মায়াকুমারী পর্ব ৪০

মায়াকুমারী পর্ব ৪০
মেহেরিন আনজারা

ব্যাংকক হসপিটালে পৌঁছায় বুশরা। ডিটেইলসের মাধ্যমে খুঁজে বের করলো ওদের। নিশু-দ্যুতিকে দেখতেই চিৎকার করে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়লো একপ্রকার। চমকিত নয়নে তাকায় দু’জন।
“নিশু কী হয়েছে তোর?”
“জানি না।”
“ওর কী হয়েছে দ্যুতি?”
“রোড এক্সিডেন্ট করেছে।”
“কিন্তু পুলিশ তো বলল অন্য কিছু।”
“পুলিশের কথা তুই বিশ্বাস করিস?”
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয় বুশরা।
“কে সঠিক তা তো জানি না। উনি কই?”
“আছে।”
“কোথায়?”
নীরব রইলো দ্যুতি।
“পাশের কেবিনে।”
চমকে তাকায় নিশুর দিকে।
“কী হয়েছে?”
উৎকণ্ঠা হলো বুশরা।
“জানি না।”

কেবিন থেকে বেরিয়ে পাশের কেবিনগুলোয় খুঁজতেই পেয়ে গেল ধূসরকে। ওমন অবস্থায় দেখতেই চমকে উঠে ছুটে গেল।
“কী হয়েছে আপনার?”
চমকে তাকায় ধূসর। আশা করেনি বুশরাকে।
“বলুন কী হয়েছে আপনার?”
“কিছু না। যাও এখান থেকে।”
দুই গাধী যাওয়ার পর আরেক গাধী এসেছে। জাস্ট বিরক্তিকর! অসন্তুষ্ট হলো ধূসর।
“কী হয়েছে বলুন?”
“যেতে বলেছি তোমাকে।”
কেঁদে উঠে সংকোচ নিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে আকস্মিক জড়িয়ে ধরলো ধূসরকে। থমকায় সে।
“পাগল হয়েছো সরো।”
হু হু করে কাঁদে বুশরা। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে নিচুস্বরে বলল,”আমার ভাইয়ের এই অবস্থা,নিশুর অবস্থা,আপনার অবস্থা কীসের মধ্যে আছি আমি বুঝতে পারছেন?”
নীরব হয়ে গেল ধূসর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আজীবন শুধু অবহেলাই পেলাম।”
বুশরার অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ধূসরের কাঁধে,পিঠে। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে আস্তে করে বলল,”আই লাভ ইউ!”
চোখ বুজে রইলো ধূসর। ভেসে উঠলো নিশুর মুখটা। দপ করে চোখ খুলে ফেললো।
“সরো।”
হাত দিয়ে সরিয়ে দিলো।
“কী হয়েছিল আপনার?”
“কিছু না।”
“আপনার বোন আমার ভাইকে আইসিউতে পাঠিয়েছে আমি কিন্তু এখনও কিছু করিনি।”
“ব্ল্যাকমেইল করছো?”
“না বলতে চাচ্ছি ভালোবাসার জন্য মেয়েরা আইসিইউতেও পাঠাতে পারে।”
আগুন চোখে তাকালো ধূসর।
“বেরিয়ে যাও।”
“আমি কতটা দূর থেকে ছুটে এসেছি আর আপনি আমাকে কেয়ার করছেন না?”
নীরব রইলো ধূসর।

“আপনার বোন গিয়েছে আমার ভাইকে দেখতে?”
প্রতিত্তোর করলো না। ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
“প্লিজ রিয়েক্ট করবেন না। আচ্ছা আমি কি খুব খারাপ?”
নীরব রইলো ধূসর।
“আমি কি দেখতে সুন্দর না?”
প্রতিত্তোর করলো না।
“কী করলে আপনি আমাকে ভালোবাসবেন?”
মৌন রইলো ধূসর। অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে ধূসরের হাতে। ধূসর তাকায়। সেদিন তো সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল তাহলে বুশরার সঙ্গে স্বাভাবিক হতে পারছে না কেন?
“যদি কখনো জানতে পারো আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি?”
ভেজা ঢোক গিললো বুশরা।
“মিথ্যে বলছেন তাই না?”

বুশরার অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকায় ধূসর। সেখানে শুধু একটি কথা ঘুরছে এটা মিথ্যা হোক!
“না।”
টুপটুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
“নিজের প্রিয় মানুষ অন্য কাউকে ভালোবেসেছে এটা কতটা জঘন্য আপনি জানেন না!”
তাচ্ছিল্য হাসলো ধূসর। মুখ ফিরিয়ে নিলো।
“দরকার পড়লে আজীবন কুমার থাকবেন তবুও কাউকে বিয়ে করবেন না আমি সহ্য করতে পারব না মরে যাব। আমিও আজীবন আপনার জন্য কুমারী থাকব।”
“আদেশ করছো?”
“ভালোবাসার অধিকার থেকে।”

ধূসরের হাত রাখলো নিজের গালে। সরিয়ে নিলো না। নিশুকে ভুলা দরকার। নিশু তার জন্য নিষিদ্ধ তবুও বেহায়া মনটা কেন যে মেয়েটাকে ভালোবাসলো! সব রাগ ভাইয়ের উপর পড়লো। সাড়ে এগারো বছর অবহেলা করে এখন হুট করে কোথ থেকে এসে দাবী করছে তার বউ! তাহলে কেন এত নাটক করলো? এই নাটকটা না করলে নিশুর প্রতি তার অনুভূতি জন্মাতো না। সবসময়ই মনে মনে ভাবতো,আমি বড় হলে তোর দুঃখ গুছিয়ে দিবো ভালোবেসে। দুঃখ ঘুচাবার আগেই তার ভাই এসে হুট করে দাবী করলো তার বউ! ডিভোর্সের নাটকটা কেন করলো?এইসবের জন্য তার ভাই কি দায়ী নয়?
“কী ভাবছেন?”
সম্বিৎ ফিরলো।
“আমার ভাই সম্ভবত আমাদেরকে খুঁজছে! তুমি কল করে কনভিন্স করো বিষয়টি। বলবে আমরা ব্যাংকক তোদের সঙ্গে আছি আসার প্রয়োজন নেই তার।”
“আচ্ছা।”

ধ্রুবর আইডি নিয়ে কল করতেই ব্রেক কষলো। বুশরার হাসি মাখা মিষ্টি মুখটা স্ক্রীনে ভেসে উঠতেই চমকায়। বুশরাকে ঠিক চিনে না সে। বার কয়েক ফোন করলো। পিক করলো না। টেক্সট পাঠালো,”ভাইয়া আমি অনিকের বোন। কল পিক করুন কথা আছে।”
চমকায় ধ্রুব। বুশরা ফোন করতেই পিক করলো। সে সালাম দিয়ে বলল,”ভাইয়া নিশু-দ্যুতি ব্যাংকক আছে ওদের খুঁজতে হবে না।”
“কেমন আছে ওরা?”
“ভালো আছে। হোটেলে উঠেছি আমরা সবাই।”
“ওদের দেখাও।”
“বিশ্বাস করছেন না?”
“দেখাও।”

ভিডিও কল দিলো। নিশুর মুখের সামনে ধরতেই ভেসে উঠলো তার চেহারা। জীবনে প্রথম ওরা দু’জন দু’জনকে ফোনে দেখলো আজ। নিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো কেমন রুগ্ন দেখাচ্ছে।
“তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”
“আমি টায়ার্ড। আসলেই আমার ফ্লাইট ফোবিয়া আছে।”
“তোকে যেতে বলেছে কে?”
“আসলেই তুমি তো নিয়ে আসোনি।”
“ফাজলামো করছিস সবগুলো?”
“না।”
“ফ্লাইট ফোবিয়া তিনদিন থাকে?”
“আমার অনেকদিন থাকে।”
“দ্যুতি কই?”
“ওই তো আছে।”
“কোন হোটেলে উঠেছিস নাম বল আমি তিন ঘন্টার মধ্যে আসছি।”
ভড়কায় বুশরা।
“আসা লাগবো না ভাইয়া। আসলেই আমরা তিনজন একসঙ্গে থাকবো প্লিজ আসবেন না।”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ধ্রুব। মেয়েটা মিথ্যা বলতে জানে না। জড়তা কণ্ঠে!
“আসছি রাতের ফ্লাইটে।”
“কী শুরু করলে তুমি বললাম তো আমরা ঠিক আছি। আসা লাগবে না।”
“মিথ্যা বলার কোর্স করে নিস।”

একপলক তাকিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো। অতিরিক্ত চিৎকার চেঁচামেচি করার কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন আসাদ সাহেব। বুক ধরে আর্তনাদ করে উঠলেন। আতঙ্কিত হলেন দিলরুবা খাতুন।
“কী হয়েছে আপনার?”
চোখ বুজে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রাখলেন। ভীত হলেন তিনি।
“ধ্রুব,ধীরাজ কই তোরা তোর বাবা কেমন করছে!”
রুম থেকে বেরুয় ধীরাজ।
“কী হয়েছে আম্মা?”
“তোর আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হসপিটালে নিয়ে চল।”
আতঙ্কিত হয় ধীরাজ। কীভাবে কী করবে বুঝতে পারলো না। সবসময়ই তো তার মেজ ভাই সামলায় এইসব।
“বড় ভাইয়া কই?”
“রেগেমেগে বাইরে চলে গিয়েছে।”
কল করলো বার কয়েক কিন্তু পিক করলো না। ফের কল দিতেই পিক করলো।

“কী হয়েছে?”
“ভাইয়া কোথায় তুমি?”
“কেন?”
“আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।”
“কী হয়েছে?”
“আরে আসো।”
হাই স্পিডে ফিরলো ধ্রুব। বাসায় ঢুকতেই দেখলো বুক ধরে মাথা নুয়ে বসে আছেন তিনি।
“কী হয়েছে আপনার?”

কিছু বললেন না। দু-ভাই ধরে গাড়িতে উঠালো। বিলাপ করে কাঁদতে লাগলেন দিলরুবা খাতুন। দ্রুত হসপিটালে এডমিট করলেন উনাকে। পূর্ব থেকেই তিনি হার্টের রোগী। অতিরিক্ত টেনশন এবং চেঁচামেচি করার ফলে ব্যথা উঠেছে। অনবরত কেঁদে চলেছেন দিলরুবা খাতুন। কেন জানি খুব খারাপ লাগলো ধ্রুবর। পরীক্ষা-নীরিক্ষা হাবিজাবি এগুলো করতে করতে অনেক রাত গড়ালো। ব্যাংকক আর যাওয়া হলো না। তবে বুশরাকে ফোন করে নিশুর সঙ্গে কথা বলে নিলো। জানালো ভালো আছে তারা। নিশ্চিত হলেও স্বস্তি পেলো না ধ্রুব। প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে। ভুলবশত কিছু একটা হয়ে গেলে কী করবে সে? এতদিন নিশুর প্রতি অনিহা থাকলেও এবার কেন জানি ভীষণ ভয় পাচ্ছে ধ্রুব। বারবার ধূসরের বলা সেই কথাগুলো মনে পড়ছে সে ডিভোর্স দিয়েছে কিনা! এখন বাবা-মাকে এমন অবস্থায় রেখে কীভাবে যাবে সে? বাবা-মায়ের থেকেও নিশু বেশি কিছু না হলেও কম নয়। যত যাইহোক অর্ধাঙ্গিনী তো! এভাবে ফেলে গেলে মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে তার বাবা-মা তাই আর গেল না। ধীরাজ থেকে তার বাবার খবর শুনতে পায় ধূসর। ভীষণ টেনশনে পড়ে গেল। চাইলেও সে আসতে পারবে না। একদিকে অসুস্থ,আরেকদিকে নিশু সুস্থ না হওয়া অব্ধি কীভাবে আসবে। ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। হায় আল্লাহ! কী যে হচ্ছে তাদের সঙ্গে! একের পর এক বিপদ শুধু আসতেই চলেছে থামার কোনো নাম নেই!

বুশরা যে এলো আর ফিরলো না। সারাক্ষণ ধূসরের সঙ্গে রয়েছে। যদিও নার্স রয়েছে সে নিষেধ করে দিয়ে নিজেই কাছাকাছি থাকলো। এতে চরম বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারলো না ধূসর। তার মাথার সব পোকা এই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই খেয়ে ফেলেছে মেয়েটা। যত কথা বলেছে সে নিজেই ইমোশনাল হয়ে পড়েছে কিন্তু তাতে কিছু এলো গেল না ধূসরের। কী করলে মন পাবে সেটাও বুঝতে পারছে না বুশরা। মানুষটা যেন এক লৌহমানব যার কোনো অনুভূতি নেই। বুশরার সঙ্গে এসেছিল শাফায়াত। আড়ালে-আবডালে পর্যবেক্ষণ করেছিল সব কিন্তু ধূসরের সঙ্গে বুশরার এত মিশামিশি পছন্দ হলো না। কেন জানি কোনো ছেলের সঙ্গে বুশরাকে কথা বলতে দেখলেই তার ভীষণ রাগ হয়। তবে এও জানে সে বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর দুঃসাহস না করলেও স্বপ্ন দেখছে। ফোন করে সব বলে দিলো তার স্যারকে। রেগেমেগে আগুন হয়ে ফোন করলেন মেয়েকে। কল করতেই পিক করলো,”হ্যালো!”

“কোথায় তুমি?”
গর্জে উঠলেন অপরপ্রান্তে।
“হসপিটালে।”
“ওই ছেলের সঙ্গে এত মিশামিশি কীসের?”
“কী বললে?”
“খবর্দার! ফিরে আসো বলছি আমি আসলে ভালো হবে না কারো।”
হুমকি দিলেন মেয়েকে। ফণা তোলা সাপের মতো ফুঁসে উঠলো বুশরা। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কেবিন থেকে বেরিয়ে আচমকা কলার চেপে ধরলো শাফায়াতের। হতভম্ব হলো সে।
“হাউ ডেয়ার ইউ? হাউ ডেয়ার ইউ? ইউ সোয়াইন।”
ঝনঝন করে উঠলো শাফায়াতের মস্তিষ্ক। শেষোক্ত কথায় রেগে গেলেও প্রতিক্রিয়া করলো না শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।
“কী বলেছো আমার পাপাকে?”
নীরব রইলো সে।
“এমন হাল করবো জীবনে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার চাকরিও পাবে না। গেট আউট অফ মাই সাইট। আ’ম টেলিং ইউ টু গেট আউট!”

বের করে দিলো হসপিটাল থেকে। ফণা তোলা সাপের মতো ফোঁসফোঁস করতে লাগলো।
“কত বড় সাহস আমার বাবার কাছে কুটনামি করে! পুরুষ মানুষ এত কুটনী হয় কীভাবে?”
রাগে গজগজ করতে লাগলো বুশরা। তাকিয়ে রইলো শাফায়াত।
“তোমাকে যেন আর না দেখি। হাড়গোড় ভেঙ্গে তোমাকেও আইসিইউতে পাঠাবো। বিরক্তিকর লোক!”
ক্রোধান্বিত হলেও নীরব রইলো। দুপদাপ পা ফেলে কেবিনে ঢুকলো বুশরা।
“এখানে তোমার থাকার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। আমি ডিস্টার্বফিল করছি। তোমার কারণে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি যেতে পারো।”
প্রতিত্তোর করলো না।
“ফিরে যাও।”
“ইচ্ছে করছে না।”
“যেতে বলেছি শুনতে পাও না?”
“খারাপ কিছু তো করছি না আপনার থেকে দূরত্ব বজায় বসে রয়েছি।”
“যাইহোক দৃষ্টিকটু ফিরে যাও।”
“যাব না।”

বুশরার মেজাজ চটে আছে। নীরব রইলো ধূসর। চোখ বুজে আধশোয়া হয়ে রইলো। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো বুশরাও। সাড়াশব্দ না পেতেই লক্ষ্য করলো ঘুমিয়ে পড়েছে বুশরা। মাথাটা কেমন কাত হয়ে আছে। বুকের দিকে মাথাটা আসতেই বামহাত দিয়ে ধরে ফেললো। নিভু নিভু চোখে তাকায় বুশরা। ঠিক করে দিতেই আবারও মাথা কাত হয়ে গেল। মহাবিপাকে পড়লো ধূসর। মেয়েটা খুবই ঘাড়ত্যাড়া ঠিক তার বড় ভাইয়ের মতো। যা বলেছে মানে বলেছেই শেষ! দুনিয়া উলটপালট হয়ে গেলেও শুনবে না। এখন কী করবে? ফোন করে নার্সকে ডেকে এনে স্যালাইনের নল খুলিয়ে বেডের উপর শুইয়ে দিলো বুশরাকে। অতঃপর চোখ বুজে সোফায় বসে রইলো সে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন বুশরা। কি সুন্দর করে গুটিশুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে। যেন একটা সুগন্ধি লেবুফুল। একপলক তাকায়,কেন জানি মায়া হয়। বুকচাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সারা রাত ভাবনাচিন্তা করলো। কতশত রকম দুঃশ্চিন্তা তার মাথায় ভর করলো। উঠে বেডের উপর বসলো। বুশরার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।

“বুশরা শুনতে পাচ্ছ?”
নিচু স্বরে বলল তবে সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।
“বুশরা!”
অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,”হু!”
“তুমি কি আমার হবে?”
মাথা নাড়ায় বুশরা।
“হুম! কোটি কোটিবার হবো।”
ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
“আপনি কি আমার হয়ে থাকবেন?”
প্রতিত্তোরে কিছু বলতে পারলো না। কেন জানি চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে এলো।
“দেখি।”

হাতের উপর মুখ রেখে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো।
“আমার জীবনে একজন নিষিদ্ধি নারী এসেছিল। সে আমাকে ভালোবাসেনি। এটা জেনে তুমি কি আমাকে গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করবে?”
“আপনার শরীরে অন্য নারীর ঘ্রাণ থাকলে আমি প্রয়োজনে শ্বাস আঁটকে রাখবো। তবুও আপনি নির্দ্বিধায় আমার হয়ে যান। আমি ভীষণ ভালোবাসবো আপনাকে ভীষণ!”
“সত্যি?”
“হু! এতটাই ভালোবাসবো যে আপনি তাকে ভুলে যেতে বাধ্য হবেন। একসময় তাচ্ছিল্য হেসে বলবেন,সেটা আপনার ভালোবাসা নয় মোহ।”

ঘুমু ঘুমু জড়ানো মায়াবী কণ্ঠ বুশরার। ধূসর বুঝতে পারে ঘুমের মধ্যেই এইসব বলছে বুশরা। কেন জানি মেয়েটার জন্য তার ভীষণ মায়া হচ্ছে। নিশুর কথা বুশরাকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দিবে না সে। নিশুকে ভুলা দরকার! খুব দরকার! সম্পর্কে সে তার ভাবী! নিজেকে নিজে ধিক্কার দিলো,ছিঃ! তুই একটা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ! তা না হলে কীভাবে পারলি ভাইয়ের বউয়ের দিকে কুনজর দিতে? জানিস না বড় ভাই বাবার সমান,বড় ভাবী এবং বড় বোন মায়ের সমান। তওবা পাঠ করে নিজেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা কর। নিশুকে ভাবী ভাবতে শুরু কর। মনে করবি তোর দ্বিতীয় মা। সংসারের দ্বিতীয় কর্তী। চোখ বুজে রইলো ধূসর। ঠিক যতটা ভালোবেসেছিল তারচেয়েও দশগুণ ঘৃণা করবে নিশুকে। নিশুর কোনো দোষ নেই তবুও সে ঘৃণা করবে। এখান থেকে ফিরেই ডায়েরিটা পুড়িয়ে ফেলবে। ডায়েরিটা থাকলেই বিপদ! বুশরা কখনো নিশুর নাম জানতে পারলে কষ্ট পাবে আর তাদের বন্ধুত্বে চিঁড় ধরবে যা সে চায় না।

বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙ্গলো বুশরার। মস্তিষ্ককে বায়ু চলাচল করতেই টের পেলো একটা হাতের উপর তার মাথা। চমকে উঠে চোখ তুলতেই দেখলো বেডের কোণায় চোখ বুজে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে ধূসর আর সে তার হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। অপ্রস্তুত হয় বুশরা। কতক্ষণে বেডে এলো সে? আর মানুষটা বসে রয়েছে যে ঘুমায়নি বুঝি! ভীষণ মায়া হলো! উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে এলো। কাঁধে হাত রাখতেই ধূসর তাকায়।
“বেডে শুয়ে ঘুমান।”
নীরব রইলো সে।
“আমার জন্য ঘুমাতে পারেননি তাই না?”
নিরুত্তর সে। শুইয়ে দিতে সাহায্য করলো। চেয়ারে বসলো বুশরা। চোখ বুজতেই হঠাৎ কিছু কথা ভেসে উঠলো মস্তিষ্কে।

“রাতে আমায় কিছু বলেছিলেন?”
“না।”
মুখটা মলিন হয়ে গেল।
“আমি মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখেছিলাম।”
“কেমন স্বপ্ন?”
লাজুক হলো বুশরা।
“বলা যাবে না।”
“গেট আউট।”
“রাগছেন কেন বলছি।”
চোখ বুজে রইলো ধূসর।
“কেন জানি আমার মনে হচ্ছে স্বপ্নে আপনি আমাকে বলেছিলেন তুমি কি আমার হবে?”
কান ঝা ঝা করে উঠলো ধূসরের।
“বেরিয়ে যেতে বলেছি তোমাকে।”
নার্স আসে বেরিয়ে গেল বুশরা। ফ্রেশ হয়ে বেডে বসলো ধূসর। স্যুপ আনলো তার জন্য। ভেতরে ঢুকে বাটিটা নিলো বুশরা।

“আসুন আমি হেল্প করি।”
“তোমাকে চলে যেতে বলেছি।”
“কথায় কথায় রাগ দেখান কেন? রাতে ওইসব বলতে লজ্জা করেনি?”

মায়াকুমারী পর্ব ৩৯

দেখলো সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ধূসর। তার দৃষ্টি অনুসরণ করতেই দেখলো নিশু-দ্যুতি দাঁড়িয়ে রয়েছে। অপ্রস্তুত হলো চারজন। জ্বীভে কামড় দিলো বুশরা। কী বলতে কী বলে ফেলেছিল! লজ্জায় গোলাপি আভা ছড়িয়ে পড়লো দু-গালে। কম্পিত হাতে এক চামচ স্যুপ নিয়ে বাড়িয়ে ধরলো ধূসরের মুখের দিকে। বেরিয়ে গেল ওরা দু’জন। এমন কথা শুনবে ভাবতে পারেনি ওরাও।

মায়াকুমারী পর্ব ৪১