মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬১+৬২

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬১+৬২
ইশরাত জাহান

নিজের ঘরে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে মায়া।রাজ আছে মাহমুদ সরদারের সাথে নিজস্ব আলাপে।জারা এসেছে মাত্র।পিছন থেকেই জিজ্ঞাসা করে,”এখন কি করবে?”
“খবর পেলাম নতুন।”
“কিসের?”
“মালিনী খান সবকিছুর সাথে ইচ্ছাকৃত যুক্ত না কিন্তু সে বাধ্য হয়ে এসব করছে।”
“কিভাবে জানতে পারলে?”

“আমার যে স্পাইম্যান ও সোনালীকে ফলো করতো।কালকে থেকে মালিনী খানকে ফলো করা শুরু করে।কারণ আমাদের নেক্সট টার্গেট তো সে।মালিনী খান খুব ধূর্ত মহিলা। একটু ভুল তার জীবনে হলো সেটা তার সন্তান হারিয়ে যাওয়া।ইনফ্যাক্ট সন্তান জীবিত আছে।এখনও কোথায় আছে এটা জানে বিভান খান আর সোনালী।ওরাই কিডন্যাপ করে রেখেছে সেই সন্তানকে।সন্তানের নাম কি দেখতে কেমন কিছুই জানেন না মালিনী খান।জানতে পারবে ঠিক তখন যখন সে ফর্মুলা উদ্ধার করে দিতে পারবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ব্রেনটাকে খুব ভালোভাবে সাজিয়ে রেখেছে বিভান খান।নিজের বাবাকে খুন বোনকে খুন আরেক বোনের সন্তানকে কিডন্যাপ!এছাড়াও আরো তো আছেই।মালিনী খান ধৈর্য ধরে দুইদকে খেলছেন।একদিকে সন্তানদের সুরক্ষিত রাখছেন আরেকদিকে ফর্মুলার হয়ে কাজ করছেন।এখনও বিভান খানের আশেপাশে গিয়ে খোঁজ নেয় কোনো যুবক আছে কি না।মোস্ট ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো বিভান খানের হয়ে কোনো যুবক কাজ করতে গেলে তার সাথে মালিনী খান গোপনে ডিএনএ টেস্ট করে।হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে দেখবার জন্য তার মনটা খুব ছটফট করছে।নিজেদের গ্যাংয়ের কাউকে দেখলেই তার মনটা হয়তো জানান দেয় ভাই তার সন্তানকে খারাপ পথে রেখেছে গোপন ভাবে।মা তো এমন করছে।”

“তাহলে কি আমরা প্ল্যান চেঞ্জ করবো?মালিনী খানের কোনো ক্ষতি করবো না।”
“ক্ষতি আমরা করবো না এটা ভুল।শত্রুকে মারতে হলে তার আশপাশের শক্তিগুলোকে দুর্বল করতে হবে।ঠিক যেমন সোনালীর করেছিলাম।মিহিরকে দিয়ে সোনালীর কিডন্যাপ।ঠিক তেমনই দুর্বল মালিনী খানকে দিয়ে হবে বিভান খানের বরবাদ।”
“আইডিয়া মন্দ না কিন্তু তাজের ব্যাপারটা?”
“আমি বুঝতে পারছি না তাজের খোঁজ চলছে যেখানে মন্ত্রী মশাই কিভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করে।মিলির অবস্থাটাও তো ভালো না।সিয়াও এখন এক কোণায় পড়ে আছে কষ্টে।”

“এগুলো রাজনীতির একেকটা চাল।তোমার মন্ত্রী মশাই একজন মন্ত্রী তাকে বুদ্ধি দিয়ে খেলতে হয়।পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে যদি নিজেকে দুর্বল রাখে তাহলে বিরোধী দল হামলা করবে।মনে আছে তো সামান্য বুকে গুলি লাগার পরপরই কিন্তু শাহমীর রাজকে দুর্বল ভেবে তার ভাইকে কিডন্যাপ করা হয়।এটাই হলো শক্রদলের উদ্দেশ্য।ওরা সুযোগ খোঁজে কখন একটা দুর্বল স্থান পাবে আর সেই বরাবর আঘাত করবে।এখানে হয়তো এমনটাই হয়েছে।সুবিধা কিন্তু আমাদের।আমরা এই সুযোগে দাদুর ঘর খুজবো।”

“সম্ভব না জারা।সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।ঠিক দাদুর ঘর বরাবর আর হলরুমে।”
মায়া একটু থেমে আবার বলে,”আচ্ছা তাহলে আমরা যে সোনালীকে কিডন্যাপ করিয়েছি এটাও তো ধরা পড়ার কথা।তাহলে কি আমরা ধরা পড়েছি?এই জন্যই কি বিভান খান আজকে শান্ত ছিলো যে সোনালী আমাদের কাছে আছে বলে কোনো চিন্তা নেই।এই অনুষ্ঠানে সুযোগ বুঝে সোনালীকে উদ্ধার করবে।”
“হতেও পারে কিন্তু এমনও হতে পারে যে ফুটেজ এখনও কেউ চেক করেনি অথবা ফুটেজ শুধু মালিনী খান আর সোনালী জানে আর কেউ না।কারণ সব দেখার পর তোমার আমার উপর হামলা আসতো বিশেষ কর রুবির উপর।আমরা সকলেই কিন্তু সুরক্ষিত এখনও।”

“হুমমম,ওই বিভান খান অন্তত রুবিকে হামলা করতো।এটা যখন করেনি তারমানে ফুটেজ অন্যকেউ সরিয়েছে যে আমাদের ভালো চায় অথবা তারও কিছু চাওয়া পাওয়া আছে।”
“কে হতে পারে সে?”
“জানি না কিন্তু বের তো করতে হবেই।”

“হুমম,একেক করে সবাইকে শেষ করে দিবো।যারা আমার মাকে অত্যাচার করেছে কাউকে ছাড়বো না।ওই সোনালীর সাথে মিলে মোহন সরদার আমার মাকে অত্যাচার করেছে।আমার মাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি।কালো বলে হেয় করতো।এমনকি আমার বোন যখন মায়ের গর্ভে সেই অবস্থায় রাতের বেলা অসহায়ের মত কান্না করে মা।স্বামী হিসেবে একজন গর্ভবতী বউকে দয়া দেখায়নি লোকটা।বাবা হয়ে আমার দিকে মুখফিরে তাকালো না। গর্ভে থাকা বোনটা এই রাজপ্রাসাদে না হয়ে হলো রাস্তায়।আমরা এত ভালো পরিচয় থাকতেও আজ এতিম।”

মায়ার চোখ জ্বলজ্বল করছে। জারা হাতটা এগিয়ে মায়ার কাঁধে রাখলো।দুজনের মাঝে নীরবতা।এরমধ্যেই শুনতে পায়,”আমাদের অনাথ হবার পিছনে আমাদের বাবাই দায়ী!আমাদের বাবা আর কেউ না ওই মোহন সরদার?”
মৌয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে পিছন ফিরল মায়া।মৌয়ের চোখ ভেজা।ফুলে ওঠা পেটে হাত দিয়ে রেখেছে।গা কাপছে একটু একটু।মায়া এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে।মৌ কান্না। করে বলে,”বলো না আপু আমি কি ভুল কিছু শুনেছি?”
মায়া মিথা বলতে পারলো না।মাথা দুলিয়ে বুঝিয়ে দিলো হ্যাঁ।মৌয়ের পাল্টা প্রশ্ন,”কেন করলো লোকটা এমন?”

“কারণ তার ওই সময় সৌন্দর্যের প্রতি চাহিদা বেশি ছিল তাই।আমাদের মায়ের কারণে যে লোকটা তার ব্যবসা দার করালো এটা মনেই রাখলো না।স্বার্থ শেষ মার মর্মটাও শেষ।এরপর ওই কালনাগিন সোনালী হাজির হয়।সে এসেই সব অশান্তি শুরু করে।কর্মফল ভোগ করতে হয় বোন।আমরা তো শাস্তি দিবো কিন্তু ওই লোকটা এমনিতেও দ্বিতীয় সংসারে সুখে নেই।জানিস তো এতদিন আমি তাকে শাস্তি না দিয়ে কেন বসেছিলাম?কারণ তার এই ব্যর্থ জীবন আমাকে তৃপ্তি দেয়।কোনো সন্তানের কাছে বাবার ব্যর্থতা তৃপ্তির হতে পারেনা।

একমাত্র আমার মত মা হারানো মেয়ে পারে বাবার ব্যর্থ জীবন চোখ জুড়িয়ে দেখতে।লোকটার সম্পত্তি বলেও এখন কিছু নেই।আমার মন্ত্রী মশাই কিনে নিয়েছে।তাও ব্যাবসা দার করাতে পারছে না।এগুলো দেখতে থাকলে কি আর মন চায় আলাদা কিছু এত দ্রুত করতে?আমিও তাই লোকটাকে তিলে তিলে শেষ হতে দেখছি।শান্তি লাগছে খুব।অনেক অনেক অনেক শান্তি লাগছে তার এই কুড়ে কুড়ে শেষ হওয়া দেখতে।জানিস বোন তুই যখন মায়ের গর্ভে ছিলি তখন ওই লোকটা আমাদের মায়ের চুলের মুঠি ধরে ঠিক এখানটায় হিঁচড়ে ধরে চাবুকের আঘাত করে।আমি তখন ওই লোকের পা ধরতাম অনুরোধ করতাম।মাকে ছেড়ে দিতে বলতাম কিন্তু শুনতো না।বরং মালিনী খান আর সোনালী এসে আমাকে টেনে নিয়ে যেতো।তাজকে দেখিয়ে মন্ত্রী মশাই সাজিয়ে আমাকে আঘাত করাতো।সবাই টেবিলে বসলে মা বসত নিচে।মালিনী খান প্লেট ছুঁড়ে দিতো তার সামনে।খাবারের প্লেটটাও মা পেতো অনিহার সাথে। আর কিছু শুনতে চাস তুই?”

মৌ মাথা নাড়িয়ে বলে,”আমি সহ্য করতে পারছি না আপু।উনি এত খারাপ।আমাদের কপাল এত খারাপ?আমাদের বাবা আমাদের মাকে এত আঘাত করতো।লোকটা রূপ গুণের এত পাগল!”
“গুণ না গুণ না শুধু বল রূপ আর আধুনিক চলাফেরা।যেখানে পার্টি করা হয় মাস্তি করা হয়।ওই জীবনটাই তো সে চেয়েছিল।সবকিছুর শেষ প্রকৃতি তাকে দেখিয়ে দিলো।আজ তার অহংকার নেই।আজ তার সেই সুন্দরী বউ কাছেও নেই আর তার অহংকার করা সন্তানটাও নেই।দেখতে ভালো লাগছে না ওনাকে এভাবে শেষ হতে দেখতে বল?আমার কিন্তু খুব ভালো লাগছে।কারণ আমি মায়ের কষ্টটা নিজ চোখে নিজের সামনে দেখেছি।আমি তো খুব উপভোগ করছি।”

মায়ার চোখ বড়বড় হয়ে আছে সাথে হাত পাও কাপছে।শুধু তাই না মায়ার চোখ দিয়েও পানি দেখা দিলো।ঠোঁটে হাসি ভয়ানক হাসি।এই হাসির সাথে কথা বলতে দেখে মৌয়ের ভয় বাড়ছে।হ্যাঁ তার বোন একটু রাগী কিন্তু এমন সাইকো রূপ কখনও দেখেনি।মায়ার মস্তিষ্ক ঠিক নেই।প্রধান কথা হলো মায়া গর্ভবতী মন কখন কেমন হয় বলা যায়না দ্বিতীয় কথা মায়ার মায়ের কথা মনে পড়লেই ওর মাথা ব্যাথা বাড়ে।অতীতের ওই তিক্ত মুহূর্ত মনে পড়তেই মায়ার গা রিরি করে ওঠে।সব শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে।মায়া এক হাত মুঠ করে আছে। বড়বড় নখ হাতের তালুর মাংসের মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে।রক্ত ঝরছে সেখান থেকে।কারোর সেদিকে নজর নেই।

সবাই মায়ার এই পাগলামীর সাথে কথা বলা দেখে কান্না করে দেয়।শাহানা পারভীনের কষ্ট বুঝতে পেরে কষ্ট বাড়ছে মৌয়ের সাথে জারারও।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থ হয়ে গেলো পিয়াশ।সেই সাথে ঘৃণা বাড়লো মোহন সরদার,সোনালী ও মালিনী খানের প্রতি।একজন গর্ভবতী মা ও বাচ্চা মেয়েকে তারা নির্যাতন করেছে। পিয়াশের নিজের কাছেও খারাপ লাগছে খুব।রাজের কথাতে আজকে এখানে আসে।রাজ বলেছে মৌয়ের এই অবস্থায় এখানে রাখতে।আসলে মায়ার বোন হিসেবে মৌকে বাইরে থেকে হামলা করতে পারে যে কেউই।যেমনটা তাজকে করা হয়।এজন্য রাজ চায়না তার আপনজন কেউ আর হারিয়ে যাক।রাজ এসে দাঁড়ালো পিয়াশের পাশে।ভ্রুকুটি করে বলে,”আমার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন পিয়ু বেবী?”

পিয়াশ একটু নড়েচড়ে পাশে তাকালো।তারপর মায়াকে ইশারা করে বলে,”ম্যাম অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
রাজ ভিতরে চোখ রাখতেই দেখতে পায় মায়ার চোখের সাদা জায়গাটা লালবর্ণ হয়েছে।ঠোঁটে হিংস্র হাসি।চোখে রাগী ভাব সেই সাথে পানি।হাতের দিকে তাকাতেই রাজ অবাকের সাথে দৌড়ে এসে মায়ার হাত ধরে জারার উদ্দেশ্যে বলে,”মেডিসিন বক্স দেও।”

মায়াকে বিছানায় বসিয়ে বলে,”নিজেকে জখম করার আগে একবার আমার কথাটা ভাবতে পারতে।তোমার মন্ত্রী মশাই তোমার কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখবে না মায়াবতী।মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ করতে যদি জীবন দিতেও হয় তবে দিয়ে দিবো আমার জীবন কিন্তু নিজেকে জখম করবে না।”
মায়া স্থির চোখে দেখছে রাজকে।মেডিসিন বক্স আনতেই রাজ হাতের ক্ষতগুলোতে তুলো দিয়ে মুছে মলম লাগিয়ে বলে,”মায়াবতীর জখমে মলম দিয়ে সমস্ত ব্যাথা সারিয়ে তুলবো আমি।সে জখম যেখানেই থাকুক না কেন মলম আমি প্রস্তুত রাখবই।”

মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে।জারা চোখের ইশারা দিতেই সবাই চলে যেতে নেয়।রাজ গলা উঁচিয়ে বলে,”বীরকে বলেছি উপরের ঘরে থাকবে।তোমরা অপজিট ঘরে থেকো।পরিস্থিতি যেমনই হোক এক বাড়িতেই এখন একত্রে থাকা প্রয়োজন।”
পিয়াশ একটু আমতা আমতা করে বলে,”আপনাদেরকে বিরক্ত করা…
“মৌ আমার একমাত্র শালী।যেখানে আমার আর আমার বউয়ের জীবন ঝুঁকিতে সেখানে শালীকে টার্গেট করে আমার বউকে হামলা করতে চাইবে না এটা তো হয়না।শত্রু এখন লুকিয়ে ওত পেতে আছে।তাই শালীর সুরক্ষাটাও আমাকে দেখতে হবে যেন আমার বউটাও সুরক্ষিত থাকে।”

সবাই মৃদু হেসে বাইরে গেলো।মায়া স্থির চোখে রাজকে দেখে বলে,”আমাকে নিয়ে এত চিন্তা আপনার?”
“একমাত্র বউ আমার তাকে নিয়েই তো চিন্তা করতে হবে।”
“দ্বিতীয় বউ আনার স্বপ্ন দেখছেন নাকি?”
“তোমার হিংস্র চাহনিতে স্বপ্ন আমাকে ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন বলে পালিয়ে যায়।”
মায়া হেসে দেয়।মায়াকে নিজের কাছে নিয়ে বক্ষের মাঝে আগলে রাখলো রাজ।তারপর বলে,”আমার বক্ষজুড়ে তোমার স্থান।আস্ত একটা বক্ষ যখন আমার মায়াবতী নিজের করে রেখেছে সেখানে অন্য কোনো নারীর স্থান হতেই পারেনা।”

“আপনার এতগুলো বছরের একাকিত্বে আমাকে আপনার ভালোবাসা উপলব্ধি করায় মন্ত্রী মশাই।”
রাজ মায়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজের করে রেখেছে।মায়ার মাথায় চুমু দিয়ে মৃদু হাসলো।কালকের দিনটা শুধু অপেক্ষা করা।যেটা প্ল্যান করেছিলো ওটা আবারও বাড়িয়ে দিলো মায়া।রাজ চুপিসারে সোজা পথে গিয়ে মায়াকে সারপ্রাইজ দিতো।এটা যখন হলো না আরেকটু অপেক্ষা করুক।

আজকে বীর জারার বিবাহ উপলক্ষে বড় করে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।বীরকে কালো স্যুট বুট পরানো হয়েছে।একটা ভালো দামী শেরওয়ানি দিতে চেয়েছিল বিভান খান আর রাজ দুজনেই কিন্তু বীর নাকোচ করে।জারাকে গাঢ় খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে।মাথায় অর্ধেক ঘোমটা ও এক কোণায় ঝাপটা টিকলি দেওয়া।গলায় ডায়মন্ডের হার ও কানে ম্যাচিং করে দুল।হাতে খান বংশের বালা সাথে চুরি।পার্লার থেকে এসেছে মাত্র কমিউনিটি সেন্টারে।এসেই মায়ার দিকে চোখ গেলো জারার।গাঢ় নীল রঙের শাড়ি পরেছে।চুলগুলো নিচ দিয়ে কোকড়ানো।চোখে গাঢ় কালো চিকুন করে কাজল আর ঠোঁটে গাঢ় গোলাপি লিপস্টিক দেওয়া।হালকা গহনা আছে যেগুলো ডায়মন্ডের।অবশ্য এগুলো মন্ত্রীর বউ ও একজন বিজনেসওম্যান হবার সুবাঁধে।

জারার কাছে এসে মায়া দাঁড়াতেই জারা বলে,”গার্ড রেডি আছে তো?আমি কিন্তু পাঠিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই।”
“হ্যাঁ সবার চোখ ওই বিভান খানের দিকে।তুমি চিন্তা করো না।বিভান খান কোথাও যেতে পারবে না গেলেও আমাদের গার্ড দেখে রাখবে।আমার স্পাইম্যান তো আছেই বাইরে।”
জারা হাফ ছাড়লো।মৌ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহন সরদারের দিকে।এই লোকটা তার বাবা তার মাকে অবহেলা করেছে।ভাবতেই তিক্ততা আসে।মিলি আগের তুলনায় একটু ভালো আছে সাথে সিয়াও।কিন্তু আদ্র নেই এখানে।ওর ইমারজেন্সি একটা সার্জারি আছে।সবাই মোটামুটি আনন্দের সাথে আছে।মোহন সরদারকে সামলে রেখেছেন মাহমুদ সরদার।জানিয়েছেন মিহিরের খোঁজ করা হচ্ছে সেই সাথে সোনালীর।মোহন সরদার আস্থা পাচ্ছেন না।হিয়া ও তাজ যেখানে নিখোঁজ সেখানে ওদেরকে কিভাবে পাবে।মোহন সরদারের সামনে এসে মায়া বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে,”বউ আর সন্তান হারিয়ে যাবার কষ্ট হচ্ছে আপনার?”

মোহন সরদার চোখ তুলে তাকালো সাথে বিরক্ত প্রকাশ করে।মায়া ঠোঁট চওড়া করে বলে,”আপনার মত মানুষের বউ আর সন্তান হারানোর বেদনা আছে এটা কোনোদিন ভাবিনি।ভালো লাগছে একটু।একজনকে নিয়ে দুঃখ না হোক অপরজনকে নিয়ে হচ্ছে।জীবনে অপশন হিসেবে যাকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন আপনার ভাগ্য সেটাও কেড়ে নিলো।”
“কি বলতে চাও তুমি?”
“কর্মফল পাচ্ছেন দেখে ভালো লাগছে এটাই বলতে চেয়েছি।”
“আমার শাস্তিতে কেন তুমি শান্তি পাবে মেয়ে?”
“কিছু কিছু লোক আছে যাদের হারানোর কষ্ট দেখতে আমার ভালো লাগে।”
মোহন সরদার ভ্রুকুটি করে আছে।মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে চলে এলো।রাজ আছে বীরের পাশে।মায়া যে এতক্ষণ মোহন সরদারকে কিছু বলছিল এটা বুঝলো।রাজ নিজেও হেঁসে বীরকে বলে,”আমার বউ পৃথিবীতে এক পিস।যে কিনা নিজের বাবার ধ্বংস দেখতে ভালোবাসে।”
“উচিতও তাই,পরকীয়া করে যে লোক সুখ পায় তার ধ্বংস দেখতে চাওয়াটাই উচিত।সে যতই বাবা হোক।”
বীরের কথা শুনে রাজ এক পলক চাইলো বীরের দিকে।দুজনেই মৃদু হাসলো।

সবাই সবার জায়গা বুঝে অনুষ্ঠান উপভোগ করছে।বীরজারাকে বর বউয়ের আসনে বসানো হলো।সবাই এসে ওদেরকে স্বাগতম জানিয়ে দিচ্ছে।জারার গার্ড ও মায়ার নজর বিভান খান আর মালিনীর দিকে।এদিকে স্টেজে লাইট বন্ধ হয়ে গেলো।লাল নীল মরিচ বাতির মাঝে স্টেজে এসে ড্যান্স করছে রুদ্র।সবাই হাততালি দিলো খুশি হয়ে।খুশি হতে পারল না সিয়া।মুখটা শুকনো করে নিজের পাশটা শূন্য বোধ করছে।তার বোন নেই যে।কষ্ট হচ্ছে খুব।রুদ্র ড্যান্স করলেই একটা জেলাসি চাহনি দেখে অভ্যস্ত সিয়া। সেটা দেখে মৃদু হেঁসে বোনকে রাগিয়ে দিতো আরো বেশি করে।এখন এটা সম্ভব হচ্ছে না।সিয়ার চোখ ভিজে আসে।হাত দিয়ে মুছে সামনে তাকাতেই দেখে মাহমুদ সরদার তাকিয়ে আছেন।দুঃখ আড়াল করতে মিথ্যা হাঁসি দিলো।মাহমুদ সরদার একজন বাবা হিসেবে ধরে নিলেন।মৃদু হেঁসে মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বলেন,”বোনের জন্য কষ্ট পেতে হবেনা।ওকে সুরক্ষিত রেখেছে তোমার মা।এটুকু বিশ্বাস আমার আছে।”

“আমারও আছে বাবা কিন্তু বোনকে খুব মিস করি।”
রুদ্র ড্যান্স শেষ করে সামনে চোখ স্থির করে তাকালো।দেখতে পেলো চশমা চোখে দাঁড়িয়ে থাকা তার হিংসুটে হিয়াপাখি।গোলাপী রঙের একটি গাউন পরে আছে।লম্বা চুলগুলো কোমরের নিচে ছাড়িয়ে গেছে।মুখে হাসি নেই বরং বিরক্তির ছাপ।রুদ্র হেঁসে দিলো হিয়ার মুখশ্রী দেখে।ক্ষণিকের জন্য চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নেয় অতঃপর আবারও তাকালো সামনের দিকে।হিয়াকে এখন আর পেলো না মনটা খারাপ হয়ে গেলো রুদ্রের।ড্যান্স করার সময় অনেকবার কল্পনা করে হিয়াকে।আশেপাশে চলাফেরা করতে গেলে মন বলে অন্যবারের মত এবারও তার হিয়াপাখি চারচোখ দিয়ে তাকে পরখ করে।রুদ্র নিচে নেমে এলো।রাজের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”ভাইয়ের সাথে কথা হলো?”

“হুম অপারেশন শুরু করেছে।”
রুদ্র মৃদু হাসে।ওদের সামনে এবার মঞ্চে মুখ অর্ধেক ঢেকে আসে এক নারী।ড্যান্স করছে আধুনিক বাংলা গানের তালে,
যতই তুমি বাহানা করো না কেন?
চুপি চুপি চোখের ইশারাতে খেলো।
দেখো কি নীরবে….?
এভাবে কি জমে?
দোতারায় তারে নারে বাসতে থাকে মনটারে সুরটা চেনা লাগে।
হায়রে,আমি আছি এখানে
না জানি কি নসিবে!আছে সে কি হবে?
ঝুমকা ঝুলে কানে হায় তোমার ঐ ইশারায়
ঘোমটা হওয়ায় উড়ে যায় যায়।

গানের এই জায়গাটায় এসেই নাকের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে নিতেই সবাই রুবিকে দেখতে পেলো।গানের সাথে বেলিড্যান্স দিচ্ছে রুবি।অতঃপর রুবির পাশেই হাজির হয় মিহির রূপে তাজ।যাকে দেখেই বড়সড় ঝটকা খেলো রাজ ও বাকিরা।তাজ এসে রুবির পাশে দাঁড়িয়ে ড্যান্স করছে।রাজ হা করে চেয়ে থেকে বলে,”আমার বউ কবে থেকে মিশন ইনকমপ্লিট করে রাখলো!এরা প্রেমিক প্রেমিকা দেখি আবার এক হয়েছে।”

রুদ্র পরখ করে দেখে বলে,”বাট ব্রো সামথিং ইজ ডিফারেন্ট।এবারের মিহিরকে বদলের মত দেখতে লাগছে।লুক,মিহির কিন্তু ভিত চাহনি দিয়ে রুবির দিকে তাকিয়ে ড্যান্স করছে।বেলিড্যান্স এমন যেনো এটা বাংলাদেশের হিরো আলম।মিহির তো এমন না।ও তো পারফেক্ট ড্যান্স পারে।ওর বডি দেখেছো?সামনের বোতাম খোলা একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখো।জিম করা সেই বডি না।কেমন যেনো বাঙালিদের নরমাল যে বডি থাকে তেমনই।আমার মনে হচ্ছে কিছু গড়বড় আছে।একটা মানুষের শারীরিক পরিবর্তন এতটা কিভাবে হয়?”

রুদ্রের কথামত রাজ সামনে চোখ রাখতেই রুদ্রের কথাগুলো মিলিয়ে দেখতে পেলো।রুবি নিজেই মিহিরের হাত ধরে ড্যান্স করছে।এদিকে পাশে চোখ রাখতেই দেখতে পায় মায়া আর জারা হাসছে সাথে হাততালি দিচ্ছে।ফিচেল হেঁসে রাজ বলে,”গড়বড় তো নিশ্চিত আছে।খুঁজে বের করতে হবে।”
মোহন সরদার দৃষ্টিকটু নজরে দেখলো রুবিকে।তারই ছেলে মেয়ে মিলে এভাবে ড্যান্স করছে।মিলিরও তাই হলো।বিরক্ত হলো ভাইয়ের কান্ড দেখে।বিরক্ত হয়ে তারেকের কাছে এসে বলে,”আমাকে নিয়ে বাইরে যেতে পারবে?এসব অনুষ্ঠান আমার ভালো লাগছে না।”

তারেক কথাগুলো শুনে কিছু ভেবে মায়াকে ম্যাসেজ করে।মায়া জানায়,”যাও।”
তারেক হাত ইশারা করে মিলিকে নিয়ে বাইরে যায়।মিলি হাসিমুখে বের হলো তারেকের সাথে।দুজনে বাইরে এসে প্রকৃতি দেখতে থাকে।তারেক একটা গাড়িতে উঠতে নিলে মিলি বলে,”গাড়ি না রিক্সা।”
“সরি ম্যাম!”
“আবার ম্যাম!”
“রিক্সায় যাওয়াটা কি ঠিক হবে?”
“একদম ঠিক হবে বরং ওটাই ভালো লাগার হবে।চলো তুমি আমার সাথে।”

তারেক একটা রিক্সা ঠিক করে।নির্দিষ্ট কোথাও যাবে না।মিলির আবদার ঢাকা শহরের রাতের আধারে রিক্সায় করে শুধু ঘুরবে।মাঝে মাঝে যদি ঝালমুড়ি ফুচকা বাদে তো ওগুলোই খাবে। তারেকও রাজি হয়ে রিক্সা ঠিক করে।দুজনে একসাথে বসে আছে।মিলির গায়ের সাথে তারেকের গা ঘষা লেগে আছে।তারেক আড়চোখে মিলির দিকে তাকালো।অনুভূতি ভিন্ন তারেকের জন্য।নিজে না চাইতেও মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে।

অনুষ্ঠানে থাকা সবাই হাততালি দিলো।রুবি তাজকে নিয়ে নিচে নামতেই মোহন সরদার এগিয়ে এসে বলে,”মাথা খারাপ হয়েছে তোমার?ও তোমার বোন হয়।এভাবে চিপকে ড্যান্স করে মান ইজ্জত খেও না।”
তাজ ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো।রুবির পিছনে যেতেই রুবি সামলে নিয়ে বলে,”ওকে বোকো না।ও মানসিকভাবে একটু অসুস্থ।একটা এক্সিডেন্ট হবার কারণে মাঝের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। লন্ডন যাবার আগের ঘটনা মনে থাকলেও পরের কিছুই ওর মনে নেই।”

“এটা কি সিনেমা পেয়েছো তোমরা?একবার তোমার স্মৃতি যায় আরেকবার ওর যায়।এসব করতে করতে সম্পর্কের মধ্যে কি নোংরামি সৃষ্টি হচ্ছে বুঝো তুমি?”
মোহন সরদার ধমক দিলেও বিভান খান এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন মিহিরকে।যেটা দেখে সবাই দ্বিতীয় ঝটকা খেলো।রুদ্র তো দুইহাত এক করে গোলগোল আকারে নিয়ে চোখের সামনে ধরে।যেনো মনে হচ্ছে হাতটা তার দূরবীন আর দৃষ্টি সোজা সামনের দিকে।কোনকিছু নিখুঁত জিনিস যেনো ভুল না যায় তার চোখের আড়াল হয়ে।রাজ বিদ্রুপের হাঁসি দিয়ে গেয়েই দিলো,”বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা।হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছো মেলা।”

বিভান খান সহানুভূতির সাথে বলে,”কোথায় ছিলে তুমি?”
বীরের নিখুঁত দৃষ্টি ওদের দিকে।কি হচ্ছে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এদের এই নাটকের সাথে আবার মায়া ও জারার ঠোঁটে রহস্যের হাঁসি।কোনকিছুই সুবিধার না। তাজ কাপাকাপা কণ্ঠে বলে,”আপনি কে?”
বিভান খান হাঁসি বন্ধ করে সন্দেহের দৃষ্টি তৈরি করলেন।রুবি কানে কানে বলে,”ইনিই তোমার বাবা কিন্তু তুমি সবার সামনে বাবা বলবে না।সবার সামনে তুমি এই লোকটাকে বাবা বলবে।”
“কিন্তু আমার বাবা ঐ জায়গায় বসে আছে।এই ভুল লোকগুলো আমার বাবা হবে কেন?”
“নাহলে এরা তোমাকে আবারও মারবে তাই।”

“না আমি মার খাবো না।আমি সবাইকে বাবা বলে ডাকবো।আর কাকে কাকে বাবা ডাকবো বলে দেও।”
“এখন শুধু মোহন সরদার মানে তোমার কাকাকে বাবা বলবে।আলাদা এক ঘরে গেলে ওই লোক যে জড়িয়ে ধরেছে তাকে বাবা বলবে আর কাউকে বাবা বলতে হবেনা।ইন ফিউচার আমার বাবাকে শশুর বাবা বলবে।”
“তোমার বাবা মানেই তো আমার কাকা।”
“আরে বাবা এটা আমার নকল বাবা।”
“আমিও তোমার বাবা নাকি?”
“ধুর এত কথার কথা।”
“আমার মাথা ঘুরছে।আমি ঘরে গিয়ে ঘুমাবো।কিছুই বুঝতে পারিনা আমি।”

রাজ এমন ভাবে দেখছে যেনো এটা তার খুব কাছের কেউ।রুবির কথা বা তাজের কথা কেউ শুনতে পেলো না।কিন্তু তাজের ভঙ্গি ও শেষ কথাটা জানান দেয় এটা তাজ।তবুও তো শিওর হবার উপায় নেই।সবথেকে বড় কথা মিহির রূপে এটা যে তাজ এটা ধরার মত মস্তিষ্ক এত তাড়াতাড়ি কারোরই গড়ে উঠবে না।রাজ একদিনেই তো আর পারবে না নিজের ভাইকে ধরে নিতে।কিন্তু সন্দিহান দৃষ্টি দিয়ে দেখছে। বিভান খানের চাহনি দেখে রুবি আবার তাজের কানে কানে বলে,”ওনার কাছে যাও ওনার কানে কানে বলে না চেনার অভিনয় করছি বলে দুঃখিত ড্যাড।পরে কথা বলব এখন টায়ার্ড লাগছে।”

তাজ মাথা দুলিয়ে তাই করে। বিভান খান একটু হাফ ছাড়ে।ছেলে তাকে ভোলেনি তাহলে।হয়তো এটাও কোনো অভিনয়।তাই এভাবে সবার সামনে আছে।
অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে।খাবার খাওয়া হলো সবার।এবার বাসায় যাওয়ার পালা।মায়া ভাবছে বিভান খান কোনো একশন নিলো না কেন?সোনালীর ব্যাপারে কি খোঁজ নিবেনা নাকি মিহিরকে পেয়ে অন্যভাবে কিছু করতে চায়।এর মাঝেই জারার কাছে কল আসে। জারা বীরের দিকে চোখ রাখতেই দেখে সে রাজ ও রুদ্রের সাথে কথা বলছে।জারা দূরে গিয়ে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে জানায়,”মিসেস সোনালীকে পাওয়া যাচ্ছে না।ওনাকে যেখানে বেঁধে রাখা হয়েছিল ওখানে উনি নেই।”

জারা অবাকের সাথে তাকালো মায়ার দিকে।একবার তাকালো বিভান খানের দিকে।লোকটা তো এখানে।জারা দৌঁড়ে এসে মায়াকে নিয়ে এক কোনায় গেলো।মায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,”কি হয়েছে?”
“সোনালীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
“স্পাইম্যান কি বিভান খানের পিছু নিয়েছে।”
বলেই একটু দূরে দেখতে পায় বিভান খান দাঁড়িয়ে আছেন।অন্যদের সাথে আলাপ করছেন।মায়া ভ্রুকুটি করে বলে,”লোকটা তো এখানে!”
মায়া স্পাইম্যানের কাছে কল দিতেই ওপাশ থেকে রিসিভ করে বলে,”বলুন ম্যাম।”
“কেউ কি বের হয়েছে এখান থেকে?”
“না ম্যাম,আমি খুব ভালোভাবেই নজর রেখেছি।আমার নজর এড়ানো সম্ভব না।”
“সোনালীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

“হোয়াট!আপনি না বললেন আজ রাতে বিভান খান তার কারখানায় সোনালীর খোঁজ করে যাবেন আর দুজনের কথপোকথন ক্যামেরা বন্দি করতে হবে।অন্যদিকে মালিনীকে কিডন্যাপ করবেন।তাহলে প্ল্যান কিভাবে ফ্লপ হলো?”
“আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।আচ্ছা তুমি কি বিভান খানের কাছে সোনালীর কিডন্যাপের অ্যাড্রেস দিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ কিন্তু সে সিন করেনি।সিন করার সাথে সাথে আপনাকে জানিয়ে দিতাম ম্যাম।”
মায়া ফোন কেটে জারার দিকে ফিরে বলে,”প্ল্যান ফ্লপ।”
“মানে ওদের নোংরা সম্পর্ক ভাইরাল করে রিউমার ছড়াতে পারবো না আমরা?”
“সেই উপায় তো হলো না আমাদের।চেয়েছিলাম এক হলো আরেক।এই মোহন সরদারকে শাস্তি দিতে নতুন প্ল্যান করেছি।এটাও ফ্লপ কিভাবে?”

বলেই এদিক ওদিক চোখ রাখে।তিন ভাইকে এক জায়গায় দেখতে পেয়ে মায়া রেগে আগুন।দ্রুত কদম ফেলে রাজের কাছে যেতে যেতে বলে,”আজ মন্ত্রী মশাইকে জবাব দিতেই হবে।”
“মাথা ঠাণ্ডা করো মায়া।উল্টো পাল্টা কিছু করলেই ধরা খাবে।কোথায় যে সিসি ক্যামেরা কিছুই জানিনা।”
মায়ার মাথা ঠিক নেই।রাজকে নিয়ে সোজা বাইরে চলে যায়।সবাই সেদিকে তাকালো।রুবি ভ্রু কুঁচকে দেখলো তারপর জারার দিকে তাকাতেই জারা ম্যাসেজ দেয়,”তাজকে নিয়ে দ্রুত চলো সরদার মহলে।আমাদের আজকের মেইন প্ল্যান ফ্লপ।”

রুবি ম্যাসেজ পড়ে তাজ্জব হয়ে গেলো।তাজকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। জারাও ছুটছে মায়াদের দিকে।বীর যখন দেখলো জারা দৌড় দিলো বীর নিজেও ছুটলো জারার পিছনে।রুদ্র সবার উদ্দেশ্যে বলে,”পার্টি অফ গাইস।”
বলেই সবাই চলে যেতে নেয়। বিভান খান সবার দিকে তাকিয়ে মালিনীর কাছে এসে বলে,”কি ব্যাপার?”
“বাদ দেও তো ভাই।এই মেয়ে তোমার ছেলের পালিত বোন।যাকে তুমি এক হিসেবে তোমার মেয়েই ধরে নিতে পারো।খুব ধূর্ত আর জঞ্জাল।এসে ধরে সবার মাথা খেয়ে নিচ্ছে।”
“একেই বীর বোনের দায়িত্ব নিয়ে নিজের কাছে রেখেছে?তাই তো বলি মেয়েটা কেন এত বুদ্ধিমতি।পালিত হলেও শিক্ষা তো বীরের থেকে পেয়েছে।”

“এত বেশি খুশি হতে হবেনা।এই মেয়ে কিন্তু জীবনের বাঁশ।”
“দেখা যাক।”
বাইরে এসে মায়া ছেড়ে দিলো রাজের হাত।হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,”আপনি সব জেনেও আমার প্ল্যান ফ্লপ করেছেন কেন মন্ত্রী মশাই?আপনি আসলে সোনালীর থেকে কি চান?আমাকে আজ বলতেই হবে।”
“তোমার আবার আজকে কিসের প্ল্যান ছিলো?”
“জানেন না আপনি?তাহলে সোনালী কোথায়?”

রাজ সত্যিই জানেনা মায়ার কি প্ল্যান ছিলো আজকে।তবে রাজ এটা জানে সোনালী কোথায়।কারণ সোনালীকে সরিয়েছে রাজ নিজে।সেদিন যখন মায়া ও রাজ এসে মাহমুদ সরদারের ঘরে ওদের ঝামেলায় অংশগ্রহণ করে রুদ্র সুযোগ বুঝে রাজের ঘরে এসে মায়ার ল্যাপটপের ইনফরমেশন দেখে।সেখানেই জানতে পারে সবকিছু।তাই তো আজকে এই অনুষ্ঠান করা।অনুষ্ঠানে সবাই যখন ব্যাস্ত থাকবে সোনালীকে নিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত থাকবে রাজের লোক।রাজ শুধু বুঝতে পারছে না আজকে কি করতে চেয়েছিল এরা।মায়া হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,”আপনি জানেন ওই সোনালী কি করেছে?ও আমার ভাইয়ের….

“মায়া!”
জারার ডাক শুনে থেমে গিয়ে পিছনে ঘুরে দেখে বীর দাঁড়িয়ে।পিছনে একেক করে সবাই আসছে।মায়া রাজের দিকে কঠোর চাহনি দিয়ে বলে,”আপনাকে আমি আজকের দিন সুযোগ দিচ্ছি।আজকেই আপনি আমাকে সবকিছু বলবেন নাহলে আমি কাল থেকে আপনার আশেপাশেই থাকব না।আপনার আর আমার রাস্তা আবার আলাদা হয়ে যাবে।”
মৌ পেটে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বলে,”কি হয়েছে আপু?”
“কিছু না হলেও এবার হবে।”

রাজের দিকে ফিরে কঠিন চাহনি দিয়ে বলে,”আমার নাম মায়া কিন্তু আমি মায়াবি না।আমার সাথে টক্কর নিতে আসলে আমিও কাউকে ছাড় দেইনা।সোজা ওপারে পাঠিয়ে দেই মনে রাখবেন।”
কথাগুলো জোরে বলেই গাড়িতে ওঠে মায়া।জারা একটু নরম কণ্ঠে বীরের কাছে এসে বলে,”আমি ড্রাইভ করি।মায়া রেগে আছে।ওর এখন আমার সঙ্গ প্রয়োজন।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৯+৬০

বীর কিছু না বলে মাথা নাড়ালো।জারা দৌড়ে গেলো।বউ সাজেও কিনা ড্রাইভ করতে যাচ্ছে।মাহমুদ সরদার কপালে হাত দিয়ে দেখছেন সবকিছু।রুবি সুযোগ বুঝে তাজকে নিয়ে মায়ার গাড়িতে উঠলো। বিভান খান বিদ্রুপের হাঁসি দিয়ে বলেন,”পালিত বোনের জন্য এতই দরদ যে নিজের বউকে দিয়ে ড্রাইভ করাচ্ছ তাও আবার বধূবেশে।”
বীর শান্ত হয়ে হাত খিঁচে থাকলো।তর্ক করবে না এখন।রাজের মাথা গরম হয়ে আছে।তাকে এবার শান্ত থাকতে হবে।মাথা ঠাণ্ডা না রাখলে সম্পর্কের ফাটল ধরে।

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬৩+৬৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here