মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩১
ইশরাত জাহান
কমিউনিটি সেন্টারে,
চারপাশের সাজসজ্জা দেখছেন মাহমুদ সরদার।মায়ার প্রিয় রঙ নীল হওয়াতে নীল রঙের কাগজের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর মাঝখানে মাঝখানে ফ্রেশ লাল সাদা রঙের গোলাপ।ছোট ছোট সাদা রঙের ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে আশেপাশের জায়গাগুলো।সেন্টারের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘Raj weds Maya’ এটা দেখে মাহমুদ সরদার একটু কষ্ট পেলেন।মায়ার জন্মের সময় ওর নাম দেওয়া হয় মোহনা।যেটা পরিবর্তন করে রাখা হলো মেহেরুন জাহান মায়া।যদিও মায়া নামটি মায়ার দাদুর রাখা ছিলো।
কিন্তু সার্টিফিকেট অনুসারে ছিলো না।তাই শাহানা পারভীন ইচ্ছা করে মায়ার এই নামটা ঠিক করেন।আজ মাহমুদ সরদারের বাবা বেঁচে থাকলে দেখতে পারতেন তার দুই রতন আজ এক হয়েছে।বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো মাহমুদ সরদার।ঠিক তেমনটাই হয়েছে রাজ।বাবা যেটা শিখিয়ে দিতেন রাজ সেটাই গ্রহণ করে নিতো।বাবাকে আইডল হিসেবে দেখেছিলো রাজ।আবার রাজের নানুও তেমন ছিলেন।রাজের নানু আর দাদু দুজনেই নরম মনের মানুষ ছিলেন।অন্যায়ের বিচার করতেন সৎ সাহস দিয়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যেটা মাহমুদ সরদার ও রাজ করতে পারে।বাবার সাথে কাটানো কথাগুলো মনে পড়ে চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি পড়লো মাহমুদ সরদারের।পাশ থেকে একটি হাত মুছে দিলো সেই চোখের পানি।মাহমুদ সরদার তাকালেন সেদিকে।রুদ্রকে দেখে স্মিত হাসলেন মাহমুদ সরদার।রুদ্র তার বড় বাবার চোখের পানি দেখতে পারে না।মোহন সরদারের আচরণ পেলেও মনের ভিতর তার দুর্বলতা মাহমুদ সরদারের জন্য অনেক আগে থেকেই গড়ে উঠেছে।এই বড় বাবা যে তার সবকিছুর যত্ন নিতেন।মাহমুদ সরদারের চোখের পানি মুছে দিয়ে রুদ্র বলে,”আজ তোমার ছেলের বিয়ে।এদিকে তুমি কেনো কান্না করছো?তোমার তো আজ সুখের দিন।”
“এটা দুঃখের কান্না নয়।কিছু চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হওয়ার জন্য যে সুখ সেই সুখের কান্না রে বাবা।”
“তোমাকে কান্না করতে দেখতে আমাদের ভালো লাগে না বড় বাবা।সুখের সময় হোক বা দুঃখের সময় কান্না একদমই করবে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
বলেই জড়িয়ে ধরেন রুদ্রকে।দূর থেকে এই দৃশ্য দেখছে হিয়া।হিয়ার নিজের কাছেও ভালো লাগছে এই দৃশ্যটা।হিয়া আজকে নীল রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে।চুলগুলো ছেড়ে স্ট্রেট করে রেখেছে আর চোখে চশমা তো তার থাকবেই।হালকা নুড কালারের লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে হিয়া নিজেকে সাজিয়েছে।রুদ্রকে এভাবে বাবার সাথে মিলেমিশে থাকতে দেখে মনে মনে আওড়ায়,”কেনো আপনি আমার জীবনের সাথে মিলে থাকতে পারলেন না রুদ্র ভাই?আপনার ভালো দিকগুলো যে আপনাকে চাওয়ার আকাংক্ষা বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু যখনই আপনার নোংরা কাজগুলো দেখি খুব বেশি ঘৃণা কাজ করে।”
হিয়ার ভাবনার মাঝে তারেক আসে।হিয়ার পাশে দাড়িয়ে গলা খাকারি দিয়ে ওঠে।হিয়া পাশে তাকিয়ে দেখে তারেক।তারেক বলে,”ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস।”
“আপনাকেও আজকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।”
“কালো চামড়ার মানুষের আবার সৌন্দর্য!”
“কালো বলে নিজেকে ছোট করবেন না।রূপের সৌন্দর্য রং দিয়ে না মন দিয়ে বিচার করতে হয়।যে নিজেকে তার মনের মাধুর্য দিয়ে গড়ে তুলবে সেই আসল সুন্দর পুরুষ।”
তারেক খুশি হয়।আরো কিছু কথা বলতে যাবে ওমনি সিয়া এসে হিয়াকে হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যায় সেখান থেকে।একপাশে আসতেই হিয়া বলে ওঠে,”এভাবে নিয়ে আসলি কেনো?”
হিয়ার মাথায় আলতো মেরে সিয়া বলে,”আরে বুদ্ধু এখন ভাইয়া ভাবীর এন্ট্রি হবে।বর বউকে ওয়েলকাম করতে হবে না?”
“ওহ,ওকে চল।”
“হুম চল ফুলগুলো এক এক করে আমরা সবাই নিয়ে যাই।”
“ওকে।”
বলেই একটি ফুলের ডালা হাতে নিলো হিয়া।সিয়া নিজেও একটি ফুলের ডালা নিয়ে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো।বুঝলো তারেকের আশপাশে আসতে দিবে না হিয়াকে।রুদ্র মৃদু হেসে ইশারা করে বলে,”থ্যাংক ইউ।”
এই সবকিছু নজরের বাইরে যায়নি তারেকের।সবকিছু দেখে সে নিজেও হালকা হেসে দেয়।
মায়া ও রাজের গাড়ি চলে এসেছে।গাড়ি থামতেই প্রথমে দরজা খুলে বের হয় রাজ।মিডিয়ার লোক ও বিয়ের ক্যামেরাম্যান ওদের ছবি তুলতে ব্যাস্ত।আশেপাশে থেকে সবাই হাততালি দিতে থাকে।রাজ সবার দিকে তাকিয়ে তারপর যায় মায়ার দিকে।দরজা খুলে মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই মায়া তার হাত রাজের হাতের উপর দিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে বের হতে থাকে মায়া।সবাই মিলে ওদের এইভাবে কিছু ছবি তুলে নিচ্ছে।ফুল দিয়ে সাজানো রাস্তা।সেই রাস্তা দিয়ে একজন ওপর জনের হাত ধরে এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে।মায়া ও রাজের এই হেঁটে চলা দৃশ্য ভিডিও করছে ক্যামেরাম্যান।এক সিড়ি উপরে দাড়িয়ে ওদের দিকে ফুল ছেটাচ্ছে সিয়া হিয়া ও মিলি।জারা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।জারার আর কি।সে কল্পনা করছে এই মায়ার জায়গায় আজ তার থাকার কথা।জারা স্লিভলেস হাতার লেহেঙ্গা পরেছে।তাকে দেখতেও সুন্দর লাগছে।কিন্তু আফসোস এই সাজ তার শখের পুরুষের উপর কোনো ইফেক্ট পরবে না।
রাজ ও মায়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আসতেই মাহমুদ সরদার সেখানে হাজির হন।মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরলো রাজ।মাহমুদ সরদারের দুই হাত ধরে আছে দুজন।একপাশে মায়া আরেকপাশে রাজ।দুজনের হাত ধরে কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করেন।তারপর দুজনকে বর বউয়ের স্থানে বসিয়ে দেওয়া হয়।সবাই এসে একেক করে কংগ্রাচুলেট করে যায়।
মাইক হাতে নিয়ে এনাউন্সমেন্ট করতে থাকে রুদ্র।সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”সো, মাই ডিয়ার ভাই অ্যান্ড ভাবী জির রিসেপশন পার্টির অনুষ্ঠান আরো জাকজমোক করা যাক। লেটস গো ফর ডিজে পার্টি।”
সবাই হাততালি দিয়ে সায় দেয়।একেক করে সবাই ড্যান্স ফ্লোরে হাজির হয়। ডিজে বাজতে শুরু করে।সব লাইট বন্ধ করে শুধু যারা নাচবে তাদের দিকে ছোট ছোট ঝাড়বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।হিয়া একপাশে দাড়িয়ে ছিলো।আজকে আর রুদ্র তার থেকে অনুমতি নেয়নি।সোজা হাত ধরে টান মেরে নিয়ে যায় ড্যান্স ফ্লোরে।হিয়া কিছু বলার আগেই হিয়ার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে,”হুশ।কোনো কথা নয়।আজকে আমি আমার পার্টনার নিয়ে ড্যান্স করতে চাই।বাধা দিলে মানবো না।”
“আমি চাই না আপনার সাথে ড্যান্স করতে।”
“তোর চাওয়া লাগবে না।আমি যখন চেয়েছি তখন আমিই তোর সাথে ড্যান্স করবো।”
বলেই হিয়ার কোমড়ে হাত রেখে ড্যান্স করতে শুরু করে রুদ্র।কোমড়ে হাত পেতেই মনের ভিতর কাপাকাপি অনুভব করে হিয়ার।ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ কেমন গভীর হতে থাকে।হিয়ার নরম মনে এই স্পর্শ গভীর অনুভূতি পায়।চশমার ভিতর থেকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।চোখের পাতা নড়ছে না।রুদ্র নিজেও তাকিয়ে আছে হিয়ার চোখের দিকে।দেখতে থাকে তার চশমা পড়ুয়া হিয়াপাখিকে।
মালিনী একটি চেয়ারে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।মাহমুদ সরদার তার মতো আলাদা স্থানে দাড়িয়ে আছে।রাজ এসে মাহমুদ সরদারের পাশে দাঁড়ালো।গলা খাকারি দিয়ে বলে,”বউয়ের অভিমান ভাঙাতে ব্যার্থ তুমি বাবা।”
“নিজের বউকে দেখো তুমি।আমার বউকে আমি সামলে নিবো।”
“এই বয়সে এসেও বউকে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারলে না।তোমাকে দেখে কি শিখবো বলোতো আমি?আমার বাচ্চারা বলবে তাদের দাদু হোপ ফর নাথিং।”
“তোমার বাচ্চাদের তোমার থেকে দশ হাত দূরে রাখবো।নাহলে অল্প বয়সে আমার নাতি নাতনী পেকে যাবে।”
“এমনি তোমরা বর বউ আমাকে আমার বউয়ের কাছে ঘেঁষতে দেওনা।কোনমতে বাচ্চা হলে তার কাছেও ঘেঁষতে দিবেনা।আসলে আমাকে তুমি জন্ম দিয়েছিলে কেনো বলতো বাবা।তোমার এসব অত্যাচার সহ্য করার জন্য?”
“না বাবা।আমাকে অত্যাচারে রাখতে জন্ম দিয়েছিলাম।যেটা এখন আমি ভুগছি।”
“সো সেড।এখন ভুগতে থাকো।”
মৌ এসে মায়ার সাথে গল্প করতে থাকে।একটু আগেই মৌ বমি করে এসেছে।এখন তার সময়টাই এমন যাবে। পিয়াশ এখন রাজের এসিস্ট্যান্ট কম মৌয়ের এসিস্ট্যান্ট বেশি।তারেক আশেপাশে তাকিয়ে সবকিছু দেখছে।হঠাৎ ফোনের শব্দ পেয়ে ওপেন করে দেখে।তাতে লেখা আছে,”মাই ডিয়ার ব্ল্যাক ডায়মন্ড। উফস তোমাকে আজকে ব্ল্যাক ড্রেসে হট লাগছে বেবী।একদম ব্ল্যাক চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলতে মন চাইছে।এমন লুকস না নিলেও পারতে আমার হবু বাবুদের আব্বু।”
ম্যাসেজটি দেখে তারেক তাকালো মকটেল কাউন্টারের দিকে।সেখানে তার ম্যাসেজ দেওয়া ব্যাক্তিটি মকটেল হাতে দাড়িয়ে আছে।সেও আজ নীল রঙের লেহেঙ্গা পরেছে।তারেক তাকাতেই সে তারেককে দেখিয়ে দিলো একটি ফ্লাইং কিস।সেই ব্যাক্তি আর কেউ না মিলি।মিলি তারেককে ভালোবেসেছে।ঠিক যেদিন মায়ার কোম্পানির উদ্বোধন হয়েছিলো সেদিনই এই কালো রঙের রূপের ছেলেটিকে নিজের মনে জায়গা করে নেয় মিলি।মিলি যেদিন তারেককে দেখেছে সেদিন থেকেই নিজের মধ্যে আলাদা ভালোলাগার অনুভূতি পেয়েছে। আস্তে আস্তে নিজের বাজে স্বভাব বদলাতে থাকে মিলি।তারেকের কোনো উত্তর সে আজ পর্যন্ত পায়নি।
কিন্তু তার ভাবনায় আছে তারেক একদিন না একদিন তার ভালোবাসায় ধরা দিবে।সবসময় ছেলেরা কেনো মেয়েদের পিছনে লেগে থাকবে।মেয়েরা কেনো তার ভালোবাসার পিছনে ছুটবে না?মিলি যখন কাউকে তার মন দিয়েছে তখন তাকে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে।মিলির বিশ্বাস সে তার ভালোবাসা অর্জন করবে।তারেককে ফ্লাইং কিস দেখিয়ে আবার একটি ম্যাসেজ দেয়।সেখানে লেখা থাকে,”একদম নিজেকে কালো বলে অবজ্ঞা করবে না।তোমার রূপের কালো রং আমার কাছে মন ছুঁয়ে নিয়েছে।তোমাকে কালো চেহারায় মানায় বেশি।ওসব ফর্সা ছেলে তো হাজার পাওয়া যায় কিন্তু কালো বর্ণের প্রেমিক পুরুষ খুব কম সংখ্যক মানুষ পায়।আমি সেই কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে লাকি হতে চাই।”
এই ম্যাসেজটি দেখে তারেকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।এক সময় ছিলো তার পরী যে তাকে পাওয়ার জন্য করেছিলো বাবা মায়ের মন জয়। আর এখন এই মিলি যে এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে তার মন পাওয়ার।কিন্তু সে তো পরীতেই আটকে আছে।যদিও আর কখনও পাবে না সে তার পরীকে।তার পরী যে হারিয়ে গেছে।ভাবতেই বুক ভার হয়ে আসে তারেকের।
সবার নাচগান শেষ। এখন রুদ্র মাইক হাতে নিয়ে আবার বলে ওঠে,”অনেক তো হলো ড্যান্স পারফরম্যান্স।এবার একটু গান দিয়ে অনুষ্ঠান মেতে উঠুক।আপনাদের সামনে গান গাইতে আসবে আমাদের ফ্যামিলির আরেক ইয়ং ম্যান যাকে আপনারা খুব কম দেখেন।সে তার কাজের আমাদের থেকে দূরেই থাকে।আমাদের মন্ত্রী মশাইয়ের একমাত্র মামাতো ভাই তার নাম। না নামটা আমি বলবো না আপনারা দেখে নিন তাকে।”
বলেই স্টেজ থেকে সরে গেলো রুদ্র।চারদিকে লাইট বন্ধ হয়ে যায়।সেই সাথে বাজতে থাকে গিটারের টুং টুং আওয়াজ।সবাই এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকে শব্দের বেগ কোথা থেকে আসছে।হঠাৎ গোল আকারে স্টেজেই লাইট জ্বলে উঠে।একজন যুবক উল্টো ঘুরে আছে।তার হাতে আছে একটি গিটার।গায়ে ব্ল্যাক কালারের ব্লেজার।গিটার বাজাতে বাজাতে যেই সবার দিকে ফিরে তাকায় ওমনি পায়ের নিচে ফাঁকা অনুভব করতে থাকে মায়া। দেড় বছর পর সেই ব্যাক্তিকে দেখে গায়ে কাঁপুনি উঠছে তার। আস্তে আস্তে এক পা দু পা করে পিছিয়ে যেতে নেয় মায়া।মৌ এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে।যুবকটি ঘুরেই তার চোখ মায়াতে সীমাবদ্ধ রাখে।ভয়ংকর চাহনি তার।গানের মাঝে বুঝিয়ে দেয় না পাওয়ার আকাঙ্খা।
যুবকটির গানের শেষ মাথায় এসে মায়া বিড়বিড় করে বলে,”বী বী বীর।”
মৌ অবাক হয়ে বলে,”কিন্তু ওকে তুমি মেরে ফেলেছিলে।”
“খুন করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওকে শুট করার পরপরই ওখানে ওর দলের লোকজন চলে আসে।তারপর ও সুস্থ হলেও মেন্টালি রিকভার হয় না।তাই ওকে দেশের বাইরে ট্রিটমেন্ট করতে নিয়ে যায়।কিন্তু ও দেশে কবে ব্যাক করলো?আমার কাছে তো কোনো নিউজ আসেনি। আর ও রাজের মামাতো ভাই মানে কি?আমার থেকে মন্ত্রী মশাইকে আলাদা করে দিবে ও।ও যদি এখনই সবাইকে সবকিছু বলে দেয়।মন্ত্রী মশাই তো আমাকে দূরে সরিয়ে দিবে।”
“এমন কিছুই হবে না আপু।সবকিছু ঠিক হবে।ডোন্ট ওরি।”
বীর গান শেষ করে এগিয়ে আসে।মায়ার কাছে মনে হতে থাকে বীর তার কাছেই ছুটে আসছে।কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে দেখা যাবে বীর তার পরিবারের দিকে এগিয়ে আসছে।রুদ্র মাইক হাতে নিয়ে বলে,”তাহলে দেখলেন তো সবাই।আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে দ্যা হ্যান্ডসাম মাফিয়া আরহাম খান বীর।”
সবাই বীরকে দেখে হাততালি দেয়।এমনিতেও সবাই রাজ আর রুদ্রের জন্য ব্যাকুল।কিন্তু আজ তো রাজ মিঙেল হয়েছে।এখন সিঙ্গেল বলতে বীর ও রাজকে দেখে সবাই আবার ক্রাশ খেলো।আজকে মেয়েদের চাহনি শুধু বীর আর রুদ্রের দিকে।জারা এতক্ষণ মকটেল নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।বীরকে দেখার সাথে সাথে জারার হাত থেকে মকটেল পড়ে যায়।বাম হাত দিয়ে নিজের গায়ে বাতাস করতে করতে বলে,”হি ইজ সো হট।”
পার্টিতে থাকা মেয়েরা ত নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে শুরু করেছে।কে কাকে নিবে।একজন বলছে তাদের মনে রুদ্র জায়গা করে নিয়েছে তো আরেকজন বলছে তাদের মনে বীর জায়গা করে নিয়েছে।আবার তারা রাজকে দেখেও ক্রাশ খেয়ে বসেছিলো।
বীর এসেই জড়িয়ে ধরে রাজকে।তারপর বলে,”কংগ্রাচুলেশন ভাই।আমাকে ভুলেই গেছিস।দাওয়াত না দিয়েই বিয়ে করে ফেললি।”
“আরে ভাই হঠাৎ বিয়ে।অনেক কাহিনী। যাই হোক তোর শরীরের অবস্থা কি। তোর তো অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিলো।”
বীর এক পলক তাকালো মায়ার দিকে।বীরের কণ্ঠ মোটা।ভয়ংকর চাহনি তার।মায়ার দিকে তাকিয়ে বীর বলে,”নিজের জনেমানকে পেতে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি ভাই।এসব ক্ষুদ্র অ্যাকসিডেন্ট আমার কিচ্ছু করতে পারবে না।”
রুদ্র এগিয়ে আসে বীরের দিকে। বীরকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তোমার জানেমানকে পাবে কি না জানি না।তবে তোমাকে সুস্থ দেখে আমরা সবাই খুশি ব্রো।”
বীর ডেভিল হেসে তাকালো মায়ার দিকে।মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”হাই, আই এম বীর। আরহাম খান বীর।”
মায়া ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাপতে থাকে।বীরের হাতে হাত মেলানোর সাহস সে পাচ্ছে না। বীর এখনও হাত বাড়িয়ে আছে মায়ার দিকে।মায়া ধীরে ধীরে হাত মেলাতে যাবে ওমনি রাজ খোপ করে ধরে নেয় বীরের হাত।বীরের চোখের দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,”আমার মায়াবতীর হাত ধরা তো দূরের কথা তার আশেপাশে কাউকে আমি সহ্য করতে পারবো না।দূর থেকে সাক্ষাৎ কর আমার একমাত্র বউয়ের সাথে।”
“আর যদি তোর বউকে নিয়ে উড়াল দেই?”
“তাহলে তোর অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে উড়ে যাবে।”
“এতটা ভালোবাসা?”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩০
“গভীর থেকে গভীরতর ভালোবাসা আমার আর আমার মায়াবতীর মাঝে।এই ভালোবাসায় ক্ষুদ্র ধূলিকণা সহ্য করবো না আমি।সেখানে কেউ আমার মায়াবতীকে স্পর্শ করবে এটা কিভাবে মেনে নেই?”
রাজকে রক্তাক্ত চাহনি দিতে দেখে অবাক হলো বীর।তার ভাইও তারমানে এই মেয়ের প্রতি গভীরভাবে ফেসে গেছে।কিন্তু তার তো তার জানেমানকে চাইই চাই।যে করেই হোক সে এবার মায়াকে নিজের করেই ছাড়বে।