মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৬
ইশরাত জাহান
অতীত(মায়াবীর)
সকালবেলা হাসি এসে মৌকে নিয়ে হসপিটালে আসে।মৌ কান্নাকাটি শুরু করেছে।তাই বাধ্য হয়ে মায়ার কাছে আনা হয় তাকে।মায়া কিছুক্ষণ মৌকে বুঝিয়ে বলে সবকিছু।তারপর মৌ বাধ্য মেয়ের মত চলে যায়।বীর সবকিছু দেখতে থাকে।
সবাই চলে যাওয়ার পর বীর জিজ্ঞাসা করে,”ওই রাতে কে আন্টিকে মেরেছে?”
“আমি জানি না।আমি দেখিনি তাদের।তবে একজনের মুখ দেখেছি।”
“আমাকে বলতে পারবে কে সে?”
“নাহ,কারণ আমি তো ওদের কাউকে চিনি না।এই প্রথম দেখলাম।”
“কেনো মারতে চায় জানো?”
“পরিপূর্ণ কিছু জানি না।তবে আমার মা কাদের নারী পাচার করতে দেখে।ওদেরকে বাঁচাতে সক্ষম হয়।কিন্তু মা নিজেকে বাঁচাতে পারে না।ওদের কি কি প্রমাণ যেনো মায়ের কাছে থেকে যায়।”
“কোথায় সেগুলো?”
“আমি তাও জানি না।মা আমাকে ওগুলো নিয়ে কিছু বলেনি।”
“আন্টিকে তো গাড়িতে ধরে নিয়ে এসেছিলে।এমন কিছু পেয়েছো তার শরীরে।(মায়ার চাহনিতে অপ্রস্তুত হয়ে) মানে প্রমাণ স্বরূপ কিছু থাকলে তার শরীরে লোকানোর অপশন আছে নাহলে আসামি সব নিয়ে গেছে।”
“কাল তো মায়ের শরীরে এমন কিছু দেখিনি।”
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো দুজনে।বীরের লোকজন ঔষধ আনা নেওয়া করছে।রক্তের ব্যাবস্থা করে রেখেছে বীর।যদি আরও লাগে তাহলে রক্ত আনা যাবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এখন সকাল দশটা।মায়া না খেয়ে আছে।সারারাত জেগে ছিলো।বীর অনেক কিছুই খেয়েছে।বেশি বেশি ফল খেয়েছে সে।শাহানা পারভীনের এখন অবস্থা আগের থেকে ভালো।ডাক্তার বলেছে,”আপাতত ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।উপর থেকে সবকিছু নরমাল।তবে তার শরীরের অবস্থা এখন বোঝা যাবে না।জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।আরো কিছু পরীক্ষা করা বাকি।”
মায়া এবার শান্তির নিঃশ্বাস নিলো।মায়াকে উদ্দেশ্য করে বীর বলে,”পাশেই ক্যান্টিন আছে।চলো কিছু খেয়ে আসা যাক।আমার লোকেরা আছে এখানে।না খেয়ে থাকলে মায়ের সেবা করতে পারবে না।”
মায়া সম্মতি দিয়ে চলে যায় বীরের সাথে।খাবার অর্ডার করা হয়।খাবার খাওয়ার মাঝে মায়ার থেকে সবকিছু শুনলো বীর।মায়া সবকিছু বললেও এটা বলেনি তার বাবার নাম মোহন সরদার। আর রাজের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।এসবের সাথে তো আর শাহানা পারভীন জড়িত না।তাই মায়া ওর মায়ের সাথে হওয়া কথাগুলো বললো।সবকিছু শুনে বীর বলে,”তোমরা আপাতত ডেঞ্জার পজিশনে আছো।আমার মনে হয় আন্টিকে এখন আড়াল করে রাখা উচিত। আর শত্রুদের খুঁজে বের করা উচিত।”
“কিন্তু আমি তো চিনি না কারা এই লোকজন। আর আমি কিভাবে বের করবো তাদের?সব থেকে বড় কথা আমি মাকে আড়াল করে রাখবো কোথায়?ঢাকার বাইরে নিয়ে গেলেও চিকিৎসার জন্য মাকে কোথায় রাখবো?”
বীর কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”আমার বাড়িতে থাকবে তোমরা।আণ্টি আমার বাড়িতে সেফ থাকবে।আমি এখানে একা থাকি।বাবা মা বিদেশে আছেন। আত্মীয় স্বজন আমার বাড়িতে আসেন না।কারণ আমি একা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করি।আমি মন চাইলে তাদের সাথে দেখা করি মন না চাইলে দেখা করি না।এক কথায় আমি গ্যারান্টি দিতে পারি আণ্টি আর তুমি আমার হেফাজতে সুরক্ষিত থাকবে। আর আন্টিকে যারা মেরে ফেলতে চেয়েছিলো তাদের বের করার দায়িত্ব আমিও নিলাম।তোমাকে আমি সাহায্য করবো।এই বীর থাকতে কোনো চিন্তা নেই তোমার।”
মায়া বীরের প্রস্তাবে প্রথমে রাজী হয় না।কিন্তু পরে ভেবে দেখলো তাকে এবং তার মাকে রাতের আধারে একা না রেখে এই বীর বাঁচিয়েছিলো।বীর চাইলে রাতেই মায়ার ক্ষতি করে দিতে পারতো।কিন্তু না উল্টো হসপিটালে এনে এই বীর তার মাকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছে।কোনো স্বার্থ ছাড়া একমাত্র বীর সেই যে মায়াকে সাহায্য করছে।বীর না থাকলে শাহানা পারভীনকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।তাই মায়া রাজি হয়ে যায় বীরের কথায়।
ম্যাচে এসে মায়া ও মৌয়ের সমস্ত জিনিস পত্র গোছাতে থাকে মায়া।রাতে দেওয়াল টপকে গেছিলো।এখন আবার এসেছে তো একজন মাফিয়ার সাথে।দেশের প্রায় মানুষ চিনে বীরকে।মায়ার রুমের পাশের একটি মেয়ে এসে মায়াকে খোঁচাতে থাকে।সে মায়াকে রাতে পালিয়ে যেতে দেখেছিলো। যেই মায়াকে নিয়ে ম্যাচের মালিক সুনাম করে তার এমন দৃশ্য দেখে মেয়েটি সুযোগ পেলো কিছু শুনানোর।মায়াকে খুব বাজে ভাবে বলে,”কাল সারারাত তো এখানে ছিলে না।রাত ভরে বুঝি ওই ছেলেটার সাথে ইনজয় করছিলে?বড়লোক ছেলে পেয়ে তোমরা মেয়েরা এত ফুর্তি করতে পারো?”
মায়া শুনেও না শোনার মতো করে থাকে।এমনিতেই রাতে ঘুম হয়নি তার।তার উপর মায়ের উপর হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়ার নেশা জেগেছে।মাথা ঠিক নেই মায়ার।হুট করে অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে।মায়া চুপ করে কাজ করছে।মেয়েটি আবার বলে ওঠে,”তোমার তো বাবা নেই। ম্যাচের মালিক বললো তোমরা নাকি কোটিপতি।বাবা না থাকার পরও এই রুমটা একা একা মাসে ভাড়া দিয়ে থাকো।নিজেদের মতো আলাদা খাবার কিনে খাও।আমরা যা খাই তা নাকি তোমাদের হজম হয় না।এতগুলো টাকা কোথা থেকে আসে?এই আশিক দিয়ে যায় বুঝি?”
রক্তচক্ষু নিয়ে ঘুরে তাকায় মায়া।মায়া এবার মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাই না।”
মেয়েটির মুখে বিদ্রুপের হাসি।মেয়েটি আবার বলে,”বাবা!মুখের বুলি ফুটেছে দেখছি।ওসব রঙ্গলীলা করার সময় মনে থাকে না?লোকে কি বলে জানো?বলে তুমি আর তোমার মা সব এক।তোমার মা কি এমন করে যে আমাদেরকে বলো না আবার মাসে মাসে এত টাকা উরাও?”
মায়া আশেপাশে মেয়েদের সাথে মিশে না।মৌ আর মায়া নিজেদের মতো চুপচাপ পড়াশোনা করে আর নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করে।শাহানা পারভীন মাঝে মাঝে আসতেন। ম্যাচের খাবার মায়া ও মৌ খেতো না।শাহানা পারভীন তাদের আলাদা ব্যাবস্থা করে দেয়।মায়া ম্যাচে নিজের মতো স্টোভ নিয়ে রান্না করতো।এইজন্য সন্দেহ হতেই পারে কিন্তু তাই বলে মাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে?এবার মায়া চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”আমাকে নিয়ে যা খুশি বলো আমি সহ্য করবো।কিন্তু আমার মাকে নিয়ে একটা বাজে কথা বললে তোমার জিহ্বা আমি কেটে দিবো।”
মেয়েটিও থেমে থাকেনি।সে তেজ দেখিয়ে আবার বলে ওঠে,”চোরের মায়ের বড় গলা।তোমার মা যে কতটা নোংরা এটা লোকে লোকে বলে বেড়ায়।তুমিও হয়েছো তার মতো।সারারাত ফুর্তি করে এসে আবার তর্ক করো।তোমার মা নিজেও যেমন তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেও তেমন।কুশিক্ষা পেয়েছো।তাইতো মনে হয় তোমার বাবা তোমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করেছে।”
আর কিছু বলতে পারলো না মেয়েটি।মায়া তার সর্ব শক্তি দিয়ে মেয়েটির গলা টিপে ধরে।মায়া এতটাই শক্তি প্রয়োগ করে ধরেছে যে মেয়েটি ছাড়াতে পারছে না মায়ার হাত।মায়ার চোখগুলো বড় বড় করে রাগে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।তার মাকে নোংরা বলেছে।তার পবিত্র মাকে অপবিত্র বানিয়ে দিয়েছে।এমনিতেই এখন তার মা হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আর এই মেয়ে তার মাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে।গলা টিপে ধরাতে মেয়েটির জিহ্বা বেরিয়ে আসে।মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা। ছট ফট করতে থাকে সে।মায়া এবার তেজী সুরে বলে,”বলেছিলাম না আমার মাকে নিয়ে কিছু বলবি না।মায়া চুপ থাকে এর মানে এই না যে মায়া অন্যায় মেনে নেয়।আমার মাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার ফল ভোগ এবার।”
মায়া যে কি করছে মায়া নিজেও জানে না।রাগে জেদে জ্ঞান শূন্য হয়ে সে এই কাজটি করছে।প্রায় বিশ মিনিট এমন চেপে ধরে ছিলো মায়া।এদিকে মায়ার দেরি হচ্ছে কেনো বুঝে উঠতে পারছে না বীর।মায়া বলেছিলো শুধু জামাকাপড় আর বই নিয়ে আসবে।বাকি জিনিস গাড়িতে করে নিলেও চলবে।মায়ার দেরি হতে দেখে বীর উপরে ওঠে।মেয়েদের ম্যাচে ঢুকছে বীর।দারোয়ান বাধা দেয় না।কারণ বীরের পকেটে একটি গুলি আছে।সেটা দেখেই দারোয়ানের মুখ বন্ধ। বীরকে দেখে তার একটাই কথা মাথায় আসলো,”বেচে থাকলে অন্য বাড়ির দারোয়ান হতে পারবো।কিন্তু মরে গেলে ফিরতে পারবো না।”
বীর উপরে উঠে মায়াকে দেখে অবাক।মায়া এখনও গলা টিপে ধরে আছে মেয়েটির।মায়ার চোখ মুখ হিংস্র।ঠিক যেনো বীরের মতো।আশেপাশে তাকালো বীর।বীরের কাছে মায়ার এই রূপ ভালো লাগছে।তাই সে মায়ার কিছু ছবি তুলে নিলো।মায়া যে একটি মেয়েকে খুন করেছে সেটা নিয়ে যায় আসেনা বীরের।ছবি তোলা শেষ করে বীর মায়ার কাছে এগিয়ে এসে বলে,”ওকে কেনো মারলে?”
হুশ ফিরলো মায়ার।মারলো কোথায় ও?ও কাউকে খুন করেছে এটা ও নিজেই বুঝতে পারেনি। মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে মায়ার।নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।মেয়েটির গলা থেকে হাত সরাতেই মেয়েটি নিচে পরে যায়।মায়া লাফিয়ে ওঠে।এই প্রথম তার হাতে কেউ মারা গেছে।মায়া তার দুই হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।বলে,”আমি মারতে চাইনি।আমি মারতে চাইনি।আমি খুনি হতে চাইনি।আমি মারতে চাইনি।”
বলেই কাপতে থাকে মায়া।বীর এক গ্লাস পানি এনে মায়ার সামনে ধরে বলে,”এই নেও খাও।”
মায়ার হাত কাপছে।জীবনের এই প্রথম খুন নিজে থেকে করলেও সজ্ঞানে করেনি।তার জীবনে কম ঝর যায়নি।মায়াকে যখন মেয়েটি বাজে কথা বলেছিলো তখন মায়ার কল্পনায় আসে আরো এক অতীত।মায়ার নাম পরিবর্তন করার পরের ঘটনা।
শাহানা পারভীনকে কু প্রস্তাব দেয় তার বিজনেস পার্টনার।শাহানা পারভীন না করে দেন।একদিন কোনো কিছু না জানিয়ে তিনি মায়াদের বাসায় আসে।মায়া তখন ঘরে বসে পড়াশোনা করছে।রাত তখন দশটা।মায়ার কানে বারান্দা থেকে থালাবাটি পড়ে যাওয়ার শব্দ আসে।সেই শব্দের সাথে মায়ার কানে আসে শাহানা পারভীন বলেন,”ছাড়ুন আমাকে।আমার সতীত্ব হরণ করবেন না।আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না।”
মায়া বের হয়ে আসে।দেখতে পায় লোকটি জোর করে দুই হাত ধরে আছে তার মায়ের।শাহানা পারভীনের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসতে থাকে সে।মায়ার ঘৃণা লাগছে লোকটিকে দেখে।শাহানা পারভীন এদিক ওদিক তাকাতে থাকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য।হঠাৎ দেখলো মায়া দাড়িয়ে আছে।শাহানা পারভীন চেঁচিয়ে বলে,”এভাবে দাড়িয়ে থেকে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবি না মা।কিছু কর মা।তোর মাকে বাঁচা।”
মায়ার হুশ ফিরলো মায়ের কথাতে।পাশে তাকিয়ে দেখলো শিল নোরা। নোরা হাতে নিয়ে মায়া লোকটির মাথায় ছুড়ে মারে।শাহানা পারভীন মায়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।তাই মায়া যখন নোরা ছুড়ে মারে তিনি সাথে সাথে মাথা নামিয়ে নেয়। নোরা এসে সোজা লোকটির কপালে লাগে।সাথে সাথে লোকটি শাহানা পারভীনকে ছেড়ে কপালে হাত দেয়।এই সুযোগ পেয়ে শাহানা পারভীন নোরা হাতে নিয়ে লোকটির ঘিলু বরাবর স্থানে কয়েকটি আঘাত করে।মায়া দূরে সরে যায়।কান্না করে দেয় সেখানে দাঁড়িয়ে।লোকটি ওখানেই মারা যায়।শাহানা পারভীন ঘুরে তাকিয়ে দেখে মায়া কান্না করছে।শাহানা পারভীনের হাতে লোকটির রক্ত লেগে আছে।শাহানা পারভীন সেই হাত নিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে এসে বলে,”জীবনে যতটুকু আয়ু নিয়ে বাঁচবি নিজের সতীত্ব বজায় রেখেই বাঁচবি মা।এই সতীত্ব হরণ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে হাজারটা খুন করার দরকার হলে করবি কিন্তু নিজেকে বিলিয়ে দিবি না।তুই দুর্বল তো লোকে তোকে খুবলে খাবে।এতদিন একে আমি ছার দিয়েছি।ভালোভাবে বুঝিয়েছি।ওর বউকে পর্যন্ত বলেছি যে আপনার স্বামীকে সামলান।দেখ লোকটা তারপরও এসেছিলো আমার সাথে অন্যায় করতে।আমি আর কি করলে এরা আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দিবে? স্বামী ছাড়া জীবন কাটানো কি অন্যায়?স্বামী ছেড়ে দিলে সেই মেয়ের কি সমাজে মুখ উঁচিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নেই?কেনো মেয়েদের এসবের সম্মুখীন হতে হবে?এই রাতের বেলা এই নরপশু আমাকে খুবলে খেতে আসবে?”
বলেই কান্না করেন শাহানা পারভীন।মায়া এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি ঠিক করেছো মা।তুমি কান্না করবে না।”
বলেই শাহানা পারভীনের চোখের পানি মুছে দেয় মায়া।
শাহানা পারভীন ও মায়া মিলে সেই রাতে লোকটির লাশ নিয়ে গ্রামের এক জঙ্গলে মাটি চাপা দেয়।মায়া ছোট টর্চ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মিহির ও হাসিকে ডেকে নেয় শাহানা পারভীন।মিহির ও শাহানা পারভীন মিলে মাটি খুঁড়ে তার ভিতর লোকটিকে রেখে কবর দেয় ওরা।
মায়ের এই অতীত মনে পড়ে মায়া হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।বীর মায়ার হাত কাপতে দেখে মায়ার মুখের দিকে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,”আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।তুমি নিজে খেয়ে নেও।”
মায়া ঢকঢক করে পানি গিলতে থাকে।এখন একটু স্বাভাবিক হয় মায়া।বীর জিজ্ঞাসা করে,”কেনো খুন করলে?”
“ও আমার মাকে নিয়ে যা নয় তাই বলেছে।আমি বারবার বলছি চুপ করতে ও তাও বাজে কথা বলছে।আমার মা আমার মা তো পবিত্র।নিজেকে সব সময় রক্ষা করেছে।তাহলে কেনো আমার মাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে?আমি ছাড়বো না কাউকে।আমি সবাইকে শাস্তি দিবো।বেশ করেছি ওকে মেরেছি। মায়েদের সম্মান করতে জানে না।যাকে চিনে না তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে।”
শেষের কথাগুলো অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে বলে মায়া।বীর বুঝলো মায়ার অবস্থা।যে বীর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না আজ সেই বীর মায়াকে বাঁচাতে অন্যায় করবে।এখন সে ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি বের করলো।মেয়েটিকে নিয়ে তার রুমে গেলো।এখন সবাই কলেজে আছে। আর কিছু মেয়ে তাদের নিজস্ব রুমে।বীর মেয়েটিকে ফ্যানের সাথে একটি ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখলো।এমন ভাবে সেট করলো যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে মেয়েটি মার্ডার হয়েছিলো।মায়া সবকিছু দেখলো।কিন্তু কিছু বললো না।তারপর দুজনে মিলে চলে গেলো নিজেদের গন্তব্যে। যাওয়ার আগে বীর দারোয়ানকে টাকা দিয়ে বলে,”চুপচাপ যা দেখেছেন যা আপনার এই পেতেই হজম করে পাকস্থলী দিয়ে বের করবেন।যদি একবারের জন্য এই মেয়েটি ফেশেছে তো আপনার এই সুন্দর মোটা পেট আমার গুলিতে ফুটো হয়ে যাবে।”
দারোয়ান আর কি করবে।বেচারা বীরের পিছু নিয়েছিলো।দেখতে যে কি করে। যা যা দেখলো তাতে দারোয়ান নিজেই এখন বোবা।তারপরও সে তুতলিয়ে বলে,”ঠি ঠি ঠিক আছে স্যার।”
মাহমুদ সরদার লাগাতার কল করে যাচ্ছেন শাহানা পারভীনকে।চারদিন মতো কথা হয়না তার সাথে।বিপদ আপদ হলো কি না জানতে পারছে না।মায়ার খোঁজ খবর নিতে পারছেন না তিনি।মায়ার ম্যাচের সামনে যাবেন ভাবছেন।রাজ এসে মাহমুদ সরদারের কাছে বলে,”ছোট মায়ের খবর কি বাবা?”
“বুঝতে পারছি না কিছু।কোনো সন্ধান পাচ্ছি না তাদের।আজকে মায়া মার ম্যাচে যাবো ভাবছি।”
“ওর ম্যাচ কোথায় আমাকে বলো।আমি যেয়ে দেখছি।”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৫
মাহমুদ সরদার ম্যাচের ঠিকানা দিতেই রাজ চলে যায় সেখানে।কিন্তু সেখানে যেয়ে রাজ অবাক হয়।এখানে মায়ার কোনো খোঁজ নেই।সবাই বলছে মায়া ও তার বোন কাল সকালে চলে গেছে।এদিকে সবাই শোক পালন করছে। ম্যাচের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।অনেকে বলছে কিছুদিন আগে ব্রেকআপ হয়েছে তাই এমন করেছে।মেয়েটির বাবা মা এসে কান্না কাটি করছে।রাজ মায়াকে না পেয়ে বাসায় ব্যাক করে।মাহমুদ সরদারকে বলাতে তিনি শিবচর ছুটে যায়।লোক লাগিয়ে জানতে পারে শাহানা পারভীন ও মায়াকে বেড়াতে গেছে।টুর দিচ্ছে তারা।এটা মূলত হাসি লোকেদের মিথ্যা বলেছে।মায়া শিখিয়ে দিয়েছে।মাহমুদ সরদার বিশ্বাস করে নিলেন।তাই তিনি রাজকে শান্তনা দিলেন যে মায়া আর ওর মা আপাতত বেড়াতে গেছে।