মি মাফিয়া পর্ব ১৯
সুমাইয়া সাবিহা
সব কিছুর মধ্য দিয়ে বিয়েটা কোনো রকম শেষ শেষ হয়।যদিও এতে সামিরার ফ্যামিলির কেউ কোনো রিয়েক্ট করেনি কারন আয়শ কে তারা ছোটো বেলা থেকেই দেখে আসছে সুশীল ভদ্র ।কিন্তু সব কিছুর মধ্যে জাফর সাহেব প্রশ্ন করেছিল আয়শ তো আরিয়া কে ভালোবেসে ছিল তাদের এংগেজড ও হয়েছিলো কিন্তু আয়শ বলেছে ,বিয়ে তো আর হয়নি তাছাড়া আমি তো বলেনি ইচ্ছা করে এংগেজড করাতে ,তোমরাই করিয়েছো । আয়শের উত্তর পেয়ে সবাই চুপসে যায়।
তারপর ঠিক ভাবে সামাজিক ও শরয়ী নিয়মেই বিয়ে আর রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। যদিও অনেকের অনেক রকম ইচ্ছা ছিলো আয়ের ভিয়ে টা নিয়ে কিন্তু শেষ টা এমন হবে কেউ বুজতে পারেনি।
এই মুহুর্তে সামিরা চৌধুরী বাড়িতে আয়শের রুমে ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।সব কিছুই স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার ইচ্ছা টা যে এভাবে পরিপুর্ন হবে সে নিজেও জানতো না।কিন্তু আয়শ ভাইয়া কি আদৌ সত্যি তাকে ভালোবাসে ? কই কখনো তো বুঝা যায়নি,ভাইয়ার মুখে তো সব সময় আরিয়ার নাম টাই শুনে এসেছে তাহলে এমন কি হলো যে হঠাৎ বিয়ের আসরে গিয়ে বললো আমায় বিয়ে করবে আমায় ভালোবাসে ? বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন মাথায় দলা পাকিয়ে ঘুরছে সামিরার মাথায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিয়ে টা যেহেতু এমন ভাবে হয়েছে জাফর সাহেব ছোট বড় সবাইকে বলে দিয়েছেন যেনো কেউ কোনো উল্টা পাল্টা না করে মজা দুষ্টমি আজ না করতে।
আর তেমন কেউ নেই। প্রেমা আরিয়া আর সামিরার সাথে নাবিল এসেছে আর পাশের বাড়ি ঘর থেকে কয়েকজন ছোট ছেলে মেয়ে এসেছে বউ দেখতে। এমন ভাবে চৌধুরী বাড়িতে বিয়ে হবে হয়তো কেউ ভাবেনি। তাই কয়জন বয়স্ক মহিলাও এসেছে।
কিন্তু আয়শ এই মুহুর্তে বাড়িতে নেই ,কোথায় আছে সেটাও জানেনা কেউ।
ছোট রা অনেক্ষন বাসর গেট ধরে দাড়িয়ে ছিল কিন্তু জাফর সাহেব তাদের কে বললেন ,তোমরা এখানে থেকে লাভ নেই ,আজ এসব মজা করো না।বলে তিনি নিজে এদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেওয়াতে সবাই খুশি মনে নিজের মতো চলে যায়।
আসলে জাফর সাহেব জানেন বিয়েটার মধ্যে কোনো রহস্য অবশ্যই আছে তিনি আয়শ কে ভালো করেই চিনেন । সেই থেকে আরিয়া কে মন প্রান দিয়ে আগলে রাগছে হঠাৎ করে সামিরা কে ভালোবাসে বলাটা তার কাছে ঠিক ক্লিয়ার মনে হলো না ।তাই তিনি আপাতত বিয়েটা নিয়ে এতো মাতামাতি করাটা পছন্দ করছেন না।
অনেক রাত্র হয়ে যাওয়াতে পারার মহিলারা চলে গেছেন আয়শ কেও দেখার আশায় এতোক্ষন বসে ছিলো কিন্তু আয়শ না আসাতে ভেবেছে হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছে ।আয়শ খুব পরিশ্রমী সেটা সবাই দেখেছে ছোট বেলা থেকেই। আয়শের ব্যাপারে সবার যেমন অনেক ভালো ধারনা ঠিক আফরানের ব্যাপারে ততটাই উল্টো। তারা মনে করে চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলের মতো এতো খারাপ মানুষ আর দুটো হয়না । সারাদিন মারামারি খুন খারাপী নিয়ে পরে থাকে।
আয়শ এসেছে মাত্র সারা বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে আছে সবটা অন্ধকার।
হয়তো ইচ্ছে করেই দেরী করেছে।
এসে ঘরে ঢুকে কোনো দিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।
সামিরা এতোক্ষন বসেই ছিলো কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো সেটা নিজেই জানেনা,আওয়াজ পেয়ে উঠে গেলো।
এখনো বিয়ের সাজেই আছে সামিরা। আয়শ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কবার্ড থেকে টিশার্ট আর পেন্ট নিয়ে আবার ঢুকে গেলো। সামিরা কিছুটা অবাক হলো । একটি বারের জন্যেও তার দিকে আয়শ তাকালো না । আচ্ছা উনি কি আমাকে বউ হিসেবে মানবেন না? কিন্তু কেনো? আমি কি বলেছিলাম নাকি কখনো আমাকে বিয়ে করতে নিজেই তো করলেন এতো কিছু করে এখন একটি বারের জন্যেও কেনো দেখছে না ?
আয়শ টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়েছে । খালি পা ,ফর্সা পায়ের রগ গুলো যেনো একটু কালচে হয়ে হালকা ভেসে আছে বুঝা যাচ্ছে।
হঠাৎ পায়ে কারো স্পর্শ্ব পেয়ে আয়শ চমকায় ,পায়ের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে জায়গা ছেড়ে ডেসিন টেবিলের সামনে যায় ,এমন ভাব করছে যেনো কিছুই দেখছে না তার চোখে কিছুই পরছে না ।
আয়শ গায়ে সুগন্ধি লাগাচ্ছে হাতে গোল্ডের ঘরি ,ঘরিটা অবশ্য তার ২২তম জন্ম দিনে হাসিনা বেগমই তাকে উপহার দিয়েছিলেন ,এখনো সেটাই পরে থাকে । তাদের প্রতি তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আয়শ সোফার উপরে বসে পায়ের টাখনুর নিচের পেন্টের অংশ টা ফোল্ড করছে।
সামিরা এখনো দাড়িয়েই আছে আর আয়শ কে দেখছে । তিনি কি এখন কোথাও যাবেন?এভাবে রেডি হচ্ছে যে,সামিরার এই মুহুর্তে অনেক কিছু প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু তার সাহস টুকু হচ্ছেনা।
আয়শ গিয়ে সোজা খাটের উপর থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।
সামিরা কপাল কুচকায়। করছে টা কি আজব তো ,ভাইয়া কে কখনো এমন ভাব করতে দেখেনি সে তাহলে আজ কেনো এমন করছে? আচ্ছা মানুষ কি এমন সেজে গুজেও ঘুমায় ? কই কখনো তো খেয়াল করেনি ।
সামিরা এখনো দাড়িয়েই বুঝার চেষ্টা করছে ,
আয়শ নিরট কন্ঠে বললো ,,ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পর।
সামিরা এবার প্রশ্ন করার মতো আশা পেলো,বললো, আমাকে এমন ভাবে বিয়ে করে আবার এমন করছেন কেনো? আমি তো বলিনা কখনো আপনাকে ভালোবাসি বা আমাকে বিয়ে করুন।
আয়শ:বাধ্য হয়েছি।
সামিরা:কে বাধ্য করেছে ? আর আমাকে বিয়ে করতে আপনাকে কে বা বাধ্য করবে?
আয়শ:ওসব তোর জানতে হবেনা । রাত হয়েছে গিয়ে শুয়ে পর ।
সামিরা এবার আয়শের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো ,আমি জানতে চাই বলুন আমাকে।
আয়শ বিরক্তি মুখে নিয়ে বললো,আমাকে রাগাস না ,ভালো হবেনা তোর জন্য। চুপ আছি চুপ থাকতে দে।
সামিরা :ঠিক আছে না বললেন,কিন্তু আপনি আরু কে ভালোবাসেন তাইনা? তাহলে আমাকে বিয়ে করতে গেলেন কেনো?
আয়শ:এক কথা বারবার বলে মাথা গরম করিস না আবারো বলছি।
সামিরা এবার চুপ হয়ে গেলো।সে জানে আয়শ ভালো মানুষ কিন্তু রাগ হলে ভালো মানুষিকতা কারোই থাকেনা।
সামিরা : ঠিক আছে কিছু জিজ্ঞেস করবো না ,আপনি খাটে গিয়ে ঘুমান আমি এখানে ঘুমাতে পারবো।
আয়শ চোখ বন্ধ করে :লাগবেনা ,কথা বাড়াস না ,ফ্রেশ হয়ে আস ঘুমনোর আগে লাইট অফ করে দিস ,আর তুই লাইট অফ করে ঘুমাতে ভয় পেলে ল্যাম্ট টা জালিয়ে নিস আমি আলোতে ঘুমোতে পারিনা ,বলে চোখের উপর হাত রাখলো আয়শ।
সামিরা ও কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
সকাল বেলা সবাই বসে আছে খাবার টেবিলে আরিয়া মাত্র সিড়ি দিয়ে নামছে।সামিরা লতার সাথে মিলে নিজে হেল্প করার চেষ্টা করেছে জাফর যদিও নিষেধ করেছিলো ,কিন্তু সামিরা বলেছে,আজ শুধু দেখবে ,আর তাছাড়া ও তো কিছু পারেনা পাশে থাকবে ও রান্না বান্না শিখতে চায়।জাফর আর কিছু বলেননি।
টেবিলে বসে আছে জাফর ,আয়শ ,প্রেমা,নাবিল ,সামিরা ,
সামিরা আয়শের পাশের চেয়ার টায় আর জাফর এর পাশের টায় প্রেমা বসে আছে ,পরের টায় নাবিল। আরিয়া এসে আয়শের পাশের চেয়ার টায় বসলো।
প্রেমা হঠাৎ দাড়িয়ে বললো ,আমি আরুর পাশে বসবো ,বলে উঠে গিয়ে আরিয়ার পাশে বসলো।
প্রেমার কথায় জাফর আওয়াজহিন হাসলেন।
আরিয়া:তুই ওখানে ছিলি বলে এখানে বসেছি নয়তো আমি চাচার সাথেই বসতাম ,বলে উঠে গিয়ে প্রেমার জায়গা টায় বসলো।
প্রেমা:আজব তো আমি চাচার সাথে বসবো উঠ তুই।
আরিয়া:এহ আসছে ,উঠলি কেনো তখন এখন তুই জিরো ,বলে ভেংচি কাটলো আরিয়া । প্রেমা মুখ কুচকে আর কিছু না বলে খাওয়া ধরলো।
নাবিল: সবাই একসাথে থাকলে দুষ্টমী হয় কিন্তু একসাথে থাকা যায়না ,উফ ভাল্লাগেনা।
জাফর :কেনো? তোমার ইচ্ছা হলে এখানে থাকো সমস্যা কোথায় তোমারই তো বাড়ি ,আমার আরেকটা ছেলে তো তুমি।
নাবিল : তা অবশ্য আংকেল ঠিক বলেছেন।এখন তো আয়শ সামিরা কেউ বাড়িতে থাকবেনা আমি একা চিপায় পড়ে গেলাম আর কি তাই এখন বেশিরভাগ সময় বোধয় আপনার মাথায় চেপে যামু ।
জাফর হাসলো।আয়শ সামিরা কথা ছাড়া খাচ্ছে।
আরিয়া : তা ওদের মুখে কথা নেই কেনো?
আরিয়ার কথায় সবাই ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
আরিয়া:নতুন বউ নতুন বর দের কথা বললাম।
সামিরা আরিয়ার কথায় কাশতে লাগলো।
প্রেমা:তোর আবার যক্কায় ধরলো নাকি ?
নাবিল : আহ আমার বোন লজ্জায় মরে যাচ্ছে ছেড়ে দে।
সামিরা এবার আরো লজ্জায় আড়ষ্ঠ হলো ।
আয়শ কপাল কুচকায় নাবিল কে।
নাবিল: তা এভাবে কেনো দেখছিস? আমাকে ফাকি দিয়ে আমার বোনের সাথে কবে থেকে প্রেম করছিলিস?
আয়শের বোধয় কথাটা পছন্দ হয়নি তাই কথা না বাড়িয়ে খাবার ছেড়ে উঠতে গেলেই সামিরার শারীর কুচিতে পা লেগে পরতে যায় ।
নাবিল:একেই বলে ভালোবাসার বন্ধন ,আহ আমার জীবনে যে কবে এমন বন্ধন হবে।
আয়শ : একদম বাজে কথা বলবিনা বলছি।
জাফর: আহ করছো কি তোমরা ,আয়শ খাবার শেষ করে উঠো ।
আয়শ : আমার আর ইচ্ছে করছে না বলে উপরের দিকে পা বাড়ায় ,শেষের সিড়িতে কারো সাথে ধাক্কা খেতে গিয়েও পিছিয়ে আসে। আফরান দাড়িয়ে আছে কপাল কুচকে।
আয়শ আফরান কে দেখেও ইগনোর করার মতো পাশ কেটে চলে যেতে নেয় আবার কি ভেবে যেনো আফরানের সামনে দাড়িয়ে বলে ,, জিতে গেছিস তাইনা? এবার শান্তি পেয়েছিস?
আফরান কপাল কুচকায় ।
আয়শ: এমন ভাব করছিস যেনো কিছুই জানিস না। পুরো গেইম টা তুই খেলেছিস তাইনা ?কি ভেবেছিস বুজবো না কিছু? শুন যেটা করেছিস না একদম বাজে ধরনের গেইম ছিলো ,এটার হিসাব তোকে দিতেই হবে।
টেবিলের সবার নজর এদিকেই তাক করা। সবাই ঠিক বুজছে না এখানে কি হচ্ছে আর আফরান যে বাসায় আছে সেটাও কারো জানা নেই।এদের মধ্যে আবার কি ঝামেলা হলো কারো বুঝার বোধগম্য হলো না।
আয়শ আর কিছু না বলে উপরে চলে গেলো।
আফরান আয়শের কথা গুলো শুনেও কোনো রিয়েক্ট করলো না ,,মনে হলো যেনো এমন টা হবে সেটা সে জানতো।কিন্তু এই মুহুর্তে আফরানের দৃষ্টি আরিয়ার দিকে। আফরান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিয়া একটু জোড় করেই দায় বের করে হাসার বৃথা চেষ্টা চালালো হাসির থেকে মুখে ভয়ের ছাপ টাই বেশি । আফরান এখনো তাকিয়ে আছে। জাফর বুজতে পেরে আরিয়ার মাথা নিজের বুকে নিয়ে বললো,ভয় পাস না মা,।
আর আফরান তুমি শুনো ,যখন তখন বাড়ি আসো বা যাও তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু বাড়িতে ঝামেলা করার চেষ্টা করো না ।নয়তো বাড়িতে আসা তোমার জন্য অফ হয়ে যাবে।
আফরান জাফরের কথা শুনলো কি শুনলো না বুঝা গেলো না।
সে আরিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। আরিয়া এবার ভয়ের চুটে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিলো।
প্রেমা সামিরা ভয়ে ঢুক গিলছে।
আচ্ছা এখন কি আবার মারবে আরিয়াকে? এটা কোন ধরনের ভালোবাসা? সারাদিন শুধু আঘাত দিবে ।
নাবিল যেনো কিছু দেখছে না শুনছে না সে একধ্যানে খাবার খাচ্ছে।
জাফর :এভাবে মেয়েটাকে ভয় দেখিয়ে কি মজা পাও তুমি বলবে আমায়? সে তোমার কি করেছে? যাও এখান থেকে বেরিয়ে যাও।
আফরান হাতে কোট ঝুলিয়ে সিড়ি থেকে নামছে ।
আরিয়া আরো ভয় পেয়ে চোখে জল নিয়েই বললো,আমি কিছু করিনি তো ,সত্যি বলছি আমি।
জাফর:জানি মামনি তুমি কিছু করোনি কেদো না এইটার কাছে যাওয়ার কোনো দরকার নেই আর ভয় পাবেনা আমি আছি তো।
আরিয়া জাফরের কথা শুনলো না সে কেদেই যাচ্ছে।
আফরান কপাল কুচকে টেবিলের সামনে আরিয়ার সামনে বরাবর চেয়ার টেনে বসলো । সবাই অবাক হলো বিশেষ করে জাফর ,এতো বছরে কখনো আফরান কে এখানে আসতে দেখেনি আজ নিজে নিজেই এসে বসে আবার খাবার চাইলো ।
লতা ভয়ে কাপা গলায় বললো,স্যার আপনি কি পছন্দ করেন সেটা আমি জানি না । আফরান আরিয়ার প্লেটের দিকে একবার চোখ রেখে বললো , হালুয়া সাথে পারুটি ,আর চিকেন ।
লতা :জি স্যার এক্ষুনি দিচ্ছি বলে লতা এক দৌড়ে কিচেনে গেলো।
জাফর অবাক হলো ,কারন আফরান হালুয়া তো খায়না কখনো ,ছোট বেলায় যখন জোড় করতো ওর মা তখন তো খেতো না। আর পারুটি তো ওর জীবনের শত্রু ,এটা খেলে ওর বমি আসে ,জাফরের স্পষ্ট মনে আছে সেটা।
আরিয়া কান্না অফ করে আপাতত মুর্তির মতো বসে আছে
প্রেমা আফরানের পাশ থেকে কোনো রকম কাপতে কাপতে উঠে বললো আমার খাবার শেষ, বলে দ্রুত পায়ে চলে গেলো ,আফরান এখনো আরিয়ার দিকে কপার কুচকে আছে ।
আরিয়া একটু মাথা উচু করে আফরানকে দেখার চেষ্টা করলো । তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো ।
আবার মাথা নামিয়ে খাবারে হাত রাখলো। খাবারের মাঝে আরিয়ার কাশি উঠলো,পাশ থেকে জাফর ,নাবিল এক সাথে পানির গ্লাস ধরলো। আরিয়া একটা গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।
নাবিলের আফরানের সাথে কখনো কথা হয়নি কখনো বলেওনি তাই সে সেসবে মাথা নাড়ছে না।
আরিয়ার পানি শেষ করার সাথে সাথে আফরান হাতের চামচ টা প্লেটে আওয়াজ করে রাখলো। তার দৃষ্টি এখনো আরিয়ার দিকেই। কিন্তু এতোক্ষন যতোটা শান্ত ছিলো আফরান এই মুহুর্তে ততটা শান্তো নয়। আরিয়া আফরানের দিকে তাকিয়ে তার বুজতে বাকি নেই কোনো কারনে আফরান আবার রাগ করেছে ,হাতের রগ গুলো ভেসে উঠেছে । আরিয়া আবারো ঠোট ভেঙে কেদে দিলো । সামিরা ভয়ে এবার আর থাকতে পারলো না সেও উঠে গেলো ,জাফর সাহেবের খাবার আগেই শেষ আপাতত তিনি আরিয়ার জন্য বসে আছেন।
জাফর:কি হলো আবার কাদছিস কেনো? তোকে মারবেনা আমি আছি তো বললাম ।
আরিয়া কাদছে আওয়াজ করে।
জাফর:তুমি এখান থেকে খাবার শেষ করে চলে যাও ,মেয়েটা তোমাকে ভয় পাচ্ছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো হ্যা? তোমার কি বিবেক বুদ্ধি নেই ?
নাবিল:আসলে চাচা আমি ঠিক বুজতেছি না আরিয়া বারবার কেনো কেদে উঠছে এভাবে?
জাফর: তেমন কিছু না বাবা ।তুমি যাও।
নাবিল কিছু না বলে উঠতে যেতেই আফরান খাবার প্লেট টা নিচে ছুড়ে ফেললো ,
নাবিল : ব্রো কিছু হয়েছে?
আফরানের চোখ লাল হয়ে গেছে মুহুর্তেই ।
আফরান চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো ।
আরিয়া চাচাকে খামচে ধরে আছে।
জাফর:হচ্ছে টা কি আফরান ,,খাবার জিনিশ গুলো এভাবে ফেললে কেনো? খাবার তো আজ খারাপ হয়নি
আফরান দাতে দাত খিচে শান্ত কন্ঠে ,খারাপ হয়নি কিন্তু খুব তিতে হয়েছে
জাফর:এসবের মানে কি ,খাবার তিতে কেনো হতে যাবে?
আফরান:অন্য কারো মুখে আমার জিনিসের নাম টা নেওয়াও আমার পছন্দ না । বলে টেবিলের উপর ফল দানি থেকে ছুড়িটা নিয়ে হাতে খিচে ধরলো । রক্ত ক্রমাগত হচ্ছে টেবিলের উপর ।
জাফর চেয়ার ছেড়ে আফরানের কাছে গিয়ে হাত থেকে ছুড়ি টা ফেলার জন্য বলছে :পাগল হয়ে গেছো তুমি? এভাবে নিজের ক্ষতি করার মানে কি ? এটা রাখো বলছি ,
আফরান আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো ।
জাফর:ধমকিয়ে বলতে শুরু করলেন,,সামান্য খাবার তিতে হয়েছে বলে এমন করবে তুমি,, তুমি কি পাগল? এটা ফেলো,হাত থেকে রক্ত পরছে দেখছো না ? ফেলো বলছি এটা ।
আফরানের মুখে কোনো কথা নেই ।
বাড়ির সার্ভেন্ট রা একেকজন ভয়ে কাঁপছে। লতা তো ভয়ে কান্না করে দিয়েছে আজ বুঝি তার রক্ষে নেই ।খাবার টা তো সেই বানিয়েছে।
আরিয়া কাদছে । খুব ভয় পাচ্ছে পাশে প্রেমা এসে আরিয়াকে ধরে ফিসফিস করে বললো ,তুই কি অবুজ? আমি উপর থেকে দেখছি ভাইয়া নাবিল ভাইয়ার জন্য জেলাস হচ্ছে তুই একে তো নাবিল ভাইয়ার পাশে বসেছিস তার উপর নাবিল ভাইয়ার দেওয়া গ্লাস টায় পানি খেলি আর খেয়াল করিস নি তোর হাত টা ভাইয়ার হাত ছোয়েছিল । এখন আবার নাবিল ভাইয়া তোর নাম ধরে কথা বলছে যেটা ভাইয়া সহ্য করতে পারছেনা আরু। কিছু কর নয়তো শরীরের সব রক্ত এখানেই ঝরে মরে যাবে বেচারা।
আরিয়ার কান্না অফ হয়ে গেলো মুহুর্তেই ,আরিয়া বাকরুদ্ধ । সামান্য এটাতে এমন করবে সে এটা তার মাথায় ও আসেনি।
কি করবে এখন সে ? তার কথা কি শুনবে?
আচমকা আরিয়া চেয়ারে বসে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, চাচা আমার আইসক্রীম খেতে ইচ্ছে করছে ।
জাফর অবাক হলো , সকাল সকাল আইসক্রীম তাও অসময় আব্দার ,মামনি তোমাকে পরে….
আরিয়া জাফরের কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো:আমার খুব জ্বর সেদিন তোমার ছেলে আমাকে মেরেছিলো কিন্তু তোমাকে বলিনি ,পরে জর উঠেছে এখনো ভালো হয়নি কিন্তু তবুও আমার আইসক্রীম খেতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি খাবো সেটাও এখন কোনো কথা শুনবো না।
আরিয়ার চোখের কোনে জলৎছলছল করছে কিন্তু মুখে এটিটিউড প্রকাশ করছে।
আফরান হাতের ছুড়িটা ফেলে চেয়ার ছেরে আরিয়া পাশে দাড়িয়ে বললো ,,কি বললি?আইসক্রীম? খাওয়াচ্ছি তোকে আইসক্রীম ,আমাকে রক্তাক্ত অবস্হায় ফেলে তোর খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে না ।বলে আরিয়ার বাম হাত শক্ত করে ধরে টেনে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো।
আরিয়া:আরে করছেন টা কি ছাড়ুন আমায় ,আমি আপনাকে ছুড়ি বসিয়েছি নাকি আপনি নিজেই তো নিজেকে আঘাত করলেন আমার দোষ কেনো দিচ্ছেন? আজব ছাড়ুন আমাকে আমি আইসক্রীম খাবো।
সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রেমা মিটিমিটি হাসছে ,এদের দ্বারা সব সম্ভব ,কোন টাকে কি দিয়ে সামলে নিলো আরু আজব,
নাবিল: চাচা কি হচ্ছে এখানে আমি কিন্তু কিছুই বুজছি না।
মি মাফিয়া পর্ব ১৮
জাফর: আজকেও মেয়েটাকে সামনে থেকে বাচাতে পারলাম না ।কিন্তু ছেলেটার হাত টা অনেক খানি কেটে গেছে। তাতেও যেনো কিছুই হয়নি ,এতো পাথর কেনো ওর মন।
প্রেমা:চাচা চিন্তা করোনা ,আরু নাহয় দু চার টা চর খাবে কিন্তু তোমার ছেলের রক্ত ঝড়া তো অফ হয়েছে তাইনা? সেটা কিন্তু আরুর বোকামুর জন্যই হয়েছে।
জাফর কি যেনো ভাবতে লাগলো। তারপর…….