মি মাফিয়া পর্ব ৫৫
সুমাইয়া সাবিহা
রাতের খাবার ভালো ভাবে কারোই খাওয়া হয়নি ,এই ঘটনার পর কারই বা খেতে ইচ্ছে করবে ? রহিমা বেগমের উপর সবার ক্ষুব্ধতা রয়ে গেছে , শুধু শুধু এমন বাজে কথা শুনানোর প্রয়োজন ছিলো কি ? তারা তো নিশ্চিত ছিলোই যে ,আফরান আরুর বিয়ে হয়েছে আফরানের রাগের কারনে সকালে এসব বলেছে সেটা তো সকালে ওর কথা দ্বারা বুঝা গেছে ,তাই তো জাফর সাহেব ইচ্ছে করে ছেলে দেখানোর অভিনয় করেছিলেন ,আফরান কি করে সেটা দেখার জন্য।
এতো দিনে জাফর সাহেব বুঝে গিয়েছেন আফরানের আরিয়ার প্রতি সীমাহীন বেপোরোয়া ভালোবাসার কথা ,কেনই বা বুঝবেন না? প্রতিটা কাজ লক্ষ্য করলেই তো বুঝা যায় সব টা আরিয়ার জন্য ছিলো তবে হ্যাঁ একটু গরম মেজাজ সেটা হয়তো কোনো দিন যাওয়ার নয় ,একবার যেহেতু ভেবে নিয়েছে আরিয়া শুধু মাত্র তার তাহলে সেটার দিকে কারো অন্য চোখে তাকানো ও সহ্য করবে না এই সম্পর্কে তিনি অবগত । তার কঠোরতার মতোই ভালোবাসা টা প্রগাঢ়,যার কোনো সীমা নেই হয়তো সেটা আফরান নিজেও জানেনা ।আর সেটা তো রহিমা বেগম জানতো তাহলে কেনো এমন করলো ?
আরিয়া উপরে যাওয়ার পর জাফর সাহেব এসব কথা তুলেছিলেন ড্রয়িংরুমে । রহিমা বেগম চুপটি করে শুধু হজম করে গেছেন ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মধ্য রাতে নিজ রুমে কাউকে প্রবেশ করার মৃদু ধ্বনিতে ঘুম হালকা হয় আফরানের একটু নড়েচড়ে পাশ ফিরে শুয় । এমন নয় যে একেবারে ঘুম ভেঙে গিয়েছে ,কাঁচা ঘুমের মধ্যে কোনো শব্দে সব মানুষেরই একটু ডিস্টার্ব হয় ।
আরিয়া রাতে উপরে আসার পর বিন্দু মাত্র ঘুম হয়নি সে দেখেছে আফরানের হাত থেকে কিভাবে রক্ত পরছে এভাবে রেখেই ঘুমিয়ে যাওয়ার যায় নাকি । সব সময় বাড়াবাড়ি না করলে উনার হয়না । মানছি আমিও আজ একটু বাড়াবাড়ি করেছি ওখানে এমন ভাবে উনার কথার উপরে অসম্মতি প্রকাশ করা ঠিক হয়নি কিন্তু আমি এটাও জানি আলাদা ভাবে বুঝিয়ে বললে কোনো দিন ও এমন করে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করতেন না । যেটা বলেন সেটাই করবেন বেস তাইতো আমাকেও এমন বলতে হয়েছে ।
ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করে প্রথমেই আফরান কে দেখে নেয় একবার । ডিম লাইটের আলোতে যেটুকু বুঝা গেলো উনি তীক্ষ্ণ ঘুমে বিভোর,বিষয় টা ভালোই হয়েছে । ভেবেই নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে ভয় টা কেটে গিয়েছে,ছোট ফার্স্ট এইড বক্স টা এনে আস্তে করে খেয়াল রেখে খাটের উপরে উঠে বুঝার চেষ্টা করে কোন হাতে লেগেছিলো । হ্যাঁ বাম হাতে কথাটা মাথায় আসতেই আফরানের আরেকটু কাছে এসে বাম হাত টা আলতো হাতে ধরে ।
আফরান একপাশ ফিরে শুয়ে ছিলো শরীরে কোনো জামা জড়ানো নেই এটা তার অভ্যাস বলা যায় কারন সব সময়ই এভাবেই ঘুমোয় ।
কিন্তু এই মুহূর্তে শরীরে কম্বল জড়ানো তাই আরিয়ার কাছে বিষয় টা এখনো দৃষ্টি গোচর হয়নি ।
হাত টা ধরতেই সাথে সাথে চমকে উঠে আরিয়া ,গরম তাপমাত্রা হানা দিয়ে ধরে আছে আফরানের শরীর নিশ্চয়ই জ্বর এসেছে আরিয়ার সেটা বুঝতে বাকি রইলো না কিন্তু এই মুহূর্তে কি করবে ঘুম টা ভাঙলেই তো নিশ্চিত রুম থেকে বের করে দিবে । আরিয়ার কোমল হ্যদয় টা অশান্ত হয়ে পরে মুহুর্তেই,আজ তো তার জ্বর আসার কথা অথচ আজ একদম ঠিক আছে সে উল্টো উনার জ্বর এসেছে একবারও কি বলা উচিত ছিলো না এই লোকটার ? সব সময় এমন করতে হবে কেনো?
আরিয়ার চোখ হালকা ভিজে আসে কিন্তু এখন এতো শত ভেবে কাজ নেই আগে যেটা করতে এসেছি সেটা করে নেই কথাটা ভেবেই আফরানের হাতের দিকে তাকায় । হাতের উল্টো পিঠে অনেক টা ক্ষত হয়ে আছে কয়েক ঘন্টা আগেই যে ঐটা হয়েছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সেটা ।
সময় নষ্ট না করে ছোট একটা ওষুধ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাটাতে লাগিয়ে উপর দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো ।
কাজ শেষে আরিয়া অবাক হয় উনার ঘুম এতো হালকা হওয়া সত্ত্বেও আজ এতোক্ষণ ধরে উনার হাত ধরে আছি অথচ আজ উনার ঘুম ভাঙার নাম গন্ধ নেই । নাকি ইচ্ছে করে আজকেও এমন করে আছে? পরমুহূর্তেই আবার মনে হয় উনার তো প্রচন্ড পরিমাণ জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে শরীর দুর্বলতার কারনে এমন হচ্ছে না তো? হ্যাঁ সেটাই হবে , কিন্তু এখন কি করবো? চলে যাবো? নাকি ….
উনাকে এভাবে রেখে আমি কিভাবে যাবো ? সব সময় তো মার কপালে লেগেই থাকে আজকে মারের ভয়ে কিভাবে চলে যাবো ? লাগবেনা সে যাই করুক আগে উনার সুস্থতা তারপর অন্য কিছু ।
খাট থেকে নেমে গিয়ে সোজা ওয়াশ রুম থেকে ছোট একটি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসে । আচ্ছা লাইট টা অন করবো? নাহলে তো ভালো ভাবে বুঝবো না ।
আরিয়া গিয়ে লাইট টা জ্বালিয়ে দিয়ে এসে আবারো খাটের উপর বসলো আফরান এর ডান পার্শ্বে ।
লাইটের আলো চোখে পরতেই আফরান একহাত উল্টে চোখের উপর রাখে ।
আরিয়া ছোট পট্টি টা পানিতে ভিজিয়ে প্রথমেই আফরানের ডান হাত টি স্পর্শ করে মুছতে শুরু করে ।
আফরান কয়েকবার কেঁপে উঠে হয়তো ঠান্ডা পানি শরীরে লাগার কারনে ।
তারপর বাম হাত মুছে দিয়ে একটু নিচে গিয়ে পায়ের উপর থেকে কম্বল টা হালকা টেনে উপরে উঠিয়ে পায়ের তালু সহ অগ্রভাগ মুছে দেয় দুপায়ের ।
এখনো অব্দি পট্টির জল কয়েকবার চেন্জ করেছে ,একটু মুছতেই পট্টি সহ গরম হয়ে যায় ।
আরিয়ার মুখে স্পষ্ট আফসোসের ছাপ ,বিকেল বেলা যদি না ভিজতো নিশ্চয়ই উনিও বৃষ্টি তে আসতেন না আর এখন এই অসুস্থতা দেখা দিতো না ।
পা মুছা শেষ করে মাথার পাশে গিয়ে বসে আবারো পট্টি টা জলে ভিজিয়ে নিয়ে শরীর থেকে কম্বল টা টেনে সরিয়ে দিয়ে নিজেই কাচুমাচু শুরু করে আসলে আরিয়া এতোক্ষণ খেয়াল করেনি বিষয় টা ,কথাটা ভাবার মাঝেই চোখ যায় পেটের উপর সেলাই টার উপর এখনো সব টা শুকায় নি ,কতোটা ব্যাথা নিয়ে আছে বলতে পারবে এই লোকটা? কখনো নিজের জন্য কি একটু ভাবতে ইচ্ছে করেনা এই লোকটার? কথা টা ভেবেই চোখ থেকে জল গড়ায় । কিন্তু এই মুহূর্তে এতো সব ভাবলে চলবে না । কথাটা ভেবেই সব দ্বিধা এক সাইডে ফেলে দিয়ে শরীর ছোঁয়ায় ভেজা পট্টি । সঙ্গে সঙ্গে বুকের উপর হালকা ছোট লোমশ গুলো কাটা দিয়ে জাগ্রত হয়ে উঠে ,আরিয়ার বুজতে বাকি নেই এটা শীতের কারনে হচ্ছে,তাই একটু তারা হুড়োহুড়ি করেই বক্ষ সহ শরীরের সম্মুখ ভাগ মুছা শেষ করে চটজলদি কম্বল টা আবার শরীরে দিয়ে দিলো ।
কিন্তু পিঠ মুছবে কি করে? এটার তো কোনো সুযোগই দেখছি না যাই হোক সমস্যা নেই যেটুকু করেছি চলবে তারপর মুখ টা একবার মুছে দিয়ে কপালের উপর ভাঁজ করে রাখলো ।
আরিয়া খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে কয়েক মিনিট পরপর চেন্জ করে দিচ্ছে কিন্তু এই মুহূর্তে তার পরপর চোখ লেগে আসছে ঘুমে । উনি এতোটা অসুস্থ আগে জানলে কখনোই আজ তার উপর কথা বলতো না আরিয়া সেটা নিয়েই আফসোস চালাচ্ছে এখন ।
পূর্বাকাশে হালকা আলো আকাশে পড়তেই আফরানের ঘুম ভাঙে ,এখনো সূর্য তার আলোক রশ্মি দিয়ে পৃথিবীকে উজ্জ্বলার ছোঁয়া দেয়নি তবে এই বুঝি পূর্ব দিগন্তে সূর্য টা ফুটে উঠবে মনে হচ্ছে।
চোখ খুলতেই আরিয়া কে নিজের বুকে পেয়ে স্মীত হেসে কপালে ঠোঁট ছোয়ায় । আফরান এর ডান হাতের বাহুতে আরিয়ার শুয়ে আছে
__রাতে আরিয়াকে ওভাবেই ঘুমিয়ে পরতে দেখে ভারী শরীর টা নিয়ে উঠে দুহাতে তুলে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো আফরান ।
হাতের ব্যান্ডেজ করার সময়ই আফরানের ঘুম ভাঙে কিন্তু আরিয়া কে তখন বকতে বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিলো না বলেই চুপচাপ যেমন ছিলো তেমন করে থেকেছে । বউ তো পেয়েছে কেয়ারফুল সেটা আরো আগেই বুঝে গিয়েছে আফরান কিন্তু নিজের মতো এমন ত্যারা বউ পেয়েছে সেটা বুঝেছিলো একটু দেরীতে ।
মুখের উপর চুলগুলো সরিয়ে কানে গুঁজে দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় নিষ্পাপ মায়াবী উজ্জ্বলতায় ঘেরা এই ফেইস টা যে কি আছে? এভাবে কেনো টানে ? নিশ্চিত এই মেয়ে ম্যাজিক জানে নয়তো এতো অবাধ্য বউ সে কোনো দিন ও চায়নি তবুও কেনো এই মেয়ের কথা গুলো রাখতে বাধ্য হতে হয় ? এখনো এমন কেউ জন্মায়নি যে কিনা আফরান চৌধুরী কে বাধ্য করবে তবে এই মেয়ে সেটা কিভাবে করে ? এটাকে কি ম্যাজিক পাওয়ার বলে না ?
কথা গুলো বলে আবারো ঠোটের কোনে হাসি জমে , দ্বিতীয় বারের মতো ঠোটের উপর হালকা শব্দে চুমু বসায় ।
এটা মনে হয় ঠিক হয়নি আফরানের জন্য সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে ফেলে কারন আরিয়ার ঘুম ভেঙে গিয়েছে শরীর টা একটু আড়মোড়া দিয়ে দুহাত উঠিয়ে একবার শরীরের অলসতা গুলো ফেলে দিয়ে দুহাতে চোখ কচলিয়ে একবার হামি দিয়ে ভালোভাবে চোখ মেলে তাকায় । আপাতত আরিয়ার কোনো হদিস নেই সব সময়ের মতো তাই সামনে আফরান কে দেখেও এমনিই তাকিয়ে আছে ।
আফরান কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,আমার রুমে আসার জন্য পারমিশন নিয়েছিলি?
আরিয়া কোনো কথা বললো না এভাবেই আছে ।
আফরান এবার বুঝলো এই মেয়ের এই অভ্যাস টা যায়নি ঘুম থেকে উঠে পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যায় । তাই আবারো স্মীত হেসে এক হাতে আরিয়ার গাল আলতো ভাবে স্পর্শ করে বললো ,হয়েছে? আর কতোক্ষণ ?
আরিয়া এবার শুয়া থেকে উঠে চারদিক টা একবার দেখে নিলো , মিনিটের মাথায় নিজের অবস্থান বুঝে হকচকিয়ে উঠে দুহাতে চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে চট করে নিজের উপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে আফরানের দিকে তাকালো,,,
আফরান ও আলিয়ার দৃষ্টি বুঝে কপাল কুঁচকে বললো
__আমার রুমে কখন আসলি? কারো রুমে আসতে হলে যে পারমিশন নিতে হয় জানিস না? নাকি এই টুকু সেন্স নেই নিজের মাঝে?
__আ….আপনি কখন উঠলেন? আমি তো আসিনি । কিন্তু আমি তো এখানে ছিলাম না
___আমি গিয়ে নিয়ে এসেছিলাম ? তোর মনে হচ্ছে? সত্যি করে বল কখন আমার কাছে এসেছিস? রাতে তাইনা ? আবার দেখলাম আমাকে একদম সব টা দিয়ে জড়িয়ে আছিস এসব কি ? একটু বলবি? নাকি আফরান চৌধুরীর প্রেমে একদম হাবুডুবু খাচ্ছিস অন্য মেয়েদের মতো?
__উফফ চুপ থাকবেন? আপনি অনেক অসুস্থ….
এটুকু বলতে আফরান বললো
একদম অজুহাত দিবি না বুঝলি ? এটা বল যে আফরান চৌধুরীর স্পর্শ ছাড়া তোর ঘুম আসছিলো না ।
__আরিয়া এবার বিরক্তি নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নামতে নামতে বললো ,আপনি যা ইচ্ছা ভাবুন ।
আফরান আরিয়া কে নামতে না দিয়ে এক হাতে আকস্মিক হেঁচকা টানে আবার নিজের পাশে শুইয়ে দিলো ।
__আরে কি করছেন? ছাড়ুন বলছি , আমি তো ভেবেছিলাম মারবেন আপনি এখন দেখছি ….
আরিয়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো ,
___এভাবে বিয়ে টা না হলে হয়না? দেখ আরু এভাবে বিয়ে টা হলে আমার বিপক্ষের মাষ্টার মাইন্ড প্লেয়ার লোক গুলো এটা জেনে যাবে এতে ওরা তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। আমার দুর্বল পয়েন্টে আঘাত দিতে পারলেই ওদের জিত হবে আর এটাই ওরা চায় ।
জনতা সাজিয়ে এভাবে বিয়ে টা করার ফল ভালো হবে না আমাদের জন্য। তুই জানিস আমি জানি এতে কি চলবে না ?
আফরানের কথা টা শুনে আরিয়ার চেহারা মুহুর্তেই কালো হয়ে যায় , একদম বিরক্তিকর ছিলো কথা গুলো,
__কেনো হবে না বিয়ে? ? সবার সামনে স্ত্রী দাবি করতে এতোই কেনো আপনার সমস্যা? আর আমার জন্য কি ঐসব কাজ ছেড়ে দেওয়া যায় না? আপনি তো কাল বললেন আমার জন্য এসবে লিপ্ত হয়েছিলেন তবে আমার জন্য ছেড়ে….
এটুকু বলতে আফরান এর মাথাভর্তি রাগের জমা হয় ,এই মেয়েকে কখনো ভালো ভাবে বুঝানোই বৃথা । লাগবেনা একে বুঝানোর যা ইচ্ছা করুক আমার কি?
কথাগুলো ভেবেই শুয়া থেকে চট করে উঠে আরিয়ার হাত ধরে টেনে খাট থেকে নামিয়ে টানতে টানতে দরজার বাইরে বের করে দিয়ে বললো
__ নেক্সট টাইম আমার কেয়ার করতে আসার দরকার নেই ,তোর ঐ অর্ধ কেয়ার নিজের কাছেই রাখ ।
কথাটা বলেই মুখের উপর ঠাস করে দরজা টা আটকিয়ে দেয় ।
বিষয় টা এমন ভাবে হয়েছে যে আরিয়া কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেনি ।
জাফর সাহেব সহ খলিল সাহেব আয়শ এমন কি সাদেক সহ একটু ব্যাস্ততায় আছে অন্য কোনো কাজের জন্য নয় বিয়ের ব্যাপার নিয়েই চিন্তিত কিভাবে কি করলে এতো জলদি করার মধ্যেও সব টা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায় । জাফর আর আয়শ অফিসে সব কিছু সিউ কে দায়িত্ব স্বরুপ কিছু দিনের জন্য দেখতে বলেছে আপাতত তারা বাহিরের কাজ নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে না ।
সাদেক কে আয়শ বলে কয়ে মানিয়েছে কিছুদিনের জন্য থেকে যেতে সাদেক বৃআপার টানতে অসম্মতি জানাতে চেয়েও পারেনি চোখের সামনে সব টা হয়েছে তারাহুড়ো করে এই অবস্থায় অবশ্যই তাকে প্রয়োজন পরবে দুজন মানুষ কতোক্ষণ করবে?
ছোট টেবিল টার উপর একটা সাদা পেইজ রেখে আয়শ সবার মতামত নিয়ে গুছিয়ে লিখছে ধারাবাহিক ভাবে কোন টা কিভাবে হবে । বিয়েটা যদি হয় পাঁচ দিনের দিন তার মানে সাঙিদের অনুষ্ঠান , হলুদের অনুষ্ঠান,বিয়ে মিলিয়ে তিন দিন সময় নিবে তার আগেই শপিং থেকে শুরু করে লোকজন আমন্ত্রণ জানানো আরো ছোট ছোট দিক গুলো ঠিক ভাবে করতে হবে ।
এই ছেলে কি ভেবে পাঁচ দিন সময় দিয়েছে সে জানে একমাত্র এতো কম সময়ে সব কিছু কিভাবে করা যাবে ?
এখন তো এসব ভেবে লাভ নেই তাই যেভাবে হোক মিলাতে হবে তাই একসঙ্গে সবাই বসেই ধারাবাহিক ভাবে কম সময়ে কিভাবে করা যায় সেটা নোট করছে নয়তো দেখা যাবে তারাহুড়োর মধ্যে কিছু মিস্টেক হয়ে গিয়েছে ।
প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় নিয়ে সব কিছু ঠিক ভাবে সময় বের করেছে ,
জাফর সাহেব একবার জোড়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন যাক শেষ পর্যন্ত শেষ হলো আমাদের চিন্তা ভাবনা । তা আয়শ কতো জন হবে আসবে?
আয়শ: বাবা দুরের আত্মীয় স্বজনের মোট সব মিলিয়ে ছয় শত এর কাছাকাছি হয়ে গিয়েছে ।
জাফর সাহেব: তাতো জানতাম ই ,আমার মামনির বিয়ে বলে কথা বড়সড় না হলে হয় ?
খলিল সাহেব: ভাইজান এতো কিছুর কি প্রয়োজন ছিলো ,আর এতো শত লোকের কি দরকার ছিলো ,এতে তো অনেক খরচের বিষয় ।
জাফর হেসে বললেন
__খলিল তুমি আমাকে এখনো মনে হয় আপন ভাবতে পারোনি মেয়েটা তোমার একার না ।
___আসলে ভাইজান আমি সেটা বলতে চাইনি , আসলে শুধু শুধু এতো খরচ করে……
কথার মাঝেই আফরান উপর থেকে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নামতে নামতে বললো
__আয়শ সংখ্যা টা আবার বল তো ?
আফরানের গলা শুনে সবাই সেদিকে তাকায়
আয়শ:- কিসের কথা বলছিস?
__একটু আগে যে বললি দুর থেকে দুরবর্তী নিকটাত্মীয় সহ কতো জন হলো?
__ছয়শত এর কাছাকাছি হবে সবার পরিবারের সকল লোকদের মিলিয়ে ।
___আফরান বাঁকা হেসে বললো ,আমার বিয়ের ইনভাইট আমি করবো তোদের কে এটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না ।
__জাফর: কি বলছো হ্যাঁ ? বড়দের সামনে নিজের বিয়ে বলে চেঁচাতে লজ্জা…
জাফরের কথা থামিয়ে বললো
আমার বিয়ের কথা আমি না বললে কে বলবে স্ট্রেন্জ । আবারো বলছি যা ইচ্ছা করো বাট বিয়েতে কজন আসবে সেটা আমার ইচ্ছে তে হবে । কথা টা বলে আফরান বাড়ির গেইট পেরোয় ।
জাফর: দেখলে সব সময় বাড়াবাড়ি ছাড়া এই ছেলের কাজ নেই ।
আয়শ: আচ্ছা বাবা ছাড় এসব যেটা ভালো মনে করবে সেটাই করুক বিয়ে করতে যে এমন ভাবে রাজি হয়েছে সেটাই তো অনেক ।
খলিল : হ্যাঁ ভাইজান আফরান এর কথায় মন খারাপ করো না তাছাড়া এতো লোকজন এসে কি করবে ?আমরা চেয়েছি যেনো কেউ কটুকথা না বলতে পারে সে হিসেবেই হচ্ছে অন্তত সবাই তো জানবে এতেই চলবে ।
সাদেক: হ্যাঁ চাচা আমারো মনে হয় ,আর আফরান ব্রো নিশ্চয়ই ভেবেই বলেছে ।
আফরান অফিসে নিজের রুমে দাড়িয়ে আছে স্ট্রংলি দুহাত পকেটে গুঁজে । কাঁচের দেয়াল টার উপর থেকে লাল পর্দা টা সরিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে ।পেছনেই তানভীর কিছু শুনার আশায় সবে মাত্র এসেছে।
__জি স্যার বলুন
___শুধু মাত্র পরিচিত লোকজন ছাড়া একটা অতিরিক্ত মানুষ যেনো ভেতরে না ঢুকতে পারে । পুরো বাড়ি যেনো গার্ড দিয়ে ঘেরাও করা থাকে ।
তানভীর আফরানের কথার মানে বুঝতে পারলো না তাই প্রশ্ন করলো , স্যার ঠিক কিসের কথা বলছেন বুঝিনি যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন কার বাড়ি? কিসের লোকজন?
আফরান তানভীরের দিকে ঘুরে কপাল কুঁচকে বললো
কিসের কাজ করিস? নিজের বসের সাথে কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই দেখছি জানিস না । একটু ধমকিয়ে বললো কথাটা
__ স্যার সরি ! বলে দৃষ্টি নত হয়ে ফ্লোরের দিকে তাক করলো তানভীর।
আফরান একটু গলা স্বর চেন্জ করে বললো
___তোর ভাবির সাথে ঠিক পাঁচ দিন পর কারো বিয়ে । কথা টা বলেই আফরান বিরক্তি নিয়ে জায়গা থেকে সরে গিয়ে চেয়ারে বসলো ।
তানভীর যেনো ভুত দেখার মতো আশ্চর্য হলো ,সত্যি স্যার বিয়ে করবে ? সেটাও অনুষ্ঠান মাফিক ?
__স্যার আপনি কি সত্যি…
আফরান বিরক্ত নিয়ে বললো ,তোর কি মনে হচ্ছে ফাজলামি….
তানভীর:সরি স্যার । আসলে আপনি যে এমন করে হঠাৎ ডিসিশন টা নেবেন ভাবিনি তাই আর কি ।
___স্টপ ,যেটা বললাম সেটা বুঝেছিস?
তানভীর বুঝলো একটু আগের কথা টা বুঝাচ্ছে আফরান তাই সম্মতি জানিয়ে বললো ,জি স্যার বুঝতে পেরেছি ।
__গুড । আর ঐ দুটোর খাতিরদারি কেমন চলছে ?
___তানভীর একবার ঢুক গিলে বললো ,, মিসেস শবনমের দুটো হাত আলাদা করে দেয়া হয়েছে ।
আর কাল রাতে ঐ নাবিল পালানোর চেষ্টা চালিয়েছিলো ।তবে আপনি চিন্তা করবেন না ছেলেপুলে রা তার আগেই ধরে নিয়েছে আপনি বললে পা দুটো আলাদা করে দেবো বডি থেকে ।আপনাকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি ফোন তুলেননি তাই ভেবেছি ব্যাস্ততায় আছেন মনে হয় ।
_তানভীরের মুখ থেকে কথা টা শুনা মাত্রই আফরানের মাথা টা ভারী হয়ে আসলো ,টেবিলের উপর একবার হাত মেরে দাঁতে দাঁত পিষিয়ে বললো ,তোদের কে কি ওখানে এমনি এমনি পুষে রেখেছি ? কি করছিলি পালানোর মতো সুযোগ হয় কি করে?
তানভীর কিছু বলতে যায় তার আগেই আফরান চেয়ার ছেড়ে উঠে সামনে হাঁটা ধরলো ।
তানভীর বুঝলো আফরান এর মাথা টা আবারো বিগরে গিয়েছে ।গত দুবছরে ও কাউকে এভাবে যন্ত্রণা দায়ক ভাবে মারেনি এখন আবার শুরু হয়েছে এই খেলা ।
তানভীর গাড়ি টা সোজা ঐ বাংলোর গেইটে গিয়ে থামালো, তানভীর দরজা খুলে দেওয়ার আগেই আফরান বের হয়ে গলার টাই টা এক টানে খুলে ছুড়ে ফেলে ডিরেক্ট ভেতরে যায় ।
তানভীর আফরানের এই দ্রুত পায়ের সাথে কদম মিলাতে না পেরে কিছু টা দৌড়ে ভেতরে ঢুকে মানুষের মাংসের পচা গন্ধ পুরো বাঙলো তেই ছড়িয়েছে । তানভীর জানে এটা কিসের কার শরীরের দুর্গন্ধ। শবনমের দুহাত থেকে যতো রক্ত বেরিয়েছে সব রক্ত এখনো সেই জলন্ত তেলের কড়াই তে গাঢ় হয়েছে সঙ্গে দুহাত তো এই কড়াইতেই ফেলে ভাজা হয়েছে । সব মিলিয়ে বাজে গন্ধ যেটা তানভীর নিজেই আজ হজম করতে পারছেনা অথচ আফরান মনে হয় কিছু বুঝেইনি নিজের মতো করে গিয়ে নাবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে কালো কাপড় টা খুলে সাইডে ফেলে পা দিয়ে লাথি মারে , চেয়ার সহ উল্টিয়ে পরে নাবিল মুখে কাপল বাধা।
আফরান তানভীরের দিকে সেই হিংস্র দৃষ্টি ফেলে সঙ্গে সঙ্গে তানভীর গিয়ে নাবিলের মুখ থেকে বাছাইকৃত কাপর টা খুলে দিয়ে আবার স্বস্থানে এসে দাঁড়ায় । তানভীরের শরীর কাঁপছে সে জানে এখন কি হতে চলেছে ।
নাবিল দুর্বল গলায় বললো , অমানুষ দেখেছি কিন্তু তোর মতো নরক পশু আর দুটো দেখিনি ,তোর কি মনে হয় আরিয়া যদি এসব কখনো জানতে পারে কখনো তোর দিকে প্রেমময় দৃষ্টি ফেলবে?
ও খুব নিষ্পাপ নিজেকে ওর মধ্যে খোজতে যাসনা আফরান । ওর পবিত্রতায় আঘাত পরবে।
__খুব বেশি কথা বলে ফেলছিস
কথাটা বলে পাশের টেবিল থেকে ত্রিশ ইঞ্চির করাত টা হাতে নিয়ে বাম পায়ের ঠিক হাঁটু বরাবর আঘাত করে আঘাত করে মুহূর্তেই নাবিলের চিৎকারের আওয়াজে পুরো বাঙলো যেনো কেঁপে উঠে , কিছু রক্তের ছাপ ছিটকে এসে আফরানের সাদা শার্টে পরে লাল বর্ন ধারন করে ।
এতে আফরানের বেশ উৎফুল্ল বোধ অনুভব হয় । ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে শব্দহীন।
__বলেছিলাম ঠিক তিন বছর পর একেবারে খতম করবো আফরান চৌধুরী কখনো কথার খেলাফ করেনা । কথা টা শেষ করেই হাতের সদ্য ধারালো করাত টা ছুড়ে ফেলে তানভীর কে বললো ,ঐ মহিলা কোথায় ?
তানভীরের পরিহিত শার্ট ঘেমে একাকার হয়ে গেছে । মুখ খানা যেনো মাত্র পানিতে চুবিয়েছে মনে হচ্ছে আফরানের কথায় কাঁপতে কাঁপতে বললো ,
__মি… মিসেস শবনমের ক.. কথা বলছেন স্যার?
___আরো অন্য কোনো লেডিসও কি আটকে আছে নাকি?
__ব্লাক রুমে আছে স্যার
আফরান বাঁকা হেসে উপরে হাঁটা ধরে ।
ব্লাক রুমে গিয়ে প্রথমে সব টা রুমে একবার চোখ বুলিয়ে বললো ,এটার জ্ঞান ফিরা দুই মিনিটে ।
পাশ থেকে একজন বলে উঠলো
__স্যার একটু আগেই কড়াই তে নিজের বাহু অব্দি হাত খানা ভাজতে দেখে জ্ঞেন হারিয়েছে আপাতত এখন ফিরবে বলে মনে হয়না ।
আফরান চুপ করে একবার লোহার কড়াইতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে পাশ থেকে ১০ কেজি ওজনের তেল টা ঢেলে দিয়ে বললো তেল প্রবহমান হওয়া রাখবি । কথাটা বলে রুম থেকে চলে এসে সোজা বাঙলো থেকে বের হয়ে যায় ।
তানভীর ও এক সেকেন্ড দেরী না করে আফরানের পিছু গিয়ে আগেই গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেয় ।
কিছু টা পথ যাওয়ার পর আফরান তানভীর কে উদ্দেশ্য করে বললো ,
__মাই মাদার ইন লো গালতি সে মিস্টেক কেয়া ।
তানভীর একটু অবাক হয় আফরানের মুখে এমন কথা শুনে,
__কি করেছে স্যার ?
__আমার বাচ্চা বউয়ের গালে হাত তুলেছে কি করা যায় বল তো ওটাকে ।
তানভীর একবার ঢুকে গিলে ,এক বাড়িতে থেকে এখনো ওরা বুঝতে পারেনি স্যার কে নিজের দুঃখ নিজে ডেকে আনে কে যে ভাই সব গুলো মাথা মোটা মনে হচ্ছে,কথা টা তানভীর মনে মনেই ভেবেছে ।
___স্যার কি করতে হবে বলুন,,ভাবির মা হিসেবে কি উনাকে…..
এটুকু বলতেই গাড়ির মেরুরে আফরানের চেহারা টা দেখে একবার ঢুকে গিলে কথা চেন্জ করে বললো ,সরি স্যার ,আমাকে বলুন কি করতে হবে ?
সকালে হিসেব মতো আজকেই সবাই শপিংএ যাবে যতো রাত্রি হোক না কেনো আজকে যতো কেনা কাটা আছে কমপ্লেটকরতে হবে নয়তো আর সময় কই?কাল থেকে বাড়ি সাজানো গোছানো আরো কতো কাজ বাকী ।
এখন দুপুর ঠিক তিন টার মাথায় ঘরির কাটা । চৌধুরী বাড়ির গেটের বাইরে তিন টি গাড়ি একসাইড করা এগুলো দিয়েই মলে পৌঁছাবে সবাই ,গাড়ি গুলোও নিজস্বই তবে সব সময় সব গুলো কাজে লাগে আসেনা ।
আর আফরান এর গাড়ি তো কারো ধরার জন্য পারমিশন নেই এক্সট্রা দুটি গাড়ি আফরানের সিস্টেম গুলো একটু ভিন্ন টাইপ দেখেই বুঝা যায় আলাদাভাবে ডিজাইনার কে অর্ডার করে তারপর বানানো হয়েছে দুটো গাড়ি ।
জাফর সাহেব আর খলিল সাহেব নিচে কখন থেকে বাড়ির মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করে করে বোরিং হয়ে যাচ্ছে অথচ এদের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই অবশ্য সাদেক ও আছে তাদের সাথে ।
সামিরা একটু ধুসর রঙের একটা লং জামা পরে সাইড করে উড়না টা ফেলে দিয়েছে । একটু খুশি আছে বাড়ির সবাই কারন চৌধুরী বাড়ির প্রথম বিয়ে বলে কথা । আয়ের বিয়েটা কিভাবে হয়েছিলো সেটা তো আর নাই বলা যায় এটাকে কোনো রকম বিয়ে বলে এই আর কি ।
সামিরার সাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ঠোঁট দুটো একটু গাঢ় লাল রঙে রাঙাচ্ছে লিপস্টিক দিয়ে আয়নাতে দেখে দেখে ।
তার মধ্যেই হঠাৎ করে রুমে উদয় হয় আয়শ ।আয়শ কে আয়না তবে দেখে একটু হকচকিয়ে যায় যার কারনে লিপস্টিক টা ঠোঁটের বাহিরে এক কোনে লেপ্টে লেগে যায় ।
পেছন ফিরে ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বললো
__,দিলেন তো নষ্ট করে এখন কি হবে ? দেখতে কি বাজে দেখাচ্ছে সব টা আপনার জন্য হয়েছে । কথাটা বলে আবার আয়নাতে তাকিয়ে পাশ থেকে ছোট একটা কাপর নিয়ে লিপস্টিক টা ঠিক করতে লাগলো ।
আয়শ মুচকি হেসে সামিরার কাছে গিয়ে বললো
__এটা আমার কাছে দাও ঠিক করে দেই
সামিরা একটু বিরক্ত নিয়ে বললো
__বাজে কথা বন্ধ করুন ।
আয়শ কথা না বাড়িয়ে সামিরার হাত থেকে কাপড় টা নিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে একহাতে সামিরার মাথার পেছনে হাত রেখে অন্য হাতে লিপস্টিক টা ঠিক করতে লাগলো
সামিরার যেনো হৃদপিন্ড টা বারবার কেঁপে উঠছে ,চোখ দুটো দিয়ে একবার আয়শের দিকে তাকাচ্ছে তো চোখাচোখি হয়ে গেলে আবার অন্য দিকে ফিরিয়ে নিচ্ছে।
আয়শ মৃদু হেসে হাতের ছোট কাপড় টা ড্রেসিং টেবিলের এক সাইডে রেখে বললো ,হুম ঠিক হয়েছে কিনা দেখো তো ?
সামিরা আয়নাতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠোটের দিকে তাকানোর আগে আয়শের দিকে তাকায় ।
___আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই লেট হচ্ছে নিচে বাবা অপেক্ষা করছে ।
সামিরা নিজেকে ফিরিয়ে ঠোঁটে তাকিয়ে নিম্ন গলায় বললো ,
__হুম ঠিক আছে
আয়শ : চলো তাহলে কথাটা বলে সামিরার বাম হাতে নিজের ডান হাত একসাথে করে সামনের দিকে হাটা ধরলো ।
___কিছুদিন ধরে সব কিছু তেই আমাকে আশ্চর্য করছেন বারবার
___যছটা হবার সেটা হবেই । আমি মিথ্যে বলছি না সামু ভালোবাসি তোমায় । কথাগুলো আয়শ যেতে যেতেই বললো ।
সামিরা :- হাত ছাড়ুন নিচে বাবা আছে কিছু মনে করবে ।
আয়শ : নিচে আছে রুমে নয় , যতোক্ষণ সুযোগ পাবো এভাবেই থাকতে চাই তোমার জীবনে ।
সামিরা আর কথা বাড়ালো না ,লোকটা ইদানিং একটু বেশিই বলে ফেলছে কি জানি কি হয়েছে হঠাৎ করে ।
সবাই গাড়িতে উঠার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে সবাই রেডি , তবে আরিয়া ভর দুপুর বেলা একটু ঘুমিয়ে ছিলো বলে যাবার আগে শাওয়ার নেওয়ার কারনে একটু লেইট হয় । প্রেমা ডাকতে এসেছিলো আরিয়া বলেছে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসবে তাই প্রেমা আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিচে গিয়ে সবাইকে বলেছে আসতেছে আরু এক্ষুনি এটা শুনে সবাই বেরিয়ে যায় । কিন্তু গাড়িতে উঠার আগে চোখ যায় মাত্র একটা গাড়ি ভেতরে ঢুকেছে গাড়িটা দেখে চিনতে অসুবিধা হয়নি এটা কার গাড়ি।
সাইড করে গাড়ি পার্ক করে নেমে বাড়ির সবাই কে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে তাকায় । মিনিটের মাথায় বুঝে যায় এর কারন টা পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবে দ্বিতীয় বারের মতো সবাইকে প্রত্যক্ষ করে দ্রুত পায়ে সামনে হাঁটা ধরে ।
পেছন থেকে জাফর সাহেব বলে উঠলো
__তুমি কি যাবে এ আমাদের সাথে ?
আফরান কপাল কুঁচকে একবার পেছনে তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় ।
জাফর :দেখলে কতো বড় বেয়াদব এই ছেলে কোনো কথার দু পয়সা দাম দেয় না ।
আয়শ : বাদ দাও না বাবা ,ওর যা ইচ্ছা করুক নিজের জন্য নিশ্চয়ই আলাদা ভাবে অন্য কোথাও থেকে আনিয়ে নেবে তাছাড়া আফরান কে মার্কেটে যেতে দেখেছো কখনো?
জাফর সাহেব কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পায়ে গাড়িতে উঠে বসলেন ।
আফরান ভেতরে গিয়ে সোজা অরিয়ার রুমে ঢুকে ডিরেক্ট বললো
__কিছু না জানিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
আফরানের কথার আওয়াজ শুনে আরিয়া পেছন ফিরে তাকায়
পরনে হুয়াইট কালারের জামা যার মধ্যে গোল্ড পাথরের কাজ করা । সেলোয়ার টা কিছুটা ধুতি সিস্টেম সেটাতেও পাথরের কাজ । ঠোঁটে গোলাপী লিপস্টিক একটু গাঢ় করেই দিয়েছে । দুহাতে দু মোট কাঁচের চুড়ি ,কপালে টাও খালি নেই আজ সাদা পাথরের ছোট একটা টিপ লাগানো । চুল গুলো ছেরে দেওয়া যাকে এলো কেশ বললেই চলে এক প্রকার তার উপর আবার চুলের মধ্যবর্তী জায়গা গুলো তে ছোট ছোট ফুলের পিন ক্লিপ ।
এমন ভাবে আরিয়া কে দেখে যেখানে আফরানের মুড চেন্জ হওয়ার কথা সেখানে অন্য সবার মতো না হয়ে উল্টো চোখ জোড়া লাল হয়ে আসে হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে ।
আরিয়া এসবে খেয়াল না করে একটু লজ্জা মাখা মুখ করে বললো
___ এতো গুলো বছর পর এভাবে সেজেছি।সত্যি করে বলুন না কেমন লাগছে ?
আফরান এর কাছে কথা গুলো বিষাদময় লাগছে ,নিজের জায়গা ছেড়ে আরিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো ,খুব শক হয়েছে না সুন্দর করে সেজে গুজে শপিং এ যাওয়ার ।
আফরান এর কথায় মধ্যে কঠোরতা বুঝে আরিয়ার বুক টা কেঁপে উঠে । এটার জন্যেও বকবে আমায় ? এমন কি করেছি ? এভাবে কথা বলছে কেনো উনি ?
কথা টা ভাবার মাঝেই আকস্মিক চোখ জোড়া বড় হয়ে যায় নিজের ঠোঁটে কারো ছোঁয়া পেয়ে । বুঝতে বাকি নেই লোকটা তার সাজুগুজু নষ্ট করার জন্য এসেছে তাই দুহাতে আফরান কে নিজের থেকে ছাড়ানোর জন্য দুহাতে কিল ঘুষি মারতে থাকে একাধারে কিন্তু আফরানের কোনো নাম গন্ধ নেই আরুকে ছেড়ে দেওয়ার ।
আরিয়া ঠোঁটে ব্যাথা অনুভব করে চোখ জোড়া না চাইতেও ভিজে উঠে ।এতো জোড়ে কেউ কামড় দেয় ঠোঁটে? নিশ্চয়ই ছিলে গিয়েছে ঠোঁট খানা ।কপাল টাই খারাপ সবার সাথে বের হয়ে যেতাম আগেই সেটা ভালো ছিলো মনে হয় ।
মিনিট দুয়ের মতো কিস করে ঠোঁট ছাড়ে । আরিয়া সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দেয় । দ্রুত আয়নার সামনে গিয়ে তাকিয়ে বললো ,
__দিলেন তো সব টা শেষ করে ? এখন কি করে যাবো সবার সামনে ?
আফরান বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নিজের ভেজা ঠোট মুছে ঠোঁটে বাঁকা হাসি একে বললো
__না বলে এভাবে মেকাব জন্য তোর শাস্তি এটা মনে কর । এভাবে সেজেগুজে বাহিরে যাওয়ার সাহস কি করে হয় তোর ?
আরিয়া ঠোঁটের কোনে জমে থাকা এক বিন্দু রক্ত হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বললো
মি মাফিয়া পর্ব ৫৪
___আপনি এমন কেনো? বললেই তো হতো আমায় যে ,এমন করে সেজে বাহিরে যাবি না ।আর সবাই তো সেজেছে আমি কেনো সাজবোনা আজব তো । কথাটা বলে আবারো নাক টেনে কান্না শুরু করে দেয় আরু।
___এমন ভাবে লিপস্টিক দিয়েছিস আমার মনে হলো যে তোকে পেত্নির মতো লাগছে তাই একটু কমিয়ে দিলাম । তারপর…..