মি মাফিয়া পর্ব ৮

মি মাফিয়া পর্ব ৮
সুমাইয়া সাবিহা

জাফর সাহেব:তুমি কখন আসলে ?
আফরান কথা বললো না
জাফর: আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।
আফরান যেনো কিছুই শুনছে না ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সিঁড়ি থেকে নেমে সোজা বের হয়ে যাচ্ছিলো।
উপর থেকে আরিয়া কিছু না দেখেই বলতে লাগলো
__চাচা আজকে আমার কলেজ থেকে ফিরতে লেট হবে চিন্তা করোনা।
__হ্যাঁ ঠিক আছে ,টাকা লাগলে নিয়ে যাস।

___ লাগবে না চাচা যা আছে চল…বলতেই চোখ গেলো দরজার কাছে..পেছন থেকে দেখল একজন ছেলে দাঁড়িয়ে,,লম্বা ৬ ফুটের থেকে একটু কম হবে হয়তো ,, সাদা শার্ট বাম হাতে কোট ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
জাফর আরিয়ার দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললো
__কি হলো মা ? আচ্ছা জলদি বের হয়ে যা ,অচেনা কারো সাথে বেশি কথা বলতে হবেনা।আর বেশি দুর যাস না ঠিক আছে ?প্রেমা আর সামিরার থেকে একা দুরের কোথাও যাস না।
আরিয়া:চাচা তোমার কোনো ক্লাইন্ট নাকি?
জাফর আরিয়ার প্রশ্নের কি উত্তর দেবে খুঁজে পেলো না,কারন আফরান যে আরিয়ার জন্য ভয়ানক কিছু সেটা বুজতে অন্তত তিনি ভূল করবেননা।
আরিয়া জাফরের উত্তর এর আশা না করেই নামতে নামতে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__লিসেন ! এই বাড়িতে কোনো প্রয়োজনে ও আসার দরকার নেই ,বেশি দরকার পড়লে ফোনে কথা বলে নিবেন।
আফরান সেইম ভাবে দাড়িয়ে এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো , বাঁকা হেসে বলে উঠলো ,রিয়েলি?
বলেই সামনের দিকে ফিরলো এক হাতে কোট অন্য হাত পকেটে গুজিয়ে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে।
আরিয়া কাঁপা কাঁপা চোখে জাফরের দিকে তাকালো।
আফরান আরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
__রিয়েলি ? এই বাড়িতে আমার আসা নিষেধ হলো কবে থেকে বাবা?
জাফর সাহেব কথা কাটিয়ে বললেন,আরিয়া তুই বের হয়ে যা দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।বলেই আড়িয়া কে নিয়ে পাশ কাটিয়ে বাহিরে চলে যায়।
আরিয়া ঘামছে ভিষন ঘামছে ,,
আফরান কথা বাড়ালো না সেও নিজ কাজে পা বাড়ায়।‌

সামিরা কি হলো তুই এমন কি ভাবছিস অন্য দিন তো কতো মজা করিস আজ এতো চুপচাপ আছিস কেন।কতো দিন পর আসলাম এই জায়গা টায় বল তো।
আরিয়া কাঁপা গলায় বললো,
__আফরান ভাইয়া ফিরে এসেছে।
আরিয়ার কথায় সামিরা প্রেমা একবার ঢোক গিলে বললো,
__কি বলছিস কি , সত্যি বলছিস?
আরিয়া:মিথ্যা মনে হয়?
প্রেমা:নাহ কিন্তু এতো বছর পর ফিরে আসলো কেনো?
আরিয়া :সেটা আমি কি করে বলবো।
সামিরা:আসছে তাতে তো কোনো প্রবলেম নেই তো , কথা হচ্ছে তোকে আবার মারেনি তো ?
আরিয়া ঘামছে , কপাল টুপকে এক বিন্দু ঘাম মাটিতে গড়িয়ে পড়লো ।মনে পড়েছে কালকে রাতের কথা ।আরিয়া বলতে গিয়েও আটকে যায় ,সব শেয়ার করে প্রেমা সামিরার কাছে কিন্তু কালকের কথা গুলো কিভাবে বলবে ?কোনো শব্দ যে তার কাছে নেই এগুলো ব্যাক্ত করার মতো ।

আরিয়া কে চুপ থাকতে দেখে সামিরা বললো :কি হলো কিছু বলছিস না কেনো ?
আরিয়া:নাহ কিছু করেনি । কিন্তু আমি আর থাকতে পারবো না, আমাকে এই বাড়ি থেকে পালাতে হবে নাহলে আবারও মারবে আমায় । আমি এবার আর সহ্য করতে পারবোনা।
সামিরা :কি বলছিস পালিয়ে যাবি কোথায় ?
আরিয়া:সেটা জানিনা তবে আমাকে যেতেই হবে।আমি ঐ লোকটাকে বিন্দু পরিমাণ সহ্য করতে পারিনা।কি এমন করেছি আমি ? চার বছর আগে নিজেই বলেছিলো এ বাড়ী থেকে চলে যেতে তার কাছাকাছি না যেতে আর এখন নিজেই কাছে আসে আবার নিজেই বলে অনুমতি ছাড়া আমার মৃত্যু ও নাকি নিষিদ্ধ।
প্রেমা:কি বলছিস কিছুই তো বুঝছি না।

আরিয়া: কিছু না,আমার আর এখানে ভালো লাগছে না চল ফিরে যাই ক্লাস রুমে ব্যাগ রেখে এসেছি।
আরিয়া ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়ালো তার গাড়ি এখনো আসেনি অপেক্ষা করছে । হঠাৎ চোখ গেলো রাস্তার ঐ পাশে ফারহান ছেলেটা এদিকেই আসছে।আরিয়া তাকে না দেখার ভান করে চার কদম পেছনে আসতেই হঠাৎ কারো চিৎকারের আওয়াজে পা দুটো থেমে যায়।
রাস্তার মাঝখানে মুহূর্তেই মানুষের আহামরি চেঁচামেচি শুরু হয় আরিয়া ঠিক বুজে উঠতে পারেনি হলো টা কি একটু সামনে গিয়ে জনসম্মুখে উকি দিতেই যেনো নিঃশ্বাস থমকে যায় ,,
এই মুহূর্তে যেই মানুষটিকে দেখে এভয়েট করছিলো সে মানুষ টি রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে ,হয়তো নিঃশ্বাস টুকু যায়যায় অবস্থা।
একজন লোক বলে উঠলো বর্তমানে গাড়ী ড্রাইভার গুলো মনে হয় ইচ্ছা করে মানুষ মারার কাজ করে ,এদের মতো পশু হিংস্র মানুষ দুটো হয়না। এই বয়সী ছেলেটাকে গাড়ী চাপা দিয়ে চলে যেতে এদের রূহ অবদী কাপলোনা,
__আরেকজন লোক বললো, ইচ্ছা করেই মেরেছে দেখেই বুঝা যায় নয়তো মেরে দিয়ে ড্রাইভার নিজ গতিতে গাড়ি উল্টো ঘুরিয়ে চলে যায় নাকি ?

কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে সাথে সাথে ছেলেটাকে দেখে নিয়ে বললো ,হি ইজ ডেড ।
আচ্ছা এখানে সিসিটিভি ফুটেজ আছে ?
কলেজের একজন টিচার বললো, অবশ্যই স্যার আসুন দেখাচ্ছি।
পুলিশ এসে ফুটেজ চ্যাক করে বললো ,এই মেয়েটা কি এখানেই পড়ে ?
কলেজ শিক্ষক:জি স্যার ।
পুলিশ:আমরা তার সাথে কথা বলতে চাই।
আরিয়ার এখনো কিছু বোধগম্য হচ্ছে না ,, ছেলেটা যে মারা গেছে এটা যেনো দু:স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়।
পুলিশ এসে বললো:-
__এখানে মিস আরিয়া কে ?
আরিয়ার স্তম্ভিত ফিরলে সে সামনে এগিয়ে আসে।
__আপনি উনাকে কিভাবে চিনেন?
__আমি চিনি না।
___মিথ্যা বলছেন,এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আপনি ছেলেটাকে দেখেই অন্য কোথায় যাচ্ছিলেন আর উনি হাতের ইশারায় আপনাকেই ডাকছিল্
____আমি চিনি না সত্যি বলছি,তবে উনার নাম ফারহান, কিছু দিন যাবত আমাকে ডিস্টার্ব করছে, অর্থাৎ আমাকে প্রপোজাল দিয়েছিলো আমি এক্সেপ্ট করিনি।এর বেশি কিছু জানিনা
___ওওহ ,ওকে দেখছি ।

পৃথিবী তার নিজস্ব আলোকিত রমনি কেড়ে নিয়ে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করেছে ।সন্ধায় আরিয়া বাড়ি ফিরেছে ।দেরী হওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে আরিয়া বলেছে তার কলেজের সামনে একজন ছেলে মারা গেছে পুলিশ সবার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাই লেট হয়েছে।এই নিয়ে কেউ কিছু আর জিজ্ঞেস করেনি ।
আরিয়া রুমে গিয়ে সোজা গোসলে যায়। আজ তার গায়ের দাগ গুলো যেনো খুব ঝাপসা লাগছে এ ব্যাপারে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু ঐ ছেলেটা এমন ভাবে এক্সিডেন্ট হবে তাও তার সামনে সেটা নিয়ে আরিয়া এখনো শক্টড হয়ে আছে।
আরিয়া মনে মনে নিজে কে দায়ী ভাবছে যদিও পুলিশ এটাকে হঠাৎ করেই শেষে এসে এক্সিডেন্ট কেস বলে চালিয়ে দিয়েছে কিন্তু তার মনে হাজারো আক্ষেপ ইশ যদি সে এভাবে পালাতে না চাইতো তাহলে তো আর এতো তারাহুরাও করতো না আর এক্সিডেন্ট টাও হতো না।
কিন্তু সত্যি কি এটা আদৌ এক্সিডেন্ট? নাহলে পুলিশ সারাদিন এটা নিয়ে এতো শত প্রশ্ন করে যাচ্ছিলো আর হঠাৎ করেই cbi স্যার এসে এটাকে এক্সিডেন্ট বলে ধামাচাপা দিয়ে সেখান থেকে সব পুলিশ দের কে নিয়ে চলে গেলেন ?

খুব আশ্চর্য না বিষয় টা?।
রাত্রের খাবারে সবাই এক সাথে বসে খাচ্ছে যদিও আরিয়ার খেতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না চাচার কারনে খেতে হচ্ছে নাহলে চাচা খাবেন না।
খাবারের মাঝে খানে আয়শ বললো
__ :শুনলাম তোর কলেজের সামনে নাকি আজ একটা ছেলের এক্সিডেন্ট হয়েছে?
আরিয়া চুপচাপ খাচ্ছে উত্তর না দিয়ে।
__এটা সেই ছেলেটা তাইনা রে? ফারহান নামের।
আরিয়া একটু আশ্চর্য হলো ,আয়শ ভাইয়া কিভাবে চিনে।
জাফর:ফারহান কে?

আয়শ কথা ঘুরিয়ে বললো,আসলে পাশেই ভার্সিটি তে পরে আর কি।
জাফর:আচ্ছা।কলেজের সামনেও আজকাল এক্সিডেন্ট হয় ।
আয়শ:আমার যতোটুকু মনে হচ্ছে সেটা এক্সিডেন্ট না বাবা।
আরিয়া আগ্রহ নিয়ে তাকালো আয়শের দিকে।
আয়শ আরিয়ার আগ্রহ দৃষ্টি বুঝে বললো
__আমি ফুটেজ টা চ্যাক করেছিলাম কিন্তু যতোটুকু বুজলাম ছেলেটাকে ইচ্ছে করেই গাড়ির নিচে চাপা দিয়েছে ।
নাহলে গাড়ির নাম্বার নেই কেন।আর উপর থেকে বলা হয়েছে পুলিশ দের কে এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ।তাই পুলিশ রাও কিছু করেনি।
আরিয়া:আমারো সেটাই মনে হচ্ছিলো।
আয়শ:তুই ওর বিষয়ে কিছু বলতে পারবি ? মানে এমন কিছু যেটা সাভাবিক না
আরিয়া:নাহ
আয়শ:ঠিক আছে আমি দেখছি ব্যাপার টা।
আয়শের কথার মাজ খানেই কেউ বলে উঠলো,

___লাভ নেই ; নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনার কোনো মানে আছে?
সবার দৃষ্টি পেছনে যায় । আফরান গায়ের কোট টা ডান হাত দিয়ে কাধের উপর ধরে ঝুলিয়ে রেখে কারো দিকে না তাকিয়েই উপরে উঠে যায়
তার মাঝেই আয়শ বলে উঠে,কেনো ,একটা মানুষ কে খুন করা হয়েছে সেটা আমি বের করলে বিপদ কেনো হতে যাবে।
আফরান আয়শের কথায় সামনের দিকে তাকিয়ে বিদ্রূপ হেসে বলে,তুই এখনো বোকাই রয়ে গেলি ।
আয়শ এর চোখ দুটো রাগের কারনে লাল হয়ে গেছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে বোধয়।
আফরান: রিলেক্স !রিলেক্স!আচ্ছা তোর যা ইচ্ছা কর আমি কিছু বলবো না।
-এখন আপাতোত তোর ছোট বোন কে আমার রুমে আসতে বল। কথাটা বলেই উপরে হাটা ধরলো।
আয়শ আফরানের শেষের কথার মানে বুজতে পেরে বললো:

__বাবা তোমার ছেলে কিন্তু বাড়াবাড়ি করছে ,সাবধান করে দাও বলে দিচ্ছি।
আফরান আয়শের কথা শুনেও না শুনার মতো করে নিজের মতো চলে গেলো।
জাফর সাহেব এতোক্ষনে বুঝে গেছেন আফরানের কথার মানেটা ।
তিনি আয়শ কে উদ্দেশ্য করে বলেন,সব কিছু তে জড়িয়ে নিজেকে বিপদে ফেলে লাভ নেই বাবা এই কেইস টা নিয়ে তুমি না এগুলেই বোধয় ভালো হয় আমি চাইনা তোমার ক্ষতি হোক।
আয়শ:কি বলছো বাবা একজন নিরোপরাধ মানুষ কে মেরে ফেলা হয়েছে আর আমি চোখের সামনে বসে দেখতে থাকবো? তার বিরুদ্ধে আমি সব প্রমান যোগার করে তাকে যদি জেলে পাঠাতে না পারি আমিও আয়শ চৌধুরী না। কথাটা বলেই হাত ধুয়ে টেবিল ছাড়ে ।

আরিয়ার ভীত চোখ জোড়া কাপছে আফরানের ভয়ে ,
জাফর:মামনি তুই ভয় পাস না আমি আছি ।খাবার শেষ করে গিয়ে শুয়ে পর আর ঐ আফরান কে একদম ভয় পাবিনা ঠিক আছে,কিছু করলে আমাকে বলবি ঠিক আছে ?
আরিয়া কিছু না বলে কাপা হাত দুটো ধুয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো।এতোক্ষনে একটু স্বস্থীর নিশ্বাস ছাড়লো।

এতোদিন দরজা আটকিয়ে ঘুমায়নি আজ থেকে একদম দরজা জানালা সব আটকিয়ে ঘুমাবে সে।
শুয়ে শুয়ে ভাবছে,আয়শ ভাইয়া যেহেতু বলেছে অপরাধি কে বের করবেই তাহলে অবশ্যই বের করবে সেও দেখতে চায় ঐ কিলার কে যে একটা নম্র সুশীল একটা যুব বয়স্ক ছেলের শত্রু হতে পারে।তার পর নাহয় বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে দুরে কোথাও।এখন আপাতত সে দেখতে চায় সে কে?
ঘড়িতে প্রায় ১টার উপরে বাজতে চলেছে এখনো তার ঘুম আসছেনা কোনো অজানা ভয়ে অথবা সেই এক্সিডেন্ট টা নিয়ে এখনো বারবার ভেবেই চলছে যতবার ভাবছে ততবার হিসাব যেনো গড়মিল খাচ্ছে।
এসব ভাবার মাঝেই হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজে ছ্যাত করে উঠলো বুকটা ,সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসলো আরিয়া,,ডিম লাইটের হালকা আলোয়ে একটা মানুষ কে দেখা যাচ্ছে কিন্তু কে ,এতো রাতে তার রুমে,সে তো রুম আটকিয়ে আজকে শুয়েছিলো হ্যা এটা স্পষ্ট মনে আছে তার।তাহলে কিভবে ঢুকলো?
কে? উখানে?এ..এদিকে আসছেন কেনো?
লোকটা কোনো কথা বললো না,
আরিয়া ভয় পেয়ে খাট থেকে নিচে নেমে পাশে থাকা ল্যাম্প টাইট টা জালিয়ে সেদিকে তাকাতেই ভয়ে সিটিয়ে যায় ,

__ভ..ভাইয়া আপনি এ..এখন এখানে কেনো?
আফরান কোনো কথা না বলে এসে আরিয়ার দু গালে দুটো থাপ্পড় বসালো।
আরিয়া কাপা গলায়:আমাকে এভাবে মারছেন কেনো? আমি কি করেছি?
আফরান কোনো কথা না বলে আরো একটা বাম গালে… “ঠাস”
আরিয়া এবার ঠোট উল্টিয়ে কেদেই ফেলে,ভাইয়া আমি কিছু করিনি তো আমাকে শুধু শুধু মারছেন কেনো,,
আফরান আরিয়ার বাহু ধরে দাত খিচে বলতে লাগলো,আমার কথার অবাধ্য হস তুই , এতো সাহস তোকে কে দিলো শুনি?
আরিয়া কান্না গলায় বললো

__:কি করেছি আমি ,,আমি তো কিছু করিনি ,,আমি এখনো এই বাড়ি থেকে যাইনি বলে এমন শাস্তি দিচ্ছেন তাইনা ।আমি চলে যাবো তো সত্যি বলছি কালকেই চলে….
আরিয়ার কথার মাজেই আরো দুটো থাপ্পড় বসিয়ে বললো,আমাকে জালিয়ে চলে যাবি ? এতোই সহজ? আমি তো আসতে চাইনি তুই বাধ্য করেছিস এখন বলছিস চলে যাবি ,বলেই আরো একটা থাপ্পড় বসালো ।
আরিয়া ফুপিয়ে গালে হাত রেখে কেদেই চলছে।
আফরান:তা আর কি কি প্লান করেছিস বল তো। পালিয়ে যাবি এ বাড়ি থেকে বাহ ভেরি গুড আইডিয়া ,বলেই আরিয়া কে আরো একটা থাপ্পড় বসালো।
আরিয়া টাল সামলাতে না পেরে এবার দেয়ালে গিয়ে উচরে পরে কপাল টায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় ।
আফরান আরিয়ার সামনে গিয়ে বললো ,

___খাবার সময় উপরে আসতে বলেছিলাম না ? কেন আসলিনা ? নিচে আয়শের রুপ দেখছিলিস বসে বসে ? কেনো রে ছেলে মানুষ কি জীবনেও দেখিসনি নাকি দেখেও লোভ সামলাতে পারিস না ?
আফরানের কথা টা আরিয়ার মস্তিস্ক অবদি পৌছায় ,কিছু না ভেবেই “ঠাস”😑
আফরান ঠিক বুজে উঠতে পারলো না আকস্মিক কি হলো ব্যাপারটা,, শুধু এই মুহূর্তে রাগে ফুসছে ভিষনভাবে।সাহস কি করে হয় এই মেয়ের ।
আরিয়া নিজেও বুজতে পারেনি সে এমন একটা কাজ করে বসবে। আফরানের লাল চোখ দুটি দেখে নিজে নিজেই কাদা শুরু করলো,,এ্যা এ্যা এ্যা আমি কিছু করিনি সত্যি বলছি ,আমি ইচ্ছে করে করিনি ।
আরিয়ার কান্না দেখে আফরান কপাল কুচকায় ,,নিজে মেরে নিজেই কাদছে আজব তো।

আরিয়া চোখ বন্ধ করে সোজা আফরানের পায়ের কাছে বসে পা ধরে বলতে লাগলো,আমি ইচ্ছে করে মারিনি ,সত্যি বলছি ,প্লীজ মাফ করে দেন ,প্লীজ প্লীজ।আমি জানি আপনি এখন বলবেন আপনি কাউকে আজ পর্যন্ত ক্ষমা করেননি তাই আমাকে মাফ করে রেকর্ড ভাঙতে চান না,কিন্তু শুনুন না ! আমি তো আপনার কততো ছোট একটু তো ভূল হবেই তাছাড়া আপনি বাজে কথা বলেছেন আয়শ ভাইয়ার ব্যাপারে এগুলো বললেন ,আমি ভাইয়াকে কখনো ওসব নজরে দেখিনি সত্যি বলছি ।আমি কথা গুলো এক টানা বলে ঢুক গিললাম।
আফরান ভ্যাবাচাকা খেয়েছে বোধয়,এই মেয়ে সত্যি আস্ত পাগল এবার মনে হয় আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে নয়তো এমন ভাবে কেউ মাফ চায় আবার সাথে ন্যাকা কান্নাও জুড়ে দিয়েছে আশ্চর্য তো ।
আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো,উঠো বলছি ,

আফরানের ধমক খেয়ে আরিয়া সাথে হাথে উঠে দাড়ালো ,
আফরান:আমার ডিকশনারীতে ক্ষমা নামক কোনো ওয়ার্ড নেই সো বুজে নাও তোমার শাস্তি ওকে। আর তুমি কার গায়ে হাত দিয়েছো সেটা নিশ্চয় জানো।
আরিয়া : আর হবেনা তো । আমাকে আর মারবেননা এসেই কতোগুলো থাপ্পড় মেরেছেন দেখুন এখনো লাল হয়ে আছে আমার এই কিউট ফেস টাতে । কাল কিভাবে কলেজ যাবো বলেন ,এই লালচে চার আঙুলের ছাপ পরা গাল নিয়ে কলেজে যেতে আমার সম্মানে বাধবেনা ?আমার তো একটা সম্মান আছে তাইনা ?
__এতোই বুঝো সম্মান তাহলে বড়দের গায়ে হাত তুলো কিভাবে?
___তার জন্যই তো বললাম সরি,পা ধরেও মাফ চাইলাম ।
___মাফ করতে পারি ,যদি বলো যে,পালিয়ে যাওয়া নিয়ে যে প্লেন টা করেছো সেটা কবে সাকসেস করবে?
____কিন্তু আপনি এটা কিভাবে জানলেন আমি তো আপনাকে বলিনি কিছুই
আফরান আবারো ধমকিয়ে বললো:-

____আমাকে প্রশ্ন করার লাইসেন্স তোমাকে কে দিলো ?
____আবারো ভূল করে ফেলছি ,এ্যা এ্যা
_____কি শুরু করেছো হ্যা ভয় নেই ভেতরে? এখন যদি মেরে দেই
আরিয়া ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আসলো।
আফরান এর সব কিছু এই মুহুর্তে খুব শান্ত ।আফরান খাটের উপর বসে শান্ত গলায় বললো,,এখানে বস।
__ কথা মতো আফরানের ডান পাশটায় কাচুমাচু করতে করতে বসলো।
___:ভয় পাচ্ছিস?
আরিয়া চোখ দুটো গোল করে একটু নড়েচড়ে হেচকি তুলছে।
আফরান আরিয়ার বাম হাত টা তার বাম তালুতে নিয়ে ডান হাতে আরিয়ার চোখ জোড়া মুছতে লাগলো,
আরিয়ার ছোট কোমল শরীর খানা ভয়ে কেপে উঠলো নাকি কারো স্পর্শ্বে কেপে উঠলো সেটা বুঝা গেলো না।
___দেখ ন্যাকামু করে তো আমাকে পানি বানিয়ে দিলি।এখন ঢং করছিস কেনো। যখন দূরে ছিলাম তখন তো আমি তোকে আমার জীবনে আসতে বলিনি তুই নিজেই এসেছিস ,,তারপরেও অনেক চেষ্টা করেছি দূরে থাকার আমি কারো জীবনে জোড় করে থাকতে চাইনা । তাই অনেক দূরেও চলে গিয়েছিলাম তারপরেও শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আসতে হলো ,এখন আমি আর যেতে চাইনা ।
আরিয়া আফরানের কথা গুলো বুঝলো কিনা বুঝা গেলো না ।
___আমি কি বলেছি তুই বুঝতে পারছিস?
আরিয়া মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালো
আফরান আরিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।কিন্তু সেটা বুঝতে দিলোনা ।আরিয়া নিচের দিকে মাথা নত করে বসে আছে ।

আরিয়ার চিবুক ধরে উপরে করে বললো এদিকে তাকা ,
আরিয়া চোখ বন্ধ করে চোখের জল ফেলেই যাচ্ছে
আফরান:শুনিস নি কি বললাম? ( ,একটু হালকা ধমকিয়ে)
আরিয়া সাথে সাথে চোখ খুলে আফরানের দিকে তাকালো ।
আফরান আবারো চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,এতো বড় কবে হয়ে গেলি?
__আরিয়া দৃঢ় চোখে তাকিয়েই আছে বিন্দু পরিমান ও নড়ছেনা ,হয়তো ভয়ে।
আফরান আরিয়ার আরেকটু কাছে গিয়ে আড়িয়া কে এক হাতে তার বুকে চেপে নিল। অন্য হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,

মি মাফিয়া পর্ব ৭

আরিয়ার হার্টের আওয়াজ ঘন হচ্ছে ,নিশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে ।
অনুভূতির গরম নিশ্বাস গুলো তার বুকের উপর আছরে পড়ছে ।আফরান বিষয় টা বুজতে পেরে আরিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো।ঘুমিয়ে পর ।
আর শুন আজে বাজে প্লেন মাথা থেকে বের করে দিস নয়তো কি হবে বুজতেই পারছিস।বলে আরিয়ার কপালে ঠোট ছোয়ালো। আরিয়ার কোমল শরীরখানা কেপে উঠলো।
আফরান স্মীত হেসে আরিয়া কে শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে চলে গেলো….

মি মাফিয়া পর্ব ৯