মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৫+৫৬

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৫+৫৬
ইশরাত জাহান

মায়াকে নিয়ে বাসায় আসলো মিহির।তার পিছনেই আসলো রাজ ও আদ্র।মাহমুদ সরদার কপালে হাত রেখে সোফায় বসে আছেন।রাজের থেকে শুনেছেন হিয়া সুরক্ষিত আছে।তাই এক তরফা চিন্তা মুক্ত কিন্তু আবারও তার চিন্তার বৃদ্ধি ঘটলো।তার বউমা স্বামীকে ভুলে তারই বাবার আরেক ঘরের ছেলেকে হবু বর হিসেবে মানছে।এই জীবনে মাহমুদ সরদারকে কতকিছুর সম্মুখীন হতে হলো।বেচারা এখনও স্ট্রোক করেননি কেন এটাই তিনি বুঝতে পারছেন না।এসব দেখার সাথে সাথেই তো স্ট্রোক করবার কথা।ছেলে মেয়ে বউ বউমা একেক সময় যে খেলা দেখাচ্ছে তার এই পৃথিবীতে শুধু দর্শক হিসেবেই জন্মাতে হয়েছে বলে মনে হয়।মায়া এসে বাড়ির আশেপাশে সব জায়গায় চোখ বোলালো।মিহির মৃদু হেসে বলে,”এটাই আমাদের বাসা।এখানে তোমার আমার সংসার হবে।”

পিছন থেকে রাজ হাত মুঠ করে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,”তোর সংসারের গুষ্টি কিলাই!”
কিন্তু এগোতে পারল না।আদ্র হাত ধরে আটকে রাখলো।বীর জারা এসেছে মাত্র।রাজের থেকে সব শুনে মায়াকে দেখতে আসা।মৌ ও পিয়াশ বসে আছে সোফায়।বোনকে দেখে এতক্ষণ কান্না করলেও মিহিরের কথা শুনে মৌ যেনো আকাশ থেকে পড়লো।পিয়াশ বিড়বিড় করে বলে,”বউ পাগলা মন্ত্রী আজ বউকে অন্যের সাথে প্রেমালাপ করতে দেখছে।ব্যাটা বেঁচে আছে কিভাবে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মৌ ভ্রু কুঁচকে বলে,”তুমি কি বলতে চাও?জিজু মারা যাক?”
“সে না মরলেও মরা তো উচিত ছিল ওই তৃতীয় ব্যক্তিকে।”
“মরবে দেখে রেখো।”
বীর এসে মায়ার সামনে দাড়িয়ে বলে,”কেমন আছিস বোন?”
মায়া বীরের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি কে?”
বীর কিছু বলার আগে মিহির এসে বলে,”উনি তোমার ভাই হয়।তোমাকে ছোট বেলা থেকে নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে বড় করেছে।”
“ছোট বেলা থেকে পরিচয় দিয়ে!”

“হুম তোমাকে রাস্তায় পেয়েছিল।তোমার বাবা মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি তাই।”
“ওহ।আচ্ছা ওই লোকটা এখানে কেন?উনি তো আমাদের আলাদা করতে চেয়েছিল।তোমাকে অনেক মেরেছিল তো।আমাদের আবার আলাদা করে দিবে না তো?”
রাজের দিকে আঙুল তাক করে বলে মায়া।মিহির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল মায়াকে।অতঃপর রুদ্র এসে পাশে দাঁড়াতেই আদ্র বলে,”এসব তুই দেখ আমি গেলাম।”

মূলত আদ্র এখন সিয়ার কাছে যাবে।সিয়ার মনের অবস্থা ভালো না।তাকেও তো সময় দেওয়া উচিৎ।রুদ্র মাথা উপর নিচ করে।আদ্র চলে যায়।সোনালী এসে মায়াকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”আমার মায়া মা এসেছে শেষমেষ।”
রাজ বোম ফাটার মত চাহনি দিলো।মাহমুদ সরদার এখনও কপালে হাত দিয়ে রেখেছেন।জারা সোনালীকে দেখা মাত্রই মুখ ভেংচি দিলো।সোনালী দেখেও মায়ার দিকে ফিরে বলে,”খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের বিয়ে দিবো মা।”
মোহন সরদার এবার চুপ থাকতে পারলেন না।তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে,”মাথা কি তোমারও গেলো নাকি?”
সোনালী পিছনে ফিরে মোহন সরদারের উদ্দেশ্যে বলে,”মেয়েটার সামনে এভাবে কথা বলো না।দেখছো না কেমন মলিন চেয়ে আছে।ভয় পাবে তো এভাবে কথা বললে।”

জারা খোঁচা মেরে বলে,”বাব্বা খালামণি!তুমি মেয়েটাকে নিয়ে এত ভাবো?”
“কেন ভাববো না আমি।আমার মিহিরের জীবনে আলোকিত হয়ে এসেছে মায়া মা।ওকে নিয়ে ভাববো না?”
“তোমার মিহিরের জীবনে আসলেও তোমার সতীনের মেয়ে সে।বুঝতে তো পারছো না খাল কেটে কুমীর আনতে যাচ্ছো।কুমীরের পাল্লায় পড়লে বুঝবে মজা।”
বিড়বিড় করে বলে জারা।বীর এসব দেখে ক্ষিপ্ত।হুংকার দিয়ে বলে,”এগুলো কোন ধরনের নাটক হচ্ছে।আমার বোনকে নিয়ে কি শুরু হলো?”
বীর আরো বলতে নিবে জারা বীরের হাত টিপে ধরে।বীর বিরক্তিকর চাহনী দিলো জারার দিকে।জারা এবার বীরের কানের কাছে মুখ রেখে বলে,”বলছি নাটক যখন জমে যাচ্ছে,স্বামী যখন স্ত্রীর এই অবস্থায় চুপ আছে তুমি কেন এত হাইপার হচ্ছো।ইনজয় করো না মুহূর্ত।”

“শাট আপ!মায়া আমার বোন রাজও আমার ভাই।মায়ার নাহয় মাথা ঠিক নেই কিন্তু রাজ?ওর তো এসব মানতে কষ্ট হচ্ছে।ভাই হয়ে আমি কেন আমার বোনকে কিছু বোঝাবো না?”
“রাজ বে…. না মানে কি বলেছিল ভুলে গেছো নাকি?এখন কিছু বলতে যাবে তো মায়া হাইপার হবে।সেন্সলেস হয়ে যাবে।তখন পারবে তো সব সামলাতে?তুমি কিন্তু ওর আপন ভাই না।পালিত ভাই।সেই ক্ষেত্রে মিহির তোমাকেও ওদের জীবনে ভিলেন বানিয়ে দিবে।বুঝে দেখো ব্যাপারটা।এখনই তাড়াহুড়ো করে সব ভেস্তে দিতে চাও?”
বীর ভাবলো জারার কথা ঠিকই আছে।এখনই সব ভেস্তে দেওয়া যায়না।তাই চুপ করে সোফায় বসে পড়লো।রাজ নিজের মত দাঁড়িয়ে আছে।সার্ভেন্ট এসে সবাইকে ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত বানিয়ে দিলো।সবার হাতে শরবতের গ্লাস।সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছে রুবি।আজ রুবি শাড়ি পরেছে।আকাশি রংয়ের শাড়ি পরে নিচে নেমে এসে হাসিমুখে মায়ার সামনে দাড়িয়ে বলে,”হাই আমি মোহনা।তোমার ননদ হই।”

রাজ এক ভ্রু উচু করে দেখছে রুবির নাটক।মাহমুদ সরদার শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে যেই তাতে চুমুক দিতে যাবে ওমনি রুবির মুখে এসব শুনে তিনি গ্লাসটা সামনের টি টেবিলে রেখে মুখটা পাংশুটে করে অন্যদিকে ফিরলেন।মোহন সরদার এখন আর মিহিরকে সহ্য করতে পারেনা।তারই মেয়ের সাথে তারই ছেলের প্রেম ছিলো!মানে রুবিকে মোহনা হিসেব করে ভেবেছে।মোহনাকে ঠকিয়েছে মিহির।এটা জানার পর মিহিরের উপর রেগে আছে।আজ আবার মায়াকে নিয়ে পড়ে আছে।এই মিহিরের উপর চটে যাচ্ছে মোহন সরদার।কিন্তু তার কিছু বাজে অতীতের জন্য মুখ খুলতে পারেনা।মুখ খুললেই সোনালী তিক্ত অতীত মনে করিয়ে দেয়।এতেই যেন মোহন সরদার পস্তাচ্ছেন।
মায়া মিষ্টি হাসি দিয়ে রুবিকে জড়িয়ে ধরলো।দুজন দুজনকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে রেখে ছেড়ে দেয়।

“বেবী ডল চলো রেস্ট করবে।”
বলেই মিহির মায়ার হাত ধরতে নেয় ঠিক তখনই রাজ হুংকার দিয়ে বলে,”আব্বে এই হালারপুর!হাত না ধরেও যত্ন নেওয়া যায়।পারলে সেভাবে যত্ন নে নাহলে ফট।ওটা আমার বউ।”
মায়া পিছনে ফিরে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মিহির সবার দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলো।রুদ্র বান্দর মার্কা হাসি দিয়ে বলে,”পিয়ু বেবী,ফায়ার সার্ভিসে কল করো।ইমিডিয়েট মন্ত্রীর বাড়িতে ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজন।”
পিয়াশ একটু অবাক হয়ে বলে,”কোথায় আগুন লেগেছে স্যার?দেখতে পাচ্ছি না তো।”
“এই আগুন চোখে দেখা যায়না।কারণ আগুন সোজা আমাদের মন্ত্রী মশাইয়ের মনে লেগেছে।দাউদাউ করে জ্বলে ওঠার আগেই ফায়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে।”

রাজ রাগী দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে ফিরে বলে,”আব্বে ব্যাটা!আমার বউ ভেগে যাচ্ছে বলে খুব আনন্দ হচ্ছে।ভুলে যাসনা আমার বোনটাও কিন্তু তোর ভাগ্য থেকে ভেগে যেতে পারে।”
“ভেগে যাওয়া নারী আর কিভাবে ভাগবে ব্রো?এখন তো সে দৌড়ে ইউ টার্ন নিবে সোজা আমার দিকে।”
“চুপ থাক ব্যাটা।”
রুদ্র ঠোঁটে আঙুল দিয়ে নিজেকে চুপ রাখার অভিনয় করে।রাজ ক্ষেপে আছে বেশ ভালই।রুদ্র মুহূর্তটার মজা নিচ্ছে।মাহমুদ সরদার এবার বলে ওঠেন,”সবার যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে ঘরে গিয়ে রেস্ট নেওয়া হোক।আমি গ্রামে যাবো।বাবার কবর জিয়ারত করতে।এসব আর ভালো লাগছে না আমার।”

বলেই মাহমুদ সরদার উঠতে নেয় তখনই মায়া বলে ওঠে,”আপনি?”
মিহির বলে,”আমার বড় বাবা।তোমার কাকা শশুর হয়।”
রাজ ফুলে উঠেছে।মাহমুদ সরদার তাজ্জব হয়ে গেলেন।রুদ্র সবাইকে দেখে মিটিমিটি হাসছে।বীর পায়ের উপর পা তুলে দেখে যাচ্ছে একেকজনকে।মায়া মিষ্টি হেসে বলে,”আমার আর মিহিরের বিয়ে।আপনি থাকবেন না আমাদের বিয়েতে?”

মাহমুদ সরদার হা হয়ে মিনমিনিয়ে বলেন,”আগের স্বামীকে তালাক না দিয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায় তাও আবার শশুরকেই বিয়ের দাওয়াত দিয়ে!আল্লাহ আমাকে অপদার্থ জন্ম দেওয়ার ফল ভোগ করাচ্ছেন।”
রাজের দিকে রাগী দৃষ্টিতে দেখলেন মাহমুদ সরদার।রাজ নিজেও বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,”এখন আমার দিকে কেন তাকাচ্ছো বাবা।এতদিন বলতে না ধৈর্য ধরতে।ধৈর্যের ফল নাকি মিষ্টি হয়?নেও এবার দেখো ধৈর্যের ফল এতটাই মিষ্টি যে আমার বউ স্মৃতি হারিয়ে আমারই সামনে আরেকজনকে বিয়ে করতে চায়।তাও আবার শশুরকে দাওয়াত দিয়ে।”

“ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম ঘিলুবিহীন চলাফেরা করতে বলিনি।”
বীর পাশ থেকে বলে,”মাথা ঠান্ডা করুন ফুফা।এখানে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।আমার কাছে কিছু গোলমেলে লাগছে।”
ভ্রুকুটি করে মাহমুদ সরদার বলেন,”মানে?”
“মানে বোনের মুখভঙ্গি দেখেন ভালো করে।বোন অভিনয় করছে।”
“কিন্ত কেন?”
“এটা ওই ভালো বলতে পারবে।”
“আমার মাথামোটা ছেলে কি কিছুই ধরতে পারছে না?”
“ওর মাথা ঠিক নেই।বুদ্ধি দিয়ে খেলছে না রাজ।এখন ও আমার ফর্মে এসেছে আর আমি ওর ফর্মে গেছি।তাই তো খেলা পাল্টে যাচ্ছে।ঠান্ডা মস্তিষ্কের মন্ত্রীর বউয়ের এই পরিস্থিতিতে মাথা পুরো গেছে।”
“ছেলেটার এমন হিংস্র রূপ আজ প্রথম দেখছি।”
“হয়ে যায় ফুফা।ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে এমন হিংস্র রূপ দেখায় দেয়।”
“ওকে কন্ট্রোলে আনো তাহলে।”
“এরা সরে যাক তারপর আমি রাজের সাথে কথা বলব।”

“সেই সুযোগ পাচ্ছো বলে মনে হয়না।দেখো গিয়ে তোমার ভাই কোন অঘটন ঘটিয়ে দেয়।কারণ এখন ব্যাপারটা তার বউয়ের দিকে চলে গেছে।”
বীর মৃদু হাসলো।বউয়ের দিকে নজর পরলে কোনো স্বামীই ঠিক থাকতে পারেনা।সে যেই হোক না কেনো।আর এখানে তো লাগামহীন বউ পাগলা রাজ নিজেই।
মায়া ভ্রু কুঁচকে সবাইকে দেখছে।মালিনী এবার আগ বাড়িয়ে বলে,”এমনিতেও আমাদের মানসিক অবস্থা তেমন ভালো না।এখন এসব পরিবেশ তৈরি করা উচিৎ হবেনা।”
সোনালী ইশারায় চোখ রাঙ্গালো।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”শুভ কাজে বাধা দিও না আপা।মায়া মা কি বলতে চায় আমরা শুনি আগে।তো মা তুমি কবে বিয়ে করতে চাও আমার ছেলেকে?”

রাজ কর্কশ কন্ঠে মোহন সরদারের উদ্দেশ্যে বলে,”কাকা তোমার দুই নাম্বার বউয়ের মুখে কস্টেপ লাগাও নাহলে আমি কিন্তু সুপার গ্লু লাগিয়ে দিবো।এমনও হতে পারে কথা বলার জন্য জিহ্বটাই আর থাকলো না তার।তখন আমার বউকে আমার থেকে দূরে রাখার ফল তোমার দুই নাম্বার বউ ভোগ করবে বোবা হয়ে।”
মায়া আড়ালে হাসলো।সোনালী রেগে গেলেও মিহির হাত ধরে শান্ত রাখে।কানে কানে বলে,”রাজ যাই বলুক রেগে যেওনা মম।লাটাই আমাদের নাগালে।আমরা ঘোরালেই ঘুরবে এই লাটাই।তাই মাথা ঠান্ডা রেখে অবলা সেজে খেলে যাও।”

সোনালী মাথা উপর নিচ করে মায়ার দিকে ফিরে বলে,”ওর কথা বাদ দেও তো মা।তুমি আসো একটু বসবে।আমরা বিয়ে নিয়ে আগে ডিসকাস করি।”
বীর এবার সোনালীর উদ্দেশ্যে বলে,”আমার বোনটা হাসপাতাল থেকে আসলো মাত্র আর আপনি বিয়ে নিয়ে পড়ে আছেন।বিয়েটা তো আর ভণ্ড হয়ে যাচ্ছে না।আগে ওকে রেস্ট নিতে দিন।”
মায়া সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”না।আমি যদি এই বাড়িতে থাকি তো বউয়ের অধিকার নিয়ে থাকবো।নাহলে আমি এই বাড়িতে থাকবো না।আর বউ যখন আমাকে হতেই হবে তাহলে বিয়ে নিয়ে দেরিতে কেন কথা বলব?এখনই সব হোক।”

সোনালী সুযোগ বুঝে বলে ওঠে,”তাহলে সবার সামনেই আমরা আলোচনা করি।সবাই যখন আছেই এখানে বসে একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
রাজ সোনালীর দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে,”ওহ রিয়েলী?”
সোনালী শুকনো ঢোক গিলে বলে,”হ্যাঁ।আমাদের মায়া যেটা চাইবে আমাদের তো তাই করতে হবে।এটাই তো আমাদের নিয়মে ছিলো।আজ কেন তাহলে তার ঊর্ধ্বে যাবে?”

রাজ পকেটে হাত রাখলো।ওখানে রিভলবার আছে।বের করার জন্য হাত খচখচ করছে।রুদ্র এখনও মজা নিচ্ছে।কারণ সে জানে শেষ খেলাটা রাজ দেখিয়ে দিবে।বউকে নিয়ে এত বেশি ধৈর্য ধারণ রাজ করতে পারবেই না।
সবাই সোফায় গিয়ে বসলো।রাজ বিরক্ত হয়ে খাবার টেবিলের সামনে গেলো।এক গ্লাস পানি নিয়ে সবার দিকে ফিরল।এখানে তার বউয়ের বিয়ে নিয়ে কি আলোচনা হয় এটা সেও দেখবে।মাহমুদ সরদার দোয়া দুরুদ পড়ছেন।কার যে খুন হবে এটা বলতে পারছেন না কিন্তু মা ছেলের যেকোনো একজন আজ মরবে এটা শিওর।
সবাই বসে পড়লেও মায়া আর রুবি দাড়িয়ে ছিল।সোনালী রুবিকে ইশারা করে হলরুমের সেই আলিশান আসনে বসতে।যেটা মায়ারাজের জন্য।রুবি ইশারা পেয়ে চলে যায় সেদিকে।যেই বসতে নিবে তার আগে ওখানে বসে মায়া।রুবি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।সোনালী বলে ওঠে,”ওটা তোমার আসন না মা।ওটা মোহনার আসন।”

মায়া আসনের সবদিকে চোখ বোলালো।অতঃপর বলে,”আমি তো নাম দেখছি না।”
মোহন সরদার রেগে গিয়ে বলে,”ওখানে নাম লেখা থাকেনা কিন্তু ওখানের অধিকার হিসেবে দুইজনের প্রাপ্য।তুমি এর আগেও একবার হক দেখাতে এসেছিলে আজকে আবারও।আমি তোমার ক্ষমতা দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই।যার কোনো অধিকার নেই সে নির্দ্বিধায় অধিকার দেখায়।আমরা এই পরিবারের হয়েও এমন অধিকার দেখানোর সাহস পাইনা।”

মায়া মৃদু হেসে মোহন সরদারের দিকে চোখ রেখে বলে,”অধিকার আপনাআপনি কারো নিকট দৌড়ে আসেনা।অধিকার কেড়ে নিতে হয়।আমি আমার অধিকার আদায় করতে জানি যেটা আপনারা জানেন না।তাই আপনারা আজ অব্দি এই আসনের যোগ্য হয়ে উঠতে পারলেন না।আমিই নাহয় নিজেকে যোগ্য করে তুললাম।”
মিহির হেসে সোনালীর কানে কানে বলে,”দেখেছো মম তোমার হবু বউমার খেল।এই জন্যই তো আমি এই মেয়েকে আমার জীবনসঙ্গী করতে চাই।রূপেও সেরা গুণেও সেরা আর তেজ!তার তো আলাদা এক ভাইবস আছেই।”
রুবি চলে আসতে নিলে সোনালী চোখ ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ওখানেই বসো আর মিহিরকে বলে,”মোহনা থাকতে এই তেজ তুচ্ছ।”

মিহির ফিচেল হাসলো।সামনে তাকিয়ে বলে,”আমি তোমার ছেলে মম কিন্তু আমি মানুষ চিনতে ভুল করিনা।রুবি আই মিন মোহনাকে আমি চিনি ঠিক তেমন আমার বেবী ডলকে খুব ভালো করে চিনেছি।”
সোনালীর কথামত রুবি মায়ার দিকে ফিরে বলে,”এখানে রাজের পুতুল বউ মানে মোহনা সরদার বসার অধিকার রাখে।সে হলো আমি।অন্য কোনো নারী নয়।”

রাজ এতক্ষণ পর ঠোঁটে হাসি ঝুলালো।এবার মায়া কি করে দেখতে চায়।মায়াও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”মোহনা সরদার ব্যতীত অন্য নারী কেন বসতে পারবে না?”
মোহন সরদার বলে ওঠে,”ওখানে নিয়ম অনুসারে এই বাড়ির বড় পুত্র মানে শাহমীর রাজের বউ বসতে পারবে।তাকে তো বাবা মোহনার সাথেই বিয়ে ঠিক করে দেয়।তুমি তো আবার মিহিরকে বিয়ে করতে যাচ্ছো।তাহলে তোমার সুযোগ কোনদিক থেকেই নেই এখন।”
“বাড়ির বড় পুত্র শাহমীর রাজ কার সন্তান?”
“আমার বড় ভাই মাহমুদ সরদারের।”

“এই বাড়িতে মাহমুদ সরদারের পুত্র হিসেবে যেমন শাহমীর রাজের অধিকার আছে ঠিক তেমন আপনার সন্তান হিসেবে তো মিহির সরদার অধিকার রাখে।আমি কেন মিহির সরদারের ওনারে বসতে পারবো না?এখানে বসা কি উইলে নিষেধ করা আছে?”
মিহির ভ্রু নাচিয়ে সোনালীর দিকে তাকালো।সোনালী মায়ার খেলা দেখে তাজ্জব হয়ে গেলো।মুখে হাসিও ফুটলো সোনালীর।এবার তো সোনালী মনে প্রাণে চায় এই মায়াকে নিজের পুত্রবধূ করতে।সোনালী এবার মোহন সরদারকে বলে,”মেয়েটা ভুল কিছু তো বলছে না।আমার মিহির তো আমাদের একমাত্র পুত্র সন্তান।বাবার বানানো এই আসনে কেন মিহির হক পাবেনা?”

মাহমুদ সরদার ভ্রুকুটি করে তাকালেন।মুখে কিছু না বললেও তার ভাবভঙ্গি এমন যে সকলকে বুঝিয়ে দিলো মিহির এই পরিবারের জন্য কিছুই করেনি।রাজ তো দেশের সেবা করে সাথে পরিবারের সম্মান ধরে রাখে।এছাড়া মহসিন সরদারের হাতে গড়া নাতি।রাজের মর্ম নিয়ে কথা বলার সাহস দেখালো কিভাবে?সোনালী চুপ করে থাকে।মায়া জারার দিকে তাকায়।জারা চোখ টিপ দিতেই মায়া আরেকটু উস্কানি দিয়ে বলে,”আমি এত কথা বুঝি না।আমি আমার প্রিয় জিনিস আদায় করে নিতে জানি এমনকি করেছি।আমার জিনিসে যেনো কেউ হাত না বাড়ায়।”
রুবির দিকে চোখ রাঙিয়ে বুঝিয়ে দিলো।রুবি ঢোক গিলে মায়ার দিকে মাথা কাত করে আড়ালে বুঝিয়ে দিলো,”জো হুকুম জনাবা।”

মাহমুদ সরদার এবার সবাইকে চুপ থাকতে দেখে সুযোগ বুঝে ঢকঢক করে শরবত গিলে নিলেন।বলা যায়না আবার কার থেকে কিসব শুনে আর গলাটা শুকনোই রাখতে হয়।অলরেডি গলা শুকিয়ে এসেছে।শরবত শেষ হতেই সোনালী বলে ওঠে,”আমি চাই বিয়েটা পরশু হোক।এত দেরি করার তো প্রয়োজন নেই।পরশুদিন কোনমতে বিয়েটা দিয়ে পরে নাহয় অনুষ্ঠান করে নিলাম।”

মোহন সরদার সোনালীর দিকে ফিরে বলে,”মায়ারাজের ডিভোর্স কি তোমার বাবা এসে দিয়ে যাবে?”
সোনালী নিচু হয়ে বলে,”দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে গেলে প্রথম বিয়ের ভ্যালু থাকেনা।নাসির তামিমাকে দেখেছো তো।এখন চুপ থাকো।তোমার ছেলের সুখ দেখতে চাইলে মুখ বন্ধ রাখবে বলে দিলাম।নাহলে আমাদের মাধ্যমে তোমার ব্যবসায় যা একটু লাভবান হচ্ছে তাও হবেনা।”

মোহন সরদারের মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।মায়া শুনেও না শুনার মত করে বলে,”পরশু কেন বিয়ে হবে?”
সোনালী একটু থমকে গেলো।ডেট কি পেছাবে নাকি?মায়া বলে ওঠে,”বিয়েটা কাল হয়ে গেলেই তো আমি আজ রাতের জন্য এই বাড়িতে থাকতে পারি।নাহলে দুটো দিন হবু শশুর বাড়িতে থাকাটা ঠিক মানায় না।”
কথাটা মায়া রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।রাজ বিষম খেলো সাথে সাথে।রুদ্র পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,”রিল্যাক্স ব্রো এটা তোমার বউ হলেও স্মৃতি হারিয়ে অন্যের বউ।”
রাজ গা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলো রুদ্রকে।সোনালী হাততালি দিয়ে বলে,”তাহলে কালকেই বিয়ের আয়োজন করা হোক।”

মাহমুদ সরদার মুখ বন্ধ রেখে কপালে হাত দিলেন আবার।তার ছেলে আছে মানে বিয়েটা এমনিতেও হবেনা।ফাও ফাও এখন সে তার মন্তব্য দিয়ে সময় নষ্ট করতে চায়না।রাজ পানি নিয়ে গিলতে থাকে।মায়া মৃদু হেসে মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে বলে,”তাহলে কাল আমি মোহন সরদারের পুত্রবধূ হতে চলেছি।”
কথাটা শোনা মাত্রই মাহমুদ সরদার ধক করে উঠে সোজা হয়ে বসলেন।রাজের মুখ থেকে সব পানি গড়গড় করে পরে গেলো।কেশে উঠলো রাজ।রুদ্র নিজেও এবার বিষম খেলো।মৌ কান্না করেই দিলো এবার।যদিও জানে না তার বাবা কে কিন্তু তার বোন বিবাহিত অবস্থায় এসব কি বলছে!ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।মৌ এখন সময় গুনছে কখন সে মায়াকে আলাদা পাবে আর বলবে মায়া রাজের বউ।এসব দেখতে আর ভালো লাগছে না মৌয়ের।পিয়াশের কানে কানে বলে,”মিহিরের মত বাজে জিজু আমার চাইনা।আমার তো রাজ জিজুর মত জিজু চাই।যে কি না আমাকে বোনের সম্মান দেয়,আমার স্বামীকে বেবীর সম্মান দেয়।”

এই সিরিয়াস মুহূর্তেও পিয়াশ মৌয়ের কথা শুনে হা হয়ে গেলো।পেটে বাচ্চা থাকার ফল মনে হয় এটা।রাজ একটু স্বাভাবিক হয়ে বলে,”বাবা থেকে শশুর বাবা হবার দৃশ্য আমাকে আল্লাহ দেখিয়েই দিলো!এই দৃশ্য তো আমি দেখতে চাইনি।কোনো বিয়ে হবেনা।না আসবে বাসায় কাজী আর না আসবে কাল বাসায় রেজিস্টার।বিয়ে ক্যানসেল!”
শেষের কথাগুলো জোরে বলে রাজ।সবাই এবার রাজের দিকে তাকালো।রুদ্র হাত ধরতে নিলেও রাজ ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নেয়।এগিয়ে এসে মায়ার হাত ধরে বলে,”অনেক হয়েছে নাটক।আমার শুনতেই তো অসস্তি হচ্ছে চোখে দেখা তো সম্ভবই না।এসব এখন বন্ধ করা হোক।কোনো বিয়ে হবেনা।শুনেছে সবাই?ভালো করে শুনে রাখো এই সরদার মহলে কাল কোনো বিয়ে হবেনা।”

“তাহলে কোনো কমিউনিটি সেন্টার বুক করা হোক?”
মায়ার কথা শুনে রাজ মায়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিলো।মায়া মুখে হাসি ফোটালো।মিহির এগিয়ে এসে বলে,”বেবী ডল তুমি আমার সাথে চলো।ওর মাথা খারাপ হয়েগেছে।আবারও কোনো অঘটন ঘটিয়ে দেওয়ার আগে চলো।”
মায়া চলে যেতে নেয় সোনালী বলে,”আজকে তাহলে আংটি বদল হোক?”
মায়া পা থামালো।ভ্রু কুঁচকে তাকালো সোনালীর দিকে।এটা নিয়ে তো কোনো প্ল্যান করেনি সে।মিহিরকে আংটি পড়াতে পারবে না মায়া।জারার দিকে তাকালো মায়া।জারা নিজেও অবাক হলো।তাই বলে,”এখন আংটি পাবে কোথায় খালামণি?”

“আমার একটা আংটি বানানো আছে।মিহিরকে নাহয় ওর জন্য বানানো নতুন আংটিটা দেওয়া হবে।এরপর ওরা বিয়ের পর কে কাকে কি দিবে এটা ওরা বুঝে নিবে।আজ অন্তত বিয়ের আগে আংটি বদল হোক।”
রাজ এবার রিভলবার বের করে সোনালীর দিকে তাক করে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,”অনেক হয়েছে তোর ননস্টপ।আমার বউয়ের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে অনেক খেল খেলেছিস।এবারের শেষ খেল আমি দেখিয়ে তোদের মা ব্যাটা দুজনকে ওপারে খেলা করার সুযোগ করে দিবো।আমার বউয়ের সাথে আংটি বদলের স্বাদ তোদের একেকটা আঙুলের ক্ষত বিক্ষত হলে বুঝবি।”
সোনালীকে যেই শুট করতে নিবে ওমনি রুদ্র দৌড়ে এসে রাজের হাত উপরে উঠিয়ে দেয়। গুলিটা সোজা ঝাড়বাতির গায়ে লাগে।রুদ্র বলে ওঠে,”পাগল হয়েছো নাকি?এই মহিলাকে এখনও তিনদিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদেরকে।”

রাজ পা দিয়ে লাথি মারে পাশের টেবিলে।মায়া ভয় পাওয়ার অভিনয় করে সরে আসে মিহিরের পাশে।মিহির মায়াকে দেখে বলে,”বেবী ডল তুমি ভয় পাবেনা।আমি আছি তো তোমার সাথে।”
রাজ চোয়াল শক্ত করে তাকালো।মিহির মায়াকে প্রোটেক্ট করার জন্য যেই হাত ধরতে নিবে ওমনি মিহিরের হাত বরাবর শুট করে দিলো রাজ।তাও কিনা পরপর চারটা।মিহির হাত সরিয়ে নিচে বসে পড়ে।রুদ্র বাধা দিতে নিলে রাজ সরিয়ে দিলো।পা দিয়ে লাথি মারে মিহিরের বুক বরাবর।সোনালী এগিয়ে আসতে নেয় কিন্তু কাজ হয়না।রাজ মিহিরকে অন্যদিকে নিয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে নাকেমুখে ঘুষি মারতে থাকে আর বলে,”এই হাত দিয়ে আমার বউকে ধরার চেষ্টা করেছিস বারবার।নে এবার তোর হাতে আমি সারাজীবনের মত অচল করে দিলাম।এই শাহমীর রাজের বউ একটাই।সেই বউয়ের দিকে কারো নজর গেলে তার কলিজা টেনে বের করব বলে দিলাম।”

রাজ এখনও মেরে চলেছে মিহিরকে।গ্লাস ভেঙ্গে সেই ভাঙ্গা কাচের টুকরো দিয়ে মিহিরের হাতের আঙ্গুলগুলো ক্ষত বিক্ষত করে দেয়।মিহির চিল্লিয়ে ওঠে।আঙুল দিয়ে রক্ত পড়ছে।মোহন সরদার এবার মাহমুদ সরদারের দিকে তাকালো।মাহমুদ সরদার বলেন,”আগেই জানা ছিল এমন দৃশ্য দেখতে হবে।এখন ভোগ করুক তোমার আদরের পুত্র।আমার পুত্রকে এখন কোনকিছু দিয়েই থামানো যাবেনা।আমার বউমার দিকে চোখ রাখার জন্য যে সতর্কবাণী পেয়েছে তোমার পুত্র,অন্যকেউ হলে এতক্ষণে তার স্থান থাকতো কবরস্থানে।”
“ভাই তুমি কিছু করো।”

“সুখে থাকতে ভূতে কিলিয়েছে তোমার পুত্রকে।তাই তো আমার বউমার দিকে নজর দেয়।এবার সেই ভূত আমার পুত্র ছাড়িয়ে দিবে নিজের ট্যাকনিকে।বেশি না বউ নিয়ে টানাটানির কারণে তোমার ছেলের জন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।অতি দ্রুত চিকিৎসা পেলে হয়তো পরবর্তীতে পুত্রের সাথে অন্য কোথাও পাত্রী খুঁজতে যেতে পারবে।”

মোহন সরদার উঠে সোনালীর দিকে ফিরে বলে,”হলো তো শান্তি?এটাই দেখার ইচ্ছা ছিল তোমার?তাহলে আগে বলতে আমি নিজেই জুতো দিয়ে ওর মুখে মারতাম কয়েকবার।শুধু শুধু খাল কেটে কুমীর আনতে গেলে কেন?”
সোনালী উত্তর না দিয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে এম্বুলেন্সের ব্যাবস্থা করছে।মিহিরের নাকমুখ ফেটে রক্ত পড়ছে।এভাবে মার খেতে থাকলে তো মারা যাবে।রাজের নামে মামলাও করতে পারবে না সোনালী।রাজের ক্ষমতা আছে যে।সেই সাথে আছে বীরের মত ব্যক্তির বামহাত।তাই দ্রুত মিহিরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে সোনালী।মায়া দুচোখ দিয়ে আনন্দের সাথে দেখছে।সেই সাথে দেখছে বাকিরাও।রুবির একটু একটু কষ্ট লাগলেও নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ধোঁকার জন্য এই মুহূর্ত বেশ উপভোগ করছে।মনে মনে মায়া বলে,”এই মুহুর্তের জন্যই তো আমার এত নাটক।আমি তো চাইই আমার সাথে যা কিছু হয়েছে ঠিক সেই একই শাস্তি সোনালী ও তার ছেলে পাক।আপনার এই মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ করতে আপনি বড্ড দেরি করে ফেলছিলেন মন্ত্রী মশাই।তাই আপনার হাত দিয়েই আপনার মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ করে। দিলো আপনার মায়াবতী।”

এম্বুলেন্সের শব্দ পেতেই মায়া এগিয়ে এসে রাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।রাজ হুমড়ি খেয়ে পড়তে নিলেও নিচে পড়েনি।সিঁড়ির রেলিং ধরে নিজেকে সামলে নিলো।মায়ার দিকে ফিরে মায়াকে কিছু বলতে নিবে মায়া হুংকার দিয়ে বলে,”অনেক হয়েছে আপনার গুন্ডামি।আপনি নাকি একজন মিনিস্টার?দেশ রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব।তাহলে এই আপনার দায়িত্ব মন্ত্রী মশাই?আমি আপনাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি আর একবার মিহিরের গায়ে হাত তুললে আমি আপনার নামে মামলা দিবো।”

সবাই অবাকের সাথে তাকালো।রাজের কপালের শিরা ফুলে উঠেছে।মায়ার নিকটে এসে মায়ার চোখে চোখ রেখে ধীর কণ্ঠে কিন্তু রাগের সাথেই রাজ বলে,”জাস্ট ফাক ইউর মামলা।”
বলেই উপরে মায়াকে পাঁজাকোলা করে চলে যায় রাজ।মায়া তাজ্জব হয়ে গেলো।রাজের ব্যবহার কি হয়ে গেলো!ভাগ্যিস ধীরে বলেছিলো।সবাই শুনতে পেলে মান সম্মান সব শেষ হয়ে যেতো।এখন আবার সবার সামনেই তাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাচ্ছে।লজ্জা শরমের মাথা পুরোটাই খেয়েছে নাকি!এম্বুলেন্সের লোকেরা এসে মিহিরকে নিয়ে যাচ্ছে।পিছনে যাচ্ছে মোহন সরদার।সোনালী বলে,”তুমি যাও আমি আসছি।টাকা নিয়ে যেতে হবে তো।”
মোহন সরদার কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।ধীরে ধীরে যে যার মত স্থান ত্যাগ করে।মাহমুদ সরদার হতাশার নিশ্বাস নিয়ে হামি তুলে বলেন,”আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।আমি ঘুমাতে গেলাম।”

মালিনীও একটু হামি দিয়ে চলে গেলো ভিতরে।
ঘরে এসে পা দিয়ে ঠাস করে লাঠি মেরে দরজা লাগিয়ে দিল রাজ।মায়াকে নামিয়ে ছিটকিনি দিয়ে পিছনে ঘুরল।মায়া এক ভ্রু উচু করে বলে,”হোয়াটস রং উইথ ইউ?”
“দেখিয়ে দিচ্ছি হোয়াটস রং উইথ মি।”

বলেই মায়ার ওষ্ঠ নিজের আয়ত্তে নিলো।মায়া ছাড়ানোর চেষ্টায় আছে।ফলাফল শূন্য।রাজ খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।মায়া হাত দিয়ে রাজের বুকে আঘাত করতে থাকে।এক সময় রাজের বুকে ব্যথা পায়।ব্যথায় দূরে সরে যায় রাজ।মায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো।রাজ মুখটা ব্যাথাতুর করে রেখেছে তাই।পাঞ্জাবির বোতাম সবগুলো খুঁজে বুকের ক্ষত দেখে নিলো।মায়া রাজের ক্ষত দেখে এগিয়ে এসে বলে,”সো সরি।ইচ্ছা করে আঘাত করতে চাইনি।আমি তো নিজেকে ছাড়াতে চেয়েছিলাম। যাই হোক আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে।”
রাজ ক্ষত থেকে চোখ সরিয়ে মায়ার দিকে চেয়ে বলে,”হাসপাতালে কেন?”

“মিহিরকে দেখতে।”
“এখনও মিহিরের ভুত মাথায় চেপে আছে!”
মায়া উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে নেয়।রাজ মায়ার হাত ধরে নিজের সামনে এনে কর্কশ কন্ঠে বলে,”আব্বে এই মায়াবতী!”
মায়া রাজের চাহনির দিকে শীতল হয়ে রইলো।রাজ আজ খুব ক্ষেপেছে।রাগার কারণটাই যথেষ্ঠ।কিন্তু মায়ার এসব দেখলে চলবে না।তার কাজ শেষ করতে হবে এখন।সময় নেই হাতে তেমন।সোনালীর সাথে থাকতে হবে তাকে।মায়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে এক সময় রাজের হাতে কামড়ে দেয়।রাজ ব্যাথা পেলেও হাত না সরিয়ে বলে,”লাভ বাইট!আই লাইক ইট মায়াবতী।”

“আমাকে যেতে দিন।”
“মরে গেলেও না।”
বলেই মায়াকে নিজের বক্ষে স্থান করে দেয়।মায়া স্তব্ধ হয়ে গেলো।মাথায় তার একটাই বিষয় ঘুরছে।সোনালীর সাথে বের হয়ে নেক্সট মিশন শুরু করা।রাজ সুযোগ দিচ্ছে না।মায়া সরে আসার জন্য রাজের গা আলগা করতে চায়।রাজ বুঝলো মায়া এমনই করতে থাকবে।তাই সে মায়াকে আরো বেশি জব্দ করে ধরে রাখে।মায়া একটু স্থির হলে রাজ মায়াকে কোলে তুলে নেয়।মায়া ভ্রুকুটি করে বলে,”হোয়াট?”

“আই অ্যাম ইন রোমান্টিক মুড।”
“সো হোয়াট?”
“আই নিড রিফ্রেশিং রোমান্স।যেটা আমাকে বাথরুম বিলাস দিতে পারে।”
“কি!”
“এখন আমার মুড বাথরুম বিলাস করতে তাড়া দিচ্ছে।”
“এসব কি কথা মন্ত্রী মশাই?”
রাজ বাক্য ব্যয় না করে মায়াকে কোলে করে নিয়ে গেলো বাথরুমে।বাথটাবের উপর শুইয়ে দেয়।মায়ার গা ভিজে গেলো।মায়া এদিক ওদিক তাকিয়ে রাজের দিকে চোখ স্থির রাখলো।বাথটাব থেকে উঠতে নিলে রাজ মায়ার উপর ঝুঁকে বলে,”একদম আমার মুড স্পয়েল করবে না।বাথরুম বিলাসে কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করুক এটা আমার পছন্দ না।”

মায়া হাত দিয়ে থাবা দিলো রাজের বুকে।রাজ ব্যাথা সহ্য করে মায়ার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে,”দুষ্টুমি করবে না মায়াবতী।মন্ত্রী মশাই রোমান্স করতে পারেনা তো।”
অতঃপর মৃদু হেসে মায়ার মুখটা আলতো করে ধরে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে নিজের কাছে এনে মায়ার ওষ্ঠ নিজের ওষ্ঠের মাঝে নিলো।মায়া লাফাতে থাকলেও রাজের যেনো আরো বেশি ভালো লাগছে।পা দুটি লাফিয়ে লাফিয়ে রাজের হাঁটুর উপর বাড়ি দিচ্ছে।শুধু মায়ার হাতটা রাজকে বাধা দিচ্ছে তার বাথরুম বিলাসে।তাই মায়ার হাতদুটো ধরে বাথটাবের বাইরে একত্র করে নিজের মুঠে করে নিলো।মায়ার হাত দুটো রাজের মুঠে।এখন রাজকে বাধা দেওয়া সম্ভব না।রাজ মায়াকে নিজের মনের মত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে।রাজের ওষ্ঠ এখনও মায়ার ওষ্ঠে মিশে আছে।দুজনের মধ্যে চুম্বন বিলাস হতে থাকে।মায়া আর বাধা দিলো না।মায়ার শাড়ির আচল সরিয়ে মায়ার গলায় চুম্বন দিতে দিতে হাতের কাছে চলে আসে।মায়াও এবার রাজকে সমর্থন করে নিলো।মায়ার চোখ বন্ধ।রাজ মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে সাদা পাঞ্জাবি খুলে বাথটাবের বাইরে নিচের মেঝেতে রাখে।অতঃপর মায়াকে নিজের সাথে মিলিয়ে নেয়।ধীরে ধীরে পূরণ হলো মায়ারাজের বাথরুম বিলাস।

সোনালী ঘরে এসে ফোন হাতে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে কল করে।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বলে,”আমরা বারবার নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করতে নিয়েও সেই মাঝপথে হেরে যাচ্ছি।এবার গেম পালটাও বিভান।আমাদের ব্যবসার সকল দুই নাম্বারী কাজ ধরা পড়েছে।সরকারি তরফ থেকে কোম্পানি বাতিল করার হুকুম এসেছে।তুমি কিছু করো নাহলে তোমার ছেলে বীর আর বোনের ছেলে রাজ দুজনকে আমি শেষ করে দিবো।”
“রিল্যাক্স সোনালী।ওদেরকে শেষ করলে ফর্মুলার দলিলগুলো পাবে কিভাবে?খুনের তদন্ত চলবে কিন্তু আবারও।”
“আমি আর নিতে পারছি না।আমাদের ছেলেকে আজ ঐ রাজ মেরে মেরে নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছে।”
“হোয়াট?”
“মিহিরের মুখে দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরেছে।মোহন ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে।আমি যতদূর বুঝেছি আমাদের এভাবে রিল্যাক্স হয়ে গা ভাসালে চলবে না।তুমি নিজেকে লন্ডনে সুরক্ষিত রাখলেও প্রতি মুহূর্তে আমি আর আমার ছেলে ভোগ করছি।”

বলেই সোনালী মিহিরের ঘরের দিকে যাচ্ছে। বিভান খান বলতে থাকে,”আমি তো আসবো এবার।আমার বড় ছেলে বিয়ে করেছে।তার গ্র্যান্ড ওয়েডিং পার্টি তো করতেই হবে।”
“মিহিরকে নিয়ে কি ভাববে না একবারও?”
বলতে বলতে যেই মিহিরের ঘরের ড্রয়ার খোলে।কিছু কাগজপত্র নিচে পড়ে যায়।যেটা দেখে সোনালী ভ্রুকুটি করে হাতে নিলো।কাগজগুলো পড়তেই সোনালীর চোখ বড় বড় হয়ে যায়।গলা উঁচিয়ে যেই বলতে নিবে,”আমরা ভুল জানি বিভান।এই মোহনা আসলে….

বলতে না বলতেই সোনালীর মাথায় হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করা হয়।সোনালী পড়ে যেতেই ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয় রুবি।মৃদু হেসে ফোন কেটে দিয়ে বলে,”হ্যাপি জার্নি আমার না হওয়া শাশুড়ি।”
জারা হকিস্টিক বেডের উপর রেখে রুবিকে বলে,”তাড়াতাড়ি ধরো ওনাকে।আমি গাড়ি নিয়ে গেটের কাছে যাচ্ছি।মায়াকেও জানিয়ে দিচ্ছি।ওনাকে নিয়ে এখনই আমাদের নেক্সট মিশন শুরু করতে হবে।”

জারা চলে গেলো।রুবি এসে সোনালীর হাত ও মুখ বেঁধে দেয়।বাইরে এসে আশেপাশে তাকালো রুবি।যে যার ঘরে আছে।সব জায়গা ফাঁকা এখন।একটু আগে খাওয়ানো শরবতে ঘুমের ঔষধ ছিল।যেটা খায়নি শুধু রাজ বীর ও রুদ্র।তারাও এখন একঘরে বসে ডিসকাস করছে হয়তো।বীরকে অবশ্য বাইরে বের হতে দেখেছিল রুবি।ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছে তাই।বাকিরা ঘুমে বিভোর।রুবি সোনালীকে নিয়ে বাইরে আসে।জারা গাড়িতে উঠেই মায়াকে ম্যাসেজ করে দেয়।সোনালীকে নিয়ে গাড়িতে উঠতেই জারা বলে ওঠে,”মায়া কখন আসবে?”
“ম্যাম তো আমাদের বলেছিলো সোনালীকে বাইরে থেকে অ্যাটাক করবে।তাই মনে হয় ফোন দেখছে না।নিজের মত আসবেন উনি।”

“সোনালী জেনে গেছে যে মায়াই আসল মোহনা।এখন তো আর বাইরে থেকে অ্যাটাক করা যায়না।মায়া তাড়াতাড়ি আসলেই ভালো।নাহলে হ্যান্ডসামের কাছে ধরা পড়লে সব শেষ।”
জারা টাইম দেখছে।মায়াকে রাজ নিয়ে গেছে ঘণ্টা দেড় তো হবেই।মায়ার তো নিজের ট্যাকনিক দেখিয়ে বের হয়ে আসার কথা।তাহলে আসছে না কেন?
রাজ বাথটাব থেকে উঠে শাওয়ারের নিচে দাড়ালো।পানি মাথা দিয়ে শরীর বেয়ে পড়ছে।সেই সাথে রাজের রাগ নিবারণ ঘটছে।মায়া অতি দ্রুত নিজেকে বাথটাবে ক্লিন করে নেয়।রাজের পিছন থেকেই বের হয়ে আরেকটা নীল শাড়ি পরে।রাজ বাথরুম থেকে বের হতেই মায়া ম্যাসেজ দেখে রাজের দিকে চোখ রাখে।রাজ কিছু বলার আগেই মায়া দরজা খুলে দিলো দৌড়।রুদ্র সিঁড়ি দিয়ে মায়ার দৌড় দেখে বলে,”ভাবীজি ধীরে।”

মায়া তোয়াক্কা না করে ছুটে গেলো।রুদ্রের হাতে চায়ের কাপ।রাজ আর তার জন্য।রুদ্র মায়ার দৌড় দেখে তেমন পাত্তা না দিয়ে রাজের কাছে যায়।মায়া দৌড়ে বাইরে এসে গাড়িতে বসতেই মায়ার ভেজা চুলের পানি জারার মুখে লাগে।জারা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মৃদু হেসে বলে,”দুই ভাই একদম সেম।রাগলে তাদের বউয়ের সাথে রোমান্স করাই লাগবে।”

মায়া মুখে কিছু না বলে সোনালীর দিকে তাকালো।রুবিও মুখ টিপে হাসে।জারা গাড়ি স্টার্ট দেয়।
রুদ্র এসে রাজের কাছে বলে,”ভাবীজী এভাবে ছুটলো কেন?”
রাজ মাথা গরম করে সাদা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে রিভলবার হাতে বাইরে যেতে নেয়।রুদ্র বাধা দিয়ে রাজকে বিছানায় বসায়।তারপর শান্তনা দিয়ে বলে,”এমন কিছু করো না যাতে ভাবীজী তোমাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।”
রাজ শান্ত হলো।রুদ্র আবারও বলে,”ভাবীজীর কিছুই হবেনা এটা শিওর থাকো।সে নিজেও তেজি আর মোহন সরদার তো আছেই।”

বলে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।রাজ চা নিয়ে চুমুক দেয়।মাথাটা একটু ফ্রেশ হচ্ছে এখন।
সিয়া বসে আছে একটি পার্কের বেঞ্চে।একা একা মন খারাপ করে আছে।হিয়া থাকলে এতক্ষণে ঝগড়া বাদিয়ে দিতো।দুইবোন একসাথে থাকা মানেই ঝগড়া।আজ খুব কষ্ট হচ্ছে সিয়ার।কান্না করে দিয়ে বলে,”কোথায় তুই বোন?আমার খুব একা লাগছে।তোর সাথে ঝগড়া করতে করতে আমি অভ্যস্ত।আমাদের মা আমাদের আলাদা করে দিলো।একটুও শান্তি পাচ্ছি না আমি তোর সাথে ঝগড়া না করে।আমি তো তোর সাথে সারাজীবন ধরে ঝগড়া করবো বলে তোকে আমার জা বানাতে চাই।তোর নষ্ট পুরুষ সেও তো তোর জন্য পাগল প্রায়।আমার খুব মনে পড়ছে তোর কথা। আয় বোন আমার কাছে আয়।”
হিয়া আসলো না।আসবে কিভাবে?সে তো মালিনীর কাছে।সিয়ার দিকে একটা হাত টিস্যু এগিয়ে দিলো।সিয়া পাশে তাকিয়ে দেখে আদ্র।টিস্যু নিয়ে চোখ মুছলো সিয়া।আদ্র বড় একটা আইস ক্রিম বক্স আর কয়েকটা চকলেট রাখলো বেঞ্চের মাঝখানে।সিয়া ওগুলো দেখে বলে,”আমি ডায়েট করি।”

আদ্র অবাকের সাথে বলে,”কেন?”
“কারণ আমি ভুটকি হয়ে যাচ্ছি তাই।”
“ডায়েট করতে হবেনা।এগুলো খাও।তোমার যা যা ভালো লাগে তাই খাবে।”
“হ্যাঁ তাই তো!পরে মোটা হলে আপনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন।এমনিতেও হুটহাট আপনি আমার সাথে কথা বলেন না। মোটা হলে তো আরো বলবেন না।”
“কে বলেছে তোমাকে এসব কথা?”
“হিয়া বলেছে।আমার বর নাকি আমাকে ভালোবাসবে না আমি ভুটকি,খাদক তাই।”
সিয়ার নাকে কান্নার মাঝেও আদ্র হেসে দেয়।সিয়া ধমকে বলে,”হাসবেন না।”

“ওকে ওকে হাসবো না।তাই বলে তুমি হিয়ার কথা শুনে নাকে কান্না করবে?তুমি না মেডিকেল স্টুডেন্ট।কিছুদিন পর হবু ডাক্তার হবে।শুধু আমার জন্ম ডাক্তার হলে হবে?মনোবল শক্তি বজায় রাখতে হবে তো।”
সিয়া টিস্যু দিয়ে নাক টেনে মুছলো।তারপর আদ্রের দিকে ফিরে বলে,”ডাক্তারদের স্ট্রং হতে বলা হয়েছে তাই বলে কঠোর না।সাহস রাখতে হবে রোগীকে সুস্থ করে দেওয়ার।তার জন্য আলাদা মন থাকা লাগে।রোগীর প্রতি সহানুভূতি না আসলে চিকিৎসা করবো কিভাবে?”

আদ্র হেসে দেয় তার প্রেয়সীর বোকা বোকা কথা শুনে।এই মেয়ে শুধু পড়াশোনা ভালো করে গেলো।বাইরের জগৎ সম্পর্কে ধারণা নিলো না।অবশ্য নিবে কিভাবে?তার স্বপ্ন জুড়ে তো আদ্র ও পরিবার।এগুলো বাদেও যে একটা জগৎ আছে এটা বুঝতে পারল না।এখন বুঝেছে বলেই এত কষ্ট পাচ্ছে।সিয়ার দিকে চোখ রেখে বলে,”মায়ের প্রতি অভিযোগ অনেক জমেছে তাই না?”
“এটাই কি হবার না?মায়ের কষ্ট আমি বুঝি।কিন্তু বাবা আমাদের মাকে ভালোবাসে না এটা একদম ভুল।বাবা তো মাকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করেছে। মাই তো তার প্রথম সন্তান হারিয়ে দিশেহারা।বাবাকে বুঝতে পারল না।ওই বাজে লোকগুলোর সাথে হাত মেলালো।”
“আন্টির মনে বিষ পুষেছে ওরা।একদিন ঠিক হয়ে যাবে সব।”
“হুম…”

আদ্র আইস ক্রিম এগিয়ে দিলো সিয়ার দিকে।সিয়া নিতে না চাইলেও আদ্র বলে,”আমি আমার জন্য একটা ভুটকি বউ চাই।তাই এই আইস ক্রিম খেলে তোমার সমস্যা নেই।”
সিয়া ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে নিলো।দোটানায় থাকার জন্য এমনটা হলো।আইস ক্রিম খেতে খেতে এক সময় সেও আদ্রকে দেখে হেসে দেয়।
রাজ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।বীর বাইরে যায় একটা ফ্যাক ক্লায়েন্ট তার কাছে এসেছিলো তাকে জব্দ করতে।ফিরে এসে দেখে রুদ্র এখন রাজের পাশে বসে আছে।বীর ওদের পাশে বসে বলে,”কি হলো আবার?”
“এখনও একই অবস্থানে আছে সবাই।”
“বাড়িটা এমন নীরব কেন?বাকি সদস্য কোথায়?”
“মেলোড্রামা শেষ সবাই নিচ্ছে রেস্ট।”

বীর মৃদু হেসে রাজের দিকে তাকিয়ে দেখে রাজ এখনও ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।বুঝলো এখনও বউকে নিয়ে চিন্তিত।তাই বলে,”আরে ভাই তুই কি অন্ধ নাকি বউকে এখন চিনতে পারছিস না?”
রাজ গম্ভীর কণ্ঠে বলে,”আমার জীবন থেকে একেক করে সবাই হারিয়ে যাচ্ছে।ছোটবেলায় মা তারপর দাদু।বাবার যত্ন তো পেলামই না মাতৃ সমতুল্য ছোট মায়ের স্নেহটুকু হারালাম।একমাস হয়ে গেলো ভাইকে হারালাম।এখন আমার মায়াবতীও আমাকে চিনতে পারছে না।একেক করে সবাই কেমন বিদায় নিচ্ছে আমার থেকে। আর তুই বলছিস আমি অন্ধ হয়ে গেছি?আমার বউকে আমি চিনতে পারছি না!”
“তোর মায়াবতী তোকে চিনতে পারছে ভাই।শুধু অভিনয় করে গেলো।”
রাজ মুখ ঘুরিয়ে বীরের দিকে তাকালো।বীর আবারও বলে,”তোর হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হলেও আমি এখনও ভালো করেই পরখ করেছি।বোন আমার একই রকম আছে।তোকে কয়েকবার ইঙ্গিত দিয়েছে তুই বুঝিসনি।”

“আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছে?”
“স্মৃতি হারানো মেয়েটা এখনও তোকে মন্ত্রী মশাই বলল।তার আসনেই বসলো।এমনকি এটাও বলেছে তার জিনিসে যেনো কেউ নজর না দেয়।এগুলো কি এনাফ না বুঝতে?”
রুদ্র ভাবছে বীরের কথা।হিসাব মিলিয়ে বলে,”আমারও খটকা লেগেছিল কিন্তু কনফার্ম হতে পারছিলাম না।ভাই আসলে একবার এই বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম।দরকার হলে নতুন টেস্ট করাতাম।তাই চুপ ছিলাম।কিন্তু আমার কথা হলো ভাবীজী এখন কেন স্মৃতি হারানোর অভিনয় করলো?”
“এটা তো নিজেও ধরতে পারছি না।বোনের তো একটাই উদ্দেশ্য মোহন সরদার ও তার প্রেজেন্ট ওয়াইফকে সেই সাথে সন্তানকে শাস্তি দেওয়া।”
রাজ শুনছে এদের কথা।বুঝলো তাহলে মিহিরকে আঘাত করানোটা মায়ার একটা প্ল্যান ছিল।এবার রাজের ঠোঁটে হাসি ফুটলো কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার বলে,”তুই আসার সময় পুরো বাড়ি ফাঁকা দেখেছিস তাই না?”

“হ্যাঁ।”
“তোর বউ আমার বউ এরা তাহলে কোথায়?”
“জানি না তো।”
রুদ্র উঠে দাড়িয়ে বলে,”যদি ভাবীজীর প্ল্যান ওই সোনালীকে শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তো ভাবীজী…..
রাজ দৌড় দেয়।রুদ্র,”শিট” বলেই ছুটে গেলো।সেই সাথে গেলো বীর।রুদ্র দৌড়ে গেলো মিহিরের ঘরের।বীর দৌড়ে গেলো সোনালীর ঘরে।রাজ গেলো লকারের দিকে।কোথাও কেউ নেই।রাজ ফোন বের করে রুদ্র আর বীরকে ডাকতে নিবে ওমনি দেখে মায়ার ম্যাসেজ,”সরি মন্ত্রী মশাই।আমি আপনার প্ল্যান সম্পর্কে জেনেছি।আপনি এই সোনালীকে শাস্তি দিবেন না।এটা আমার জন্য হতাশার হলেও আমি হাল ছাড়বার পাত্রী না।আমি জানি আপনি আমাকে খুব ভালোবাসেন আপনার এক আকাশ জুড়ে আমি আছি কিন্তু এই সোনালীর ব্যাপারে আমি আপনার থেকেও কোনো পরামর্শ নিবো না।আমি আমার জীবনের তিক্ত অতীতের বদলা নিবো।এটাই তো আপনার মায়াবতীর ইচ্ছা।”
রুদ্র ও বীর রাজের কাছে এসে বলে,”কি হলো?”

“মস্ত বড় ভুল করে ফেললো মায়াবতী।সোনালীকে নিয়ে বের হয়েছে।কোথায় গেছে। জানিনা।”
রুদ্র কল করে জেসিকে।জানায়,”মিসেস সোনালীর জন্য ইমিডিয়েট চারপাশে খোঁজ লাগাও।আমি আমার মত সার্চ করছি।”
কল কেটে রাজের দিকে ফিরে বলে,”আশা করি বেশিদূর যেতে পারেনি ওরা।যেভাবেই হোক সোনালীকে জীবিত রাখতেই হবে।ওই আমাদের শেষ সম্বল।”
বীর রাগান্বিত হয়ে কল দিলো জারাকে।জারা রিসিভ করতেই বীর বলে,”কাজটা ঠিক করলে না জানেমান।বিশ্বাস করেছিলাম আমি তোমাকে আবারও বিশ্বাসে আঘাত করলে।এবার তোমার ডানা আমি কেটেই ফেলব।”
“তুমি নাহয় আমার জীবনটাই নিয়ে নেও হ্যান্ডসাম।আমার কাজ শেষ হলে তুমি যদি আমাকে মেরেও ফেলো আমার আফসোস নেই।বরং তুমি আমাকে মেরে ফেললে আমি শান্তি পাবো।শেষে এসে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কষ্টটা আর পাবো না।”

“কে মুখ ফিরিয়ে নিবে তোমার থেকে?”
“তুমিই নিবে হ্যান্ডসাম।”
“আমি একবারও বলেছি আমি মুখ ফিরিয়ে নিবো?”
“আমি জানি তুমি তাই করবে।তুমি কারো পরোয়া করোনা কিন্তু তুমি তোমার আপনজনদের খুব ভালোবাসো।”
“কিসের মধ্যে কি ঢুকিয়ে দিলে তুমি?”
“সময় গুনতে থাকো।দুইদিন পর বুঝবে।”
জারা কল কেটে দিলো।বীর অবাক হয়ে আছে।জারা মায়ার সাথে মিলে কি করতে চাইছে?সোনালীর ক্ষতি করে মায়ার বেনিফিট থাকলেও জারার কী বেনিফিট আছে বুঝলো না বীর।রাজ বীর রুদ্র তিনজন তিনজনের দিকে তাকালো।খেলা ঘুরেগেছে পুরোপুরি।যেটা সাজানো ছিলো তার উল্টো খেলা আজ হয়ে গেলো।রাজ এটুকু শিওর মায়া আজ ওর সিক্রেট রুমে সোনালীকে নিবে না।কারণ মায়া চায়না রাজ সোনালীকে নিজের নাগালে পাক।রাজ যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চলতো এগুলো কিছুই হতো না আজ।

সোনালীর হাত পা মুখ বাঁধা।ছোটাছুটি করছে শুধু।অন্ধকার পরিবেশের মধ্যে কোনো প্রকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এর ব্যবস্থা নেই।তিনজনের ফোনের আলো জ্বলছে শুধু।সোনালী তিনজনকে দেখছে।মায়া জারা আর রুবি।জারা এগিয়ে আসলো সোনালীর কাছে।সোনালীর মুখোশ্রীতে চোখ বুলিয়ে বলে,”কষ্ট হচ্ছে খালামণি।তোমাকে কষ্ট দিতেই তো এনেছি।একটা ভুল জানো তো আমি বারবার করছি।তোমাকে খালামণি বলে বড্ড বেশি ভুল করছি।আসলে তুমি আমার খালামণি না তুমি একজন ডাইনি।”

বলেই সোনালীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।তারপর বলে,”সেদিন যদি জানতাম যে তুমি আমার মাকে ধর্ষণ করাতে বাঁধা না দিয়ে বরং সেই কাজগুলো ধামাচাপা দিয়েছো অন্যজনকে টাকা খাইয়ে।তাহলে আমি তোমাকে ওইদিন মাটিতে পুঁতে রাখতাম।আমার ছোটবেলা কেড়ে নিয়েছো তুমি।আমি কত বড় বোকা যে কিনা মায়ের ভালোবাসা দেওয়া দেখে তোমাকে আমার সবকিছু ভেবে এসেছি।তোমার কথায় উঠেছি বসেছি।তুমি বলেছো এখানে যাওয়া যাবে না আমি যাইনি তুমি বলেছো ওখানে যাও আমি গেছি।তোমার কথায় আমি মায়ারাজকেও আলাদা করতে গেছিলাম।কোনকিছু না জেনে রাজের সাথে ফ্লার্ট করতাম।ভাগ্যিস আমি মায়াকে দেখে কিউরিসিটি নিয়ে আলাদাভাবে ওর খোঁজ নিতে চাই।ঠিক সেদিন জানতে পারি আমার মাকে ধর্ষণ করা হয়।জানো তো আমি আমার বাবার ক্ষমতা পেয়েছি।”

সোনালীর চোখ বড় বড় হলো।জারা ভিলেনী হাসি দিয়ে বলে,”কিভাবে পেলাম এটাই ভাবছো তো?তাহলে শোনো আমার থেকে।মায়া তো আমার ওয়ান এন্ড ওনলি হাসব্যান্ড এর বোন।ওর ক্ষমতা ছিলো ছোট থেকেই।যদিও সময়টাতে আমি এগুলোর কিছুই জানতাম না।যখন মায়া ফ্যাশন ডিজাইনের কোর্স শেষ করতে নিবে তখন আমিও ফ্যাশন ডিজাইনের জন্য ওখানে যাই।তুমি বুঝতে পারছো না তাই না?বলতে গেলে মায়া আর আমি একই ভার্সিটিতে ভর্তি হই।এটা জানো তো একটা মীরাক্কেল হয় আমাদের সাথে।না আমি জানতাম এই সেই মায়া যার মাধ্যমে আমার জীবনের সত্য ঘটনা জানতে পারব আর না মায়া জানতো আমি সেই মেয়ে যে তার পুতুল বরের সাথে ফ্লার্ট করি।

মায়া আমার চার বছরের সিনিয়র।তো আমি ওর মতো টপে থাকার জন্য ওর সাথে বন্ধুত্ব করি।এরপর আমাদের সুখ দুঃখের কথা জানাই।যখন মায়া জানতে পারে আমি তোমার বোনের মেয়ে তখন ও আমাকে নিয়ে গভীরে সার্চ করে।লাকিলি আমার বাবা মায়ের সবকিছু জেনে যায় মায়া।কিন্তু কারা এগুলো করেছে এটা জানতে পারেনা।যেটুকু জেনেছিল সব আমাকে বলে।আমিও তারপর তদন্ত শুরু করি।মায়ার জীবনের কোনো ঘটনা আমি জানতম না।শুধু জানতাম মায়া অনাথ।ওর একটা ভাই আছে।যার অবদান ওর জীবনে অনেক বেশি।মায়া আমার জীবনের অর্ধেক ঘটনা জেনে যায়।সাথে এটাও জানতে পারে আমার মায়ের ধর্ষিতার সাথে তোমার কন্টাক্ট আছে।কিভাবে জানো?যাকে তুমি টাকা দিয়ে রেপিস্ট সাজিয়ে জেলে ঢুকিয়েছিলে তার পরিবার বলেছে আমাকে।প্রথমে মায়ার কথা আমার বিশ্বাস হয়নি।কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে মায়া সঠিক হলো।তুমি যাকে জেলে পাঠাও তার বউ তোমার ক্ষতি করার জন্যই উঠেপড়ে লাগে।জানালো আমাদেরকে সবকিছু।তখন থেকে আমার উদ্দেশ্য তোমাকে খুন করা।কিন্তু আমার তো জানা দরকার কে সেই জানোয়ার যে আমার মাকে ….

জারা থেমে আবার বলে,”আমার মায়ের অন্যায় কি ছিল?একজন ভালো মাফিয়ার বউ হওয়াটা?আমার মা তো সবসময় তোমাকে ভালো ভালো জিনিষ দিয়ে দিতো।তোমার ছোটবোন হলেও সেক্রিফাইজ আমার মাই সবসময় করতো।নানীর কাছে শুনেছিলাম ছোট থেকেই ভালো খাবার বেশি বেশি খাবার তোমাকে দিয়ে মা হাসিখুশি থাকতো।পোশাকের বেলাও তাই।তুমি তাকেই এভাবে মেরে দিলে?বোন হয়ে বুক কাপলো না?তুমি তখন কিছু করতে না পারো অন্তত পরে ওই লোকটাকে জেলে পাঠাতে।আমি তাও মানতাম যে তুমি তোমার বোনের জন্য কিছু চেষ্টা করেছো।তাও তো করলে না।মায়া আমাকে আমার বাবার ক্ষমতা অর্জন করতে সুযোগ দেয়।

তখন থেকেই আমি ফাইট শিখেছি আর বাবার যতগুলো একাউন্ট ছিলো নিজের করার জন্য একেক জায়গায় দৌড়েছি।আমার NID কার্ড নিয়ে ছোটাছুটি করেছি।এই মেয়েটাই আমার সাথে ছিল তখন।এরপর দুজন দুইদিকে ব্যাস্ত হই।ও ওর মত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে থাকে আমি আমার মত আমার ক্ষমতা অর্জন করতে থাকি তোমাকে আর তোমার ঐ প্রেমিককে শেষ করবো বলে।হঠাৎ আমি যখন জানতে পারি তুমি বিভান খানের সাথে নোংরা খেলা খেলছো সেই বিভান খান যে কিনা আমার মাকে….. ছিঃ!তখন আমার টার্গেট হলো তার আপনজনকে আঘাত করা।বিভান খানের সম্পর্কে খোজ চালালাম।জানতে পারলাম তার ছেলে আরহাম খান বীর।

টার্গেট করলাম তাকে আমার প্রেমে ফাসাবো।প্রেমে পড়লে তো ভালো নাহলে অন্যভাবে হেনস্থা করবো।আমার ভাগ্য আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি তাই আমার হ্যান্ডসাম আমাকে ভালোবাসে।আমি ওকে মৃত্যুর মুখে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।ওটাও আমার অভিনয় থাকে।ওকে বুঝিয়ে দেই আমি ওকে ধোঁকা দিয়েছি কিন্তু ওর আড়ালে আমি ওকে বাঁচাতে আমার লোকেদের রেখে আসি।তারপর আমার কোনো প্ল্যান করতে হয়নি।আমি আমার শ্বশুরকে দেশে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।এদিকে মায়ার উদ্দেশ্য তোমাকে আর মোহন সরদারকে নাকে মুখে চুবানি দিয়ে তারপর নিজের হাতে শেষ করবে।”

“শুধু পারল না মন্ত্রী মশাই আমাকে অতি দ্রুত বিয়ে করে নেয় তাই।”
“দুজনেই আবার মাঝপথে সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম।আমি জানতে পারলাম মায়া বীরের পালিত বোন আর রাজের মায়াবতী।আমার কাছে সবকিছু আবার গোলমেলে লাগে।কন্ট্যাক্ট করি মায়ার সাথে আবারও।প্ল্যান করি মায়ার অতীতের সম্পর্কে আরো জানার।বিশেষ করে ফর্মুলা সর্ম্পকে।যেটার জন্য তুমি মায়ার ছোটবেলা কেড়ে নিয়েছো।আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য তোমার সব ধরনের অপকর্ম খোঁজ করে সেগুলোকে ভণ্ড করে দেওয়া।নাহলে তুমি নিঃশেষ হয়ে গেলেও তোমার পাপ তো থেকে যাবে।যা অন্যকেও জর্জরিত করে দিবে।বলা তো যায়না আমার মত মায়ার মত আর কতজনের দিকে এখনও চেয়ে আছো ক্ষতি করবার।”

মায়া এগিয়ে এসে বলে,”মোহন সরদারের ব্যবসায় লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়েই ওনার বড় ভুল করে দিলাম তো আমরা।ওনার দুই নাম্বার বিজনেস তো সব বন্ধ হয়ে গেছে।এখন ওনাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।কারণ ফর্মুলা কোথায় এটা তো আমরা জেনেছি।”
সোনালী ভ্রুকুটি করে।জারা মুখ খুলে দিতেই সোনালী বলে,”তুমি!তুমি খুব বড় খেলোয়াড় হয়েছো কিন্তু কিভাবে হলে?তোমার বাবার ঘিলু তো নড়বড়ে।তোমার মাও তো আবার সরল সহজ।তার মেয়ে এত চালাক!”
“পরিস্থিতি সব শিখিয়ে দেয়।সে যাই হোক আমার অভিনয় কেমন লাগলো বলুন?”
“তার আগে বলো আজকের অভিনয় করার কারণ কি?”

“ভেরি সিম্পল।আপনার ওই নষ্ট ছেলে আমার সব সত্যিটা জেনে যায়।কিন্তু আমাকে এক্সপোজ করেনা।রুবি তো আপনাদের ফলো করে।তাই ও জারাকে জানিয়ে দেয়।জারা অবাক হয়ে হাসপাতালে আমার জন্য সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দেয়।সেই সাথে আমার স্পাইম্যান তো আছেই।মিহির যখন ডক্টরের সাথে কথা বলে আমাকে সবকিছু ভুলে যাওয়ার মেডিসিন পুষ করতে বলে ওটা আমরা জেনে নেই।তারপর এটাও জানতে পারি আপনার ওই ছেলের নজর আমার উপর পড়েছে।তাই প্ল্যান একটু সাজালাম।যেনো আমি আপনার কাছে ধরা পড়ার আগেই আমার কাজ শেষ করে দেই।কারণ আপনি যে ধূর্ত।আমাদের আড়ালে নতুন প্ল্যান করবেন না এটা তো হয়না।মিহির দুর্বল হয়ে গেলেও আপনি তো হবেন না।”

“খুব ভালই খেলেছো কিন্তু কাজে আসবে না।কারণ ফর্মুলা কোথায় এটা জানলেও ফর্মুলা হাতে ধরা তো দূর ছুঁতেও পারবে না।”
“আপনার বিনাশ যখন করতে পারবো ফর্মুলাও ছুঁতে পারবো।শুধু ছুঁয়ে দেখা না ফর্মুলা আমি কাজেও লাগাবো।”
“কিভাবে জানলে ফর্মুলা কোথায়?”
“আপনার ছেলে আমার অজ্ঞানের সুযোগ নিয়ে আপনার সাথে অনেক কথা বলছিল।মনে আছে কাল রাতে আমার জ্ঞান ফেরার আগে।ভেবেছিল আমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে।জ্ঞান নেই এখন।এই সুযোগে কেবিনের সোফায় বসে বসেই সবকিছু বলে দেয়।এছাড়া আমরা আপনার আর আমার মামা শ্বশুরের ব্যাপারে জানতে পেরেছি।আপনাদের একটা সিক্রেট বাংলো আছে।আপনাদের পারসোনাল মুহূর্ত ওখানে।যেগুলোর কিছু ছবি এখন মোহন সরদারের কাছে।”

সোনালী চোখ বড় বড় করে।জারা বলে,”এতকিছু হয়ে যাচ্ছে আরেকটা ঝটকা দেই তাহলে?”
“কি?”
“তাজ বেঁচে আছে।”
“হোয়াট!”
“হুম।ওইদিন আমি পৌঁছানোর আগে মায়া পরিবেশ দেখেই আইডিয়া করে নেয় কি হতে চলেছে।এত বড় খাদ।ওরা তো চাইবেই খাদে ফেলতে যে কাউকে।তাই মায়া আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানায় ওখানে ফোর্স নিয়ে যেতে।সবাই টার্গেটে ছিলো তাজ বা মায়া নিচে কেউ একজন পড়লেই ওরা বাঁচাবে। তাজ পড়ে গেলেই ওরা হাজির হয় কিন্তু বড় পাথরের উপর পড়ার কারণে তাজের মুখ থেতলে যায়।এজন্য সার্জারি করা হচ্ছে তাজকে।এন্ড ইউ নো হোয়াট!তাজ এখন মিহিরের রূপ পাবে আর মিহির ওপারে চলে যাবে।”

“নাহ!তুই আমার ছেলের কিছু করবি না।”
“তুমি আমার মা বাবাকে খুন করবে আর আমি তোমার ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখব!এটা ভাবলে কিভাবে?”
“জারা আমি তোকে বড় করেছি।তার জন্য হলেও দয়া দেখা আমার ছেলেকে।”
“আচ্ছা দেখাবো একটা শর্তে।”
“কি?”
মায়া বলে,”ফর্মুলার ডকুমেন্ট কোথায়?”

“এগুলো তো আমি নিজেও খুজছি।তুমি আর তোমার মা জানো।তোমার মা তো বেঁচে নেই তাই তুমিই ভালো জানো।”
“আমি জানি না বলেই তো আপনি এতদিন বেঁচে আছেন।নাহলে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখা আমার জন্য কষ্টকর।”
“আমার কাছে শুধু ফর্মুলা আছে কিন্তু ডকুমেন্ট নেই।ডকুমেন্ট পেতে গেলে প্রপার্টির সমস্ত কাগজপত্র নিজের করতে হবে।যেটা রাজের নামে মহসিন সরদার করেছে।বাড়িটা তো সেই বানিয়েছে।সিক্রেট রুম সম্পর্কে আমাদের আইডিয়া নেই।যেটা জানার জন্য আমি চেয়েছিলাম রাজকে জারা বিয়ে করুক।তাহলে প্রপার্টি পেপার আমি জারার মাধ্যমে নিজের করে নিতে পারবো।ওখানেই সব ডিটেইলস দেওয়া আছে।আর্ট করা আছে কোথায় সেই সিক্রেট রুম যেখানে ফর্মুলার ডকুমেন্ট রাখা।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৩+৫৪

মায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,”দাদুও সিক্রেট রুম করে রেখেছে!আমাদের তাহলে আবার সরদার মহলে যেতে হবে।”
“হ্যাঁ,আবার যাই তারপর আমাদের স্বামীরা পাঁজাকোলা করে আমাদের রুমে নিয়ে ইন্টি বিন্টি খেলুক।”
জারার কথা শুনে রুবি হেসে দেয়।মায়া চোখ গরম করে তাকায়।

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৭+৫৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here