মি মাফিয়া পর্ব ৩৭

মি মাফিয়া পর্ব ৩৭
সুমাইয়া সাবিহা

আরিয়া আবারো ডাকলো, ভাইয়া কি হলো আমি যাবো তো সত্যি বলছি শুধু আমাকে ঐ সাইকো লোকটার কাছ থেকে দুরে রাখবে বলো।এমন বিষাদময় ভালোবাসা চাইনা আমি।
নাবিল সামনে ফিরে আগের অবস্থায় চেহারা স্বাভাবিক করে বললো ,একদম চিন্তা করো না তুমি ,তোমাকে প্রোটেক্ট করার করার সব টা দায়িত্ব আমার ।
এদিকে আফরান গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় ,যেখানে যেখানে খোঁজা সম্ভব সব জায়গায় খোজা শেষ অলরেডি ,রাত প্রায় শেষের দিকে । এমন কোনো জায়গা বাকি রাখেনি এই আশে পাশের সব গুলো জায়গা খোঁজে বেড়িয়েছে পাগলের মতো ছন্নছাড়া হয়ে কিন্তু লাভ হলো না,আফরানের চেহারায় ভিষন গম্ভীর্যতা এই বুঝি সব উগলে ধ্বংস করে দেবে ।

এটা কি আসলেই রাগ নাকি কাউকে হারানোর ভয় চেপে আছে ভেতরে চেহারা দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই ।
যখন কিছু করতে পারলো না ভেতরের সব টা রাগ গাড়ির দরজার গ্লাসের উপর নিজের মুঠি বদ্ধ হাত টা ঘুসি মারে ।
কতটুকু জোরে আঘাত করলে মাইক্রোবাসের গ্লাস ফেটে যায় সেটার শক্তি নির্ধারণ করা বোধহয় সম্ভব না ।
হাত থেকে গাঢ় রক্ত টপকে নিচে পরছে । আফরান এর মুখে কোনো ব্যাথার ছাপ নেই যেটা আছে সেটা শুধুমাত্র সব কিছু খণ্ডবিখণ্ড করে দেওয়ার প্রয়াস।
আয়শ জাফর সব জায়গায় গিয়ে দেখেছে কিন্তু কোথাও নেই ।
আয়শ সব শেষে খলিল সাহেবকে এই পর্যন্ত শত ফোন দেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু ওদের ফোন ও রিং হচ্ছে না তাই আরিয়ানের বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই সামিরা বলে উঠলো , আমার মনে হয় আড়িয়া বাড়িতেও নেই পাবেননা খুঁজে। ও যদি সত্যি ভাইয়ার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তবে বাড়ি যাবেনা আমি নিশ্চিত।
আয়শ রক্ত বর্ন হয়ে সামিরার সামনে গিয়ে বাহু চেপে ধরে বললো,সব কিছু তোর জন্য হয়েছে তখন যদি বলতি আমরা তখন খুজে করলে অবশ্যই পেয়ে যেতাম ,আরিয়ার যদি কিছু হয় ছাড়বো না তোকে দেখে নিস। কতটুকু চিনিস আমায়?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সামিরা:আহ লাগছে তো ছাড়ুন,আমি কি করেছি? আমি নিজেও তো চাচ্ছিলাম যেনো না যায় ।
আয়শ: তাহলে আমাদের কে কেনো বললি না? তুই ইচ্ছে করেই সহযোগিতা করেছিস এখন আবার দরদ উথলে উঠছে কেনো। ও একজন মেয়ে মানুষ হয়ে অচেনা সব জায়গা তে কিভাবে থাকবে? বিপদ হতে কতক্ষন? সব কিছু জেনে বুঝেই করেছিস তাইনা।
সামিরা: আরু আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হয় ।কেনো ওর বিপদ চাইবো আমি ?আপনি কি পাগল?
আয়শ সামিরা কে একধাক্কায় ফেলে দিয়ে বললো একদম কথা বলবি না ,চোখের সামনে থেকে চলে যা।
সামিরার চোখে পানি ভাসে।চুপ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।
গত তিন দিন ধরে আফরানের কোনো খোঁজ খবর নেই ।বাড়ি আশা তো দূর অফিস পর্যন্ত যায়নি আফরান । কোথায় গিয়েছে সেটাই খোঁজ নেওয়ার জন্য আয়শ আফরানের অফিস অবদি গিয়েছিলো কিন্তু সব কর্মকর্তার মুখে একটাই কথা ,স্যার এই তিন দিন ধরে আসেননি অফিস । তানভীর এর কথা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেছিলো আয়শ কিন্তু কারো কিছুই জানা নেই।
আয়শ ভেবেছিলো আফরান হয়তো যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবে আরিয়া কে কিন্তু এখন তো দেখছি আফরান নিজেই নিখোঁজ হয়ে বসে আছে ।
সেদিন দেশে গিয়ে চাচা চাচী কাউকেই পেলাম না আচ্ছা কেউ ইচ্ছে করে গুম করে দেয়নি তো সবাইকে একসাথে?
কথা টা ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে ।

গল্পের নতুন মোড়…….
প্রায় ৩ বছর পর আজ আফরান দেশে ফিরছে। শরীরের গঠনাকৃতি আগের থেকে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে , বয়সের ছাপ টা বোধয় এই লোকটার চেন্জ হবার নয় সেই ২৫/২৬ বছরের টগবগে যুবক মনে হচ্ছে এখনো ।
দেশের বাইরে থেকেই কম্পানী চালিয়ে গেছে দেশে ফেরার প্রয়োজন মনে করেনি একটি বারের জন্য ও খবর নেয়নি কারো। অবশ্য আয়শ খোঁজ নিয়ে শেষে জেনেছিলো আফরান জাপানে আছে । কিন্তু কখনো ফোন করে জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি। তার বুঝতে বাকি নেই আফরানের না ফেরার কারন ।
আফরান হয়তো আজকেও দেশে ফিরতো না কিন্তু তার কম্পানির সাথে পাল্লা দিয়ে নাকি sk কম্পানী দাঁড়িয়েছে আবার তার কম্পানির পাসের জমিটাতে নাকি নতুন বিল্ডিং বানিয়ে এসকে এর খ গ্রুপ খোলার ট্রাই করছে কথাটা একদম তার পছন্দ হয়নি । তাই তো এসেছে জরুরি মিটিং করতে , অবশ্য সেটাও লেপটপে ভিডিও কলেই করতে চেয়েছিলো কিন্তু এস কে এর সি ইউ নাকি এমন মিটিং করবে না বলে ডিরেক্ট রিজেক্ট করে দিয়েছে।
আফরান গাড়ি থেকে নামতেই কতগুলো মেয়ে ফোন নিয়ে ছবি তোলার জন্য কাছে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে অবশ্য আফরানের চারদিকে কমপক্ষে ১০/১২ জন বডিগার্ড এসব সামলিয়ে নিচ্ছে ।

একটা মেয়ে চিৎকার করে বলছে ,স্যার আম ইউর বিগ ফ্যান ,ইউ আর এ্যাঁ গ্রেট বিজনেস ম্যান , এন্ড ইউ আর সো হট। কথা টা কানে আসতেই আফরান বিরক্তি নিয়ে চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে তানভীরের কাছে ছুরে মেরে কিছু ইশারা করে । তানভীর বাকী বডিগার্ড দের কেও ইশারা করে দেয় ।
সাথে সাথে বডিগার্ড গুলো আরো সচেতন ভাবে সকল ফ্যান দের কে সামনে যেতে যেতে সাইড করে আফরানের জন্য শর্ট রাস্তা বানিয়ে দেয় ।
আফরান সোজা হেঁটে প্রথমে হল রুমে যেতেই সবাই দাঁড়িয়ে আফরান কে যে যার জায়গা থেকে মাথা নুইয়ে ওয়েলকাম জানায়।
আফরান কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে প্রথমেই উপরের ফাইল টা হাতে নেয় ।তারপর পেপার গুলো একটু উল্টে দেখে নেয় ।

হাতের ঘড়িতে তাকিয়ে সময় টা পরখ করে নেয় ,এখনো সকাল ১০ টাই বাজে ,ঠিক বিকেল ৩ টায় মিটিং বসবে ।
ফাইল টা হাত থেকে রাখতেই তানভীর এসে বলে ,সরি স্যার একটু লেট হলো ।
আফরান: আই ওয়ান্ট অল দ্যা ইনফরমেশন এবাউট দিস এস কে গ্রুপ ।
তানভীর:স্যার আসলে আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন এতো গুলো বছরে সেদিন আপনি চলে যাওয়ার পর আগের সব শত্রু গুলোর কিছুই করেননি , এটা সেই কাজী শবনম যার ভাইদের আপনি মেরেছিলেন ভাবির জন্য….
কথা টা মুখেই রয়ে গেলো আফরান হাতের কাছের কলম টা নিয়ে কেপ টা খুলেই তানভীরের কাধে বসিয়ে দিয়ে বললো ,কেমন লাগছে…?

তানভীর মুখের উপর দুহাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় ।স্যার ভুল হয়ে গেছে নেক্সট টাইম আর বলবো না।
আফরান:ভূল ! ওহ গড লাস্ট ওয়ার্নিং ভেবে নে এটাই ।
তানভীর কাতর গলায় বললো ,জি স্যার লাস্ট বারের মতো ,মনে রাখবো।
আফরান বাঁকা হেসে কলম টা কাঁধ থেকে তুলে আবার জায়গায় রেখে দিলো ।
তানভীর আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় হাত রাখে।
আফরান পকেটে হাত গুজিয়ে মুখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় ।
তানভীর এখন মাত্র আ আ বলে শব্দ করে জায়গা টা দেখার চেষ্টা করে নিজে নিজে বললো ,নিজে হাজার বার ভাবির সম্পর্কে ই-মেইল চেক করবে এটা কিছু না কেউ নাম টা নিলেই বেস ,,ওহ ।তাই বলে কলম দিয়েও কাউকে এমন আঘাত করা যায় আজ ফার্স্ট টাইম দেখলাম।
সামিরা এখন ভার্সিটিতে পরে ,একই ডিপার্টমেন্টে প্রেমাও এডমিশন নিয়েছিলো ।
সামিরা এই শেষের দুটো বছর নিজের বাড়িতেই কাটিয়েছে। সবারই জানাজানি হয়েছে বিয়ের বিষয়টা। অবশ্য জাফর সাহেব অনেক বলেছে আয়শ কে বলে বুঝিয়ে সব কিছু ঠিক করে নেবে কিন্তু সামিরা বলে ,জোড় করে বাবা আর যাই হোক সংসার হয়না।

ডিভোর্স পেপার রেডি করেছে কিন্তু আজমল সাহেব আর জাফর সাহেব বুঝিয়ে বলেছে দেখো মা ,পড়া টা শেষ করো তারপর এসব নিয়ে ভেবো এখন ঝামেলায় জড়ানোর দরকার নেই ।
কথা গুলো যে আয়শের অজানা ঠিক এমন নয় সব কিছু আয়শের ও জানা আছে ।
কিন্তু কথা হলো প্রেমা কে নিয়ে ,তন্ময় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কলেজ শেষে বিয়ের দিন সে আসেনি ,অনেক হাজার বার কল করেছিলো প্রেমা কিন্তু সেই নাম্বার সুঁইচ অফ ছিলো ,তবে কেনো সে তার ফ্যামিলি নিয়ে এসে বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছিলো ।

মান সম্মানের দুটানায় পরে সেই রাতে সামিরা সাদেকের কাছে বিনিময় করে হাত জোড় করে বলেছিলো বিয়েটা করে নিতে বারবার রিকোয়েস্টে সাদেক ও ফেলতে পারেনি তাছাড়া সেও পরিস্থিতি বুঝেছিলো একটা মেয়ের বিয়ের দিন বর না আসার কলঙ্ক টা যে মেয়েটার জিবন টাকে নরক বানিয়ে দিবে সেটা ভেবেই বাধ্য হয়ে প্রেমা কে বিয়েটা করেছিলো । অবশ্য এই বিয়েতে না আসাটাই মনে হয় তার উচিত ছিলো কিন্তু প্রেমা ভাই হিসেবে অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছিলো সামিরার সাথে আসতে তাই তো এসেছিলো ।
বিয়ের পর বাড়ি তে গেলে অবশ্য প্রেমাকে দেখে প্রথমে সাদেকের মা মন্জুরা বেগম অবাক হয় কিন্তু যখন সব টা জানে তখন তিনি প্রেমা কে মেয়ের মতোই গ্রহন করে নেয় ,দেখতে তো খারাপ নয় মিষ্টি একটা চঞ্চল মেয়ে । হাতে হাতে সাহায্য করতে ভোর সকালে উঠে পরে , কিন্তু এখনো সাদেকের সাথে চোখ তুলে একটা কথাও বলেনি একসাথে শুইয়া তো দুরের কথা এক রুমে অব্দি যায়নি ,ব্যাপার গুলো মন্জুরা বেগম দেখলেও কিছু বলেন না কারন হঠাৎ পরিস্থিতি কেউ মানিয়ে নিতে পারবেনা এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বিয়ের প্রায় কিছু দিন গত হওয়ার পর প্রেমা একটু আশঙ্কা নিয়েই প্রায় সাদেকের কাছে ভীত হয়ে গিয়ে জানায়

সে পড়াশুনা শেষ করতে চায় কিন্তু অনুমতি না দিলেও সমস্যা নেই পড়বে না । সাদেক প্রেমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয় ঠিক আছে , আগামী মাস থেকে আগের মতো পড়াটা চালিও কিন্তু আমি শহরে থাকবো না আমার দেশে কাজ আছে ,যদি চাও নিজের বাড়িতেও থাকতে পারো অথবা হোস্টেলে ।
প্রেমা ভাবতেও পারেনি সেদিন সাদেক এতোটা স্বাভাবিক ব্যাবহার করবে। প্রেমা জানায় হোস্টেলেই থাকবো ,বাড়িতে থাকার মতো মুখ টুকুও রাখিনি ।
সাদেক: একটু বেশি বুঝ ।

প্রেমা কোনো উত্তর করেনি সেদিন কিন্তু এখন সে হোস্টেলেই থাকে প্রয়োজন মোতাবেক সাদেক প্রতি মাসে আসে সব কিছু দিয়ে যায় আর দরকার পড়লে প্রেমা মাঝে মাঝে বাড়িতেও যায় , অবশ্যই সাজেদা বেগম অনেক বলেছেন থাকার জন্য কিন্তু প্রেমা থাকেনা ।কোন মুখে থাকবে মায়ের মুখে যে চুন কালি মেখে দিয়েছিলো দু’বছর আগে । বড় চাচা তো টাকা পাঠিয়েই দেয় মায়ের বেশ ভালোয় চলে আমি গিয়ে ঝামেলা বাড়ানোর দরকার নেই ।
এই মুহূর্তে সামিরা আর প্রেমা ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে ,তাদের মাঝে প্রায় সময় আরুকে নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু যাকে হাড়িয়েছে সে কি ফিরবে? আদৌ বেঁচে আছে তো আরু? কারো জানা নেই ।
তারা ধরেই নিয়েছি তিন বান্ধবীর এক বান্ধবীর ও কপাল ভালো না ,নয়তো কালো ছায়ার আভাস হতো না । এমন মরুময় জীবন কাটাতে হতো না । একে অপরের জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া প্রতিটা মুহূর্ত আবেগ প্রবন হয়ে প্রকাশ করে ।

সামিরা:আরু যদি থাকতো হয়তো মুহূর্ত গুলো আনন্দ ময় হতো তাইনা।
প্রেমা:ঠিক বলেছিস । আচ্ছা আরুর মা বাবা এখন আসে এখানে ?
সামিরা: আসে খোঁজ নিতে । পুলিশ রা তো জানিয়ে দিয়েছে এই কেইস ডিসমিস করতে কিন্তু আরুর মা বাবা তো আমার বাবা আর আর উনার বাবার সাহায্য কেইস টাকে দাড়ি রেখেছেন উপর থেকে এখনো কেইস টা চলমান রাখার ডিসিশন জানিয়েছে । আরুর এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি ।
প্রেমা: আচ্ছা আপু আবার নিজেকে…. এটুকু বলতেই ক্যাম্পাসের মাঝ বড়াবড় তিনটে ব্রান্ডের গাড়ি এসে থামে ।
গাড়ির শব্দ শুনে সামিরা প্রেমা পেছন ফিরে তাকায় ।
পেছনের দুটো গাড়ি থেকে মোটা শোটা কজন লোক নেমে সামনের গাড়িটার কাছে এসে দরজা খুলে দিয়ে আবার পাশে দাঁড়ায় স্ট্রং হয়ে ।
সামিরা প্রেমা গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে , আচ্ছা কোনো সেলেব্রেটি এসেছে নাকি কোনো রাষ্ট্রীয় কোনো লোক এসেছে? আগেও এমন এসছে স্যারদের বাঁশ দিতে কিন্তু এমন ব্রান্ডের গাড়িতে নয় নরমাল কয়টা মাইক্রোবাস শুধু।
সামিরা: আচ্ছা এই সামনের গাড়িটার নাম কিরে?
প্রেমা:আমিও তো জানিনা । কে এসছে হঠাৎ আবার , শুধু পড়ালেখা নিয়ে মনে হয় এদের ঘাঁটাঘাঁটি না করলে হয়না যতসব ।

গাড়ি থেকে নেমে আসে একটা মেয়ে , গায়ে সাদা রঙের কোট পড়া,পরনে কোটের সাথে মিলিয়ে পেন্ট ,পায়ে ধুসর রঙের চোখে ঝিলিক মারার মতো হিলস্ পরা , কিন্তু টাই নেই মুখে মাস্ক পড়া চোখের চশমা টা মনে হয় পাওয়ারী চশমা হবে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। চুল গুলো এতোটাও বড় নয় কোমর থেকে একটু উপরে ছেড়ে দেওয়া ,আবার কিছু চুল কপাল ঘিরে,আবার কিছু সামনের দিকেও ফেলে রেখেছে।
সামিরা প্রেমা একদফা ক্রাশ খায় নিচ থেকে মাথা অবদি দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে ,মেয়ে হয়েও মেয়ের উপর ক্রাশ কিভাবে খায়? নিশ্চয়ই মাত্রা তিরিক্ত চোখে পড়ার মতো ফ্যাশন স্টাইল।
গায়ের রংটা তো ফর্সার মধ্যে হলদে টাইপ মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই সব সময় স্কিন কেয়ার করে ,বডি ফিগার একদম স্মুত নিশ্চিত মেয়েটা এক্সারসাইজ ও করে সব সময় ।
প্রেমা:কিরে কি দেখছিস? আমি যা দেখছি তুইও তাই দেখছিস নাকি?
সামিরা :সব টা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, মেয়ে টা কি জাপানি নাকি এশিয়ান?
প্রেমা :সে যাই হোক কিন্তু এখানে কেনো?এখন তো এডমিশন চলছে না,
সামিরা:চল একটু দেখি আগে ,বলে দাঁড়ালো দুইজন ।

একজন মাথার উপর ছাতা ধরে আছে আরো তিনজন পেছনে মেয়েটার সাথে হাঁটছে ।
ক্ষনিক সময়ের মধ্যেই ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে কানা ঘোষণা শুরু হয় । কিছু ছেলে তো দৌড়ে এসে ছবি তোলা শুরু করে দিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে,আর ইউ নিউ স্টুডেন্ট ইন আওয়ার ভার্সিটি ?
দুটো গার্ড সামনে এসৈ ছেলেদের সরিয়ে দিতে দিতে লাগলো। তার মাঝেই ভার্সিটির দায়িত্বশীল ওয়াহিদ স্যার এসে ছাত্রদের কে বলতে লাগলো , প্রেস্টিজ নষ্ট করো না এখান থেকে যাও । স্যারের ধর্মকে সবাই সাইড হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো কিন্তু ছবি তোলা যেনো শেষ হচ্ছে না এদের ,,

ওয়াহিদ:কাম অন ম্যাম
একজন গার্ড বললো , ম্যাম বলে দিয়েছে যেনো ভার্সিটির স্যার এন্ড ম্যাম রা নাম ধরেই ডাকে ,
ওয়াহিদ মুখে হাসি রেখে বললো ,আসো ভেতরে ,তোমার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম শ্রাবনী ,আগে থেকে কল দিয়ে বললে তো কিছু আয়োজন করতে পারতাম হঠাৎ করেই বললে আসতেছো ।
শ্রাবনী ডান হাত টা পাশের বডিগার্ড এর দিকে বাড়িয়ে দিলে কিছু কাগজপত্র তুলে দেয় । শ্রাবনী একবার পেপার গুলো দেখে নিয়ে ওয়াহিদ স্যারের হাতে তুলে দেয় ।
ওয়াহিদ :ভেতরে এসো না ,কখন থেকে এখানেই দাঁড়িয়ে আছো ।
শ্রাবনী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ।

একজন গার্ড বললো ,ম্যাম ভেতরে যাবেন না ,এগুলো একবার দেখে নিন লেট হচ্ছে ‌
ওয়াহিদ স্যার দ্রুততা নিয়ে পেপার গুলো যে চোখ রেখে বললো ,সত্যি তুমি এবার ফাইনাল এক্সামে এটেন্ড করবে?
শ্রাবনী এখানে এসে প্রথম মুখ খুললো ,ইয়েস । বলে হাত ঘরিটার দিকে তাকালো।
ওয়াহিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন গার্ড বললো , ম্যামের সময় হয়ে গিয়েছে যেতে হবে ।
শ্রাবনী ও চুপ করে ওয়াহিদ কে পেছনে ফেলে গাড়ির দিকে যাওয়া ধরলো কিন্তু চোখ আটকায় একটু দুরে সবার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেমা আর সামিরার দিকে । সেকেন্ড কয়েক এভাবেই তাকিয়ে থেকে পরমুহূর্তে চশমা টা খুলে হাতে নিয়ে আরেক মুহূর্ত তাকিয়ে দেখে নেয়

সামিরা আর প্রেমার চোখ ও সেদিকেই আছে চোখাচোখি হচ্ছে চোখ জোড়া। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই কারো ।
শ্রাবনী হঠাৎ করেই আবার মাস্কের উপর চশমা টা পরে নিয়ে গাড়িতে পা বাড়ায় ।
গাড়ি স্টার্ট দিতেই শ্রাবনী গ্লাস টা খুলে দিয়ে আবারো চোখ রাখে সেদিকেই ।
কতো কথা লুকিয়ে আছে এই দৃষ্টি তে
অজানা কত অতিত রয়ে গেছে তিন বছরের ব্যাবধানে ।

মি মাফিয়া পর্ব ৩৬

কখনো কি আবার আগের মতো দিন গুলো ফিরে আসবেনা? হয়তো আসবেনা? অতীত ভুলতে গিয়েই তো নিজেকে এতোটা পরিবর্তন করতে হলো । একটু ভুলের জন্য আবারো সে ফিরে যেতে চায়না আগের জায়গাতে যেখানে নিজের ভালোবাসার মানুষটির হাতেই রেপ হতে হয়েছে। কালো রাত টার কথা কি আদৌ ভূলা যায়? মা বাবা সব কিছু উৎসর্গ করে দিয়েছি কি আবারো আগের অবস্থায় যাওয়ার জন্য?সেটা আবারো দ্বিতীয় বার কখনো হবার নয় ।
তারপর…….

মি মাফিয়া পর্ব ৩৮