মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৪
ইশরাত জাহান
মায়াকে বাড়ির ভিতরে এনে হলরুমের সোফায় বসিয়ে দেওয়া হয়।মায়াকে সোফায় বসিয়ে রাজ বলে,”কেমন লাগছে শশুরবাড়ি?”
মায়া বাড়িটি পরখ করে দেখছে।হলরুম থেকে উপরের দিকে সাজানো আছে বড় একটি সিড়ি।সিড়ির উপর দিয়ে পরখ করতে করতে চোখ আটকে যায় উপরের ঘরগুলোতে।কিছু ঘর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে মায়ার চোখে আটকালো মোহন সরদারের ঘরটি।ওই সেই ঘর যেই ঘর থেকে মায়া দৌড়ে নীচে আসতো।মুখে ফুটে উঠতো,”আমি খাবো না আম্মু।দুধের গন্ধ আমার সহ্য হয় না।আমি পুতুল বউ নিয়ে খেলবো।”
শাহানা পারভীন শাড়ি পরে দৌড়াতে থাকতো।শাড়ির আঁচল থাকতো তার কোমরে কুচিগুলো বাম হাত দিয়ে হালকা উচু করে ধরে ডান হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে মায়ার পিছনে ছুটতে ছুটতে বলতো,”আমার লক্ষ্মী মা আমার সব কথা শুনে।এটা শুনো না কেনো তুমি?দুধে প্রোটিন আছে।তোমাকে খেতে হবে মা।তুমি স্ট্রং না থাকলে তোমার পুতুল বর আসবে না।”
পুতুল বর আসবে না শুনলে মায়া থেমে যেতো।শাহানা পারভীনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলতো,”আমার পুতুল বর আসবে।আমার পুতুল বউ একা থাকবে না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলেই মায়া দৌড় দিতো ওর দাদুর পিছনে।দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলতো,”আমার পুতুল বর কোথায়?”
মায়ার দাদু মায়াকে কোলে নিয়ে বলেন,”তোমার পুতুল বর এখন অনেক পরিশ্রম করে দাদুভাই।সে তো পড়াশোনা করে শক্তিশালী হবে।তুমি কি দুর্বল থাকবে?”
“না আমি অনেক স্ট্রং হবো।আমার পুতুল বর আর আমি দুজনেই স্ট্রং হবো।আমাদের সাথে ঢিসুম ঢিসুম দিয়ে কেউ জিতবে না।”
শাহানা পারভীন হেসে দিতেন।বলতেন,”তাহলে সময়মত খাওয়া দাওয়া করো।দেখবে সময় হলে পুতুল বর পাবে।”
মায়া ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলতো দুধ।শাহানা পারভীন খুশি হয়ে মায়ার মাথায় চুমু দিয়ে বলতেন,”আমার লক্ষীসোনা।আমার সব কথা শোনে।একটুও দুষ্টুমি করে না।”
মায়া সাথে সাথে শাহানা পারভীনকে জড়িয়ে ধরে বলতো,”তুমিও আমার লক্ষ্মী মা।”
অতীতগুলো কল্পনা করে মায়া আনমনে বলে দেয়,”মা।”
রাজ মায়ার দিকে ঝুঁকে ছিলো।মায়ার মুখে মা ডাক শুনে তার নিজের বুকেও ছেত করে ওঠে।সে যে শাহানা পারভীনকে ছোটমা বলে ডাকতো।শাহানা পারভীন ছিলেনই ভালোবাসার মানুষ।শুধু তার কাকা বুঝলো না হীরের মূল্য।মায়ার মুখ উচু করে রাজ বলে,”মাকে মিস করছো মায়াবতী?”
মায়া তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে।রাজকে জানতে দিতে চায়না তার দুর্বলতা।যদি রাজ ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেয়।তাই বলে,”মাকে ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে আসলে প্রত্যেক মেয়েই তো মাকে মিস করে।এটা কি অস্বাভাবিক মন্ত্রী মশাই?”
রাজ বুঝলো মায়া কথা ঘুরিয়ে দিয়েছে।মায়া জানে না রাজ তার জন্য সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে।তবে এই রহস্যের উন্মোচন আড়ালে আবডালেই করুক সে।মায়াবতীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে রাজ জানতে দিবে না মায়াকে।সেও যে তার ছোটমার জন্য কষ্ট পায়।ছোটমা তো তাকেও এই বাড়িতে অনেক আদর যত্ন করেছিলো।রাজের জ্বর হলে শাহানা পারভীন রাত জেগে রাজকে সেবা করতেন।মাকে কাছেই পেতো না।মাহমুদ সরদার ব্যাস্ত থাকতেন কারণ তাদের পারিবারিক অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিলো না।
বাড়ির সবাই ভিতরে ঢুকে দেখতে পায় রাজ ঝুঁকে আছে মায়ার দিকে।মাহমুদ সরদার গলা খাকারি দিলেন।রাজ উঠে দাড়ালো।ঘুরে তাকিয়ে সবাইকে দেখে নিলো।মাহমুদ সরদার তাদের লকার থেকে পুরনো গহনাগুলো মায়ার কাছে এনে দিলেন।বংশের দামী গহনাগুলো যা সোনালী নিজেও পায়নি তা মায়া একদিনে এসেই পেয়ে গেলো।এটা দেখে সোনালীর হৃদয় পুড়ে ছারখার।সাথে সাথে মাহমুদ সরদারের সামনে এসে বলেন,”এটা কি হলো বড় ভাই!বাসায় তো আরো অনেক মেয়ে মানুষ আছে।আপনি এই সব বংশীয় গহনা একা এই মেয়েকে দিচ্ছেন কেনো? বড় আপা আছে আমি আছি সিয়া হিয়া মিলি আর তাছাড়া রুদ্রের যে বউ হবে সেও তো এখান থেকে ভাগ পাবে।”
মাহমুদ সরদার কথাগুলোর পাত্তা না দিয়ে মায়ার গলায় মোটা স্বর্ণের হার পরিয়ে দেন।হাতে রুলী পরিয়ে দেন।তারপর গহনার বাক্স মায়ার হাতে উঠিয়ে দেন।সবকিছু কমপ্লিট করে তাকান সোনালীর দিকে।বলেন,”এগুলো কার গড়ে দেওয়া জানো?”
সোনালী মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে দেন।মাহমুদ সরদার স্মিত হেসে বলেন,”গহনাগুলো সুরক্ষা হিসেবে লকারে রাখা ছিলো।কিন্তু সব গহনা আমাদের বংশীয় গহনা না।এই গহনাগুলো রাজের ছোটমা বানিয়ে রেখেছিলো।তার রাজের বউয়ের জন্য।”
সিয়া হিয়া আর মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কে এই ছোটমা।তারা কিছুই জানে না।সোনালী দমে গেলেন।মাহমুদ সরদার বলেন,”তো বলো! যার হক তাকে বুঝিয়ে দেওয়া কি আমার অপরাধ?আমি এখানে তোমার বা আমার সন্তানদের হক কেড়ে নেইনি।আমিও বাবা হই বোন।এই বাড়ির প্রতিটি সন্তান আমার চোখে সমান।তোমার রুদ্র ও মিলিকেও আমি আমার সন্তানের চোখে স্নেহ করি।কখনও এটা ভাবি না যে রাজ সিয়া হিয়া আমার সন্তান আর রুদ্র মিলি আমার দায়িত্ব।”
রুদ্র এসে মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মায়ের কথায় কষ্ট পেও না বড়বাবা।আমার চাই না এসব।আমি নিজেই আমার বোন আর আমার হবু উত্তরাধিকারীর দায়িত্ব নিতে পারবো।”
বলেই তাকিয়ে থাকে হিয়ার দিকে।হিয়া দেখলো এই দৃষ্টি।শুধু হিয়া না মায়ার নজরেও এসেছে রুদ্রের এই নরম চাহনি।এটা দেখে মায়া এক ডেভিল হাসি দেয়।হিয়া বিরক্তির চাহনি দিয়ে চশমা ঠিক করে।রাজ এসে রুদ্রের কাধে হাত রেখে বলে,”ব্রেভ ভাই আমার।বউয়ের দায়িত্ত্ব নিজ দায়িত্বে নেওয়ায়টাই তো আসল পুরুষের কাজ।”
রুদ্রের মুখে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।রাজকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কংগ্রাচুলেশন ভাই।”
জারা এসে সোনালীর পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,”তোমার মাথা গরম রেখো না খালামণি।তোমার ছেলেই তো এনাফ।দেখছোনা কিভাবে ভালোবাসা আদায় করে নিচ্ছে।আমাদের মেইন জ্যাকপট তো রুদ্রের মাধ্যমে।ঠান্ডা মাথার খিলাড়ি তোমার ছেলেটা।”
শয়তানি হাসি দিয়ে সোনালী বলেন,”আসলেই তাই।আমার ছেলে বুঝে কোথায় কোন কথা বলে মন জয় করতে হয়।তবে চিন্তা নেই এই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করার ব্যাবস্থা এই সোনালী জানে। ছলে বলে কৌশলে ওকে তো বিদায় করবই।তারপর এই বাড়ির বউ হয়ে তুমিই আসবে।”
জারা ও সোনালী দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে দেয়।মালিনী চলে গেছে ঘরে।তার আর এসব বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছা নেই।সে মায়াকে মেনে নিতে পারেনি।মানবে কিভাবে?মায়া যে আচরণ করলো এতে মায়াকে বৌমা হিসেবে মানা কষ্টকর।ঘরে এসে চুপচাপ শুয়ে আছেন তিনি।মায়াকে নিয়ে সিয়া ও হিয়া রাজের ঘরে এসেছে।সিয়া ও হিয়া অবাক হলেও বাবা ও ভাই যখন মায়াকে ভালবেসে গ্রহণ করেছে তখন তারাও গ্রহণ করে নিলো মায়াকে তাদের ভাবী হিসেবে।এমনিতেও মায়া দেখতে মাশাআল্লাহ।জারার মতো না।জারার মুখে তো সবসময় মেকআপ দিয়ে ভরা।এই মায়া তাদের মতোই।কর্মঠ আর সাভাবিক কিন্তু মায়া মাইন্ডলি ডেঞ্জারাস।যেটা সিয়া ও হিয়া না।সিয়া ও হিয়া হাসতে হাসতে গল্প করছে মায়ার সাথে।মায়ার পড়াশোনা ও ভিন্ন বিষয়ে গল্প করতে থাকে।নতুন ভাবীকে দেখে তারা বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে খুব তাড়াতাড়ি।
মাহমুদ সরদার ও রাজ মিলে কথা বলছেন তাদের আলাদা এক মিটিং রুমে।এটা আলাদাভাবে মাহমুদ সরদার অনেক আগেই করেছেন।যখন তিনি তার ছেলে মেয়ের সাথে সময় কাটান এখানে এসেই কাটান।রুমের দরজা লাগিয়ে কথা বলেছ তারা।কথার ফাঁকে রাজ বলে ওঠে,”সবকিছুই বুঝলাম বাবা তবে আমি এটা বুঝলাম না যে,আমার জন্মদিনের দিন মায়াবতীকে আমরা চিনেও না চেনার ভান করছি ঠিক আছে কিন্তু মায়াবতীর ইনফরমেশন কেনো আমাকে চাইতে বললে।আমি তো মায়াবতীর সবকিছুই আগে থেকে জানতাম।তাহলে ওগুলো কেনো বলতে হলো?”
মাহমুদ সরদার রাজের কাধে হাত রেখে বলেন,”কারণ আমি দেখেছি তোমার পিছনে স্পাই লাগানো।শুধু তুমি না আমার পিছনেও আছে। আর আমাদের পরিবারে কাউকে জানাতে চাই না যে মায়া সম্পর্কে তুমি অবগত।তুমি মায়াকে ওইদিন থেকে দেখেছো আর ওইদিন থেকে সে তোমার মনে জায়গা করে নিয়েছে।এমন নাটক না করলে মায়ার জীবনে ঝুঁকি আছে।আমি চাই এই বাড়ির একটি লোকও যেনো আপাতত আসল সত্যি না জানে।কারণ এই বাড়ির কেউ একজন আছে যে মায়ার ক্ষতি চায়।মায়ার সত্য জানলে মায়াকে খুন করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়বে।আবার এমনও হতে পারে শাহানার খোঁজ আমরা পাওয়ার আগে তারা পেয়ে যাবে।”
“হোয়াট!কিন্তু তুমি আমাকে আগে বলোনি কেনো?”
“কারণ আমি চাইনি তুমি এতটা হাইপার হও।ঠান্ডা মাথায় খেলতে হবে বাবা।আমাদের শত্রু কে আমরা জানি না।কিন্তু আমাদের আড়ালে থাকা শত্রুকে আমাদের বুদ্ধি দিয়েই হারাতে হবে।”
“তুমি কাকে সন্দেহ করো?”
“আমার সন্দেহের তালিকায় অনেক মানুষ আছে।কখনও মনে হয় মায়া নিজেই স্পাই লাগিয়েছে কারণ তোমার খোঁজ রাখার জন্য। আবার কখনও মনে হয় মোহন বা সোনালী।কিন্তু এরা যদি হয়েও থাকে তাহলে তোমাকে বাধা দিতে চাইতো একবার হলেও।”
“বাধা তো হতে এসেছিলো।কাকিয়া আমার কাছে জারাকে পাঠিয়েছিলেন।কিন্তু আমি দেখতে পেয়েছিলাম জারা ওয়াইংয়ে নেশা দ্রব্যের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।তাহলে কি কাকিয়া স্পাই লাগিয়েছিলো?”
“হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে তোমার বিরোধী দল আবার ওই রিমু রেপ মামলার কেউ একজন।কারণ কক্স বাজারে তোমাদের উপর হামলা করাও হয়েছিলো।”
“রিমুর রেপিস্টরা তো জানতো না যে আমি তাদের বিরুদ্ধে উকিল ঠিক করেছিলাম।”
“এমনও হতে পারে তারা সব জানতো যেটা তুমি আমি জানি না।যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবতে নেই।তুমি অনেক শক্তিশালী হয়েছো মানে এই না যে তোমার প্রতিপক্ষ দুর্বল।সে যদি দুর্বল হতো তাহলে এভাবে আক্রমণ করতো না।”
“যদি এতটাই শক্তিশালী হয়ে থাকে তাহলে পিছন থেকে কেনো ছুরি দিয়ে আঘাত করছে?সামনে এসে আঘাত করুক।”
“এতটাই যদি সহজ হয় তাহলে মায়া মা কেনো মোহনকে শাস্তি দিচ্ছে না?কারণ সবকিছু যতটা সহজ ভাবা হয় ততটা সহজ নয়।মাথা ঠান্ডা করে সবকিছু জানতে হবে। কারা তোমার পিছনে স্পাই লাগিয়েছে আর কেনো লাগিয়েছে?উদ্দেশ্য কি তাদের?কি চায় তোমার থেকে?এই সবকিছু জানতে তোমার কিছুটা দুর্বল জায়গা ওদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যাতে ওরা সময় বুঝে তোমার দিকে হামলা করে আর সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাবো।মায়া এমনিতেও তেজী আর চঞ্চল ওর বিষয়ে সিক্রেট থাকাই ভালো।বলা যায় না ওর সত্যিটা সামনে আসলে সবাই কি না কি করে দেয়।শাহানার সাথে আমার কথা হতো প্রায় প্রায়।লাস্ট কথা হয়েছিলো ও হারিয়ে যাওয়ার দুইদিন আগে।তাই আমি চাই না মায়া আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাক।বাবার রত্ন ছিলে তুমি আর মায়া।
শাহানা ছিলো এই বাড়ির যোগ্য উত্তরাধিকার।কিন্তু ভাগ্য তাকে ঠেলে দিয়েছে।ভাগ্যের দোষ কি দিবো তোমার কাকাই জালিম না হলে মেয়েটা স্বামীর ভালোবাসা ছাড়াও সন্তান নিয়ে পরিবার নিয়ে সুখেই ছিল।সবকিছু ওই সোনালীর নজরে শেষ হলো।কিছু বলতে গেলে অধিকারবোধের কথা শুনিয়ে দেওয়া হতো।তাই ঝামেলা না করে চুপ থাকতাম।শাহানা আমাকে বলেছিলো প্রতিবাদ না করতে সংসার আলাদা না করতে।আমি তো আগেই সংসার আলাদা করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু শাহানা বলেছিলো মায়া তোমার বউ হয়ে মোহন সরদারকে যোগ্য জবাব দিবে।কিন্তু কি এমন হয় যে শাহানা নিজেই হারিয়ে যায়।
কোথায় আছে কি করছে এগুলো কিছুই জানি না।মায়া তো ভুল অক্ষরেও বলবে না।কারণ দেওয়ালের কান আছে এটা মায়ার মাইন্ডে সেট হয়ে গেছে।মায়া খুব চতুর। ও ওর ভয়ংকর রূপ দেখালেও ওর সিক্রেট কাউকে জানতে দিবে না।এই সবকিছু তোমাকে বুদ্ধির সাথে সামলাতে হবে।মায়াকে উত্তেজিত করবে না।ওর পার্সোনাল ডক্টরের সাথে আমার কথা হয়েছিলো।তিনি বলেছেন,মায়া জীবনের বড় বড় ধাক্কাগুলো খুব অল্প বয়সে পেয়েছে।ওর ব্রেনে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় ওর মাথা ঠিক থাকে না।ভুলভাল কিছু একটা করে দিতে পারে।তাই ওকে ওর মতো থাকতে দিতে হবে।ও ওর মায়ের জন্য পুরোটাই সাইকো হয়ে গেছে।নিজের বলে যেটা একবার দাবি করে সেটা কখনই অন্যকে পেতে দিবে না।তার প্রমাণ তো তুমি দেখেছো।তাই এমনভাবে আমাদের চলতে হবে যেনো আমরা মায়ার আসল সত্যি জানি না।”
“আই সি।”
“হুম তো আজ তাহলে যাও।তোমাদের ফার্স্ট নাইটে যদি আমার সাথে গল্প করতে করতে কাটাও তাহলে তোমার বাঘিনী বউ এসে ছুরি দেখিয়ে তোমাকে নিয়ে যাবে।এই রাতটাও তো তার অধিকারের মধ্যেই পরে।”
হো হো করে হেসে দেয় রাজ।মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরে বলে,”বাঘিনী বৌমার ভীতু চঞ্চল শশুর।”
বলেই রাজ চলে যায় নিজের ঘরে।সিয়া ও হিয়া চলে গেছে।রাজ ঘরে এসে ঘর ফাঁকা দেখে অবাক হলো।চোখ বুলিয়ে ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো তার বউ ব্যালকনিতে আছে।পিছন থেকে মায়াকে জড়িয়ে ধরে রাজ।মায়া নিরব থাকে।রাজ বলে,”ফার্স্ট নাইটে বউ আমার বর ছাড়া ব্যালকনিতে কেনো?”
“কারণ বর আমার বাসর ঘরে না থেকে অন্য ঘরে ছিলো।”
“অভিমান হয়েছে বুঝি!বর বাসরে না থেকে বাবার আসরে ব্যাস্ত ছিলো বলে?”
মায়া উত্তর না দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।রাজ মায়াকে কোলে করে নিয়ে আসে ঘরে।মায়াকে খাটে বসিয়ে দিয়ে বলে,”হুট করে বিয়ে হওয়াতে বাসরের ঘর সাজানো হলো না।কোথায় ভেবেছিলাম ফুলে সাজানো ঘরে তোমাকে নিয়ে ভালোবাসায় পারি দিবো।কপাল আমার বউ পেলাম কিন্তু বাসরটা ফুলবিহীন।”
বলেই এক এক পায়ে রাজ এগিয়ে আসে মায়ার দিকে।মায়ার অতি নিকটে এসে রাজ ফিসফিস করে বলে,”দুষ্টুমি করবে না তো বউ?”
কথাটি বলতে দেরি মায়া রাজের কলার ধরতে দেরি করেনি।রাজের কলার ধরে রাজকে নিজের কাছে এনে রাজের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে দিলো মায়া।কিছুক্ষণ পর রাজকে ছেড়ে দিলো।রাজ বিছানায় হাত এলিয়ে শুয়ে বলে,”বাসরঘরে মন্ত্রী তার বউ দ্বারা ইজ্জত হরণ হলো।জাতি কি মেনে নিবে এই মন্ত্রীকে?”
বলেই মায়ার হাত ধরে টেনে নিজের উপর রাখলো।মায়া তাকিয়ে আছে রাজের চোখের দিকে।রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”লিপস্টিক না দিয়ে ভালই করেছ।বউয়ের প্রথম ভালোবাসা একদম ফ্রেশ ছিলো।”
“বউয়ের ভালোবাসার জন্য এতটা ব্যাকুল!”
“বউ যদি ভালো না বাসে তাহলে তো এই বিয়েটা পুরোই ব্যার্থ হতো মায়াবতী।বউকে ভালোবাসবো বলেই তো বিয়ে করেছি।”
“বউ কিন্তু আপনার এক পিস।নিজের ভালোবাসা নিজের অধিকার নিজে আদায় করে নেয়।”
“যেমন এখন নিলে।”
বলেই চোখ টিপ দেয় রাজ।মায়া স্মিত হাসি উপহার দেয়।রাজ মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”এই মায়াবতী অবশেষে আমার বউ হয়েই গেলো।এই শাহমীর রাজের একমাত্র রাণী মেহেরুন জাহান মায়া।”
“আপনার উহু নো আপনি ওনলি তুমি।তোমার আমার জীবনে কেউ আসবে না ডিয়ার মন্ত্রী মশাই।”
গভীর রাত,
প্রায় সাড়ে তিনটা।এমন সময় ফোন ভাইব্রেট হয় মায়ার।সাথে সাথে চোখ খুলে তাকায় ফোনের দিকে।কাঙ্ক্ষিত নাম্বার থেকে ম্যাসেজ পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকালো রাজের দিকে। রাজ ঘুমে বিভোর।মায়া সাথে সাথে উঠে রাজের উপর হাত দিয়ে চেক করে নিলো।রাজ এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।সাথে সাথে ম্যাসেজ আসা নাম্বারটিতে রিপ্লাই দিলো,”I am coming.”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৩
লিখেই মায়া ব্যালকনিতে আসলো।ব্যালকনি থেকে সোজা জাম্প দিয়ে মাটিতে এক হাত ভর দিয়ে বসে পড়লো।ওই সময় মায়া ব্যালকনিতে এসে সবকিছু পরখ করে রেখেছিলো।কিভাবে কি করলে রাতের বেলা সে এখান থেকে বের হতে পারবে।বাড়ির পিছনের ফুলবাগানের ভিতরে ঢুকে একটি দেওয়াল দেখলো।দেওয়াল পেরিয়ে বের হলো বাইরে।বাইরে এসে দেখলো দুইটা গাড়ি একটাতে তারেক আর ড্রাইভার।সেখানে যেয়ে মায়া বসে পড়ে।আরেকটিতে মায়ার গার্ডস আছে।মায়াকে দেখে তারেক ড্রাইভারকে ইশারা করলো।ড্রাইভার গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিতে থাকে।