মায়াকুমারী পর্ব ২৭
মেহেরিন আনজারা
বেশ কিছুক্ষণ পর সদাইগুলো নিয়ে এলো ধূসর। ব্যাগ হাতে নিলো নিশু।
“সব এনেছো?”
“হুম।”
“দ্যুতি,দুইটা মাল্টার রস নিয়ে দে তো!”
“জর্দা করবি?”
“হুম।”
“ভাইয়া তো আনারসও আনলো।”
“কাল না হয় আনারসের ফ্লেভার দিয়ে করবো।”
সেমাইগুলো ঘি দিয়ে ভেজে রান্না বসালো নিশু। মাল্টার রস নিয়ে দিয়ে খেতে বসলো দ্যুতি। দ্যুতি জানে নিশুর হাতের মাল্টার ফ্লেভারের ভার্মিছিলি সেমাইয়ের এই জর্দাটা ধূসরের ভীষণ প্রিয়! সেমাই রান্না শেষে হালকা নেড়েছেড়ে লোহার তাওয়ার উপর তাপে দিয়ে ভাত খেতে বসলো নিশু।
“কান্না করেছিস কেন?”
“কই না তো!”
“তোর মুখ ফোলা!”
মলিন হাসলো।
“আমি চেয়েছিলাম আমাদের মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি না আসুক পরে দেখি আমিই তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি! কান্না আসবে না তো হাসি আসবে বল?”
নীরব রইলো দ্যুতি।
“সে আমাকে কোনোদিন পাওয়ার আশাই করেনি! আর আমি তাকে হারানোর ভয়ে পাগলের মতো কান্না করেছিলাম,তার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। সবই বৃথা ছিল!”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তা শুনে তাচ্ছিল্যের স্বরে ধূসর বলল,”খোঁজ নেয়নি,ফোন করেনি,মনে রাখেনি একটু ফিরে তাকায়নি,সব ভুলে গিয়েছে। বাদ দে এইসব! তাই বলে কি নিজেকে বিষন্নতার সমুদ্দুরে ডুবিয়ে ফেলতে হবে? হাসতে ভুলে যেতে হবে? আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে মিনতি করতে হবে? বারবার বিতাড়িত হওয়ার পরেও অপেক্ষা করতে হবে? পায়ে পড়তে হবে? নিজের ভালো থাকাকে এতটা সস্তা বানিয়ে ফেলতে হবে যা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে? বিষয়টা নিয়ে একটু ভাব। তোর মূল্য যদি তুমি নিজেই না বুঝিস তবে একটা ভুল লোক তোকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না। তাই আবেগ বাদ দে। জীবনে যে যত বেশি আবেগকে ঠাঁই দিয়েছে সে তত বেশি মুসিবতে পড়েছে। এখন স্ট্রং হওয়ার চেষ্টা কর। সে তোর সামনে দিয়ে একশোটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করলেও তুই হাসি মুখে থাকবি। বুঝতে দিবি না তোর কষ্ট। নয়তো মজা পেয়ে তোকে আরো কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করবে।
সে আরো বেশি করে করবে এটা। কারণ সে ঘাড়ত্যাড়া। এখন সে যা চায় করতে দে। হাজার মারফতি করেও খারাপ মানুষকে ভালো করা যায় না। একজন নারী তার স্বামিকে নিয়ে যতটা দুশ্চিন্তা এবং আশংকায় থাকে হারানোর সেটা তার স্বামি কখনোই বুঝবে না। এর চেয়ে যা করছে করুক,নিজের দিকে ফোকাস কর। দিনশেষে নিজের কর্মফল নিজেরই ভোগ করতে হয়। সেও তার পাপের শাস্তি পাবে। এটাই নিয়ম। ধৈর্য ধরে থাক,তারও ভেঙে পড়ার দিন আসবে। তখন আর কুল-কিনারা পাবে না। আর যদি তাকে ছেড়ে দেওয়ার অপশন থাকে তো পারলে তাই কর। মানসিক শান্তি বড় শান্তি! নিজে বাঁচলে বাপের নাম। তাই বলছি কীভাবে একা চলতে হয় নিজেকে রেডি কর,নিজেকে শক্ত কর। বিপদ আসলে তোর পাশে কেউ থাকবে না,তখন তোকে একাই চলতে হবে,একাই সবকিছু করতে হবে; সো গেট রেডি রাইট নাউ। তাই বলবো,অনলি নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি ফোকাস কর। শুধু ক্যারিয়ারের প্রতি ফোকাস আর কিচ্ছু না। অনেকের পরিবর্তন দেখতে পাবি মিলিয়ে নিস।”
“আমিও চাই ক্যারিয়ার ব্রাইট করতে!”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। খেয়েদেয়ে প্লেটগুলো ধুয়ে ফেললো দ্যুতি। অবশ্য ওরা দু’জন খালার দিকে তাকিয়ে থাকে না। নিজেরাই কাজ করতে পছন্দ করে। খালা তো কত কিছু করে। মানুষটারও তো একটু রেস্টের দরকার। দিলরুবা খাতুন অবশ্য কিছু বলেন না। করুক,শিখুক উনার কথা। মেয়েদের সব জানতে হয়,শিখতে হয় যতই বড়লোকের কন্যা হোক না কেন! ছোট্ট ছোট্ট বাটিতে বেড়ে ধূসর-ধীরাজ দুজনকে ডাকলো। টিভি ছেড়ে সোফায় খেতে বসলো ওরা।
“ভাইয়া কেমন হয়েছে?”
“ভালো!”
মৃদু হাসলো নিশু। দিলরুবা খাতুন এগিয়ে এসে বললেন,”ধ্রুবর জন্য পাঠিয়েছিস?”
“না এখনি পাঠাবো।”
“আগে ওর জন্য পাঠাতি!”
“পাঠাবো।”
সব বেড়ে নিলো। ট্রে সাজালো দু’জন।
“খালা একটু দিয়ে আসুন।”
“রিনা কেন যাবে তুই দিয়ে আয়!”
অপ্রস্তুত হলো নিশু।
“লজ্জার কী আছে যা।”
“ফুপি আসলেই..”
“তোর লজ্জা এখনও ভাঙ্গেনি?”
“আসলেই তুমি যা ভাবছো..”
“বেশি কথা বলে মেয়ে! নিজের স্বামীই তো! যা দিয়ে আয়।”
“ফুপি..”
“নিশু একদম ন্যাকামো করিস না। কাছে কাছে না থাকলে কীভাবে কী হবে বোকা মেয়ে! বেশি বেশি কাছে থাকবি! এখন যা।”
মলিন মুখে ট্রে নিয়ে এগিয়ে গেল নিশু। বেহায়ার মতো আবারও যেতে হবে লোকটার সামনে! শ্বাস আঁটকে রইলো। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেল। ডোরের সামনে দাঁড়ালো। নক করতে নিতেই দেখলো ভিড়িয়ে রাখা। ভেতরে ঢুকতে সংকোচ হচ্ছে! তবুও মলিন মুখে ঢুকলো। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করতে লাগলো। চারদিকে একপলক তাকালো কিন্তু কোথাও ধ্রুব নেই। স্বস্তি পেলো নিশু। বিছানার উপর ল্যাপটপ অন করা। ওয়াশরুমের ডোরও খোলা। তাহলে কই যেতে পারে? বিছানার উপর ট্রে রাখতেই হঠাৎ ভিডিও কল এলো। চমকায় নিশু। ল্যাপটপের স্কিনে দেখলো ভীষণ সুন্দরী একটি মেয়ের পিকচার। কাঁপতে লাগলো বুক। এত সুন্দরী মেয়ে কল দিয়েছে! কিন্তু কেন সন্দিহান হলো নিশু। দোনোমোনো করে কম্পিত হাতে পিক করতেই ভেসে উঠলো অ্যানির মুখ। চমকায় নিশু। লক্ষ্য করলো অ্যানি বি** পরে কলে এসেছে। ঘৃণায় রি রি করে উঠলো শরীর। নিশুকে দেখতেই চমকায় অ্যানি।
“হু আর ইউ? হু আর ইউ?”
বারবার জিজ্ঞেস করছিল। রাগে-দুঃখে,কষ্টে গড়গড় করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। নিশ্চয়ই এই মেয়েটা ধ্রুবর গার্লফ্রেন্ড। আর তা না হলে কল দিবে কেন? তাও আবার এমন খোলামেলা ড্রেসআপে! এই মুহূর্তে নিশুর ঠিক কেমন লাগছে বুঝতে পারছে না! মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। সুন্দর সুন্দর গার্লফ্রেন্ড পেয়ে মানুষটা তার একটুও খোঁজ নেয়নি আর তার কারণ এটাই।
“হু আর ইউ?হেই ইউ! হু আর ইউ?”
উৎকণ্ঠা দেখালো অ্যানিকে। সিগারেটটা পায়ের তলায় পিষে রুমে ঢুকতেই চোখ পড়লো নিশুর দিকে। দেখলো ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। স্কিনে চোখ পড়তেই কেঁপে উঠলো ধ্রুব। ঘৃণিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে যেতে নিতেই আচমকা হাত টেনে ধরলো।
“শোন!”
“ছাড়ো!”
“শুনতে বলেছি!”
“ছাড়ো আমাকে! ছোঁবে না! তুমি একটা জঘন্য!”
“আমার কথা শুনবি তো!”
বুকের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল। চোয়াল শক্ত করে কয়েক কদম এগিয়ে এলো। অ্যানি এমন বাজে অবস্থায় আসবে কল্পনাও করেনি।
“হু ইজ দ্যাট গার্ল?”
“হাউ ডেয়ার ইউ? ইউ সোয়াইন!”
“ধ্রুব!”
চেঁচিয়ে উঠলো অ্যানি।
“সাট আপ! তোমাকে আমি জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো মাইন্ড ইট!”
“ধ্রুব!”
“এই মুহূর্তে তোমাকে পেলে আমি কুকুরের মতো পিটাতাম! ননসেন্স!”
“আর ইউ ম্যাড?”
“রাসকেল!”
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো। দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো নিশু। সু’ইসাইড করবে সে। আর বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। যেই মানুষটার জন্য সে নিজেকে পবিত্র রেখেছিল,সম্ভ্রম হেফাজতে রেখেছিল,কতশত মানুষ তাকে দেখে পাগল হয়েছিল,মানুষটার থেকেও বেটার অপশন ছিল তবুও সে ওই মানুষটার মধ্যেই নিজের জীবনকে আহুতি দিয়ে রেখেছিল। আর নিতে পারলো না নিশু। এভয়েড,ইগনোর সব নিতে পারলেও অন্তত এটা নিতে পারলো না। নিশ্চয়ই মেয়েটার সঙ্গে ইনভলভ হয়েছে আর যার জন্য কাল রাতে তার সাথে এমনটা করেছে! নিশুকে ফলো করলো ধ্রুব। সত্যি বলতে রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে! ব্রেইন কাঁপছে! কপালের শিরাগুলো নীল হয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে।
মস্তিষ্ক টগবগ করছে! নিশু একবারও তাকে বুঝতে চাচ্ছে না উল্টো ভুল বুঝতেই আছে। সবসময়ই চোখের দেখা কি সত্যি হয়? রাতে তার সঙ্গে এগ্রেসিভ হওয়ায় তার মন ভীষণ খারাপ ছিল। সকালে রিনা খালা আরো একবার খারাপ করে দিলো। তাই বন্ধুদের সঙ্গে পার্কে গিয়ে একটি বেঞ্চের উপর বসে রয়েছিল। এই নীলি যে তাকে ফলো করে পিছন থেকে সেটা জানতো না। তার নাম্বার কার থেকে কীভাবে নিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। যা ছিল সত্যিই তার কাছে অপ্রত্যাশিত! একগাদা প্রশ্ন করলেও ধ্রুব নীরব রয়েছিল সিনক্রিয়েট করার মানসিকতা সত্যি তার ছিল না। কারণ রাত এবং সকালের ঘটনার জন্য সে আপসেট ছিল। আর নীলিকে কত ইনসাল্ট করবে সে ভেবে পায় না। জীবনে কোনোদিন সে নীলির সঙ্গে ভালো বিহেভ কিংবা কখনো কোমল গলায় কথা বলে প্রশ্রয় দেয়নি তবুও মেয়েটা তার পিছু ছাড়ছে না। শেষমেশ বাড়িতেও উঠে এলো।
মেয়েটার জন্য তার বাবা তাকে ভুল বুঝে একগাদা শুনিয়েছিল সেদিন। সে যাইহোক,ঠিক তখুনি ওই দৃশ্য নিশু দেখেছিল। সে কি তখন এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতো না? ছাঁদে উঠতেই আকস্মিক মুখোমুখি হলো তাহমিদের। অশ্রুসিক্ত নিশুকে দেখতেই চমকায়। ফুলেফুলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! দেখতে কি যে কিউট লাগছে! ঠিক যেন সুগন্ধি লেবুফুল। অভিমানী হয়ে ফুলেফুলে কাঁদলে মেয়েদের এত্ত সুন্দর লাগে নিশুকে না দেখলে বোধহয় সে কখনোই জানতো না। মনের অজান্তেই নিশুর একটি নাম দিলো,সুগন্ধি লেবুফুল! সুগন্ধি লেবুফুলের মতোই সুন্দর মেয়েটা আর তার সৌরভ কিন্তু তেঁতো! মেয়েটা তাকে দেখলেই পালাতেই চায়! এই একটা জিনিস তার পছন্দ না তেঁতো তেঁতো লাগে। অপ্রস্তুত হলো নিশু। এখন কী করবে?লোকটা দাঁড়িয়ে রয়েছে,ছাঁদে গেলে নিশ্চয়ই তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করবে আর সু’ইসাইড করতে বাঁধা দিবে। ভাবলো ঝুল ব্যালকনি থেকে লাফ দিয়ে মরে যাবে সে আর এক মিনিটও বাঁচতে চায় না। তাহমিদ একবার নিশু তো একবার শাড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ঠিক কে সুন্দর বুঝতে পারছে না! লেবুফুল সুন্দর নাকি বেগুনি রঙের শাড়ি সুন্দর সেটাই ভাবছে! বেগুনি রঙের পুরো শাড়িজুড়ে এমব্রয়ডারি করা ময়ূরের পালক! আর অশ্রুসিক্ত ফোলা মুখে অনন্য লাগছে! পা ঘুরিয়ে পিছু ফিরতেই,”এক্সকিউজ মি শুনুন!”
শুনলো না দ্রুত নামতে লাগলো।
“ওই হ্যালো শুনুন!”
ছাঁদ থেকে বেরিয়ে পা বাড়ালো তাহমিদ।
“এক্সকিউজ মি প্লিজ!”
প্রায় চারতলার সিঁড়িতে আসতেই নিশুর মুখোমুখি হলো ধ্রুব। চমকে উঠে ইগনোর করে নেমে যেতেই আচমকা হাত ধরে ফেললো ধ্রুব।
“ছাড়ো!”
“শুনবি তো!”
“ছাড়ো আমাকে!”
“তুই আমাকে ভুল বুঝচ্ছিস! যেমনটা ভাবছিস আমি তেমন নই!”
“তুমি একটা খারাপ! জঘন্য! ঘৃণা করি তোমাকে।”
মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। ঘৃণিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে চোখ দিয়ে। গোসল করায় নিশুকে স্নিগ্ধ লাগছিল। এই মেয়ের এত জিদ ভাবতেই পারেনি সে। অথচ গুমোট হয়ে থাকে। ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো নিজেকে। কিন্তু মেয়েটা তো শোনার মানুষ না। আকস্মিক দেয়ালের সঙ্গে হাত দুটো চেপে ধরে চুমু খেতেই উপর থেকে তাহমিদ কয়েক সিঁড়ি নামতেই দৃশ্যটি দেখতেই হতভম্ব হয়ে গেল। বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে ছাঁদের দিকে পা বাড়িয়েছিল ধূসর আচমকা এমন কিছু দেখবে প্রস্তুত ছিল না। ঠিক তখুনি ছাঁদ থেকে জামাকাপড় আনার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলেন রিনা খালা। ওমন দৃশ্য দেখতেই আচমকা চেঁচিয়ে উঠলেন।
“ছিঃ! ছিঃ! নিজ বউ রাইখা দিন-দুপুরে অন্য ছেরির লগে ফষ্টিনষ্টি!”
চমকে উঠে পিছু ফিরতেই অপ্রস্তুত হলো দু’জন। একসঙ্গে তিন জোড়া চোখ তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দ্রুত নিচে নেমে গেল ধূসর। ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো তাহমিদ। দাঁতে দাঁত চাপলো ধ্রুব। ভ্যাবাচ্যাকা খায় রিনা খালা। আমতা আমতা করতে লাগলেন।
“ইয়ে মানে রুমের মধ্যে কী হইছে সিঁড়িতে ক্যান!”
“ডিজগাস্টিং!”
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিচে নেমে রুমে ঢুকে ব্ল্যাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইলো নিশু। ছিঃ! ছিঃ! এত্ত লজ্জা কই রাখবে সে! শ্বাস আঁটকে রইলো। রুমে ঢুকলো ধ্রুব। প্রতিবারই এমনটা হচ্ছে! বিরক্তিকর! সহ্য হচ্ছে না আর।
“নিশু কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“বল।”
“বলা যাবে না।”
“কিছু-মিছু হয়েছিল?”
নীরব রইলো নিশু। হঠাৎ কান্নার শব্দ পায়।
“কান্না করছিস কেন?”
“তোর ভাই জঘন্য!”
“কী করেছে?”
“জিজ্ঞেস কর গিয়ে।”
ধ্রুবর রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। নক করে ভিতরে ঢুকলো। সিগারেট ফুঁকছে ধ্রুব। সোজা ব্যালকনিতে গেল।
“নিশুর সঙ্গে আবার কী করেছো?”
“কিছু না।”
“ও কান্না করছে।”
“ওকে বলেছি?”
“সত্যি করে বলো তো কী চাও তুমি?এমনটা কেন করছো?”
মৌন রইলো ধ্রুব।
“সংসার করলে করো না হলে নিশুর জন্য পাত্রের অভাব নেই। প্রতিদিন দেখতে আসে ওকে। অনেকগুলো ছেলে ওর জন্য পাগল। সবগুলো ছেলে তোমার থেকেও বেটার,বড়লোক এবং সুদর্শন! সে যাইহোক,এখন তুমি যদি ডিভোর্স দিয়ে থাকো তাহলে সেটা ক্লিয়ার করো আর না করলেও করো। ধোঁয়াশার মধ্যে রাখার তো কোনো মানেই হয় না! নিশুর ফিউচার আছে। বয়স থাকতেই ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। তোমার জন্য অপেক্ষা করে বুড়ি আর পাগল হয়ে লাভ নেই। বহু শিক্ষা পেয়েছে সে আর না। জানোই তো লেবু বেশি চিপলে তেঁতো হয়।”
“ও আমাকে ভুল বুঝছে!”
“পার্কে ওই মেয়েটার সঙ্গে কী করছিলে? আবার বাড়িতেও কেন? তুমি জানো না আব্বু-আম্মু এইসব পছন্দ করে না! তুমি কি ভুলে গেলে আমরা কেমন ফ্যামিলিতে বিলং করি!”
আচমকা রুম থেকে বেরিয়ে ওদের রুমে ঢুকে ডোর অফ করে দিলো। বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট তুলতেই ধ্রুবকে দেখতেই চমকে উঠে কেঁপে উঠলো নিশু।
“এখানে কী?”
“আমার কিছু বলার আছে। মাথা ঠাণ্ডা করে শোন।”
“নিজেকে ইনোসেন্ট সাজাতে এসেছো?”
“তুই নিজে ইনোসেন্ট?”
“কী বললে?”
“ওই একটা দৃশ্য দেখেই তুই আমাকে জাজ করছিস। তুই নিজেও তো সারাক্ষণ ধূসরের সঙ্গে চিপকে থাকোস আর সারাক্ষণ ভাইয়া ভাইয়া করে মুখের ফ্যানা তুলে ফেলিস তখন আমি কিছু বলেছি?”
“তুমি সত্যি একটা সাইকো! তুমি একটা জঘন্য মেন্টালিটির লোক।”
“সত্যি বললাম তাই গায়ে লেগেছে তাই না?”
“ধূসর ভাইয়াকে আমি ভাইয়ের চোখে দেখি। ভাই-বোনের সুন্দর সম্পর্কটিকে তুমি বাজে বানিয়ে ছাড়লে?”
চেঁচিয়ে উঠলো নিশু।
“ধূসর তোকে বোন ভাবে?”
“তুমি ছেড়ে রাখলে,নিজের বউয়ের বোজা মানুষের কাঁধের উপর ছাপিয়ে দিয়ে গেলে মানুষ কি সুযোগ নিবে না?”
“হাজারটা সুযোগ,বেটার অপশন সবই আমার ছিল। কিন্তু আমি তো কাউকে আমার কাছে আসতে দিইনি। বরাবরই আমি স্ট্রং ছিলাম তুই পারিসনি কেন?”
“আমারও কম বেটার অপশন ছিল নাকি! আমি কাকে প্রায়োরিটি দিয়েছি? আর বললে পারার কথা! তুমি আমাকে ছেড়ে ছেড়ে রেখেছো প্রায়োরিটি দাওনি। যার স্বামী ঠিক নেই তার দুনিয়ার অর্ধেক জাহান্নাম। মেয়েরা একজন ভালো স্বামী না পেলে কবরের দেয়াল পর্যন্ত কাঁদে। পেয়েছি এই অব্ধি তোমার কোনো লাভ,কেয়ার,সাপোর্ট?”
“যা হয়েছে এনাফ! শোন কারো সঙ্গে আমার কিছু নেই।”
“পার্কে কী করছিলে আর ওই মেয়ের সঙ্গে? ওই মেয়েটা উলঙ্গ হয়ে ভিডিও চ্যাটিংয়ে আসার সাহস কীভাবে পায়?”
“ওদের স্বভাব এমন।”
“নিশ্চয়ই ওদের সঙ্গে তোমার ঘনিষ্ঠতা ছিল তাই এমন সাহস পেয়েছে তারা। এখন বেরিয়ে যাও তোমার মুখ দেখতে চাই না। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবো।”
বিছানার সঙ্গে শক্ত করে হাত দুটো চেপে ধরতেই ব্যথা পেতেই ককিয়ে উঠলো নিশু।
“কী করছো! ছাড়ো! খবরদার আমাকে বাজেভাবে ছোঁবে না!”
“বাজেভাবে আর কী ছোঁবো অর্ধেক বাসর তো সেরে ফেলেছি। এখন আয় বাকিটাও সেরে ফেলি!”
“ছাড়ো বলছি!”
“তুই খুব বেড়েছিস! এই ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। তোকে ছেড়ে রাখলেই বিপদ! কখন আবার কার না কার ঘাড়ে গিয়ে উঠিস!”
“ছাড়বে!”
মায়াকুমারী পর্ব ২৬
বিরক্ত লাগছে নিশুর। ধ্রুবর কর্মকাণ্ডে সত্যিই সে বিরক্ত। গলায় মুখ ডুবাতেই চোখ বুজে ফেললো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,”বাসরটা সেরে ফেলি কেমন অপেক্ষা আর সয় না!”
কান গরম হয়ে গেল নিশুর।
“ইতিপূর্বে তোমার সাথে আমার কোনো কনসেন্ট কিংবা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়নি।”
“লাগবে না।”
“থামো!”
“পরেরটা পরে দেখা যাবে।”
ফের ঘাড়ে,গলায় মুখ ডুবাতেই দু-হাতে খামছে ধরলো ধ্রুবর মাথার পিছনের চুলগুলো।