মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ শেষ পর্ব

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ শেষ পর্ব
ইশরাত জাহান

আজকে সিয়া ও হিয়ার গায়ে হলুদ।দুই বোনকে হলুদের সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।আশ্রমের বড় ফাঁকা মাঠে প্যান্ডেল করা।সেখানেই হলুদের অনুষ্ঠান।দুইবোনকে এক জায়গায় বসানো হয়।একেক করে আত্মীয়রা এসে হলুদ ছুঁইয়ে দেয় সিয়া ও হিয়াকে।সামনেই দাঁড়িয়ে দেখে তাদের দুই হবু বর। সিয়ার দিকে চেয়ে আছে আদ্র ও হিয়ার দিকে চেয়ে আছে রুদ্র।সবাই উপস্থিত থাকলেও এখানে নেই তাজ।মাহমুদ সরদার একের পর এক কল লাগলেন।ওপাশ থেকে কেউ ধরছে না।রাজ এসে ফোনটা নিয়ে বলে,”রিল্যাক্স বাবা ওরা আসবে।”

“ছেলেটা সুস্থ হয়েছে তো?”
“পুরপুরি সম্ভব না কিন্তু একটু স্বাভাবিক হয়েছে।এখন সমাজে চলতে শিখেছে।ওকে সেভাবেই ট্রেইনারে রাখা ছিল।”
অবশেষে আশ্রমের কাছে বড় একটু গেট এসে থামলো।সেখান থেকে নামে তাজ।রুবি উঠে দাঁড়ালো তাজকে দেখে।মাহমুদ সরদার নিজেও এগিয়ে এলেন।জড়িয়ে ধরেন ছেলেকে।রাজ এসে বাবার পিছনে দাঁড়ালো।মাহমুদ সরদার সরতেই রাজ জড়িয়ে ধরে।সিয়া ও হিয়ার নজর সেদিকে যেতেই খুশিতে হাততালি দেয়।মায়া ওদেরকে দেখে যেই অন্যদিকে চোখ রাখে দেখে রুবি মিটমিট করে হাসছে।রুবির হাসি দেখে মায়ার খটকা লাগে।যদিও এই খটকা খারাপ না আর অবগত ছিলো।তাও একবার পাশে বসে থাকা জারার কানে মুখ রেখে বলে,”এই রুবি কি তাজ ভাইকে ভালোবাসে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জারা একটু ঝুঁকে বলে,”আমারও সেম মনে হয়।আমি ওর নজরে ভালোবাসা দেখি কিন্তু ওর ব্যাপার ওই বুঝে নিবে তাই চুপ আছি।”
“তোমার মনে হয় একটা মেয়ে হয়ে কখনও নিজের ভালোবাসা আগে প্রকাশ করবে?মেয়েদের বুক ফাটবে তবুও মুখ ফুটবে না।রুবি কিন্তু এদিক থেকে অনেকটাই লাজুক। এইটারই সুযোগ নিয়েছিল মিহির।”
“হুমমম,ভালোবাসা মানুষকে কোনদিকে ঠেলে দেয় বলা যায়না।”
“আমার মনে হয় তাজ ভাইকে ভালোবাসলে এটা আমাদের কনফার্ম করা উচিত।তাজ ভাইয়ের অবস্থার থেকেও বয়সটা নিয়ে আপত্তি থাকার কথা।আমার সাথে মন্ত্রী মশাইয়ের এজ ডিফারেন্ট এগারো কিন্তু রুবির তার থেকেও বেশি।তাই ব্যাপারটা চিন্তার আছে।”

“আমি কথা বলে জানাবো তোমাকে।রুবি তোমার সাথে কাইন্ড হলেও আমার সাথে ফ্রেন্ডলি।”
মায়া মৃদু হাসলে বীর বলে ওঠে,”নির্ঘাত কোনো বুদ্ধি বের করা হচ্ছে!আবার কি করার ধান্দা?”
জারা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,”তুমি কি আমাদেরকে সন্দেহ করো?”
“তুমি যে গিরগিটি!সন্দেহ না করে উপায় নেই।”
“ভাই তুমি কিন্তু বেশি করছো।ভাবী প্রেগনেন্ট।”
“ওহ,আমি তো জানতামই না।যেনো বাচ্চা আমার না অন্য কারো।”
“ভাই তুমি কিন্তু মন্ত্রী মশাইয়ের মতো হয়ে যাচ্ছো।”
“এখানেও আমাকে টানা লাগবে তোমার?”

রাজের কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে পিছনে তাকালে দেখে রাজ সাদা পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে মায়ার পাশে বসে।মায়া বলে,”তুমি সবাইকে ঠিক কীভাবে বস করো যে ওরা লাগামহীন কথা বলে।”
“এই দেখো মায়াবতী আমাকে দোষ দিবেনা।এগুলো নিজেদের ব্যক্তি কথা।আমি শেখাতে যাবো কেন?”
“সরদার মহলে যদি কেউ লাগামহীন কথাবার্তার উদ্বোধন করে তবে সেটা তুমি শাহমীর রাজ সরদার এরপর তোমার ওই বিচ্চু ভাই রুদ্র।আজকে দেখছি তোমার শালাও এমন বলছে।”
রুদ্র অবাক হয়ে পিছনে ফিরে বলে,”এটা কি হলো ভাবিজি!আজকে আমার হলুদের অনুষ্ঠান আপনি এইদিনে আমাকে বদনাম করছেন।”

“সত্যিটা বলেছি।এই লোকটার সাথে থেকে সবাই এমন হয়েছে।”
হিয়াও সঙ্গ দিয়ে বলে,”আসলেই ঠিক বলেছো ভাবী।এই নষ্ট পুরুষ আছেই এমন।”
“ওই!একবার রুদ্র ভাই তো একবার নষ্ট পুরুষ।ভালো কিছু ডাকতে পারিস না?ভাবিজি অন্তত ব্রোকে রাজ ভাই না বলে ডাকে মন্ত্রী মশাই।”
“তো নষ্ট পুরুষকে কি বলব?আপনার গিরায় গিরায় নষ্টামি।”
রুদ্র এগিয়ে গিয়ে হিয়ার কানে বলে,”কাল আমাদের বিয়ে আর রাতে ঠেলা সামলাবে।এই নষ্ট পুরুষের কাল নষ্ট কাজ দেখবে আর ছটফট করবে হিয়াপাখি।”
হিয়ার কান ঝলসে গেলো। বুকটা কেঁপে উঠলো।সোজা আসন থেকে উঠে বলে,”আমি এই লোকটাকে বিয়েই করবো না।এই লোক আস্ত খারাপ।”

সবাই অবাক হলো। পিয়াশ এগিয়ে এসে বলে,”কি হলো বোন?”
“দেখো না ভাইয়া এই লোকটা আমাকে পাগল করে দেয়।”
“পাগল করে দেয়?”
“হ্যাঁ ভাইয়া।লোকটার কথাবার্তা ভালো না।”
প্রলয়কে নিয়ে মৌ এগিয়ে এসে বলে,”রুদ্র ভাইকে তো ভালই লাগে।কই আমাদের সাথে তো খারাপ কিছু বলেনা।”
পিয়াশ চোখ ইশারা করলে মৌ বুঝতে পারে।তখন সাথে সাথেই বলে,”তোমার ভাগ্য ভালো এমন একটা লোককে স্বামী হিসেবে পাচ্ছো।নাহলে আমাকে দেখো?খাল কেটে কুমির নিয়েছি।”
“আবার আমাকে টানছো কেন?”

“টানবো না আবার?জিজুর ভোলাভালা অ্যাসিস্ট্যান্ট ছবি দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম।ভাই বোনের উপর রাগ করে ঢাকায় আসতেই প্রথম সাক্ষাতে সুযোগ বুঝে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।আগে তোমাকে একটু ট্রেনিংয়ে রাখা উচিত ছিল।”
মায়া আর বীর অবাক হয়ে বলে,”ছবি দেখে প্রেমে পড়েছিলি মানে?”
জারা বলে ওঠে,”আসলে আমার ফোনেই পিয়াশের ছবি দেখে।বাট এটা জানত না যে পিয়াশ তোমার হাসবেন্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট।আমি জাস্ট ওর ব্যাকগ্রাউন্ড বলি আর এটাও বলি ছেলেটা কত ভালো।এরপর আমাকে জানায় মৌ পিয়াশের প্রেমে পড়ে।কিছুদিন পিয়াশের একাউন্ট ফলো করলে আমি নিজেই জানিয়ে দেই কিন্তু মৌ যে বীরের কেয়ার না পেয়ে কষ্ট পেয়ে বাড়ি ছেড়ে একা অভিমান করে আসবে এটা জানতাম না।”
“তো কি করতাম? আপু কল ধরত না ভাইকে ডাক দিলে তোমাকে নিয়ে ঘরে চলে যেতো।আমাকে কেউ সময় দিতো না। তাই নিজের রাস্তা নিজে দেখেছি।রাস্তা বলতে ওকে বিয়ে করা না আমার কম্পিটিশন ছিলো।”

“ওয়েট!বীর কি করত?”
“ভাবিকে জোর করে নিয়ে ঘরে চলে যেতো।দরজা এমন জোরে লাগাতো যেনো বাড়িতে বাজ পড়েছে।”
রাজ এক ভ্রু উচু করে গায়,
“তুমি তলে তলে টেম্পু চালাও
আমি করলেই হরতাল!”
“শাট আপ।”
“আব্বে শালা ইউ শাট আপ।”
হিয়া সবার কাণ্ড দেখে বলে,”আরে এখানে আমার মামলা চলছিল তোমরা ঢুকলে কেন?”
জারা বলে ওঠে,”মামলা ছিল আমার হ্যান্ডসাম নিয়ে।ঘুরে গিয়েছিল তোমার নষ্ট পুরুষের দিকে।”
মাহমুদ সরদার এসে ঝাড়ি মেরে বলেন,”ছোট বাচ্চা তোমরা?এভাবে কি শুরু করলে?ভদ্র হয়ে থাকতে পারো না?”
“সবাই শান্ত ছিল বাবা।তোমার মেয়েই তো বাড়াবাড়ি শুরু করে দিলো?”
রাজের কথা শুনে হিয়া বলে,”আমি?আমি কোথায়?সূচনা তো বীর ভাইকে নিয়ে হলো।”
মায়া এবার যেনো মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।এই পাগলদের মাঝে মায়ার কপালে হাত।না পেরে রাজকে টেনে নিয়ে এসে একপাশে দাড়িয়ে বলে,”আপনি কিছুদিন এক ছেলের বাবা হলেন।”

“হ্যাঁ,তো?”
“আবারও বাবা হতে চলেছেন।”
“দরকার পড়লে এরপরে আবারো প্রোসেস চালু রাখব।কারণ আমি কিক মারার আগেই আমার বাচ্চাগুলো গোল দিতে থাকে।তাতে কি হয়েছে বলো তো?”
“আপনার একটা কিক সামহাও আপনার ব্রেনে এসে আঘাত করেছে।নাহলে কোথায় কি বলতে হয় এখনও বুঝলেন না।”
“তুমি কি আমার ব্রেনে প্রবলেম আছে এটা বুঝিয়ে দিলে?”
“নিঃসন্দেহে।”
“সন্দেহ তো থাকবে না।একটা রক্তবতীকে আমি মায়াবতী সাজিয়ে বিয়ে করেছি। ব্রেন ঠিক থাকে কিভাবে?”
“মন্ত্রী মশাই!আপনি আমাকে ইনসাল্ট করলেন?”

“না,আমার ভাগ্যকে মেনে নিলাম।”
“আপনার সাথে থাকবোই না আমি।”
“আবারও কি মুড সুইং করলো তোমার?”
“আপনি থাকতে মুড চেঞ্জ হবেই বা কি করে?”
বলেই হাটা দিলো মায়া।সোজা এসে রাগে ফুঁসে বসে নিজের জায়গায়।সবাই দেখে চুপ হয়ে গেলো।মায়ার চোখমুখ লাল হয়ে আছে।একবার রাগলে ভূমিকম্প বাদিয়ে দেয়। হিয়া ভালো মেয়ের মত নিজের আসনে বসে।রুদ্র খুশিতে মনে মনে বলে,”অন্তত আমার বিয়েটা তো হচ্ছে।”
মাহমুদ সরদারের ইশারা পেয়ে বাকিরা এসে হলুদ ছুঁইয়ে দিচ্ছে সিয়া ও হিয়াকে।শাহানা পারভীন এসে মায়াকে বলেন,”রাগ করে আছিস কেন?”

মায় ঝটকা দিতে চেয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”আমি আজ থেকে তোমার কাছে থাকবো মা।”
“সে তো আমি বলেছিলাম অনেক আগেই।প্রথম নানাভাই আসার সময় তো ছিলি না তাই এখন থাকতে।তুইই তো রাজি ছিলি না।”
“কারণ একজনের আফসোস থেকেছে প্রথম সন্তানের বেলায় আমার যত্ন নিতে পারেনি তাই আমি তার সাথে ছিলাম।এখন সিদ্ধান্ত পালটিয়েছি।”

রাজ এসে এই কথা শুনে সেও তেজ দেখিয়ে বলে,”কোনো সিদ্ধান্ত শুনছি না।মা আপনি আজ থেকে সরদার মহলে থাকবেন।নাহলে আপনার মেয়ে আপনার পিছু নিতে গিয়ে আমাকে বউ থেকে দূরে থাকতে হবে।”
“মেয়েদের এই সময়টায় অনেক পরিবর্তন আসে বাবা।রাগ বাড়বে কোনো কিছু খাওয়ার চাহিদা বাড়বে এমনকি অনেক সময় কারণ ছাড়াই কান্না আসে।”
“রাগ বাড়লেও আমি রাগ ভাঙিয়ে দিবো, কোনো কিছু খাওয়ার চাহিদা বাড়লে আমি খাবার এনে দিবো,কান্না আসলে আমি কান্না থামিয়ে দিবো কিন্তু বউকে আমি কোথাও রাখছি না।”
“দূরে সরে বসুন।”

মায়া এমনভাবে বলল কথাটা শুধু কাছের চারজন শুনতে পেলো।শাহানা পারভীন মৃদু হেসে বলেন,”এখনই তো তোর বউ তোকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।”
“আমি তো দূরে যাচ্ছি না।”
“বাচ্চামো করিসনা তোরা।কয়দিন পর তোদের বাচ্চা আসবে।একটা বাচ্চা অলরেডি আছেও।”
“ওরা বড় হয়ে ওদের বাচ্চা দিলেও এদের মত বুড়োদের বাচ্চামো থামবে না শাহানা।”
মাহমুদ সরদারের কথা শুনে হেসে দিল সবাই।মায়া চুপ করে আছে।পরিবেশ ভালো রাখতে হবে।এটা বিয়ের পরিবেশ।সিনক্রিয়েট করলে মান সম্মান শেষ।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে রাগ সামলাতে।গলার কাছটা ঘেমে গেছে।রাজ উঠে পিছনে টেবিল ফ্যান মায়ার দিকে স্থির রাখলো।ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো।অন্যপাশে টেবিলে থাকা ঠান্ডা শরবত গ্লাসে নিয়ে মায়ার কাছে এগিয়ে আসে।মন্ত্রীর এই যত্ন দেখে অনেকেই মিটিমিটি হাসছে।মায়ার দিকে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,”নেও।”

“দরকার নেই এটার।”
“তোমার হাইপার কমবে।এটা তোমাকে শান্ত রাখবে নেও।”
“বললাম তো দরকার নেই।”
রাজ বুঝলো এই মেয়ে এখন ঝাড়বে তাকে।
ঝাড় খাওয়ার আগে নিজেকে সংযত করে।নিজেই গ্লাস থেকে দুই ঢোক গিলে নিজের মাথা ঠান্ডা করে সবার উদ্দেশে বলে,”বাচ্চারা চোখ বন্ধ করো।তোমাদের মন্ত্রী মশাই এখন প্রেম করবে।”

মাহমুদ সরদার কপাল চাপড়ে চলে গেলেন।শাহানা পারভীন হুইল চেয়ার নিজের মত ঘুরিয়ে স্থান ত্যাগ করে।এখানে আর কোনো বাইরের লোক নেই।ওরা অনুষ্ঠানের খাবার খেতে ব্যাস্ত।রাজের হুকুমে সবাই চোখ বন্ধ করে।মায়া অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকালো রাজের দিকে।রাজ পাত্তা না দিয়ে সবাইকে দেখে।সবাই চোখ বন্ধ করে আছে।সুযোগ বুঝে মায়ার থুতনিতে হাত রেখে মায়াকে নিজের কাছে এনে মায়ার ঠোঁটের কাছে গ্লাস রাখে।মায়া হাতটা দিয়ে খামচি দেয় রাজের হাতে।রাজ কানে কানে বলে,”তোমার ঠান্ডা করতে আমি এখানে বাথরুম বিলাসের ব্যাবস্থা করতে পারব না তাই এটাই এখন খেয়ে নেও।বাড়ি গিয়ে নাহয় বাথরুম বিলাস করে মাথা ঠাণ্ডা করবে।”

বলেই মায়াকে জোর করে শরবত গিলিয়ে দিলো।তারপর গ্লাসটা পাশে রেখে পকেট থেকে রুমাল বের করে মায়ার মুখ মুছে ওই ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে পাশের দোলনার দিকে চেয়ে দেখে মেহরাজ চোখ বন্ধ করেনি।দেখো কাণ্ড!বাবার চুমু খাওয়া কেউ না দেখলেও ছেলে দেখে ফেলল।রাজ ছেলেকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকতে দেখে বলে,”তুই চোখ বন্ধ করলি না কেন?”
মায়া চিমটি কেটে বলে,”মাত্র ছয়মাস বয়স ওর।এসব কি ও বোঝে?”
না পেরে রুদ্র চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”তোমার কবে হবে ব্রো?আমাদেরকেও তো প্রেমের আগের নিয়ম শেষ করতে দেও।”

“চোখ খোল কিন্তু প্রেমের আগে আবার কি নিয়ম?”
“বিয়েটা।এই বিয়ে সম্পন্ন না হলে তো আর প্রেম করতে পারব না।”
রাজ ঠোঁট কামড়ে হাসে।বীরের দিকে চেয়ে বলে,”আমার শালাও কিনা আমাকে প্রেম করার সুযোগ দেয়।”
জারা বলে,”ওর চোখ আমি চেপে ধরেছিলাম।”
“তাহলে তোমার চোখ কে চেপেছিল?”
“আমার বামহাত।আমার ডানহান ওর চোখ চেপে ধরে আর বামহাত আমার চোখটাই।”
“ইন্টেলিজেন্ট জারা….
বাকিটা বলে না।মায়া তো আছে সাথে বীর।জিহ্বা কামড়ে রাজ বলে,”বদভ্যাস এটা।”

রাতের বেলা বাসায় আসে সবাই।মায়া এখনও ক্ষেপে আছে।তখন একটু শান্ত হয়।কিন্তু রাগটা মস্তিষ্কে চেপেই আছে।শাহানা পারভীনকে একটা ঘরে থাকতে দেওয়া হলে মায়া বলে,”আমিও যাবো।”
বলতে দেরি কিন্তু মায়াকে নিজের কোলে নিতে দেরি না।মায়াকে কোলে নিয়েই নিজের ঘরে চলে গেলো রাজ।মেহরাজ এখন হিয়ার কোলে আছে।হিয়ার কোলে শান্ত হয়েই ঘুমায় ছেলেটা।তাই মায়া বাড়িতে না থাকলে ওই সময় মেহরাজকে হিয়া দেখে।শাহানা পারভীন হালকা কেশে বলেন,”নানুভাইকে আমার কাছে দেও।তুমি বিশ্রাম করো।কালকে তো অনেক ধকল যাবে।”

হিয়া যেই মেহরাজকে দিতে নিবে ওমনি ছেলেটার ঘুম গেলো ভেঙ্গে।শাহানা পারভীনের কোলে বসে কান্না করে দেয়।ওমনি হিয়া নিজের কাছে নিতেই শান্ত হলো।রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,”এই প্রথম দেখলাম কাউকে ফুফু পাগল হতে।”
“বাচ্চারা নানি দাদি আর বাবা মায়ের পাগল হয় আমাদের মেহরাজ ভিন্ন।”
শাহানা পারভীন বলতেই হিয়া খুশিতে নিজের সাফায় গায়,”আসলে ভালোবাসা অর্জন করতে হয়।আমি আমার মেহরাজ সোনার থেকে এই ভালোবাসা অর্জন করেছি।”
“দেখো তোমার সোনা আবার তোমার জীবনটা না করে তামা তামা।”
রুদ্রের খোচা দেওয়া কথা শুনে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো হিয়া।

মায়াকে ঘরে এনে ঠাস করে দরজা লাগাতেই মায়া বলে,”মেহরাজ বাইরে আছে।”
“ওকে দেখার লোক আছে।”
“আপনি আমাকে নিয়ে এসেছেন কেন?আমার কারণেই তো আপনার ব্রেনে সমস্যা হয়।”
“তো আমার ব্রেনকে ঠিক করে দেও।”
“আমার ফালতু সময় নেই আর আমি ডাক্তারও না।”
“স্বামীর ব্রেন ঠিক করতে ডাক্তার হতে হয়না।এমনিতেই ভালোবাসা দিয়ে ঠিক করা যায়।”
“আসছে আমার ভালবাসা বিশেষজ্ঞ।”
“আসো একটু ভালোবাসা দেই।”
“চাইনা আমি ভালোবাসা।”
“আমি দিবই দিবো।”
“আপনি….
মায়া আর বলতে পারেনা।রাজ মায়ার ঠোঁট দখল করে নেয়।রাজ মায়ার রাগ অভিমান দমাতে ব্যাস্ত।নিজের ভালোবাসা দিয়ে।

আজ মাহমুদ সরদারের দুই কন্যার বিবাহ।লোকমুখে এই কথা আসার কথা কিন্তু না!লোকমুখে আসছে মন্ত্রী শাহমীর রাজের দুই বোনের বিবাহ।ক্ষমতার জোর যেমন হয় আর কি।সিয়া ও হিয়াকে আজ লাল টুকটুকে লেহেঙ্গায় সাজানো হয়েছে।বরাবরের মতই হিয়ার বধূ সাজের সাথে চশমাটা রয়েই গেল।তাদের পাশে এসে বসলো আদ্র ও রুদ্র।সামনে দাড়িয়ে আছেন মাহমুদ সরদার ও আহান সরদার।দুই ভাই আজ দুই বেয়াই হবে।মালিনী খান,রাজিয়া ও শাহানা পারভীন একসাথে একদিকে বসে আছে।কাজী এসেছেন অনেকক্ষণ।বিরক্ত হয়ে চেয়ে আছে সবার দিকে।ভাবছে,”আমার কাজ বিয়ে পড়িয়ে কিছু খেয়ে চলে যাওয়া।এরা আমাকে অপেক্ষা করায় কেন?”

অবশেষে পত্র পাত্রীদের দেখে তিনিও মুখে হাসি ফুটালেন।কাজী এবার মাহমুদ সরদারের ইশারা পেয়ে বিয়ে পড়াতে শুরু করার আগে বলেন,”আগে কার বিয়েটা দিবো?”
মাহমুদ সরদার কিছু বলার আগে হিয়া বলে ওঠে,”সিয়া বড় ওর বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।বিয়ের তারাও ওর বেশি।তাই আগে সিয়ার বিয়ে দিন।”
সিয়া অপমানবোধ করে বলে ওঠে,”আমি এতটাও বড় না।পাঁচ মিনিটের ফারাক আমাদের।আমি চাই তুই আগে বিয়ে কর।”
হিয়া চশমা ঠিক করে বলে,”বড় বোন আগে বিয়ে করে।”

“তুই বিয়ের দিন আমাকে বয়স্ক বানাতে চাস নাকি?”
“তুইই তো বলিস তুই আমার বড়।এছাড়া তোর তো বিয়ে করার তারা বেশি।তাহলে আজ কর বিয়ে।”
“তোর জামাইয়েরও বিয়ে করার তারা বেশি এতটা অবশ্য আমার জামাইয়ের নেই।তাই তুইই আগে বিয়ে কর।”
“বয়স্করা আগে বিয়ে করে।”
“আমার বয়স তোর বয়স একই।শুধু তফাৎ কে আগে কে পরে হয়েছে।আমি আগে হলেও তোর মত অন্ধ নই।যে অন্ধ হয় সে বুড়ি হয়।তাই তুই আগে বিয়ে করবি।”
“তোর এত থিওরি শুনতে চাইনা।।আগে বিয়ে ওই ভুটকির হবে।”
“তোকে অন্ধ এমনি এমনি বলিনা।এই যে আমি স্লিম হয়েছি এখনও দেখতে পারলি না।এই যে কাজী আংকেল তাড়াতাড়ি ওদের বিয়ে দেন।”

“শোনেন কাজী আংকেল আপনি আগে ওর বিয়েটা দেন।”
“না আগে তোর বিয়ে হবে।”
“না আগে তোর বিয়ে হবে।”
“তোর বিয়ে।”
“তোর বিয়ে।”
“না না তোর।”
“না না তোর।”
“হিয়া!”
“সিয়া!”
“তর্ক করবি না আজ আমাদের বিয়ে।”
“ভদ্রভাবে বিয়ে কর।”
“অভদ্র হয়েছিস তুই।”
“কিঃ!আমি অভদ্র?বিয়ের দিন আমাকে অপমান!”

“রাখ তোর মান!আছে নাকি কিছু?”
“এত্ত বড় কথা!ধুর বিয়েই আমি করব না।”
“যা যা দেখি কি করতে পারিস?”
হিয়া এবার উঠেই দাড়ালো।ঘোমটার শেষ প্রান্ত ধরে চশমা ঠিক করে বলে,”তাহলে দেখ আমি চলেই যাচ্ছি।”
হিয়া যেতে নিলেও রুদ্র পিছন থেকে লেহেঙ্গার ওড়না ধরে রেখে বলে,”আমার কি দোষ!তোদের ঝগড়াতে আমি শাস্তি পাবো কেন?”

কাজী গলা খাকারি দিয়ে বলেন,”কনেরা কেউ কি এই বিয়েতে রাজি না?”
রাজ বলে ওঠে,”আব্বে শালা পাজি!যদি না হতো বিয়েতে ওরা রাজি তাহলে কি ডাকতাম তোমাকে এখানে আমি?”
“বিয়েতে কনেরা ঝগড়া করছে কেন তাহলে?”
“কারণ এটা ওদের রেগুলার রেডিও।”
মাহমুদ সরদার রাগ দেখিয়ে বলেন,”চুপচাপ বস।”
হিয়া বসলে সিয়া হাসি দেয়।আদ্র চোখ ইশারা করে ঘামতে বলে।মাহমুদ সরদার জানান,”আগে আমার বড় মেয়ে সিয়ার বিয়ে হবে।”

সিয়া কিছু বলতে নিলে মাহমুদ সরদার বলেন,”তোমরা কেউই বাচ্চা না।সব বিয়ের বয়সী।তাই আজ তোমাদের বিয়ে।এমন বাচ্ছামী করবে না।”
অবশেষে বিয়ে হলো দুই বোনের।সবথেকে শান্তি পেলো যেনো রুদ্র।বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই আসনে হেলান দিয়ে শুয়ে মাথা থেকে বরের টুপি সরালো।চোখ বন্ধ করে বলে,”ওহ শান্তি।”
রাজ দুষ্টু হেসে বলে,”শখের নারীকে পেয়ে বলছো ওহ শান্তি।দুইদিন যাক বুঝবে এই নারী জীবনের আসল অশান্তি।”
বলেই পাশ ফিরে দিলো জিহ্বায় কামড়।মায়ার হিংস্র রূপ দেখে চুপ হয়ে গেলো।সবাই মিটিমিটি হাসছে এদের মুখের ভঙ্গি দেখে।সাথে হেসে দেয় মেহরাজ ও প্রলয়।ওদের হাসিটা যেনো সবার কানে আসছে বেশি।

রাতের বেলা দুই বোনকে তাদের স্বামীদের ঘরে রাখা হলো।হিয়ার কাছে আছে মায়া ও সিয়ার কাছে আছে মৌ।দুই বোন আজ তাদের ননদদের বাসরের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে দিচ্ছে।হিয়াকে মায়া ও সিয়াকে মৌ সুন্দরকরে বসিয়ে দিয়ে বাইরে বের হয়। আদ্রর পাশে আছে পিয়াশ ও রুদ্রের পাশে রাজ।পিয়াশ চুপ থাকলেও রাজ বলে,”শোনো ব্যাটা রুদ্র যেহেতু হিয়ার নেই কোনো ক্যারিয়ার,সেহেতু আমাকে দ্রুত মামা হতে দেরি করিও না আর।”
মেহরাজ হাততালি দিলো ছোট্ট হাত দিয়ে।রাজ অবাক হয়ে বলে,”তুই কিছু বুঝেছিস বাপ!”
মেহরাজ আবারো হাসছে।দাঁত ছাড়া মারির এই হাসি দেখতে ভালো লাগে।রুদ্র সন্দেহ করে বলে,”মাঝে মাঝে তোমার ছেলেকে আমার সন্দেহ হয়।এই ছেলে এটুকু বয়সে এত হাসে কেন?”

“তুই কি চাস ও কান্না করুক?”
“এভাবে হাসতে আমি কোনো বাচ্চাকেই দেখিনা।”
“আমার বাচ্চা হাসবে।দেখিস এই হাসি দিয়ে তোর যদি মেয়ে হয় তার মন জয় করবে।”
“আমার মেয়ে?তাও তোমার ছেলের সাথে!”
“কেন তোর আপত্তি আছে?”
“একদমই না।তোমার মত শশুর পেলে আমার মেয়ের কপাল খুলবে।নিজে যে রোমান্টিক না জানি ছেলেকে কতটা বানাও।”
বলেই দুজনে হেসে দেয়।মায়া চোখ ছোট ছোট করে এগিয়ে এসে মেহরাজকে কোলে নিয়ে বলে,”ওদেরকে গুছিয়ে দিয়ে এসেছি।”
বলেই চলে যায়।রাজ উঠে পাঞ্জাবি ঝাড়া দিয়ে বলে,”তাহলে আমি যাই আমার বউয়ের সাথে তোমরাও যাও তোমাদের বউয়ের কাছে।”

মৌ ও পিয়াশ ওদেরকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।আদ্র ও রুদ্র নিজেদের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
সিয়ার মুখটা ঘোমটা দিয়ে ঢেকে রাখা।আদ্র ধীর পায়ে এসে ঘোমটা উঠিয়ে বলে,”মাশাআল্লাহ।”
সিয়া মুচকি হাসি দিলো।সিয়ার হাতটা ধরে হাতের পাতায় চুম্বন দিয়ে বলে,”অতি দ্রুত মা হবার ইচ্ছা আছে নাকি ডাক্তার হয়ে তারপর?”
সিয়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদ্রকে।লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা।আদ্র সিয়ার পিঠে হাত রেখে বলে,”বলো?”
“বাচ্চা যখন আসতে চাইবে আমি তখনই নিবো।”
“আমরা চাইলে দেরিও করতে পারি।আজকাল তো এই ব্যবস্থা আছেই।”
“থামুন!”
সিয়ার লাজুক সুরে মিনমিন করে বলাতে মৃদু হাসে আদ্র।সিয়ার মাঝে ধীরে ধীরে ডুব দিল সে।আজ তার প্রেয়সীর মনকে শান্তি দিবে।অপেক্ষার অবসান ঘটবে দুজনের।

রুদ্র ঘরে ঢুকে দেখে হিয়ার মাথায় ঘোমটা দেওয়া।মৃদু হেসে হাতঘড়ি খুলে বলে,”ঘোমটা খুলে দিতে হবে হিয়াপাখি?”
হিয়া ভ্রুকুটি করে বলে,”এটাই তো বাসরে করে স্বামী স্ত্রী।”
“বাসর সম্পর্কে পি এইচডি করেছিস বুঝি। তা বাসরে আর কি কি করে শুনি?”
“রুদ্র ভাই!”
“চ!এই বালের ভাই বলে বাসরের মুড নষ্ট করে দিবিনা।আই এম নট ইউর ভাইয়া আই এম অনলি ইউর ছাইয়া।”
“আপনি ঘোমটা উঠাবেন না?”
“উঠাবো!”
“তাহলে আমি উঠাবো?”
“এত তাড়াহুড়ো বাসর শেষ করার?”

এতটা দূরে থেকে কথা বলছে রুদ্র তাও হিয়ার গা শিউরে উঠলো।এভাবে কেউ বলে?লজ্জা লাগেনা বুঝি।হিয়া চুপ হয়ে গেলো।রুদ্র এগিয়ে এসে ঠোঁট কামড়ে হিয়ার ডানহাত ধরে দিলো টান।হিয়া উঠে দাড়িয়ে আতঙ্কের সাথে ছুটে আসে সোজা রুদ্রের বুকের উপর।রুদ্র থমকে গেলো।বুকের মধ্যে নিজের হিয়াপাখিকে পেয়ে হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলাচল করছে।রুদ্র দুইহাত দিয়ে হিয়ার পিঠে শক্ত করে ধরে বলে,”আজ রাতেই আমার নিশ্বাস না বন্ধ হয়ে যায়।”
কেঁপে ওঠে হিয়া।মাথা উঁচিয়ে বলে,”এমনটা বলছেন কেন?”

“তোকে কতগুলো বছর অপেক্ষার পর এই বুকে পেয়েছি জানিস?শূন্য বুকটা তোকে পাওয়ার লোভে কতটা ছটফট করেছিলো। তোকে ছুঁতে না পারার কষ্টে কত গভীর রাতে বালিশটা ভিজে গেছে চোখের জলে।আজ যখন তুই এই বুকে আমার খুব কাছাকাছি, তখন মনে হয় ভালোবাসা শুধু একটা অহেতুক শব্দ না।ভালোবাসা আস্ত তুই হিয়াপাখি,আস্ত তুই।তোর উষ্ণ শরীরটা যখন আমার বুক ছুঁয়ে থাকে,তখন মনে হয় পৃথিবীর সব অভাব একমুহূর্তে ফুরিয়ে গেছে। তুই আছিস এটাই আমার সম্পূর্ণতা।”

“আপনি আমাকে এতটা ভালোবাসেন?”
“হ্যাঁ এতটাই ভালোবাসি যে এটার পরিমাপ শুরু করলেও তুই কোনোদিন শেষ করতে পারবি না।হাপিয়ে উঠবি আমার ভালোবাসার দীর্ঘতা খুঁজতে গিয়ে।”
“রুদ্র…
“বাকিটা শুনতে চাইনা।”
“কেন?”
“স্বামী হই রে!ভাই শব্দটা ভালো লাগেনা।এখন যদি এই বাসররাতে তোকে আমি বলি হিয়া বোন আমার,তখন তোর বাসরের ফিলটা আসবে?”
হিয়া হাসলো।রুদ্র হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”চল আমার সাথে।”
“কোথায়?”
“আজকের বাসরটা স্পেশাল করতে।”

বলেই হিয়ার হাত ধরে নিয়ে গেলো ব্যালকনির দিকে।ব্যালকনিতে থাই গ্লাস লাগানো আছে।অনেক বড় ব্যালকনি।যেখানে আছে থাক।এই থাকজুড়ে আছে উপন্যাসের বই।হিয়া অবাকের সাথে তাকালো।রুদ্র মৃদু হেসে বলে,”আমার বাসরের উপহার।কেমন লাগলো তোর কাছে?”
“অনেক অনেক অনেক ভালো।আমি এই উপহার পেয়ে খুব খুশি।”
“আমার হিয়াপাখি তার উপন্যাসে মত্ত থাকবে আর আমি তার উপর।”
“হিয়াপাখি কিন্তু তার নষ্ট পুরুষে মত্ত।এটাও কিন্তু জানা উচিত।”
ঠোঁট কামড়ে হাসলো রুদ্র।হিয়ার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।হিয়ার কপালে চুম্বন দিয়ে বলে,”তোর জীবনে উপন্যাসের বই দিয়ে ভরিয়ে দিবো।তোর স্বপ্নের ঘর বানিয়ে তুলবো আমি।শুধু তুই আমার হাত দুটো আঁকড়ে রাখবি।”
হিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

কেটে গেলো আটমাস।আজ মায়াকে হাসপাতালে আনা হলো।দুইদিন আগেই বীরজারার ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়েছে।যার নাম রাখা হলো জাবীর।জারা এখনও ভর্তি আছে হাসপাতালে।তারিখ অনুযায়ী আজ মায়াকে আনা হলো।ওটির সামনে বসে আছে রাজ।অপেক্ষা করছে মায়ার জন্য।মেহরাজ ও প্রলয় এখন এক বছর কয়েক মাসের।দুজনেই টুকটুক হাঁটতে পারে।কথা বলে শুধু,”বাব্বা বাব্বা মা মা” এমন ভাবে।মেহরাজ একটু পর পর এদিক ওদিক ঘুরে রাজের কাছে এসে বলে,”বাব্বা…মা মা?”
রাজ মেহরাজকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মানিক আমার তোমার মা নতুন বোন আনতে গেছে এখনই চলে আসবে।”
মেহরাজ ঠোঁট নাড়িয়ে বলতে নেয়,”বো বো..
“হ্যাঁ বাবা বোন আনতে গেছে মা।তুমি আর প্রলয় খেলা করবে ওর সাথে।”

হাসলো মেহরাজ সাথে প্রলয় নিজের নাম শুনে মৌয়ের কাছ থেকে ছুটে আসে রাজের কাছে।দুইভাই রাজের দুই হাঁটুতে বসে রাজের সাথে সময় কাটাচ্ছে।পিয়াশ মৌকে শান্তনা দিয়ে বলে,”কিছু হবেনা ভাবীর।তুমি চিন্তা করো না।”
“কখন যে হবে?অপেক্ষা সহ্য হয়না।”
পিয়াশ মৃদু হাসলো।মৌকে আগলে নিলো। মৌ ও পিয়াশ এখন নিজেদের মত ব্যাবসা করে।মৌয়ের ইচ্ছাতেই পিয়াশের এই ব্যবসায় উদ্যোগ।
অপেক্ষার প্রহর শেষ করে ওটি থেকে বের হলো ডাক্তার।পিছন নার্স যার কোলে একটি শিশু। নার্স শিশুকে দেখিয়ে বলে,”মেয়ে হয়েছে আপনাদের।”

রাজ চোখ তুলে তাকাতেই ডাক্তার ভয়তে বলে ওঠে,”মা সুস্থ্য আছে।এবার সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।”
রাজ তার মেয়েকে কোলে নেয়।মাহমুদ সরদার এগিয়ে আসেন সাথে মৌ ও পিয়াশ।বীর এলো শাহানা পারভীনকে হুইল চেয়ারে নিয়ে।সবাই দেখছে নতুন সদস্যকে।মেহরাজ হাত উঁচিয়ে বলে,”উহ উহ..
মানে সে দেখবে।মাহমুদ সরদার রাজের মেয়েকে নিয়ে নিচু হলেন।মেহরাজ তার ছোট বোনকে দেখছে।রাজ বলে,”কেমন লাগছে বোনকে?”

মেহরাজ হাত ধরে দেখে।এদিকে প্রলয় বাচ্চাটার পা ধরে।পায়ের নিচে সুড়সুড়ি পেয়ে বাচ্চাটা নড়ে ওঠে।বামহাত দিয়ে দিলো এক থাবা।তাও কিনা প্রলয়ের মুখে।ছোট্ট প্রলয় হা করে দেখে দিলো চিৎকার করে কান্না।কারণ রাজের সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়ের হাতের ছোট্ট আঙ্গুলটা প্রলয়ের চোখের মণিতে এসে লাগে।আহামরি কিছুই হয়নি কিন্তু জ্বলছে চোখটা।মৌ এসে প্রলয়কে কোলে নিয়ে আদর করছে।বুঝিয়ে দেয়,”এটা তোমার বোন হয়।তোমার খালামণির মেয়ে।”
পিয়াশ বলে,”খালামণি কেন?চাচার মেয়ে।”
“আমার বোন ওর খালামণি।”
“আমার ভাই ওর চাচা।”
“কি ব্যাপার পিয়ু বেবী!তুমিও কি সরদারদের ছোঁয়া পেয়েই গেলে?”
“একসাথে থাকতে থাকতে একটু তো ডেমো আসবেই।”
সবাই হেসে দিল।অবশেষে সবকিছু হাসিখুশি সংসার কাটায় সবাই।তবে বাইরের জগৎ রাজকে সবসময় শান্তিতে থাকতে দেয়না।রাজনীতি জীবনটাই তো এমন।তারপরও সকল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাকে।

ছয় বছর পর,
মুখে হাত দিয়ে ভাবান্তর হয়ে সুইমিং পুলে বসে আছে মেহরাজ।এখন তার বয়স সাত।কিন্তু ভাব এমন যে সে তার বাপের থেকেও এগিয়ে।রুদ্র এসে মেহরাজের কাধে হাত রেখে বলে,”কিরে চ্যাম্প যাবি না হাসপাতালে?”
মেহরাজ ভাবুক হয়ে বলে,”আচ্ছা ছোট বাবা! তোমাদের বাবু আসার পর ছোট মা আমাকে আদর করা থামিয়ে দিবে কেন?”
রুদ্র অবাক হয়ে বলে,”এমন কেন মনে হলো?”
“মা বাবা তো কাজে ব্যস্ত থাকে।একমাত্র ছোট মা আমাকে দেখতো আমাকে আগলে রাখতো আজ তারও বাচ্চা হবে।আমার খারাপ লাগছে।”
“আরেহ!যে আসবে সে তোর খেলার সাথী।”
“খেলার সাথী?”
“যেমনটা প্রলয়,মেহেনূর,জাবীর আর সিজুকা তুই একসাথে খেলিস তেমন।”
“কিন্তু ছোট মা নাকি আমাকে যেভাবে খাইয়ে দিতো আমার সাথে গল্প করতো ঘুম পাড়িয়ে দিতো এগুলো করবে না নাকি।”
“কে বলেছে?”
“জাবীর মাস্তান।”

“ওরে মজা করে বলেছে।তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো?চল তোর ছোট মা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
তবুও মন খারাপ করে বসে আছে মেহরাজ।যাবে না হিয়ার অপারেশনে।হিয়া যে কিনা মায়ের মত আদর করে সময় দিতো সেও একটু পর ব্যাস্ত হবে।যেমনটা সিজুকাকে পেয়ে সিয়া ভুলে গেছে প্রলয়কে।সিজুকা হলো সিয়া আর আদ্রের তিন বছরের মেয়ে।মেহেনুর হলো মায়ারাজের মেয়ে।এতদিনে সবার পরিবার সম্পূর্ণ হলেও হিয়ার সম্ভব হয়নি।কনসিভ হতে সমস্যা হয়।রুদ্রের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়ে হিয়া ভয় না পেয়ে চিকিৎসা করে।অনেক অপেক্ষার পর সে মা হবার খবর পায়।আজ সেই খুশিতে সবাই আনন্দ করছে।একপাশে রাগ হয়ে আছে মেহরাজ।যাকে দেখতে না পেয়ে হিয়া ছটফট করছে।যতই সে মা হবার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিক মেহরাজ তার কলিজার টুকরা।তাকে ভুলবে না সে।নিজে মা হতে পারছিল না বলেই শূন্যতা কাটাতে মেহরাজকে আগলে নিয়েছিল।আজকে কিভাবে ছাড়ে তাকে?রুদ্র যখন দেখলো এই ছেলে উঠবে না তখন মেহরাজকে বগলধাবা করে নিয়ে গেলো।মেহরাজ চিল্লিয়ে বলে,”ছোট বাবা ছাড়ো আমাকে।আমি তোমার বাচ্চাকে দেখব না।ও এসেই আমার ভালোবাসায় ভাগ বসাবে।”

হাত পা লাফাতে থাকে মেহরাজ।রুদ্র শুনল না ওর কথা।ঘরের মধ্যে আনলে মায়া ওর চিৎকার শুনে বলে,”কিসের ভালোবাসায় ভাগ বসাবে?”
“এই যে ছোট মায়ের কুমড়ো পেটে যে আছে সে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিবে।”
রাজ এগিয়ে এসে বলে,”ভালোবাসার মানে জানিস?”
“কেন জানবো না আমি তো তোমারই ছেলে। তুমিই তো সারাদিন মাকে সুযোগ পেলেই বলো ভালোবাসি।আমি জানি ভালোবাসা কি।”
মাহমুদ সরদার কপাল চাপড়ে বলেন,”এতদিন ছেলে ছিল এবার নাতিটাও শুরু হলো।”
মায়া চোখ রাঙিয়ে বলে,”মুখ সামলে কথা বলো মেহরাজ।নতুন সদস্য আসবে কোনো খারাপ ব্যবহার যেনো না শুনি।”

নতুন সদস্য আসতে না আসতেই মেহরাজকে শাসন করে মায়া।কান্না করে বলে,”আমি থাকবো না।চলে যাব আমি।”
মায়া এখনও চোখ রাঙিয়ে আছে।হিয়া সোফায় বসা অবস্থায় হাত বাড়িয়ে বলে,”বাবা মেহরাজ নতুন সদস্য আসলেও তুমি আমার ভালোবাসা পাবে।তোমার নতুন বোন তোমাকে ভালোবাসবে।তোমার ভালোবাসা আরো বাড়বে।”
“আমার ভালোবাসা বাড়বে?”
“হ্যাঁ।”
মেহরাজ এসে হিয়ার পেটের উপর কান রেখে বলে,”শোন তুই আমাকে ভালোবাসবি নাহলে আমি তোকে পিটাবো।”
রুদ্রের গাল হা হয়ে গেলো।মায়া কিছু বলতে নিবে শাহানা পারভীন জানান,”বকলেই বাচ্চারা সঠিক পথে আসেনা।ওদেরকে ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে হয়।”

মায়া শান্ত হয়।এদিকে হিয়ার পেটে থাকা বাচ্চাটা হিয়াকে দিলো কিক।যেটা লাগলো সোজা মেহরাজের কানের গোড়ায়।বেচারা বুঝতে পারল তার ভালোবাসা দেওয়া ব্যক্তিটি পৃথিবীতে ডাউনলোড হবার আগেই তাকে লাথি মেরেছে।কানের গোড়ায় হাত রেখে বলে,”আমাকে লাথি দিলো!”
হিয়া এবার কান্না শুরু করে ব্যথায়।সময় হয়ে এসেছে।হিয়াকে ছটফট করতে দেখে মালিনী এগিয়ে এসে হিয়ার হাত মালিশ করে।ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতেই রুদ্র হিয়াকে কোলে নিয়ে চলে গেলো গাড়িতে।রুদ্র বসার পরেই হিয়ার অন্যপাশে এসে বসে মেহরাজ।বলে,”তোমার কুমড়ো পেটের মধ্যে থাকা বাচ্চাটা আমাকে লাথি মেরেছে।আমি মাফ করে দিলাম।আমাকে ভালোবাসা দিলেই হবে।”

রুদ্র ধমক দিয়ে বলে,”চুপ থাক!আমার বৌয়ের পেইন উঠছে এখন।”
ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।মেহরাজ রাগে বোম হয়ে কুটি একটা আঙুল দেখিয়ে বলে,”এই ছোট বাবা আমাকে ধমক দিবেনা।আমি মেহরাজ সরদার আমার বাবা শাহমীর রাজ সরদার।বেশি রাগালে তোমার বাচ্চাকে আমি চেংতোলা করে দিবো।”
রুদ্র নিজের কপালে চাপড় মেরে হিয়াকে সামলায়।মেহরাজ হিয়ার বামহাত ধরে আছে।হিয়া কাতরাতে থাকে।এবার মেহরাজ একটু ভয় পায়।তাই চুপ করে রুদ্রকে ফলো করে হিয়ার সেবা করছে।

অবশেষে হিয়ার ফুটফুটে কন্যা সন্তান হলো। যাকে নিয়ে মাতামাতি করছে পুরো পরিবার।জারা তো জাবীরকে ডেকে বলে,”এই দেখ কি কিউট বোন হয়েছে একটা।”
মেহরাজ আরো রেগে গেলো।এই জাবীরকে দুচোখে সহ্য করতে পারেনা মেহরাজ।রাগে ওর নাম দিয়েছে জাবীর মাস্তান।বুকে হাত গুজে অন্যদিকে মুখ ফুলে আছে।মেহরাজের ভাষ্যমতে সে অনেক কষ্ট করেছে এই বাচ্চাটার জন্য তাহলে তাকে না দেখিয়ে কেন জাবীরকে দেখাবে?মাহমুদ সরদার যখন রুদ্রের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে তাকায় তখনই চোখ যায় মেহরাজের দিকে। মেহরাজকে ফুঁসতে দেখে মৃদু হেঁসে এগিয়ে গেলেন।বাচ্চাটাকে দেখিয়ে বলেন,”নতুন সদস্য এসেছে।”

মেহরাজ রাগ রাগ চোখে দেখছে।বাচ্চাটাকে মেহরাজের কোলে দিলেই বাচ্চাটার গায়ের উপর থেকে পাতলা কাপড় সরে যায়।ফলস্বরূপ হিয়া ও রুদ্রের বাচ্চাটা ন্যাংটা হয়ে গেলো।মেহরাজ এটা দেখে চোখ বড় বড় করে বলে,”এ ন্যাংটা কেন?জামা কাপড় নেই?চুনুরি দেখে ফেললাম তো।”
রুদ্র দ্রুত এগিয়ে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে বলে,”ওদিকেই তোমার চোখ যায় হতচ্ছাড়া!”
“মেলে রাখলে দেখতে আপত্তি কোথায়?”
রাজ এসে মেহরাজকে বলে,”এইসব পঁচা কথা বলতে নেই বাবা।”
মেহরাজ সহজ সরল মনে বলেছিলো এরা অন্যদিকে নিয়ে নিলো।মেহরাজ এসে মায়ার হাত ধরে টানতে থাকে আর বলে,”চলো আমার সাথে।”
মায়া জিজ্ঞাসা করে,”কোথায়?”

“তোমার শোরুমে।বাচ্চা মেয়েদের জামা কিনতে হবে।ওই লেংটি ইদুর তো ন্যাংটা।ছোট বাবা গরীব টাকা নেই তাই আমরাই জামা কিনে দিবো।”
রুদ্র চোখ বড়বড় করে বলে,”ব্রো এটা কি তোমার ছেলে?”
মাহমুদ সরদার ভ্রু নাচিয়ে বলেন,”কোনো সন্দেহ আছে?বাবার কার্বন কপি এটা।”
“বাবার কার্বন কপি না তার থেকেও এগিয়ে।”
প্রলয় এসে মেহরাজকে শান্ত করে।বাচ্চারা সবাই মিলে খেলছে এখন।রুদ্র হিয়ার কাছে গেল।সবাই মিলে আনন্দ করছে।

রুদ্র হিয়ার মেয়ের নাম হিয়াদ্রি।ওর জন্মের পর থেকে মেহরাজ একটু রেগে রেগেই থাকে।ছেলেটা আগে ফুফুর ভালোবাসা পেতো এখন কম পায়।মাঝে মাঝে হিয়াদ্রির গায়ে চিমটি দিয়ে হিয়াদ্রিকে কাদিয়ে দিতো সে।পরে মায়ার থেকে পেতো কানমলা।এভাবেই কাটলো দুইটি বছর।মেহরাজ রাগ করে হিয়াদ্রিকে লেংটি ইদুর বলে ডাকে।আসলে জন্মের সময় সে দেখতেও ঠিক তেমনই ছিল।সাদা ধবধবে আর গা টিপলেই রক্ত জমাট হয়ে লাল।যেহেতু হিয়াদ্রিকে ন্যাংটা দেখেছে তাই ওর জন্য লেংটি ইদুর বেস্ট বলে দাবি করে মেহরাজ।

আজকে সরদার বাড়ির দুই বড় পুত্রের সুন্নতে খাৎনা।মেহরাজ নিজের জন্য অনুষ্ঠান হতে দেখে খুশিতে আত্মহারা।সারা বাড়িতে লুঙ্গি পরে নাচ শুরু করেছে।হলরুম জুড়ে বাজছে লুঙ্গি ড্যান্স লুংগি ড্যান্স গান।লুঙ্গি পরে নাচ করে মেহরাজ।এদিকে লুঙ্গি পরে চুপচাপ বসে আছে প্রলয়।দুশ্চিন্তা তার মাথায়।সুন্নতে খাৎনা মানে কি এটা খুব ভালো করেই শুনেছে।পিয়াশ কোনকিছু লুকায়নি কিন্তু রাজ লুকিয়েছে মেহরাজের থেকে।কারণ মেহরাজ একদিন কঠোর হয়ে জানিয়েই দিয়েছে,”আমি চুনুরি কাটবো না।”
তারপর আর কি!প্ল্যান কষেছে রাজ।কিন্তু প্রলয়কে চিন্তিত দেখে মেহরাজ জিজ্ঞাসা করে,”ব্রো আজ আমাদের জন্য অনুষ্ঠান।তুমি আনন্দ না করে চিন্তা করছ কেন?”

“কারণ আজ আমাদের সুন্নতে খাৎনা।”
“হ্যাঁ তাই তো আনন্দ করো।”
“ব্যাথা পাবো তো।ভয় করছে আগে থেকে।আনন্দ করবো কিভাবে?”
“ব্যাথা পাবে কেন?”
“আমি একা না তুইও পাবি।”
মেহরাজের ভ্রু কুচকে এলো।স্পষ্ট জানতে চাইলে জাবীর এসে শয়তানি করে জানায়,”আজকে তোর চুনুরি কাটতে আসবে।আজকে তোর আর প্রলয় ভাইয়ের কাটিং ডে।খুব ব্যাথা পাবি”

বলেই হাসি।মেহরাজ শোনা মাত্রই বোম হয়ে দিলো চিৎকার।এরপর!এরপর আর কি সারাবাড়ি জুড়ে একদিকে রাজ একদিকে রুদ্র আরেকদিকে পিয়াশ ছুটছে মেহরাজের পিছনে।মেহরাজ তো বাড়ির সামনের বাগানে যেদিকে পারছে দৌড়।ধরা যেতো যদি এক সোজা দৌড়াতো।ছেলেটা হয়েছে অতিরিক্ত বুদ্ধিমান।এদিক ওদিক দৌড়ানোর কারণেই ধরা সম্ভব না।অনেক কষ্টে মেহরাজকে ধরলো রাজ।বলে,”আমি তো বাপ হই।এত সহজ আমার সাথে জেতা?”
মেহরাজ নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে,”আমি কাটিং ডে পালন করব না ছাড়ো।বাঁচাও আমাকে কেউ।আমার বাবা আমার হিসু জায়গা কেটে দিবে….

“চুপ!তোর বয়সে আমি এত বাদর ছিলাম না।”
“আমি কি করবো এগুলো জেনে?আমি কাটবো না।হিসু করতে কষ্ট হবে….
কান্না করে দিলো মেহরাজ।অনেক কষ্টে মায়া এসে সামলালো।যখন হাকিম আসে দুজনের সামনে দুই ভাই ভয়ে কান্না শুরু করে।মেহরাজ ও প্রলয়ের কান্না দেখে হিয়াদ্রি ছুটে এসে অবাক হয়ে দেখছে।মেয়েটার বয়স দুই বছর কিছুই বুঝেনা সে।কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মেহরাজের মনে হলো তার লেংটি ইদুর সব বুঝে।চিৎকার করে বলে,”সামনে থেকে যা তুই।এখানে কোনো মেয়ে মানুষ নেই।আমার মাও নেই।তুইও থাকবি না।”
হিয়াদ্রি পলক না নামিয়ে দেখছে এদিকে মেহরাজ ক্ষেপে বলে,”তুই যাবি নাকি তোর চুনুরি আমি কেটে দিবো।”
বলেই যেই তেড়ে আসতে নিবে রুদ্র দ্রুত এসে হিয়াদ্রিকে কোলে নিয়ে বলে,”পুঁচকে ছেলে তো নয় যেন এক জল্লাদ।”

অবশেষে প্রলয় ও মেহরাজের অনুষ্ঠান শেষ হলো।দুই ভাই এখন ঘুমে আচ্ছন্ন।যে কান্না করেছে এখন ঘুম না হয়ে উপায় নেই।
রাজ ঘরে আসলে মায়াকে ব্যালকনিতে দেখতে পায়।পিছন থেকে মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কি ভাবছো মায়াবতী?”
“আমাদের বয়স এবার আরো বেড়ে গেলো।লাগামহীন মন্ত্রী মশাইয়ের কিনা একটা বাদর মার্কা ছেলে হলো।এত দুষ্টু আর ছটফটে বাব্বাহ!”

“ছেলেটা আমার মত ছটফটে হলেও মেয়েটা কিন্তু তোমার মতই রাগী।এই সময়ই কেমন রাগ দেখায়।”
“অন্তত বুদ্ধিমতি আছে।মেহরাজ কি ক্যারিয়ারে কিছু করতে পারবে?বই ঠিকমত ধরেনা।”
“সময় ওদেরকে ঠিক ভালো স্থানে পৌঁছে দিবে।ওদের নিয়ে ভেবো না এখন মুহূর্ত আমাদের।”
বলেই মায়ার গলায় চুমু দেয় রাজ।মায়াকে কোলে নিয়ে চলে গেলো বাথটাবের কাছে।মায়া বলে,”আজকেও?”
“এনি টাইম ফর ইউ এন্ড মি।”
শুরু হলো মায়ারাজের বাথরুম বিলাস।বাকিটা হয়ে থাকবে ইতিহাস।

সকালবেলা রুবি ও তাজ এলো একসাথে।দুজনেই শিবচরে থাকে।তাজ ছবি আঁকায় পারদর্শী তাই সে আর্টের শিক্ষক।রুবি মায়ার শিবচরের শোরুম দেখে।দুজনেই কাল আসতে পারেনি ব্যস্ততার কারণে তাই আজকে এলো।পারিবারিক হোক বা প্রণয় সম্পর্ক দাড়া,বিয়ে তাদের হয়েছে।একসাথে সুখে আছে।পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করছে একসাথে।এরমধ্যেই তারেক জানালো,”আরশাদের ছেলে এসেছে দেশে।শুনলাম ওই ওর বাবার জায়গায় নিজেকে দার করাতে চায়।”

রাজ মৃদু হেসে ভাবছে মেহেনূরের জন্মের আগের দিনের কথা।মায়াকে ঘুম পাড়িয়ে চলে যায় বাইরে।বীরের গোডাউনে এসে দেখে তার লোক আরশাদকে ধরে বেঁধে রেখেছে।ওখানেই গুলি করে শেষ করে দিলো আরশাদের চেপ্টার।মনে করে তারেকের দিকে চেয়ে বলে,”বাবার স্থানে ছেলে আসতেই পারে।”
“কিন্তু স্যার ও অনেক বেশি শক্তিশালী।ওর বড় একটা গ্যাং আছে।”
বীর এগিয়ে এসে বলে,”আমার থেকেও বড়?”
“আমেরিকায় থেকে পাওয়ারফুল হয়েছে।সমস্ত ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে জানালাম।”
রাজ হালকা নিশ্বাস ছেড়ে জানায়,”রাজনীতির মাঠে থাকলে ক্ষমতা মজবুত রাখতেই হয়।আমার ক্ষমতা যেমন আছে বিরোধী দলের ক্ষমতাও থাকবে।এমনকি বিরোধী দলকে হামলা করার প্রবণ চেষ্টা।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৭১+৭২

বিঃদ্রঃ
মায়াবতীর ইচ্ছা শব্দটা শুনতে যতটা সহজ ইচ্ছা পূরণ হওয়া ততটা কঠিন।কারণ আমাদের ইচ্ছা কখনও নির্দিষ্ট একটা থাকেনা।ইচ্ছা থাকে একাধিক।মন্ত্রী মশাইয়ের মায়াবতীর ইচ্ছা ঠিক তেমনই।বাবাকে শিক্ষা দিতে গিয়ে জীবনের প্রত্যেকটা পদে একেক জালিমের সম্মুখীন হতে হয়।তাদেরকে শেষ করে দেবার আলাদা ইচ্ছা মায়ার জন্মেছে নতুনরূপে।এখন মায়াবতীর ইচ্ছা তার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করা।এটা তার জন্য খুব কঠিন।রাজ একজন মন্ত্রী।যার শত্রুর অভাব নেই।একের পর এক শত্রুর আগমণ হবেই কিন্তু তারপরও মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ হবেই।গল্প থেমে যায় কিন্তু জীবন চলে মৃত্যু অব্দি।হয়তো এরপরও মায়ারাজের জীবনে নতুন শত্রুর আগমণ হবে।হয়তো হয়েছে আজ থেকে।সবকিছু মোকাবিলা করে দিনশেষে একটু বাথরুম বিলাসে নিজেদের প্রশান্তি দিবে রাজ ও তার মায়াবতী।যত যাই হোক বাথরুম বিলাস থামবে না।এটা শাহমীর রাজের আরামদায়ক স্থান।মায়ার অবর্তমানে একা একা বাথটাবে থেকে সময় কাটাতো সে।দুশ্চিন্তা দূর হতো।এখন দুজনে মিলে।এটাকেই মন্ত্রী শাহমীর রাজের কাছে বাথরুম বিলাস নামে পরিচিত।জীবন যেমনই কাটুক মন্ত্রী মশাই তার মায়াবতীকে নিজের বক্ষে আগলে রাখবে আর মন্ত্রী মশাই সবসময় মায়াবতীকে বলবে,”আব্বে এই মায়াবতী!আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম।”

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here