মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৩+৩৪

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৩+৩৪
ইশরাত জাহান

আদ্র আর রুদ্র নজর রাখছি সিয়া ও হিয়ার দিকে।এরমাঝেই চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল।অন্ধকারে কেউ কারো মুখ দেখতে পারছে না।সবাই তোড়জোড় শুরু করে দিলো কি হয়েছে জানার জন্য।এরমাঝে সবার চোখেমুখে লাল নীল সবুজ রংয়ের ছোট ছোট আলোর দেখা মিলে।ড্যান্স ফ্লোরে দেখা যায় দুজন যুবতীর।যাদের এন্ট্রির সাথেই আলোকিত হয় পরিবেশ।সবাই হাততালি দিলো দুই যুবকটিকে দেখে।রাজ সিটি বাজিয়ে বলে,”সাব্বাস আমার বোনেরা।”

মায়া চোখটা কুঁচকে রাজের দিকে ফিরলো।এদের বিষয়টা মায়া তেমন ভালো কিছুই জানেনা।নিজের প্রতিশোধে এতটাই মশগুল যে এসবে খোঁজ নেওয়া হয়না।সিয়া আর হিয়া ড্যান্স ফ্লোরে এসেই ড্যান্স শুরু করে,
Tu leya de mainu golden jhumke….
Main kanna vich
Paavan chum chum ke………….(3)
Mann ja ve..
Mainu shoping kara de
Mann ja ve..
Romantic picture dikha de
Requestaan paayiaan ve…
Chittiyaan kalaiyaan ve
Oh baby meri Chittiyaan
kalaiyaan ve
Oh baby meri white
kalaiyaan ve……

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নাচের মাঝেই পিছন থেকে দুজন যুবক আসে।সিয়ার হাত ধরে একজন হিয়ার হাত ধরে আরেকজন গানের সাথে পারফর্ম করছে।যেটা দেখে চোখেমুখে হিংস্রতা প্রকাশ পায় দুজন যুবকের।আদ্র ওর চশমা ঠিক করে তাকালো সিয়ার দিকে।রুদ্র তাকিয়ে আছে হিয়ার বাম হাতের কাধের দিকে। লেহেঙ্গার ওড়নাটা বেশ খানিকটা ঝুঁকে আছে হিয়ার।একটু অসচেতন হলেই যেনো পড়ে যাবে।এদিকে হিয়ার পার্টনার হিয়ার কাধে হাত রেখেছে।তার নজর যেনো বিশ্রী।সে নিজে থেকেই চায় হিয়ার ওড়নাটা খুলে যাক।রুদ্র হাত মুষ্ঠি করে আছে।দৃষ্টি এড়ায়নি মায়া ও রাজেরও।রাজ যেই উঠতে যাবে মায়া ওকে আটকে দিয়ে বলে,”লাভ রিভেন্স লাভ পার্টনারের মাঝেই সীমিত থাকা ভালো।”
রাজ মায়ার কথা শুনে নিজেকে সামলে রুদ্রের দিকে তাকালো।রুদ্রের হাত মুষ্ঠি দেখে বুঝে গেলো মায়ার কথা।ছেড়ে দিলো বোনের সুরক্ষা অন্যজনের হাতে।যার কাছে বোনকে বিয়ে দিবে কিছুদিন পর তাকে একটু পরীক্ষা করাই যাক।একা বোন কেন চোখের পানি ফেলবে।

আদ্র রক্তিম দৃষ্টি দিয়ে রুদ্রের পাশে এসে বলে,”আজকের রাতে আমার কেবিনের পাশটা ফাঁকা আছে। তুই ব্যাবস্থা করলে ওখানে ফ্রিতে কারো অপারেশন করাতে পারি।”
রুদ্র আড়চোখে আদ্রকে দেখে মৃদু হাসলো।অতঃপর তাকালো ড্যান্স ফ্লোরের দিকে।হিয়ার ওড়না নামার আগেই ও ড্যান্সের মাঝে হাত উঁচিয়ে সামলে নিয়েছে।হিয়াও রাগের সাথে তাকালো ওর ড্যান্স পার্টনারের দিকে।মন তো চাচ্ছে এখানেই পুঁতে দিতে কিন্তু রুদ্রকে দেখাতেই এত নাটক।ড্যান্স শেষ হতেই হিয়া ওর পায়ের হিল দিয়ে যুবকটির পায়ের উপর দিলো এক চাপ।যুবকটি ব্যথায় কুকিয়ে ওঠে।পা ধরে বসে পড়ে।হিয়া মুখে হাত দিয়ে বলে,”আমি দুঃখিত।বুঝতে পারিনি এভাবে লেগে যাবে।”

সিয়াও কম না।এতক্ষণ তার কোমড়ে হাত দিতে চাওয়া যুবকটার বারোটা বাজিয়ে দিলো।যুবকটি যখন সিয়ার দিকে হেসে হেসে তাকালো সিয়া সঙ্গে সঙ্গে ওকে ল্যাং মেরে ফেলে দিলো।দৃশ্য চোখ এড়ায়নি আদ্রের।মৃদু হেসে বলে,”এই সামান্য শাস্তি তো তার প্রাপ্য নয় প্রেয়সী।হি ডিজার্ভ মোর পানিশমেন্ট ফর টাচ মাই লাভ।”
সিয়া আর হিয়া ওদেরকে না উঠিয়ে নিচে নেমে আসে।রাজের কাছে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরে দুই বোন।তারপর মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি আমাদের বার্বি ডল ভাবী।দেখতে একদম ডলের মত।”

মায়া সহানুভূতির হাসি দিলো।রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোদের এই ডল ভাবী আমাকে কখন করে কিল!”
বিড়বিড় করে বলা কথা শুনতে পেলো না কেউই।সবাই যার যার জায়গায় চলে যেতেই ড্যান্স ফ্লোরে চলে আসে আরো এক জুটি।ব্ল্যাক সুট পরে উল্টো দিক ফিরে ড্যান্স করছে সে।অনেকেই তাকে চিনলেও চিনতে পারছে না মালিনী ও সোনালী।গানের তালে যেই সে পিছনে ফিরে মালিনী হেসে দিয়ে বলে,”বীর বাবা।”

সোনালী কোনো ভানন্তন দেখায়নি।বীর নাচ করছে,
মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ,
মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ,
চেহরাহে মাশাআল্লাহ।
নেইনো পে নেয়নাকা,
পেহরাহে মাশাআল্লাহ।
তুজকো চুরায়া হে, পায়া হে ইয়ে যাহা।
বীরের সাথে থাকা মেয়েটির মুখ এতক্ষণ পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ছিলো।এবার সেও মুখ থেকে টান দিয়ে কাপড়টা খুলে।এবার ঝটকা খায় সোনালী।চোখ বড় বড় করেই বলে,”জারা!”

জারা নাচতে থাকে,
মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ,
চেহরাহে মাশাআল্লাহ।
রাঙ্গ তেড়ে ইশকোকা,
গেহরাহে মাশাআল্লাহ।
তুজকো চুড়ায়া হে পায়া হে ইয়ে যাহা।

জারা এসে বীরকে জড়িয়ে ধরে ড্যান্স করে।এটা দেখে মাথায় যেনো বজ্রপাত পড়ল সোনালীর মাথায়।বীর এই চাহনী দেখে জারাকে আরো শক্ত করে আলিঙ্গন করে নেয়।রাজ মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”এভাবে চিপকাচিপকি করছে তোমার ভাই আর আমি তোমার একটু হাত ধরলেও দোষ হয়ে যায়!”
“শাট আপ মন্ত্রী মশাই।আমার ভাই এমন ছিলো না।এই চিপকু এসে বানিয়ে দিয়েছে ওকে।”
“আসলেই শালা আমার ছিলো প্রেমের দিক থেকে ছিলো আলাভোলা।এখন দেখো কেমন ড্যান্স দিচ্ছে ঝাকানাকা।”
মায়া চোখ রাঙিয়ে তাকালো।মাহমুদ সরদার রাজের পিছন থেকে এসে বিরবিরিয়ে বলেন,”তান্ডব শুরু হলো বলে।ছেলের বিয়েতে কি শান্তিমত আনন্দ করতেও পারবো না নাকি?”
“তোমার বউ আর তার পরিবার তোমাকে সুখে রাখতে চায়না যেহেতু তুমি সুখে থাকবে কিভাবে বলো?”
“আমার বউয়ের পরিবারের বড় ঝামেলা তো তুমি?”

“এই ঝামেলাকে পৃথিবীতে আনার পিছনে আসল দোষী তো তুমিই বাবা।”
মাহমুদ সরদার কপাল চাপরালেন।এসেছিলেন ছেলের থেকে শান্তনা নিতে।ছেলে আরো বেশি তাকে গুলিয়ে দিচ্ছে।অবশ্য তার জীবনে আসা বক্তিগুলো কেমন গুলিয়ে যাওয়ার মত।এই যে তার প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী দুজনেই যমজ ছিলেন।তারা এক ঝামেলা।নিজের বাড়িতে আরেক ঝামেলা।মোহন সরদার তো উটকো ঝামেলা বাদালো।শাহানা পারভীনের তরফ থেকে এলো মায়া।এরপর সোনালীকে বিয়ে করে এলো মিহির ও মিলি।এদিকে মাহমুদ সরদারের শালার ছেলের সাথে মোহন সরদারের শালীর মেয়ের সম্পর্ক।তার উপর আবার সোনালী চালছে আরেক চাল।এগুলোর মাঝে আছে তার লাগামহীন পুত্র।তার দুই কন্যা আবার তারই বাবার দ্বিতীয় পক্ষের নাতিদের দিকে গলে যাচ্ছে।বেচারা বৃদ্ধ লোকটার জীবন ঘেঁটে ঘ হয়ে গেছে।

বীরজারা ড্যান্স শেষ করে নিচে নেমে আসে।বীর নামার সময় ওর সুট ঠিক করে নেয়।জারা বীরের পাশেই আছে।জারা একটু ভয়তেই আছে।বীর জারার হাত ধরে শক্ত মূখভাব নিয়ে এগিয়ে গেলো মায়ারাজের দিকে।রাজকে জড়িয়ে ধরে বীর মায়াকে জড়িয়ে ধরে জারা।সোনালী এক পা এগোতে নিবে বীর হাতের তুরী বাজালো।ঠিক সাথে সাথেই এগিয়ে এলো কিছু গার্ড।গার্ড দেখে সোনালী চুপসে গেলো।পিছন থেকে একজন গার্ড কিছু বক্স নিয়ে আসে।বক্সগুলো নিয়েই মাহমুদ সরদারের সামনে রাখে।একেকজন গার্ড একেকটা বক্স খুলতেই গহনা দেখা যায়।ডায়মন্ডের নেকলেস দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো সবার।এরপর আরো কিছু আছে।এগুলো দিয়ে বীর বলে,”বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সাথে প্রথমবার সাক্ষাৎ করলাম।ভাই হিসেবে কিছু দেওয়া তো আমার প্রাপ্য।”

মাথায় কিছুই ঢুকলো না মালিনী সোনালী ও মোহন সরদারের।এছাড়া সিয়া হিয়া ও মিলি এরাও কিছু বুঝলো না।কারণ বীর তো সম্পর্কে তাদের মামাতো ভাই।ভাইয়ের বোন মানে তো তাদেরও বোন।তাহলে এতদিন একে কোথায় রেখেছিল?
হিয়া এসে সিয়াকে বিড়বিড় করে বলে,”আচ্ছা ভাবীর তো বয়স বেশ ভালই।ভাবীর জন্মের সময় কি আমাদের কেউ জানত না?কারণ বাচ্চাদের মধ্যে আমরাই তো লাস্ট পয়দা হয়েছি।শুনেছি বীর ভাইয়ের কোনো ভাইবোন নেই।এই বোন কোথা থেকে আসলো?”

“আসমান থেকে টপকে পড়েছে ঠিক তোর মত।তুই যেমন আমার পর অপ্রয়োজনে এসেছিস ঠিক তেমন।”
“ফালতু কথা বলবি না ভুটকি।”
“চুপ কর শুটকি।আমি কি জানি নাকি এরা কিভাবে ভাইবোন হলো?তুইও যেদিন ডাউনলোড হয়েছিস আমিও ঠিক সেদিন পাঁচ মিনিট আগে ডাউনলোড হয়েছি।”
“মূর্খ তুই বড় হয়েও কোনো কাজের না।”
“আসছে আমার শিক্ষিত রে।চুপ থাক।আগে শুনতে দে ওরা কি বলে।”
হিয়া চশমা ঠিক করে মন দিলো ওদের কথা শুনতে।মালিনী অবাক হয়ে বলে,”তোর বোন মানে?এই মেয়ে কিভাবে তোর বোন হয়?”

বীর উল্টো ঘুরে বলে,”প্রথমত বোনকে এই মেয়ে নয় নিজের বউমা বলতে শিখো ফুফু।দ্বিতীয়ত আমার বোনকে আঘাত দেওয়ার চেষ্টাও করবে না।”
“তোমার বোন হলো কিভাবে?তোমার বাবা মায়ের আরো সন্তান আছে বলে তো আমাদের জানা ছিল না।এটা তো আমাদেরকে বলো।”
সোনালীর কথা শুনে বীর ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে,”রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও ভাই বোনের বন্ধন আমাদের গড়েই উঠেছে।এই বিষয়ে জানে আমার বাবা মা।”
মালিনী ভ্রুকুটি করে বলে,”আমাদের তো জানায়নি।”
“হয়তো খেয়াল ছিলো না।অথবা গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টি।কারণ বোনকে যখন আমি আমার বাগান বাড়িতে স্থান দেই মাকে জানিয়েই দেই।বাবা আপত্তি করেনি।”

“ওদের পরিচয় কি?”
“আমার এক আন্টির সন্তান এরা।আন্টির এক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে আমি আমার কাছে রেখেছি।এবার নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করবে না যে আন্টিটা কে?আমার মা বাবাও এত কিউরিয়াস ছিলো না যতটা তোমরা আছো।”
দমে গেলো সোনালী আর মালিনী।বীরের কথার মাঝে ধারালো ভাব আছে।রাজের কথার মত তেরা না।যেটা বলতে ওটাই শেষ কথা।যদিও রাজ নিজেও এমন কিন্তু রাজের সাথে কথা বলতে গেলে একটু সাহস পাওয়া যায়।রাজ মানুষকে যতটা পরোয়া করে বীর তাও করেনা।

সোনালী এবার জারার উদ্দেশ্যে বলে,”তোকে আমি কতবার কল করেছি?কোথায় ছিলি এতদিন?”
“আমার খাঁচায় বন্দী ছিলো।আপনার কোনো সমস্যা?”
বীরের থেকে এমন কথা শুনে সোনালী ভ্রু কুঁচকালো।মালিনীকে ইশারা করতেই মালিনী মিষ্টি হেসে এগিয়ে এসে বলে,”তুই কি ওকে ভালোবাসিস বীর বাবা?”
জারা তাকালো বীরের দিকে।ভালোবাসার কথা এখনও সে শোনেনি।এতদিন তো শুধু দেখেছে বীরকে অধিকার দেখাতে।ভালোবাসার কথা কি বলবে বীর?ভাবছে আর চেয়ে আছে।সেই সাথে বীরের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সকলে।বীর জারার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,”ভালোবাসার কথা কি এখন আমি তোমাদের মাঝে গান গেয়ে বিতরণ করবো?”

মুখটা চুপসে গেলো জারার।একটু ভালোবাসার কথা বলতেও পারল না এই লোকটা!বীর জারার মাঝে এই চাহনী দেখে হেসে দেয়।
রাজ বিড়বিড় করে বলে,”প্রেমের জ্বলে ভেসে মরবে কিন্তু ডুব দিয়েও বুঝতে দিবে না ডুবে আছি।”
এরা কথা বাড়াবে এর মাঝেই সোনালীর কাছে কল আসে।সোনালী রিসিভ করে কিছু শুনতেই শয়তানি এক হাসি দিলো।রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভিতরে আসতে দেও ওকে।”
সোনাল এবার সবার মাঝে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,”আচ্ছা এগুলো পরে দেখা যাবে কিন্তু আজকে আমি সরদার পরিবারের জন্য সবথেকে বড় উপহার এনেছি।ওটা আগে সবাইকে দেখিয়ে দেই।যেটার জন্য এতদিন সবাই আমাকে দায়ী করেছে আমি সেই দায়ভার থেকে নিজেকে হালকা করতে চাই।”
সোনালীর চোখে বিন্দু পানির দেখা দিলো।শাড়ির আঁচল দিয়ে পানিটা মুছে বলে,”আজকে আমি একটু হালকা হবো।”
রাজ গলা খাকারি দিয়ে বলে,”আপনি কবে ভারী ছিলেন?হালকা ছিলেন বলেই তো আমার কাকার গলায় লাফ দিয়ে বাঁদরের মত লটকে পড়লেন।”

মিটমিট করে হেসে দেয় আশেপাশে সবাই।মাহমুদ সরদার নিজেও সবার আড়ালে হেসে দিলেন।ছেলের এই মুখের উপর করা অপমান কিছু কিছু সময় তাকেও বিনোদন দেয়।সোনালী হালকা কেশে বলে,”আজকের উপহারটা তোমার জন্য খুব স্পেশাল রাজ।”
রাজের এক ভ্রু উচু হলো।সন্দেহ বাসা বাঁধলো।কোন বিপদকে স্পেশাল জানাচ্ছে সোনালী বুঝলো না।সোনালী হাতটা গেটের দিকে তাক করে বলে,”আমাদের রাজের জীবনে আসা সেই ছোট্ট মেয়েটা যাকে রাজ ছোটবেলায় পুতুল বউ বলে ডাকতো।এতদিন সে আমাদের থেকে দূরে থাকতো।অনেক খুঁজে পেয়েছি তাকে।আমাদের সরদার বংশের প্রথম কন্যা মোহনা সরদার।”

টাস্কি খেলো রাজ ও বাড়ির যুবক সদস্য।এরা তো এসবের কিছুই জানতো না।রাজ আড়চোখে একবার মায়াকে দেখে নিয়ে আবারও সামনে তাকালো।কমিউনিটি সেন্টারের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো রুবি।রুবিকে দেখে রাজ মুখটা পাংসুটে করে মায়ার দিকে ফিরে বলে,”অরজিনাল বউয়ের কর্মচারী কি না আমার পুতুল বউ!”
মায়া রাজের দিকে ফিরে একটা টেডি হাসি দেয়।রাজ চোখ ছোট ছোট করে মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”খেলাটা যখন দুইটা বউ নিয়েই তাহলে আমি দুইটা বউ নিয়ে নাহয় খেললাম।”
মায়া চোখ রাঙিয়ে বলে,”ওই মেয়ের দিকে তাকালে আপনার চোখ আমি উপ্রে ফেলবো মন্ত্রী মশাই।”
“এতটা জ্বলে তোমার মন?”

“স্বামী হন আপনি আমার।আমি এমন কোনো আলাভোলা নারী না যে স্বামীর কুদৃষ্টি অন্য নারীর প্রতি দেখে মুখে কুলু পেতে থাকব।আমি মায়াবতী হই স্বামীর ভালোবাসায় কিন্তু হিংস্রবতী হই ধোঁকায়।”
রাজ মায়ার মুখে ফু দিয়ে বলে,”আমার মায়াবতীর এই হিংস্র রূপ দেখে অন্য নারীর দিকে তাকানোর ইচ্ছাটাই থাকে না।”

সোনালী ভ্রু কুঁচকে বলে,”তোমার পুতুল বউ এসেছে রাজ।তুমি খুশি হওনি?”
সোনালী চায় মায়ার সাথে এখনই ঝামেলা বাদাতে।কিন্তু রাজ খেলা ঘুরিয়ে দিতে পিছপা হলো না।রাজ এবার বিটকেল মার্কা হাসি দিয়ে বলে,”সতীনের মেয়ে এসেছে।আপনি আপনার স্বামীকে পরিচয় করিয়ে দিন।”
সোনালীর মুখ চুপসে গেলো।এদের সাথে কথাতে পারা যায়না।তাও দমে না গিয়ে বলে,”বাবা মেয়ের মিলন তো হবেই কিন্তু মেয়েটা এসে ধরে বারবার পুতুল বরের খোজ করেই যাচ্ছে।তুমি কি তাকে মানতে পারছো না?”
রুবি শুকনো ঢোক গিলছে।এ কোন বিপদের সম্মুখীন হলো সে?মায়া আর রাজ স্বামী স্ত্রী।এখন সে মোহনা সেজে এসে দেখছে মায়ার স্বামী সেই পুতুল বর।ফোনে তো মায়া এলার্ট করেছিলো পুতুল বরের কাছে না যেতে।এদিকে সোনালী সেই পুতুল বর নিয়েই পড়ে আছে।বেচারি মনে মনে বলে,”আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়!”

“মিস্টার শাহমীর রাজ সরদারের ওয়েডিং পার্টিতে আজ তার পুতুল বউ নামক এক নারীর আগমণ।এর আগেও মন্ত্রী SRS এর বিয়েতে বউ পালিয়েছিল বলে তাকে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়।তার ঠিক কিছুক্ষণ পরেই জানা যায় পলাতক মেয়েটি শুধুমাত্র তার অভিনয় ছিলো।আসলে বিয়েটা তো তার মিসেস মায়ার সাথে হবার কথা।এক ব্যক্তির জীবনে এতগুলো নারীর আগমণ আমরা একের পর একভাবে আসতেই দেখেছি।এগুলো নিয়ে আদৌ সঠিক তথ্য আমরা পাচ্ছি না।”

সাংবাদিকের এমন মতামতে পিছন থেকে ক্যামেরার সম্মুখীন হয়ে রাজ বলে,”আমার সংসার জীবন নিয়ে এতটা চিন্তিত হতে আমি আমার বাবাকেও দেখিনি যতটা এই ব্যাটা সাংবাদিক হয়।আমি বুঝলাম না এই ব্যাটাকে আমার সংসার নিয়ে ডিপ্রেশনে যেতে কে বলেছে?”

সাংবাদিক যুবকটি বেক্কল বোনে গেলো।এভাবে মুখের উপর ঠাস করে অপমান। অবশ্য মন্ত্রী বলেই সম্ভব।ক্ষমতা আছে চোপাটাও আছে।সরাসরি ভিডিও চলছিল তাই অনেকের অনেক মতামত দেখা যায়।যেগুলো পড়ছিল রুদ্র।নিউজগুলোর একেকটা আপডেট রাজের কাছে জানালো রুদ্র।সব শুনে রাজ মাইক নিয়ে এনাউন্স করতে যায়।সবাইকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,”আজ আপনাদের কিছু অতীত সম্পর্কে জানিয়ে দেই।”
সবাই এগিয়ে আসে অতীত জানতে।মিডিয়ার লোক তো আরো আগেই এগিয়ে।ক্যামেরা নিয়ে হাজির।রাজ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,”আমি যখন ছোট আমার মা মারা যায়।তার নাম রোহিনী খান।একজন কৃষি বৈজ্ঞানিক।এরপর আমি পুরো একা হয়ে পড়ি।আমার বাবাও রাজনীতি করতেন।মায়ের মৃত্যু সামলাতে তার অনেক কষ্ট হয়।কারণ মা বাবার প্রেমের বিয়ে ছিলো।বাবা অনেক সময় আত্মহত্যা করতেও চায়।”

শেষের বাক্যটি শুনে সবাই মাহমুদ সরদারের দিকে তাকালো।মাহমুদ সরদার চোখ থেকে চশমা খুলে রুমাল দিয়ে চোখটা মুছলেন।রাজ আবারও বলতে শুরু করে,”এরপর কয়েক মাস যেতেই বাবাকে বিয়ে দেয় আমার মায়ের যমজ বোন মালিনী খানের সাথে।এটা অনেক বুঝিয়ে আমার দাদু আর নানু করেন।তাদের বিয়েটাও আমার ছোট মন মানতে নারাজ ছিলো।প্রথমত সৎ মা বলে এ ও এসে কান ভাঙ্গাতো।আমি এড়িয়ে যেতাম আমার দ্বিতীয় মাকে।আপনারা অবশ্যই বুঝতে পারছেন আমার তখন কি অবস্থা ছিল?”

সবাই রাজের কথা শুনে কষ্ট পেলো যেনো।রাজ অবশ্য মালিনীর কিছু বিষয় ধামাচাপা দিয়ে বলেছে।মালিনীকে মহৎ বানানোর জন্য।শেষমেষ দেখতে গেলে সে এই সরদার বাড়ির সদস্য।মাহমুদ সরদারের বউ হিসেবে সে সম্মান প্রাপ্য।রাজের সাথে হওয়া অনাদর না বলাই শ্রেয়।রাজ একটু থেকে বলে,”আমার বাবা ও দ্বিতীয় মায়ের বিয়ের কয়েক বছর পর আমার সেজো কাকা মানে আহান সরদারের ওয়াইফ তার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে আমার ছোট কাকার বিয়ে দেওয়া হয়।বৈবাহিক জীবন মোটামুটি ভালই যায়।সবথেকে ভালো দিন যায় আমার জন্য।আমার ছোট মায়ের মধ্যে আমি মায়ের স্নেহ পেতে থাকি।

তাদের বিয়ের চারমাসের মাথায় আমার ছোট মা নব নব মা হওয়ার অনুভূতি পায়।ছোট মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠা বাচ্চাটির জন্য উৎসাহিত ছিলাম আমি আর দাদাজান।এরপর অপেক্ষার পাঠ চুকিয়ে জন্ম নেয় আমার পুতুল বউ নামক মেয়েটি।আমার দাদাজান চেয়েছিলেন তার সাথে আমার বিয়ে হোক।সেকেলে দাদাজান আমাদের হাত দিয়ে টিপসই দেওয়ায়।এরপর আমরা বাধ্য সন্তানদের মতই মিশতাম।বলা চলতো আমি আর সেই পুতুল ওহ সাথে ছিলো আমার আরেক ভাই অহর্নিশ আদ্র আমরা তিনজনেই একসাথে বেশ বাধ্য সন্তান হয়েই থাকতাম।আমরা একেকজন ছিলাম বাবার থেকেও মা ভক্ত।এটার কারণ আমরা তিনজনে একসাথে আমাদের পছন্দগুলোকে মিলিয়ে রাখতাম।দিন ভালোই যায় কিন্তু আমাদের পারিবারিক ব্যবসাটা একটু অনুন্নত হয়ে ওঠে।

তাও ভালই দিন চলে যায়।আমাকেও আমার মামা বিদেশে নিয়ে যান।সেখানে দেখা হয় আমার মামাতো ভাই আরহাম খান বীরের সাথে।আমরা সমবয়সী।একসাথে দিনগুলো বেস্ট ফ্রেন্ডের মত কাটাতে থাকি।হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমার দাদাজান মারা গেছেন।এরপর আরো দুর্ঘটনার খবর আসে।আমার নাকি এক ভাই জন্ম নেয়।আমি বড় ভাই হয়ে গেছি।কিন্তু সেও হারিয়ে গেলো।তাকে হারিয়ে আমার বাবা আর আমার দ্বিতীয় মা পাগল প্রায়।সন্তান হারানোর কষ্ট বাবা মায়ের জন্য মরণের যন্ত্রণার মত।

বাবা মায়ের হুশ জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম।এরপরেই বছর পেরোতে পারেনি আমার ছোট মা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।সেই সাথে নিখোঁজ ছিল আমার সেই ছোট পুতুল বউ।তাকে হন্নি হয়ে খুঁজেছে আমার বাবা।ঠিক যেমনটা আমার দ্বিতীয় ভাই হারিয়ে যাওয়ার সময় খুঁজেছিল।এত বেশি উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় কাউকেই খুঁজে পেলো না।আজ হঠাৎ সেই পুতুল বউ নামক মেয়েটির আগমণ।যাকে এতদিন সরদার মহলের সবাই মৃত ভাবতো।কিন্তু আমাকে এখানেই জানিয়ে দিতে হচ্ছে আমি আমার মায়াবতীতে আসক্ত।আমার বউ আমার মায়াবতী।সে যতই আমার অতীত আসুক আমি শুধু আমার বউ রূপে তাকেই চিনি যাকে আমি কবুল বলে গ্রহণ করেছি। আর কোনো প্রশ্ন?”

সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে বলে রাজ।রাজের কথা শুনে অনেকের চোখেই পানি।এখানে উপস্থিত সবাই রাজের কথাতে সন্তুষ্ট।রাজ যেহেতু পাবলিক পারসন তাই তাকে সবার কাছেই পরিষ্কার থাকতে হবে।পারিবারিক ব্যাপার গোপন রাখা শ্রেয় কিন্তু কিছু ব্যাপার গোপন রাখা মানে পরবর্তীতে বিষের আগমণ ঘটানো।এই যেমন সোনালী করতে চেয়েছিল।রাজ সেই সুযোগ দিলো না।
সোনালী ক্ষিপ্ত নয়নে চেয়ে আছে।রুবি স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।এই সাইকো নারীর স্বামীকে পুতুল বর পুতুল বর বলে ডাকতে হবে না।এমনিতেও রুবি এসব ঢং করতে পারেনা।
মায়া এগিয়ে এসে রুবির হাত ধরে বলে,”তুমি আমার ননদ হও?”

রাজ খুশখুশ করে কাশলো।পিছন থেকে মিটমিট হেসে মজা নিচ্ছে বীর আদ্র ও রুদ্র।নিজের স্থানে আরেক নারীকে রেখে তাকে ননদ বলা হচ্ছে।এমন দৃশ্য দেখে হাসি ছাড়া কিই বা লাগবে?
রুবি মায়ার দিকে ফিরে আলতো হেসে মাথা উপর নিচ করে।মায়া বলে,”আমি তোমার বড় ভাবী।তোমার অতীতে থাকা পুতুল বরের কলেমা কাবিন ও পরিপক্ক আইনগত বউ।আমাকে ভাবী বলে ডাকবে।”
রুবি এতক্ষণ চুপ থাকায় গলা শুকিয়ে গেছে তার।মুখটা হা করে কোনরকমে শুষ্ক গলায় বলে,”ঠিক আছে ম্যাম।”
সবাই রুবির দিকে অবাক হয়ে তাকালো।মায়া ভ্রু উঁচিয়ে বলে,”ম্যাম না ভাবী।”

“ভ ভাবী!”
“হ্যাঁ ভাবী।মন্ত্রী মশাইয়ের বউ এখন আমি।তার বউ তো তোমার ভাবী হবে।”
“আচ্ছা ভাবী।”
রুবি মনে মনে বলে,”এই সরদার মহলের মোহনা সরদার আসলে কে?আমাকে কেন যে ঢুকালো ম্যাম আল্লাহ ভালো জানে।আল্লাহ যাই করো আমি যেনো বিপদে না পড়ি।”
রুবি ভয়তে আছে।সোনালী এসে রুবির হাত ধরে নিয়ে গেলো মোহন সরদারের সামনে।মোহন সরদারের উদ্দেশ্যে বলে,”এই দেখো মোহন তোমার মোহনা।সেদিন রাতে তুমি রাগ করে ভিতরে চলে যাওয়ার পর মোহনাকে হারিয়েছিলে।কত কষ্টই না পেয়েছো মেয়েটাকে হারিয়ে।আমি কথা দিয়েছিলাম একদিন ঠিক এনে দিব তোমার মেয়েকে।আজ দিলাম আমি তাকে এনে।”

মোহন সরদার আদুরে হাতে মেয়েকে আগলে নিলেন।(বিরক্তিকর ন্যাকামি করা আর কি লেখিকার মতামত)।এতগুলো বছর পর মেয়েকে দেখে বাবার মন উতলে উঠেছে।মেয়েকে দেখে আনন্দে চোখের পানিও ফেললো।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,”আমার মোহ মা।”
রাজ হামি দিয়ে মাহমুদ সরদারের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”এই রাতে বউ নিয়ে কোথায় বিশ্রাম নিবো তা না বাবা আর নকল মেয়ের ঢং দেখছি।”
“নকল মেয়েটা আসলো কোথা থেকে?”
“তোমার বউমার মুখের দিকে একবার টাকাও ট্রেইলার তো ওই চাঁদ মুখটায়।”
মাহমুদ সরদার একবার মায়ার দিকে তাকালেন।মায়া হাসছে রহস্যের হাসি।মাহমুদ সরদার বলেন,”তোমার বউ আবার কী চাল চালতে চায়?”

“আমার বউয়ের মাথায় কখন কোন ধরনের কুচক্র চলে এটা যদি আমি বুঝতাম,তাহলে তো আজ আমি পারিবারিক ড্রামা না দেখে নিজের ঘরে গিয়ে বউ নিয়ে ঘুমাতাম।”
“আজকের ব্যাপারটা কিন্তু ভালো ঠেকছে না।তুমি এতটাও হেঁয়ালি করতে যেও না ব্যাপারটা।মায়া মা কিন্তু রাগী মস্তিষ্কের।যখন তখন ঝামেলা বাদিয়ে দিতে পারে। জানোই তো ওর মেন্টাল কন্ডিশন?”
“চিন্তা করো না বাবা।আমার বউ হাতে নিবে বন্দুক আমি তাকে উপহার দিব গোলাপ ফুল।গোলাপের টানে তোমার বউমার মাথা থেকে সরে যাবে বন্দুকের টান।”
“এছাড়া তুমি আর পারই বা কি?”
“বউদের ম্যানেজ করতে এই অস্ত্র ছাড়া যদি কোনকিছু লাগে তুমি আমাকে সেই অস্ত্র সম্পর্কে জানিয়ে দেও।”

“তোমাকে দিবো অস্ত্র!”
“আসল কথা বলো না বাবা।”
“কি?”
“বউদের প্রেম ছাড়া কোনকিছুতেই আটকানো যায়না।”
“আমার সামনে থেকে সরে যাও তুমি।”
“তোমার কাছে থাকছি না আমি।শুধু জানাতে এসেছি বিপির ঔষধ ঠিকঠাক রেখো।রাতে বাসায় গিয়েই ঔষধ খেয়ে নিবে আগে।”
“কেন?”

“কাল থেকে নতুন নাটক যে দেখতে হবে।”
“আমার ছেলেটা আমাকে নিয়ে কত ভাবে!”
খোচা মেরে বললেও রাজ বিটকেল হাসি দিয়ে বলে,”বাবার কিছু হলে নাকে চোখে পানি নিয়ে কান্নার কষ্টটা দেখানোর মুড এখনও আসেনি বাবা।তাই নিজের শরীরের যত্ন নেও।”
“এখন কিসের মুড আছে শুনি?”
“তোমাকে দাদা ডাক শুনিয়ে দেওয়ার মুড আছে।”

কানের কাছে কথাটা বলেই রাজ দিলো হাটা।রাজের এই একটা গুণ আছে।উচিত কথা বলে দিয়ে দাড়িয়ে থাকে না।মাহমুদ সরদার যদি কানের গোড়ায় একটা দেয়!সেই ভয়টা রাজের মনে আছে।তাই আগেভাগে কেটে পড়ে।
বাড়িতে এসেছে সবাই।রুবিকে নিয়ে আদিখ্যেতা চলছে এখনও।বিরক্ত হয়ে দেখছে কয়েকজন।যাদের কাছে এগুলো জানা।মোহন সরদার তো মেয়েকে কোলে বসিয়ে রেখেছে প্রায়।মানে পাশে বসিয়ে চোখের পানি ফেলছে।মাহমুদ সরদার এবার বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বিড়বিড় করে বলেন,”নাটক যে কত দেখবো এই বয়সে আল্লাহ ভালো জানেন!একবার ছেলে নাটক দেখায় তো একবার বউমা এখন আবার ভাইটাও।ঘরে গেলে আবার বউয়ের নাটকও আছে।আমার জীবনটাই গেলো নাটক দেখতে দেখতে।”

রাজ মেডিসিন বক্স এনে রাখলো মাহমুদ সরদারের সামনে।সার্ভেন্টকে বলে পানি আনালো।মাহমুদ সরদারের রাতের ঔষধ খুঁটে খুঁটে দিচ্ছে রাজ।এই কাজটা বেশিরভাগ সময় রাজ নিজের হাতেই করে।মাহমুদ সরদারের ছোটখাটো বিষয়ে রাজ অনেক সচেতন।বাসায় থাকলেই মাহমুদ সরদারের আগে সেবা করবে।দুইদিন পরপর প্রেশার মাপে ডায়বেটিস মাপে।বাবাকে নিয়ে প্রায় প্রায় ঘুরতেও যায়।বিশেষ করে তাজের কাছে।একসাথে বাবা ছেলে নীরবে সময় কাটায় এখন।মাহমুদ সরদার এখন আফসোস করেন।কেন তিনি রোহিনী মারা যাওয়ার সময় রাজকে সময় দিলেন না?তিনি নিজেকে দোষারোপ করলেও পরিস্থিতি তো তাকেও একা করে দেয়।তার মানসিক অবস্থা খারাপ ছিল।রোহিনী রোহিনী করতে করতে তিনি যে কতবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এটা ওই সময়কার সবাই জানে।মাহমুদ সরদার একবার মালিনীর দিকে তাকালেন।সোনালীর কুটুক্তি পেয়ে মহিলাটি বদলে গেলো।মাহমুদ সরদারের ঔষধ স্ত্রী হিসেবে তিনি ঠিকভাবে নজরেই রাখেননি।সিয়া আর হিয়া তাও টুকটাক থাকে মাহমুদ সরদারের সাথে।এই পরিবারে বাবা ভক্ত বলতেই সিয়া আর হিয়া।মাকে অবশ্যই ভালোবাসে কিন্তু বাবাকে যেনো একটু বেশীই যত্ন করে।
মাহমুদ সরদার ঔষধ খাওয়া শেষ করতেই মায়া সোফা থেকে উঠে দাড়ায়।সবার উদ্দেশ্যে বলে,”রাতের এই ইমোশন পার্ট শেষ হলে আমি এবার কিছু জানাতে চাই।”

সবাই মায়ার দিকে তাকালো।মায়া বলে,”আমার ভাই ও হবু ভাবীকে ঘুমানোর জন্য রুম দেওয়া হোক।আমার তো মনে হয় হবু ভাবী আর মিলি অনেক ক্লোজ।তাই তারা একসাথে থাকতে পারবে।ভাই….”
বীর বলে ওঠে,”আমি আর জারা এখানে থাকছি না।আমরা এখনই চলে যাচ্ছি।আবার সকালে আসবো।”
“এটুকু সময়ের জন্য চলে যাবে?”
“কিছু কাজ আছে আমার।আর তোর হবু ভাবীকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনা।তাই ওকেও নিয়ে যাবো সাথে করে।”
সোনালী ভ্রু কুঁচকে বলে,”জারা আমার আমানত।আমার বোনের মেয়ে ও।আমি জারার গার্জিয়ান।ওকে নিয়ে এতটা অবসেশন কেন তোমার?”

“আপনার আমানত এখন আমার জীবন।নিজের জীবনকে নিয়ে তো অবসেশন থাকবেই।”
“জারার বিয়ে তোমার সাথে হয় কিভাবে?তোমার পরিবার কি মেনে নিবে?”
“আমার পছন্দ আমার কাছে মূল্যবান।তাকে নিজের করে রাখার ক্ষমতা আমার আছে।তাকে একটা টোকাও কেউ দিতে আসলে শেষ হয়ে যাবে সে।সেখানে কেউ বাধা দিবে এটা আপনি ভাবলেন কিভাবে?”
সোনালী চুপ করে আছে।মালিনী বলে,”বীর বাবা মেয়েটাকে নিয়ে ভাইয়ের সাথে কথা বল একবার।”
“দুঃখিত ফুফু।”

বলেই বীর জারার হাত আঁকড়ে নিয়ে বলে,”আমি আমার জীবনে আসা এই নারীকে নিয়ে এত আতঙ্ক বা অপশনাল হিসেবে থাকতে চাইনা।সি ইজ ওনলি মাই হার্ট।এন্ড হার্ট ওলোয়েজ হ্যাভ টু বি ওনলি ওয়ান।”
“তুমি তোমার বাবা মাকে মূল্যায়ন করবে না?”
“অবশ্যই বাবা মা আমার জীবন।আমি তাদের সুখের কথা চিন্তা করি।তারা আমাকে জন্ম দিয়েছেন।কিন্তু বাবা মাকে বলে আমি জারাকে আমার জীবনে রাখব কি রাখব না এটা বিচার করে চলতে পারব না।বাবা মা জানতে পারবে অতি শীঘ্রই।”

“কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না!তোমার দুইটা বোন আছে ভালোবাসার মানুষ আছে কিন্তু তোমার বাবা মা জানে না।”
সোনালীর কথাতে পাত্তা না দিয়ে বীর বলে ওঠে,”অদ্ভুত ব্যাপার তো এটাও যে একজন পুরুষের বউ আছে বাচ্চা আছে জেনেও আপনি পুরুষটিকে নিজের করে নিলেন।কতটা ধিক্কার পাওয়ার মত কাজ করেছেন আপনি।ওই বাচ্চা মেয়েটির উচিত ছিল আপনাকে গলা টিপে মেরে ফেলা।আমি হলে তাই করতাম।”
বীরের এমন কথাতে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সোনালী জারার দিকে চোখ রেখে বলে,”তোর সামনে আমাকে অপমান করছে তুই তাও ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছিস?”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২

“তো কি আপনার পাশে গিয়ে নাগিন ড্যান্স দিবে আবারও?নাগিন সেজে কি করে অন্যের সংসার ভাঙতে হয় সেই প্রশিক্ষণ দিবেন আপনি ওকেও।পারেন তো এগুলোই করতে।কিন্তু এবার আর এমনটা হবেনা।”
রাজ কথা থামিয়ে বলে,”আরে ভাই তুই তোর জানটাকে নিয়ে বিদায় হ।আমিও এবার আমার বউকে নিয়ে বিদায় হই।”
সবাই রাজের দিকে তাকালো।রাজ বলে,”না মানে আমার ঘরে চলে গেলেই তো বিদায় হওয়া হয়।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৫+৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here