মি মাফিয়া পর্ব ৬৩

মি মাফিয়া পর্ব ৬৩
সুমাইয়া সাবিহা

আরিয়া রুম থেকে বেরিয়ে প্রথমেই মায়ের রুমে গিয়ে পা দুটো ঝুকে সালাম করে নিয়ে বললো
__আগের থেকে ব্যাথা কমেছে ?
রহিমা বেগম মাথা হালকা ঝুঁকিয়ে বুঝালো “না”
আরিয়ার চেহারা টা মুহুর্তেই আবার মলিন হয়ে গেলো ।মা কে আস্বস্ত করতে বললো
__চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে মা ।
পাশ থেকে খলিল সাহেব মুচকি হেসে বললেন ,
তুমি কাপড় পড়তে কখন শিখলে ?
আরিয়া একটু লজ্জা পেয়ে নিম্ন গলায় বললো
__বাবা আমি একটু নিচ থেকে আসছি ।
__হ্যা অবশ্যই যাও । আজ প্রথম দিন দোয়া করি সুন্দর ভাবে তুমি সবার মন জয় করেই চলবে । সবার যত্ন নেবে ।
আরিয়া একদম নম্র মেয়ের মতো নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে রুম ছাড়ে ।

নিজের পাশে হঠাৎ আরিয়া কে দেখে সামিরা অবাক হয়ে বললো
__এ কি!? কি করছিস এখানে ?
আরিয়া আজ যেনো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে কারো সাথে কথা বলতে ।নিচের দিকে তাকিয়ে বললো
___কি করতে হবে ? আমি কিন্তু কিছু জানিনা শিখিয়ে দিবি ?
সামিরা আরিয়ার এমন ব্যাবহার দেখে বললো
__এভাবে কেনো কথা বলছিস ? কি হয়েছে বল তো
__আরিয়া আরেকবার মুচকি হেসে নিজের শাড়ির আঁচল টা দিয়ে চেহারার সামনে ধরে বললো
__কোথায় ? কিছু হয়নি তো ।
সামিরা এতোক্ষণে খেয়াল করলো আরিয়ার পরনের শাড়ি ,সে তো ভুলেই গিয়েছিলো আরুর বিয়ে সবে মাত্র হয়েছে ।ওহ এতোক্ষণ বুঝে আসলো এভাবে লজ্জা কেনো পাচ্ছে মেয়েটা ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

___ঢং বন্ধ করবি ? তোর লজ্জা দেখে আমার নিজের এখন লজ্জা লাগছে ।
আরিয়া কপাল কুঁচকে মুখের উপর থেকে শাড়ি টা সরিয়ে বললো
__এমন করছিস কেনো ,উমমম ।দেখিয়ে দে না কি কি করতে হবে ।
__এখান থেকে যা তোর কিছু করতে হবেনা ।
আরিয়া সামিরা কে পাশ কেটে সামনে গিয়ে সব টা একবার দেখে নিয়ে বললো
__সব একাই করে দিয়েছিস দেখছিস ।
__হয়েছে , এখন এখান থেকে যাবি ?
__এগুলো নিয়ে যাই টেবিলে ?
সামিরা বিরক্ত হয়ে বললো
__উফফফফ আরু,কি হয়েছে তোর বল তো ।বউ বউ কাজ কর্ম বন্ধ কর আর আমি সব করে নিয়েছি পারলে গিয়ে বাবা কে ডাক ।

__আচ্ছা আমি চাচাজান কে …. এটুকু বলে নিজের জিবে নিজেই দাঁত বসিয়ে বললো
__চাচাজান কে এখন বাবা বলতে হবে ?
সামিরার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন তুললো
__সামিরা এবার শব্দ করে হেসে বললো
__তোর মাথা টা গেছে আরু,বিয়ে হয়ে এক রাতেই সব গুলিয়ে ফেলছিস দেখছি । তা শশুড় কে চাচা কেনো বলতে যাবি ? অবশ্যই বাবা বলবি ওকে ।
__ কিন্তু আমার তো লজ্জা করবে কিভাবে ডাকবো রে …. ।
___আহ আরু তুই এবার বেশি প্রশ্ন করছিস দেখছি ।চুপ থাক মাথাটা খাস না । গিয়ে বসে পর আমি ডাকছি সবাই কে ।
পেছন থেকে প্রেমা বলে উঠলো

___তা বিয়ের পরেই মানুষ কেনো শাড়ি পড়ে ? মাথায় ঢুকে না আমাদের কপালে এই শাড়ি পড়া মুহুর্ত গুলো মেবি কখনো আসবে না ।
প্রেমার কথা শুনে আরিয়া সেদিকে তাকিয়ে বললো
__একদম বাজে কথা বলবি না ওকে ।
___তা কোনটা বললে ভালো লাগবে ? কাল ভাইয়ার সাথে কেমন ইনজয় করেছিস সেটা জিজ্ঞেস করবো ? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে রাত টা একদম…….
এটুকু বলতেই আরিয়ার চেহারা আকাশ সমান লাজুকতায় ভরে উঠে ।
সামিরা হুঁ হুঁ শব্দে হেসে উঠে বললো

__তুই চুপ কর প্রেমা ,আর ওটাকে লজ্জায় ফেললে এবার মনে হয় জ্ঞান হারিয়ে ৪/৫ দিনেও উঠবে না লজ্জায় ।
দুইজনের এতো যাতা কথায় আরিয়া আর এক সেকেন্ড ও না দাঁড়িয়ে রান্না রুম ছেড়ে গিয়ে সামনে সোফায় বসে টিভি টা অন করে দেয় । দৃষ্টি টিভির মাঝে থাকলেও মন টা কেমন যেনো করছে রাতে আফরানের কথা গুলো কানে বেজে উঠলে বারবার ।প্রতিটা কথায় কতোটা নেশা ছিলো । প্রতিটা স্পর্শ এটুকু ভাবতেই উপর থেকে জাফর সাহেব খলিল সাহেব নেমে আসে ।দুজন কে দেখে আরিয়া উঠে দাঁড়ায়। আস্তে পায়ে হেটে গিয়ে জাফর সাহেবের পা ছুঁয়ে সালাম করে দৃষ্টি ফ্লোরে ফেলে দাঁড়ায় ।
আরিয়া কে এভাবে দেখে জাফর সাহেব স্মীত হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
__সুখি হও ।

সবাই খাবারে মনোযোগ দিয়েছে । সামিরা প্রথম বার নিজ হাতে সমস্ত টা করেছে ।বেশ কয়েক পদের নাস্তা তৈরি করেছে ।
জাফর সাহেব প্রশংসা করে বললেন
___হুম ভালো হয়েছে খুব সব গুলোই।
আয়শ মিনিট কয়েক আগে এসেই খাবার তুলেছে মুখে মাত্রই জেনেছে সামিরা এসব বানিয়েছে ,কথা টা শুনেই ভালোভাবে একবার তাকালো সব গুলো রেসিপির দিকে , কিছু বলতে চেয়েও আটকিয়ে যায় আজমল সাহেব আর রাবেয়া বেগম কে দেখে ।
তাই শুধু একবার সামিরার দিকে তাকালো মুগ্ধ নয়নে ।
সামিরা দাঁড়িয়ে সবার কার কি লাগবে পরিবেশন করে দিচ্ছে।

আরিয়াও চেয়েছিলো কিছু করতে সামিরার সাথে কিন্তু সামিরা দেয়নি জোড় করে বসিয়ে দিয়েছে চেয়ারে ।সবার সামনে তখন কথা বাড়াতে পারেনি আরিয়া ।এটা নিয়ে সামিরার উপর মুখ ভাঁড় করে কয়েকবার তাকিয়েছে।বিষয় টা সবারই দৃষ্টি তে পড়েছে এতে সবার ঠোটেই একটু মৃদু হাসির দেখা মিলে । আরিয়ার ব্যাপারে সবার ধারনাই আছে মিষ্টি কিউট অভিমানী একটা মেয়ে ,খুব ধৈর্য শীল এতে কোনো সন্দেহ নেই ।
কিন্তু আরিয়া বারবার উপরে তাকাচ্ছে অপেক্ষা করছে হয়তো কারো জন্য।
সব সময়ের মতো আজকেও জাফর সাহেবের পাশের চেয়ার টা তেই আরিয়া বসেছে ।তবে আজ আরিয়ার পাশের সিটে প্রেমা পরের টায় সাদেক ।
সাদেকের ফ্যামিলি আহার কথা ছিলো বিয়েতে কিন্তু সময়ের জন্য আসতে পারেনি ।
কিন্তু প্রেমার মা এসেছে বিয়ের দিনই সকালে এসেছিলো ।
সাদেকের পরের চেয়ার টায় বসেছে সাজেদা বেগম ।
আরিয়া মুখে খাবার তুলছে না দেখে পাশ থেকে জাফর সাহেব বললেন

__কিছু হয়েছে মামনি? খাচ্ছো না কেনো ?
আরিয়া জাফরের কথায় মাথা ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়
__হ্যা খাচ্ছি তো ,কথাটা বলে খাবারে হাত রেখে আরো একবার উপরের দিকে তাকায় , সঙ্গে সঙ্গে মন টা আবারও খারাপ হয়ে যায় ।
তাই আর অপেক্ষা না করে সবার সাথে তাল মিলিয়ে মুখে লোকমা তুলতেই আওয়াজ ভেসে আসলো
___নিজেই তো বলে আসলি যে, না আসলে নাকি খাবিনা তা এখন কি করছিস? তোর কথার তো দেখছি কোনো মূল্যই নেই।
উক্ত কথাটি সকলের কর্নেই পৌঁছায় ।মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই চোখে পড়লো আফরান কে ,শরীরে ডিপ রেড রঙের শার্ট।প্রথম বার এই রঙের শার্ট আফরানের পরনে । ফর্সা শরীর টাই যেনো ঈর্ষা করে প্রশ্ন তুলছে ,এটা কেনো পড়েছিস? বুঝতে কষ্ট হচ্ছে যে ,তুই নেচারাল সুন্দর নাকি এটা পড়ার কারনে সুন্দর হয়েছিস ?
আরিয়া একবার আড়চোখে সবার দিকে তাকায় ,নাহ সবার নজর উনার দিকেই ,কথাটা ভেবে মুচকি হেসে আবার আফরানের দিকে তাকায় ।
আফরান এর দৃষ্টি একদিকেই নিবদ্ধ আছে ।

__কি হলো বল ।মিথ্যে বলা কবে থেকে শুরু করলি ? বলেছি না আমার সাথে মিথ্যা বলার সাহস দেখাবি না ।
আরিয়া একবার ঢুক গিলে বললো
__আসুন না ,আমি তো অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু আপনি তো আসেননি তাই ভেবেছি আসবেন না হয়তো ।
আরিয়ার উত্তর শুনে সামিরা আয়শ মোটকথা আসনের সবাই একটু অবাক চোখে তাকায় আরিয়ার দিকে ।
তার মধ্যেই আফরান ঠিক আরিয়ার চেয়ারের পেছনে এসে বললো
__এইটুকু অপেক্ষা করতে পারিসনি আর যেনো কথার খেলাফ করতে না দেখি ।
কথাটা বলে আফরান কপাল কুঁচকে চারদিকে একবার তাকায় , বিরক্ত নিয়ে বললো
___উঠে দাঁড়া

আফরান এর কথার মানে টা কারো বুঝার সাধ্য হলো না
জাফর বললেন : তুমি কি এক সাথেই ব্রেকফাস্ট করবে সব সময় ? অথবা এখন থেকে কি বাড়িতেই ….
জাফরের প্রশ্ন শুনেও আফরান জাফর কে শেষ করতে না দিয়ে আরিয়ার দিকেই তাকিয়ে একটু ধমকিয়ে বললো
__উঠতে বলেছি না ।
আরিয়া একটু কেঁপে উঠে সবার সামনে আজকেও এমন করে ধমকিয়ে কথা বলা একদম উচিৎ হয়নি উনার , আমি তো আর ইচ্ছে করে খেতে চাইনি তাই বলে এভাবে খাবার মাঝেই উঠিয়ে দেবেন ? কথাটা মনে মনে ভেবে মুখ টা কালো করে উঠে দাড়িয়ে বললো

__আমার শেষ হয়নি তো ।
আফরান চুপচাপ আরিয়ার ডান হাত টা ধরে চেয়ার টা একটু পেছনে এনে আরিয়া কে সেখান থেকে একটু সাইড করে নিজে বসে পড়লো ।
সবাই শুধু আফরানের কাজ গুলো দেখে যাচ্ছে তাছাড়া কি বা বলবে ? এর সাথে কথা বলা মানে উল্টো উত্তর দিয়ে ডিরেক্ট চুপ করিয়ে দেবে নয়তো উত্তর না দিয়ে অপমান করবে ।
আরিয়া এবার একবার আফরানের দিকে তাকায় ,বজ্জাত লোক একটা নিজে বসবে বললেই তো হতো ।
আরিয়া এবার সেখান থেকে চলে আসতে চায় আফরান আরিয়ার হাত টা ধরে এক টানে নিজের উরুর উপরে বসিয়ে ফেলে ।

_আআহ কি করছেন কি ?
কথাটা না চাইতেই আরিয়া স্বজোড়ে বলে ফেলে ।
সবার দৃষ্টি পরোখ করে নিয়ে আরিয়া নিজের দুচোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলতে লাগলো
__সব সময় বাড়াবাড়ি করতেই থাকে এই লোকটা ।লাজ লজ্জা তো নেই আমার টাও শেষ করে দিচ্ছে।
তারপর মাথা টা একবার আফরানের ঠিক বাম সাইডে এনে আস্তে করে বললো
__সবাই দেখছে ছাড়ুন না আমি অন্যটায় বসছি ।
আফরান আরিয়ার প্লেটে হাত রেখে বললো
__ফিসফিস করে কি বলছিস ?
আফরানের এহেন কান্ডে আয়শ কেশে উঠে ।ঠিক আফরানের অপর পাশের সামনের বরাবর চেয়ার টায় আয়শ বসে । পাশ থেকে এক গ্লাস পানি সাবার করে বললো
___আহ…আজ আমার যদি এমন কেউ থাকতো ।
আফরান কপাল কুঁচকে আয়শের দিকে তাকাতেই আয়শ একটু ভীত হয়ে আবার বললো
__না মানে এমনি বললাম ।

আফরান এর ব্যাবহার টা এই মুহূর্তে সবার কাছে আনইজি লাগলেও কেউ কিছু বললো না । বউ তার যা ইচ্ছা করুক কার কি আসে যায় ? বললে কি শুধরে যাবে নাকি ।
অপেক্ষা না করে প্লেটে হাত রাখলো আফরান
এতেও পাশ থেকে জাফর সাহেব একটু বেশিই অবাক হলেন ,যে ছেলে নতুন প্লেট ছাড়া খায়না সেখানে অন্যজনের খাবারেই হাত । কিন্তু নিজের ভেতরের ভাবনা ভেতরেই রাখলেন ।
প্রথমে লোকমা টা আরিয়ার দিকে ধরে
আরিয়া বারবার নিজের দৃষ্টি চারদিকে করছে ,কে কি ভাবছে এসব ভাবতে ভাবতে আরিয়ার মাথা টা ছিরে যাচ্ছে পুরো । কিন্তু কারো দৃষ্টি এদিকে নেই সবাই নিজেদের খাবারে ব্যাস্ত দেখেই আরিয়া আফরানের হাত থেকে খাবার টা মুখে তুলে আবারো ইশারা করে বুঝায় ছেড়ে দিতে কিন্তু আফরান এসবে হেলদুল করলো না ,একটু কোলেই তো বসিয়েছে এমন করার কি আছে?

সবাই নিজেদের খাবারে ব্যাস্ত হলেও আয়শ পরপর আফরান এর দিকে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে ।
আয়শের এই জিনিস টা সামিরাও খেয়াল করছে তখন থেকে ,ভাইয়া আরুকে এভাবে খাইয়ে দিচ্ছেন তাতে এমন করে হাসার কি আছে আশ্চর্য ।তাই আবারো আফরানের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই মাথায় ঢুকলো না ।
আয়শ এবার সামিরা দিকে তাকায় দুচোখ এক হতেই আয়শ দু ঠোঁট মিলিয়ে গোল করে ফ্লাইং কিস ছুড়ে সামিরার দিকে ।
সামিরা সঙ্গে সঙ্গে কাশতে শুরু করে ,
রাবেয়া বেগম বললো
__কি হয়েছে ? পানি খাও নাও ।
রাবেয়া বেগম মেয়ের দিকে পানি এগিয়ে দিলেন ।
মায়ের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সামিরা ।

__লোকটা এমন কেনো ?মাঝে মাঝে কি হয় এদের ? মানুষ চোখে লাগেনা এদের ? দ্বিধাহীন নিজেদের কাজ করে ।এই দুই ভাই দেখছি এক টাইপ,কথাটা ভেবেই রাবেয়া বেগমের হাত থেকে পানি নিয়ে সেটা মুখে নেয় ।
উনার দিকে তাকাতে গেলাম কেনো? না তাকালে তো এমন করতে পারতো না । সামিরার হুশ উড়ে যাচ্ছে আকস্মিক আয়শ কে এমন করতে দেখে ।
না চাইতেও আবার আয়শের দিকে চোখ চলে যায় ,এবার আয়শ মুচকি হাসি দিয়ে চোখে আফরানের দিকে কিছু ইশারা করলো ।
সামিরার বুঝার বোধগম্য হলো না তাই আফরানের দিকে তাকিয়ে না বুঝে আবার আয়শের দিকে ইশারায় ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন তুলে ।

আয়শ কপাল কুঁচকে চারদিকে একবার তাকিয়ে বাম হাতে নিজের ঠিক গলার নিচ বরাবর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ঘসে আফরানের দিকে ইশারা করে ।
সামিরা এবারও বুঝতে অসুবিধে হয় ।
কিন্তু নিজ জায়গা থেকে আরিয়া আয়শ আর সামিরার বিষয় টা খেয়াল করেছে মাত্রই যখন আয়শ নিজের গলাতে দেখিয়ে আবার আফরানের দিকে তাকালো । কেমন যেনো খটকা লাগলো বিষয় টা আরিয়ার কাছে ।কি বুঝাতে চাইলো ? তাই একবার নিজে সেদিকে তাকায় ।
আবারও নিজেই লজ্জা পড়ে যায় ,উনি কি নিজেকে আজ আয়নাতে দেখেনি ? ওহ গড ।কেনো আসতে বললাম দোষ টা আমারই তো।এক হাতে নিজের চোখের উপর হাত রেখে আফরান কে কিছু বলতে চায় কিন্তু কোন মুখে কিভাবে সেটা বলবে?

একটা নয় দুটো নয় পুরো তিন টে কামরের দাগ বসে আছে সেখান টায় ।
আফরানের দিকে তাকাতে গিয়ে আরিয়া কে এমন করতে দেখে আয়শ এবার হু হু নিজে নিজেই হেসে দেয় । বুঝতে বাকি নেই আরিয়াও যে খেয়াল করেছে বিষয় টা ।
এবার আয়শের দিকে প্রশ্ন একে কয়েক জোড়া চোখ আয়শের দিকে তাকিয়ে ।
কারো তোয়াক্কা না করে আয়শ নিজের কাজে বিদ্যমান হেসেই যাচ্ছে।
পাশ থেকে সাদেক বললো

__নিশ্চিত তোকে ভুতে কিলিয়েছে,কি হয়েছে বলবি? এক একাই হেসে যাচ্ছিস ।
আয়শের এহেন অবস্থায় আফরান বেশ খানিক টা বিরক্ত হয়ে আরিয়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য আরিয়ার দিকে তাকাতেই আরিয়া কে নিজের চোখের উপর দুহাত হাত রেখে চেপে ধরে থাকতে দেখে বুঝার চেষ্টা করলো । কিন্তু আফরানের মাথায় ঢুকলো না । এভাবে লজ্জা পাচ্ছে কেনো হঠাৎ করে তার বউ ? এখানে বসিয়েছি এতে তো এমন লজ্জার কোনো বিষয় না ।
আফরান আরিয়া কে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই আয়শ বলে উঠলো
___ভাই তেমন কিছু না ।তুই খাবার শেষ কর জলদি নয়তো তোর আরু আই মিন আমার নতুন ভাবি শেষ হয়ে যাবে একদম ।

আয়শের তখন থেকে এমন অদ্ভুত আচরন টা সামিরা কে সত্যিই আকৃষ্ট করছে কি হয়েছে ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করে আফরানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বুঝতে বাকি নেই ।সামিরা এবার নিজেও লজ্জায় পড়ে গেলো তাই আয়শের দিকেও তাকানোর সাহস পাচ্ছে না । আবার কখন কি করে বসে ।
জাফর আয়শ কে লক্ষ্য করে বললো
___এভাবে হেসে যাচ্ছো কেনো তখন থেকে ? এখানে হাসার কি আছে ? তার বউ যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসাবে । তার মাথায় যে এইটুকু বুঝার ব্রেইন নেই তুমি আমি সবাই জানি । শুধু শুধু আমার মামনি কে অস্বস্তি কর অবস্থায় ফেলবে না ।

আয়শ এবার আর বাড়াবাড়ি না করে হাসি টা জোড় ধামাচাপা দিয়ে দেয় ।
সবাই একটু বিরক্ত হয়েই আবার খাবারে মনোযোগ দেয় ।
আরিয়া এখনো এভাবেই আছে ।আফরান কারো কথায় কানে না নিয়ে কোনো উত্তর সংলাপ কিছু যুক্তি না দেখিয়ে বাম হাতে আরিয়ার মুখ থেকে হাত সরাতে চায় কিন্তু আরিয়া শক্ত করে নিজের মুখে চেপে ধরে আছে তাই ছাড়াতে বৃথা হয়ে বললো

__ঠিক আছে ,চাইলে এখান থেকে উঠতে পারো । বলে নিজের বাম হাতে এতোক্ষণ আরিয়া কে যেভাবে পেঁচিয়ে ধরে ছিলো সেখান হতে হাত সরিয়ে নেয় ।
আরিয়া এবার দুহাতের আঙুলগুলো ফাঁক করে টিপ টিপ চোখ খুলে একবার তাকায় সবার দিকে বিশেষ করে আয়শ আর সামিরার দিকে তারা ঠোঁট কামড়ে হাসছে এখনও কিন্তু এদিকে তাকাচ্ছে না তাই সুযোগ বুঝে আরিয়া চটজলদি বাম হাত আফরানের সেই লাভ বাইট চিহ্নিত স্থানের উপর ধরে অন্য হাতে শার্ট টা পেছনের দিকে টেনে সামনে থেকে গলা অবদি ঢেকে দিয়ে নিজ হাত সরিয়ে নেয়।
কাজ টা আরিয়া এতোটা জলদি করেছে যে আফরান বুঝে উঠতে না পেরে তৎক্ষণাৎ উল্টো আরিয়া কে ধমকে বলে উঠলো

__কি হয়েছে তোর ? শার্ট নিয়ে এমন ধস্তাধস্তি করছিস কেনো ? আজিব তো ?
আফরান এর ধমকে আরিয়া কেঁপে উঠে
পাশ থেকে জাফর বললেন
__আবার শুরু হয়ে গিয়েছে তোমার ।কি করেছে ও ?
আফরান জাফরের উত্তরে কিছু বলতে যেয়েও হঠাৎ চুপসে যায় আয়শের ঠোঁটে হাসি দেখে আর আরিয়ার ছলছল চোখ দেখে ।কি যেনো মনে করে একবার নিজের ডান হাত দিয়ে কলারের দিক থেকে শার্টের ভেতরে একবার হাত ঢুকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে নিজেই আহত হয় । এবার নিজেই শার্টের উপরের যে দুটো বোতাম বরাবরের মতো খোলা থাকে সেগুলো ঠিক করে লাগিয়ে নিতে নিতে আরিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে মনে মনে শাসায় ,বউয়ের প্রেস্টিজ রক্ষা করতে এখনি এতো উদাসিন আমি ।,আমার মতো ছেলেদের মোটেও বিয়ে করা উচিত হয়নি ।তার উপর নিজেকে ওর মাঝে প্রশান্ত করার চেষ্টা করি ” ছেহ ।
কথা টা ভেবেই আফরান খাওয়া বন্ধ করে হাত ধুয়ে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আস্তে গলায় বললো

__রাগ করেছো ? আমি খেয়াল করিনি ।
আরিয়া কোনো কথা বললো না এমন কি আফরানের দিকেও তাকালো না ।
আফরান বুঝলো রাগ করেছে তার বউ ।করবে না-ই বা কেনো ? ভুল করেছে অবশ্যই করবে ।
আর ঐ আয়শ কে তো …এটুকু ভেবেই আয়শের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে তাকায় ।
__দেখ ভাই এভাবে তাকানোর কিছু নেই । আমি কিন্তু কিছু মনে করিনি তোর বউ লজ্জা পেয়েছে আমি কি করবো ?
আফরান বিরক্ত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায় ।এক হাতে আরিয়া কে ধরে হাঁটা শুরু করে দেয় উপরের দিকে।
সবাই সেদিকেই দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ,এদের কাহিনী কারো আজ অব্দি বুঝে আসেনি আর মনে হয়না কখনও বুঝবে কেউ ।

___কথা বলবেন না আমার সাথে
আরিয়ার অভিমানী কন্ঠ
__দেখো আরু খেয়াল করিনি সত্যি বলছি ।
আফরান উপরে এসে দরজা আটকিয়ে আরিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো
__সরি আরু,আমি খেয়াল করিনি । এরপর থেকে সব কিছু খেয়াল রাখবো ।
আরিয়া কথা না বলে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকায় ।কথা বলবেনা বলে মনস্থির করে । সবার সামনে এভাবে ধমক কেনো দেবে ? আগে‌ তো যাচাই করবে কি হয়েছে তাইনা ।
আফরান আবারো আরিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললো

__নেক্সট হবে না প্রমিজ।
__কথা বলবেন না আমার সাথে
__উল্টা পাল্টা কথা বলে রাগিয়ে দিস না । সরি বলেছি মেনে নে বেস।
__এটা সরি বলার স্টাইল ?
_____কিভাবে বলবো? Do you have any ideas? আমি প্রথম বার কারো কাছে সরি বলছি সেটাও এমন ভাবে নিচ্ছিস আমার কিন্তু বিরক্ত লাগছে ।

___যা ইচ্ছে করুন ।আপনার সাথে কথা নেই আমার ।
___তোর কি মনে হয় তুই আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবি ?
__অবশ্যই পারবো কেনো পারবোনা?
___কতোক্ষণ?
__তিন বছর কিভাবে থেকেছি ?
__আমাকে দেখিসনি তাই ।কাছ থেকে পারবি না ।
__পারবো
_চেলেন্জ?
___আরিয়া কি বলবে ভাষা খুঁজে পায়না ,এমন করে সিরিয়াসলি নেওয়ার কি আছে ?
__কি হলো ? বল ? পারবি না তাইতো?
_____মোটেও না ,ওকে । I accepted the challenge.

আরিয়া কথাটা বলে মুখ ভেংচি কাটে ।
আফরান এর কাছে শব্দ টা খুব বিষাদময় লাগলো । অজান্তেই হাত দুটো মুঠো হয়ে আসলো । সে তো জাস্ট দেখতে চেয়েছিলো বর্তমানে আরিয়ার আসক্তি টা আফরানের জন্য কতোটুকু ।এখনো এই মেয়ে তার প্রতি ঠিক তার মতো করে আসক্ত হতে পারেনি । এইটুকু আসক্ত চাইনা বেপানাহ মুহাব্বত লাগবে যার সীমা হবে বেহদ অর্থাৎ এর কোনো সীমা থাকতে পারবেনা ।
নিজের জীদ টুকু নিজে হজম করে নিয়ে এক মুহুর্ত আর না দাঁড়িয়ে থেকে চুপচাপ রুমে থেকে বের হয়ে যায় ।
আরিয়া অবাক হয় । সে তো ভেবেছিলো আবারও সরি বলে অন্তত রাগ ভাঙাতে চাইবে মিষ্টি করে । কিন্তু চেলেন্জ টা এতো সিরিয়াসলি কেনো নিলো? ওকে নিয়েছি যখন দেখিয়ে দেবো আমিও পারি । হুম…
বলে ঠোঁট বাকায় আরিয়া

সময় টা ঠিক সাড়ে দশটা কি এগারো টা বাজবে ।বাড়ির মেহমান বিদায় নিয়ে চলে যাবে এখন । জাফর সাহেবের সাথে কথা বলে বিদায় জানিয়েছেন এখনি দরজা পেরোবেন বোধয়।
রাবেয়া বেগম একবার শেষ বারের মতো আয়শের দিকে তাকায় ,এই চাহনির ভাষা বুঝতে আয়শের সমস্যা হয়নি ,সেদিন আয়শ ফিরে যাওয়ার পর রাবেয়া নাবিলের কথা জিজ্ঞেস করাতে আয়শ মিথ্যে বলে কথা কাটিয়ে ছিলো ,বলেছিলো আফরানের সাথে কথা বলতে পারেনি অন্য সময় বলবে ।
তাই এই মুহূর্তে রাবেয়া রুম ছাড়ার আগে আয়শের দিকে তাকায় ।আয়শও দুচোখ এর পাতা এক করে বুঝায় ঠিক আছে কথা বলবে ।
কিন্তু এমন সময় উপর থেকে সামিরা কে রেডি হয়ে নিচে নামতে দেখে বুঝার চেষ্টা করে সবার সাথে কি চলে যাবে নাকি ?
হলো ও সেটাই ,রাবেয়া বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জাফর কে সালাম করে বললো

__বাবা আসছি ,ঠিক মতো নিজের যত্ন নিও ঠিক আছে ?
___তুমি যদি কিছু দিন থেকে যেতে ..
__আসবো তো কিন্তু এক্সাম সামনে ,অনেক দিন হয় কিছুই পড়া হয়নি বাবা ।
__ঠিক আছে ভালোভাবে পড়াশোনা করো ঠিক আছে । সময় পেলে চলে আসবে ।
আজমল সাহেব এবার বলে উঠলেন
__জাফর..আমি মনে করি এভাবে এতো বেশি না আসলেই ভালো হবে ,আমি কি বুঝাতে চেয়েছি অবশ্যই তুমি বুঝবে । সামনে থেকেও স্বামী স্ত্রী ভালোভাবে চলার চেষ্টা করলেও ভেতর টা কিরকম আহত হয়ে থাকে তা নিশ্চয়ই বুঝো,আমার মেয়ের বেলায় আমি চাইনা তার কষ্ট হোক ।যতোই নিজেকে মানিয়ে নিক একজন মেয়ের জন্য বিষয় টা খারাপ লাগারই । আমি কিন্তু আয়শ বাবা কে মোটেও কিছু বলতে চাচ্ছি না কারন তারও দোষ নেই ।কারন সব সময় তো সত্যিই বোনের……
এটুকু বলতে পাশ থেকে আয়শ বলে উঠলো

__বাড়ির বউ বাড়িতে আসবে না তাহলে কোথায় থাকবে? বাপের বাড়ি ? আমি কিন্তু সামিরা কে খুব বেশিদিন ঐ বাড়িতে আর থাকতে দিচ্ছি না বলে দিলাম । আর ওটাকে কোন দিক দিয়ে বোন মনে হয় ? বউ কে বোনের জায়গায় কিভাবে বসাতে আশ্চর্য তো ।
কথা গুলো এক শ্বাসে বলে সামিরার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে নিজের দিকে নিয়ে এসে বললো ,
__আবারো না বলে লাফিয়ে চলে যাচ্ছিস ,মাথা কি সব টা ব্রেইন লেস ? সেদিন কি বলেছিলাম মনে নেই ? এ তুই বল তো আমার কথা কি তোর মাথায় ঢুকে ছিলো ? নাকি সব টা বের করে দিয়েছিস ? আর কিভাবে বলতে হবে তোকে ?
সামিরা আয়শের এমন একটু উঁচু আওয়াজের কথায় ভয় পায়
কাঁপা গলায় বললো

__বাবা বলেছে একসাথে চলে যেতে ।
__তাই বলে আমাকে না জানিয়ে হুট করে যাবার সিদ্ধান্ত নিবি ?
আয়শের এ ধরনের কথায় যথেষ্ট অবাক প্রকাশ পেয়েছে সবার চেহারায় । দুজনের কথা শুনে মনে হচ্ছে এরা আগে থেকেই সম্পর্ক ঠিক করে বসে আছে । কিন্তু আপাতত কেউ শিউর না তাই রাবেয়া বেগম আগে প্রশ্ন করলো
__তোমরা ঠিক কি বলছো ? আর আমার মেয়ে এখানে থাকবে কেনো ? আয়শ তোমরা কি কথা বলেছো একে অপরের সাথে ?
পাশ থেকে জাফর সাহেব ও বললেন
__আয়শ তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে না যে তোমরা একে অপরের প্রতি বিরক্ত।
আয়শ সোজা সাপ্টা উত্তর দেয়

__আশ্চর্য বিরক্ত কেনো হতে যাবো ? বউয়ের প্রতি কেউ বিরক্ত হয় নাকি ?
__হঠাৎ এমন ভাবে বলছো যে ? তাহলে এতো গুলো বছর মেয়েটার সাথে এমন করেছো কেনো ?
__আমি কি করেছি ? কখনো কিছু বলেছি ?
__কিছু বলো নি বুঝি ? তাহলে ও বাড়ি থেকে নিজে নিজে চলে গিয়েছিলো ? তুমি যে বিয়েটা মানোনি সেটা স্পষ্ট ভাবেই বুঝেছিলাম ।
___একদম বাজে কথা বলবে না বাবা । আমি প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও এই মেয়ে আমাকে বাধ্য করেছে ওর সাথে থাকতে আর আমি ওকে যেতে বলিনি পন্ডিতি করে নিজেই চলে গিয়েছে সেটার জন্যই শাস্তি স্বরূপ আমিও কিছু বলিনি । ওর এই টুকু মাথায় কি এসব কিভাবে আসে সেটার শাস্তি ছিলো ওটা ।

___কি বলতে চাচ্ছো?
__কিছুই না । শুধু এইটুকু বলে দেই ,আজ থেকে আমার পারমিশন ছাড়া বাপের বাড়ির ধারে কাছেও যেতে পারবে না ।ছেলেদের চারপাশে আমি আর সামিরা কে সহ্য করবো না বাবা অনেক সহ্য করেছি ওকে ? আর পারবো না । ঐ বাড়িতে যখন তখন যে কেউ থাকবো আর ঘুরঘুর করবে যতো সব ।
আর শুন তুই ..তুই কথাগুলো মাথায় ঢুকিয়ে নে ।
শেষ কথাটা সামিরা কে উদ্দেশ্য করে বললো ।
সামিরা শুধু আয়শের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু টা অবাক চোখে । এভাবেও সবার সামনে সংকোচ হীন কথা বলতে পারেন উনি ?
আজমল সাহেব আয়শের কথা দ্বারা বুঝলেন,এদের দুজনের মাঝে বনাবনি হয়েছে নয়তো এমন বলতো না ।
বুকের উপরের চেপে থাকা এত বছরের পাথর টা সরে গেলো এক মুহূর্তে । একটা বাবা সর্ব প্রথম তার মেয়ের শান্তি টা কোথায় হবে সেটাই খুঁজে। মেয়ের খুশিতে নিজেকে সব চেয়ে বেশি নিজেকে স্বার্থক মনে করেন আজমল সাহেবের বেলাতেও তাই হয়েছে ।মেয়ের সংসার ঠিক হয়ে গিয়েছে অলরেডি উনার মন সেটাই বলছে । মুখে হাসি এনে সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো

__মা ! আয়শ কি সত্যিই বলছে ? তোমরা সব মিটিয়ে নিয়েছো নিজেদের মাঝে? আর তুমি নিজেই সেদিন এসেছিলে আয়শ কিছু বলেনি ?
বাবার মুখে খুশির ঝলক দেখে সামিরা কি বলবে বুঝতে পারেনা কিন্তু সেদিন সে ইচ্ছে করে যায়নি বাধ্য হয়ে গিয়েছে ব্যবহার যদি ঠিক করতো কখনো যেত নাকি ?সেদিন তো সে নিজেও জানতো না উনি সত্যিই….
এটুকু ভেবে একটু লজ্জা পায় ।
সামিরাকে দেখে কারোও বুঝতে বাকি নেই এদের মাঝে সত্যিই বিভেদ নেই ।
সাদেক দরজার কাছ থেকে আসতে আসতে বললো

__বাহ বাহ ,আমি তো ভেবেছিলাম সারাজিবন বোবা হয়েই থেকে যাবি । যাই হোক এবার বউ নিয়ে বাড়িতে থেকে আবার ভুলে যাস না ওকে ।
আয়শ এখন মজা করার মুডে নেই তাই সাদেকের কথায় প্রতি উত্তর করলো না ।
জাফর সাহেব এবার আজমল সাহেবের দিকে তাকিয়ে শব্দ হেসে দিয়ে বললেন
__বলেছিলাম না ,আমি আয়শ কে দেখেছি কয়েকবার ভার্সিটির সামনে । দেখলে কেমন জেলাস হলো আশরাফ কে নিয়ে ,প্লেন টা কেমন করে কাজে লেগে গেলো ।
আজমল সাহেব ও স্বশব্দে হেসে বললেন

__কারেক্ট , তোমার কথায় সম্মতি দিয়ে আমি আজও ভুল করিনি জাফর ।
আয়শ এবার নাক সিঁটকায় দুজনের এমন হাসাহাসি তার কাছে এই সময় টাতে ভালো লাগছে না ।
__কি নিয়ে কথা বলছো ? আর আমি ভ..ভার্সিটিতে কেনো যাবো ? আমি কি পড়াশুনা করি এখনো?
___অবশ্যই না তবে তুমি সামিরাকে দেখার জন্য যেতে ,আমি তোমাকে কয়েকবার ফলো করেছি অফিসে কাজের মাঝে তুমি শুধু দু এক বার নয় শত বার গিয়েছো এই তিন বছরে ।তার জন্যই আমি আর আজমল দেখতে চেয়েছি সত্যি কিনা ।আর আশরাফের ব্যাপার টা সম্পূর্ণ গুজব ছিলো বুঝলে, তোমাকে দেখতে চেয়েছি শুধু।
সামিরা অবাক চোখে আবারো আয়শের দিকে তাকায় জাফরের প্রথম কথাটা শুনে।
আয়শ এবার কিছুটা বরকে যায় ,

__ক..কি দেখতে চেয়েছো ? হয়েছে দেখা ? আমার কাজ আছে অনেক দিন অফিস যাওয়া হয়না কি অবস্থা কিছুই জানিনা ।কথাটা শেষ করে সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো
__অবশ্য তুই চাইলে একদিনের জন্য গিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আসতে পারিস ।
রাবেয়া বেগম পাশ থেকে হেসে বললেন,
__তিন বছর দুরের থেকে এখন একদিনের জন্য সময় দিচ্ছো ? আমার মেয়ে যতদিন ইচ্ছে আমাদের কাছেই থাকবে এটা আমার মেয়েকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তোমার শাস্তি।

মি মাফিয়া পর্ব ৬২ (২)

__এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না মা । ঠিক আছে বাট হাসব্যান্ড ছাড়া কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারবে না মিলিয়ে নিও ।
কথা টা বলে আয়শ মুচকি হেঁসে সামিরার দিকে তাকায় ।
সামিরার মুখ খানা লাল হয়ে আছে লজ্জায়।তারপর……

মি মাফিয়া পর্ব ৬৪