মি মাফিয়া পর্ব ২৪
সুমাইয়া সাবিহা
আবার ক্ষনিক বাদে আফরান আরিয়া চুলের মুঠো ধরে বললো , আমার সাথে ধোকাবাজি! তোর অনেক সাহস আছে বেবি । বলে আফরান আরিয়ার গলায় ছুরি ধরলো,,,
আরিয়া কাপা গলায় বললো ,,
” দিন না মেরে । একদম শেষ করে দিন আপনার হাতেই মরতে চাই।
__এতো বেড়ে যাবি জানলে আগেই মেরে দিতাম এতো দেরী করতাম না।
__আপনার নাটক বুজতে আমার লেট হয়েছে বিধায় এতো লেট হলো কিন্তু আর না এবার যা করার করে দিন
____ নিজে নিজে সব টা ভেবে নিয়ে আমাকে জালা দিস সব সময় তোর ন্যাকামুর জন্য আমাকেই কেনো সহ্য করতে হয়?
, বলে ছুড়িটা আরেকটু চেপে ধরলো ,
আরিয়ার গলা কেটে একটু রক্ত প্রকাশিত হলো ।
পাশ থেকে আয়শ বললো,
__আফরান নো নো । এটা করিস না দেখ ও বুঝেনি ছেড়ে দে ওকে ।
জাফর বিচলিত হয়ে :
___আফরান তুমি এটা করতে পারোনা দেখো ওর মা বাবার দিকে একবার তাকাও । তোমার বোন হয় ও । যা করেছো এতোদিন মেনে নিয়েছি কিন্তু আজ বাড়াবাড়ি করছো অতিরিক্ত ।
রহিমা কান্না জড়িত গলায় বললো,
__বাবা প্লীজ আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও আজকেই নিয়ে চলে যাবো আর এখানে রাখবো না তোমার সামনে আসবেনা কাখনো । আমার মেয়ে কে ভিক্ষা দাও বাবা । বলে কাঁদতে লাগলো।
নাবিল তেতে গিয়ে:
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
___ভালোয় ভালোয় বলছি ওকে ছেড়ে দে নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে ।
আফরান কারো কথাই যেনো শুনছে না।
__কতক্ষন এভাবে ধরে রাখবেন গলায়? চালিয়ে দিন না ফাষ্ট। কাম টু ফাস্ট , কিল মি ।
আফরানের রাগের কারনে হাতের রগ ফুলে শরীরের ক্ষত জায়গা থেকে রক্ত পরছে। তার সেদিকে খেয়াল নেই । শুধু আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে রক্ত লাল দৃষ্টি তে।
__কিল মি । লেট করছেন কেনো ? দিন মেরে ।
আফরান হাতের ছুড়িটা আরো চেপে ধরে।
নাবিল আকস্মিক আফরানের মাথায় পিস্তল ধরে বলে ,
__ওকে ছেড়ে দে বলছি নয়তো এখান থেকে বেচে ফেরা মুশকিল হবে তোর জন্য
নাবিলের এমন কান্ডে সবাই অবাক নাবিলের হাতে গান । এটাই তো আশ্চর্য জনক ব্যাপার ।
সবাই শুধু দেখেই যাচ্ছে ,কেমন পরিস্থিতি হচ্ছে কেউ বুজতে পারছেনা। কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে।
আফরান এবার আরিয়ার গলা থেকে ছুরিটা সরিয়ে ঘার বাঁকিয়ে বাকা হেসে বললো ,,
__গুড ,,
___নিজের স্থান ভূলে গিয়ে হাসছিস? বাহ সাহস আছে তোর দেখছি । অবশ্য তোর সাহস আছে সেটা আগেই জানতাম বাট এমন অবস্থায়ও সেটা জানতাম না।
আফরান নিজের ঠোটের কোন ডান হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বললো ,
___কি জানিস তো এখনো না তুই একদম কাচা খেলোয়ার । আমার সমান হয়ে পরে লাগতে আসতি তাও মেনে নিতাম বাট কি বলতো আমার লেভেল পর্যন্ত এখনো আসতে পারিসনি তাই পছন্দ হয়নি ।
___মানে? কি বলতে চাচ্ছিস ?
___কি ভেবেছিস ? চোখের সামনে সব করে বেড়াবি কিছুই বুজতে পারবোনা? এই ভাবনা টাই তোর প্রথম ভুল ।
নাবিলও মুখে হাসি টেনে বললো
__বেশ ভালোই বুঝেছিস তাহলে ।
আফরান হাসলো,,,
সবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি হচ্ছে টা কি এখানে? কেউ বুজতে পারছে না।
নাবিল আবারো বললো
__তা তুই যেহেতু আগের থেকেই সব জানিস তো চুপ ছিলিস কেনো? আমার সাথে পারবিনা এটাই ভেবে ? আই নও ।
বলে নাবিল ডেভিল হাসলো।
_____একটু ভূল বলেছিস । তোর সাথে পারা না পারার প্রশ্নই আসে না । আমি মুলতো তোর মতো কাচা প্লেয়ার দের সাথে লাগতে চাইনি ।
আফরান নিজেকে প্রশ্ন বদ্ধ করে বললো
আমি এসব কিভাবে জানলাম বল তো ?
সেদিন যখন ঐ আরিয়ার পেছনে লেগে থাকা ছেলেটা মারা গেলো । আমার উপর যখন সবার সন্দেহের দৃষ্টি ছিলো কিন্তু আমি তো ওটাকে মারিনি তাই সেটার খোজ নেওয়ার জন্য ঐ ড্রাইভারের খোজ নিয়ে পরে তানভীর কে পাঠাই কিন্তু ঐ বেটাকেও আগেই মেরে দেওয়া হয়েছিলো। কারন ,প্রমান হিসেবে কিছু রাখতে চাসনি কিন্তু কি জানিস ক্রিমিনাল পাক্কা প্লেয়ার নাহলে ভূল করে বসে এটা তুই জানিস ?
তবুও ভুল করেই ফেললি সিসি টিভি ফুটেজ টা ঠিকি ডিলেট করেছিলিস কিন্তু ঐ বাড়িতে আমি তানভীর কে পাঠানোর আগে হাইডেন ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিলাম বাড়ির ভেতরে । কিন্তু তুই ঐ বেটাকে ভেতরে না মেরে অন্য কোথাও মেরেছিস বিধায় নিশ্চিত ছিলাম না বাট আমার ডাউড ঠিকি ছিলো । কিন্তু আমার মাথায় ঐটাই ছিলো না যে কেনো তুই এটা করবি ।কেন কেনো কেনো?
তারপর আয়শ ঐ মৃত্যুর খোজ রহস্য উদঘাটন করতে গিয়েছিলো তখন তুই আরেক টা প্লেন বানালি আয়শ কে মেরে দিবি আর সেটা করতে চেষ্টাও করেছিলিস আর আয়শের মৃত্যুর কারন টাও আমার দিকেই ফেলতে চেয়েছিলি কারন আমি এটা নিয়ে আয়শ কে থ্রেট দিয়েছিলাম বলে তুই এটাকেই কাজে লাগানুর চেষ্টা করেছিলি কিন্তু কি বল তোর ভাগ্য টাই খারাপ বিধায় তোর প্লেন আমার আগেই জানা হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু লোকটা তুই হবি এটা শিউর ছিলাম না এটুকুই ।
জানতাম এতে ওর বিপদ হবে আর সেদিন আয়শ কে মারতে যাদের পাঠিয়েছিলিস আমার ছেলে পুলেরা তোর ছেলেপুলেকে আগেই পিষিয়ে দিয়েছিলো ।
কিন্তু আয়শ কে তুই আবারো মারার চেষ্টা করতিস সেই কারনে আয়শ কে আমি নিজেই জেলে পাঠিয়েছিলাম কারন আমি তো আর সব সময় ওকে নিয়ে পরে থাকবো না তাইনা ? আমারো কাজ আছে ।
এটাতেও সফল না হয়ে তারপর আরেকটা কাজ করলি । আমি যে ছেলেটাকে থ্রেট দিয়েছিলাম তুই ঐ টাকেও মেরে দিলি যার ফল স্বরুপ এটার মৃত্যুর কারন টাও আমার দিকেই ছিল সবাই এটাই ভেবেছিল তার থেকে বেশি ছিলো আরিয়ার ,,
দেন আমি বুজলাম এখানেই কিছু আছে অর্থাৎ যে আমার শত্রু সেই আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছে । মানে দুইটা জিনিস একসাথে হাসিল করতে চেয়েছিস এক-নিজের বাবার কম্পানির লস হওয়া টা তোর অপমান জনক মনে হয়েছিলো তাই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিস তাই আরিয়া কেও মারতে চেয়েছিস আমার দেওয়া আরিয়ার পিছে বডি গার্দের জন্যে সেটাতেও সফল হতে পারিসনি কিন্তু হঠাৎ করে আরিয়ার প্রেমে কিভাবে মরিয়া হয়ে গিয়েছিলি সেটা তুই নিজেই জানিস । আর আমি সব টা বুজতে পেরে ইচ্ছে করে আরিয়ার সাথে আয়শের এংগেজ টা হওয়াতে আটকাইনি পর্যন্ত যেনো তোর মনে হয় আরিয়া আমার সাথে নয় আয়শের সাথে কিছু চলছে ।
দুই- /যখন দেখলি আয়শের সাথে আরিয়ার এংগেজড হয়ে গেছে তখন আরেক চাল চাললি । নিজের বোনের পিছে যে কুত্তা টা লেগেছিলো সেটাকে নিজের বাড়ি অবদি নিয়ে আনার ব্যাবস্হা তুই নিজেই করে দিয়েছিস । এটাকে দিয়ে আরেকটা প্লেন বানানোর জন্য । সেটা হলো সামিরা আর আয়শের বিয়ে দিয়ে দেওয়া , সেখানেও সফল হোস আয়শকে নোংরা কিছু ছবি দেখিয়ে ব্লেক মেইল করে ওদের বিয়েটা দিয়ে দিলি ।যাতে তোর পথের কাটা দুর হয়ে যায় ।সেটাই হয়েছিলো সেদিন ।
আর আমি এসব কিভাবে জানলাম বল তো ? আরু কে কেউ একজন ড্রেস দেবে আর সেটা আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো তোর কি এটাই মনে হয় ? যখন দেখলাম সামিরার হলুদে তুই আরিয়া কে ড্রেস টা দিয়েছিলিস তখন সব টা বুঝে নিয়েছিলাম । আর পরের প্লেন গুলোও বুজে নিয়ে ছিলাম । আমি কিছু করিনি কারন আমি দেখতে চেয়েছিলাম আর কতদুর যেতে পারিস । তার পর ও আমি তোকে মারতে চাইনি ইচ্ছে করে। আমি তোকে পুলিশে দিতে চেয়েছিলাম তাই কালকে কিছু প্রমান নিয়েছিলাম বাট তুই সেটাও বুঝে নিয়ে সব গুলো চেন্জ করে দিয়েছিলিস কিন্তু কি জানিস তোর মাথা টা একটু কাচা এখনো । ঐ গুলোর মেইন পেপার গুলো আমার কাছেই ছিলো । শুধু দেখতে চেয়েছিলাম সত্যি কি আমি যা ভাবছি সেটাই হয় কিনা।
__বাহ খুব সুন্দর তোর বুদ্ধি আইডিয়া বাট কি বলতো ? আগে যা হয়েছে কিছু তো আর করার নেই এখন তোর জিবন টা আমার হাতে আটকে মৃত্যুর ভয় নেই?
আফরান আবারো বাকা হেসে বললো
__তোর জন্য দুঃখ হচ্ছে বুঝলি ? ভেবেছিলাম তোকে ছেড়ে দেবো সংসারের একমাত্র ছেলে তাছাড়া আয়শ তোদের বাড়িতেই এতোদিন থাকছে ভাই হিসেবে চলেছিস সে সুত্রে । কিন্তু এখন তো দেখছি নিজেই মরতে চাচ্ছিস ।
__আগে নিজের অবস্থান টা তো দেখ তারপর বড় গলায় কথা বলিস।
___ভেরি সেড ইয়ার । আন্টি আমায় মাফ করবেন আপনার ছেলেটাকে আপনার হাতে সুস্থ ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না ।
রাবেয়া বেগম কাপা গলায় বললো
__আমার তো ভাবতেই লজ্জা হচ্ছে এমন সন্তান জন্ম দিয়েছি । এতো নিচে নামতে পারে নিজের স্বার্থের জন্য । কিন্তু আফরান বাবা তোমার দোহাই লাগে একদম মেরে দিও না আমি তো মা আমি নিঃসন্তান হতে চাইনা । এটাকে শাস্তি দিবো আমরা ।বলে রাবেয়া বেগম চোখের জল ফেলতে থাকে ।
আজমল সাহেব:-
আমার কম্পানি ডাউন ফেইল হয়েছে তোমার জন্য সেটা আমি জানি কিন্তু তোমার উপর আমার রাগ থাকলেও এমন জগন্য কল্পনা আমি করিনি যে,প্রতিশোধ নেবো ছেলের বয়সী কারো কাছে । এই ছেলেকে আমরা নিজেরা শাস্তি দেবো তুমি কিছু করো না আফরান ,,
জাফর শুধু দেখছে আজ । হ্যা ! আজ আফরান কে অনেক টা দায়িত্ববান ছেলেদের কাতারে দাড় করাতে ইচ্ছে হচ্ছে তার ।কিন্তু নিজের গম্ভীরতার বীপরীর জাফর যাবেন না যাই হোক মাস্তানী তো ছেরে দেয়নি । কালো টাকা কামানো তো অফ করে দেয়নি।
সবাই মূলতো একটু শকড খেয়েছে । এই নাবিল তো খুব ভদ্র সবাই এটাই ভাবতো এতোদিন কিন্তু এতো নিকৃষ্ট হয়ে সামনে আসবে কে জানতো ?
আয়শ নাবিলের কাছে গিয়ে চোখের কোনে জল নিয়ে বললো:
__ছিহ নাবিল । এতো নিচে নামতে কিভাবে পারলি তুই? একটু বুক কাপলো না ? সবার ইমোশন নিয়ে খেলতে? তোকে দেখতেও ঘৃনা হচ্ছে আমার ।
___ ইমোশন ? কিসের ইমোশন ? রক্ত ছাড়া কেউ আপন হয় নাকি ? তুই কে? যতোসব সামনে থেকে সর তো।
আয়শ আর কিছু বলতে পারলো না গলা জমে আসছে । যাকে বন্ধুর চেয়েও বেশি ভাই ভেবেছে নিজের ভাইয়ের চেয়ে বেশি করেছে যার জন্য আজ তার আসল রুপ দেখছে কতো নিষ্ঠুর মানুষ ।
নাবিল আফরানের দিকে বন্দুক তাক করে বললো ,
___আরিয়া কে আমার হাতে তুলে দে ভালোয় ভালোয় বলছি নয়তো কি করবো বুজতে পারছিস ,
আফরান হাসির হালকা আওয়াজ করে নাবিলের একদম কাছে এসে বললো ,,
__ওকে চল ,,দেখি কিরকম পারিস
__আমি মজা করছি না সত্যি সত্যি চালিয়ে দেবো #মি_মাফিয়া কিং।
____বললাম তো চালা ।
নাবিল ট্রিগারে হাত রাখে যেই না চালাবে অমনি বাড়ির ভেতর পুলিশ জড় হয় ।
আফরান বিরক্ত হয়ে বললো
___এই ভেজাল আবার কে ডেকেছে হ্যা? আমি তো বলিনি ।
আজমল: – আমি ডেকেছি ,,এর জেলেই থাকা ভালো।
নাবিল: বাবা কিসব বলছো ? আমি তোমার ছেলে নিজের ছেলেকে পুলিশে দিতে তোমার …
আজমল: আমি যেই ছেলেকে চিনতাম সে আমার জন্য আর নেই মারা গিয়েছে ।এমন সন্তান লাগবেনা আমার । বলে আজমল চৌধুরী বাড়ির গেইট ছাড়ে ।
কয়েক মিনিটে পুরো বাড়ি নিঃশব্দ হয়ে যায় ।নাবিলকে পুলিশ নিয়ে চলে যায় ।
কারো মুখে কোন কথা নেই। কি বা বলবে? আজ যা দেখেছে সব টাই ভাবনার উল্টো কি থেকে কি হয়ে গেলো?
জাফর কথা না বলে চুপচাপ রুমে চলে যায় ।
একে একে সবাই নিজের মতো করে ড্রয়িংরুম ছাড়ে কিন্তু আয়শ এখনো দাড়িয়ে । আজ বড্ড অপরাধী লাগছে নিজেকে নিজের কাছে ,যাকে আপন ভেবেছে সে পর আর যাকে চোখে সহ্য করতে পারতোনা সেই তার জন্য কতো কিছু করেছে । সত্যি কি তাহলে রক্তের সম্পর্ক রক্তই হয় ? এর মতো আপন কেউ নয়?
আয়শ আফরান কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফরান কপাল কুচকে সামিরা কে বলে –
___এটাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? এটাকে এখানেই রেখে যাও ।সামিরা ভীত হয়ে আরিয়া কে রেখেই নিজেই উপরে চলে যায় ।
আরিয়া ভয়ে কাপছে নিশ্চয়ই আজকে তার জিবনের শেষ দিন মেরেই ফেলবে একদম ।
কাঁপা গলায় বললো
মি মাফিয়া পর্ব ২৩
___আ.. আমি থেকে কি করবো ? আমিও যাই বলে দুকদম সামনে রাখতেই আফরান আরিয়ার দিকে পা বাড়ায় । আফরান কে আসতে দেখে আরিয়া আ আ আ চিৎকার করে উপরে না উঠে ভো …দৌড় বাগানের দিকে ।
আরিয়ার এমন কান্ড দেখে আফরান ভ্যাবাচাকা খায় ।
তারপর…..