মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৮
ইশরাত জাহান
ল্যাপটপে বসে কাজ করতে থাকে মায়া।ল্যাপটপে চোখ থাকলেও কি বোর্ডে রাখা আঙ্গুলগুলো তার কাজ করছে না।রাজ রুমে এসে দেখতে থাকে মায়ার মনোভাব।কোনো মেয়েই কি পারবে বাবার থেকে এমন আচরণ সহ্য করতে? কখনই না।মায়া তো সেখানে পুরোটাই আলাদা মস্তিষ্কের।ল্যাপটপ অন করেও চুপচাপ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে।অন্য কোনো দিকে তার মনোযোগ নেই।রাজ ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়েল গলায় ঝুলিয়ে রেখেই দেখতে থাকে মায়াকে।অবশেষে মায়ার পাশে বসে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।মায়ার ঘোর কাটে।পাশে তাকিয়ে দেখে রাজ ফ্রেশ হয়ে এসেছে মাত্র।মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে রাজ।মায়ার গালে হাত রেখে বলে,”দুর্বলতা আমাদের আসল শত্রু।এটাকে মনে বিরাজ করে রাখতে নেই।”
মায়া রাজের চোখে চোখ রেখে বলে,”আমি দুর্বল নই।”
“সময় তোমাকে দুর্বল করে দেয়।সেই সময়টিকে দুর্বলতা নয় মনের জোড় দিয়ে লড়াই করো। একটুতেই মাথা গরম না করে ঠান্ডা মস্তিষ্কে লড়াই করতেও তো পারো।”
“হুম।ঠিক বলেছো তুমি।আমি ঠান্ডা মস্তিষ্কে লড়াই করবো।”
রাজ মায়ার মুখ নিজের কাছে আরো একটু এগিয়ে নিয়ে আসে।তারপর সারা মায়ার মুখ তার চোখ দিয়ে বিচরণ করতে থাকে।মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার মায়াবতী তুমি। যার মধ্যে আমি আমার পুরো অস্তিত্বকেই দেখি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“যদি এই অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলো?”
“যার রন্ধে রন্ধে আমার অস্তিত্বের বসবাস সে কিভাবে যায় হারিয়ে?হারিয়ে যেতে দিবনা আমি তাকে।”
“এই মায়াকে চিরতরে নিজের কাছে রেখে দিতে পারবে তো?”
“কেনো পারবো না?চিরতরে নিজের করতেই তো মায়াবতী আছে আমার সাথে পবিত্র বন্ধনে।সারাজীবনের জন্য নিজের সাথে পবিত্র করে রেখেছি তোমাকে।কি করে হারিয়ে যেতে দেই সেই সম্পর্ককে?”
কোনো কিছু না বলে এক নিমিষেই রাজের বক্ষে নিজের মাথা এলিয়ে দেয় মায়া।রাজ নিজেও একটু সুখ খুঁজে পেলো।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমার এক টুকরো সুখ তোমার মিষ্টি আলিঙ্গনে,মায়াবতী।”
“আমিও তোমার বক্ষে নিজের সুখ খুঁজে পাই,মন্ত্রী মশাই।”
ঘরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে ফোঁসফোঁস করছেন মোহন সরদার।সোনালী পাশেই বসে আছে।কোনো কথা বলছে না।নিরবতা ঘিরে রেখেছে তাদের মুখপানে।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে মোহন সরদার বলেন,”যেই মেয়েটির জন্য আমি জেলে দুই রাত কাটিয়েছি সেই মেয়ে এই বাড়ির বউ।এটা আমাকে মেনে নিতে হবে।”
সোনালী কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,”আচ্ছা তোমার এই জেলে যাওয়ার পরপর ওদের বিয়ে।কোনোভাবে এটা ওই মেয়ের প্ল্যান না তো?”
“কি বোঝাতে চাও?”
“ভালো করে ভেবে দেখো।রাজ ও মায়া চট্টগ্রাম থেকে ফিরেছে পরশুদিন।ওইদিন রাতেই তোমাকে এরেস্ট করা।তারপরের দিনই ওদের বিয়ে।এটা কেমন যেনো ইচ্ছাকৃত তোমাকে ট্র্যাপে ফেলানো মনে হচ্ছে।”
“তোমার কথাতে তো এমনটাই প্রকাশ পাচ্ছে।যদি এমন কিছু হয়েই থাকে তাহলে ভুগতে হবে ওই মেয়েকে।”
“তোমার ভাইয়ের ছেলে থাকতে কি আর সেই সুযোগ পাবে?তার থেকে তো ভালো হবে এমন কিছু করা যাতে ওই মেয়েকে রাজ নিজে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। আর তারপর তুমি ওই মেয়েকে যা খুশি করো।”
“রাজ কি চাইবে ওই মেয়েকে নিজের জীবন থেকে দূরে করতে।এমন কোনো ওয়ে তো দেখছি না।”
“আছে গো আছে।আমাদের বড় ভাবী।ওই মেয়ের নামে বদনামগুলো এমনভাবে সাজিয়ে বলেছি যে এখন সে ওই মেয়েকে সহ্য করতেই পারবে না। আর যে মেয়ে বাড়িতে আসার পর থেকে এক এক ঝামেলা তৈরি করেছে সে কি করে শাশুড়ির মন পায়। বড় ভাবীর মনে জারা জায়গা করে নিয়েছে।তুমি চিন্তা করোনা।”
“আমাদের রুদ্র কোনো কাজের না।এতবার বলি আমার কোম্পানিতে হাত লাগাতে কিন্তু সে থাকবে তার মতো ফুর্তি নিয়ে।”
“আরে তুমি ওকে নিয়ে চিন্তা করোনা।রুদ্র আর যাই করুক ও ওর দায়িত্ত্ব ঠিকই পালন করছে।আমাদের হিয়াকে যে ও ওর হাতের মুঠোয় রাখছে।একবার হিয়া আর রুদ্রর বিয়ে হোক।হিয়ার দ্বারা এই সম্পত্তি আমাদের হয়ে যাবে।”
“কিন্তু রুদ্রর সাথে কি হিয়া বিয়ে করতে চাইবে?”
“বড় ভাই রুদ্রের প্রতি একটু হলেও দুর্বল।রুদ্র যা চায় ওকে তাই দেয় বড় ভাই।একবার মুখ ফুটে বললে আমাদের রুদ্র ও হিয়ার বিয়েটাও হয়ে যাবে।দেখে নিও।”
মোহন সরদার খুশি হলেন স্ত্রীর কথায়।সোনালী অনেক পাকা খেলোয়াড়।শাহানা পারভীনকে তো এভাবেই এই বাড়ি থেকে বের করে সবার মন জয় করে আছে।
মালিনী ব্যাগ প্যাক করছে।মাহমুদ সরদার সেদিকে তাকিয়ে আছেন।কিন্তু কিছু বলছেন না।মালিনী অভিমানী সুরে বলেন,”আমি কাল এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।ভালো থেকো তুমি আর তোমার সন্তানেরা।”
মাহমুদ সরদার স্মিত হেসে বলেন,”এই বাড়িতে তুমি শুধু সরদার বংশের বউ হওয়ার আশায় এসেছিলে।কিন্তু আমার ছোট রাজের মা হতে পারোনি।এতগুলো বছর পর আমার ছেলেটা কিছু চাইলো আর এতেই তোমার সমস্যা।সৎ মা হলে এমনটাই তো হবে।”
মালিনী ঘুরে তাকালেন মাহমুদ সরদারের দিকে।বলেন,”আমি রাজের সৎ মা।ওর কি কোনো দায়িত্ব পালন করিনি আমি?”
“কখন পালন করেছো?আমি তো দেখিনি।রাজের জ্বর আসলে মাকে খুঁজতো।তুমি তো রাজের জন্য ডাক্তার এনেই দায়িত্ত্ব শেষ করে দিতে।কিন্তু গভির রাতে বাসায় ফিরে দেখতাম শাহানা আমার ছেলের পাশে রাত জেগে সেবা করছে।রাজকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।বিয়ের আগে তুমি বলেছিলে আমার রোহিণী(রাজের আসল মা) এর কোনো ত্রুটি তুমি রাজের মধ্যে রাখবে না।রাজের মায়ের দায়িত্ত্ব তুমি পালন করবে।কিন্তু আমি কখনও তেমনটি দেখিনি তোমার মাঝে। হ্যাঁ তুমি সবাইকে এই বাড়ির প্রত্যেককে সম্মান দিয়েছো।এই বাড়ির বিপদের সময় আমাদের টাকা ইনভেস্ট করে উপকার করেছিলে।কিন্তু আমার রাজ কি পেয়েছিলো তার মাকে?তোমার বাবার টাকা আমরা বিয়ের একমাস আগেই ফেরত দেই।টাকার বিনিময়ে কিন্তু আমাদের বিয়ে হয়না।বিয়েটা হয় তুমি ডিভোর্সি ছিলে আর আমার রোহিণী মারা যায় তাই।তুমি রোহিণীর রূপটাই পেয়েছো কিন্তু কখনও রোহিণী হয়ে উঠতে পারোনি।আমার ছেলেটা তারপরও তোমার প্রতি কোনো আক্ষেপ রাখেনি।আমিও কোনোদিন মুখ ফুটে বলিনি একটু খাইয়ে দেও রাজকে।একটু খোঁজ নেও রাজের।কারণ আমি আর রাজ কেউই চাইনি তুমি নিজেকে আমার দ্বিতীয় বউ মনে করো।কিন্তু আজ তোমার ব্যাবহারে এটা প্রকাশ পেলো।তুমি আমার রাজকে কখনও ভালোবাসোনি।”
“আর তুমি!তুমি কি পেরেছো আমাকে ভালোবাসতে?রোহিণীর মতো আমার রূপ বলেই তো আমার সাথে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে।আমরা যদি যমজ বোন না হতাম তাহলে হয়তো আমার আজ তোমার সাথে বিয়েটাও হতো না।বোনের স্বামীকে বিয়ে করেছি এমন ফিল নিয়েই এসেছিলাম এই বাড়িতে।সবাইকে বুঝে উঠতে আমারও তো সময় লাগতো।তারপরও তোমার মা বাবার মন জয় করার চেষ্টা করেছি।আমি যেমন রাজের পারফেক্ট মা হতে পারিনি ঠিক তুমিও আমার পারফেক্ট স্বামী হতে পারোনি।সিয়া ও হিয়াকে আনার আগে একবারও নিজে থেকে আমার কাছে আসোনি তুমি।সোনালীর সাহায্য ছাড়া আমি তোমার দ্বারা একটি সন্তানও পেতাম না।”
“আমি তোমার মতো আমার সন্তানদের আলাদা করেও দেখিনি।তুমি শুধু সোনালীর ইশারায় চলেছো।ওর মাধ্যমে ঔষধ নিয়ে আমার খাবারে মিশিয়ে আমার কাছে এসেছো।কিন্তু স্ত্রী হয়ে স্বামীর মন জয় করতে পারোনি তুমি।”
“রাজ তোমার একার ছেলে কিন্তু সিয়া ও হিয়া আমাদের দুজনের।সেক্ষেত্রে তোমার আর আমার নজরে তো ফারাক থাকবেই।”
“তাহলে আমার ছেলের চাওয়া পাওয়াতে তো তোমার কোনো অভিযোগ থাকার কথা না।আমার ছেলে একজন প্রতিষ্ঠিত মেয়েকে বিয়ে করেছে।তোমার চাওয়াকে প্রায়োরিটি দিয়ে আমার ছেলে জলে ভেসে যাবে এটা আমি চাইবো না।”
“আচ্ছা।তবে এটাই শ্রেয়।আমি চলে যাচ্ছি তোমাদের মাঝখান থেকে।”
“এটা তোমার ব্যাক্তিগত ইচ্ছা।এমনিতেও আমার জীবনে দীর্ঘায়ু হয়ে এসেছো তুমি কিন্তু আমার মনের মাঝে নিজের জায়গা গড়ে নিতে পারোনি তুমি।”
শেষের কথাটি কাটার মত মনে গেঁথে গেলো মালিনীর।রোহিণী ও মালিনী দুই যমজ বোন ছিলেন।রোহিণীর সাথে মাহমুদ সরদারের প্রণয়ের বিয়ে হয়।সুখেই ছিলো দুই পরিবার নিয়ে তারা।তাদের সুখের জীবনে চাঁদের আলোর মত চিকচিক করে ওঠে রাজ।তাদের পূর্ণ সংসার।কিন্তু হঠাৎ একদিন রোহিণী মারা যায়। আর সেই থেকেই নিরব হয়ে যায় রাজ।মাহমুদ সরদার ঘর বন্দী থাকতেন। আস্তে আস্তে তার রাজনীতিতে বাধা সৃষ্টি হয়। পরে রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীর মৃত্যুকে মনের ভিতর মাটি চাপা দিয়ে পরিবারের জন্য কর্মে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।এদিকে সরদার বংশের ব্যাবসা আস্তে আস্তে নিম্ন স্তরে আসতে থাকে।তখন রাজের নানা ভাই তাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।ওই সময় মালিনীর কোনো এক কারণে ডিভোর্স হয়।
ডিভোর্সের কিছুদিন পর সেই বরও গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায়।রাজের নানার টাকা পরিশোধ করে দেয় মাহমুদ সরদার।কিন্তু রাজের নানা রাজ,মাহমুদ সরদার ও মালিনী সবার দিকে তাকিয়ে ভেবেছিলেন মাহমুদ সরদার ও মালিনীর বিয়ে দেওয়া উত্তম।বাবার নজর তখন মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ খুঁজতে থাকে আবার রাজ ছিলো তার কলিজার টুকরো।রাজ একজন মা পাবে আর মালিনী ভালো মনের স্বামী সংসার।হলোও তাই।মাহমুদ সরদারের মত না থাকলেও তার বাবা ও শ্বশুরের অনুরোধে বিয়ে করে নেয় মালিনীকে।বিয়ের আগে মালিনীর সাথে মাহমুদ সরদার আলাদা কথা বলেছিলেন।তিনি মালিনীর থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে তিনি রাজকে আপন সন্তানের মতো মানুষ করবে।
কিন্তু না বিয়ের পর থেকে সবার সাথে মিলেমিশে চললেও রাজের মা হয়ে উঠতে পারেনি।মালিনীর সাথে মাহমুদ সরদারের বিয়ের পর আবারও ব্যাবসায় ডাউন শুরু হয়।তখন মায়ার নানাভাই মায়ার দাদুর বন্ধু ছিলেন।তিনি অনেক সাহায্য করেন।শাহানা পারভীন ঢাকাতে পড়াশোনা করতে আসেন।তাই প্রায় সময় দেখা সাক্ষাৎ ছিলো। শাহানা পারভীনের বুদ্ধিমত্তা ও সততা দেখে মায়ার দাদু অনেক খুশি হন।মায়ার নানুকে অনেক অনুনয় করে বিয়ে দেন মোহন সরদার ও শাহানা পারভীনের।তারপর রাজ তার মাকে না পেলেও মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিলো শাহানা পারভীন দ্বারা।শাহানা পারভীনের রাজের প্রতি যত্ন কেউ আগে থেকে আন্দাজ করতে না পারলেও পরবর্তীতে রাজকে সুখে দেখতে পেয়ে সবাই শাহানা পারভীনের প্রতি খুশি হয়।
সকাল সকাল চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ বাড়তে থাকে।মায়া ও রাজ বিরক্ত হয়ে বাইরে বের হয়।কিন্তু বাইরে বের হয়ে অবাক হয়ে যায় রাজ।মালিনী ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে সদর দরজার সামনে।তাকে আটকে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে সোনালী আর সিয়া ও হিয়া।সিয়া ও হিয়া কান্না করে দিয়েছে।তারা বারবার বলে ওঠে,”এভাবে রেগে বাসা থেকে বের হয়ে যেওনা মা।আমরা আছি তো তোমার জন্য।”
মালিনী মন স্থির করেছেন তিনি থাকবেন না এই বাড়িতে।নিজেকে কাঠিন্য রেখে বলেন,”আমাকে যেতে দে।এই বাড়িতে আমার কোনো অধিকার নেই।এই বাড়িতে আসার যে উদ্দেশ্য ছিলো সেটা আমি পূরণ করতে পারিনি।তাই আমি চলে যেতে চাই।”
মায়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।ঠিক কোন উদ্দেশ্যের কথা বলছে মালিনী?আসলে মায়া জানে না যে মালিনী রাজের আসল মা নয়।রাজ এসে মালিনীর হাত ধরে আটকিয়ে দেয়।বলে,”এভাবে বাসা থেকে বের হয়ে যেও না মা।তোমার সন্তানেরা তোমার জন্য কষ্ট পায়।আমার কথা নাহয় বাদ দিলাম কিন্তু সিয়া ও হিয়ার কথা ভেবে তো থেকে যাও।”
“ওদের নিয়ে ভাবার মানুষ আছে।তোমরা আছো।ইনফ্যাক্ট সিয়া আর হিয়া এখন অ্যাডাল্ট। ওরা ওদের দেখে রাখতে পারবে।”
বলেই চলে যেতে নেয় মালিনী।এক পা এগোতে নিবে ওমনি জোরে জোরে হাততালির শব্দ কানে ভেসে আসে সবার।পিছনে তাকিয়ে দেখে মায়া হাততালি দিচ্ছে আর মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে।তালি দেওয়া থামিয়ে মায়া বলে ওঠে,”বাহ শাশুমা।এত তাড়াতাড়ি হার মেনে বিদায় নিচ্ছেন।আচ্ছা যাওয়ার আগে আমার শ্বশুরকে ডিভোর্স দিয়ে তার জীবন থেকে পার্মানেন্ট চলে যাচ্ছেন তো!না মানে এই বয়সে শশুর আমার সেপারেশনে যাচ্ছেন তাকে তো আর একা থাকতে দেওয়া যায় না।আমার আবার শাশুড়ি ছাড়া জমে না।”
তেড়ে এসে মালিনী বলেন,”ঠিক কি বোঝাতে চাও তুমি?”
“বেশি কিছু না শাশুমা।আপনি যাওয়ার পর আমার শ্বশুর একা হয়ে যাবেন।তার জন্য তো আবার একটা পাত্রী দেখতে হবে।তাই আর কি বলছিলাম যে চিরতরে যাচ্ছেন তো?”
“এই বয়সে বাবার আরেক বিয়ে!বাবা আমার এই বয়সে দাদু ডাক শুনবে নাকি বাবা ডাক শুনবে?”
“নতুন শাশুড়ি আসলে হয়তো আমার আবার কচি ননদ বা দেবর আসতে পারে। আর এই শাশুমা থাকলে কেউ আসার পসিবিলিটি আছে কি না আমি জানি না।কি শাশুমা আছে নাকি পসিবিলিটি?”
সবাই হা হয়ে দেখছে এদের তামাশা।মাহমুদ সরদারের বিষম উঠে গেছে।ছেলে একা হলে শাসন করা যেতো।এখানে তো ছেলে বৌমা দুজনেই এক।কেউ কারো চেয়ে কম না।
মোহন সরদার পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন।মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে বলেন,”বাহ!ছেলের বউ আজকাল শশুড়কে বিয়েও দিতে চায়।আবার সেখানে ভবিষ্যৎ বাচ্চার প্লানিং করে।তাও নিজেদের না শ্বশুর শাশুড়ির।”
মায়া মাথা উচু করে তাকায় মোহন সরদারের দিকে।কারণ মায়ার সামনে রাজ দাড়িয়ে ছিলো।মায়া বলে ওঠে,”শাশুড়ি আমার এই বয়সে বাড়িতে নাটক সাজিয়েছে।যেই বয়সে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে সংসারের উপদেশ দিবেন সেই বয়সে নিজে সংসার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।শশুর মশাইকে তো একটু দেখতে হবে।তার দেখভাল করার জন্য নতুন শাশুড়ি আনা তো অপরাধ না।”
রাজ মাহমুদ সরদারের কাছে এসে আফসোসের সুরে বলে,”দাদু ডাক শোনার বয়সে এসে নতুন করে বাবা ডাক শুনবে তুমি!এর থেকে লজ্জাজনক বিষয় দুনিয়াতে আর কি আছে? লোকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলবে ওই দেখো মন্ত্রী শাহমীর রাজের বাবার দাদুর বয়সে এসে ছেলে হয়েছে।মানসম্মান বলতে কিছু থাকলো না।”
মাহমুদ সরদার চোখ রাঙিয়ে তাকালেন ছেলের দিকে।রাজ হাত উচু করে বলে,”দেখো বাবা।আমি কিন্তু তোমার বিয়ে নিয়ে ভাবছি না।তোমার বৌমা তোমার একাকিত্ব ঘোচাতে আরেক বিয়ে দিবে।সে যেভাবেই হোক।তাই বলো পুরনো বউ নিয়ে থাকবে নাকি এই বউ বিদায় দিয়ে নতুন বউ আনবে?”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৭
মাহমুদ সরদার চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”শাট আপ।”
কেউ আর কিছু বলে না।মায়া ও রাজ মিটমিট হাসতে থাকে।সিয়া এসে মালিনীর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলে,”তুমি কোথাও যাবে না মা।চুপচাপ আসো।”
হিয়া টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে মালিনীকে।সোনালী এক গ্লাস পানি নিয়ে যায় মালিনীর কাছে। মালিনীকে পানি খাইয়ে শান্তনার বাণী দিতে থাকে।