মি মাফিয়া পর্ব ৪৬

মি মাফিয়া পর্ব ৪৬
সুমাইয়া সাবিহা

আরিয়া গাড়ি থেকে নেমে আফরানের ঐ পাশে গিয়ে দরজা খুলে দেয় ,আফরান যে শক্তি হীন হয়ে একদম দুর্বলতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা আরিয়া এতোক্ষণ দেখেছে । তাইতো চটজলদি নেমে দরজাটা খুলে দিয়ে তানভীর কে ডাকলো ধরার জন্য।
কি হলো স্যার জলদি আসুন টা কি অবস্থা হয়েছে দেখেছেন ,কতোটা ব্লিডিং হয়েছে ।
আরিয়া ও অপর পাশে ধরে আছে অথচ আফরান গাড়ি থেকে নেমে আরিয়ার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে সামনে এগুচ্ছে না ,,,
আরিয়া কাঁদো গলায় আফরানের ক্ষত পেটের দিকে তাকিয়ে বললো, হঠাৎ কি হলো আবার চলুন না দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

আফরান আকস্মিক তানভীরের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে আরিয়ার ডান হাত টা ধরে গাড়ির দরজা টা খুলে ধপ করে ভেতরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দরজা লক করে দেয়। সব গুলো দরজা একে একে লক করে দিয়ে বাঁকা হাসে ।
বিষয় টা এতোটাই আকস্মিক আর তারা তারি হয়েছে যে কারো কিছু বুঝে আসার আগেই আফরান এর কাজ শেষ ।
আরিয়া নামতে যায় কিন্তু দরজা খুলছে না । বারবার দরজা ধাক্কিয়ে চেঁচিয়ে কিছু বলে যাচ্ছে একাধারে কিন্তু সেটা কি বুঝা গেলো না কারন আরিয়ার আওয়াজ বাহির পর্যন্ত আসছেনা ।
তানভীর:স্যা..র ! এটা কি করলেন? এভাবে ভাবি কে….
তানভীর কে শেষ করতে না দিয়ে আফরান বললো , ডঃ কে ডাক ,আর হাঁটতে পারছিনা ফার্স্ট।
আফরানের শরীর কতোটা দুর্বল হয়েছে সেটা আফরান কে দেখে না বুঝা গেলেও তানভীর ঠিকই বুঝেছে নয়তো আফরান কখনো নিজের দুর্বলতা এমন করে প্রকাশ করতো না ,ফটাফট ফোন করে ডঃ কে বেড নিয়ে আসতে বলেছে ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আফরান দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে একটু সাইড করে জায়গায় বসে পড়লো। তারপর গাড়ির দিকে চোখ রাখলো ।
আরিয়া এখনো গ্লাস ধাক্কিয়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে কিছু না কিছু। কিন্তু আফরান এর কোনো চেন্জ আপ নেই ফেইসে একদম স্বাভাবিক।
আরিয়া আফরানের দিকেই তাকিয়ে আছে আর চোখের জল ফেলছে ।
এর মধ্যেই ডঃ আসে ।

তানভীর আফরান কে হসপিটালে ফ্রম করে দিয়ে গাড়িতে এসে বসে স্টার্ট দিতেই আরিয়া বলে উঠলো ,,ভাইয়া প্লীজ আমাকে নামিয়ে দিন না ,
তানভীর:স্যার বারন করেছে এর ব্যাতিক্রম করতে পারবোনা ।
আরিয়া কান্না গলায় বারবার রিকোয়েস্ট করলেও তানভীরের একই উত্তর,স্যারের নির্দেশ ভাঙতে পারবেনা এতে আরিয়ার জন্য ভালো আর নিজের জন্য।
তানভীরের গাড়ি এসে চৌধুরী বাড়ির গেটের সামনে থামে ,আরিয়া ও এখন আপাতত চুপ আছে আর বলেও লাভ নেই ,

তানভীর:আপনি চলে যাবেন নাকি দিয়ে আসবো ভাবি ?
আরিয়া: চলে যান আমি যেতে পারবো ।
তানভীর সম্মতি দিয়ে চলে যায় গাড়ি নিয়ে ।
আরিয়া চোখের জল মুছে বাড়ির সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজাবে ঠিক সেই মুহূর্তে আয়শ পেছন থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো ,আরু!
আরিয়া একটু কেঁপে উঠে হঠাৎ আওয়াজ শুনে কিন্তু পেছনে ফেরে আয়শ কে দেখে ভয়টা কেটে যায়।
আয়শ ভেজা শরীরে দৌড়ে এসে আরিয়া কে বলতে লাগলো ,এভাবে কোথায় চলে গিয়েছিলি হ্যাঁ ? কেনো এমন করেছিস? এতো গুলো বছর দুরের থেকে কি লাভ হলো তোর? কারো কথা কি মনে পরেনি ? এতোটা নির্দয় নিষ্ঠুর তো তুই ছিলি না ।
আরিয়া স্বাভাবিক শান্ত ভাবে বললো , এসব নিয়ে প্লীজ এখন কথা বলতে চাচ্ছি না ভাইয়া ।
আয়শ ভাবছে হয়তো আপসেট আছে তাই কথা না বাড়িয়ে বললো ,ঠিক আছে ভেতরে চল পরে এসব নিয়ে …. এটুকু বলে আরিয়ার হাতে চোখ পড়লো উড়নার উপর দিয়েও পানির সাথে মিশে কালার হীন বৃষ্টির পানি লাল হয়ে টপকে পরছে ।

আয়শ আরিয়ার হাত ধরে হকচকিয়ে বলতে লাগলো ,এসব ই আরু? কে করেছে? আয়শ আরো কিছু বলতে গিয়ে আটকে যায় কারন আরিয়া আয়শ থেকে নিজের হাত দ্রুত সরিয়ে বললো ,বললাম তো পরে এসব নিয়ে কথা হবে ,
আরিয়ার ব্যাবহার আয়শের কাছে একটু অন্য রকম লাগলো ,আগের সেই আরিয়ার সহজ সরল ব্যবহারে কেমন যেনো পরিবর্তন হয়ে গেছে ।
আরিয়া সামনে ফিরে কলিং বেল বাজালো ।
তারপর আবার আয়েশের দিকে ফিরে বললো ,একটু হসপিটাল যাবেন প্লীজ?

আয়শ : হাতে বেশি লেগেছে? অনেক রক্ত বের হচ্ছে হসপিটাল গেলেই ভালো হবে চলো জলদি ।
আরিয়া: আমার জন্য নয় , আ’ ম ওকে । উনার অবস্থা খুব বাজে ভাবে অস্বাভাবিকতায় চলে গেছে ভীষণ। আফরানের কথা মুখে নেওয়ার সাথে সাথে আরিয়ার গলা ভেজা হয়ে আসে ।
আয়শ প্রথমে না বুঝলেও পরমুহূর্তেই বুঝে আসে আরিয়া কার কথা বলছে ,- কি হয়েছে আফরানের ? জলদি বল । কোথায় ও?
আরিয়া: হসপিটাল আছে গুলি লেগেছে ,অনেক রক্ত ঝড়েছে আমার মনে হচ্ছে উনার রক্তের প্রয়োজন হবে । আমাকে যেতে দেয়নি কিন্তু আপনি যদি যেতেন তাহলে….
আয়শের কলিজা টা মনে হয় কেঁপে উঠে,আফরান হসপিটাল কথা টা শুনে,অনেক তো দেখেছে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বাড়ি চলে এসছে , কিন্তু কোন পর্যায়ে গেলে হসপিটাল যাবে আফরান , সেটা বুঝে গেছে আয়শ ।

– আমার সাথে যেতে চিচ্ছিস?
– আরিয়া: উহুম,আর হার্ট করতে চাইনা কাউকে । আপনি একটু জলদি যান ।
– আয়শ এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি নিয়ে এমন ভেজা অবস্থায় বের হয়ে যায় ।
দরজা খুলে দিলে আরিয়া ভেতরে যেতেই সার্ভেন্ট পাশ থেকে বলে উঠলো ,আরিয়া আপামনি আর.. আপনি। আমি ঠিক দেখছি তো ? নাকি স্বপ্ন?
আরিয়া আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছে না । তাই ছোট উত্তরে বললো , কথা বারিও না চাচা ঘুমাচ্ছে?
সার্ভেন্ট খুশিতে চোখ মুছতে মুছতে বললো ,হে আপামনি বড় সাহেব ঘুমাইতাছে । আপনি এতো দিন কি ছিলেন? কতো জায়গায় খোজেছে আপনাকে সবাই জানেন । কোনো জায়গা বাদ নেই যেখানে আপনাকে….
আরিয়া : এগুলো এখন শুনতে চাইনা । বলে আরিয়া উপরের চলে গেলো ।
সার্ভেন্ট খুশিতে নিজেই বলতে লাগলো ,কালকে যখন সবাই জানবে আরিয়া আপামনি ফিরা আইসে সবাই কত খুশি হইবোনে । কিন্তু আপামনি এতোডা দিন কি ছিলো?

আরিয়া উপরে গিয়ে প্রথমেই নিজের সেই আগের রুম টায় ঢুকলো কিন্তু নেই কিছুই । আগের মতো নেই , ফাঁকা রুম পুরো । তাই ওখানে আর না থেকে আফরানের রুমে গেলো । রুমের দরজা খোলা দেখে একটু অবাক হলেও আপাতত আরিয়ার এই মুহূর্তে নিজেকে হার্টবিট ছাড়া মানুষ এই মনে হচ্ছে,কোনো অনুভূতি নেই নিজের মধ্যে।
ভেতরে গিয়ে প্রথমে কবার্ড খুলে আফরানের একটা টিশার্ট নিয়ে আর একটা আফরানের পেন্ট হাতে নিয়ে শাওয়ারে ঢুকলো , কিন্তু পানি টা ছাড়তেই কেমন যেনো নিজের ভেতরে সব টা কষ্ট বেড়িয়ে এলো দুমিনিট পর । খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে আজ তবে নিজের জন্য নয় ,তার জন্য আফরান এর অবস্থার কথা ভেবে । দুহাতে মুখ চেপে ধরে কেদে যাচ্ছে আরিয়া । কিন্তু আজ কেনো এমন লাগছে নিজেকে? তার থেকেই তো পালতে চেয়েছিলাম তবে কেনো আবার তার জন্যই? আচ্ছা উনি কিভাবে জানলেন আমি ওখানে আছি? আচ্ছা উনি কি আগে থেকেই জানেন? আমাকে নজরবন্দি করে রেখেছে আগে থেকেই? নয়তো জানলেন কিভাবে আমি শবনমের হাতে ।
আমি ভুল করেছি তাইনা , ঐ মিসেস শবনমের কাছে গিয়ে আমি ভুল করেছি এতোটা তীব্র ঘৃনা আমার ভেতরে চেপে ছিলো যে ,কোন টা ভুল কোনটা ঠিক সব টা গুলিয়ে ফেলেছিলাম । কিন্তু ভাইয়াও তো ঠিক ছিলোনা তবে কেনো মনে হচ্ছে ভাইয়া ভুল করেও ঠিক ?

হঠাৎ করেই কেউ একজন আরিয়ার উপর ঝাপিয়ে পড়লো ,আরিয়া হকচকিয়ে উঠে বলতে লাগলো , What is happening here? ….?কথা টা বলেই চোখ খুলে সামিরা কে দেখে স্তব্ধ হলো আরিয়া ,ভুলেই গিয়েছিলো সে এখন ঠিক আগের পজিশনে আছে ।
সামিরা আরিয়া কে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো ,কেনো চলে গিয়েছিলি? কোথায় ছিলি? এতোটা স্বার্থপর কেনো হলি? কিভাবে পারলি আরু?
আরিয়া কি বলবে তার জানা নেই , তবে এই মুহূর্তে হঠাৎ করেই আফরানের কথা মাথায় রেখে বসেছে ,বসা থেকে উঠতে গিয়েও পারলো না,কারন সামিরা আবারো ঝাপ্টে ধরেছে ,
আরিয়া: আরে ছাড়না এসব পরে হবে ,ভাইয়া কেমন আছে এখন? হসপিটাল থেকে এসেছে?
সামিরা: কার কথা বলছিস? কে হসপিটালে?
আরিয়া: উনি ,মানে ভাইয়া ।

সামিরা: আফরান ভাইয়ার কথা বলছিস? উনি কোথায় থাকে জানিনা তো , কিন্তু তুই তো দেখছি ফিরে এসেই ভাইয়ার রুম দখল করে নিয়ে আবার ভাইয়ার ড্রেস ও নিজের বানিয়ে নিলি।
আরিয়ার এই মুহূর্তে কারো কথাই ভালো লাগছে না ।
আরিয়া : আয়শ ভাইয়ার নাম্বার আছে তোর কাছে?
সামিরা : আমার কাছে নেই তো বাবার কাছে থাকবে , কিন্তু কেনো কিছু হয়েছে? এমন করছিস কেনো?
আরিয়া সামিরা কে ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নামতে নামতে বললো , নিজের হাসব্যান্ড এর নাম্বার নেই তাহলে কি আছে তোর কাছে ? চাচা কি রুমে আছে?
সামিরা: বাবা তো নেই ,ফোন করেছিলো তুই নাকি ফিরে এসেছিস ,আমি তো শুনেই জলদি করে চলে আসলাম। আর কিছু জিজ্ঞাসা ও করিনি।
আরিয়া নিজের হাতের দিকে তাকালো টাইম দেখার জন্য কিন্তু হাতে তো ঘড়ি নেই বিরক্ত হয়ে সামিরা কে জিজ্ঞেস করলো ,কয়টা বাজে?

সামিরা : এমন করছিস কেনো? এসেছিস কারো কথা জিজ্ঞেস ও করলি না ,মা বাবার কথা জিজ্ঞেস করতে পারতি একবার অন্তত। অথচ যার জন্য চলে গিয়েছিলি তার কথাই জিজ্ঞেস করে যাচ্ছিস ।
আরিয়ার হঠাৎ বুক টা কেঁপে উঠলো মা বাবার কথা মনে আসতেই ।
– মা বাবা বেঁচে আছে?
– সামিরা অবাক হলো , আচ্ছা আরু কি চেন্জ হয়ে গিয়েছে সত্যিই? যাওয়ার পর কি একবারও কারো খবর রাখেনি গোপনেও।
– আরিয়া: কি দেখছিস? আফরান ভাইয়া তো কউকে ছেড়ে দেয়না পাথর মানুষ, নিশ্চয়ই আমি যাওয়ার পরে মেরে দিয়েছে তাইনা ।

– সামিরা আরও কিছু টা অবাক হয়ে বললো , আফরান ভাইয়া তোর মা বাবাকে কেনো মারতে যাবে?
– আরিয়া: কেনো পারবেনা? যিনি কিডনেপ করতে পারে আত্মীয় দের তিনি অবশ্যই এটাও পারবে তাইনা?
– সামিরা: আরু তুই কি বলছিস? ভাইয়া কেনো কিডন্যাপ করবে?
– আরিয়া বুঝলো বেঁচে আছে নাহলে সামিরা এমন অবাক হতো না ।
সামিরা: কি হলো বল,তোর কেনো মনে হলো যে ভাইয়াই কিডন্যাপ করেছিলো।
আরিয়া: সেদিন যখন বাড়ি গিয়েছিলাম আমার আগেই উনি বাড়িতে গিয়েছিলেন আর মা বাবা তো ছিলো না সো ইটস প্রুভ তাইনা।
সামিরা: তোর প্রুভ তোর কাছেই রাখ আরু,ভাইয়া তোর মা বাবা বোন কে ঐ স্নেহার হাত থেকে বাঁচিয়েছে।আরু তুই ভুল বুঝছিস।

আরিয়া একটু নয় অনেক টাই আশ্চর্য হয়ে বললো ,ওয়াটস রং সামিরা ।কি বলছিস হ্যাঁ? ঐ মেয়ে আমার মা বাবাকে কেনো কিডন্যাপ করাবে ,আমার কি ঐ মেয়ের সাথে কোনো যুগের শত্রুতা ছিলো?
সামিয়া : দেখ আরু তুই সেই ভুল নিয়েই এখনো বসে আছিস ,তোর সাথে শত্রুতা ছিলোনা ঠিকই কিন্তু ঐ মেয়ে ভাইয়াকে চাইতো কিন্তু যখন জানতে পারে ভাইয়া তোকে পছন্দ করে তখন প্লেন বানিয়ে তোর মা বাবাকে আটকায় তারপর ভাইয়াকে ব্লাক মেইক করে ,তার জন্যই সেদিন ভাইয়া ঐ মেয়ের সাথে এঙ্গেজড করতে বাধ্য হয়েছিলো ,সেটা সেদিন আমরা কেউ না বুজতে পারলেও যখন তুই চলে গিয়েছিলি তার দুদিন পর তোর মা বাবা কে ঐ ভাইয়ার এসিস্ট্যান্ট তানভীর তোর মা বাবা কে ভালোভাবে ফিরিয়ে আনে তারপর সব আমরা জানতে পেরেছি আরু।

আরিয়ার মাথায় যেনো বাজ পরলো ,সব কিছু তার জন্য ছিলো? উনি সত্যি আমার ভালোর জন্যই এসব করেছিলেন? তবে কি আমি এতো গুলো দিন ভুল বুঝে এসেছি উনাকে?
আরিয়া একটু নরম গলায় বললো : সামিরা তুই কি সত্যি বলছিস? এসব সত্য?
সামিরা : তোর কি মনে হচ্ছে আমাকে দেখে ফাজলামি করছি? তুই জানিস তোর চলে যাওয়ার পর সবার কি অবস্থা হয়েছিলো?মানলাম ভাইয়া একটু সাইকো টাইপ আই মিন সামান্য তে রিয়েক্ট বেশি করে কিন্তু তাই বলে চলে যাবি এভাবে? ভাইয়ার মতো এতো বড় একজন সাইকো কিলার মানুষ যে কিনা কোনো নারীর স্পর্শ ছাড়াই নিজের এতো গুলো বছর কাটিয়েছে সেখানে তিনি তোর প্রতি কতোটা দুর্বল হলে বিয়ে করেছে । আর ভাইয়া যদি তোকে ভালো না বাসতো তবে কি বিয়ে করতো ? উনার আশে পাশে কি কম পেয়ে পরে আছে?
আচ্ছা মানলাম ভাইয়ার ব্যাবহার তোর একদম ধৈর্যের সীমা অতিক্রম ছাড়িয়েছে ,তাই বলে আর কারো কথা ভাববি না? আমরা কি তোর কেউ ছিলাম না? বাবার (জাফর)কথা ভাবলি না একটু আরু?তোকে কতোটা মায়া মমতা দিয়েছে ।

আচ্ছা চলে গিয়েছিস রাগে ,তাই বলে রাগ টা এতোটাই ছিলো যে একটু খবর নিবিনা? এভাবে পরিবর্তন করে নিবি নিজেকে? সামনে এসেও পরিচয় দিবি না?
কথা গুলো বলতে বলতে সামিরার চোখ থেকে জল গড়িয়ে চিবুক পেরোয়।
আরিয়া যেনো এই মুহূর্তে কিছু ভাবতে পারছেনা ,,চোখের কোনায় হালকা পানি জমে ।
সামিরা : এখন বুজতে পারছি ভাইয়া কাল তোকে কেনো আটকিয়ে রেখেছিলো। ভাইয়া তোকে আগেই চিনেছে এই কারনে । নয়তো ভাইয়া এমন করে আটকিয়ে রাখতো না কোনো মেয়েকে ।
আরিয়া আরেকটু ধাক্কা খেলো মনে হয় । চোখ টপকে পানি জামার উপর এসে পরে , আরিয়ার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে । হাত দিয়ে জল মুছতে মুছতে ঠিক বাচ্চাদের মতো বললো,কিসব বলে যাচ্ছিস সামু ,, ইচ্ছে করে বলছিস তাইনা আমাকে দুর্বল বানানোর জন্য। নয়তো উনার সাথে আমার বিয়ে কখন হলো ? এসব তো মিথ্যা,তার মানে তোর প্রতিটা কথাই মিথ্যা।

সামিরা: আমাকে দেখে তোর এখনো মিথ্যে মনে হচ্ছে? আরু তুই কি সত্যিই জানিস না কিচ্ছু? ভাইয়া তোকে বলেনি কখনো ? তোদের বিয়ে হয়েছে এটা তুই আজ জেনেছিস?
আরিয়া দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে বললো: অনেক হয়েছে নাটক বাদ দে ,যেমন আছি থাকতে দে । ফ্রেস হবো এখান থেকে যা । কথা টা বলে আরিয়া খাট থেকে উঠতে যায় তখনি সামিরা বলে উঠলো ,মনে আছে তোর সেদিন রাতের খাবার টেবিলে ভাইয়া তোকে দিয়ে সাইন করিয়েছিলো প্যাপারে,তোর বাবারও সাইন নিয়েছিলো । ঐসব প্যাপার গুলো কি ফালতু কাগজ ছিলো তোর মনে হয়? এমন কি আছে যেটা ভাইয়া তোর থেকে নিয়ে যাবে সাইন করিয়ে ,বল । এর উত্তর আছে তোর কাছে? জানি নেই ,কারন ঐ গুলো তোর আর ভাইয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো আরু। এটা তুই কেনো বুঝলি না? অথচ তোর বাবা মা আমরা সবাই জানি এটা ।
আরিয়ার এখন কি করা উচিত? আসলেই তো আমার থেকে ভাইয়ার কি নেওয়ার আছে এমন , সত্যিই বিয়ে হয়েছিলো ? যদি তাই হয় তবে বলেননি কেনো আমায়? আমি তো জিজ্ঞেস করেছিলাম ।
তাহলে সেদিন রাতে যা হয়েছিলো সব টা উনার অধিকার…..
কিন্তু এমন আচরন করেছিলেন কেনো? আমাকে বললেই তো হতো , নাকি এর পেছনেও কোনো কারন আছে যেটা আমার জানা নেই ?

আরিয়ার নিরবতা দেখে সামিরাও খাট থেকে দাঁড়িয়ে আলিয়ার সামনে গিয়ে বললো , এখনো কি নিজের মুড নিয়েই থাকবি? আগের কোনো ফিলিংস ই কি তোর মধ্যে থেকে হারিয়ে গিয়েছে আরু? বল না । আমাদের কে কি এখনও তোর কাছে পর মনে হয়? বল আরু।কিভাবে পারলি রে ….
আরিয়া হঠাৎ সামিরা কে জড়িয়ে ধরে কাঁপা গলায় বলতে লাগলো: সামু পাগল তুই , বিশ্বাস কর আমাকে দেখে যতৈটা স্ট্রং মনে হয় আমি ততটাই ভেতরে ছটফট করি । প্রতিটা মুহূর্ত সবাইকে খুব মিস করেছি কিন্তু আমি কি করবো ,আমার সাথে সেদিন রাতে ভাইয়া….. এটুকু বলে থেমে যায়।
সামিরাও আরিয়া কে শক্ত করে ধরে বলতে লাগলো ,বল তারপর ,কি করেছে ভাইয়া ? অনেক বার মেরেছে এমন কি অনেক আঘাত দিয়েছে তোকে দেখেছি আমরা কখনো তো এমন চলে যাওয়ার কথা ভাবিসনি তবে কেনো সেদিন..

আরিয়া: জানিনা কিছু তবে আমি সহ্য করতে পারিনি আর সেদিন রাতের ব্যাবহার টা , বিশ্বাস কর আমি জানতাম না এতো সব ।
সামিরা এবার কান্নার মধ্য দিয়েই একটু শব্দ করে হেসে বললো ,হয়েছে ,তুই নিজেও তো একটা ভাইয়ার কপি ,নয়তো এতো গুলো দিন কিভাবে থাকতে পেরেছিস সবাইকে ছাড়া ।
আরিয়া এবার সামনে এসে সামিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,মিস ইউ ইয়ার। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে এই কান ধরলাম । বলে আরিয়া নিজের কানে হাত রাখলো । সামিরা হুহু করে হেসে দিলো ,দরজার কাছ থেকে কেউ বলে উঠলো ,এতো দেখছি আমাকে ছাড়াই আড্ডা জমিয়ে বসে পরেছে ,বাহ বেশ ভালো তো ।
আরিয়া সামিরা মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আরেকবার শব্দ করে হাসলো ।
প্রেমা দৌড়ে এসে প্রথমে আরিয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো ,এমন মারবো না আবার দ্বিতীয় বার যাওয়ার কথা মনে হলেই শরীরে লোম কাটা দিয়ে উঠবে ।

মি মাফিয়া পর্ব ৪৫ (২)

আরিয়া: এতো দেখছি ভাইয়ার মতো ডায়লগ দিচ্ছে সামু ।
সামিরা : ও ,এখন বুজলাম ভাইয়া কেনো এই ধরনের হুমকি দেয় তোকে ।
আরিয়া: একদম বাজে কথা বলবি না ।
প্রেমা: ঠিকই তো বলেছে । ভাইয়া তোকে শুধু শুধু যে , বকা দেয়না এটার প্রমাণ আবারো হয়ে গেলো দেখলি । তারপর……

মি মাফিয়া পর্ব ৪৭