মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪৭ (২)
নওরিন কবির তিশা
শ্রাবণ মাসের মাতাল বাতাসে চারদিক ভিজে আছে কাঁচা মাটির সুবাসে। আনায়াদের বাড়ির সামনের গার্ডেনে বসেছে হলুদের আসর,বড় এক আলোকময় আয়োজন। বকুল গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির পানিতে ঝকমক করছে,বাতাসে দুলছে রঙিন ওড়না আর ভাসছে হাসির শব্দ। বিভিন্ন ছোট বড় নানা জাতের ফুল গাছের মাঝের আনায়ার আসন চারিদিকে আলোক রশ্মির ঝলকানি,আর সবার কণ্ঠে এক আবহমান উদ্দীপনা।
শ্রাবণের এমন দুপুরে বৃষ্টি থেমেছে একটু আগে,গাছপালা থেকে টুপটাপ পড়ছে জলকনারা আর বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি যেন ম্লান সৌর্যকিরনে চিকচিক করছে।
পুরো বাড়ি জুড়ে আজ হলুদের কর্মব্যাস্ততার সাথে আনন্দের ঢেউয়েরা দোলা দিচ্ছে।সবার পাশাপাশি শিশিরেরও দায়িত্ব কম নয়!মেয়ের একমাত্র বান্ধবী বলে কথা সকাল থেকেই বিভিন্ন ব্যাস্ততা ঘিরে রেখেছে তাকে। ড্রয়িং রুম থেকে হলুদের ডালাটা হাতে নিয়ে সবে গার্ডেন এরিয়ার দিকে পা বাড়াবে ঠিক সেই মুহূর্তে কাছে থাকা ইলেকট্রনিক যন্ত্রটির বারংবার কম্পন থমকে দেয় তাকে।
সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারে এই সময় তাকে নাহিয়ান ব্যাতিত আর কেউ স্মরণ করবে না সে তৎক্ষণাৎ পাশের একটা মেয়ের কাছে হলুদের ডালাটা দিয়ে বলে,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
—”সামিরা, তুমি একটু এই ডালাটা আয়ু আপুর ওইখানে দিয়ে আসবে। প্লিজ!আসলে আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কল এসেছে!”
সামিরা শিশিরের হাত থেকে ডালাটা নিয়ে বলে,,
—”আচ্ছা আপি তুমি যাও কথা বলো। আমি ডালাটি গিয়ে দিচ্ছি।”
শিশির মুচকি হেসে বলে,,
—”থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ বনু!”
সামিরা:”ইউ আর মোস্ট ওয়েল কাম আপি!”
সামিরা চলে যেতেই শিশির আর এক মূহুর্তও অপেক্ষা করল না।সোজা সেখান থেকে দুই তলায় চলে গেল কেননা নিচে সাউন্ড বক্সে প্রচন্ড জোরে মিউজিক চলছে। এমতাবস্থায় নিচে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বললে না তো শিশির কিছু শুনতে পাবে আর নাতো অপর প্রান্তের মানুষটা কিছু বুঝতে পারবে।
দুই তলা পুরো ফাঁকা।সবাই ড্রয়িংরুম গার্ডেন সহ বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। শিশির দ্রুত করিডোরের বাঁ পাশের রুমটাতে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। অতঃপর নাহিয়ানকে ফোন দিতে যাবে তার আগেই ফোনটা ফের কম্পিত হলে শিশির দ্রুত ফোন সোয়াইপ করে ডান কানে ধরে বলে—
—”হ্যালো!”
সঙ্গে সঙ্গে কলের ওইপাশ থেকে ভেসে আসলো একটা ঘোর লাগা গভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর,,
—”I love you বউ!”
একটা কন্ঠস্বর আর মূহুর্তেই শিশিরের পুরো পৃথিবী থমকে গেল। আ’ফি’ম মিশ্রিত সেই কন্ঠে যেন ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যেই ঘোর লেগে গেল তার।আর নাহিয়ান সে যেন শিশিরকে এভাবে থমকে দিতেই সারাক্ষণ ফন্দি-ফিকির চালাতে থাকে নাহলে সবাই যেখানে ফোন করে প্রথমে হাই,হ্যালো বলে সেখানে সে প্রতিবারই কেনো ‘I love you বউ’ দিয়ে কথা শুরু করবে! শিশির যখন এসব চিন্তায় নিমগ্ন তখনই নাহিয়ান ফের বলে,,
—”ও,বউ I love you! Love you, love you, love you!”
লজ্জাবতী লাজুক লতা গাছের কান্ড যেমন কোনো জীবের স্পর্শে নুইয়ে পড়ে নাহিয়ানের এমন কান্ডে ঠিক তদ্রুপ লজ্জায় মিইয়ে পড়ল শিশির।
নাহিয়ান:”কি হলো? আমার লাজুক লতা বউটা কি লজ্জা পেল!”
শিশির এবার নিজেকে সামলে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,,
—”চুপ করবেন আপনি?”
নাহিয়ান দুষ্টু হেসে বলল,,
—”এত সহজে কি করে চুপ করি ম্যাম? আমাকে চুপ করাতে হলে তো আপনার ঘুষ দেওয়া লাগবে ম্যাম?”
শিশির:”কি ঘুষ?”
নাহিয়ান:”A long kiss….”
শিশির লাজুক কন্ঠে বলল,,
—”ধুর অসভ্যলোক!”
নাহিয়ান:”বউয়ের কাছে সভ্য পুরুষ দুনিয়াতে আছে নাকি? আমার জানামতে নাই! আর থাকলেও আমি তার মত অত শুদ্ধ পুরুষ হতে পারব না ম্যাম! আর আপনাকেও এত লাজুক লতা হয়ে থাকতে দিবো না! আপনিই যদি এত লজ্জা পান। তাহলে আমাদের নোশি কিভাবে আসবে?”
শিশির:”এই ফোন রাখুন তো!”
নাহিয়ান মুচকি হেসে বলল,,
—”রাখতে পারি কিন্তু তার আগে একটা কিস!”
শিশির:”আপনি ওই নিউইয়র্ক আমি বাংলাদেশ।কেমনে কি?”
নাহিয়ান:”তাই নাকি? তারমানে আপনি বলতে চাইছেন আমি বাংলাদেশে থাকলে এই মুহূর্তে আমার একটা কিস পাওনা ছিল?”
শিশির একটা দুষ্টুমি করে বলল,,
—”সেটা হয়তো ছিল!”
কথাটা বলেই লজ্জায় মুখ লুকালো সে। অন্যদিকে মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে নাহিয়ান বলল,,
—”তাহলে সবগুলো জমা রাখুন! একসাথে দেশে সুদ সমেত ফেরত নিব!”
শিশির ফের দুষ্টু বলল,,
—”আচ্ছা!”
এদিকে….🌼🌼🌼
সবে নিজের রুম থেকে সাজুগুজু করে বের হচ্ছিল নিঝুম পরনে বাড়ির সব মেয়েদের সাথে ম্যাচ করে কাঁচা হলুদ কালার সারারা। পিঠ ছাড়ানো চুলগুলো পিছনদিকে ফ্রেঞ্চ বেণি করা। ঠোঁটে হালকা মেরুন কালার লিপস্টিক, চোখে চিকন করে আইলাইনার।
হঠাৎ সামনে থেকে কারো ছোঁড়া রঙিন পানি এসে তার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে পুরো মেকআপ সহ পরনের ড্রেস নষ্ট হয়ে বিশ্রী একটা অবস্থা হয় তার, দুই হাত দিয়ে চোখ ভালো করে মুছে সামনে তাকিয়ে সে দেখতে পায়। তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সৌজন্য। তাকে দেখে নিঝুম বলে,,
—”এটা কি করলেন?”
সৌজন্য:”রিভেঞ্জ!”
নিঝুম:”হোয়াট দ্যা হেল! এটা কোন ধরনের রিভেঞ্জ হ্যাঁ?”
সৌজন্য:”তোমার মনে হয় স্মৃতিভ্রম হয়েছে! ভালো করে মনে করে দেখো, নির্ঝর ভাইয়ের হলুদের দিন তুমি ঠিক আমার একই অবস্থা করেছিলে!”
নিঝুম:”আপনার কি মাথায় সমস্যা?আমি জাস্ট হলুদ লাগিয়ে ছিলাম। আর আপনি আমার ড্রেস মেকআপ সব নষ্ট করে দিলেন!”
সৌজন্য:”তুমি আমার যে শার্ট টা নষ্ট করেছিলে না! ওইটা আমার অনেক পছন্দের একটা শার্ট ছিল। অনেক আবেগের!”
নিঝুম:”কেন ওটা কি আপনাকে আপনার এক্স গিফট করেছিল নাকি?”
সৌজন্য:”তোমার সাথে এত ফালতু বকবক করার ইচ্ছা বা সময় কোনটাই আমার নেই!রিভেন্স ডান! নাউ ইউ ক্যান গো!”
নিঝুম:”আপনার মত আউল-ফাউল নো কম্পিটেন্সি মানুষের সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই আমারও । সো ইউ ক্যান গো!”
সৌজন্য:”তুমি নো কমপিটেন্সি কাকে বললে?”
নিঝুম আশে পাশে তাকিয়ে বলল,,
—”এখানে আর কেউ আছে নাকি?”
সৌজন্য:”তাহলে আজকে বিকেলের জন্য রেডি থেকো কে নো কম্পিটেন্সি আর কে ফুল অফ কমপিটেন্সি তার প্রমাণ তোমাকে দেখাবো!”
কথাটা বলেই সৌজন্য গার্ডেন এর দিকে চলে যায়। পিছন থেকে নিঝুম রাগে গজগজ করতে করতে বলে,,
—”হ্যাঁ হ্যাঁ দেখবানি!বজ্জাত বেডা!”
নাহিয়ান এর সঙ্গে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি শেষে মুচকি হাসতে হাসতে শিশির আনায়ার আসনের সামনে আসলো। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল ফারিন আর ইনায়া। শিশির দ্রুত এগিয়ে এসে আনায়ার পিছনে দাঁড়ানো ফারিনের পাশে দাঁড়ালো। হঠাৎই একটা ছোট্ট ছেলে দৌড়ে এসে ইনায়াকে বলল,,
—”ইনু আপু, ইরা তো অনেক কান্নাকাটি করছে, তাই কাকিআম্মু তোমাকে ডেকেছে!”
ইনায়া দ্রুত আনায়ার পাশ থেকে উঠে যেতে যেতে বলল,,
—”শিশির সবটা সামলে নিও তো! আসলে ইরাতকে এই সময় ফিডিং করাতে হয়! কিন্তু আজকে এত ঝামেলার মাঝে আমি ভুলেই গিয়েছি!”
শিশির:”আচ্ছা আপু তুমি যাও, বাকিটা আমি সামলাচ্ছি!”
ইনায়া:”আচ্ছা!”
ইনায়া চলে গেল। হলুদের পর্ব প্রায় শেষের দিকে। শ্রাবণের দ্বিপ্রহরে, সূর্যি মামার মিইয়ে পড়া রৌদ্ররেখা হলুদের পর্ব এখন যে শেষ করার সময় সেই প্রমাণক হিসেবে কাজ করছে! কিছুক্ষণ পর আনায়া কে গোসল করিয়ে ভিতরে নিয়ে যাবে তারা সেই প্রস্তুতিই চলছে। হঠাৎ একটা কালো বোরখা পরা ভদ্রমহিলা কোনো কথাবার্তা ছাড়াই দ্রুত এগিয়ে এসে আনার পাশে ধপ করে বসে পড়ল। শিশির কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকালো। মহিলাটির মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে সে যেন লুকিয়ে-চুরিয়ে আনয়ার সাথে দেখা করতে এসেছে।
বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছেন তিনি, বর্তমান সময়টিতে সেখানে শিশির আর ফারিন ছাড়া কেউ নেই, বাড়ির নবীনরা সবাই হলুদ সন্ধ্যের আয়োজনে ব্যস্ত, আর প্রবীণরা আনায়া কে হলুদ মাখিয়ে চলে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। হঠাৎই শিশিরকে ফারিন পাশ থেকে বলল,,
—”শিশির আপু?”
শিশির মহিলাটির দিকে তাকিয়ে আনমনে বলল,,
—”হু!”
ফারিন:”এই মহিলাটাকে কেমন অদ্ভুত মনে হচ্ছে না?”
শিশির ফারিনের দিকে ফিরে বলল,,
—”কেন বলোতো?”
ফারিন:”না মানে দেখো ওনার হাইট! সাধারণত মহিলা মানুষের হাইট এত বেশি হয়! স্ট্রেঞ্জ! ওনার হাইট দেখে তো মনে হচ্ছে ৫’১১ এরও বেশি। প্রায় ৬ ফিট! একটা মহিলা মানুষের উচ্চতা এত বেশি হয়?”
শিশির মুচকি হেসে বলল,,
—”উনি সম্ভবত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত!”
ফারিনও হেসে বলল,,
—”হতে পারে!”
মহিলাটি পাশের বাটি থেকে একটু হলুদ নিয়ে আনায়ার বাঁ চোয়ালে আলতো হাতে ছোঁয়ালো, অতঃপর সামনের ডেলিকেসি বক্স থেকে চামচ দিয়ে এক টুকরা মিষ্টি কেটে আনায়ার মুখে দিল। আনায়া মুচকি হেসে মিষ্টিটুকু গ্রহণ করে, ফের যখন সে নিজে মহিলাটিকে মিষ্টি দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো তখন মহিলাটি ঘোর আপত্তি জানালো, তিনি মুখ থেকে নিকাপ খুলতে নারাজ।
আনায়া বারবার জোর করাতে হঠাৎই মহিলাটি আনায়ার হাত আলতো হাতে চেপে ধরল। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেল আনায়ার সমস্ত স্নায়ু জুড়ে। এই স্পর্শ যেনো তার বহু কালের চেনা, হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পেল না অনায়া। অন্যদিকে শিশির একদৃষ্টে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে মহিলাটির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছিল। হঠাৎই মহিলাটির বোরখা পার দিক থেকে সামান্য উপরে উঠে যাওয়ায় শিশিরের চোখ গেল মহিলাটির জুতার দিকে। কিন্তু এমা তার পায়ে Nike Air Force 1, দামি ব্রান্ডের জেন্স সুজ।
শিশিরের আর বুঝতে বাকি রইল না আসলে ইনি কে! গলা খাঁখারী দিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,,
—”তা চাচী আম্মা মনে হয় জুতা বদলাতে ভুলে গেছেন!নাকি আমার হবু দুলাব্রোর জুতা চুরি করে পড়ে এসেছেন?”
সঙ্গে সঙ্গে ফারিন আর অনায়ার দৃষ্টি গেল ব্যক্তিটির পায়ের দিকে। ফারিন দুষ্টুমি করে বলল,,
—”আরে! দুলাভাই আমার আপুকে মিস করেছিলেন বললেই হতো! এত কষ্ট করে মহিলাদের মত সেজে আসার কোনো দরকার ছিল না!”
রিদিত এবার পড়লো চরম বিপর্যয়। সবাই তার ছদ্মবেশ ধরে ফেলেছে! ইস! কোথায় সে ভেবেছিল গায়ে হলুদের নিজের হবু বউকে লুকিয়ে লুকিয়ে একবার দেখে যাবে তা না সবাই কিনা ধরে ফেলল! তাও রক্ষে এখানে শিশির আর ফারিন ব্যতীত আর কেউ ছিল না! যদি ইনায়া থাকতো? তাহলে তো তার মান-সম্মানের পুরো ফালুদা ultra promax হয়ে যেত! এ কথা ভেবেই সে মনে মনে অসংখ্যবার শুকরিয়া আদায় করল।
অতঃপর শিশির আর ফারিন এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”আরে আমার কিউট কিউট শালীকারা দেখি বুদ্ধিমান আছে! তা যাই হোক শালীকারা দয়া করে এ কথা পাঁচ কান করো না তাহলে আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে! বোঝোই তো বউকে একটু বেশি ভালোবাসি একদিন না দেখলে আবার মন আনচান আনচান করে!”
রিদিতের এমন কথা শুনে ফারিন মনে মনে বলল,,
—”বিয়ের আগেই এরা নিজের বউকে কতটা ভালোবাসে! আর আমার টাকে দেখো শা*লা হাঁ*দা*রা*ম, ভালোবাসাতো কি কোনোদিন আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলে না! আল্লাহই ভাল জানে ওকে আল্লাহ কি দিয়ে সৃষ্টি করেছিল!”
তখনই হঠাৎ শিশির বলল,,
—”নানা,ভাই এত সহজে তো কাজ হচ্ছে না! আগে বলো মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষ হিসেবে আমরা কি পাব!”
রিদিত:”তোমরা যা চাইবা তাই দিব! কিন্তু আপাতত আমাকে এখন এখান থেকে বের হতে সাহায্য করো!”
শিশির:”তা আসার সময় কার সাহায্য নিয়ে এসেছিলে?”
রিদিত:”আসার সময় হাদা সাজিদটা হেল্প করেছিল! কিন্তু দেখো এখন তার খবর আছে?”
শিশির হেসে বলল,,
—”তাহলে তো তোমাকে স্যালুট জানাতে হচ্ছে ভাই! ওই হাঁদার হেল্প নিয়ে তুমি এতদূর চলে আসলে? জানো না উনি মানুষকে গাছে তুলে মই সরিয়ে নিতে খুব ভালো করেই জানে!”
রিদিত:”আজকে শুধু এখান থেকে মান সম্মান বাঁচিয়ে কোনোক্রমে বের হই তারপরে হাবলুস কে মজা দেখাচ্ছি!”
শিশির মুচকি হেসে ফারিনের দিকে ফিরে বলল,,
—”ফারু তুমি বরং একটু আনায়ার এইখানে দাঁড়াতে লাগো। কিছুক্ষণের ভিতরেই আন্টিরা ওকে গোসলের জন্য নিয়ে যাবে। আর আমি রিদিত ভাইকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি!”
তারপর রিদিতের দিকে ফিরে বলল,,
—”চলো ভাই না হলে এক্ষুনি এখানে আন্টিরা চলে আসবে!”
রিদিত আনায়ার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠতে উঠতে বলল,,
—”হ্যাঁ হ্যাঁ দ্রুত চলো!”
সে সামনের দিকে পা বাড়ালো। আর এদিকে এত কিছুর মাঝেও কিংকর্তববিমূঢ় আনায়া। রিদিতের এমন চমকে আসলেও স্তম্ভিত সে। হঠাৎই রিদিত যেতে যেতে একবার আনায়ার দিকে ফিরে বলল,,
—”আসি আমার প্রাণমোহিনী!”
কথাটা বলেই মুচকি হেসে শিশিরের সাথে এগিয়ে গেল সে। সে চলে যেতেই ফারিন আনায়ার পাশে বসে বলল,,
—”ইউ আর সো লাকি আপু! রিদিত ভাই আসলে তোমাকে অনেক ভালোবাসে!”
ফারিন এর কথায় আনায়া তার দিকে ফিরে বলল,
—”শুধু আমায় বলছো কেন? নির্ঝর ভাই ও কিন্তু তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। না হলে দেখো না একটুখানি চোখের আড়াল হলে কি করে সারা বাড়ি খুঁজে বেড়ায়! একটু আগেও তো এখানে এসে উঁকি মেরে দেখে গেছে, তখন তুমি শিশিরের সাথে গল্প করছিলে!”
ফারিন:”সত্যি সত্যি এসেছিল নাকি?”
আনায়া:”সত্যিই!”
ফারিন এক ঝলক হাসলেও, মুহূর্তের মাঝে কিছু মনে পড়তেই মুখ বাঁকিয়ে বলল,,
—”ভালোবাসা না ছাই! দেখতে এসেছিল আমি হারিয়ে গিয়েছি কিনা? হাজার হলেও আম্মু বারবার ওনাকে বলেছে আমাকে নজরে রাখার জন্য!”
তার কথা শুনে আনায়া হেসে বলল,,
—”ধ্যাত কি বলো! ওটা ভালোবাসাই রে পাগলি?”
ফারিন:”ভালোবাসা?আর ঐ লোক? কখনো দেখেছো পানিতে আগুন জলে? ঐ লোক হচ্ছে সেই ডিকশনারি যেখানে ভালোবাসা নামে কোন শব্দই নেই!”
তার কথা শুনে আনায়া ফের হাসলো। আসলে মেয়েটা অনেক বেশি মিশুকে আর অনেক বেশি প্রাণ চঞ্চলা। যার চোখে মুখে সর্বক্ষণ লেগে থাকে এক দুষ্টুমির রশ্মি,যা প্রতিটি মুহূর্তেই তার চারপাশকে একটু বেশিই জীবন্ত করে তোলে। মেয়েটাকে পছন্দ না করে থাকা যায় না।
হলুদ সন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। সবাই যে যার মতো সাজতে ব্যস্ত, আজকে বেশিরভাগ সবাই লেহেঙ্গা পড়বে। নিঝুম নিজের লেহেঙ্গা টা বের করার জন্য যেইনা আলমারি খুলতে যাবে তখনি সে দেখতে পায় রুমের ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা শাড়ি রাখা সাথে একটা নীল চিরকুট।সে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে প্রথমে শাড়িটার দিকে তাকায় তারপর চিরকুটটা হাতে তুলে সেটা খুলতেই দেখতে পায় তার ভিতরে বড় বড় গোটা অক্ষরে লেখা,,
“কি মিস টকেটিভ শাড়ি দেখে অবাক হচ্ছো? অবাক হওয়ার কিছুই নেই শাড়িটা তোমারই জন্য! দয়া করে এই শাড়িটা পড়েই হলুদ সন্ধ্যায় আমার সারপ্রাইজ দেখতে এসো!”
পাশে ব্রাকেটে ছোট করে আবার লেখা (যদি সাহস থাকে)। নিঝুমকে সাহসের প্রশ্ন? নিঝুম খুব ভালো করেই জানে কাজটা সৌজন্যের! সাহসী প্রশ্ন যেহেতু করেছে সেহেতু শাড়িটা তো পড়তেই হবে। সে শাড়ির ব্যাগ টা হাতে নিয়ে প্যাকেটটা দ্রুত খুলতেই দেখতে পেল তার ভিতরে পিঁয়াজ কালার সাটিন শাড়ি। শাড়িটা অন্যরকম কিন্তু এতটাই সুন্দর যে প্রথম দেখাতেই লোকের চোখে লেগে যাবে। নিঝুম আর দেরি না করে শাড়ি হাতে দ্রুত এগিয়ে যায় রোদেলা জামানের রুমের দিকে।
ফারিনের পরনে আজ বেবি পিঙ্ক রঙের লেহেঙ্গা, স্কার্টের প্রান্তজুড়ে সূক্ষ্ম সোনালি সুতোর জ্যামিতিক কারুকাজ, চোলিটিতেও একই রকম কারো কাজ আর ওড়নাটা পিঙ্ক আর গোল্ডেন এমব্রয়ডারির মিশলে তৈরি।
অন্যদিকে নির্ঝরের পরনে শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি যার গায়ে সূক্ষ্ম কারচুপি।ফারিনের সাজুগুজু শেষে দুইজনই প্রস্তুতি নিচ্ছে গার্ডেনে যাওয়ার জন্য কারণ সেখানেই বিশাল মঞ্চ করে আয়োজন করা হয়েছে হলুদ সন্ধ্যের। ইতিমধ্যেই সাউন্ড বক্সের জোরে জোরে গান বাজছে।
ফারিন কান চেপে নির্ঝরের দিকে ফিরে বলল,,
—”স্যার চলুন এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে!”
নির্ঝর পাঞ্জাবির হাতাটা ঠিক করতে করতে বলল,,
—”হুম চলো!”
ফারিন মাথা নেড়ে বলল,,
—”আচ্ছা!”
কথাটা বলেই ফারিন যেই অমনি পিছন ঘুরে দরজা পেরিয়ে বের হতে যাবে তৎক্ষণাৎ নির্ঝর তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,
—”এই স্টপ!”
ফারিন পিছন ঘুরে বলল,,
—”কি হয়েছে?”
নির্ঝরের দ্রুত তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,
—”পিছন ঘোরো!”
ফারিন অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,,
—”কেন?”
নির্ঝর:”যা বললাম তাই করো।আর একটাও প্রশ্ন না!”
ফারিন কিছু না বলে বোকার মতো পিছনে ঘুরল। তখনই নির্ঝর তার পিছন থেকে লেহেঙ্গার চোলির পিঠের দিকের খুলে যাওয়া ডোরিটি আলতো হাতে বেঁধে দিল। নির্ঝরের এমন কান্ডে কিছুটা হতবাক হলো ফারিন, তার চারিধারে হাওয়া যেন একটু থেমে ফিসফিসিয়ে উঠল,ফারিন নিঃশব্দে কুঁকড়ে এল, লজ্জার পাপড়ি ফুলে উঠল গালের কোণে। তারমানে ব্যস্ততার কারণে চোলির ডোরি লাগাতেই বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সে !ইসস! এরকম বোকামি কেউ করে যদি নির্ঝর না দেখে অন্য কেউ দেখতে পেত!
ডোরিটি টি লাগানো শেষে ফারিনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্রুত পায়ে রুম থেকে প্রস্থান করল নির্ঝর। ফারিন সেদিকের বেকুবের মতো চেয়ে রইল। কোথায় সে ভাবল নির্ঝরকে এর জন্য একটা ধন্যবাদ দিবে। তা না তাঁকে কিছু না বলতে দিয়েই নির্ঝর বেরিয়ে গেল! অদ্ভুত লোক!
আকাশের কোণে শ্রাবণের গম্ভীর মেঘের ঘনঘাটা,একটা থমথমে উচ্ছ্বাস যেন ছড়িয়ে ছিল বাতাসে। আনায়ার বাড়ির সামনের বাগানটিকে রূপান্তর করা হয়েছে এক রঙিন স্বপ্নমঞ্চে,সন্ধ্যার প্রকৃতিটাকে সাজানো হয়েছে কৃত্রিম স্ট্রিংলাইট এর আলোকসজ্জায়।
গার্ডেনে উপস্থিত সবাই, কিছুক্ষন আগেই সেখানে এসেছে নির্ঝর আর ফারিন। গার্ডেনে বড় করে আনায়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে কনের আসন। আসনের মাঝে মেরুন কালার গর্জিয়াস ড্রেস পরিহিতা একটা মেয়ে বসে আছে। যে আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি—আনায়া। আর তার ঠিক পাশেই আছে তার অন্তরঙ্গ বান্ধবীরা। আশা লিজা সহ এসেছে সাইফ সজলও।
তবে সবচেয়ে ভিন্ন শিশির, সবচেয়ে কাছের বান্ধবী, আনায়ার আত্মার-আত্মা। তারা দুজনে এতটাই ম্যাচ করে সেজেছে যে বোঝা যাবে না কে কোনে আর কে বান্ধবী। সবাই যখন হাসিঠাট্টা আর হই হট্টগোলে ব্যস্ত ঠিক তখনই পিঁয়াজরঙা শাড়ি পরে ঠিক যেন শ্রাবণের কোনো এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যারূপী রমণীর মত আগমন ঘটলো নিঝুমের।চোখে আইলাইনারের সাথে হালকা কাজল, ঠোঁটে একটুকরো শালিকের আত্মবিশ্বাস, সযত্নে করা ফ্রেঞ্চ বেণিটা বারংবার ছুঁচ্ছে পিঠের মধ্যিখান।
তাকে দেখে সাউন্ড বক্সের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সৌজন্যের চোখে খেল একরাশ দুষ্টু বিজলী,যেন কারো অলক্ষ্যে একখণ্ড নাট্যাভিনয় শুরু হতে যাচ্ছে। সাউন্ড অপারেটর ছেলেটার কানে মুখ নামিয়ে সে কিছু একটা বলল একটুকরো পরিকল্পনার গুপ্তসংকেত। ছেলেটি হাসি মুখে মাথা নাড়ল।
পর মুহূর্তেই, সৌজন্য ঝড়ের বেগে এগিয়ে এলো,সবার দৃষ্টির ফাঁক গলে, নিঝুম কিছু বোঝার আগেই সে নিঝুমের হাত ধরে টেনে নিল।
—”এই… আপনি…!”
অবাক কণ্ঠে নিঝুম কথাটা বলতে পেরেছে কি পারে নি তার আগেই সৌজন্য তাকে টেনে নিয়ে উঠল স্টেজে। সবাই কিছুটা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো তাদের দিকে সেদিকে তোয়াক্কা না করে সৌজন্য ছেলেটার দিকে চোখ ইশারা করতেই সে চালু করে দিল সেই গান,,
Saree ke fall sa, kabhi match kiya re
Kabhi chhod diya dil, kabhi catch kiya re
Touch Karke touch Karke
Touch Karke touch Karke
Kahaan chaldi bach Karke
Touch Karke touch Karke
Touch Karke Dil se Dil attach Kiya re….
সাউন্ড বক্স ফাটিয়ে গান আর তার মঞ্চের মাঝে থাকা এক জোড়া কপতো-কপতি যেন মঞ্চে রঙ ছড়িয়ে দিল। নিঝুম প্রথমে বিস্ময়ে থমকে থাকলেও সৌজন্যের আত্মবিশ্বাস আর দু’হাতের ইশারায় সে নিজেকে হারিয়ে ফেলল। শুরু হলো এক দুষ্টু-মিষ্টি কাপোল ডান্স। পদক্ষেপে তাল, চোখে চোখে বাক্যালাপ, এক অদ্ভুত ছন্দে মোহাবিষ্ট চারপাশ।
এক প্রকার বিষ্ময়ে হাঁ হয়ে আছে।নাচের এক ফাঁকে যখন তারা অনেক কাছাকাছি ছিল তখন হঠাৎই সৌজন্য নিঝুমের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল—
—”কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?”
অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে নিঝুমের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বিস্ময়কর কণ্ঠে সে অস্পষ্ট স্বরে কিছু একটা বলল। একটু সাউন্ড বক্সের গানের আওয়াজে তা শ্রবণযোগ্য হলো না। সৌজন্যের দুই চোখে শুধুমাত্র নিঝুমের কোমল ওষ্টদ্বয়ের কম্পিত আন্দোলনের হালকা স্পন্দন দৃষ্টিগত হল।
এদিকে সবাই হচকিত নয়নে চেয়ে আছে তাদের পারফরম্যান্সের দিকে। তবে সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড ফারিন কিন্তু তাদের নাচ দেখে সে একদমই অবাক হয়নি বরং তার মস্তিষ্কে চলছে অন্য এক দুষ্টু পরিকল্পনা। এই যেমন বাসায় গিয়ে এই নাচ নিয়ে নিঝুমকে সে সারাদিন ক্ষ্যাপাবে!
এটা হয়তো অন্যদের কাছে অন্যরকম যে বড় হয়ে কি করে ছোট একজনকে ক্ষ্যাপাতে পারে কিন্তু ফারিন এর কাছে সকল বিষয়ে ম্যাটার করে না। তার মাথায় যখন দুষ্টুমি ভর করেছে তখন এটাকে সে বাস্তবিত করেই ছাড়বে।
পারফরম্যান্স শেষে কিছুক্ষণ পর স্টেজ থেকে নেমে আসলো নিঝুম আর সৌজন্য, সবাই যখন অবাক নয়নে তোদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ঠিক তখনই ইনায়া ফারিনের সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। ফারিন কিছু বলার আগেই সে দ্রুত বলে,,
—”ফারু!”
ফারিন:”জ্বী আপু?”
ইনায়া:”চলো!”
কথাটা বলেই সে ফারিনের হাত ধরে টান দিতেই ফারিন অবাক কন্ঠে বলল,,
—”কোথায় আপু?”
ইনায়া:”শুনলাম তুমি নাকি অনেক ভালো ডান্স করতে পারো! চলো একটা কাপল ডান্স করব আমরা, মানে আমি আর জাহিদ, সেই সাথে আরেকটা কাপল লাগবে !”
ফারিন হচকিত হয়ে বলল,,
—”কিন্তু আপু আমি ডান্স ভালো পারি না।আর কাপল ডান্সতো একদমই না।”
ইনায়া:”আরে ব্যাপার না। আমরা যে স্টেপগুলো করবো তোমরা শুধু সেটার কপি করবা! আর পার্টনারকে ফলো করলেই তো ডান্স সুন্দর হবে!”
ফারিন:”সে না হয় বুঝলাম।কিন্তু আমার পার্টনারটা কে?”
ইনায়া নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”এমা, জলজ্যান্ত একটা বর থাকতে। তুমি কিনা বলছো পার্টনার কোথায়?”
ফারিন তার কথায় এক ঝলক নির্ঝরের দিকে তাকালো। নির্ঝর তখন মোবাইলে কিছু স্ক্রল করছিল। সে তাচ্ছিল্যের স্বরে ইনায়ার দিকে ফিরে বলল,,
—”উনি করবে ডান্স? সেদিন সূর্য উঠবে উত্তর দিগন্তে! আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি দেখছো না উনি মনে হয় নিঝুমদের পারফর্মেন্সও একবারও ভালো করে দেখেনি! সেখানে নিজে পারফরমেন্সের কথা! দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করো আপু!”
ইনায়া কিছুটা চিন্তিত স্বরে বলল,,
—”সেটাই তো দেখছি!”
হঠাৎই তার চোখ গেল জিসানের দিকে। যেন আঁধারের মাঝে আলোর আভাস দেখতে পেল সে। সে উত্তেজিত হয়ে ফারিন এর দিকে ফিরে বলল,,
—”ফারু! তোমার নিশ্চয়ই অন্য কারো সাথে কাপল ডান্স করতে আপত্তি নেই?”
ফারিন:”কার সাথে?”
ইনায়া:”আমার ছোট ভাই অর্থাৎ আমার দেবর জিসানের সাথে!”
ফারিন না বলতে গিয়েও উপর রাগ থেকে হ্যাঁ বললো। নির্ঝর যদি তার সাথে ডান্স না করে, তবে কেন সে নিজেও নিজের আনন্দটা মাটি করবে! হ্যাঁ বলার সাথে সাথে ইনায়া একগাল হেসে তাকে স্টেজের দিকে নিয়ে গেল। তারা স্টেজে ওঠার প্রায় দুই মিনিটের মাঝেই বেজে উঠলো একটা হিন্দি সং,,
Bole chudiyan bole kangana…
Hai main ho gai tere sajnaa..
Tere bin jiya naiyo lagda main to mar javaa….
Leja leja.. soniye leja leja…
dill leja leja….oooo
ইনায়ার সাথে তালে তালে ডান্স শুরু করলো ফারিন। হঠাৎই নির্ঝরের চোখ নিবন্ধ হল ফারিনের দিকে। ফারিনের দিক থেকে যেন সে চোখেই সরাতে পারল না। বুকের ভিতর যেন বয়ে গেল সমুদ্রের উথাল পাথাল ঢেউ। কেন যেনো চারিপাশ স্তব্ধ হয়ে গেল তার। কিন্তু হঠাৎই যখন ছেলেদের র্টান আসলো তখন জাহিদের সাথে জিসানকে স্টেজের দিকে যেতে দেখে মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল তার।
দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জিসানকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই জাহিদের সাথে স্টেজে উঠে গেল নির্ঝর। এদিকে জিসান বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তার দিকে।ইনায়া তো তাকে যেতে বলেছিলেন তাহলে এই লোক কেন গেল? এদিকে স্টেজে উঠেই শুরু হলো নির্ঝর আর জাহিদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স,,
Bole chudiyan bole kangana…
Hai main ho gai tere sajnaa..
Tere bin jiya naiyo lagda main to mar javaa….
Leja leja.. soniye leja leja…
dill leja leja….ho ho ooo…
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪৭
নির্ঝরকে এমন নাচতে দেখে শুধু ফারিন নয় অবাক হলো উপস্থিত সকলে। যে নির্ঝর কিনা কারো সাথে ঠিকমতো কথা পর্যন্ত বলে না সেই এমন হিন্দি গানে এত দারুন পারফরম্যান্স করছে যে চোখই সরানো যাচ্ছে না। এদিকে ফারিনের তো রীতিমতো শ্বাস আটকে যাওয়ার মত অবস্থা। হঠাৎ যখন নির্ঝর তার হাত ধরে টান দিয়ে তাকে নিজের বুকে ফেলল। তখন ফারিন এর মনে হলো সে সত্যিই জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে! দিবাস্বপ্ন যাকে বলে।
কিন্তু না সত্যি সত্যি সে পারফর্ম করছে।নির্ঝরের সাথে! এটা যে সত্যি হচ্ছে সে এখনো ভাবতেই পারছে না। পাগল পাগল লাগছে তার। প্রেম পরশের উথাল হাওয়া দোলা দিচ্ছে তার হৃদয়ে, আর সে তালে তালে পা মেলাচ্ছে নির্ঝরের সাথে। দুজনকে ছুঁয়ে যাচ্ছে এক উষ্ণ প্রেমের পবন।