মি মাফিয়া পর্ব ১৫

মি মাফিয়া পর্ব ১৫
সুমাইয়া সাবিহা

আরিয়া জাফর সাহেবের কাছে মিনতি করে কখন থেকে একটা বার বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাচ্ছে।তিনি বারবার বলছেন লাগবেনা একা গিয়ে ওখানে কি করবে।তাছাড়া আফরান যদি বাড়িতে থাকে তোকে মারধর করবে আমি নিশ্চিত
আরিয়া:প্লীজ চাচা এমন করো না এতো মানুষের সাথে থাকতে আমার কেমন যানি লাগছে ,মন টা ভালো লাগছেনা,সকাল সকাল আবার চলে আসবো।
জাফর সাহেব ও নিজের কথায় দৃঢ়

__নিষেধ করেছি যাওয়া লাগবেনা মানে লাগবেনা।
আরিয়া অভীমানী কন্ঠে বললো :
__ঠিক আছে তোমার সাথে কাট্টি যাও।
জাফর এই মিনতি কিভাবে ফেলতে পারেন? তাইতো বাধ্য হয়ে বললো
__আরে আচ্ছা মুশকিলে ফেলছিস তো । ঠিক আছে যা ।আমি আয়শ কে বলে দিচ্ছি নিয়ে যাবে।
আরিয়া :আয়শ ভাইয়ার সাথে যাবো না ।আমাকে ড্রাইভার কাকুর সাথে পাঠিয়ে দাও তাতেই চলবে।
জাফর:ঠিক আছে ।
আরিয়া খুশিতে জাফর কে একবার জড়িয়ে ধরে।
জাফর: শুন খালি বাড়ি ভয় পেলে আমাকে জানাস ঠিক আছে?
আরিয়া:ওকে।
জাফর:যদি ঐ বজ্জাত টা থাকে তবে ওর সামনে যাসনা ঠিক আছে?
বজ্জাত বলে কাকে বুজিয়েছে ভালো করেই বুজতে পারছে ,কিন্তু তার #মি_মাফিয়া মোটেও বজ্জাত নয় সেটা কেউ না জানলেও সে জানে ভালো করেই।
আচ্ছা চাচা গেলাম আমি । বলে আরিয়া জায়গা ছাড়লো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাত প্রায় ১১টার উপরে বাজবে হয়তো।আরিয়া বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই আফরানের রুমে গিয়ে দরজা হালকা ঠেলে উকি মারে।নাহ তার #মি_মাফিয়া এখনো আসেনি । মূলতো এটা দেখার জন্যই বাড়িতে আসা। সাথে সাথে মন টা খারাপ হয়ে গেলো আফরান কে না পেয়ে।
নিজের রুমে যাওয়ার পথে ছাদ থেকে কিছুর আওয়াজ শুনতে পেলো।আরিয়া ভয়ে ঢুক গিললো। এই বুঝি ভুত এসে তাকে নিয়ে যাবে ।আবারো কিছু ভাঙার আওয়াজ পেলো।আচ্ছা ছাদে কি কেউ আছে?
এতো আওয়াজ কিসের হচ্ছে?চুর ঢুকেনি তো আবার? আরিয়া পা টিপে টিপে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো,ছাদের দরজার কাছে গিয়ে উকি দিলো ,,কাউকে দেখতে পেলোনা।দরজা খুলে ছাদে ঢুকে বা সাইডে গিয়ে চোখ আটকালো,ছাদের উপর যেই কাঁচের টেবিল টা ছিলো সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো কাচ গুলো চারদিকে ছিটিয়ে আছে ,কাচের উপরে টিপ টিপ রক্ত । চায়ের কাপ গুলো ভেঙে গুরা গুরা হয়ে আছে। আরিয়া ঠিক বুজলো না এখানে হয়েছে টা কি ? তাই বুঝার চেষ্টা করে আরিয়া আরেকটু সামনে গেলো। ছাদের কর্নারে চোখ গেলো,আফরান আকাশে তাকিয়ে আছে হাতে সিগারেট জালানো ,কয়েক হাত পেছনে তানভীর মাথা নতজানু হয়ে অপরাধীর মতো তাকিয়ে আছে।

আফরান কে দেখে আরিয়ার চোখ দুটি খুশিতে ছলছল করছে। আর এক সেকেন্ড ও না দাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে আফরান কে পেছনের দিক থেকেই জড়িয়ে ধরলো ,,আফরান স্ট্রং হয়েই দাড়িয়ে রইলো ,মনে হয় সে আগে থেকেই জানতো এমন টাই হবে তাইতো বিন্দুমাত্র নড়েওনি । আরিয়া কে দেখে তানভীর ছাদ ছাড়ে ।প্রায় মিনিট কয়েক পর আরিয়া বলতে শুরু করে,,আমাকে না বলে কেনো চলে গিয়েছিলেন হ্যা? কতোদিন হলো গুনে দেখেছেন? একটু কল পর্যন্ত দেননি।কতোটা নিষ্ঠুর আপনি।
আফরানের মুখে কোনো কথা নেই।
আরিয়া : কি হলো কিছু বলছেন না কেনো? আর আপনি সিগারেট খান আগে তো কখনো দেখিনি।
আফরান আকস্মীক আরিয়ার ডান হাত ধরে আরিয়াকে উল্টো ঘুরিয়ে নেয় ।আরিয়ার পিঠ আফরানের বক্ষ স্পশ্ব করেছে আরিয়ার হাত আফরানের পেট স্পর্শ করেছে। শক্ত হাতে আরিয়ার হাতটা চেপে ধরেছে ।
আরিয়া: আহ করছেন কি ব্যাথা পাচ্ছি তো ছাড়ুন বলছি ।
আফরান কোনো কথা বলছে না।

__এতো জোড়ে ধরেছেন কেনো আজ ? আগে তো কখনো এতোটা জোড়ে ধরেননি আমার হাত মচকে যাবে তো ।
আফরানের মুখে কোনো কথা নেই সিগারেট টেনেই যাচ্ছে বাম হাতে।
___আরে এগুলোর ধোয়া আমি সহ্য করতে পারিনা ।আপনি এটা ফেলে দিন বিশ্রি গন্ধ ছিহ । আহ ছাড়ুন বলছি।কি করেছি আমি আগে বলবেন তো নাকি।
আফরান এবার মুখ খুললো ভয়ার্ত গলায়
__কি পেয়েছিস আমাকে?যেভাবে ইচ্ছা খেলবি? যা ইচ্ছা করে বেরাবি।যার তার সাথে রুম শেয়ার করবি ,
__কিসব বলছেন আপনি?
__ন্যাকামু করবিনা একদম ।সুযোগ পেয়েছিস ওমনি উরা শুরু করেছিস ? লজ্জা করেনা তোর। এতোই বেডা মানুষের সান্যিধ্য দরকার তোর? দুই দিনের জন্য বাহিরে ছিলাম ওমনি একা রুমে মানুষ নিয়ে ঢুকে পরিস ।
বলে হাতের জলন্ত সিগারেট টা আরিয়ার বা দিকের ঘারে ধরল।

___আহ জলছে খুব প্লীজ এটা সরান মরে যাবো তো । আপনি সত্যি খুব পাষন্ড ।একদম বাজে আপনি।আপনার সাথে আর কথাই বলবো না। বলে কাদতে লাগলো আর ছুটার চেষ্টা চালালো ।
আফরান হাতের সিগারেট নিভার আগ পর্যন্ত ধরে রাখলো এভাবে।
এই খানটায় ঠিক এই খান টায় মাথা রেখেছিল তাইনা।
___কি বলছেন ? আমি সত্যি কিছু বুজতে পারছি না ভাইয়া ছেড়ে দিন এবার প্লীজ।
____কেনো থাকতে মন চায় না? আমিও তো পুরুষ মানুষ ।তোর তো খুব পছন্দ পুরুষ মানুষের ছোয়া তাইনা
___আমাকে যা বলার বলুন আমার চরিত্র নিয়ে একদম বাজে কথা সহ্য করবো না বলে দিলাম।
__তোর আবার চরিত্র আছে নাকি? ওহ আ’ম স্ট্রেন্জ।
তোর মতো মেয়েদের চরিত্র ও থাকে? একটা দিয়ে হয়না হাজার টা লাগে ।
আরিয়া চোখের জল ফেলছে আপনি খুব খারাপ আমি আর আপনার সাথে কথাই বলবো না দেখবেন।আমার হাত টা ছাড়ুন বলছি আমি আর পারছিনা নিতে মরে যাবো।
আফরান কোনো কথা না বলে আরিয়ার শরীর থেকে উরনা টা ছুড়ে ফেলে জামার বাহুর অংশ টুকু দু দিক থেকে ছিরে ফেলে।

___পাগল হয়ে গেছেন ভাইয়া । আপনি সত্যি পাগল এমন করছেন কেনো বলুন না । আমি বলছি তো আমি কিছু করিনি।সত্যি বলছি ছেড়ে দেন প্লীজ ।আপনার সামনেও আর আসবো না। আমি আপনার রাগের কারন হতে চাইনা।
আরিয়ার কথা গুলো যেনো আফরানের বিষাক্ত কিছু মনে হলো।
আরিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে দু গালে কষে একের পর এক চর বসালো।
আরিয়া ঠোট কেটে রক্ত জমলো ।কিন্তু আফরানের এসবে কোনো মাথা ব্যাথা নেই এবার সে আরিয়ার দু হাতের বাহু ধরে নিজের কাছাকাছি এনে সব টা শক্তি দিয়ে বাহুতে খামচি বসালো। কেটে গিয়ে রক্ত পরছে এসবের কোনো পরোয়া করলো না নিজের কাজেই দৃঢ়তা রাখলো।
আরিয়া এসব শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে নিচে লুটিয়ে পরে।

সকাল বেলা আরিয়া নিজেকে নিজের রুমে আবিস্কার করলো । পাশে চেয়ারে একজন মেয়ে বসে আছে।আরিয়া উঠে বসে ।
মেয়েটা হালকা শব্দে চোখ মেলে বলে,
__সরি ম্যাম আসলে চোখ লেগে গিয়েছিল । এখন কেমন আছেন?শরীর ভালো লাগছে?
__আপনি কে?
___আমি একজন নার্চ । রাত্রে স্যার আমাকে ডেকে বলেছিলেন আপনার খেয়াল রাখতে।
আরিয়ার শরীর ব্যাথা আর দুর্বলতায় ভিষন খারাপ লাগছে তাই আবার শুয়ে যায়।
__ম্যাম কিছু নিয়ে আসি?
___হুম
মেয়েটি গিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে এসে বললো
___এগুলো খেয়ে নিন ।
আরিয়া কথা বললো না
___বুজেছি হাত ব্যাথা তাইতো?আমি খাইয়ে দেই বলে মেয়েটা আরিয়া কে খাইয়ে দিতে লাগলো।
খাবার শেষে আরিয়া কে কিছু ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বললো

___ম্যাম যদি ঘুমাতে ইচ্ছা হয় ঘুমোবেন
_____আমার এক জায়গায় যেতে হবে ।
__ম্যাম আপনার নিষেধ আছে কোথাও যাওয়ার।
__কেন?
__স্যার বলেছেন তাই
___সরি আমাকে যেতে হবে
____স্যার কে আগে বলুন।
___কউকে বলা লাগবেনা।
বলে সাইড থেকে ফোন টা নিলো। এখনো অবদি ৫০ টার উপরে কল।
জাফর প্রেমা সামিরা সহ আয়শের ও মিলিয়ে।
আরিয়া কলের সংখ্যা দেখে দ্রুত উঠে বসে ।
আরিয়া রেডি হওয়ার জন্য নামতে যায় কিন্তু মাথা টা ঘুরে আবার বসে যায়।

___ম্যাম আপনি অনেক দুর্বল আছেন এখনো শুয়ে থাকুন।
_____আমার ড্রেস চ্যান্জ করেছেন আপনি?
____জি ম্যাম
___আমাকে নতুন এক সেট জামা বের করে দিন কবার্ড থেকে ।
মেয়েটি আরিয়ার কথা মতো এক সেট জামা এনে দেয়।
____আমি চেন্জ করবো আপনি বাহিরে যান একটু ।
___ম্যাম আসলে স্যার এই রুমে ক্যামেরা লাগিয়ে গেছেন।
আপনি ওয়াশরুমে যান আমি হেল্প করছি।
আরিয়া নার্সের কথায় কপাল কুচকায়।
___কোথায় লাগানো?
___সেটা জানিনা ম্যাম
আরিয়া কথা না বাড়িয়ে আবার উঠে ওয়াশরুমে যায়।
আরিয়া নার্সের সাথে জোড়াজুড়ি করে গেট অবদি গিয়ে ভয়ে দুকদম পিছিয়ে যায়। সামনে আফরান পকেটে দুহাত গুজে সামনে এগুচ্ছে।
তবুও নিজেকে একটু সাহসী বানিয়ে বলতে লাগলো

__দেখুন #মি_আফরান আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই,
আমি ভুলে গিয়েছিলাম আপনি একজন মাফিয়া । আমায় ক্ষমা করুন আমি আপনার সাথে আর থাকতে চাইনা।আপনার ইচ্ছে হলে অন্য কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে যেতে পারেন। বলে পাশ কাটাতে চায়।
আফরান সাথে সাথে এক হাত পকেট থেকে বের করে আরিয়ার হাত ধরে নিয়ে সামনে এনে কপাল কুচকায়।
আরিয়া ভয়ে ঢুক গিলে কদম কদম পিছিয়ে যায় ।আফরান আরিয়ার কদম মিলিয়ে সামনে এগোয়। আরিয়া যেতে যেতে বেখেয়ালে প্রথম সিড়িতে পা হোঁচট খেয়ে ঠাস পরে যায়।
আফরান এখনো ঐ ভয়ানক আতংকিত দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
আরিয়া ভয়ে জড়সড় হয়ে যায় একটু আগের সাহসী মেয়েদের কাতারে দাঁড় করিয়ে মনে হয় ভুল করে ফেলেছে ।
আফরান একটু ঝুকে আরিয়ার চোখে চোখ রাখে ।

____আ..আমি কিছু বলিনি তো।আমি তো আপনার কথা শুনি ।সব কথা শুনবো। কিন্তু চাচা বারবার ফোন দিচ্ছে আমাকে এখন যেতে হবে । বলে আরিয়া উঠে দাড়ায়।
আফরান নার্স কে দু আঙুলে ইশারা করে চলে যেতে।
আফরান কর্কশ গলায় বললো :
___আবারো মার খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি বল । আমার হাত কিন্তু একদম স্ট্রং ।বলে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে লাগলো ,
___প্লীজ আজকে মারবেন না যেতে দিন আমায় । আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা।
আফরানের শান্ত মস্তিস্ক টাকে মনে হলো আরিয়া বিগরে দিচ্ছে ।
___ আমাকে রাগাস না বলে দিলাম নাহলে কি হবে তোর জানা আছে নিশ্চয়ই।
____তার জন্যই তো বললাম আমি আপনার সাথে থাকলেই শুধু মাথা গরম হবে । রাগ হবে তার চেয়ে না থাকাই ভালো।

মি মাফিয়া পর্ব ১৪

আফরান এই মুহুর্তে রাগতে চাচ্ছেনা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।
আরিয়া তার মধ্যেই উধাও।
আফরান চোখ খুলে আরিয়া কে দেখতে না পেয়ে কপালের রগ গুলো মুহুর্তেই ভেসে উঠলো । তারপর……

মি মাফিয়া পর্ব ১৬