মি মাফিয়া পর্ব ৫৪

মি মাফিয়া পর্ব ৫৪
সুমাইয়া সাবিহা

খানিক টা ফ্রেশ মুড়ে আছে আরিয়া ,, বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে,এক হাত গ্রিলের বাহিরে তাক করা ,গুরিগুরি বৃষ্টি ফোটা গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে আরিয়ার শরীর ,বাতাসে আরিয়ার চুল গুলো হালকা উড়ছে ,গলায় জড়ানো উড়না টা বারবার ডিস্টার্ব করে যাচ্ছে একবার এদিকে আরেকবার উল্টো বাতাসে অন্য দিকে দুল খাচ্ছে । মুখে মৃদু হাসি লেগেই আছে তখন থেকে ।
পেছন থেকে সামিরা দরজা নক করে ভেতরে এসে আরিয়া কে না দেখে একবার আরু বলে ডাকলো। আরিয়া সারা দিয়ে বললো এখানে আছি ।
সামিরাও বারান্দায় গিয়ে আরুর পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো ,,শরীর খারাপ করছে নাকি? বলেছিলাম না বৃষ্টি স্নান দরকার নেই ।

আরিয়া উত্তর দেয় না তবে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আরিয়া বেশ খুশি তে আছে ।
সামিরাও একটু দুষ্টুমি করে বললো : তোকে কেমন যেনো অন্যরকম লাগছে আজ ? কি হয়েছে? সত্যি করে বল তো ভাইয়া তখন উপরে গিয়ে কি বলেছে? কথা বলেছে? নাকি অন্য কোনো কারনে ..
আরিয়া সামিরার দিকে তাকিয়ে মুখে একরাশ হাসি ফুটিয়ে বললো ,হুম উনি আমার সাথে কথা বলেছে ,এমন কি আমি আজ উনার সাথে অন্য রকম সময় কাটিয়েছি ।
সামিরা একটু অবাক হয়ে বললো , সত্য বলছিস? নাকি মজা করছিস? সকালেই তো এমন ভাবে কথা বলছিলো যেনো তোকে চিনেইনা ।
আরিয়া: যা করেছে আমার কারনেই করেছে ,আমার দোষ এই কারনে করেছে ।
সামিরা ভ্রু দুটি উঁচিয়ে মাথা উপর নিচ করতে করতে বললো,,ওওও! তা এই মেজাজ কমানোর টিপস টা কি ছিলো বলবি একটু? না মানে আগুন থেকে ডিরেক্ট পানি হয়ে গেলো ,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিয়া মুচকি হেসে সামিরার সামনে থেকে রুমে আসতে আসতে বললো ,,আমি জানি কি ।
__সামিরা আরিয়ার পিছু হেঁটে বললো , লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে তোর ফেইস আরু,, সত্যি করে বল তো কি হয়েছে ? সব কিছু ঠিক হয়েছে ভাইয়ার সাথে ? তোকে দেখেই কিন্তু বুঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই অবান্তর কিছু ঘটিয়েছিস ভাইয়ার সাথে।কথা টা বলে সামিরা মুখের উপর হাত রেখে দুষ্টু হাসি লুকানোর চেষ্টা করে।
__আরিয়া এবার ঠোট থেকে হাসি তুলে নিয়ে কপাল কুঁচকে বললো ,চুপ কর তো । ঘুমাবো এখন ।
__সামিরা : এখন কিসের ঘুম? মাত্রই তো সাড়ে আট টায় পরেছে । আর খাবার খেতে ডাকছে সবাই কে ।
__ সামিরার মুখে কথা টা শুনে আরিয়া একবার ঢুকে গিলে বললো ,আমি খাবো না ।
__সামিরা: তোর আবার গলা চেন্জ হয়ে গেলো কেনো রে?
__আরিয়া এবার খাটের উপর বসে দুহাত একসাথে করে বললো ,সামু ভালো লাগছে না আমার । তুই যা এখান থেকে।

__সামিরা কপাল কুঁচকে কোনো কথা না বলে আরিয়ার ডান হাত টা ধরে বসা থেকে টানতে টানতে রুম থেকে নিয়ে যেতে লাগলো ।
__আরিয়া :- আরে কি করছিস সামু ,এভাবে কেউ ধরে নাকি ।
__ সামিরা: তাহলে খাবি না কেনো বললি? তোর হাত টা ধরতেই বুজতে পারছি শরীরে জ্বর এসেছে ,খাবার না খেয়ে ওষুধ খাবি কি করে?
___আরিয়া:আগে ছাড় তো বলতেছি ,আরে ছাড় না , আম্মু আছে নিচে ,
__সামিরা আরিয়ার কোনো কথা পাত্তা না দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে আরিয়া কে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো ।
আরিয়ার গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ , নিশ্চয়ই আজ কে মার আছে কপালে ,তখন বিষয় টা মায়ের চোখে পড়ে ছিলো এর জন্য নিশ্চয়ই চুপ থাকবেন না তিনি ,কথা টা ভাবতেই আরিয়া আরেকবার ঢুক গিললো।
ড্রয়িং রুমে এই মুহূর্তে খলিল সাহেব আর জাফর সাহেব বসে টিভিতে নিউজ দেখছেন বিভিন্ন রকম ।
সামিরা আর আরিয়া কে দেখে ব ভাবছে হয়তো মজার ছলে দুজন এমন করছে ।
সামিরা কিছু টা জোড় করেই আরিয়া কে চেয়ার টেনে বসিয়েছে ।

__আরিয়া একবার সামিরা কে আস্তে করে বললো ,মা কোথায়?
সামিরা : এভাবে কেনো বলছিস?
__আরিয়া: আগে বল না ।
সামিরা: আন্টি কিচেনে ,রেডি করছে ।
আরিয়া একবার কিচেন রুমে চোখ রেখে মাথা টা বাঁকিয়ে মাকে দেখে নিলো ।
–সামু আমি উপরে চলে যাই ,খাবার টা ওখানেই খাবো।
__সামিরা: তোর আজ কি হয়েছে বলবি ? এমন করে ভয় পাচ্ছিস কেনো ? একটু আগেই তো দেখলাম সব ঠিক আছে ।

__আরিয়া কথা না বলে বারবার কিচেনে চোখ রাখছে ।
রহিমা বেগম হাতে তরকারী বাটি নিয়ে কিচেন থেকে বের হতেই আরিয়া কে দেখে কেমন যেনো অস্বাভাবিক ভাবে নাক কুচকালেন । চেহারা সুরত মুহুর্তেই পাল্টে গেলো ।
আরিয়া ভয়ে ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে সামিরার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ যায় উপরে ,
__রেলিংয়ে দুহাতে ভর দিয়ে এক হাত মুঠো করে থুতনিতে রেখে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে আফরান ।
আরিয়া আফরানের দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করলো মায়ের দিকে ।
আফরান বিষয় টা স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো ।

এদিকে আকস্মিক রহিমা বেগম দ্রুত পায়ে এসে হাত থেকে বাটি টা টেবিলে রেখে আরিয়ার ডান হাত ধরে চেয়ার থেকে তুলেই “ঠাস”
আওয়াজ এতোটাই জোড়ে হলো যে , টেলিভিশন থেকে চোখ তুলে জাফর খলিল সেদিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কি হয়েছে ।
__রহিমা বেগম : তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ে আমি পেটে ধরেছি কথা টা ভাবতেই আমার ঘৃনা হচ্ছে । সত্যি করে বল তো কবে থেকে চলছে এসব ? মাথায় কি একটুও বুদ্ধি নেই তোর? নাকি চরিত্র টাই নষ্ট করে বসেছিস যাওয়ার পরে? বল ।

__রহিমা বেগমের এমন কথাবার্তায় জাফর সাহেব, খলিল সাহেব দ্রুত জায়গা ছেড়ে দৌড়ে আসে ।
জাফর সাহেব:- কি করছো রহিমা ? এমন ভাবে মেয়েটার গায়ে হাত তুললে কেনো? এখনো কি ছোট আছে মামনি? এভাবে হাত তুলে মোটেও ঠিক করোনি তুমি ।
__আরিয়া গালে হাত রেখে চোখের জল ফেলছে ।
__সামিরা হত বিহ্বল হলো ,কিসের জন্য এমন করলো ? এই কারনেই বুঝি আরু ভয় পাচ্ছিলো তখন? কিন্তু কি এমন করেছে?
(মনে মনে)
__রহিমা : ভাইজান আপনি জানেন না ,এই মেয়ের আজ কি করে বসেছে । চরিত্র কতটা নিচে নেমে গেছে এই মেয়ের ।

খলিল একটু নিরঠ গলায় বললো : রহিমা তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলে ঠিক করোনি । কিন্তু তুমি যে , শুধু শুধু এমন আচরন করবেনা সেটাও আমি জানি। কি করেছে ও যে এভাবে হাত তুললে ? পরিস্কার করে বলবে একটু?
__রহিমা : এসব বলতেও আমার মুখে বাঁধছে তোমাদের কি বলবো ? সকালেই তো স্পস্ট ভাবে ঐ ছেলে বলে দিলো আমার মেয়েকে বিয়ে করেনি নিঃসন্দেহে।আমার মেয়ের চরিত্রে পর্যন্ত আঙুল তুলেছে, তবে আমি আজ সন্ধ্যা রাতে কি দেখলাম? ওটা কি ভুল ছিলো বল আরিয়া?
__আরিয়া ভয়ে কেঁপে উঠে মায়ের দিকে তাকালো ।

জাফর সাহেব আরিয়া কে নিজের কাছে নিয়ে বললেন : আমি জানি আমার মামনি এমন কিছুই করবেনা রহিমা ,তুমি ওর দিকে এভাবে কথা তুলতে পারোনা।আরু মা কি হয়েছে তুমি পরিস্কার করে বলে দাও ।
__আরিয়া ভয়ে কাঁপছে কিছু বলছে না ,চোখ থেকে অঝোরে শ্রাবন ধারা প্রবাহিত হচ্ছে প্রবল বৃষ্টির গতির নেয় ।
__রহিমা : এই মেয়ে আর কি বলবে? ঐ চরিত্র হীন ছেলের সাথে নিজেকেও বিলিয়ে দিয়েছে এটাই তো । ছিঃ আমার ভাবতেই শরীরে কাঁটা দিচ্ছে।আমার মেয়েও কখনো এমন কাজ করবে ।
খলিল সাহেব কিছু বলবেন কিন্তু সেই সুযোগ টা হলো কোথায়?
হঠাৎ করেই কিছু ভাঙার বিকট আওয়াজে পুরো রুম স্তব্ধ হয়ে পেছনে সিঁড়ির দিকে তাকায় যেখানে পড়ে আছে ভাঙ কালো রঙের মাটির মুর্তির টুকরো গুলো।

সবার দৃষ্টি মুহূর্তেই স্থান চেন্জ করে নিচ থেকে তিন চার টা সিঁড়ির দিকে যায় ,আফরান দুহাত মুঠি বদ্ধ করে আছে ,ডান হাতের তালু থেকে ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু বিন্দু রক্ত পড়ছে ,চোখ বেয়ে এক্ষুনি মনে হয় রক্তাশ্রু গড়াবে গালে । কপালের রগ গুলো ভেসে আছে ,ঘামের হালকা ছিটা কপাল জুড়ে এই বুঝি সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে নিস্তার হবে নয়তো কোনো উপায় নেই থামানোর দেখেই স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে।
ভাঙচুরের শব্দ শুনে প্রেমা সাদেক আয়শ সবাই নিজেদের রুম থেকে বেড়িয়ে এসেছে মাত্র এতোক্ষণ কারো উপস্থিতি এখানে ছিলো না ।

__আফরান দ্রুত পায়ে নিচে নেমে প্রথমেই আরিয়ার মায়ের সামনে দাঁড়ায় ,,
__রহিমা বেগমের ভেতরে ভয়ের তুলপার নাড়া দিয়ে উঠছে , কিন্তু এই মুহূর্তে সেসব কিছুই কার্যকর নয় অবশ্যই অন্যায় করেছে দুজন , অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা কোনো উচিৎ না তাছাড়া যেখানে তার মেয়েকে নিয়েই প্রশ্ন সেখানে তো তাকে কথা বলতেই হবে ।ভেতর থেকে সমস্ত ভীত সংকুচ কাটিয়ে মুখ থেকে কিছু বলতে যাবেন কিন্তু তার আগেই আফরান বাম হাতে টেবিলের উপর থেকে খাবারের সমস্ত কিছু স্লাইড আকারে হাত দিয়ে ফেলে দিয়ে দাঁতে দাঁত খিচে কর্কঠ স্বরে বলতে লাগলো,,ওকে টাচ করার পারমিশন কে দিয়েছে ?
__রহিমা বেগমের ভেতরে আবারো একটু ভয় কাজ করতে লাগলো ,তবুও বলার চেষ্টা চালালো ,এমন ভাব করছো যেনো কিছুই ক..করোনি তুমি ,,, তাছাড়া আমি আমার মেয়েকে শাসন করছি তাতে তোমার কি ? তোমাকে তো মানুষ করতে পারেনি তাই বলে আমার মেয়েকেও ছেড়ে দিতে পারিনা অবশ্যই।একজন মেয়ের সাথে এমন কাজ করা কি তোমার কাছে স্বাভাবিক….

__রহিমা বেগমের কথা শেষ করতে না দিয়ে আফরান বললো ,, হাসব্যান্ড ওয়াইফ কি করবে না করবে সেটা কি অনুমতি নিতে হবে? আচ্ছা বিষয় টা এমন‌ নয় তো আপনার হাসব্যান্ডের সাথে আপনি ফিজিক্যালি রিলেশনে যাওয়ার আগে আপনার মা বাবার পার্মিশন নিতে হয়েছে , আই মিন আপনারা সে…..এটুকু বলতে পেছন থেকে আয়শ বলে উঠলো ,হেয় আফরান কি বলছিস মাথা ঠিক আছে? আর কি হয়েছে এখানে আমাকে বলবে? বাবা কি হয়েছে ? আফরান এমন মিস ভি এফ করছে কেনো?
__জাফর এবার আফরানের কাছে এসে বলতে লাগলো ,মাথা ঠান্ডা করো আফরান ,আর এমন কিছু তো হয়েছে যার কারনে রহিমা এমন করেছে ,আর তুমি এ ধরনের কথা বলতে পারো না বড়দের সাথে ।
জাফর জানে মাথা গরম করে কথা বললে এই ছেলে বুঝবেনা আর রাগের কারন টাও তার কাছে স্পষ্ট তাই একটু শান্ত গলায় কথাটা বুঝালেন।

আফরানের হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে , ধ্বংস শীল চক্ষু একটু পলক ও ফেলছে না রহিমা বেগমের উপর থেকে ,এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে যেনো এটা কোনো আতংক এই মুহূর্তে সবার কাছে ।
__আয়শ আফরান আর রহিমা বেগমের মাঝে দাঁড়িয়ে বললো ,বুজতে পেরেছি আরু কে বকা দিয়েছে তাইতো? আগে শান্ত হ পরে কথা বলিস এগুলো নিয়ে ।
__আফরান :আমার কলিজায় আঘাত দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে এই মহিলা ,সেদিন এটাকে সেখানেই পুঁতে দেওয়া উচিৎ ছিলো আমার ,তাহলে আজ আমার বউয়ের ব্যাথা লাগতো না এই মহিলার জন্য।
__আয়শ: এমন করে কথা বলছিস কেনো? আমাদের ছোট মা হয় আফরান ।
__আফরানের চোখ টুপকে এক ফোঁটা পানি গড়ায় ফ্লোরে ,, মুখ সামলে কথা বল নয়তো তোর জন্য ও ভালো হবেনা ।

আয়শ: হেয় ! রিলেক্স আফরান ,কি সব বলছিস । মাথা ঠান্ডা কর।
আফরান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রহিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,,সবাই কান খুলে শুনে রাখো ,আরু ইস মাই ওয়াইফ , মাই লাইফ ,মাই হার্ট,কেউ কখনো কোনো কারনে একটা কথা আমার বউকে শুনালে এর ফল স্বরুপ বিষাক্ততা নিয়ে আসবে তার জিবনে,,কল্পনাও করতে পারবেনা আফরান চৌধুরী কতোটা ভয়ঙ্কর । সো বি কেয়ারফুল অল মেম্বারস , ইট্স মাই লাষ্ট ওয়ার্নিং।
কথা শেষ করে আফরান আরিয়ার সামনে গিয়ে একটু মাথা টা নুইয়ে চোখ মুছে দিতে লাগলো,, কষ্ট হচ্ছে?
__আরিয়া হেচকি তুলে কেঁদেই যাচ্ছে।
__আরিয়ার এই চোখের জল আফরান এর রাগ দীর্ঘ করে তুলছে ,আফরান আরেকবার মাথা ঘুরিয়ে রহিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে ঠোট জোড়া বাঁকা করে ডেভিল হাসে , কিন্তু কিছু বলে না ।
আফরানের এই নিরবতার অর্থ কি অন্য কিছু বুঝায়? আফরান এর এই চাহনির অর্থ কি এই পর্যন্তই শেষ নাকি অন্য কোনো কিছুর পূর্বাভাস?

আফরান আবার ঘার ঘুরিয়ে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে নিজে সোজা হয়ে এক হাতে আরিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো ,এখান থেকে চলো , উপরে গিয়ে কথা বলি ।
আরিয়া আফরানের হাত মাথার উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো যাবো না আপনার সাথে আমি ,আরিয়ার কথার মধ্যে আফরান রাগের কিংবা অভিযোগের ছোয়া পেলো ,তাই আবারো আরিয়ার দিকে এক কদম বাড়িয়ে গিয়ে বললো ,উপরে চলো তারপর সব টা শুনবো ,আমার তোমাকে এখানে দেখতে একদম ভালো লাগছে না আরু।
আরিয়া আবারো পিছনে চলে গিয়ে বললো ,সব কিছু আপনার জন্য হয়েছে ।

__আফরানের রাগ টা মনে হয় আবারো প্রকাশ পাচ্ছে হাতের শিরা গুলো ভেসে উঠছে , তবুও নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করে বললো ,,রাগ করেছো খুব? আম্মু মেরেছে তাই তো ? আর কখনো এমন হবে না আমার ভুল হয়েছে তোমার সাথে এখানে আসা উচিৎ ছিলো । এই যে দেখো , সরি আমি ।
আফরানের কথা গুলো শুনে উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ,এমন ভাবে আফরান কে কখনো কথা বলতে শুনেনি ,,তাও সরি বলছে কাউকে ? সবাই এক প্রকার ধাক্কা খায় এমন টা দেখে ,এইতো আগুনের মতো জ্বলছিল এতোক্ষণ এখন আবার চেন্জ হয়ে গেলো তাও এক মুহূর্তেই?

__নিরবতা কাটিয়ে জাফর সাহেব বলে উঠলেন , তুমি নিজেই তো সকালে জানিয়েছো মামনির সাথে বিয়ে হয়নি তবে এখন হঠাৎ করেই কেনো আবার স্ত্রী দাবী করছো? কোন টা বিশ্বাস করবো ? তোমার নাটক তুমি করে যাচ্ছো প্রতিদিন। আসলে তুমি কি চাও বলবে স্পস্ট ভাষায়?
__আফরান ঘুরে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বললো ,, আমার আর আমার ওয়াইফের মাঝে কি হলো না হলো সেটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না তবে এইটুকু শুনে নাও আরুর সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো ।
__জাফর : বিয়ে মানে বুঝো তুমি ? মামনির সুন্দর লাইফ টা তোমার জন্য উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে সেটা কি বুজতে পারছো না তুমি? ওকে নিয়ে খেল তামাশা না করলে হয়না তোমার ?

__আফরান এবার বিরক্তি নিয়ে আরিয়ার দিকে ফিরে ডান হাত ধরে জাফরের উদ্দেশ্যে বললো , যেটা মনে করো আমি ডোন্ট কেয়ার,বাট আমার জিনিস আমার কাছেই থাকছে সেটাই আমার ওকে ।
__আরিয়া হঠাৎ করেই আফরান এর কথা শেষ হতে বলে ফেললো ,আপনাকে কেউ বিশ্বাস করবে না যেখানে আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই সেখানে তো অন্য টা তুচ্ছ মাত্র আপনার কাছে। যদি আপনার কথা গুলো সত্যি হয়ে থাকে তবে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করুন আবার ।

__আরিয়ার কথা টা আফরানের মোটেও পছন্দ হয়নি কিন্তু এখন বউয়ের সাথে সবার সামনে এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছে না আফরান তাই কথাটা ঘুরিয়ে স্মীত হেসে বললো ,উপরে চলো তারপর কথা বলি ,আর তুমি তো বললে আমাদের মেরেড প্যাপার গুলো দেখেছো ।
__আরিয়া আফরান এর হাত থেকে নিজের হাত ঢুকাতে চাইলো কিন্তু সম্ভব হলো না আফরান শক্ত করে ধরে আছে ।
-দেখুন আপনার মতো সব কিছু হবে না ,আপনি জানলেই হবে না সবাইকে জানিয়ে আবার ….
এটুকু বলতে রহিমা পেছন থেকে বলে উঠলো ,, প্রয়োজন নেই এই ছেলের সাথে তোমাকে আর আমি থাকতে দিচ্ছি না । যা হয়ে গিয়েছে সেটা হয়ে গিয়েছে ।

খলিল সাহেব রহিমার কথা টা অস্বিকৃতি জানিয়ে বললো ,রহিমা তুমি চুপ থাকো আমার কথা টা বুঝো।তারপর আফরান কে উদ্দেশ্য করে বললো ,যদি সেটাই সত্য হয়ে থাকে আর আরিয়াও তোমার সাথে থাকতে চায় তবে নিশ্চয়ই তোমার আপত্তি থাকার কথা না তাই না ?
__জাফর : আমিও সেটাই বলি ,যেহেতু বিষয় টা ক্লিয়ার না আর যদিও সত্য হয়ে থাকে তবুও দ্বিতীয় বার হওয়াতে তো সমস্যা থাকার কথা না তোমার , অবশ্যই একটা বিয়ে সবাইকে জানিয়ে করা উচিৎ নয়তো যেমন আজ আরু মামনির দিকে যেমন রহিমা আঙুল তুলেছে তেমনি প্রতিবেশি রাও কথা তুলবে অবশ্যই কয়জন কে বুঝাবে তুমি?
__দরকার নেই কাউকে বুঝানোর ,কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা ,আমার বউ আমি জানলেই চলবে ।

কথা টা বলে আফরান এবার আরুর হাত ধরে টেনে হাঁটতে লাগলো উদ্দেশ্য উপরে যাওয়া ।
__মাঝেই আরু বলে উঠলো ,,ছেড়ে দিন আমাকে , আপনার জন্য আমার চরিত্রহীন নাম উঠেছে , যাবো না আপনার সাথে । হাত ছাড়ুন বলছি ।
___আফরানের চাপা রাগ টা এবার ভেতর থেকে উপরে আসলো ,হাত ছেড়ে গালে পরপর দুটি চর বসিয়ে বললো ,আবার বল কি বললি ? আমার কথার গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন কখনো মনে করিস না ! কে কি বললো ঐটা নিয়ে পরে থাকা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তোর দেখছি ।পা ভেঙে যখন বন্ধ রুমে আটকিয়ে রাখবো তখন বুঝতে পারবি ঠিকই ।

__আরিয়া এবার গালে হাত রেখে ঠোট উল্টিয়ে আওয়াজ করে কাঁদতে লাগলো ।
__সবাই আজ আশ্চর্যের চরম পর্যায় পৌঁছেছে এদের দুজনের কাহিনি দেখে দেখে ,একটু আগে নিজেই তো পৃথিবী উল্টে দিচ্ছিলো একটা থাপ্পর মারাতে আর এখন নিজেই ডাবল চর বসিয়ে দিলো ,এসব কিছু না ?
আফরানের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে,এই মেয়ে জিবনেও বুঝবেনা তাকে ।কর্কশ গলায় বললো ,তোর বিয়ে চাই তাইতো?
__আরিয়া এবার কান্না থামিয়ে বললো ,হুম ,আমিও চাই আমার বিয়েটা যেনো খুব বড় করে হোক ,সবাই জানুক,সবাই দেখে দেখে বলুক ,আফরান আরিয়া পার্ফেক্ট কাপল ।
__আরিয়ার কথা গুলো এই মুহূর্তে ন্যাকা মনে হচ্ছে আফরানের কাছে ,,
__আমার কথার চেয়ে তোর কাছে তোর ইচ্ছের গুরুত্ব বেশি তাইতো ? ঠিক আছে বিয়ে করবো ,, কিন্তু সেটা এই বাড়িতেই হতে হবে তাও মাত্র ৫ দিনের মধ্যে রাজী? নয়তো যা ইচ্ছা কর আমার দেখার বিষয় না ।

__জাফর : আশ্চর্য ৫ দিনে বিয়ে কিভাবে হবে? বললেই হয়ে যায় ?
__আফরান : আমি তোমাকে নয় এই মেয়েকে জিজ্ঞেস করছি ।
জাফর চুপসে যায় ,সব সময় মুখের উপর কথা না বললে হয়না এই ছেলের ।
__আরিয়া মনে হয় নিজের আকাঙ্ক্ষিত চাঁদ টা হাতে পেয়ে গিয়েছে ,,যেটার স্বপ্ন এতো দিন ধরে বুনে এসেছে সেটা সত্যি হতে চলেছে সেটা অল্প দিন হলে অল্প হোক তাতে সমস্যা কি ? সবাই তো অন্তত জানবে মি আফরান চৌধুরীর ওয়াইফ আরিয়া চৌধুরী। উফফ কথাটা ভাবতেই মুখে উজ্জ্বলার ছোয়া আসে । আমি জানি উনি রাগ করে বলছেন কিন্তু পরের টা পরে দেখা যাবে আর উনি কতক্ষনই বা রাগ করে থাকতে পারবেন নিশ্চয়ই কয়েক ঘন্টা মাত্র,,তাতে কি হয়েছে ।

মি মাফিয়া পর্ব ৫৩

__আফরান কপাল কুঁচকে বললো , বলবি কিছু ? গেলাম আমি, তোর বিয়ে নিয়ে তুই থাক ,,যার সাথে ইচ্ছে বিয়ে কর আমার সামনে কখনো আসবি না আর ,কথা টা বলেই আফরান সামনে হাঁটা ধরলো ।
আরিয়া পেছন থেকে ডেকে বললো ,ঠিক আছে ৫ দিন, সমস্যা নেই ।
আরিয়ার কথাটা আফরানের রাগের গতিসীমা আরো বাড়িয়ে দিলো ,, একবারও পেছনে ফিরে না তাকিয়ে হনহন পায়ে দুহাত মুঠো বদ্ধ করে উপরে উঠে নিজের রুমে ঢুকে দরজা টা ঠাস করে বেশ খানিক টা আওয়াজ করেই আটকালো । সবার দৃষ্টি আফরানের দিকেই ছিলো এতোক্ষণ। তারপর……

মি মাফিয়া পর্ব ৫৫