মি মাফিয়া পর্ব ৫০ (২)
সুমাইয়া সাবিহা
আরিয়া সন্ধ্যা বেলা মন খারাপ করেই বসে ছিলো কতোবার কল দিতে চেয়েছে কিন্তু সাহস হয়নি ,সবাই যখন গেম টা শুরু করে আরিয়া খেলবে না বলে উপরে এসে সোজা আফরানের রুমের কাছে আসে,দরজা খোলা পেয়েই ঢুকে পরে উৎফুল্ল হয়ে , কতোদিন হয় এই রুম টা দেখার হয়না তার ,আগের মতোই আছে রুমটা ,আগের মতো গুছানো,ফ্রিজ টাও দুচারটা বিয়ারের বোতল ছাড়া আর কিছু নেই । ছাদের মতো বিশাল বারান্দা টাও একটু ঘুরেছিলো কিন্তু শীতল হাওয়া শরীরে পরতেই কিছু সময় পর চোখে ঘুম চলে আসে তাই এতো কিছু না ভেবে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিলো ।
আফরান একটু সামনে গিয়ে আরিয়ার শরীরের উপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে দিয়ে ডান হাত টা ধরে ঘুমের মধ্যেই এক টানে বসিয়ে ধমক দিয়ে বলতে লাগলো ,,আমার রুমে আসার অনুমতি কে দিয়েছে তোকে ? এখুনি বের হয়ে যা ।
আরিয়ার কোনো হদিস হলো না আসলে কি হচ্ছে বুঝার মতো টাইম তো পেলোনা , কাঁচা ঘুম ভাঙলে কি কারো দিশা থাকে কোথায় আছে? কি করছে ?আরিয়ার ও সেইম অবস্থা।
আফরান এবার দুবাহু ধরে বাচ্চাদের মতো করে দুহাতে তুলে নিচে দাড় করিয়ে দিলো ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিয়ার এতোক্ষণে বুঝশক্তি আসলো ,সামনে আফরান কে দেখেই ভয়ে দুই পা পিছিয়ে গিয়ে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু আফরান আরিয়া কে কিছু বলতে না দিয়ে আরিয়ার দিকে হিংস্র দৃষ্টি ফেলে বললো,একদম একটা কথাও মুখ দিয়ে বলার চেষ্টা করবি না ,যেভাবে এসেছিস সেভাবে বের হয়ে যা ,আমার রুমে যেনো আর কখনো না আসতে দেখি নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে । নিশ্চয়ই আমার দেওয়া শাস্তির কথা ভুলে যাসনি।
আরিয়া আফরানের প্রতিটা ধমকে কেঁপে উঠে ভয়ে ,ভেবেছিলো কথা বলে মিটিয়ে নেবে কিন্তু এই লোকটা এমনভাবে রাগ দেখাবে কে জানতো ।
আফরান আবারো উচ্চ স্বরে ধমক দিয়ে বললো,বের হয়ে যা ,কি বললাম শুনিসনা ?
আরিয়ার শরীরের কাপুনী এবার প্রখরতা লাভ করে । গুটি গুটি পায়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য সামনে এগুচ্ছে,,,আফরানের এই ধীরস্থতা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না তাই ডান হাতের বাহু চেপে ধরে তিন কদমে দরজার সামনে গিয়ে ঠাস … মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয় ।
আফরান রি রি করতে করতে জায়গা থেকে এসে খাটের উপর বসে ব্যাথার জায়গায় ডান হাত রেখে ,ওহ ..ব্যাথা জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করলো । তারপর শরীর থেকে শার্ট টা খুলে কোন দিকে ছুড়ে মারলো তার জানা নেই ,খাট থেকে উঠে গিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইলো চোখ বন্ধ করে । মাথা তীব্র গরম হয়ে আছে ,
আচ্ছা এটা কি রাগের কারনে নাকি অন্য কোনো কারনে? আফরান এর জানা নেই তবে ঐ মেয়ের সাথে ওর বুঝা পারা নেই এটাই ভেবে নিয়েছে ।
ঠিক দুপুরে সামিরার ঘুম ভেঙে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলো গাড়িতে ,সাথে প্রেমাও আছে । যেনো কোনো কিছুই বুঝলো না,বারবার জিজ্ঞেস করেছিলো সে কি গাড়িতেই ঘুমিয়েছে এতোক্ষণ,নাকি ইচ্ছে করে নিয়ে আসেনি আয়শ ।
আয়শ কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উত্তর দিয়ে কথা কাটিয়ে দেয় । প্রেমা কেও জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু প্রেমার কাছে কোনো উত্তর ছিলো না।
সামিরা বেশ বুঝেছে নিশ্চয়ই আয়শ মজা নিচ্ছে ইচ্ছে করে ।প্রেমার সামনে যেনো অপদস্থ না হতে হয় তাই তেমন কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি ।
প্রেমা আসার পর সাদেক কে দেখলেও যেহেতু ইচ্ছে করে কথা বলেনি সাদেক তাই নিজেও বলেনি ।তবে এই বিষয় টা কারো চোখেই পরেনি ,কারন যতক্ষণ ছিলো সবার সাথেই ছিলো আড্ডায়।
প্রেমা : আপনি কিছু মনে করবেন না ,আসলে লোকজন আছে তো তাই থাকতে হচ্ছে নয়তো আমিও আসতাম না ট্রাস্ট মি।
সাদেক: আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি ?
প্রেমা : না মানে যদি কিছু মনে করে থাকেন তাই বলে দিলাম আর কি ।
সাদেক কথা বাড়ালো না ।ওয়াশ রুমে ঢুকলো
ফ্রেস হয়ে এসে কিছু একবার চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে বললো ,তোয়ালে টা খুজে দেবে একটু?
প্রেমা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কবার্ড খুলে একবার দেখে নিলো , গেস্ট রুম বিধায় এতোটা জিনিস পত্র নেই ।
ঠিক নিচের তাক টায় তোয়ালে টা ছিলো প্রেমা সেটা নিয়ে সাদেকের দিকে বাড়িয়ে দেয় ।
সাদেক নিস্বংকুচে সেটা নিয়ে ভেজা স্থান গুলো মুছে নিয়ে খাটের উপর বসে বললো ,কেমন চলছে সব ? ঠিক ঠাক পড়া শুনা টা হচ্ছে?
প্রেমা : হুম , আচ্ছা শুনুন না ,শুনলাম আম্মু নাকি অসুস্থ,,,
সাদেক: আমার মায়ের কথা বলছো?
প্রেমা উত্তর করলো না তবে সাদেক বুঝে নিয়ে বললো, হ্যাঁ একটু অসুস্থ,তবে মেডিসিন ঠিক ঠাক চলছে ।
প্রেমা: আমাদের বাসায় একটু নিয়ে আসবেন কাছে থাকলে আমিও একটু দেখা শুনা করতে পারতাম ,,
সাদেক : দরকার নেই তুমি পড়ায় মনোযোগ দাও ।
প্রেমা আগ বাড়িয়ে কিছু বলার সাহস পেলো না ।
বিছানা টা একটু ঝাড়া দিয়ে সাদেক বালিশে মাথা রাখে ।
প্রেমা লাইট টা বন্ধ করে দিয়ে এসে সোফায় শুয়ে পরে ।
কিছুক্ষণ পর সাদেক উঠে বসে বালিশ টা নিয়ে খাটের একদম উল্টো কর্নারে আসে ,যেখান থেকে প্রেমারর স্থান টা ঠিক দুহাতের ব্যাবদান হবে ।
প্রেমা পাশ ফিরতেই সাদেক কে দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসে বুকে থু থু দিয়ে বললো ,ওহ, আপনি ,কখন আসলেন এখানে?
সাদেক হয়তো ভাবেনি প্রেমা এতোটা ভয় পাবে তাই নিজেকে একটু অস্বস্তি বোধ করলো ।
প্রেমা : ওখানে কি অসুবিধা হচ্ছে আপনার?
সাদেক : হুম ,আসলে কেমন যেনো লাগছে ওখান টায় ।
প্রেমা জায়গা থেকে উঠে গিয়ে লাইট জ্বালানোর জন্য হাত বাড়াতেই সাদেক বলে উঠলো , লাইটের প্রয়োজন নেই তোমার অসুবিধে হলে আমি ওখানে চলে যাচ্ছি।
প্রেমা :: আরে আমার কেনো অসুবিধা হবে আমি দেখতে চাচ্ছিলাম ওখানে কি কারনে অসুবিধে হচ্ছে।
সাদেক: ওহ ,,,আসলে তেমন কিছু না তুমি এখানে আসো বলছি।
প্রেমা নিজ জায়গায় আসলে সাদেক বললো ,, আসলে কেমন যেনো লাগছিলো হঠাৎ করে তাই এখানে এসেছি ।
প্রেমা :ওহ আচ্ছা।
সাদেক:ঘুমিয়ে পড়ো তাহলে টেনশন নিও না ।
প্রেমা সম্মতি জানিয়ে শুয়ে পরে হাতের উপরে মাথা রেখে ।
সাদেক প্রেমার চোখ বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় আছে ,চোখ বুজতেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সাদেক ,
আসলে সাদেক প্রেমার কাছাকাছি থেকে নিজেকে কম্ফোটেবল করাতে চায় ,বাড়িতে মায়ের গুঞ্জন শুনতে শুনতে কান খসে পরেছে প্রায় ,তাই ইচ্ছে করেই কিছু দিন ধরে প্রেমা কে নিয়ে ভাবা শুরু করেছে ,গুছাতে চায় নরমালি একটা জিবন।
– পারবে তো প্রেমার মন জয় করে সুন্দর একটা জিবন দিতে? অতীত ভুলিয়ে নিজের উষ্ণ আলিঙ্গন দিতে?
– এসব ভাবতে ভাবতেই সাদেক কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানেনা ।
রহিমা বেগম কে টেক কেয়ার জানিয়ে সামনে দিয়ে প্রথমে আয়শের রুমে গেলেও রহিমা বেগম ভেতরে ঢুকতেই আয়শের চোখ ফাঁকি দিয়ে সামিরা নিজের রুমে চলে যায় , অবশ্য আয়শ ব্যাপার টা নিয়ে মাথা ঘামায়নি এতো ,যেদিন নিজে থেকে থাকতে চাইবে সেদিন থেকেই স্বামীর জায়গায় বসাবে নয়তো না ।
রাতের বেলা দরজায় খটখট আওয়াজ শুনে আফরানের ঘুম ভেঙে যায় , বিরক্ত তা নিয়ে উঠে বসে ফোনের স্ক্রিনে টাইম দেখলো ,২:১৮ am .
এসময় কে আসবে আশ্চর্য তো , কিন্তু খাট থেকে নেমে দরজা খোলার আগেই বিষয় টা পরিস্কার হয়ে গেলো , নিশ্চিত আরু এসেছে তাছাড়া কে আসবে ? এই মেয়ে দেখছি এখনো ঘুমায় নি,শরীর কতোটা দুর্বল এই মেয়ে জানে? কতোটা রক্ত বের হয়েছিলো হাত থেকে ঐ মেয়ের খবর আছে ? মাথায় কি কখনো বুদ্ধি হবেনা নাকি? খুলবো না দরজা এভাবেই থাকুক,এটা ওর প্রাপ্ত । কথা টা ভেবেই আফরান আবার নিজের জায়গায় শুয়ে পরলো ।
তাছাড়া এই মেয়ের সাথে কিসের কথা বলবে আফরান ? শাস্তি পাওয়া উচিৎ। তিন বছর যেভাবে থেকেছে এভাবেই তিন বছর রাখবো । কাছে থেকেও কাছে আসতে দিবো না একদম ।
এটাই ভেবে নিয়েছে আফরান , কিন্তু বারবার দরজার খটখট আওয়াজ শুনে রাগে ফুঁসতে থাকে ।
কোনো রকম রাগ নিয়ন্ত্রণ করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো যতোক্ষণ ইচ্ছে থাকুক দাঁড়িয়ে আমার কি !?
প্রায় ঘন্টার কাছাকাছি হবে একটু পরপর দরজায় আওয়াজ করছে ।
আফরান ও নিজের কথার নড়চড় করবেনা ভেবে নিয়েছে । কিন্তু ঘুমাতে তো পারছেনা ।
শেষ পর্যন্ত না পারতেই একপ্রাকার বাধ্য হয়ে রাগে দাঁত কটমট করতে করতে দরজার কাছে গেলো ,তখন এতো অপমান করে কথা বলেছি এই মেয়ের মাথায় ঢুকে নি? আবারো এসেছে, থাক তাতে আমার কি দুটো চর বসালে ঠিক হয়ে যাবে ,কথাটা ভেবেই ডেভিল হেসে দরজা টা খুলে দিয়ে ধমকিয়ে কিছু বলতে যায় কিন্তু চোখ আটকায় অন্য জায়গায় ,মুখের কথা সব গুলিয়ে যায় ,বিস্মিত চোখে তাকায় । মুহুর্তেই নেশাতুর হয়ে যায় আফরানের চাহনী।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরু,পরনে কালো কালারের পাতলা মিহি শাড়ী ,শাড়ির নিচের কালো ব্লাউজ টা অব্দি দৃশ্যমান। হলুদ সুন্দর ফর্সা পেট চোখে পড়ার মতো । সাদা পাথরের বেরী নাভী বরাবর বাধা , ঠোঁটে ডিপ রেড লিপস্টিক। চোখের পাপড়ি গুলো স্পস্ট বুঝা যাচ্ছে আজ । গাঢ় কালো চোখের মনিটা যেনো উজ্জলতার ছোঁয়া পেয়েছে , ছোট বিন্দু টা ঝিলিক খাচ্ছে লাইটের আলোতে । চুল গুলো কানের বা সাইডে গুছিয়ে ছাড়িয়ে রেখেছে । কানে ছোট ছোট ঝুমকা ।
আরিয়া এক মুহূর্তও দেরী না করে চট করে ভেতরে এসে দরজা টা লাগিয়ে দেয় ,
আফরান যেনো নিজ কল্পনায় অজানা কোনো পরীর উজ্জ্বল চেহারা খানা দেখছে ,পরীর কথা টা ভাবতেই আফরান নিজেকে সোধালো ,ইটস নট এন্জেল ,সি ইজ মাই আরু ,মাই লাইফ ,মাই ওয়াইফ সো এন্জেল থেকেও হাজার গুণ সুন্দর, মায়াবী, গট ইট ? নিজেকেই নিজে বুঝালো আফরান।
আফরানের ভাবনার মাঝেই দরজা লাগানোর হালকা আওয়াজে ধ্যান ভাঙে ,উহুম এতো সহজে এই মেয়ের সাথে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবেনা ,,
মি মাফিয়া পর্ব ৫০
– নিজেকে আগের মতো স্ট্রংলি দাঁড় করিয়ে চেহারা আগের মতো মলিন করে বললো , লজ্জা থাকার কথা মেয়ে হিসেবে ,কেনো এসেছিস এখানে? বলেছিলাম না আমার রুমে আসার মতো সাহস দেখাবি না । মার খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে বুঝি ? ১০ সেকেন্ড সময় দিলাম রুম ছাড়,আফরান কথা টা বলেই আরুর সামনে থেকে ধীর পায়ে হেটে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সামনের দিকে যেতে নেয় আরিয়া সেই সুযোগ টা আফরান কে না দিয়ে আফরান এর সামনে গিয়ে আচমকাই ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেয় ।তারপর…..