মি মাফিয়া পর্ব ৫২

মি মাফিয়া পর্ব ৫২
সুমাইয়া সাবিহা

সারাদিন রুমে বসে বসে ফোনে এই মেয়েকে দেখেছে কি কি পাগলামু করতে পারে সেও দেখতে চায় ,আফরান এখানে আসতো না একপ্রকার বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে , বৃষ্টি তে ভিজলে এই মেয়ের শরীরে যে জ্বর আসবে এই মেয়ে কি জানেনা ? তাহলে কেনো এখনো ফিরলো না ? দুদিনেই এতো সুক পালন করছে আর আমাকে যে তিনটা বছর করিয়েছে এই মেয়ে এটার হিসেব করেছে? তখন তো এসব কিছুই ভাবেনি এই মেয়ে নিজের মতো চলেছে ,যা ইচ্ছা করেছে ,কখনো একটু মনে করেছে? করেনি তো তবে সে কেনো চেষ্টা করেও পারছেনা ?

আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো:- ওখান থেকে আসবি নাকি মার খাবি ?
আফরান এর গলা শুনে আরিয়া ভয়ে কেঁপে উঠে ঘুরে তাকায় ।
বৃষ্টির পানিতে চুল গুলো থেকে টপকে পানি পড়ছে ।
আরিয়া কে এতোটা স্পষ্ট ও অবলোকন করা যাচ্ছে না দুর থেকে।
আফরান একটু চেঁচিয়ে রুঠ গলায় বললো ,,মার খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে আবার তোর? ভালো চাইলে এক্ষুনি চলে আস।
আরিয়া কিছু বললো না তবে একটু ভয় পেলো মনে হয় ।
আফরান: কি বললাম শুনিসনি? ৫ সেকেন্ডের মধ্যে ওখান থেকে আসবি নয়তো আমাকে যদি ওখানে যেতে হয় তবে কি হবে ভাবতে পারছিস না আরু।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিয়া তবুও কথা বললো না শুধু চোখ দুটো একটু কিঞ্চিত চোট করে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো ।
আরিয়ার হেলদুল না পেয়ে আফরানের যে রাগ উঠেছে সেটা স্পষ্ট বুঝা না গেলেও কপালের ফুলে উঠা নিলচে আকারের রগ গুলোই জানান দিচ্ছে।
এই মেয়ে কখনো তার বাধ্য হবেনা ,কখনোও না । কথার মূল্যই দিতে জানেনা এই মেয়ে । শুধু শরীর খারাপ করুক একটু তারপর ওটাকে এমন হাল বানাবো কখনো ভুলবে না,, ভালোভাবে বললে তো শুনবে না এই মেয়ে । কথা গুলো ভেবে আফরান আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত পায়ে আরিয়ার কাছে যেতে লাগলো ,,
আরিয়া এখনো এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে । তবে নিজের ভেতরে এক আকাশ সমান অভিযোগের পাহাড় বানিয়েছে মুখের দিকে তাকালেই উপলব্ধি করা যায় ,,

আফরান আরিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে ডান হাত টা খিচে ধরে চাপা স্বরে বললো,,কথা বুঝিস না কি বলি? শরীরে যদি আর একটু কিছু হয় তবে এই শরীর যেটুকু থাকবে ওটাকেও নিঃশ্বেস করে দিবো বুঝলি ।
কথা টা শেষ করে আফরান আরিয়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় । কিন্তু আরিয়া জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে শক্ত হয়ে ।
আফরান জিব দিয়ে ডান গাল ঠেসে ধরে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ,,সোজা কথা মাথায় ঢুকে না তাইনা ? দুটো থাপ্পর গালে পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে ,কথা টা বলে আরিয়ার হাত ছেরে থাপ্পড় বসাতে চায় কিন্তু হাত উপরে উঠতেই ভেতর টা ছ্যাত করে উঠে ,কলিজা কেঁপে উঠে,আরিয়ার চোখের জলের সাথে বৃষ্টি মিক্সড হয়ে যাওয়ার বিষয় টা লক্ষ্য করে ।চোখ দুটো একটু লাল হয়ে আছে ।

চেহারায় আক্রমণাত্মক বেপরোয়া আক্ষেপের ছাপ জমে আফরানের,, কিন্তু এ দুদিন তো এভাবে কাঁদতে দেখেও এতোটা মায়া হয়নি তবে আজ হঠাৎ কেনো হ্যদপিন্ড টা জ্বলছে ?মনে হচ্ছে খসে পড়ছে ভেতরের সব টা ,,সঙ্গে সঙ্গে হাত নামিয়ে আরিয়ার দু বাহুতে হাত রেখে উদ্গ্রিব কন্ঠে বলতে লাগলো ,হেয় ! কি হয়েছে তোর ?
আরিয়া আফরানের চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে ,এই বুঝি ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলবে এক্ষুনি,যেটার তাপমাত্রা আফরানের সহ্য হবার নয় এখন, সেটা আফরান ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে ।
এক মুহুর্ত ও সময় নষ্ট না করে দুহাতে আরিয়া কে একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় ,আফরানের একহাত মাথায় ,অন্য হাত পিঠ জড়িয়ে আছে আরিয়া কে ।আফরানের বুক কাঁপছে,এমন কেনো হচ্ছে তার জানা নেই তবে এই মুহূর্তে আরুকে এভাবে একদম সহ্য করতে পারছেনা এটুকুই জানে শুধু।
-কি হয়েছে ? এভাবে কাঁদছো কেনো?

আরিয়াও সঙ্গে সঙ্গে দুহাতে আফরানের পিঠ জড়িয়ে ধরে শক্ত করে , ভেতরের সব টা কষ্ট উগলে ফেলে এবার আওয়াজ করেই ঠোঁট ভেঙে কাঁদতে লাগলো ।
আফরানের কোথাও একটা ভিষন ব্যাথার ছাপ অনুভব করলো ।
– এভাবে কাঁদছিস কেনো ? আমাকে কি এভাবেই পুড়িয়ে জ্বালিয়ে একদম ছিন্ন করে ফেলতে চাচ্ছিস নাকি আজব তো ।
– আরিয়ার মুখে তবুও কথা নেই শুধু কান্নার আওয়াজ ।

– আফরান এবার ধমকিয়ে বললো : থাকবি নাকি ছাদ থেকে ফেলে দিবো সেটা বল ,আর একবার আওয়াজ পাই শুধু ,এখান থেকেই একদম ছুড়ে মারবো নিচে চিনিস আমাকে।
– আরিয়ার তবুও কোনো কথা নেই মুখে , বরং এ কথা বলার পর আরো শক্ত করে আফরানের পিঠ জড়িয়ে ধরে ।
– আফরানের এবার রাগ হচ্ছে,এই মেয়ে কেনো বুজতেছে না তাকে ? তার ভেতর টা জলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আজ এতো মায়া হচ্ছে কেনো এই ন্যাকা মেয়েটার উপর ।
__আফরান এবার বুক থেকে আরিয়া কে সরিয়ে সামনে আনে ।
আরিয়া এখনো হেঁচকি তুলে কেঁদেই যাচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়ে।

আফরান এবার একটু জোড়ে ধমকিয়ে বললো ,চুপ !একদম চুপ ,আর একটু আওয়াজ করলে কি করবো তু…….এটুকু বলতেই ছাদের দরজার কাছ থেকে আওয়াজ আসলো হয়তো কেউ আসছে উপরে আফরান সেদিকে একপলক তাকিয়ে আচমকাই আরিয়ার ডান হাত টা ধরে চোট করে নিজের পেছনে নিয়ে আসলো ।
আরিয়া ঠিক বুঝলো না তবে সামনে আসতে চাইলো কিন্তু আফরান দু হাতে পেছনে আরিয়া কে শক্ত করে ধরে আছে যার কারনে আরিয়া আসতেও পারছেনা ।

__তুই এখানে কি করছিস? আমি সত্যি দেখছি তো? আফরান চৌধুরীর ও আজকাল বৃষ্টি পছন্দ।
আয়শ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আফরান কে এমনভাবে দেখেই মজা করে প্রশ্ন তুললো।
__আফরান শুধু কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ,শরীরে কালো শার্ট ভিজে পুরো বডি স্পষ্ট, শার্টের উপরের বোতাম টা খোলা বেশ আকর্ষণীয় লাগছে ,এমনভাবে কখনো আফরান কে দেখেনি আয়শ । আফরানের শরীরের পেছনে পাতলা ,শুকনো,স্লীম শরীরের আরিয়া কে দেখার কোনো চান্স নেই ।তবে অল্প স্বল্প হাতের কিছু অংশ আর নিচ থেকে একটু সেলোয়ার টা দৃশ্যমান ।

__ভাই আমার প্রচন্ড হট সেটা আজ চোখে পরলো , কিন্তু তোর পেছনে কে?
আফরান: যেটা করতে এসেছিস সেটা করে ফার্স্ট জায়গা ছাড় ।
আয়শ একটু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো ,,ওহ ! ভাই আমার রোমান্স করছে বৃষ্টি তে ভিজে, সেটা বললেই হয় ,, কিন্তু তুই এতো রোমান্টিক কবে থেকে হলি রে সেটা বলবি?
__আফরানের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না কেউ তাকে নিয়ে তার অভ্যাস নিয়ে কথা তুলছে , কিন্তু বউয়ের জন্য এটুকু সহ্য করাই যায় ,তাই চুপ থাকলো ।
তোকে বললাম জায়গা ছাড়তে ।

আয়শ : ভাই আমার লজ্জা পাচ্ছে নাকি আমি তো জানতাম মেয়েরা লজ্জা পায় এখন তো দেখছি…..
___আফরান গম্ভীর গলায় বললো ,একদম রাগানোর চেষ্টা করবি না ।
___আয়শ দুহাত সামনে এনে ইশারা করে স্থীর থাকতে বুঝিয়ে বললো : ওকে ওকে ,আমি বুঝেছি । আসলে সামিরা কে তখন আস্তে দেখেছিলাম ছাদে আর ফিরতে দেখিনি তাই এসেছিলাম ।
__অন্য কারো বউ নিয়ে….

এটুকু বলতে আয়শ বললো ,,সব সময় বেশি না বললে হয় না ,? আমি বুঝে গেছি ওরা নিচেই আছে যাচ্ছি আমি । কথা টা বলে আয়শ নিচে নামতে নামতে এবার শব্দ করেই হাসতে হাসতে একটু জোড়ে বলতছ লাগলো ,ভাই চালিয়ে যা তোর ছেলেকে আমার মেয়ের জন্য বরাদ্দ করে রাখলাম শুনেছিস,,,সো ফার্স্ট।
__আফরান কপাল কুচকায় – এদের সময় অসময় নেই কিছু।
কথাটা ফিসফিস করে বলেই আরিয়া কে ছেড়ে দেয় ।
আরিয়া ছাড়া পেয়েই আফরানের শক্ত হাতের স্পর্শ জায়গা গুলোতে ঘসতে লাগলো ।
আফরান আরিয়ার দিকে ফিরে বললো – ব্যাথা পেয়েছো ?
আরিয়া চুপচাপ দেখে দেখে হালকা ভাবে স্লাইড করে যাচ্ছে,,

আফরান আকস্মিক আরিয়া কে দুহাতে কোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরে ।
আরিয়ার কাছে বিষয়টা ধোঁয়াশার মতো লাগলো কিছুই বুঝলো না ,না চাইতেও আফরানের গলা পেঁচিয়ে ধরে দুহাতে । সেকেন্ড কয়েক পর নিজের অবস্থান বুঝে নামার জন্য ছটফট করে বলে ,নামিয়ে দিন আমায় ।কি করছেন ।
আফরান বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে আরিয়ার দিকে তাকাতেই আরিয়ার একদম শান্ত হয়ে রইলো ।
লাস্ট সিঁড়ি অবদি পৌঁছে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে আবার হাটা ধরলো ।
আরিয়া কে নিজের রুমে নিয়ে ডিরেক্ট ওয়াশ রুমে নামিয়ে দিয়ে বললো ,আমি ড্রেস এনে দিচ্ছি ওয়েট।
তারপর কবার্ড থেকে এক সেট জামা নিয়ে আরিয়ার সামনে ধরে ।

সামিরা ফ্রেস হয়ে মাত্র রুমে এসে খাটে বসে ভেজা চেহারা মুছতে লাগলো ,- আচ্ছা আরিয়া উপর থেকে এসেছে? ভাইয়া উপরে কেনো গিয়েছিলো? আরুকে আবার কিছু নিয়ে মারবেনা তো?
একবার দেখে আসি গিয়ে ।
কথাটা বলেই খাট থেকে উঠে তোয়ালে টা পাশে রেখে লম্বা চুল গুলো হাত খুপা করতে করতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উরনা টা খাটের উপর থেকে হাতে নিয়ে পড়তে যাবে তার আগেই পেছনে দরজায় আওয়াজ পেয়ে তাকায় , অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি টিকে এখানে হঠাৎ করে একটু ভয় পেয়ে এক কদম পিছিয়ে বললো ,,কখন আসলেন আপনি?
আয়শ দরজা টা আটকিয়ে সামিরার দিকে আসতে আসতে বললো , ওয়াশ রুমে কতো ঘন্টা সময় খরচ করিস বলবি? তাহলে আর এতোক্ষণ ওয়েট করতে হবেনা ।
সামিরা: হুয়াট? কি সব বলছেন?

আয়শ সামিরার কাছে এসে হাত থেকে উরনা নিয়ে বললো ,কানে সমস্যা আছে নাকি তোর?
__আয়শের হঠা্ৎ আগমনে সামিরা উরনা টা গায়ে জড়াতেই ভুলে গিয়েছিলো । স্বরনে আসতেই দুহাত ক্রস করে আয়শকে পেছনে ফেলে ঘুরে যায় , আ আ কি করছেন উড়না টা দিন ।
আয়শ: দরজা খুলেই উড়না না জড়িয়ে কাজ করিস ,মাথায় কি কিছু আছে নাকি নেই ।
সামিরা: সব সময় তো এমনই চলি কিন্তু আপনি আজ এমন ভাবে এসে পড়বেন আমি কি জানতাম নাকি ।
আয়শ: আমি কি আমার কথা বলেছি? যে কেউ তো আস্তে পারে তাইনা।
সামিরা: মেয়েদের রুমে আসার আগে সবাই অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে কিন্তু আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন তাই…

আয়শ: তুই কি বলতে চাচ্ছিস যে ,তোর রুমে আসতে হলে আমার অনুমতি নিতে হবে? লাইক সিরিয়াসলি? হাসব্যান্ড তার ওয়াইফকে দেখার হলেও পারমিশন লাগবে?
শেষের কথা টার জন্য সামিরা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ,উনি আবার কবে থেকে ওয়াইফ ভাবতে শুরু করেছেন?
আয়শ পেছন থেকেই উড়না টা সামিরার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে হঠাৎই সামিরার দু কাঁধে হাত রেখে আস্তে করে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে সেখানেই চোখ রেখে সামিরার চঞ্চলতা জড়ানো মুখ খানায় তাকিয়ে মৃদু হাসলো ।
সামিরা উপর দিকে তাকাতেই আয়নাতে তাকাতেই আয়শের চোখাচোখি হলো , চার দৃষ্টি একত্র হতেই সামিরা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয় ।
আয়শ আবারো হাসলো ।

সামিরার শরীরে হালকা কম্পন সৃষ্টি হয় , কি করবে বুঝতে পারছেনা ।
আয়শ এবার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে বললো ,হয়েছে ,এখন এদিকে তাকা ।
সামিরা এবার সামনেই ফিরছে না ,কেনো যেনো আজ খুব লজ্জাবতী নামক জিনিস টা নিজের পাশে বসাতে চাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এতো লজ্জা কেনো হচ্ছে তার সেটা জানা নেই তবে এই মুহূর্তে আয়েশের দিকে তাকাতে পারবেনা শুধু এটাই জানে ।

__আয়শ সামিরার অবস্থা বুঝে ইচ্ছে করেই আরেকটু লজ্জায় ফেলতে বললো,,শুনেছি বউদের লজ্জা ভাঙাতে পারে একমাত্র হাসব্যান্ড রাই ,আমিও ভাবছি বুঝলি তোর লজ্জা টা একটু …..
কথা টা বলতেই সামিরা সঙ্গে সঙ্গে সামনে ফিরে আয়শের মুখের উপর চেপে ধরে বললো ,সব সময় আপনি এসব কথা বলেন কেনো ? ইচ্ছে করেই বলেন তাইনা । দেখুন আমি একটু উপরে যাবো আপনার কথা শুনাল এখন ইচ্ছে নেই । আর এসব কেমন কথা হুম ।?
আয়শ সামিরার হাত টা মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো , ভেবেছিলাম তোর লজ্জা আছে এখন তো দেখছি লজ্জার ল টাও নেই তোর মাঝে।

সামিরা বিরক্ত হয়ে বললো , বাজে কথা বন্ধ করুন বলছি ।
আয়শ: ভুল বলেছি নাকি নাহলে মেয়ে হয়ে ছেলেদের শরীরে কিভাবে হাত দিস?
সামিরা: আমি কার সাথে কি করলাম, কখন করলাম আজব তো।
__আয়শ : এইতো মাত্র আমার সাথেই জোড়াজুড়ি করছিলি ।
সামিরা :- আপনার সাথে কথা বলেই লাভ নেই। কথা টা বলে উড়না টা ভালো করে গলায় জড়িয়ে বললো ,আমি উপরে যাচ্ছি আপনি এখন যেতে পারেন । আরু হয়তো এখনো উপরেই আছে ।
__আয়শ: ওওও,আরিয়ার জন্য উপরে যাচ্ছিস ? ওরা তো এখন রোমান্স করতে ব্যাস্ত তোর ওদের রোমান্স দেখতে আগ্রহী? এই কারনেই যাচ্ছিস?
সামিরা : ছি, আপনার দেখছি একটুও বুদ্ধি…

কথা শেষ করার আগেই আয়শ সামিরার কোমর জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলো
__ সামু দেখ আমি সত্যিই সরি । ইচ্ছে করে তোকে আঘাত দিতে চাইনি ট্রাস্ট মি । তোকে আমি কখন নিজের সব টা জুড়ে জড়িয়ে নিয়েছি সেটা বলতে পারবোনা ,তবে প্রথমে একটু রাগ ছিলো কিন্তু তোর প্রতি নয় সেটা বিয়ে টার প্রতি । কখন তোকে ভালো লাগতে শুরু করেছে আমি জানিনা । এই মুহূর্তে শুধু ভালো লাগা নয় সামু ভালোবাসি আমি আমার স্ত্রীকে,থাকতে চাই তার সাথে । তোর প্রতিটা মুহূর্তের আঘাতের শাস্তি হিসেবে আমাকে যা করতে বলবি বা যা কিছু শাস্তি দিবি সব টা মেনে নেবো । একবার বল শুধু এটার বিনিময়ে আমাকে মাফ করে দিবি ,যতো কঠিন হোক সেটা করবো আমি ।

কথা গুলো একসাথে বলে আয়শ থামলো ,চেহারায় আক্ষেপের ছাপ স্পষ্ট, অনুভূতির দোল খাচ্ছে হৃদয়ে ।চোখে শীতলতায় ঘেরা ।
সামিরা যেনো কোনো ঘোরের মধ্যে আছে , শুধু আয়শের দিকে পলকহীন তাকিয়ে রইলো , এগুলো কি উনি বললেন? নাকি ভুল শুনলাম? এটাই ভাবছে ।
__সামিরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়শ সামিরার ঠোঁটের উপর হালকা শুকনো চুমুর পরশ একে দিয়ে কোমল কন্ঠে বললো ,, সত্যি বললাম । আমাকে না বলে কেনো চলে গিয়েছিলি? একবার বলতে পারতিস বুঝিয়ে তাইনা? যাওয়ার পর কতটা ডিপ্রেশনে ছিলাম তোর ধারনা আছে? কখনো খোঁজ নিয়েছিস? অথচ বলেছিস তুই ভালোবাসিস আমায় । বলিসনি সেদিন? আমি তোর প্রিয় মানুষ?
সামিরা আনমনেই বললো:- কখন বললাম ?

আয়শ: সেদিন বাবা যখন অসুস্থ হয়েছিলো এসেছিলি ,বলেছিলি প্রিয় মানুষের দেওয়া অল্প আঘাত গুলো অনেক মনে হয়েছে তোর কাছে ।
__সামিরা নিশ্চুপ।
আয়শ: আমি ভেবেছিলাম হঠাৎ বিয়েটা তুইও মানতে পারিসনি কিন্তু আমি ভুল ছিলাম যখন দেখলাম তুই বাড়ি থেকে সত্যি চলে গিয়েছিলি বুঝে গিয়েছিলাম সব টা ,তোর ভেতরে অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলো আমার মতোই ছিলো ।
সামিরা বিস্ময়কর দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইল, কিছু বলা হয়নি অথচ সব কিছু নিজেই বুঝে নিয়েছে আয়শ ,বিষয় টা সত্যিই খুব বিস্মিত করার মতোই ছিলো ,

_আচ্ছা উনি সত্যি বলছেন এগুলো?(মনে মনে)
আয়শ সামিরার নিরবতা দেখে নিম্ন গলায় বললো ,, মিথ্যে নয় কিছু সমু সত্যি বলছি ।
সামিরা যেনো আরেকটু হতভম্ব হয় ।
আয়শ : কিছু তো বল , যেকোনো শাস্তি দে মেনে নিবো নির্দ্বিধায়।
সামিরা এবার নিজেকে ভাবনা থেকে ফিরিয়ে এনে আয়শের থেকে চোখ ফিরিয়ে ছোটার জন্য কাচুমাচু করা শুরু করে দিলো ।

__আয়শ : শাস্তি দিয়ে নিজের কাছে নিবি নয়তো এভাবেই থাকবো ছাড়বো না,,আমি বুঝে গিয়েছি দুরত্বতা দিয়ে সম্পর্ক ঠিক করা যাবেনা ।বাট আমি তোর সাথে সম্পর্ক টা ঠিক করতে চাই ।
__সামিরা কি বলবে তার জানা নেই এই মুহূর্তে তার মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের হবেনা এই লোকটা কি কি বুঝতে পারছেনা?
__আয়শ: বল কি করতে হবে তারপর ক্ষমা করবি?
সামিরার হার্টবিট এর আওয়াজ যেনো বেড়েই চলেছে প্রতি মুহুর্তে। লোক টাকে কিভাবে বুঝাবে তার নিশ্বাস আটকে আসছে ,সব টা যে হঠাৎ করেই নিতে পারছেনা ।
__আয়শও এদিকে ছাড়ছেই না সব কথার এক কথা সম্পর্ক স্বাভাবিক যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ এভাবেই থাকবে ।
মিনিট কয়েক পর সামিরা ব্যার্থ হয়েই বলে উঠলো ,বলছি আমি কিন্তু আগের ছাড়ুন ।
আয়শ: উহুম আগে বল তারপর ।
সামিরা: আরে বুজতেছেন না কেনো আমাকে ?

_আয়শ: কে বললো বুজতে ছি না ? তোর হার্টবিট পুরো ১০০ হয়ে আছে বেশ বুজতেছি । পিউর ভার্জিন বউ পাইছি এমন তো হবেই ,যার শরীরে আমার ছোঁয়া প্রথম হয়েছে আর শেষ‌টাও আমার হবে ।
সামিরা :- চুপ করবেন আপনি ।
আয়শ :- তাহলে বল শাস্তি কি নিবো নাকি দিবো?
সামিরা: আজব তো ,কি শাস্তি দিবো আমি? প্রয়োজন নেই ।
আয়শ: তাহলে বল প্রথমের সব কিছু ভুলে যাবি ।
সামিরা : আরে আপনি এমন কেনো ,ছাড়ুন বলছি ।যেতে দিন ।
আয়শ: তুই শাস্তি না দিলে কিন্তু আমি তোকে শাস্তি দিবো । কোনটা চাস?

__সামিরা এখন কি শাস্তি দেবে? নিজের প্রিয় মানুষ টি যখন নিজের সব অনুভূতি প্রকাশ করে ক্ষমা চায় তার প্রতি কি আর অভিযোগ থাকে? থাকে না তো কেনো বুজতেছেন না উনি ।(মনে মনে)
__আয়শ: বলছিস না কেনো নয়তো কিন্তু আমি শাস্তি দিবো কথাটা মাথায় আছে?
সামিরা কোনো কিছু না ভেবেই বলে দেয় ,ঠিক আছে আপনি শাস্তি দেবেন এখন ছাড়ুন ,আপনাকে আমি কোনো শাস্তি দিতে পারবো না আমার আপনার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই ।
আয়শ মৃদু হেসে বললো : ভেবে বলছিস তো?

মি মাফিয়া পর্ব ৫১

সামিরা : এখানে ভাবার কি আছে বলেছি যখন সেটাই ।
আয়শ এবার সামিরা কে ছেড়ে দিয়ে বলে ,ঠিক আছে ,,আমার শাস্তি টা আজ না হয় জমা রাখলাম নিজের কাছে ,সময় মতো ঠিক দিয়ে দেবো । আয়ের কথা শেষ হতে দেরী হলেও সামিরা রুম থেকে হাওয়া হতে দেরী লাগলো না ।এক দৌড়ে দরজা পেরোয় ।আয়শ সামিরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্মীত হাসে ।
তারপর……

মি মাফিয়া পর্ব ৫৩