মি মাফিয়া পর্ব ৩৮
সুমাইয়া সাবিহা
-হাতের পেপার গুলো দেখেই মাথা টা যেনো উগলে উঠছে ,,
হুয়াট দ্যা ননসেন্স,এসব কি? আমাকে আগে কেনো জানানো হয়নি? বলেই হাতের পেপার গুলো সামনের লোকটার দিকে ছুরে মারলো শ্রাবনী ।
সামনের লোকটা মাথা নিচু করে বললো ,সরি ম্যাম,বড় ম্যামের পক্ষ থেকে জানানো নিষিদ্ধ ছিলো।
শ্রাবনী রাগে কিরমির করতে করতে বললো , সব গুলো অর্ধ গর্ধব কে চাকরি তে কে রেখেছে ?
পেছন থেকে শ্রাবনীর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট মায়া বললো ,ম্যাম বড় ম্যামের সাথে কথা বলে দেখুন ,আমারো মনে হচ্ছে উনি নিষিধ করেছিলেন।
শ্রাবনী মাথার কেপ টা খুলে ছুড়ে মারে সামনের দিকে ,শরীর কাঁপছে রাগের তারনায়,
এমন সময় কেউ দরজা নক করে ভেতরে আসলো ।
শ্রাবনীর দৃষ্টি সেদিকে ফিরালো।
নাবিল একটা টিশার্ট পড়ে উপরে শার্টের বোতাম ছাড়ে দিয়ে পেন্টের পকেটে হাত রেখে আসতে আসতে বললো কিছু হয়েছে?
নাবিল কে দেখেই সবাই রুম থেকে চুপ করে বেরিয়ে যায় মায়া সহ।
নাবিল কাঁচের জানালা টার উপর পর্দা টেনে দিয়ে দরজা টা লক করে সেটার উপরও পর্দা টেনে দিয়ে শ্রাবনীর সামনে এসে বললো ,দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছো কি হয়েছে? এনি প্রবলেম?
শ্রাবনীর এই মুহূর্ত শান্ত ভাবে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা । আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে? আপনিও কেনো আমাকে জানাননি? হুয়াই? আনসার মি ।
নাবিল:কিসের কথা বলছো ঠিক বুঝলাম না ,আর আগে শান্ত হও ,বলে টেবিলের উপর থেকে গ্লাসের পানিটা শ্রাবনীর দিকে এগিয়ে দিলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শ্রাবনী সেটা নিয়ে ঢকঢক করে গিলে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বললো , আপনি তো নিশ্চয়ই আগের থেকে জানতেন তাইনা ? যে ঐ কম্পানি টা ঐ কুৎসিত লোকটার ,তাহলে আমাকে কেনো বলেননি আগে ?
নাবিল স্মীত হেসে নিচ থেকে কেপ টা তুলে শ্রাবনীর মাথায় পরিয়ে দিতে দিতে বললো ,তুমি তো স্ট্রং আরু,তাহলে এমন রেগে যাওয়ার কি আছে? তুমি যে নিজেকে পরিবর্তন করেছো সেটা পরিক্ষা করার জন্যই তো বলিনি ,তুমি যদি আফরানের সামনে নিজেকে সামলাতে পারো নিজের আগের রুপ টা কন্ট্রোলে রেখে বর্তমান রুপ টা দেখাতে পারো তবেই তো হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর হবো যে তুমি সিরিয়াসলি চেন্জ হয়েছো কোনো পিছুটান নেই।
শ্রাবনী: ডোন্ট কল মি আরু,আর কতোবার বলবো আপনাকে ,ঐ নাম টা আমার ঘৃনা হয় । আমি ঐ লোকটার সামনে কখনো যেতে চাইনা সেটা কি আপনি জানেন না? জেনে বুঝে কেনো মিটিংয়ের আয়োজন করলেন?
নাবিল: দেখো তুমি নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে চেয়েছিলে ,আমি শুধু মাত্র তোমাকে একটা পথ তৈরি করে সুযোগ করে দিয়েছি ,এমন কিছু চেয়েছিলে যেখানে আফরানের সাথে কোনো কানেক্ট থাকবেনা ,এতো দিন সেটাই হয়েছে কিন্তু ওখানে বিল্ডিং টা হতে দিচ্ছে না আফরান এতে করে আমাদের প্রবলেম হচ্ছে,এখন তুমি যদি চাও ঠিক আছে জমিটা এভাবেই পরে থাকুক লস হোক তবে আমি বলবো সেটাই হবে তোমার কথার বাইরে যাবেনা ,আর এসকে কম্পানির সি ইউ হয়েছো নিজের যথেষ্ট যোগ্যতার কারনে ,, কতোবার পুরস্কার পেয়েছো নিজের কাজের জন্য সেটা কি মিথ্যা ? আর মিটিং টা তুমি এপ্লাই করে দিয়েছো আগেই ,এখন যদি সেটা কেন্সেল হয়ে যায় কি হবে বুজতে পারছো? তবুও বলছি তোমার ইচ্ছে নাহলে ঠিক আছে যেওনা যাই হোক ,আমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু চাইনা আরু।
আরিয়া কি যেনো একটা ভেবে বললো , ওকে ফাইন ,আমি যাবো সেখানে , আপনার উপকার ভুলার মতো নয় আমি চাইনা এই গ্রুপের কোনো লস হোক ।
নাবিল কপাল কুঁচকে বললো ,আবার এসব বেহুদা কথা বলছো ,আমরা তো ফ্রেন্ডস তাইনা । আমার কিন্তু আবার খারাপ লাগলো।
আরিয়া মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বললো ,সরি আমি তো এমনি বললাম ।
নাবিল:আবারো সরি ,যাও তো তুমি খুব…
এটুকু বলতে আরিয়া হুঁ হুঁ করে হেসে বললো , আপনার এই বাচ্চামু গুলো ভালো লাগে আমার ।
এবার নাবিল ও হাসতে লাগলো ,
-তোমাকে হাসানোর জন্যই তো এমন করি আরু,কতো মিষ্টি দেখতে তুমি কিন্তু তুমি হয়তো কিছুই বুঝোনা। কবে তোমাকে নিজের করে পাবো আরু ? কবে বুঝবে? (মনে মনে)
ঠিক তিন টা বাজে মিটিং সবাই উপস্থিত হয়েছে , চৌধুরী গ্রুপ আর এসকে গ্রুপের সবাই এসেছে কিন্তু অপেক্ষা করছে আপাতত আফরানের জন্য,সবাই তো জেনেছে মি চৌধুরী এসেছে দেশে কিন্তু আসছেনা কেনো এখনো?
মিসেস শবনম প্রশ্ন ছুড়ে মারলো স্নেহার দিকে ,আফরান চৌধুরীর আসতে আর কতক্ষন লাগবে?
স্নেহা :ওয়েট ,
কথা টা বলতেই আফরান মিটিং রুমে প্রবেশ করে,আফরান কে দেখে এতোক্ষণ সবার মনে যেই প্রশ্ন নিয়ে বিড়বিড় হচ্ছিলো সবাই চুপসে গেলো । আফরান গিয়ে ঠিক স্নেহার পাশের চেয়ার টায় বসে ।
এখানে একজন মেম্বার বলে উঠলো ,তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক কি বলেন মি চৌধুরী?
আফরান সম্মতি দিলো।
তন্মধ্যে একজন বলে উঠলো ,মিসেস শবনম যিনি এই বিষয় টা নিয়ে খুব বেশি পজেসিব ছিলেন উনি কোথায়?
শবনম: মিটিং শুরু করেন ,প্রবলেম নেই এসে যাবে ।
আফরান এর মনে হয় পছন্দ হলোনা কথা টা । ইম্পর্ট্যান্ট সাবজেক্টে লেট আমার পছন্দ না , মিটিং আগামীকাল হবে ,বলে দাঁড়িয়ে যায় আফরান ।
পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো , মিটিং টা আপনার জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য ঠিক ততটাই বিরক্তিকর বিষয়।
কথা টা শুনতেই সবার চোখ যায় দরজার দিকে ।
চুল থেকে ছোট রাবার বেন্ট টা খুলে মায়ার হাতে দিয়ে চুল গুলো এক হাতে গুছাতে লাগলো ,শরীরের ব্লাক কোট টা মায়ার হাতে আছে আর হুয়াইট কালারের একটা শর্ট জামা , একটু শর্ট হাতা যেটা হাতের কনুই ছাড়িয়ে নিচের দিকে ঝুলে আছে ।ব্লাক পেন্ট পরা । হাতে ঘরির জায়গায় একটা ডায়মন্ডের ব্রেস লাইট পরা , সাদা কালারের পাথরে কাজ করা উঁচু হিলস্ পায়ে । মুখে ব্লাক মাস্ক পরেই এসেছে ,চোখেও চশমা তবে আজ ব্লাক চশমা জড়ানো,,
আচ্ছা কেউ কি এমন মিটিং এও মাস্ক পরে আসে?
নাকি কারো থেকে নিজেকে লুকানোর জন্য গেট আপ করেছে?
চুল গুলো ঠিক করে সোজা এসে খালি চেয়ার টার দিকে তাকিয়ে একবার ঢোক গিললো ,আফরানের পাশের চেয়ার টাই শুধু খালি আছে ,তবে এর পাশের টায় মিসেস শবনম বসেছে ।
শবনম:বসো শ্রাবনী ,লেট হচ্ছে তো।
শ্রাবনী : আপনি এই চেয়ার টায় আসুন ।
শবনম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফরান বলে উঠলো ,এখানে বসলেও কোনো প্রবলেম হবেনা ,ভদ্রতা এখনো শিখতে পারেননি দেখছি ।
সিনিয়র মেম্বার সিইউ এর সাথে এভাবে কথা বলাটা ঠিক মনে হলোনা কারো কাছেই ।
শবনম : আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না মি চৌধুরী ,, ভদ্র ভাবে কথা বলুন।
আফরান বাঁকা হাসলো কিন্তু কিছু বললো না ।
শ্রাবনী কথা না বাড়িয়েই বসে পড়লো তবে চেয়ার টা একটু শবনমের দিকে টেনে নিলো ।
আফরান ডান হাত টা টেবিলে ভর দিয়ে রেখে হাত টা উপরে তুলে ,ফলে হাতটা গাল স্পর্শ করে হালকা ,মুঠি বদ্ধ ভাবে ৫ টা আঙুল কচলাতে লাগলো বারবার ,একটু পরপর ঘারের রগ গুলো ভেসে উঠছে , কিন্তু যথেষ্ট নিজেকে সংযত করতে লাগলো ।
শবনম তার বক্তব্য তুলে ধরছে সবার সামনে । সবাই সেদিকেই মনো যোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছে ,
এবার আফরাধের কথা শুনতে চায় সবাই ,
আফরানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো উপস্থিত সবাই। আফরান সোজা সাপ্টা বললো ,কতো পার্সেন্ট শেয়ার চাই?
শবনম:শেয়ারের প্রশ্ন আসছে কিভাবে? জমিটা যেহেতু আমার নামে আছে সেহেতু এখানে বিল্ডিং হবেই , কিন্তু আমি জানতে চাচ্ছি আপনার প্রবলেম টা কোথায় এখানে? আপনার প্রোডাক্ট যদি ভালো হয় এতে তো আমার কম্পানি আপনার টা ছাড়িয়ে যাবেনা নিশ্চয়ই।
পাশ থেকে একজন বললো ,ইয়েস । মি চৌধুরী আপনি আপনার কথা জানিয়ে দিন।
আফরান আবারো বললো ,এখানে কোনো নতুন গ্রুপ বা ইন্ড্রাস্ট্রি হবেনা ,সোজা ভাবেই বলছি কতো পার্সেন্ট শেয়ার চাই? নয়তো ঐ দলিলের কাগজ দুটি বদলাতে আমার সময় লাগবেনা ।
পাশ থেকে শ্রাবনী বলে উঠলো :- ৭০ পার্সেন্ট শেয়ার ,কি দিতে পারবেন তো? নয়তো এখানেই আমাদের খ শাখা উঠবে।
শ্রাবনীর কথায় সবাই অবাক চোখে তাকায় শবনম বেশ কিছু টা অবাক হয় ,সেভেনটি পার্সেন্ট শেয়ার কেউ কোনো কালে দেবে নাকি আর আফরান চৌধুরীর ৭০ পার্সেন্ট মানে হাজার হাজার কোটি টাকা ,মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেছে?
আফরান : আবারো হালকা ঠোঁট বাঁকা হেসে আকস্মিক শ্রাবনীর চেয়ার টা ধরে টেনে নিজের দিকে এনে শ্রাবনীর কোমরে বা হাতে পেঁচিয়ে ধরে বললো , একদম পাক্কা প্লেয়ার আপনাদের সি ইউ দেখছি ।
আরিয়ার এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি যেটায় ঘৃনা হচ্ছে সেটা হলো আফরানের স্পর্শ্ব ,
যদিও টেবিলের একটু নিচে হওয়ায় কারো চোখেই পরেনি এখনো যে ,আফরান এভাবে ধরেছে তাকে । শুধু দেখেছে চেয়ার টেনে নিয়েছে কাছাকাছি।
আরিয়া নিজেকে সবার সামনে ঠিক রাখার চেষ্টা করে টেবিলের উপর থেকে হাত টা নিচে নামিয়ে আফরানের হাত টা সরানোর বৃথা চেষ্টা চালায় ,না পেরে চোখের চশমা টা টেবিলের উপর রেখে বলে ,হেয় , প্রবলেম কি আপনার?
আরিয়ার হঠাৎ কথায় কারো বোধগম্য হলো না ।
আফরান সোজা হয়ে বসে আবারো ভিলেনি হাসি দিয়ে বললো ,আমাকে বললেন?
আরিয়া বুঝলো এখানের কাউকে আপাতত কিছু বুজতে দিলে চলবেনা । -নাহ আপনাকে নয় ,এখন বলুন শর্ত মানছেন কিনা ।
আফরান: ওকে ,70 পার্সেন্ট ডান।
আফরান এর কথায় সবাই অবাক হলো,এটা স্বপ্ন নাহ তো ,?
শবনম যেন না চাইতেও বৃষ্টি পাওয়ার মতো হলো ,তার প্লেন তো ছিলো অন্য কিছু ,, নিজের প্রিয় মানুষ কে চোখে সামনে মরতে কেমন লাগে সেটা দেখানোর জন্য তো এতো প্লেন করে আফরান কে দেশে আনিয়েছে ,আরিয়া কে নিজের কম্পানির সব।থাপত্য দিয়েছে , কিন্তু হঠাৎ এই ৭০ পার্সেন্ট এর কথা শুনে তো সব ইচ্ছা মরে গেছে এসবের ,সারাদিন যদি চৌধুরী গ্রুপ থেকে ৭০ পার্সেন্ট শেয়ার পায় তবে তো …. কথাটা ভাবলেই তো নিজেকে মহারানীর জায়গায় বসাতে হয় । ,আপনি কি সিরিয়াস? নাকি মজা করছেন?
আফরান: আমাকে কি জোকার মনে হয় ?
আরিয়া ও বেশ অবাক হয় বেশ, এতো সহজে মেনে নিবে সেটা তো জানতো না,সে তো ভেবেছিলো নিশ্চয়ই এটা মানবে না দ্বিতীয় টাই মানবে কিন্তু অবাক করে দিলো কেনো ।
আরিয়া কে এখনো আফরান এভাবেই ধরে আছে আপাতত আরিয়া নড়ছে না এটা একটা মিটিং রুমে , প্রেস্টিজ আছে সব কিছু তে , কিন্তু কথা হচ্ছে আফরান চৌধুরী এতো নিচু মনের আজকে এখানে না আসলে জানতেই পারতো না , নিশ্চয়ই সব সময় এধরনের কাজ সব সময় করেই থাকে মেয়ে মানুষ পাশে বসলে , আচ্ছা উনি কি আমাকে চিনে ফেলেছে? কথাটা ভাবতেই ধুক করে উঠলো কলিজা টা । না তা কি করে হয় ,চিনলে এতোক্ষণে নিশ্চিয়ই মেরে দিতো,হাজার টা চর গালে পরতো।
সবাই কংগ্রেস জানিয়ে হাত মিলায় শবনমের সাথে ,আরিয়া ও মিলাতে যায় কিন্তু আফরান বলে উঠে ,ওহ মেম আপনার আঙুলে ওটা কিসের দাগ? নিশ্চয়ই ব্যাথা পেয়েছেন হেন্ডসেক করতে পারবেন তো?
আফরান এর এই সাধারন কথাটা আলিয়ার কাছে কেমন যেনো থ্রেট মনে হলো । কি হচ্ছে এসব? নাকি ভয় পেয়ে আছি বলে সব কিছু গুলিয়ে ফেলছি ? ।
মি মাফিয়া পর্ব ৩৭
শবনম আফরানের সাথে হাত মিলাতে চাইলে আফরান ধন্যবাদ জানিয়ে বললো ,আপনারা এখন আসতে পারেন ।
মিটিং শেষে সবাই উঠে দাঁড়ানোর আগেই আফরান আরিয়ার কোমর ছেড়ে দেয় ।
দ্রুত পায়ে আরিয়া ও দাঁড়িয়ে যায় চেয়ার থেকে ।