মি মাফিয়া পর্ব ১৮
সুমাইয়া সাবিহা
আয়শ ছাদের উপর দাড়িয়ে নিজের সাথে নিজে কথা বলে বলছে ,,হুম আজ সে নিজে উপর বড্ড অভিযোগ করছে উপর ওয়ালার কাছে ,কেন ভাগ্য এমন ? আমরা যেটা ভাবি ঠিক সেটার উল্টো কেনো হয়? কেন আমি চেয়েছিলাম তাকে? আমার চাওয়া টাই ভূল নাকি আমার ভালোবাসা টা? নাকি আমি তাকে ভালোবাসিনি ঠিক মতো? আমার ভালোবাসা টা কি কম ছিলো? তার চোখে কেনো পরেনি? নাকি আমি নিজেই দেখাতে ব্যার্থ হয়েছি?
ভাবনায় বেঘাত ঘটিয়ে পেছন থেকে হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠে , স্যার আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।
আয়শ পেছনে ফেরে তাকায় সমবয়সী একজন ছেলে ।
__জী বলুন?আর আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না
____আমাকে না চিনলেও চলবে আগে বলুন এদের কে চিনেন তো? বলে হাতের ফোন থেকে কিছু ছবি দেখালো ।
আয়শ স্বাভাবিক শরীর সঙ্গে সঙ্গে বিগড়ে যায়,মাথার রক্ত গরম হয় । মুহুর্তেই ছেলেটার কলার ধরে বলে,হাউ ডেয়ার ইউ ,,এগুলো কি ? এগুলো আপনার ফোনে কিভাবে আসলো ? ননসেন্স ।
ছেলেটা ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে : কুল! কুল! ,ঠান্ডা হন সাহেব ,,মাত্র তো দেখালাম ,কিছুই তো বলিনি এখনো।
আয়শ : হু আর ইউ । কে আপনি ? এভাবে কথা বলছেন কেনো ? ছবি গুলো কে তুলেছে?
ছেলেটা আয়শের হাত কলার থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে ,
এতো উত্তর দিতে পারুম না ,আগে শুনেন আপনার কাছে দুইডা অপশন আছে,
এক /আপনি নিজে গিয়ে বিয়ে করতে চাইবেন
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দুই/নয়তো ছবি গুলো সবাইকে দেখিয়ে বাধ্য করবো বিয়ে করতে।
এখন যেইডা আমনের মন চাইবো হেইডা বাইছা নিতে পারেন
আয়শ হাতের তর্জনী আঙুলটা লোকটার চোখের সামনে ধরে বললো,হাউ ডেয়ার ইউ,,এতো সাহস হয় কিভাবে আপনার? ভদ্র ভাবে কথা বলুন ,আমার বোন হয়।
ছেলেটা আয়শের আঙুল নিচে নামিয়ে দিয়ে বললো ,
__সাহসের কথা কইবেন না একদম ,আমি গেলাম আপনার দুইটা অপশন থেকে একটা বেছে নিতে হবে ।আমি মনে করি প্রথম টাই বেচে নিবেন ।দ্বিতিয় টা সম্মানে লাগবে , আপনার পাতা বোনের দিকে সমাজ আঙুল তুলবে।
বলে লোকটা হেলতে দুলতে গান গাইতে গাইতে ছাদ থেকে চলে গেলো।
আয়শের মাথার উপর দিয়ে সব টা গেলো। সেদিন তো বাহিরে কেউ ছিলো না কখন নাকি আমিই দেখিনি । কি করবো আমি ?এটা কিভাবে সম্ভব ? ওর তো আজ বিয়ে ,,
মাথায় কাজ করছেনা কিছু ।
একটু পর আন নাউন নাম্বার থেকে মেসেজ এলো ,আয়শ চেক করে ,,ঐ ছবি গুলো তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
আয়শের মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছে কি হচ্ছে এসব । কারা এরা ? পিছে এভাবে কেনো লেগেছে ?এসব করে ওদের লাভ কি ?
সামিরা কে পার্লারের মহিলারা সাজিয়ে দিচ্ছে ।প্রেমাকেও একটু হালকা মেকাপ করাচ্ছে কিন্তু আরিয়া বললো নিজ হাতে সাজবে ,এতো ঘন ম্যাকাপ ওর পছন্দ না।
সামিরাকে ভারী লালের মাঝে সাদা পাথরের সাথে হালকা সোনালী জরি লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে।বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে,আজ বোধহয় সামিরা কে অন্যান্য দিনের থেকে একটু বেশি মোহনীয় লাগছে
প্রেমাও সাদা রঙের ভারী গাউন পড়েছে ,লেহেঙ্গা ধরে ধরে ঢং করে হাটা একদম বিরক্তির উপরে বিরক্তি তার কাছে ,তাই তো লেহেঙ্গা ছেড়ে গাউন পরেছে এতে কিছুর ঝামেলা নেই।
আরিয়া কালকের মতো আর পরিস্থিতি চায়না তাই আজ একদম সাধারন জামা পরেছে এশ্ক কালারের , অবশ্য এটাতেও এই মেয়েকে গর্জিয়াসই লাগছে ,চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে এক সাইড থেকে সামনে এনে রেখেছে নয়তো ঘারের দাগ গুলো দৃশ্যমান হয়ে যাবে।
বরযাত্রী কখন এসে বসে আছে ।তাই সামিরা কে নিচে স্টেজে নেওয়া হয়েছে ।বিশাল আয়োজন বাড়ি ভর্তি মানুষ ।স্টেজের চারদিকে তাজা গোলাপ বেলী রজনীগন্ধ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে । প্রেমা আরিয়া আপাতত সেদিকে না গিয়ে একটু দুরে বসে রইলো কারন এখন নিউ কাপল দেখতে অনেক মানুষ জড় হবে আরো কতো রশকশ কথা বলবে যেগুলো প্রেমা আরিয়া কারই পছন্দ না।
প্রেমা:খারাপ লাগছে জানিস , কিছুক্ষণ পরেই তো সামিরা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।
আরিয়া:আবার তো কলেজে আসবেই মন খারাপের কিছু দেখছিনা।
প্রেমা:তবুও তো।বিয়ের পরের বেষ্ট ফ্রেন্ড আর বিয়ের আগের মাঝে পার্থক্য আছে।
আরিয়া:তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।
আরিয়ার পাশে দুরুত্ব বজায় রেখে নাবিল এসে বসে বললো ,দিন টা আসতে মনে হয় আর বেশিদিন নেই।
প্রেমা:কিসের দিন আসবে? আর আপনি আমাদের কথার মাঝখানে কথা বলছেন কেনো?
আরিয়া:আরে ঝগড়া করছিস কেনো এভাবে?
নাবিল: কিছু কিছু মেয়ের কাজই উঠে পরে ঝগড়া করা সবাই কি আর তোমার মতো নাকি
আরিয়া হেসে বললো
__,আচ্ছা মজা বাদ দিন ,বোনের বিয়েতে কেমন ফিল হচ্ছে?
নাবিল:বোনের বিয়ের কথা ভাবলেই নিজের বিয়ের শখ জাগে গো তাই কোনো ফিল নিতে পারছি না।
নাবিলের ঠাট্টা করা উত্তর শুনে আরিয়া স্মীত হাসলো ,
প্রেমা বলে উঠলো:
__কেমন নির্লজ্জ হলে নিজের বিয়ের কথা বে বে করে বলে যাচ্ছে ।গা জলে যায় আমার ,ছিহ
নাবিল:কেনো তোমারো বিয়ের শখ জাগে বুঝি?
প্রেমা: দেখেছিস আরু কিসব বলছে ,বাজে লোক একটা চল তো এখান থেকে।
কাজী সাহেব কিছু আরবী বাক্য উচ্চারন করছেন। সামিরা মুখ ঢেকে আছে লম্বা ঘোমটা দেওয়া মাথায়।পাশেই সামিরার হবু হাসবেন্ড আবির বসা।
কাজি তার পাঠ শেষ করে সামিরা কে উদ্দেশ্য করে বললো ,বলো মা কবুল।
সঙ্গে সঙ্গে নাবিল দাড়িয়ে কোনো কিছু নিয়ে মুখটা কালো করে দাড়িয়ে আছে।হয়তো বোনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এই কারনে ।
হঠাৎ করেই কেউ একজন সামনে এসে বললো ,এই বিয়ে হবে না।
কন্ঠ শুনে সামিরার চিনতে অসুবিধে হয়নি লোকটা আয়শ ছাড়া কেউ নয়।
বিশাল জনতার সম্মুখে আয়শের কথায় সবাই আশ্চর্য হয়ে আয়শের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে ।
আজমল সাহেব:আয়শ বাবা তুমি কি বলতে চাচ্ছো ঠিক বুজলাম না ।বুঝিয়ে বলো।
আয়শ: বাবা আমি আপনাকে ছোট বেলা থেকেই বাবার আসনে বসিয়ে এসেছি তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।এই বিয়ে হবে না বাবা ,
আজমল:কেনো কি হয়েছে ? ছেলে পছন্দ হয়নি ? এমন কোনো কিছু দেখেছো?
আয়শ: না বাবা!আসলে আমি সামিরাকে ভালোবাসি ।
আজমল সাহেব যেনো আকাশ থেকে পড়লেন ,,বিস্ময় নিয়ে বললেন কি বলছো আয়শ । এতো বছরেও তোমার আর সামিরার মধ্যে কোনো ঘনিষ্ঠ কিছু চোখে পড়েনি তো।
আয়শ :এতো কিছু জানিনা আমি সামিরা কে ভালোবাসি বাবা ।
সামিরার এমন একটা সময়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা ,,এগুলো কি সত্যি সে শুনছে নাকি কল্পনা সব ।
আবির বসা থেকে দাড়িয়ে বলে উঠলো ,এসব হচ্ছেটা কি এখানে! ? এটা কি মজা করার জায়গা?
আয়শ : আমি মোটেও মজা করছি না ।আমরা দুজন দুজন কে ভালোবাসি বিয়ে করবো বেস। আজমল সাহেব একটু ধাক্কা খেলেন তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো ,আয়শ যা বলছে এগুলো সত্যি?
আবির: আংকেল সত্য মিথ্যা কি এখন যাচাই করার সময় ? আমার সাথে সামিরার বিয়ে আজ আমি অনেক প্রতিক্ষার পর আজকের দিনটা পেয়েছি।
আজমল: তুমি চুপ থাকো আমি আমার মেয়েকে প্রশ্ন করেছি। উত্তর দাও সামিরা।
বাবার ধমকে ভয় পেয়ে সামিরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
আজমল:তাহলে আগে বলোনি কেনো? আমি কি দ্বিমত করতাম ?
আয়শ:বাবা পরিস্থিতি এমন ছিলো না ।
আজমল আয়শ কে থামিয়ে দিয়ে বললো ,ব্যাস হয়েছে আর কিছু শুনতে চাইনা । আবির কে উদ্দেশ্য করে বললো ,আমায় ক্ষমা করো বাবা আসলে আমার মেয়ের সুখের চেয়ে অন্য কিছু বড় নয় ।
আবির সামিরার বাহু ধরে বলতে লাগলো
মি মাফিয়া পর্ব ১৭
___,তাহলে এতোদিন আমায় অপেক্ষায় রাখলে কেনো উত্তর দাও ? আগে বললেই তো পারতে আমি অপেক্ষা করতাম না।
আয়শ: মি,আবির ওর হাত টা ছাড়ুন ওর আপনি ওয়ান সাইড ছিলেন ও তো কখনো আপনাকে বলেনি ভালোবাসে।
আবির তেতে উঠে বললো
___আপনাকে ঠিক আমি দেখে নেবো মি,আয়শ চৌধুরী । কথাটা বলে দ্রুত পায়ে ফুঁসতে ফুঁসতে তরিত করে স্টেজ ছাড়লো।