মি মাফিয়া পর্ব ৪৫ (২)

মি মাফিয়া পর্ব ৪৫ (২)
সুমাইয়া সাবিহা

তোর মতো ভিলেন মাফিয়া হতে চেয়েও আমি ওর কাছে হেরে গিয়েছি চাইলেই পারতাম জোড় করতে করিনি আমি তবুও যেহেতু পেলাম না .. কথা শেষ না করে নাবিল বাঁকা হেসে আচমকা হাতের বন্দুক টা চালিয়ে দেয় আরিয়ার দিকে ।
নাবিল এমন টা করবে আফরান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না , নিজের শরীর টাও আহত হয়ে আছে আসার সময় গাড়ি ছাড়াই এসেছে কতোবার যে হোঁচট খেয়ে পরে গিয়ে সেটার খবর কি আছে তার? মাথায় শুধু একটা জিনিস ই ঘুরপাক খাচ্ছে তার হ্যদপিন্ড যা ছাড়া সে অচল তাকে সেভ করতে হবে ,নাবিল ট্রিগার চাপতেই আফরান একবার” নো ” শব্দ করেই আরিয়া কে নিয়ে বামে সরে গিয়েও আহত হওয়া থেকে নিজে বাঁচতে পারেনি ,ঠিক পেটের ডান পাশটায় গুলিটা ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছে ।

তানভির সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাতের বন্দুক ব্যবহার করে ,নাবিলের ঠিক ডান হাতের মধ্যমা চিরে বেরোয় গুলিটা। নাবিলের হাত থেকে বন্দুক পরে যায় , কিন্তু তার ব্যাথার দিকে মোটেও খেয়াল নেই তার দৃষ্টি শুধু মাত্র আরিয়ার দিকে ।
আফরান আহত হয়েও আরিয়া কে হাত থেকে ফেলে দেয়নি উল্টো স্মীত হেসে আরিয়ার চোখে তাকায়। অথচ এই বুঝি এক্ষুনি পরে যাবে বুঝাই যাচ্ছে। হাতের বাঁধন হালকা হয়ে আসছে ।
আরিয়া আরো বেশি ঘাবরিয়ে চায় হঠাৎ আফরানের হাত হালকা হয়ে আশায় , আসলে আরু এখনো দেখেনি আফরানে পেটেও যে গুলি বিদ্ধ হয়েছে । আরু কাঁপা গলায় বললো ,আপনাকে আমার ঠিক লাগছেনা , কিছু হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন তো ?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আফরান এবার কপাল কুঁচকে মুখ ফিরিয়ে তানভীরের দিকে তাকায় । তানভীর ইশারা বুঝতে পেরে গার্ড গুলো কে ইশারা করতেই নাবিলকে জোড় করেই গাড়িতে নিয়ে তুলেছে নাবিলের দৃষ্টি এখনো আরিয়ার দিকে ।
লোক গুলো যেতেই তানভীর আফরানের কাছে দৌড়ে আসতে চায় কিন্তু আফরান চোখ ঘুরায় ,যার অর্থ একদম আসবিনা এখানে ।
কিন্তু তানভীর আফরান কে ভালো করেই জানে কি জন্য নিষেধ করেছে ,যদিও তার জন্য আগে ওখানে যাওয়াটা জরুরি তবুও জানে এটার থেকেও বেশি আফরানের কাছে আফরানের বউ জরুরি।
তানভীর দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে একটা গাড়ি নিয়ে আফরানের সামনে আসে ।
আরিয়া আফরানের কোল থেকে নামার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করছে কিন্তু আফরান নামতে দিচ্ছে না ।
আরিয়ার ও কি চলার মতো শক্তি আছে? তখন থেকে হাত থেকে রক্ত পরছে ।এই বুঝি জ্ঞান হারাবে ।
আফরান প্রথমে তানভীর কে নামতে বলে , কিন্তু তানভীর এই মুহূর্তে কিছুতেই একা ফেলে যাবেনা ,তাই ঠাঁই বসে আছে ।

আফরান বিরক্ত হয়েই পেছনের সিটে আরিয়া কে বসিয়ে নিজে উঠে বসে ,
আরিয়ার চোখে মাত্রই বিষয়টি পরেছে । আফরান কে এমন অবস্থায় দেখে আরিয়া হকচকিয়ে উঠে ক্ষত জায়গায় হাত রেখে বলতে লাগলো ,কি হয়েছে আপনার? কখন হলো? সত্যি করে বলুন গুলিটা লেগেছিলো তাইনা? কেনো বললেন‌না আমায় ? জিজ্ঞেস করেছিলাম না আমি । আরিয়ার চোখে পানি ।
আফরান একটু হাসার চেষ্টা করে কিন্তু তানভীরের কথা টা শুনে ভেতরে রাগ জমে,
তানভীর আরিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে ,ভাবি আপনার উড়নার কিছু অংশ ছিরে একটু স্যারের পেটে বেঁধে দিন জলদি ,এতো রক্ত ঝরছে আমার খুব ভয় করছে ভাবি , প্লীজ জলদি করুন একটু ।
আরিয়া সম্মতি জানিয়ে উড়না টা শরীরে থেকে খোলার জন্য হাত রাখতেই আফরান আরিয়ার হাত ধরে কাতর গলায় বললো ,একদম না ।

তারপর কোনো রকমে সিট থেকে হালকা উঠে সামনের দুটো সিটের মাছ দিয়ে হালকা মাথা ঢুকিয়ে তানভীর কে বললো ,মেরুরে গ্লাস টা ভাঙ।
তানভীর: স্যার এ কি করছেন? আপনি বসুন না জায়গায় ,এটা ভাঙতে যাবো কেনো?
আফরান দাত কিড়মিড়িয়ে বললো ,শুনবি নাকি আমাকেই করতে হবে ।
আরিয়া কান্না জড়ানো গলায় বললো : আপনি বসুন না প্লিজ, দেখুন না কি হয়েছে ,কত রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
আফরান আরিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে কিছু টা ঝুঁকে তানভীরের অপেক্ষা না করে আচমকা খালি হাতেই গ্লাসটা ঘুষি মারে ,কাঁচ গুলো খন্ড বিখন্ড হয়ে তানভীরের শরীরে পরে ।
তানভীর হঠাৎ এমন ব্রেক চেপে চোখ বন্ধ করে নেয় ।
এতে আরিয়ার মাথা টা হালকা বারি খায় সামনের সিটে ।
আফরান নিজের জায়গায় এসে বসে তানভীর কে বললো , ফার্স্ট।

তানভীরের যদিও তেমন কিছু হয়নি শুধু হাতের উপর টায় দুটো কাঁচের ধার লেগে ছিলে গেছে । এখন এসবে মন নেই গাড়ি স্টার্ট করেই আস্তেধীরে শরীর থেকে কাচ গুলো সরাতে থাকে ,তার বুঝা হয়ে গেছে আফরানের এমন টা করার কারন কি , মানুষ এতোটা কিভাবে জেলাসী নাকি সাইকো টাইপ হয় খোদাই জানে ।
আফরানের হাত থেকেও এবার রক্ত টিপটিপ করে পরে । আরিয়া কিছু বলার আগেই আফরান আরিয়ার উড়না টা শরীর থেকে নিয়ে এক সাইডে থেকে একটু ছিঁড়ে আরিয়া কে কিছু বলবে তার আগেই আরিয়া বললো ,আমি বেঁধে দেই দিন না । আপনি কি পাগল বলুন না । সত্যি করে বলুন , একে তো পেট চিরে রক্ত ঝরছে তার উপর এটা কিরকম ? এটা কেনো করলেন? গাড়ির গ্লাস টা এভাবে ভাঙার কোনো মানে আছে? নিজের ভালোটা দেখছি এখনো বুঝেন না।

আফরান আরিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে আরিয়ার যেই হাতে ছুরি দিয়েছিলো সেই হাত টা ধরে নিজের কাছে নিয়ে উড়নার অংশ টা সে স্থান টায় বেঁধে দিতে দিতে থেমে থেমে বললো , খুব মেরেছে? আর কোথায় ব্যাথা দিয়েছে বলো আমায় ।
আরিয়া নিজের হাত আফরানের কাছে থেকে সরিয়ে নিয়ে একটু চেঁচিয়ে বললো ,আমি এখন ছোট নেই ভাইয়া ,আমার কেয়ার করতে হবেনা এখন নিজের দিকে একটু দেখেন আগে ।
আফরান কিছু বললো না ,পিঠ টা সিটের সাথে এলিয়ে দিয়ে একহাত সিটের উপরের মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে মাথাটা কাত করে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অন্য হাত রক্ত স্থানে ধরা।
আরিয়ার শরীর কাঁপছে ঠান্ডা নাকি ভয় সেটা বুঝা যাচ্ছে না ।

উড়না টা আরেকটু ছিরে প্রথমেই আফরানের পেটে ক্ষতস্থান থেকে হাত টা সরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,এতো রক্ত…. এটুকু বলেই ঠোঁট উল্টে একটু আওয়াজ করেই কাঁদতে লাগলো ,আবার নিজেই চোখ মুছে আফরানের কালো শার্ট টা নিচ থেকে একটা বোতাম খুলে একটু উপরে উঠিয়ে আফরান কে ধরতে বললো , আফরান আগের মতোই শব্দহীন।
আরিয়া কান্না মিশ্রিত গলায় বললো: প্লীজ ধরুন না আগে এটা, তারপর যা করার বা যা কিছু বলার বলবেন ।
আফরান এর তবুও মুখে কথা নেই ।
আরিয়া এবার আফরানের জন্য অপেক্ষা না করে শার্টের সব গুলো বোতাম খুলে উন্মুক্ত করলো পেট সাথে শরীরের অগ্রভাগ সব টাই প্রকাশিত।

আরিয়া জলদি করে সেই জায়গায় উড়না টা বাঁধতে শুরু করে। আফরান ও আরিয়ার সুবিধার জন্য একটু সামনে আসে যেনো পেছন দিক থেকে কাপরের টুকরো টা টানতে কষ্ট না হয় ।
আপাতত একটু রক্ত টা কম যাচ্ছে তবুও যেনো উড়না ভেদ করে রক্তের হালকা আভা প্রকাশিত হচ্ছে।
তারপর আফরানের ডান হাতেও বেঁধে দিয়েছে ,একটু আগে গ্লাস টা ভাঙার ফলে যে ক্ষত হয়েছিলো সেখানে ।
– আপনি কি কোনো দিন ঠিক হবেন না ভাইয়া ? এমন কেনো আপনি? নিজের ভালোটা কবে বুঝবেন বলবেন আমায় প্লীজ।

– আফরান হালকা হেসে শরীরে জরানো শার্ট টা খুলতে লাগলো।
– আরিয়া: খুব ঠান্ডা লাগছে? এসে গেছি আর একটু ধৈর্য ধরুন প্লিজ।
– আফরান কথা না বাড়িয়ে শার্ট টা খুলে আরিয়ার উরুর উপর শার্ট টা রেখে বললো ,পরে নে ।
– আরিয়া: এটা কেনো …. কিছু একটা প্রশ্ন করতে গিয়ে আবার থেমে যায় , এমনিতেই নিশ্চিত কপালে দুঃখ আছে এখন যদি প্রশ্ন করি তবে তো ….
– আর কিছু না ভেবেই শার্ট টা পরে নিলো আরিয়া ।
তানভীর এতোক্ষণ চুপ ছিলো তার বুঝা তখনি হয়ে গিয়েছে কথা বলা মানেই নিজের সর্বনাশ করা । হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে বললো ,স্যার !

মি মাফিয়া পর্ব ৪৫

আরিয়া গাড়ি থেকে নেমে আফরানের ঐ পাশে গিয়ে দরজা খুলে দেয় ,আফরান যে শক্তি হীন হয়ে একদম দুর্বলতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা আরিয়া এতোক্ষণ দেখেছে । তাইতো চটজলদি নেমে দরজাটা খুলে দিয়ে তানভীর কে ডাকলো ধরার জন্য।

মি মাফিয়া পর্ব ৪৬