধ্যে আসছে। তারা মোট ছয়জন। তাশরিক ভাইয়াকে নিয়ে সাতজন। ওই ভদ্রলোক এলেন না। ওইতো দাঁড়িয়ে হাসছে। সবাই দেখছি ভালো নাচ পারে। ইতোমধ্যে টুনের সাথে তারা পা মিলাচ্ছে। বন্ধুদের মধ্যে একজন চিৎকার করে তাশরিক ভাইয়াকে ডাকলেন। আমি ভেবেছি উনি ডাকে সাড়া দেবেন না। কিন্তু আমাকে অবাক করে তিনি এলেন। হাত উঠিয়ে ভাইয়াকেও ডাকলেন। এযাত্রায় নিশু ভাইয়াও স্টেজ থেকে নেমে গেছেন। গান শুরু হয়েছে, তাদের দলবদ্ধ নাচও। সবাই একসাথে যখন স্টেপ করে গানের সাথে ‘মেহবুবা’ ডাকলেন আমি স্পষ্ট দেখলাম তাশরিক ভাইয়া আমার দিকেই চেয়েছিলেন। এতে যেন আমার কাজিনদের চ্যাঁচামেচি বাড়ল। ইশ! পরিবারের গুরুজনেরা সবাই আছেন উপস্থিত। সবার সামনে এমন করার কোনো মানে আছে?
Mehbooba, Mehbooba, Mehbooba, Mehbooba
Tu Hai Mere Dil Ka Ajooba, Ajooba, Ajooba
Tere Ishq Ki Deewangi Sar Pe Chad Ke Bole
Tune Kya Kiya, Yeh Kya Huya
Dil Ding Dong Ding Dole
Dil Ding Dong Ding Dole
গান শেষ হতে হাততালির শব্দে মুখরিত হলো হলরুম। এবারে আমার কাজিনরা স্টেজে উঠেছে। আমি বসেছিলাম চেয়ারে। সবাই উঠে যেতেই আমার পাশের চেয়ার ফাঁকা হয়েছিলো। তাশরিক ভাইয়া আমার পাশে এসে বিশ্রীভাবে বসলেন। হাত তুলে দিয়েছেন আমার চেয়ারের পেছনে। তিনি ঘেমেছেন বেশ। চুলও এলোমেলো। কোট খুলে ফেলেছেন। বুকের দিকের শার্টের কয়েকটি বাটনও খোলা। উন্মুক্ত বুক দেখা যাচ্ছে। তার এমন দু’পা ছড়িয়ে বসাতে আমি একটু অন্যপাশে চাপলাম। কতো বড়ো পা রে বাবা! তিনি এযাত্রায় ফিরে তাকালেন আমার দিকে। আমি তার তাকানো অনুভব করেই কুণ্ঠাবোধ করলাম। আরেকটু সরে বসতে চাইলাম। তখুনি উনি খুব শক্তপোক্ত ভাবে ধরলেন আমার চেয়ারটা। সামনের দিকে চেয়ে বেশ স্বাভাবিক গলায় বললেন,
মাই লাভ মাই লাইফ পর্ব ৭
‘চেয়ারে সমস্যা হচ্ছে বসতে?’
আমি দ্রুতো মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম, না সমস্যা হচ্ছে না। তাশরিক ভাইয়া বিনয়ী গলায় সুযোগ দেবার মতোন করে বললেন,
‘You can use my lap. It’s free for you…my little barbie doll.’