মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪২

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪২
ইশরাত জাহান

গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসে নিরবতা পালন করছে দুজন।রুদ্র গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত আর হিয়া জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্ত।গাড়ি চালানোর মাঝে রুদ্র গান চালিয়ে দিলো।হিয়া গান অফ করে দেয়।হিয়ার দিকে তাকিয়ে রুদ্র বলে,”কেনো এত রাগ দেখাচ্ছিস হিয়াপাখি?”
“আপনাকে দেখলেই আমার রাগ ওঠে।সহ্য করতে পারি না আমি আপনাকে।”
“আফসোস এই রাগ নিয়ে আমার সংসার করতে হবে।”
ভ্রু কুঁচকে হিয়া তাকালো রুদ্রের দিকে।বলে,”কে করবে আপনার সাথে সংসার?নষ্ট পুরুষ কোথাকার।এমন পুরুষের সাথে এই হিয়া থাকবে না।”

“চার চোখ কেনো রেখেছিস বলতো?যদি বাস্তবতাটা না দেখলি।”
“বাস্তবকে আমি নিখুঁতভাবে উপলব্ধি করি রুদ্র ভাই।আপনি বরং উল্টো আমাকে নিয়ে মিথ্যা সপ্ন দেখছেন।”
“সপ্ন মিথ্যা হলেও সত্যি করতে কতক্ষন?”
“এই সপ্ন কখনও সত্যি হবেনা।”
“তাহলে দেখিস কেনো আমাকে নিয়ে সপ্ন।”
মলিন চোখে তাকালো হিয়া।এই ছেলে সব বোঝে।তার ইচ্ছা চাওয়া পাওয়া বুঝেও এই ছেলে এতটা নিষ্ঠুর হয়ে চলে।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে হিয়া বলে,”আমি আপনাকে নিয়ে কোনো সপ্ন দেখিনা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মিথ্যা বলার সময় তুই যে ঠোঁটদুটো হালকা ভিজিয়ে নিশ এটা আমি জানি।ব্যার্থ চেষ্টা করিস না।”
এবার হিয়ার কান্না পায়।কোনো মতে কান্নাগুলো আটকে রেখে রুদ্রের কাধে দুই হাত দিয়ে মারতে মারতে বলে,”একদম কথা বলবেন না।আপনি নষ্ট পুরুষ আপনি খুনি আপনি হৃদয়হীনা আপনি খুব বাজে।”
বাকি রাস্তা হিয়ার হাতে মার খেতে খেতেই বাড়ি ফিরে রুদ্র।গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে আসতে নেয় ওরা।ব্যালকনি থেকে ওদের দেখছে মায়া।রাজ ওর পাশে এসে জিজ্ঞাসা করে,”কি দেখছো মনোযোগ দিয়ে?”
“আচ্ছা মন্ত্রী মশাই,হিয়াকে নিয়ে তোমরা কি ভাবছো?”
“শুধু হিয়া না। মিলি সিয়া আর হিয়া সবাইকে নিয়েই ভাবছি।ওরা ওদের মন মতো সাবজেক্ট নিয়ে ওদের ইচ্ছা পূরণ করবে।যেমন সিয়ার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়া।”

“সিয়ার যেহেতু ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা তাই আমি হিয়াকে নিয়েই প্রশ্ন করেছি।”
“বাবা যেটা বলবে তাই হবে।যদি হিয়ার কোনো মতামত না থাকে ওর বিষয়ে তাহলে।ও যদি পড়াশোনা করতে চায় ওকে তাই করতে দেওয়া হবে। আর বাবা যদি আমাদের হিয়ার জন্য যোগ্য পাত্র দেখে নেয় তাহলে তার সাথেই হিয়ার বিয়ে হবে।”
“আচ্ছা।”
“হ্যাঁ কিন্তু এবার আমার দিকে একটু তাকাও।খুব তো পরিবারের দিকে দেখছো।বর যে ভিটামিন-বউ এর ভালোবাসার অভাবে শুখিয়ে যাচ্ছে এটাও তো দেখো।”

“শুরু হয়ে গেছে তোমার লাগামহীন কথা।”
“বউ আমার সবকিছুতে এগিয়ে শুধু আমাকে ভালোবাসার সাগরে নিয়ে যাওয়ার দিক থেকে পিছিয়ে।তাই তো আমাকেই শুরু করতে হয়।আমি শুরু না করলে তো বংশের নেক্স জেনারেশন আসবে না।”
“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”
“বউকে ভালোবাসতে বহুবার লাগামহীন হওয়া দরকার আছে।নাহলে বউ তো আমাকে বাবা ডাক শোনাবে না।”
বলেই মায়াকে কোলে করে নিয়ে যায় রাজ।মায়া বাধা দেয় না তাকে।
বাড়ির ভিতরে ঢুকে রান্নাঘরে গেলো হিয়া। রুদ্রও তার পিছু পিছু গেছে।হিয়া খাবারগুলো গরম করতে থাকে।রুদ্র তাকিয়ে দেখতে থাকে হিয়াকে।হিয়ার চুল ছেড়ে দেওয়া।রুদ্র সেদিকে তাকিয়ে বলে,”খোঁপা করে দিবো তোর?”
“কোনো দরকার নেই।টাচ করবেন না আমাকে।”

“তোকে টাচ করতে আমার অজুহাত লাগেনা।এমনিতেই টাচ করতে পারবো।কিন্তু এখন ভাবলাম তোর সুবিধা হবে তাই।কিন্তু তুই তো দুষ্টু মাইন্ডে নিয়ে গেলি।”
বলেই বাবুদের মতো করে মুখ করে রুদ্র।হিয়া খাবারগুলো নিয়ে টেবিলে আসে।রুদ্রকে খাবারগুলো সাজিয়ে দিতে দিতে বলে,”তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন।সকালে তো কাকাই কে আনতে হবে।”
“তুইও বস খেতে।”
“আমি এত রাতে কেনো খেতে যাবো?”
“কারণ তুই না খেয়ে আছিস।”
“কে বলেছে?”
“তোর মুখ।যেটা দেখলে আমি খুব ভালোভাবে বুঝে যাই সব।”
“আফসোস আপনি আমার শ্রেষ্ঠ চাওয়ার বিষয়টা বুঝেন না।”
বলেই দীর্ঘশ্বাস নিলো হিয়া।কথাটা আস্তেই বলেছিলো হিয়া।রুদ্র শুনতে পায়নি তার কথা।তাই রুদ্র জিজ্ঞাসা করে,”কিছু বললি?”

“নাহ।আপনি খেয়ে নিন।আমার খুদা নেই।”
বলেই চলে যেতে নেয় হিয়া।রুদ্র আকড়ে ধরে হিয়ার হাত।বলে,”আমার উপর করা রাগ খাবারের উপর দেখাবি না। তোর সব তেজ সহ্য করো নির্দ্বিধায়।কিন্তু তোর অযত্ন আমি সহ্য করতে পারবো না।লক্ষ্মী মেয়ের মতো খেয়ে নে।নাহলে এই নষ্ট পুরুষ তোকে তার স্টাইলে খাইয়ে দিবে।”
বলেই হিয়াকে টেবিলে বসিয়ে দিলো।অল্প খাবার দিলো হিয়ার প্লেটে।দুজনে মিলে খাবার খেতে থাকে।উপর থেকে এদের দিকে তাকিয়ে দেখছে সোনালী।মুখে বাকা হাসি ফুটিয়ে বলে,”জারা গেছে তো কি হয়েছে।আমার এই ছেলে তো আছে আমার সপ্ন পূরণ করতে।এই মহল আমার হবে।”

সকালে,
মোহন সরদারকে রিলিজ করিয়ে আনা হয়েছে।মাহমুদ সরদার ও রুদ্র মিলে নিয়ে এসেছে।সোফায় কোনো মতে বসে আছে মোহন সরদার।সবাই একেক করে নেমে এসে দেখা করছে তার সাথে।
মায়া ও রাজ মিলে একসাথে নেমে এসেছে নিচে।মোহন সরদার তাকালো তাদের দিকে।মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।মালিনী বিরক্ত মায়ার উপর।কিন্তু মুখে কিছু বলেনা।সবার নীরবতার মাঝেই কলিংবেল বেজে ওঠে।হিয়া গিয়ে খুলে দেয় দরজা।সদর দরজায় দাড়িয়ে আছে স্লিভলেস হাতার সালোয়ার কামিজ পরা এক সুন্দরী।ওড়না গলায় ঝুলিয়ে রাখা।হাতে তার ল্যাগেজ।সবাই তাকিয়ে দেখছে মেয়েটিকে।রাজ নিজেও তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।মায়া অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকালো রাজের দিকে।রাজ এটা দেখেই বলে,”আরে আমি তো নতুন অতিথি দেখছি। আর কিছু না।তুমি থাকতে আমার আর কাউকে লাগবে না। চিন্তা করো না তুমি।”

মেয়েটি সবার দিকে এগিয়ে এসে বলে,”হাই আমি আয়রা।মোহন সরদারের টেক কেয়ার করতে এসেছি।”
“বাবাকে দেখতে এসেছে ভালো কথা হট লুক দেওয়ার কি আছে?”
বিড়বিড় করে বলে রুদ্র।হিয়া ক্ষেপে যায় এমন কথা শুনে।রুদ্র সেদিকে তাকিয়ে বলে,”না মানে কয়দিন আগেই তো তোর শ্বশুরের গার্ল ফ্রেন্ড দেখলি।এখন আবার বিয়ের আগে নতুন করে একজনের এন্ট্রি তাই আর কি।”
রাজ এসে দাড়ালো মাহমুদ সরদারের পাশে।ফিসফিস করে বলে,”আমার শ্বশুরের ভাগ্য আছে বলতে হয়।হিংসে হয় না বাবা তোমার?”

“কেনো আমার কেনো হিংসা হবে?”
“এই যে আমার শশুড় এই বয়সে এসে একের পর এক ছক্কা মরছে তাই।ব্যাটা শশুর আমার পঙ্গু হয়েও হট নার্সের সার্ভিস পাবে। আর তুমি মন্ত্রীর বাবা হয়ে কিচ্ছু করতে পারলে না।”
“বেশরম ছেলের বাবা হতে পেরেছি। আর কি লাগে জীবনে?”
“বেশরম ছেলের লজ্জাবতী বাবা।সমাজ মানবে?”
“মানতে হবে সমাজকে।যাও তোমার বউয়ের কাছে।”
“বউ তো আমার বাবার মতই।নামে বলে ভালোবাসি কিন্তু ভালোবাসার আগেই লজ্জায় নেতিয়ে যায়।”
“এটাই তোমার প্রাপ্য।ওই মেয়েই পারবে তোমাকে সোজা পথে আনবে।”
জিহ্বা কামড় দিয়ে রাজ বলে,”ছিঃ দুষ্টু বাবা আমার।ছেলে আর ছেলের বউ কিভাবে সোজা বাকা পথে যায় এগুলো দেখতে নেই।”

“তোমার সাথে কথা বলা বেকার। দশ হাত দূরে থাকবে আমার থেকে।”
“তোমার কাছে এসে আমার লাভ নেই।আমার বউকে রেখে বাবার কাছে আসবো কোন দুঃখে। যাইহোক তোমার বদ নসিবের জন্য একটু কষ্ট পেয়েছিলাম।ভাবলাম তোমার জন্য কোনো নার্স আনবো কি না।কিন্তু তুমি তো পাত্তাই দিলা না।”
চোখ বড় বড় হয়ে গেলো মাহমুদ সরদারের।নার্স আসা মানে তো ভাইয়ের মত তার নিজেকেও পঙ্গু করে রাখা।রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”এই বয়সে এসে বাবাকে বিছানার রোগী বানাতে চাও?”
“তুমি শুধু বিছানায় রোগী হওয়াটা দেখেল বাবা!সাথে যে হট নার্সের সার্ভিস পাবে এটা দেখলে না?”
“লাগামহীন ছেলে কোথাকার।”

বলেই রাগ দেখিয়ে চলে যান মাহমুদ সরদার।মোহন সরদারের নার্স আয়রা এসে মোহন সরদারকে নিয়ে তার রুমের দিকে যেতে থাকে।ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখছে রাজ ও রুদ্র।রুদ্র ওদের দিকে তাকিয়ে থেকেই রাজের কাছে এসে বলে,”আচ্ছা ভাই আমার আবার নতুন কোনো ভাই বোন আসবে না তো?”
“আসতেও পারে। তোর যে বাপ সে তো এই বয়সেই চার পাচটা গার্ল ফ্রেন্ড পুষে রাখে।এ আবার নতুন কি?”
বলেই দুই ভাই একসাথে হেসে দেয়।এদের কথাগুলো কর্ণপাত হয় মায়ার। ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এনে সোজা মেরে দেয় রাজের মুখে।রাজ পানিগুলো মাথা ঝাঁকা দিয়ে ফেলে বলে,”বউ আমার ভালোবাসার সাগরে না ভিজাতে পারলেও খাবার পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে খুব পারে।”
রাগ দেখিয়ে উপরে উঠে গেলো মায়া।রুদ্র তাকালো হিয়ার দিকে।কটমট চোখে চেয়ে আছে হিয়া।মনে হচ্ছে সামর্থ থাকলে কাচা মানুষের মাংস খেয়ে ফেলতো।অন্য কারো না সোজা রুদ্রের।রুদ্র শিস বাজাতে বাজাতে চলে যায় বাইরে।

নিজের মনোবল শক্তি বাড়িয়ে তোলে রাজ।বউ তার ক্ষেপে আছে।যেখানে প্রথম দিনেই গৃহপ্রবেশে জারার হাতে গুলি করেছিলো তাতে এটা স্পষ্ট যে আজ তার রক্ষা নেই।এক কদম দুই কদম কচ্ছপের গতিতে পা এগিয়ে ঘরে আসতে থাকে সে।সাহসের সাথে বলে,”বউ ওওও বউ কোথায় তু….”
বাকি কথা বলতে পারলো না রাজ।গুলি ছোড়া শুরু।গুলি সোজা কাঠের দরজায় এসে লেগেছে।মায়া ইচ্ছা করেই এমনটা করেছে।রাজ বড় বড় চোখে তাকালো মায়ার দিকে।রাজ কিছু বলতে যাবে তার আগে মায়া আবার রাজের পা বরাবর গুলি চালায়।রাজ জাম্প দিয়ে পা উচু করে বলে,”আরে বউ থামো।যেভাবে একের পর এক গুলি ছুড়ে মারছো মনে হচ্ছে আমাকে আয়রার সার্ভিসের জন্য রেডি করবে।এর থেকে ভালোবাসা দেও বাবা ডাক শুনবো আর তুমি মা।”

“তুমি পরনারীর দিকে তাকাবে আর আমি তোমাকে ভালোবাসা দিবো? কখনই না।”
“আর তাকাবো না।ভালোবাসবে তো এবার?”
“আর একটা কথা বললে গুলি দিয়ে সোজা তোমার খুলি উড়িয়ে দিবো।”
রাজ এবার ধির গতিতে এসে মায়ার হাত ধরে নেয়।গুলিকে রাখে পাশে।তারপর বলে,”আরে ওটা তো আমার শশু না সরি তোমার কাকা শ্বশুরের আইটেম।আমি তো শুধু তার ভাগ্য নিয়ে বলছিলাম।বিশ্বাস করো মেয়েটার যে স্লিম ফিগার আমি চেয়েও দেখিনি।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪১

“স্লিম ফিগার তুমি জানলে কিভাবে?তুমি নাকি দেখোনি?”
“ওই যে তোমার চোখ।বউ তো বাড়িতে কোনো হট লেডি আসলেই শকুনের দৃষ্টি দিয়ে দেখে।তাতেই আমার দেখা হয়ে যায়।নিজের চোখ দিয়ে আর দেখা লাগে না।”
“আমার মাথা গরম করে দিচ্ছ তুমি।”
“চলো বাথ টাবে যেয়ে তোমার মাথা ঠান্ডা করে দেই।”
“শাট আপ।”
আর কিছু বলতে না দিয়ে মায়াকে নিয়ে চলে যায় রাজ।মায়ার গরম মাথা ঠান্ডা করতে হবে এখন তাকে।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৩