মি মাফিয়া পর্ব ৫৬

মি মাফিয়া পর্ব ৫৬
সুমাইয়া সাবিহা

মিনিট দুয়ের মতো কিস করে ঠোঁট ছাড়ে । আরিয়া সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিয়ে দ্রুত আয়নার সামনে গিয়ে তাকিয়ে বললো ,
__দিলেন তো সব টা শেষ করে ? এখন কি করে যাবো সবার সামনে ?
আফরান বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নিজের ঠোট মুছে ঠোঁটে বাঁকা হাসি একে বললো
__না বলে এভাবে সাজার জন্য তোর শাস্তি এটা মনে কর । এভাবে সেজেগুজে বাহিরে যাওয়ার সাহস কি করে হয় তোর ?
আরিয়া ঠোঁটের কোনে জমে থাকা এক বিন্দু রক্ত হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বললো

___আপনি এমন কেনো? বললেই তো হতো আমায় যে ,এমন করে সেজে বাহিরে যাবি না ।আর সবাই তো সেজেছে আমি কেনো সাজবোনা আজব তো । কথাটা বলে আবারো নাক টেনে কান্না শুরু করে দেয় আরু।
___এমন ভাবে লিপস্টিক দিয়েছিস আমার মনে হলো যে তোকে পেত্নির মতো লাগছে তাই একটু কমিয়ে দিলাম ।
আরিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে অভিমানী দৃষ্টি তে ঠোঁট ফুলিয়ে আছে ।
আফরান আরিয়ার মনোভাব বুঝতে পেরে কপাল কুঁচকে আরিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো ,
__এভাবে আছিস কেনো ? ফার্স্ট যা সবাই ওয়েট করছে তো । কথা টা বলে বাঁকা হেসে আরিয়া কে পেছনে ফেলে নিজে সামনের দিকে হাটা ধরে ।
আরিয়া কি যেনো ভেবে দৌড়ে আফরানের সামনে গিয়ে দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে দাঁড়ায় ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

___এভাবে পথ আটকাচ্ছিস কেনো ? সামনে থেকে সরে দাড়া। আরিয়া কথা না বলে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে ।
___হয়েছে টা কি বলবি তো ?
আরিয়ার মুখে তবুও কোনো বাক্য নেই ।
__দেখ আরু শুধু শুধু রাগ উঠাস না ,এসব খোলে ফেল এভাবে বাহিরে যাওয়ার চিন্তা বাদ দে ।
__এসব চেন্জ করতে সময় লাগবে আধা ঘন্টা সব মিলিয়ে এতোক্ষণ সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করবে বলে আপনার মনে হয় ?
__আমি কি জানি তখন এটা মাথায় ছিলো না তোর ?
__না
____আবার মুখের উপর বলে দিচ্ছিস

দুজনের কথার মাঝে প্রেমা আকস্মিক আরিয়ার রুমে এসে বলতে লাগলো –
আরু সবাই অপেক্ষা করছে তো আর কতক্ষন?
কথা টা বলেই নিজের মুখের উপর নিজের হাত রাখে দুজন কে এভাবে দেখে ।
আরিয়া আফরানের সামনে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো ,সবাই কে চলে যেতে বল আমাকে উনি নিয়ে যাবেন ।
আফরান আশ্চর্য প্রকাশ করে বললো ,হুয়াট? এখন আমাকে ঐসব মলে যেতে হবে সেটাও কোনো মেয়ের জন্য?
আরিয়া আবার আফরানের দিকে তাকিয়ে বললো
অবশ্যই আপনার জন্য নষ্ট হয়েছে সব কিছু আপনি তো‌ নিয়ে যাবেন তাইনা ।
___এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে আরু।
আরিয়া আফরানের কথা টা পাত্তা না দিয়ে প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো

___কি বলেছি বুঝেছিস?
প্রেমা মুখের উপর থেকে হাত বাড়িয়ে কাঁপা গলায় বললো
আরু তোর ঠোঁটে রক্ত কিভাবে কেটে গে…..
এটুকু বলতেই আফরানের দিকে চোখ যায় প্রেমার আর বুঝতে বাকি নেই এখানে কি হয়েছে তাই কথা না বাড়িয়ে দ্রুত রুম ছাড়ে ।
প্রেমা যাওয়ার পর আরিয়া আফরানের দিকে ফিরে বললো
__অবশ্যই আপনাকেই নিয়ে যেতে হবে নয়তো আমার জামা আর কেনা হবে না কি পড়বো আমি ?
আফরান স্বাভাবিক মুডে এসে হাত থেকে কোট টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে আরিয়ার শরীরে উড়নার আঁচল টা হাতে নিয়ে ঠোঁটের কোনে জমে থাকা রক্ত মুছে দিয়ে বললো ,খুব ব্যাথা পেয়েছো?
আরিয়া যেনো এবার একটু সাহস পেলো নিজের উক্তি ব্যাক্ত করার ,

__সব সময় তো এমন ব্যাথা দিন আলাদা ভাবে বলার কি আছে ?
কথাটা বলে আফরান এর সামনে থেকে সরে গিয়ে কবার্ড খুলে নতুন আরেক সেট জামা নিয়ে বললো ,
__কোথাও পালিয়ে যাওয়ার একটুও চেষ্টা করবেন না আমি এই যাচ্ছি আর আসছি ।
কথাটা বলে ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়ালে আফরান পেছন থেকে আকস্মিক আরিয়া কে কোলে তুলে নিয়ে খাটের উপর বসায় ।
___আরে কি করছেন এভাবে এখানে কেনো নিয়ে আসলেন দেরী হয়ে যাচ্ছে তো ।
___আফরান কথা না বাড়িয়ে চুলের সাথে গাঁথা ছোট পাথরের ক্লিপ গুলো ছাড়িয়ে দিতে লাগলো ।
__আমি তো একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম এগুলোর কথা নিশ্চয়ই চেন্জ করার সময় উলট পালট হয়ে শরীরে আঘাত লাগতো ।
আফরান চুপচাপ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে,ক্লিপ খোলা শেষে ফ্লোরে দুই হাঁটু গেড়ে বসে হাতের চুড়ি গুলো আস্তে ধীরে খুলে দিতে লাগলো ।

___জানেন একটা কথা এখন হঠাৎ করেই মনে হলো ।
আফরান উত্তর করলো না ।
__আশ্চর্য তো এমন বোবা হয়ে আছেন কেনো ?
আফরান এবার ভ্রূ উঁচিয়ে আরিয়ার দিকে দৃষ্টি ফেলে
আরিয়া একটু ভীত গলায় মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বললো
___আরে আমি তো এমনি বললাম । আপনি কেনো বোবা হতে যাবেন ,আসলে কথা টা হলো আমার হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো পুরনো একটা কথা ,ঐ যে প্রথম যখন সামিরার মা বাবা এসেছিলো না এই বাড়িতে মনে আছে আপনার? আপনি সেদিন ও আমার সাজগোজ নষ্ট করে দিয়েছিলেন ,সেদিন ও একটু এমন করই সেজে ছিলাম সেদিনও আপনি আমায় ব্যাথা দিয়েছিলেন ।তবে সেদিন হাতে আর আজ ঠোটে ।
আফরান এবার স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায় চুড়ি গুলো এক সাইডে রেখে ।
চুড়ি খোলা শেষ হতেই আরিয়াও উঠে দাঁড়িয়ে বললো

__নিয়ে যাবেন তো সত্যি ? নাকি আশাহত করবেন?
___নিয়ে গেলে হেপি?
আরিয়া উৎফুল্ল কন্ঠে আফরানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
__এতো এতো এতো গুলো হেপি । আপনার সাথে কখনো বের হয়নি অন্য কাপলরা কতো সুন্দর….
এটুকু বলতে আফরান আরিয়া কে এখানে রেখেই রুম থেকে বের হতে হতে বললো
__বেশি কথা বলে বলে আমার মাথা টা রোজ রোজ চিবিয়ে খাচ্ছিস এবার একটু মুখ টা বন্ধ কর । তোকে আশকারা দিয়ে সেদিন কথাগুলো বলাই উচিত হয়নি নয়তো প্রতিদিন এইসব কথা আর কাজ কর্মের কি অবস্থা হতো তুই ভাবতে পারছিস না ।
কথা গুলো বলতে বলতে রুম ছাড়লো আফরান ।
আফরান এর কথা শুনে আরিয়া স্মীত হেসে নিজে নিজে বললো
__,আপনাকে এভাবেই খুব জলদী স্বাভাবিক করে নিবো নিজের মতো করে দেখে নিবেন ,দিন টা হয়তো খুব বেশি দেরী নয় ।

প্রেমা গিয়ে সবাইকে বলে দিয়েছে আরুকে আফরান ভাইয়া নিয়ে যাবে বিষয় টা সবার কাছে একটু বিস্ময়কর বিষয় হলেও বিশ্বাস না করে উপায় নেই কারন আসার হলে এতোক্ষণে এসেই যেতো তাই আর অপেক্ষা না করে সবাই গাড়িতে উঠে বসে ।
প্রথম গাড়িটিতে জাফর সাহেব,খলিল সাহেব, রহিমা বেগম বড়রা গিয়েছেন । অবশ্য এখন আর তিন টা গাড়ির প্রয়োজন ছিলো না তবুও আয়শ সাদেক কে কথার ছলে কথা কাটিয়ে আলাদা ভাবেই গিয়েছে ।
গাড়ি থামে বিশাল বড় এক কাঁচের দেয়ালের বিল্ডিং এর সামনে । এটা বাংলাদেশের সব গুলো ব্রান্ড মল গুলোর একটি।
গাড়ি গুলো এক সাইড করে পার্ক করে সবাই ভেতরে ঢুকে।

যে যার মতো করে পছন্দ করছে , অবশ্য যারা উপস্থিত নেই তাদের জন্য ও ক্রয়ের নির্দেশ দিয়েছেন জাফর সাহেব এই যেমন সাদেক কে একটু আগে কড়া গলায় বলে গেলেন তার মা বাবার জন্য ও যেনো যা যা প্রয়োজন সব টা কিনে এতে দ্বিমত চলবে না এমন কড়া গলার আদেশে মুখের উপর কিছু বলতেও পারলো না বেচারা ।
এখানে প্রেমা নিজেকে একটু অসহায় বোধ করছে তখন থেকে সামিরার পাশে দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করে যাচ্ছে।ও তো আস্তে চায়নি জাফর সাহেবের কঠোর বানী কি ফেলা যায় নাকি তাইতো বাধ্য হয়ে এসেছে ।
সামিরা প্রথমেই প্রেমার জন্য জামা দেখছে সামিরা বুঝতে পারছে প্রেমার অস্বস্তি বোধের কথা মুখে না বললেও চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
প্রথমেই নীল রঙের একটা লেহেঙ্গা বেছে নিয়ে প্রেমা কে দেখিয়ে বললো

__এটা তোকে খুব সুন্দর মানাবে দেখ তো তোর পছন্দ হয় কিনা
___আমি এতো সব বুঝি না যেটা ভালো মনে করবি সেটাই দেখ ।
___ওকে এটা চেন্জ করে আস আগে তারপর দেখি ।
প্রেমা ড্রেস টা হাতে নিয়ে চেন্জ করতে চলে গেলো ।
সামিরা একের পর এক জামা গাউন কিংবা বিভিন্ন ধরনের জামা দেখছে আয়শ হঠাৎ করে কোথা থেকে উদিত হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বললো ,
__সুযোগ পেয়ে দেখছি আমার বাবার সব টাকা শেষ করে ফেলবি মনে হচ্ছে।আয়শের কন্ঠ শুনে পাশ তাকিয়ে এক কদম দুরের গিয়ে বললো

__আ..আপনি কখন আসলেন এখানে ?
__তুই বুঝি আমাকে দেখিসনি এখানে আসতে ?
___এতোক্ষন তো ছিলেন‌না তাই বললাম।
__হুম নিজের জন্য দেখছিলাম কিছু পছন্দ হয় কিনা ।
___কি কি নিলেন?
__খালি হাত দেখেও প্রশ্ন করছিস মাথায় কি …
___আশ্চর্য তো তাই বলে জিজ্ঞেস ও করতে পারবো না ।
আয়শ স্মীত হেসে কথা না বাড়িয়ে সামিরার আরেকটু কাছে গিয়ে হাতে থাকা ব্লাক মেরুন রঙের ভারী গর্জিয়াস লেহেঙ্গার উপরের কটি টা ধরে বললো ,ছেহ তোর রুচি এতো খারাপ কেনো ?
__তাহলে আপনি পছন্দ করে দেন শুধু শুধু কথা না বাড়িয়ে ।
আয়শ এবার পুরো দোকান টায় একবার চোখ বুলিয়ে দোকান দার কে হাতে ইশারা করে বললো ,

__ওটা দেখান তো
আয়শের কথা অনুযায়ী সিম্পল কাজ করা Olive কালারের একটা লেহেঙ্গা দেখায় ।
আয়শ এটা একবার হাতে নিয়ে সামিরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
__ এটাতে পারফেক্ট লাগবে তোকে
তারপর আরেকটা কাপরের দিকে ইশারা করলে দোকানদার সেটাও সামনে এনে দিলে আয়শ সামিরা কে বললো এটা পড়বি বিয়ের দিন আর ওটা সাঙিতে পারফেক্ট হবে ।
সামিরা এখনো তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে আয়শের দিকে ।
আয়শ বুঝতে পেরে বৃদ্ধাঙ্গুলি আর মধ্যাঙুলি গোলক চিহ্ন বানিয়ে সামিরার কপালে হালকা আওয়াজে বারি মেরে ভ্রূ উঁচিয়ে প্রশ্ন তুললো ,হুম?
সামিরা ধ্যান থেকে ফিরে এসে বললো

__কিছু না ।
আয়শ মৃদু হেসে জায়গা ছাড়ে ।
প্রেমা মাত্রই চেন্জ করে এসছে ,সামিরার সামনে এসে বললো হয়েছে?
সামিরা দোকান দার কে আয়শের চুস করা জামা দুটি দিতে বলে প্রেমা কে দেখে মুখে হাসি টেনে বললো ,সো কিউট প্রেমা । মানিয়েছে তোকে এটাতে খুব ।
প্রেমা:হয়েছে আর বলতে হবে না চেন্জ করে নেই এখন ।

__ওকে
প্রেমা চেন্জ করার জন্য ভেতরে যেতে নিলে চোখে পড়ে একটু দূরে সাদেক তিন হাত লম্বা টেবিল টার উপর বসে প্রেমার দিকেই তাকিয়ে আছে পলকহীন।
প্রেমা ভাবলো হয়তো কিছু বলবে তাই একটু আওয়াজ করেই জিজ্ঞেস করলো , কিছু বলবেন? সব কিছু ঠিক আছে বাড়িতে?
সাদেকের হুস ফিরে পাশ থেকে আয়শ এসে যখন কাঁধে হাত রেখে দুষ্টু আওয়াজে বললো ,হেব্বি ক্রাশ খেয়েছিস মনে হচ্ছে বউয়ের উপর । দেখলি বলেছিলাম না মেয়ে জাতি এমোনি ইগনোর করে থাকা যায়না বেশিদিন ।
সাদেক আয়েশের হাত টা কাঁধের উপর থেকে নামিয়ে বললো ,

__বাজে কথা বলিস না তো আমি তো একটু ওদিকের পাঞ্জাবি গুলো…
___ও এতোদুর থেকে পাঞ্জাবি দেখছিলি বুঝি লজিক সহ কথাও বলতে পারিস না দেখছি । ওদিকে তোর বউ জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে কিছু গিয়ে কথা বল যাহ
সাদেক অবাক হয়ে সামনে ফিরে আসলেই তো প
রেমা কিছু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এতোক্ষণ এখানেই ছিলো ? কিন্তু আমি তো ওকে সামিরার সাথে কথা বলতে দেখেছিলাম,ওহ গড কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি ? দ্রুত জায়গা থেকে উঠে প্রেমার কাছে এসে বললো , কিছু বলছিলে?
প্রেমা :আপনি কিছু বলবেন মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করছিলাম

__কই নাহ তো কি বলবো
সাদেক কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে হয়তো নার্ভাস আছে কিছু নিয়ে
___আপনার কিছু হয়েছে? এভাবে কথা বলছেন কেন?
__সাদেক নিজের কপালে দুহাতে আঙুল দিয়ে ধরে একটু ঘসতে ঘসতে বললো ,আসলে একটু কেমন যেনো লাগছে এখানে প্রথম এসেছি তো তাই ।
__আচ্ছা
__ঠিক আছে তাহলে যাও তুমি ।
প্রেমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে জায়গা ছাড়লো ।

আরিয়া জামা চেন্জ করে এসে আবারো একটু কাজল টা হাতে নিয়ে ভাবতে শুরু করে এটা দিলেও কা বকবে? আচ্ছা উনার শেষ হয়নি ? কথাটা ভেবেই হাত থেকে কাজল টা রেখে আফরানের রুমের দিকে পা বাড়ায়
গোসল দিয়ে ব্লাক পেন্ট বেল্ট সহ হুয়াইট শার্ট পরে নিয়ে হাতে ঘড়ি টার লক লাগাচ্ছে বিশাল আয়না টার সামনে দাঁড়িয়ে। আফরান এর রুমের এই জিনিস টা আরিয়ার বেশ ভালো লাগে সবার রুমের আয়না গুলোর থেকে এই রুমের আয়না টা বেশ আকর্ষণীয়।আর রুমটাও একটু অন্য রকম সিস্টেমের বিশেষ করে ছাদ টা তো বেশ পছন্দের আরুর কাছে।
আরিয়া পেছন থেকে ডেকে বললো আসবো?
আফরান পেছন না ফিরেই বললো

__যখন জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই তখন জিজ্ঞেস করিস আর যখন‌ নিষেধ করি তখন না বলেই এসে পরিস ।
আরিয়া মুখ থেকে সঙ্গে সঙ্গে হাসি টা উবে যায় । তবুও ভেতরে এসে বললো
___এতে আপনার অসুবিধা হয় ?
আরিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে পাশ থেকে বডি স্প্রে টা নিয়ে দিতে লাগলো ।
আরিয়া একটু খিলখিলিয়ে হেসে দ্রুত পায়ে আফরানের সামনে এসে বললো এটার ঘ্রান টা বেশ সুন্দর তো আমি দিতে পারবো? সমস্যা নেই আমি মেয়ে হয়েছি তো কি হয়েছে আপনি তো এমনিতেও কারো কাছে যেতেই দেবেন না সো..এটা দিলে তো প্রবলেম নেই তাই না ।
আফরান কপাল কুঁচকে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো

___ রেডি ?
__একটু সাজবো? প্রথম বার আপনার সাথে বের হচ্ছি একটু না সাজলে কেমন দেখায় না ? আর আপনাকে এতোটা সুন্দর লাগছে আপনার পাশে দাঁড়ালে আমাকে তো মানুষ আপনার লেডি এসিস্ট্যান্ট মনে করবে প্লীজ একটু সাজগোজ করি প্লীজ ।
কথা গুলো আরিয়া ইচ্ছে করে ন্যাকা গলায় বললো , অবশ্য এই লোকটার কাছে যেহেতু আরিয়া এখনো পিচ্চি তাই সব সময় পিচ্চি হয়েই থাকতে চায় এটাই আরিয়ার ভাবনা ।
আফরানের মনে হয় আরিয়ার কথা গুলো পছন্দ হয়নি তাই বিরক্ত নিয়ে বললো
__এখান থেকে যাবি? এতো আজগুবি কথা কোথাও পাস?
__এমন করছেন কেনো ।

আফরান কথা না বাড়িয়ে হাত থেকে স্প্রে টা রেখে সামনে হাঁটা ধরলো উদ্দেশ্য বের হওয়া।
আরিয়া দ্রুত গিয়ে খাটের উপর উঠে পেছন দিক থেকে আফরানের শার্টের কলার খামচে ধরে বললো
__একদম আমার সাথে ভাব নেবেন না বলে দিলাম । বলেছি না ওটা আমাকেও দিয়ে দিন ।
পেছন দিকের কলার এভাবে ধরতে দেখে আফরান আরিয়ার হাত টা কলারের থেকে ছুটানোর চেষ্টা করে বললো
__পাগল হয়েছো ? ছাড় বলছি ।
আরিয়া আফরান কে এভাবেই টেনে এনে খাট থেকে এক লাফে নেমে সামনে গিয়ে বললো
__নিজে তো গেটস ঠিকই নিয়েছেন আমার বেলা কেনো এমন হবে?
__আফরানের রাগ টা মনে হয় বারবার আসছে আর যাচ্ছে মুলত এখন একটুও আরুকে বকার ইচ্ছে নেই তাই চুপসে সব টা হজম করে শার্ট টা আবার ঠিক করতে করতে বললো

__আমি তো প্রতিদিনের মতোই আছি তুইও আছিস তাহলে আবার পার্থক্য খোজছিস কেনো ?
__জানিনা এতো কিছু আপনার সাথে আমাকে মেচ করে সাজতে হবে যেনো কেউ দেখলে এসিস্ট্যান্ট না ভেবে বউ ভাবে হুম।
____লজ্জার মাথা খেয়ে বসে আছিস দেখছি
__সে আপনি যা-ই বলেন না কেনো আমি তো ….আআআআ ছাড়ুন বলছি এভাবে যাবো না আমি ।
আরিয়ার কথার মাঝেই আফরান আরিয়া কে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরে ।
__ছাড়ুন বলছি এভাবে যাবো না আমি,নামিয়ে দিন বলছি ,আপনি আমার কথা একটুও রাখেন না খুব বাজে আপনি । এসব চেঁচিয়ে বলতে বলতে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো ।
__চুপ করবে নাকি এখান থেকে ফেলে দেবো? (ধমকিয়ে )

__দিন ফেলে আমি মরে গেলে খুশি হবেন তাইনা জানি আমি ,কথাটা বলেই আরিয়ার হুশ ফিরে আফরান নিজ জায়গায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁত গুলো কটমট করছে ।আরিয়ার বুঝতে বাকি নেই কথাটা বলা ঠিক হয়নি মোটেও নিশ্চিত এখন এই উপরের সিঁড়ি থেকে ঠাস করে ফেলে দিবে তারপর আমার কোমর টা ভাঙবে বেস বিয়ে কেন্সেল ।কথা ভাবতেই আরিয়ার মাথা ঘুরে গেলো এটা কিছুতেই হতে দেওয়া চলবেনা মোটেও না ।
আ…আমি ভুলে বলে ফেলছি সত্যি বলছি ,তিন সত্যি আমি এটা বলতে চাইনি ।

আফরান যেনো কিছুই শুনছে না কপালের রগ গুলো ভেসে আছে এখনো জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এভাবেই ,মরে যাওয়ার কথা টা বলে মোটেও এই মেয়ে ঠিক করেনি কালকেই তো এতো সব বুঝিয়ে বললাম এই মেয়ে কখনোও বুঝবেও না মেবি এটাকে নিশ্চয়ই এখন এখান থেকে ঠিক নিচে ফেলে দিয়ে হাত পা ভেঙে ঠোঁট দুইটা পার্মানেন গ্লু দিয়ে লাগিয়ে চুপ করিয়ে রাখা উচিৎ কথা টা ভেবেই বাঁকা হেসে চোখ খোলে প্রথমেই নিচের দিকে তাকায়।
আরিয়া আফরানের দৃষ্টি বুঝে সঙ্গে সঙ্গে দুহাতে একহাতে ঘারের উপর দিয়ে অন্য হাতে গলার নিচ দিয়ে শক্ত করে ধরে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে বললো

__আমাকে ফেললে আপনাকে নিয়েই পড়বো একদম চিন্তা নেই আমার ।
এই মুহূর্তে আরিয়ার এই মুখে এই কথা শুনে কপাল কুঁচকে বললো
__জানের মায়া নেই? তোর কি মনে হয় এইভাবে ধরলে আমি তোকে ফেলতে পারবোনা?
__উহুম ,মোটেও পারবেন না ।আরিয়া আফরান চৌধুরীর স্পর্শ আপনি মিস করে দুরে ফেলতেই পারবেন না ।কথাটা আফরানের চোখে চোখ রেখেই বললো কিছুটা আবেগী স্বরে।
এই মায়া ভরা কন্ঠস্বর কি আফরান কে তার নিজের জায়গায় রাখতে পারে? এই তীর্যক দৃষ্টির চাহনি কি তাকে তার জায়গা থেকে ভস্ম করে দিতে পারেনা ? অবশ্যই এই মেয়ের এই ক্ষমতা আছে ।নয়তো এতোক্ষণে এভাবে কোলে না রেখে নিশ্চিত নিচ তলার ড্রয়িং রুমের মাঝে হাড়গোড় ভেঙে আরিয়ার পরে থাকার কথা ছিলো তাইনা ।
আফরান এর শরীর হালকা হয়ে এসেছে আরিয়া বেশ বুঝতে পারছে বিষয় টা তাই আফরানের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি লুকায় ।

__জানেন আপনার থেকে যখন খুব ভালোবাসা উপভোগ করি তখন হাজার বছর বেঁচে থাকার আশ্বাস পাই আর যখন খুব বকে দেন তখন মনে হয় এক মুহুর্তও আর বেঁচে থাকা সম্……
এটুকু বলতে আফরান একটু মাথা নুইয়ে আরিয়ার শুকনো ঠোটে মৃদু স্পর্শ একে দিয়ে বলে
__হুম । প্রথম কথা টা সব সময় মাথায় নিয়ে চলবে ঠিক আছে আর দ্বিতীয় শব্দ টা যেনো আর বলতে না শুনি ।
কথা শেষ করে আফরান হাঁটতে শুরু করে ।

আরিয়া এখনো হা হয়ে আছে লোকটা শুধু কথায় কথায় এমন করে হঠাৎ হঠাৎ এই কাজ টা করে বসে ,কথাটা ভেবেই আফরানের বুকে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে ।
গাড়ির কাছে গিয়ে একহাতে দরজা টা খুলে আরিয়া কে বসিয়ে দিয়ে নিজে অপর পাশ দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয় ।
আরিয়া আফরানের দিকে তাকিয়ে দ্রুত গলায় বললো

__জানেন আমি ড্রাইভিং করতে পারি ,শিখেছি আমি । দেখাবো ?
____আমিও সেটাই ভাবছিলাম তুই আমাকে ড্রাইভিং করে নিয়ে যা এতে করে তুই গাড়ি টা নিজের নামে পেয়ে যাবি ।
___কি বলতে চাচ্ছেন?
___না মানে দুই মাস জার্নি করে শিখেছিস তো তবুও তো কমপ্লেট হয়নি , নিশ্চিত মাঝ রাস্তায় গিয়ে অন্য গাড়ির সাথে মেরে দিয়ে আমাকে মারার প্লেন বানাচ্ছিস সো আমি মরে গেলে নিশ্চয়ই গাড়ি টা তোর নামে হয়ে যাবে তাইনা । এমনিতে তোর অনেক বুদ্ধি আছে জানিস । কথাটা বলেই আফরান গাড়ি ছাড়ে ।
আরিয়া রাগে রি রি করতে করতে আফরানের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরে তাকায় , পরমুহূর্তেই আবার কি যেনো ভেবে আফরানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়

__হেয় ! আপনি কিভাবে জানেন আমি দুমাসে আমি ড্রাইভিং শিখেছি?
আফরান উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে শব্দ হীন হাসি টা থামানোর চেষ্টা করে ।
আরিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ,,
___সত্যি করে বলুন তো,আমি যাওয়ার পর আমার খোঁজ নিয়েছিলেন?
__আমি কারো গোয়েন্দার চাকরী করিনা ।
___মিথ্যে বলবেন না একদম নাহলে আপনি কিভাবে জানেন এটা ,আর সেদিন মিসেস শবনম আমাকে মারতে চায় এট কিভাবে জানেন ? আর ঠিক সময়ে কিভাবে সেখানে গিয়েছিলেন ?
আরিয়ার মুখে এতো গুলো প্রশ্ন শুনে আবারো আফরান শব্দহীন হাসে এবারের হাসি টা আরিয়ার দৃষ্টির বাহিরে ছিলো না ।

___একদম মেজাজ খারাপ করবেন না , উত্তর দিন সত্যি বলুন ।
আফরানের চেহারা থেকে উজ্জলতা যাচ্ছেই না হাসি মাখা মুখ খানা একই রকম আছে এখনো ।
আলিয়ার বেশ বিরক্ত লাগছে সব সময় সিরিয়াস মুহূর্তে মজা নিবে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে উনার আর স্বাভাবিক মুহূর্তে মুখ টাকে পেচার মতো উমমম করে রাখে যতো সব ,মনে মনে কথা গুলো ভেবে একবার ভেংচি কেটে আবারো বাহিরে চোখ রাখে ।
আবার নিজেই মিনিটের মাথায় আফরানের দিকে ফিরে বললো

__আচ্ছা গত তিন বছরে একবারও আমার খোঁজ নেননি ? আমাকে খোজেছিলেন সেদিন?
____ আফরান চৌধুরী শুধু শুধু সময় নষ্ট করে না ।
কথাটা আরিয়ার বেশ খানিক টা গায়ে লেগেছে মনে হয় ।
__আপনি তো বলেছেন ছোট বেলা থেকে আমাকে…
__চুপ করবি? এতো বকবক করছিস কেনো ? একটু ধমকিয়ে কথাটা বললো আফরান ।
আরিয়া একটু ভয় পেলো মনে হয় তাই কথা বাড়ালো না আর । শরীর থেকে সিট বেল্ট টা খোলে গ্লাস টা খুলে দিয়ে ওখানে হাত রেখে হাতের উপর নিজের থুতনি টা রেখে বাহিরে মনোযোগ দিলো ।

আরিয়ার অভিমানী মন বুঝে আফরান মুচকি হেসে বাম হাতে আরিয়ার কোমর পেঁচিয়ে নিজের দিকে আনতে চাইলো ,আরিয়া আফরান এর হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আফরানের দিকে না তাকিয়েই ।
আফরান আরো শক্ত হাতে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে । আরিয়ার মাথা আফরানের বুকে আফরান এভাবেই ধরে আছে প্রথমে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলেও কিছু সেকেন্ড এর মাথায় এখানেই নিজের শান্তি অনুভব করে এভাবেই থেকে নিজেও এক হাতে আফরানের পেট জড়িয়ে ধরে বলে ,
__সত্যিই আমার কোনো খোঁজ রাখেননি?
আফরান আরিয়ার চোঁখের দিকে একবার তাকিয়ে বললো

মি মাফিয়া পর্ব ৫৫

___কি মনে হয় ?
আফরানের কথাতে কিছুটা খুশি হয় মনে হয়
তাইতো মুহুর্তেই উৎফুল্ল হয়ে দুহাতে আফরান কে ঝাপ্টে ধরে বললো
__সত্যি বলছেন? তাহলে কেনো আসেননি? আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারতেন ।
___তোমার কি মনে হয় যে ,তুমি তখন এসব বুঝতে ?
আরিয়া কি যেনো ভেবে প্রশ্ন করা ছেড়ে দিয়ে আফরানের বুকের যেখানে টায় মাথা ফেলে জড়িয়ে আছে সেখান টায় শার্টের উপর দিয়েই হালকা শব্দে চুমু বসিয়ে বসিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে মাথা উঁচিয়ে আফরানের দিকে তাকায় ।তারপর…….

মি মাফিয়া পর্ব ৫৭