মায়াবতী পর্ব ৭

মায়াবতী পর্ব ৭
ইসরাত জাহান ইকরা

আয়েশা ব‌ই নিয়ে এসে মাটির পাশে বসলো। ততক্ষনে মাহিদ মাটি কে একটা ম্যাথ করতে দিল, মাটি খাতা কলম বের করে বসে বসে বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর কলম কামড়াচ্ছে।
মাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _ কি সমস্যা মাটি, কি করতে বলেছি তোমাকে ‌।

মাটি অসহায় ফেস বানিয়ে বললো_ আমি গনিতের গ ও বুঝি না, আর আপনি আমাকে কি করতে দিয়েছেন।
মাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _তখন যখন জিজ্ঞেস করলাম, এইগুলো পারো কি না, তখন বললা কেন এই মাটি পারে না এমন কিছুই নেই। খালি বড় বড় কথা, কাজের বেলায় ঠনঠন। খাতা কলম এদিকে দাও আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।
মটি মনে মনে বলতে লাগলো _ আমাকে পড়ানোর শখ একেবারে মিটিয়ে দিব, এমন জ্বালান জ্বালাবো নেক্সট টাইম আমাকে পড়াতে গেলে দুইবার ভাববে মিস্টার মাহিদ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাহিদ ভ্রু কুঁচকে মাটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো _ মাটি be serious , এদিকে ফোকাস করো।
মাটি তারপর মাহিদের দিকে মনযোগ দিল। মাহিদ সুন্দর মতো ম্যাথটা বুঝিয়ে দিল। মাহিদ যখন সুন্দর করে পড়াচ্ছিলো তখন মাটি মাহিদ কে ভালো মতো খেয়াল করলো। মনযোগ দিয়ে মাহিদের কথা বলার ভঙ্গি, স্টাইল দেখে মাটির কিশোরী মনে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো।

মাটির ধ্যান ভাঙলো, মাহিদের ধমকে। মাহিদ বলতে লাগলো _ এই মেয়ে, এতোক্ষণ যাবত যা বুঝিয়ে দিয়েছি, বুঝতে পেরেছো কিছু, নাকি হুদাই তাকিয়ে ছিলে।
আয়েশা আর মাটি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। তারপর মাহিদ ওদের কে কিছু ম্যাথ করতে দিয়ে। নিচে চলে গেল।

এদিকে কমড়ে ওড়োনা গুজে রান্নাঘরে রুটি ভাজতে ব্যাস্ত মেঘা। গরমে চুলার তাপে ঘেমে একাকার।
তখনি মেহমিদ সিরি বেয়ে আসার সময় মেঘা কে রান্নাঘরে দেখে মেহমিদ এর রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। মেহমিদ চিৎকার করে বলে উঠলো _ আম্মা আম্মা…….।
মেহমিদ এর চিৎকারে মেঘা রান্নাঘর থেকে ছুট্টে এলো।মেঘা চিন্তিত সুরে বলে উঠলো _ কিছু লাগবে মেহমিদ ভাই।
মেহমিদ ঝাড়ি মেরে বলে উঠলো _ চুপ একদম চুপ, বারন করেছি না তোমায়, রান্নাঘরে আসতে। কেন এসেছো।
মেহমিদ এর ঝাড়ি খেয়ে মেঘা চুপসে গেল। তখনি শায়লা বেগম, মোশারফ হোসেন, রাহিমা বেগম সকলে উঠানে এসে উপস্থিত।

শায়লা বেগম বলে উঠলেন _ কি হয়েছে মেহমিদ, এভাবে চিৎকার শুরু করেছিস কেন?
মেহমিদ রেগে বলে উঠলো _ মেঘা রান্নাঘরে কেন, আজকে ওর উপর দিয়ে কি গেছে সেটা তোমরা জানো না। বাসায় কি কাজের লোকের অভাব, রান্না করার জন্য আর কোনো লোক নেই।
মাহিদ বলে উঠলো _ ঠিকিই তো, মেঘা তুমি রান্নাঘরে কি করছো। সামনে না তোমার ইয়ার চেঞ্জ। তখনি মাহিদ খেয়াল করলো, বারান্দা রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাটি আর আয়েশা। মাহিদ চোখে ইশারা করে ভেতরে চলে যেতে। আয়েশা আর মাটি মাফিদের ইশারায় রুমে চলে যায়।

শায়লা বেগম রাহিমা বেগমের উদ্দেশ্য বলে উঠলো _ রাহিমা আমি তোমাকে বলেছিলাম না, যে রান্না বান্নার আমি করবো তখন বললে পাশের বাসার সাথী কে নিয়ে তুমি সবটা সামলে নিবে। এখন এসব কি?
রাহিমা বেগম বিনা সংকোচে বলে উঠলো _ কি আবার, সাথীর ছেলে অসুস্থ, আমার কোমড়ে আজ ভিশন ব্যাথা ছিল বিকেল থেকে। তাই মেঘা কে বলেছি আজকে রান্না টা ও করে নিতে। এতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল শুনি।

শায়লা বেগম _ তা তুই আমাকে বলতে পারতি। ‌ আমি সবটা দেখে নিতাম।
রাহিমা বেগম _ বুঝলাম না, সামান্য রান্না ইতো। আর মেহমিদ তোমার এতো মেঘার জন্য দরদ কিসের শুনি, মেঘার সাথে তোমার কিসের এতো ঘনিষ্ঠতা সত্যি করে বলতো। তুমি একটা জুয়ান পোলা, সে একটা যুবতী মেয়ে, আর তোমরা যা শুরু করেছো গ্ৰামের লোকেরা তাতে মন্দ বলতে শুরু করেছে।

রাহিমা বেগমের কথায় সবাই থমথমে হয়ে গেল। মেঘার মাথায় জেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, মেহমিদ রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।, রাহিমা বেগম কি মিন করে কি ইঙ্গিত করতে চাইছে তা বুঝতে কারো বাকি নেই।
শায়লা বেগম থমথমে কন্ঠে বলে উঠলো _ মেহমিদের বাপ, তোমার না অফিসে জরুরি কোন মিটিং আছে,আমরা কালকেই ঢাকায় ব্যাক করবো।‌ মেহমিদ,মাহিদ তোমরা লাগেজ গুছিয়ে রেখো।
মেহমিদ পেছন থেকে বলে উঠলো _ আমাদের সাথে মাটি আর মেঘা কে সাথে নিয়ে যাবো। আমি আর কিছু শুনতে চাই না ব্যাস।

রাহিমা বেগম _ এ্যাহ বললেই হলো, এতো দিন খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছি আমি। এখান থেকে এক পা ও যেতে দিব না আমি।
শায়লা বেগম _ মেহমিদ অবুঝ এর মতো কথা বলো না, মাটির সামনে পরিক্ষা, ওর রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে, ওদের পরিক্ষা শেষ হোক, তারপর এখন কিছু বলার দরকার নেই। এই বলে শায়লা বেগম চলে গেলেন।
মেঘা কান্না করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেল। মেহমিদ রান্নাঘর থেকে মেঘা কে হেঁচকা টান দিয়ে বের করে আনলো। তারপর মেহমিদ বলে উঠলো, রান্নাঘরে যাওয়া নিয়ে দেখলে না কত কি হলো, এরপর ও কেন রান্নাঘরে গেলে।

মেঘা রেগে গিয়ে বলে উঠলো _ হাত ছাড়ুন, আমার মেহমিদ ভাই। কেন এমন করলেন, আমি আমার মতো ঠিক আছি, কেন দয়া দেখাতে আসেন, দেখলেন তো আমার নামে আপনার নামে কতসব অপবাদ উঠলো। এবার দয়া করে আপনি আমার সামনে আসবেন না। আমি কোথাও যাবো না। সাথে সাথে রাহিমা বেগম বললেন _ মেঘা কোথাও যাবে না, ওইসব ঢাকা গিয়ে মেয়ে মানুষ কত কি করে। আর ঢাকা গেলে এক‌ই ছাদের তলায়, দুটো বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে মানুষ নিয়ে গেলে লোকে কত কি বলবে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ

মেঘা আর সহ্য না করতে পেরে, ঘরের দিকে দিল দৌড়। পেছন থেকে মেহমিদ এর কন্ঠ ভেসে আসছে, মেহমিদ বলছে, দরকার হলে বিয়ে করে মেঘা কে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাবো। দেখি কে ঠেকায়।
সিরি বেয়ে উপরে উঠতেই মেহমিদ এর এমন কথা মেঘার কানে ভেসে আসতেই থেমে গেল। মেঘা চমকে মেহমিদ এর দিকে তাকালো, দেখতে পেলো মেহমিদ শান্ত দৃষ্টিতে উপরে মেঘার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘা সেই চোখে কি দেখলো কে জানে, শরীরে এক অজানা কাঁপন ধরে গেল। এক মূহুর্ত দেড়ি না করে মেঘা নিজের ঘরে চলে গেল।

এদিকে মাটির ভিশন মন খারাপ, মাহিদ যে অঙ্ক করতে দিয়েছিল, মাটি সঠিক ভাবে সবগুলো কমপ্লিট করে ফেলেছে। মাহিদ খাতা দেখে বলে উঠলো _ ভেরি গুড, আজকে এতো শাস্ত লাগছে ম্যাডাম কে, কি ব্যাপার বড় হয়ে গেছেন নাকি। বলেই আড়চোখে তাকালো মাটির দিকে।
এদিকে আয়েশা ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে ঝুলছে, মাহিদ ভাই আমি আসি বলে আয়েশা চলে গেল।
মাটি কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো _ আপনাকে ও আজ শাস্ত লাগছে, আপনি ও কি বড় হয়ে গেছেন মাহিদ ভাই।
মাহিদ কিঞ্চিত ভ্রু কুচকালো, তারপর বলে উঠলো _ এতো কঠিন কথা বুঝি না, তোমার চোখে আমি ছোট ছিলাম কবে।

মাটি _ সহজ করে বলছি, আপনারা কালকে চলে যাবেন না মাহিদ ভাই।
মাহিদ _ চলে গেলেই ভালো, তোমায় কেউ জ্বালাবে না, পড়ার চাপ দিবে না। সবাই ভালো থাকবে। আর টেনশন নিয়ো না, তোমার জন্য একটা টিচার রেখে দিয়ে যাবো। তো আর মেট্রিক এ ফেইল করবে না।
মাটি এবার রেগে বলে উঠলো _ না না না, আমি আপনার কাছেই পড়বো। আমি যে আপনার শাসনেই অভ্যস্ত, কি করে সেই বাজে অভ্যাস চেঞ্জ করি। আমি কিছু না আমি আপনার সাথেই থাকবো, মাটি বাচ্চামোর মতো আচরণ করতে করতে নিজেই জানে না সে কি বলে ফেলেছে।

মাহিদ চোখ দুটো বড় বড় করে বলে উঠলো _ কি বললা।
মাটি শুকনো একটা ঢুক গিলে বললো _ আমারে ছাইড়া যাইয়েন না মাহিদ ভাই।
মাহিদ চোখ বন্ধ করে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো _ ঘরে যাও মাটি। তোমার পড়া শেষ। এখন ঘুমাতে যাও।
মাটি মন খারাপ করে, এক বুক দুঃখ নিয়ে, ব‌ই ফেলে দৌড়ে চলে গেল।

মায়াবতী পর্ব ৬

মাহিদ মাটির যাওয়ার পানে তাকিয়ে র‌ইলো। রাতে কেউ না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
শুধু ঘুম নেই মেহমিদ এর চোখে, সে কেন এমনটা বললো জানে না, রাগের বশে কি বলে ফেলেছে মেহমিদ এর হুশ ছিল না। মেহমিদ এতো কিছু জানে, শুধু জানে যেভাবেই হোক এখান থেকে মেঘা কে যে করেই হোক নিয়ে যাবে, আপসে নয়তো ছিনিয়ে।

মায়াবতী পর্ব ৮