মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৪
ইশরাত জাহান
একের পর একেক গ্লাস বিয়ার নিয়েই চলেছে বীর।সামনে বড় করে টাঙানো হাস্যোজ্বল মায়ার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে বীর।মায়াকে সরাসরি স্পর্শ না করলেও মায়ার ছবিতে হাত বুলিয়ে নিচ্ছে সে।মায়ার চোখদুটো আসলেই মায়াবী।সেদিকে তাকিয়ে বীর বলে,”এই মায়া শুধু আমার হবে।তুমি যতই ওই রাজের সাথে রাত্রিযাপন করো।আমি তোমাকে আমার করে ছাড়বো।তুমি আমার ভালোবাসার নারী।যে নারীকে নিজের করে না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবো না আমি।ওই রাজের থেকে এনে আমি তোমাকে আমার এই আলিশান বাড়িতে সুখে রাখবো।আমি তোমাকে রাজের থেকেও বেশি সুখ দিবো।”
বীর অনুভব করে তার কাঁধে কারও হাত।পিছনে তাকিয়ে দেখে মায়া।হাসিখুশি মুখে দাঁড়িয়ে আছে সে।বীর খুব খুশি হয় মায়াকে দেখে।মায়াকে জড়িয়ে ধরতে যাবে ঠিক তখনই বীর থেমে যায়। বলে,”নাহ এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরবো না আমি।তোমার শরীরে স্পর্শ করার অধিকার তুমি কাউকে দেওনা।সেখানে আগে তোমাকে আমার হালাল করে নিবো তারপর স্পর্শ করবো তোমাকে।”
মায়া বীরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”তাই?কিন্তু আমি তো আপনাকে সেই অধিকার দিয়ে দিচ্ছি মিস্টার খান।আপনি আমাকে আপনার আপন করে নিতে পারবেন।”
“সত্যি বলছো জানেমান?বিয়ে করবে আমায়?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মায়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দেয়।এটা দেখে বীর বলে,”একবার আমি তোমাকে পাই।দেখবে তোমার সেই আগের বীর হয়ে উঠেছি।তোমার সব ইচ্ছাকে আমি পূর্ণ করবো জানেমান।তোমার ইচ্ছাকে যে আমি নিজে সম্মান করি।তোমার ইচ্ছা পূরণের হাত ধরতে যেয়েই তোমাকে আমার করতে করার বাসনা জেগেছিলো মনে।”
মায়া হাসতে থাকে।বীর সেদিকে তাকিয়ে বলে,”এই হাসি দেখার জন্য আমি কতকিছু করলাম। আর এখন সেই হাসি আমি দেখতে পাচ্ছি।ভালোবাসি আমার জানেমানের হাসিকে।”
মায়া এবার জোরে জোরে হাসতে থাকে।বীর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।হঠাৎ বীর পিছন থেকে হাসির শব্দ পায়।পিছনে তাকিয়ে দেখে এখানে মায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে আবার অনুভব করে তার সামনে পিছনে দুই দিকে মায়া।এভাবে করতে করতে সে তার চারপাশে খালি মায়াকে অনুভব করছে। বীর বুঝতে পারলো এগুলো তার ভ্রম।মায়া আসেনি তার কাছে।প্রতি নিয়ত নেশার ফলে সে তার নিকট মায়াকে অনুভব করে।যেটা এখনও করে যাচ্ছে।মায়ার জন্য বীর উন্মাদ হয়ে উঠেছে।
বীরের চোখ লাল হয়ে আসে।চোখ ভিজে এসেছে বীরের।সে সহ্য করতে পারছে না মায়াকে অন্য পুরুষের সাথে।সে যতই তার ভাই হোক।বীরের সাথেই পড়াশোনা করেছে রাজ।বীর মাফিয়া হতে চেয়েছিলো।যেটা সে হতেও পেরেছে।তাই রাজের আগেই বাংলাদেশে চলে আসে। আর তখনই দেখা হয় মায়ার সাথে।আঠারো বছর বয়সের এক কন্যাকে দেখে প্রেমে পরে যায় বীর।বীর জানতো না মায়া সরদার বাড়ির মেয়ে সরদার বাড়ির বউ। আস্তে আস্তে মায়ার সাথে মিশে জানতে পারে।বীর নিজেও রাজের মতো।লোকের বিপদে আপদে অনেক সহায়তা করে সে।কোনো অসৎ ব্যাক্তিকে সহ্য করতে পারেনা বীর।কিন্তু মায়ার প্রেমে পরে আজ বীরও অসৎ উপায় দেখছে।ভাঙতে চায় রাজ ও মায়ার সংসার।
সরদার বাড়িতে সবাই একসাথে বসে আছে।সোনালী মুখে কাপড় দিয়ে কান্না করছে।মালিনী সামাল দিচ্ছে তাকে।মিলি সিয়া ও হিয়া ঘরে চলে গেছে।মাহমুদ সরদার বলেছে তাদের ভিতরে যেতে।রাজ ও রুদ্র একসাথে বসে আছে সোফায়।তাদের সামনের সোফায় মাথা নত করে বসে আছে মোহন সরদার।উপর থেকে মায়া তার ঘরের সামনে দাড়িয়ে সবকিছু দেখতে থাকে।আসলে এটা কিভাবে হলো মায়া বুঝতে পারছে না।এটা তো মায়ার প্ল্যানে ছিলো না।মাহমুদ সরদার কি বলবেন কিছু বুঝতে পারছে না।তাদের সামনে টি টেবিলে আছে কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ।যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মোহন সরদার ও তার ভিন্ন ভিন্ন গার্ল ফ্রেন্ডের এক সাথে কাটানো কিছু নষ্ট মুহূর্ত।রাজ ছবিগুলো হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।এতক্ষণ চুপ থাকলেও রাজের এই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবি দেখা দেখে মায়া নিচে এসে ছবিগুলো কেরে নেয়।রাজ হা হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।মায়াকে বলে,”কি হলো ছবিগুলো নিলে কেনো?”
মায়া রাগী দৃষ্টি দিয়ে বলে,”মেয়েদের খোলামেলা ছবি এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার কি আছে?চোখ গেলে দিবো তোমার।”
“আরে আমি তো দেখছিলাম ছবিগুলো আসল নাকি নকল।এই বুড়োর কপালে আদৌ এত হট মেয়ে জুটবে বলে তো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
রুদ্র লাফ দিয়ে ওঠে।রাজের দিকে ফিরে বলে,”একচুয়ালি ব্রো।আমিও সেম কথাটাই ভাবছিলাম।এরা যে হট।আমরা এই জেনারেশনে এসে পেলাম না।আমাদের বাবারা পেয়ে গেলো।যুগটা সুগার ড্যাডিতে ভরে গেছে।”
“সবই টাকার খেল ভাই।”
রুদ্র বলে ওঠে,”হুমমম ঠিক বলেছো তুমি।টাকার খেলা এখানে। ড্যাড আমাকে কিছু টাকা দেও তো।”
মোহন সরদার রেগে গেলেন ছেলের উপর।চিৎকার করে বলেন,”শাট আপ।বাবাকে নিয়ে এসব বলতে লজ্জা করে না?”
“লে হালুয়া!তুমি করবে লীলাখেলা আমি বললে দোষ?”
মায়া টিভি অন করে।সেখানে ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে মোহন সরদার ও তার অল্প বয়সী গার্ল ফ্রেন্ডের ছবি।কিছুটা ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে।সোনালী সেগুলো দেখে জোরে কান্না করতে থাকে।মায়া কানে হাত দিয়ে বলে,”ওহ শাট আপ কাকী শাশুমা।আপনার বর প্রেম করে ধরা পড়েছে এখনও মারা যায়নি।এভাবে মরা কান্না করার কিছু নেই।”
মাহমুদ সরদার এবার গলা খাকারি দিয়ে বলেন,”বুঝতে পারছি না কি করবো?এই সমস্যার সমাধান কি?”
রাজ সোফায় হেলান দিয়ে বলে,”কি আর করার! কাকাইয়ের সাথে ওদের বিয়ে দিয়ে দেও।”
“পাগল হয়ে গেছো তুমি?”
বলে ওঠে মোহন সরদার।
“তোমারই তো লাভ কাকাই।কমছে কম পাঁচ ছয়টা এক্সট্রা সুন্দরী বউ পেয়ে যাবে।বাড়িতে বসে যত খুশি হট কাকি গুলো নিয়ে ফুর্তি করতে পারবে।”
রাজ যে তাকে অপমান করছে এটা বুঝতে সময় লাগেনি মোহন সরদারের।পাপ ছাড়েনা বাপকে।সেখানে মোহন সরদারের পাপ কিভাবে ছেড়ে দেয়?মোহন সরদারের আজ মাথা নিচু হয়ে গেলো।এই সব তার কর্মেল ফল। আর কি কিছু বাকি আছে তার?ভাবতে থাকে মোহন সরদার।এখন তার মনে হচ্ছে এগুলো না করলেও পারতো।
মায়ার মুখে ডেভিল হাসি।সে না চাইতেও মোহন সরদার আজ ভাইরাল।আজকে মিডিয়াতে তাকে নিয়ে গালমন্দ চলছে।শুধু মিডিয়া না তাদের বাড়ির বাইরেও আজ লোকজনের ভিড়।দারোয়ান সামাল দিতে পারছে না।বাইরে থেকে চেঁচামেচি ঘরে অব্দি এসেছে।রাজ এবার বাইরে যেতে নিলে মাহমুদ সরদার বলেন,”কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“ওহ কাম অন বাবা।ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখার মতো কাজ তোমার ভাই করেছে আমি না যে ঘরে বসে থাকবো।মন্ত্রী হয়ে দায়িত্ত্ব পালন করতে হবে।একজনের জন্য আমরা সবাই তো আর মুখ লুকিয়ে থাকতে পারিনা।আমার পুরো পরিবার বদনাম হবে এটা তো আমি মেনে নিতে পারবো না।”
বলেই চলে গেলো রাজ।মায়াও তার পিছনে গেলো।রাজ বাধা দিলো না।মায়ার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফিসফিস করে রাজ বলে,”এগুলো এভাবে ভাইরাল করে পুরো সরদার বংশের অপমান না করলেও পারতে মায়াবতী।”
মায়া অবাক হয়ে বলে,”হোয়াট রাবিশ।আমি কেনো এভাবে ভাইরাল করবো?আমি এসবের কিছুই জানি না।”
রাজ একটু অবাক হলো।তাহলে কে করলো মোহন সরদারকে ভাইরাল?এমন কে আছে যে চায় মোহন সরদার ডাউন হোক?
অন্ধকার রুমে বসে একজন এই নিউজ দেখছে।তার মুখে ফুটে উঠেছে বিজয়ের হাসি।হাসতে হাসতে সে বলে,”এটা তো জাস্ট শুরু। আস্তে আস্তে মোহন সরদার ও সোনালী তাদের কর্মের ফল ভুগতে থাকবে।দেখি কে কতকিছু করে আটকায়?”
বলেই সোনালী ও মোহন সরদারের ছবির উপর ছুরি ছুড়ে মারে। ছুরিগুলো সোজা মোহন সরদার ও সোনালীর ছবির উপরে এসে লেগে যায়।অতঃপর যুবকটি আবারও অট্টহাসিতে মেতে ওঠে।
বাইরে এসে মিডিয়ার সম্মুখীন হলো রাজ ও মায়া।মায়ারাজকে দেখা মাত্রই সাংবাদিক মাইক নিয়ে রেডি হয়।প্রশ্ন করে,”আপনার পরিবারের বয়স্ক একজনের এভাবে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।এগুলো সম্পর্কে আপনাদের বক্তব্য কি?”
রাজ কিছুক্ষণ চুপ থাকে।সাংবাদিক আরো প্রশ্ন করে।সবাই প্রশ্ন করার মাঝে হঠাৎ রাজ পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে থাকে।মায়া তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রাজের চোখে পানি নেই।রাজ অভিনয় করছে।সানগ্লাস নিয়ে চোখে দিয়ে বলে,”আসলে পুরুষ মানুষ কাঁদতে নেই।তাই সানগ্লাস দিয়ে কান্না ঢেকে রাখলাম।তো কি প্রশ্ন করছিলেন?আমার কাকা পরকীয়া করে।”
সাংবাদিক বলে,”এক্সাক্টলি স্যার।নিউজে তো এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।”
“নিউজে কি আমার কাকাকে দেখা যাচ্ছে?”
“জি না স্যার।ওখানে মুখ ঝাপসা রাখা।”
“ঝাপসা মুখ দেখে বুঝে নিলেন ওটা আমার কাকা।বাবাও তো হতে পারত।”
লাইভ ভিডিও চলছিলো।রাজ যে তার বাবাকে নিয়ে এমন বলবে এটা কল্পনার বাইরে ছিলো।বিষম উঠে গেলো মাহমুদ সরদারের।বিড়বিড় করে বলে,”ছেলে তার কাকাকে বাঁচাতে গিয়ে ভোলাভালা বাবাকে ফাসালো।”
সাংবাদিক কিছু বুঝতে পারে না।তাই তারা বলে,”কিছু বুঝলাম না স্যার।”
“আজকাল এডিটের দিক থেকে মানুষ অনেক বেশি উন্নত।বিশেষ করে AI অ্যাপস দিয়ে এসব খুব কমন। কার না কার বডির সাথে আমার নিরীহ কাকার মুখ মিলিয়ে দিয়েছে এটা আপনারা বিশ্বাস করলেন?ওসব সুন্দরী মেয়ে আমার কাকার ভাগ্যে থাকার মতো বয়স কি এখন কাকার আছে? ”
“কিন্তু স্যার আপনাদের সাথে এমন কে করবে?”
“লোকের আবার শত্রুর অভাব থাকে?বিশেষ করে আমাদের।আমার কাকার কোম্পানিতে আগুল লেগেছে।আপনারা তো দেখেছেন।ধরে নেন সেই শত্রু।”
মায়া অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে রাজ মিটমিট হাসতে থাকে।রাজ যে জানে মায়া আগুন লাগিয়েছে কোম্পানিতে।কিন্তু ছবিগুলো মায়া ভাইরাল করেনি এটা মায়ার চোখমুখ দেখেই বুঝেছে রাজ।কিন্তু এখন রাজ দুইয়ে দুইয়ে চার করে তার পরিবারকে বাঁচাবে।নাহলে রাজের বাবা মা বোনেরা ফেসে যাবে।একজনের জন্য সবার ক্যারিরায় নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।এই হিডেন শত্রু কে এটা বের করতে হবে।
সাংবাদিক রাজের উক্তিগুলো বিশ্বাস করলো।কারণ ছবিতে স্পষ্ট কিছু দেখা যাচ্ছে না। আর এই যুগে AI দ্বারা সবকিছু সম্ভব।আবার অনেকে বিশ্বাস না করলেও চুপ থাকলো।এই শাহমীর রাজ পাওয়ারফুল লোক।এদের কথার জালে ফাঁসানো সম্ভব না।তাই চুপচাপ চলে গেলো।মেইন অফিসে ফোন করে রাজ সবাইকে এই নিউজ বন্ধ করতে বলে দেয়।সবাই রাজের কথাতে আর এটা নিয়ে মাতামাতি করে না।সবকিছু এখন নরমাল।
রাজ চলে গেছে তার কাজে।মায়া কল দিলো তার পার্সোনাল সেক্রেটারীকে। যার দ্বারা মোহন সরদারের পিছনে স্পাই লাগিয়েছিলো।ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই মায়া বলে,”কে করেছে এই কাজ?”
“ম্যাম আমি জানি না।কিন্তু আমার মনে হয় আরেক যে স্পাই লেগে আছে মোহন সরদারের পিছনে সে করেছে এই কাজ।”
“কে সে তার ফুল ডিটেইলস বের করো।”
“ওকে ম্যাম।”
কল কাটতেই মায়ার মুখে হাসির ঝলক দেখা দেয়।যেই করুক এই কাজ।করেছে তো মায়ার উপকার।কিন্তু এখনও তার আরো কিছু কাজ বাকি আছে।যেগুলো সে এখন আদায় করে নিবে।
“আর ইউ হ্যাপি জানেমান?”
বীরের কণ্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকায় মায়া।বীর দাড়িয়ে আছে দরজার সাথে হেলান দিয়ে।মায়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,”মেনারলেস হয়ে গেছেন আপনি। কারো পারমিশন ছাড়া তার রুমে আসতে নেই এটা জানেন না?”
“আমি যার তার রুমে যাইও না।তবে হ্যাঁ যেখানে আমার সুখ লুকিয়ে আছে আমি সেখানে আসতে পারমিশন নিবো না।সোজা ছিনিয়ে নিয়ে আসবো।”
“আপনাকে আমি লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমার জীবন থেকে সরে জান।”
“তোমার জীবনের এক অংশ আমি।আমার মনে তোমার জন্য স্থান করে রেখেছি।কি করে সরে যেতে বলো তুমি?”
“কোনো সম্পর্কে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে এসে কখনও সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না।”
“তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে আমি থাকতেও চাই না।সোজা তোমাকে আমার করে রাখতে চাই।”
“কখনও সম্ভব না।”
“আমি সম্ভব করে ছাড়বো।এটা এই বীরের ভালোবাসার জোর।”
“আমার মন্ত্রী মশাই থাকতে এটা সম্ভব না।আমি আর মন্ত্রী মশাই কেউ এই সম্পর্কে তৃতীয় ব্যাক্তির স্থান গড়ার সুযোগ দিবো না।”
“তোমার মন্ত্রী মশাই কি জানে তুমি ছলনাময়ী?তোমার মন্ত্রী মশাই কি জানে তুমি অভিনয় করছো?তোমার মন্ত্রী মশাই কি জানে তুমি তার কাছের মানুষকে দমন করতে এসেছো?তোমার মন্ত্রী মশাই জানে তুমি একজন নিরীহ ব্যাক্তিকে খুন করেছো?তোমার মন্ত্রী মশাই কি এটা জানে তুমি সে যে নিরপরাধ ব্যাক্তিকে নিজের স্বার্থে শেষ করে দিয়েছো?আচ্ছা প্রথম কথাগুলো বাদ দিলাম।কিন্তু শেষের দুইটা জিনিস জানলে থাকবে তো তোমার মন্ত্রী মশাই তোমার হয়ে?আমার কাছে যে এগুলোর জলজ্যান্ত প্রমাণ আছে জানেমান।সারা দুনিয়া জানে তুমি শুধু একটাই উদ্দেশ্য সফল করতে চাইছো।কিন্তু সারা দুনিয়া এটা জানেনা যে তুমি এমন একজন মানুষ যে নিজের স্বার্থে…?”
আর কিছু বলতে পারলো না বীর।মায়া ফুলদানি ছুড়ে মারে।বীরের গায়ে লাগেনি।বীর ওটা কেস করে ধরে নেয়।তারপর বলে,”তোমার মন্ত্রী মশাইয়ের জীবনে তুমি হিরোইন হয়ে এন্ট্রি নিলেও তুমি যে আসলে একজন ভিলেন এটা কেউ জানে না।”
মায়া পিছিয়ে যায়।মনে পড়ে যায় তার পুরনো কথা।সবকিছু মুছে ফেললেও এই বীরের জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না।অথচ এই বীর তার সমস্ত কর্মের সহায়ক ছিলো।
মায়ার দিকে তাকিয়ে বীর বলে,”আমি তোমার এই ভিলেন রূপকে গ্রহণ করতে রাজি।শুধু ফিরে আসো আমার জীবনে।তোমার সবকিছু লুকায়িত রেখে তোমাকে আমার আপন করে সুখ দিবো।এই হৃদয়ে যে শুধু তোমার বসবাস জানেমান।”
মায়া কোন কথা বলে না।চুপ করে আছে সে।এখন কিছু বলতেও চায় না সে।বীর তার দুর্বল জায়গা সম্পর্কে অবগত।মায়া যেমন রাজকে পেতে হিংস্র রূপ ধারণ করতে পারে বীর তেমন মায়াকে পেতে হিংস্র রূপ ধারণ করে।
বীর মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে নীরব দৃষ্টিতে।মায়াকে হাসিখুশি দেখতে সে নিজেও চায়।তার জন্যই তো সে এতকিছু করলো।কিন্তু বিনিময়ে তো সে মায়াকে পেতে চায়।বীর অসহায় দৃষ্টি দিয়ে বলে,”তোমাকে পেতে আমি আমার পরিবারকেও অসহায় করে দিতে রাজি হয়েছি।কিন্তু তুমি আমাকে বারবার তিরষ্কার করে দিচ্ছ। কার জন্য এতকিছু করছো?দিন শেষে সে যখন জানতে পারবে তার আপন ছোট ভাইকে তুমি খুন করেছো তখন সে মেনে নিবে তো তোমায়?”
মায়া দুর্বল হয়ে উঠলো।মাথার ভিতর চিনচিন করছে তার।মেডিসিন নিতে হবে।বীর এক পা দু পা এগিয়ে এসে মায়াকে ক্রস করে যায় মেডিসিন বক্সের দিকে।তারপর মায়ার মেডিসিন বের করে মায়ার দিকে এক গ্লাস পানি ও মেডিসিন এগিয়ে দেয়।মায়া মেডিসিন খেয়ে নেয়।এখন একটু সুস্থ লাগছে তার।
বীর মায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।বুকের উপর থেকে শার্টের দুটো বোতাম খুলে দেখিয়ে দিলো মায়ার দেওয়া জখম।গুলি করাতে বীরের বুকে গোল ছিদ্র এখনও বোঝা যায়।সেখানে আঙুল দিয়ে বীর বলে,”এই জখম আমি কেনো সারাইনি জানো?কারণ এটা তোমার দেওয়া উপহার।যদিও ঘৃণা মিশ্রিত উপহার দিয়েছো তুমি আমাকে।কিন্তু আমি এটাকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছি।”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৩
মায়া কিছু বলে না।সে জানে বীর তার জন্য উন্মাদ।কিন্তু মায়া রাজের জন্য উন্মাদ।এটা সত্যি রাজকে নিজের মন না দিলে আজ মায়া এই বীরের প্রেমেই মত্ত থাকতো।বীর তার জন্য নিঃস্বার্থ হয়ে যেটা করেছে এটা কোনো ব্যাক্তি করতে পারতো না।বীর না থাকলে মায়া হয়তো আজ এতটাও উন্নত থাকতো না।শাহানা পারভীনও বেচে থাকতো না।বীর মায়ার দিকে দুর্বল চাহনি দিয়ে বলে,”যত পারো আমাকে জখম দিয়ে জর্জরিত করে দেও।কিন্তু তুমি আমার হয়ে যাও।”