মায়াবতী পর্ব ২

মায়াবতী পর্ব ২
ইসরাত জাহান ইকরা

মেঘা ব‌ইয়ের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে ভাবছে,আলিফ কীভাবে তার সাথে এতো বড় প্রতারণা করলো। তিশা মেয়েটার সাথে নাকি আমার যায় না, একদিন এমনভাবে নিজেকে পরিবর্তন করবো যা দেখে আলিফ একদিন ভিশনভাবে আফসোস করবে। সেদিন শত খুঁজে ও মেঘা কে আর পাবে না। এসব ভাবতে ভাবতে ধ্যান কাটলো মাটির জোরে জোরে পড়ায়। মেঘা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো_ কি শুরু করেছিস মাটি। আমি না তোকে বারন করেছি কোন রকম ঝামেলা করবি না। কেন শুনিস না আমার কথা বলতো।

মাটি বলে উঠলো _ রাখো তোমার কথা, অযথা আমাদের ঘরে বন্দি করে রেখেছে। দুইটা জলজ্যান্ত মানুষ কে কয়দিন লুকিয়ে রাখবে। এটা ও সম্ভব, এক‌ই বাড়িতে এক‌ই ছাদের তলায়।
মেঘা _ সেটা পরের টা পরে দেখা যাবে। এবার চুপ কর নয়তো আজ খাবার পাবো না। এমনিতেই আমার মন আজকে ভালো নেই। আর কোন ঝামেলা করিস না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাটি _ পরিবেশ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজ খাবার পাবো না, ঘর থেকে বের হতে না পারলে খাবো কি। আর আমি জানি তোমার মন কেন ভালো না, আলিফ ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে শুনেছি,ওর বোন তো আজকে আমাকে ঠেস দিয়ে কথা বললো। আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম এই আলিফ ভাইয়া কেরেক্টার লেস। শুনো নি তো আমার কথা।
মেঘা _ থামবি তুই………..মেঘার কথা শেষ না হতেই ধাম করে দরজা খুলে ভেতরে রাহিমা বেগম প্রবেশ করলেন। কপট রাগ দেখিয়ে বললেন _এই যে মেয়ে, তুমি তো পড়তে পড়তে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর হয়ে যাচ্ছো। পেটে খাবার না গেলে গলা বের হবে না তখন।

মাটি মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো _ এই আরিফা জামান মাটি আপনাকে ভয় পাইনা চাচী, নিচে গিয়ে বড় জেঠা কে বলে দিব আপনি আমাদের অত্যাচার করেছেন।
রাহিমা বেগম তৈচ্ছিল্য হেসে বলল _ জীবনে বড় জেঠা কে চোখে দেখেছিস। তোর মা,তোর বাপ কে ফুঁসলিয়ে ফাসলিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। তবে থেকেই এই বাড়ির দরজা তোদের জন্য বন্ধ ছিল, সেই দুঃখে তোদের বড় জেঠা তোর বাপের সাথে কথা বলেনি, চাকরির সুবাদে চলে গেছে শহরে, তারপর তো তোদের কোন খোঁজ খবর ই নেয় নি। আর তোর মেঝো জেঠা,যার উপর ,পরে পরে খাচ্ছিস, একটু আকটু খোঁজ খবর রাখতো বিধায় তোদের বাপ মা মরার খবর শুনে দয়া করে আশ্রয় দিয়েছে। এখন তেরিং বেরিং করবি আর আশ্রয় হাড়াবি।

মাটি ___ইসসস বললেই হলো, এখানে আমার বাবা এবং বড় জেঠার সম্পত্তির ভাগ আছে। সেই হিসেবে আমাদের বাবার সম্পত্তি আমাদের দুই বোনের হক।
রেহিমা বেগম এটুকু শুনেই রাগে গর্জন করে উঠলেন _ কি বললি মেয়ে, যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। এটুকুনি মেয়ে হয়ে সম্পত্তির ভাগ চাচ্ছিস। মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো। এই বলে রেহিমা বেগম তেরে গেলেন। মাটি ,আপুরে বাঁচা বলে মেঘার পিছনে গিয়ে লুকালো।

মেঘা দুই হাত ডাল বানিয়ে দাঁড়ালো,আর বলতে লাগলো_ চাচী, ও ছোট মানুষ। ওকে মারবেন না আমি ওকে বকে দিব। ও আর এসব কখনোই বলবে না, এবারের মতো ওকে ছেড়ে দিন।
রাহিমা বেগম _ আজ বাসায় মেহমান আছে বলে পাড় পেলি। আর যদি ছোট মুখে বড় কথা বলতে শুনেছি তবে এই বাড়ি থেকে বের করে দেব। এই বলে রাহিমা বেগম চলে গেলেন।

রাহিমা বেগম চলে যেতেই, মাটি রাগ করে চেয়ারে বসলো। মেঘা মাটি কে পড়তে বসে বলে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। বেলকনিতে দাঁড়াতেই উঠোনে নজর গেলো মেহমিদের দিকে, কালো টিশার্ট পড়া, কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে লেপটপে কি জেনো করছে। আর একটু পর পর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।
এদিকে মেহমিদ উপরে বেলকনির দিকে তাকাতেই খোলা চুলে, সাধারণ একটা শাড়ি পরিহিতা মেয়েকে দেখতে পেলো। কিন্তু মুখ স্পষ্ট দেখার আগের মেয়েটি বেলকনি থেকে দৌড়ে ঘরে চলে গেল।
সাথে সাথে মেহমিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। তবে কি আর কেউ আছে এই বাসায়।

মেঘা কোনরকম দৌড়ে ঘরে গিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কে বললো তাকে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াতে। ওটা মেহমিদ নাকি মাহিদ বুঝতে পারলো না। আর এতো কিছু তার বুঝার দরকার ও নেই এই ভেবে, মাটি কে ডেকে দরজায় খিল এঁটে মাটি কে ঘুমাতে বলে মেঘা শুয়ে পড়লো।
নিচে সবাই খেয়ে দেয়ে যে যার মতো ঘরে চলে গেল। মেহমিদ খাবার টেবিলে বসে বার বার উপরে তাকাতে দেখে আয়েশা বললো, কিছু লাগবে মেহমিদ ভাই। মেহমিদ না সূচক মাথা নেড়ে ঘরে চলে গেল।

মাঝরাতে, মাটির ঝাঁকুনিতে মেঘার ঘুম কেটে গেলো। বিরক্ত হয়ে বললো, কিছু বলবি আরু। মাটি নাক ছিটকে বলে উঠলো _ আরু বলবা না তো, আমার একটা সুন্দর নাম আছে আরিফা জামান মাটি।
মেঘা কপাল কুঁচকে বলে উঠলো _মাঝ রাতে তোর নাম শুনার জন্য ডেকেছিস। এখন দয়া করে বলবি কি জন্য ডেকেছিস।

মাটি _ জানোই তো আমি সব সহ্য করলে ও ক্ষিদা সহ্য করতে পারি না। আমি ক্ষিদায় ঘুম আসতে না আপু।
সাথে সাথে মাটি ধরফরিয়ে উঠে বসলো। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে বলে উঠলো _ আমায় আগে বলবি না, । আচ্ছা তুই একটু বস আমি গিয়ে খাবার নিয়ে আসছি।
মাটি_ আপু আলো টা জ্বালাই।
মেঘা ‘:- একদমি না, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসছি তুই ততক্ষন চার্জার লাইট জ্বালিয়ে বসে থাক।
মাটি _ ঠিক আছে আপু, তুমি সাবধানে যেও। দেখো বাতাসে জেনো মোমবাতি টা না নিভে। তুমি তো আবার অন্ধকার ভয় পাও।
মেঘা মুচকি হেসে শাড়ি ঠিক করে মোমবাতি হাতে নিয়ে নিচে চলে গেল।

পা টিপে টিপে সিরি দিয়ে নামার সময় আশপাশ টা ভালো মতো দেখে নিলো মেঘা।
বাতাসে খোপা করা চুল গুলো খুলে পিঠ ছড়িয়ে কোমরে পড়লো। আজ পর্যন্ত মেঘার খোলা চুল দেখেনি আলিফ, সবসময় মেঘা মাথায় ওড়না দিয়ে থাকতো।

কখনো হাত ধরতে আসলে লজ্জায় দৌড়ে পালাতো। তাই হয়তো আলিফ তাকে ক্ষ্যাত ভেবে দূরে সরিয়ে দিল।
এসব ভেবে টেবিলে মোমবাতি রেখে চুল গুলো খোপা করে বেঁধে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।
রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে একটা প্লেটে সাজিয়ে টেবিলে রেখে হাতে মোমবাতি উঠাতেই মেঘা লবণ আনেনি ভেবে আবার রান্না ঘরে গেল।

তাড়াতাড়ি করে লবণ হাতে ফিরে এসে মোমবাতি আর প্লেট নিয়ে ঘুরতেই,কারো বুকের সাথে ধাম করে বাড়ি লাগলো । আচমকা এমন হোওয়াতে মেঘার গলা শুকিয়ে গেল।
ফট করে উপরে তাকাতেই এতো কাছাকাছি মেহমিদ কে দেখে মেঘার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
এদিকে মেহমিদ ঘরে বসে লেপটপে কাজ করছিলো, রান্না ঘরের দিকে আওয়াজ শুনে, দেখতে এলো। এসে সন্ধ্যার সেই মেয়েটিকে দেখে থমকে গেল।

মায়াবতী পর্ব ১

মেঘা এক মূহুর্ত দেড়ি না করে দৌড় দিল। আর মেহমিদ মেঘার যাওয়ার পানে তাকিয়ে র‌ইলো।
একটু পর মেহমিদের ধ্যান কাটলে মনে মনে বলতে লাগলো _ যতদূর যাও পাখি দেখা হবে ফের।
পালিয়ে বেরাবে আর কয়দিন।

মায়াবতী পর্ব ৩