মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩৩
মির্জা সূচনা
সবাই বিদায় নিয়েছে।
রূপা বেগম, লাবিব, লামিয়া—প্রতিটি প্রিয় মুখ একে একে হারিয়ে গেছে বিদায়ের ঢেউয়ে।
এখন শুধু রাজ আর মেহরিন।
নদীর ধারে, নির্জন এক চাঁদনী রাত।
আকাশ জুড়ে হাজার তারার ভিড়ে এক টুকরো সাদা চাঁদ ঝুলে আছে—
আর নিচে দাঁড়িয়ে আছে নদীর পাশেই দারিয়ে সেই সাদা ঘোড়াটি।
মেহরিন পা ডুবিয়ে বসে আছে জলে।
নদীর জল আজ যেনো থমকে গেছে—
চুপচাপ তাকিয়ে আছে নতুন এক জীবনের গল্পের দিকে।
মেহরিনের ভিতরে যেনো এক শীতলতা।
এই পরিবেশটা কেন জানি ওর খুব ভালো লাগছে।
চাঁদের আলোয় ধোয়া এই রাতটা, এই মুহূর্তটা—সবকিছুই যেনো মোহময়, কোমল।
ওর মনটা যেনো শান্ত হয়ে আসছে ধীরে ধীরে।
ঠিক তখনই পিছন থেকে ভেসে এলো একটা ডাক—
— “Moonbeam…”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেহরিন পিছনে ফিরে তাকায় না।
শুধু ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুটে ওঠে।
তারপরেই আবার মুখটা কেমন রাগী রাগী করে নেয়।
পাশে এসে ধপ করে বসে পড়ে রাজ।
হাতে দুই কাপ ধোঁয়া ওঠা চা।
চুপচাপ এক কাপ এগিয়ে দেয় মেহরিনের দিকে।
রাজ লক্ষ্য করে—
মেহরিন মুখ ঘুরিয়ে আছে অন্যদিকে।
রাজের ভিতরে হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস নেমে আসে।
মনেই ভাবে,
—আল্লাহ, মালুম কত যুগ লাগবে এই বউয়ের রাগ ভাঙাতে…
তারপর একটু আবেগ নিয়ে আবারও ডাকে,
— “Moonbeam…”
সেই একই টান, একই নরম সুরে।
মেহরিন এবারও কিছু বলে না।
শুধু রাজের দেয়া চায়ের কাপটা হাতে নেয়।
দুটো চুমুক দেয়, ঠোঁট নাড়িয়ে একটু চা খায়—
কিন্তু মুখে কোনো শব্দ নেই।
রাজ চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।
তারপর নিজের কাপটা বাড়িয়ে মেহরিনের কাপটা নিয়ে নেয়।
বলে,
— দাও, এটা ভালো হয়নি। আমি খাই, তুমি এটা খাও।
মেহরিন কিছু না বলে কাপটা ছেড়ে দেয়।
রাজের মুখে একটু হাসি খেলে যায়।
মেহরিন মুখ ঘুরিয়ে ফেলে আবার আর মুচকি হাসে।
চুপচাপ নিজের কাপে চুমুক দেয়—
আর রাজ?
সে নিজের কাপটা ঠিক সেখানেই ঠোঁট ছোঁয়ায়,
যেখানে একটু আগে মেহরিন চুমুক দিয়েছিল।
বাকি চা-টা ধীরে ধীরে পান করে।
চাঁদের আলো, নদীর শব্দ, আর নিঃশব্দে গড়ে ওঠা এক সম্পর্কের শুরু—
এটাই কি তবে ভালোবাসা?
“ট্রিং ট্রিং!”
রাজের ফোন বেজে ওঠে।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে: Labib calling
রাজ কল রিসিভ করে বলে,
— “বল।”
লাবিব উত্তরে হেসে বলে,
— কখন আসবা ব্রো? অপেক্ষা করছি।
রাজ হালকা হেসে উত্তর দেয়,
—আজ সারাটা শহর ঘুরবো বউকে নিয়ে। তারপর যাবো।
লাবিব হাসিমুখে বলে,
— ওকে, অল দ্য বেস্ট ভাইজান!
রাজ কল কেটে দেয়।
মেহরিন পাশেই চুপচাপ বসে আছে।
নদীর জল পায়ের পাতা ছুঁয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
আকাশজুড়ে চাঁদ আর তারার আলো।
হঠাৎ রাজ শুয়ে পড়ে ঘাসের ওপর।
মেহরিন একবার তাকায় তার দিকে।
এরপর হঠাৎ করে রাজ মেহরিনের হাত ধরে টেনে নেয় নিজের বুকে।
মেহরিন অবাক, রেগে গিয়ে বলে,
—আরে কী করছেন! ছাড়ুন! আপনার শুতে ইচ্ছে করছে শুই থাকুন, আমাকে জ্বালাচ্ছেন কেন?
রাজ হেসে বলে,
— জানো Moonbeam, আমার খুব ইচ্ছে ছিল,
বিয়ের রাতে বউকে বুকে জড়িয়ে, হাজার তারা আর একটুকরো চাঁদের সামনে এইভাবে কিছু সময় কাটাবো।
মেহরিন চুপ করে যায়।
কোনো শব্দ করে না—শুধু শুয়ে থাকে রাজের বুকের ওপর।
তারপর রাজ মেহরিনের মাথায় হালকা একটা চুমু খায়।
মেহরিন চোখ বন্ধ করে নেয়।
শুধু একটা তৃপ্তির হাসি খেলে যায় ঠোঁটে।
হ্যাঁ, যতই রাগ করুক, এই মানুষটার জন্যই তো মনটা কেঁদেছিল।
এই মানুষটার হাত ধরেই তো জীবন কল্পনা করেছিল।
মেহরিন রাজকে জড়িয়ে ধরে।
রাজ হেসে নিজেও ওকে জড়িয়ে ধরে।
তারপর ধীরে বলে,
— “বউ…”
মেহরিন নিচু গলায় বলে,
— “হুম।”
রাজ এবার দুষ্টুমি করে বলে,
— তুমি কি এখানেই বাসর করতে চাও?
মুহূর্তেই উঠে পড়ে মেহরিন।
রাজের বুকে একটা কিল মেরে, এক হাতে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে বলে,
—অসভ্য! নির্লজ্জ লোক।
রাজ হেসে উঠে পড়ে, আবার মেহরিনকে টেনে নেয় বুকে,
আর হাসতে হাসতে বলে,
— অসভ্য হলেও মন্দ হতো না এই চাঁদ-তারার মাঝে বাসর করতে।
মেহরিন রেগে গিয়ে বলে,
— চুপ করুন! অসভ্য ঠোঁট-কাটা লোক একটা।
রাজ হেসে ওঠে—সেই হাসি যেনো শরীর কাঁপিয়ে তোলে।
আর মেহরিন?
সে-ও শেষমেশ হাসিতে ভেঙে পড়ে।
চাঁদের নিচে, তারার ভিড়ে—দু’জন মানুষ, একটা ভালোবাসার শুরু।
অনেকক্ষণ একে অপরের নীরব সান্নিধ্যে কাটাল রাজ আর মেহরিন।
হঠাৎ রাজ উঠে বসে কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তারপরই এক ঝলকে এসে হাজির হয় ফুল দিয়ে সাজানো এক রিকশা।
চুল দিয়ে বাঁধানো, ঝিকমিক করছে চারপাশ।
মেহরিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
রিকশাচালক এগিয়ে এসে বলে,
— চলুন, মামা।
মেহরিন বিস্ময়ে বলে,
— আরে, মামা আপনি?
লোকটা হেসে বলে,
— হ্যাঁ, মামি। কেমন আছেন?
মেহরিন হেসে বলে,
— আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আপনি তো…?
লোকটা হাসিমুখে বলে,
— মামা পাঠাইছিলো, সেদিন আপনার জন্য।
রাজ একটু মাথা চুলকে বলে,
— চলুন, ম্যাডাম! শহরটা একটু ঘুরি।
রিকশা চলতে শুরু করে।
মেহরিন রাজের পাশে বসে—মুখে ম্লান হাসি, চোখে বিস্ময়।
শহরের আলো ঝলমল পথ ধরে তারা ঘুরে বেড়ায়।
হঠাৎ রাজ বলে,
— মামা, ওই জায়গাটায় নামান।
রিকশা থামে।
রাজ আগে নেমে হাত বাড়ায়,
— নামো, Moonbeam।
মেহরিন হাত ধরে নামে।
রাজ ওকে নিয়ে ঢুকে পড়ে একটা ছোট ফুলের দোকানে।
সেখান থেকে কিনে নেয় দুটি বেলি ফুলের মালা মেহরিনের হাতে পরিয়ে দেয়।
মেহরিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,
ভাবতে থাকে, এই মানুষটা কীভাবে এমন করে আমার মনের খবর জানে?
তার চোখে জল চলে আসে।
রাজ মালা পরিয়ে দু’হাতে তুলে নেয় সেই হাতগুলো, চুমু খায়।
একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে মেহরিনের গাল বেয়ে।
রাজ আঁতকে উঠে বলে,
—আরিওনা? এই Moonbem কি হয়েছে? কোথাও ব্যথা পেয়েছো? বলো না আমায়।
মেহরিন কিছু না বলে রাজকে জড়িয়ে ধরে।
রাজ বিস্ময়ে স্থির, তারপর সেও ওকে জড়িয়ে ধরে।
— বাড়ির কথা মনে পড়ছে? আচ্ছা, কেঁদো না। কালই নিয়ে যাব।
মেহরিন কিছু বলে না, শুধু ফিসফিসিয়ে বলে,
— বাড়ি চলুন…
রাজ সম্মতি দেয়, আবার কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলে।
তখনই এসে হাজির হয় ফুল দিয়ে সাজানো একটা বাইক—সাথে এক ছেলে, মেহরিনকে সালাম দিয়ে চাবি রাজের হাতে দিয়ে চলে যায়।
মেহরিন বিস্মিত হয়ে বলে,
— আপনি এত কিছু প্ল্যান করে রেখেছিলেন? যদি আমার বিয়ে রিদ ভাইয়ার সঙ্গে হয়ে যেত?
রাজ হেসে বলে,
— আমার কাছে প্ল্যান B ছিল।
মেহরিন তাকিয়ে বলে,
— প্ল্যান B?
রাজ চোখে চোখ রেখে বলে,
— প্লেন B হচ্ছে আমার প্ল্যান A কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।
মেহরিন মুখ শক্ত করে বলে,
—আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক।
রাজ হেসে বলে,
— ওটা শুধু আপনার কাছেই, ম্যাডাম। এবার চলুন। অনেক কাজ বাকি—খেলা-ধুলাও…
মেহরিন চোখ গরম করে তাকায়।
রাজ আবার হেসে বলে,
— আচ্ছা বাবা, আর কিছু বলব না। চলো…
মেহরিন বাইকে উঠে বসে।
রাজ বলে,
— ধরে বসো।
মেহরিন বলে কিছু না, কিন্তু রাজকে পিছন থেকে চেপে ধরে।
রাজ হেসে বলে,
—আমায় মারতে চাও নাকি?
মেহরিন পেছন থেকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে।
রাজ হাসে, বাইক ছুটে চলে।
চাঁদের আলোয়, শহরের বাতাসে—
মেহরিন ধীরে ধীরে আঁকড়ে ধরে তার ভালোবাসাকে।
রাজ হঠাৎ গান ধরে।
আর পেছন থেকে তাল মিলিয়ে দেয় মেহরিন।
রাজ,
পথ যদি না শেষ হয়..
তবে কেমন হতো তুমি বলতো …
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ….
হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো ….
মেহরিন,
তুমিই বলো…..
এইভাবে, তারা পৌঁছে যায় শিকদার বাড়িতে—
ভালোবাসার স্মৃতিতে ভরা শহরটাকে পেছনে রেখে।
শিকদার বাড়ি আজ ফুলে ফুলে সেজেছে।
রঙিন বাতি, সাজানো উঠান, আর বেলি-রজনীগন্ধা ও গোলাপের সুগন্ধে মাখা বাতাস।
রাজ মেহরিনের হাত ধরে বলল,
— চলো, Moonbem… আজ তোমার রাজ্যে পা রাখার দিন।
মেহরিন ধীরে ধীরে এগোয় রাজের সঙ্গে।
ডোরবেল বাজাতেই দরজা খোলে লামিয়া।
মেহরিনকে দেখে সে এক ঝলকে হেসে বলে,
—Welcome to our life and house, ভাবিমণি!
পেছনে এসে দাঁড়ান রূপা বেগম।
মেহরিনকে বরণ করে নেন রুপা বেগম।
মেহরিন ওনাকে সালাম করে।
রূপা বেগম মেহরিনকে আঁকড়ে ধরে বলেন,
— তোমার স্থান আমার পায়ের নিচে না মা, আমার বুকে।
মেহরিনও জড়িয়ে ধরে এই মমতাময়ী শাশুড়িকে।
ঠিক তখনই হাজির হয় লাবিব, হেসে বলে,
— উফ মা! ভাবিকে ছাড়ো এখন, কাল সারাদিন আদর কোরো। এখন একটু ঢুকতে দাও, ওরা তো ক্লান্ত।
রূপা বেগম মেহরিনকে ছেড়ে দেন।
মেহরিন ভেতরে পা রাখে। চোখ বড় হয়ে যায় বিস্ময়ে।
ফুল দিয়ে সাজানো গোটা ঘর।
পায়ে পায়ে এগোতে এগোতে তার মনে হয়—সে যেনো কোনো রূপকথার রানী।
রাজ চোখের ইশারায় মেহরিনকে সামনে এগোতে বলে।
ফুল ঝরে পড়ে ওপরে থেকে, চারদিকে রঙিন পাঁপড়ির বৃষ্টি।
মেহরিন হাঁটছে ফুলের পথে, রাজের ঘরের দিকে।
প্রতিটি পা যেনো কোনো কবিতার পঙ্ক্তি।
তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় লামিয়া আর লাবিব।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পথ রোধ করে।
রাজ বিরক্ত হয়ে বলে,
—কি সমস্যা তোদের?
লামিয়া মুখ টিপে বলে,
— টাকা দাও, না হলে ঢুকতে দেব না!
রাজ চোখ বড় করে:
— কতো?
লাবিব গম্ভীর গলায় বলে,
— স্রেফ দুই লাখ!
রাজ হতবাক।
— কি? যদি না দেয়?
লামিয়া হেসে বলে,
—তেমন কিছু না। না দিলে বউ তোমার আমার ঘরেই থাকবে আজ।
রাজ ঠোঁট চেপে ধরে।
মেহরিন মুখ নিচু করে হাসে।
তখনই লামিয়া মেহরিনের হাত ধরে বলে,
— ভাবিমণি, আজ তুমি আমার ঘরে থাকবে, ঠিক আছে?
রাজ এক বলে,
—মামার বাড়ি পেয়েছিস নাকি! আমার বিয়ে করা বউ তোর ঘরে কেন থাকবে?
বলেই মেহরিনের হাত টেনে নিজের কাছে টেনে নেয়।
মেহরিন মিষ্টি হেসে বলে,
— দিয়ে দিন না ওদের টাকা…
রাজ বলেই ফেলে,
— বউ বলেছে মানে দিতে হবেই।
রাজ কার্ড বের করে দেয়।
— নাও, নিয়ে যাও! কিন্তু মনে রেখো—আমি কেবল আমার বউয়ের কথাই শুনি।
লামিয়া আনন্দে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে,
— তুমি আমাদের লাকি চ্যাম্প।
বলেই মেহরিনের গালে একটা চুমু খেয়ে পালিয়ে যায়।
লাবিব রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
—All the best, ভাইজান!
তারপর সবাই সরে গেলে, মেহরিন আর রাজ একসঙ্গে রাজের ঘরের দিকে এগোয়।
একটা নতুন জীবনের প্রথম দরজা খুলে যায়…
ঘরে পা রাখতেই মেহরিন থমকে দাঁড়ায়।
সামনে এক স্বপ্নময় দৃশ্য—ঘরজুড়ে ফুলের গালিচা, চারপাশে ‘Love’-বেলুন, কোণায় কোণায় নানা রংয়ের রঙিন মোমবাতির আলো নরম হয়ে পড়েছে।
আর বিছানাটি? যেনো এক ফুলের ভেলা।
তার মাঝখানে লেখা—
“কবি সাহেব + Moonbeam”
মেহরিনের শ্বাস আটকে আসে। চারপাশে তাকিয়ে যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই কি তার জন্য?
পিছন থেকে রাজ এসে দাঁড়ায়। মেহরিনের বিস্ময়-মাখা মুখ দেখে মুচকি হেসে ফোন বের করে একটা ছবি তুলে ফেলে।
ক্লিকের শব্দে মেহরিন ফিরে তাকায়।
— এত সুন্দর করে কে সাজাল?” মুগ্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন করে সে।
রাজ এগিয়ে এসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
— আপনার কবি সাহেব, তার Moonbeam এর জন্য।
এই কথাগুলো যেন বিদ্যুৎ হয়ে ছুটে যায় মেহরিনের সারা শরীরে। সে একটু পেছাতে চায়, কিন্তু রাজ তাকে থামিয়ে ধরে।
— কোথায় পালাবেন, ম্যাডাম? আপনার পালাবার পথ বন্ধ। আপনি এখন কবি সাহেবের ভালোবাসার খাঁচায় বন্দি।
মেহরিন ফিসফিসিয়ে বলে,
— “আমি… আমি…”
কিন্তু রাজ আর কোনো সুযোগ না দিয়ে মেহরিনের ঠোঁটের উপর নিজের ঠোঁট রাখে নিজের রাজত্ব চালায় মেহরিনের ঠোঁটে।
মেহরিন কেঁপে ওঠে, রাজের চুল আঁকড়ে ধরে রাখে। সময় থেমে যায়।অনেকক্ষণ সময় ওভাবেই কেটে যায় তারপর
রাজ ধীরে ধীরে মেহরিনকে ছেড়ে দেয়।
মেহরিন জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়, মাথা নিচু করে ফেলে। রাজ এক ঝলক তাকিয়ে আবার পাশের আলমারি থেকে একটা নীল শাড়ি বের করে মেহরিনের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
— ফ্রেশ হয়ে আসো। নামাজ পড়তে হবে।
মেহরিন মাথা নেড়ে বলে,
— আগে গয়না খুলতে হবে।
সে গহনা খুলতে থাকে—চুড়ি, কানের দুল…
কিন্তু গলার হারটা খুলতে পারছে না।
রাজ চুপচাপ এসে ওর মাথার ওড়নাটা সরিয়ে দেয়। চুলগুলো কাঁধ থেকে সরিয়ে দেয়—মেহরিন তার স্পর্শে কেঁপে ওঠে।
রাজ খুব সাবধানে গলার হার খুলে দেয়।
এরপর মেহরিনের কপালে এক গভীর চুমু এঁকে দিয়ে বলে,
— যাও,ফ্রেস হয়ে আসো।
মেহরিন শাড়িটা নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসে—নীল শাড়িতে, ভেজা চুলে, এক অপার্থিব রূপে।
চুল থেকে টুপটাপ করে জল পড়ছে, যেনো আকাশের তারা ঝরে ঝরে নেমে আসছে তার ঘরে।
রাজ মেরিনকে এমন অবস্থায় দেখে ঢুক গিলে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।
মেহরিন এক ধমকে বলে,
— খবরদার কাছে আসবেন না। এখন যদি কাছে আসেন, খুব খারাপ হবে!
রাজ বলে,
— “বউউউ…”
— নামাজ পড়তে হবে। আপনি যান, ফ্রেশ হয়ে আসুন,— গম্ভীর কণ্ঠে বলে মেহরিন।
রাজ এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মাথা নিচু করে ওয়াশরুমের দিকে যায়।
আর মেহরিন তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
এই কবি সাহেবকে ভালো না বেসে থাকা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়…কিন্তু এই কবি বিষয়ে একটা খুব বজ্জাত অসভ্য শয়তান ঠোঁটকাটা ।
তারপর আবার বলে,
ভালো তো আমি আপনাকে অনেক বাসি কিন্তু আপনি আমাকে অনেক কাঁদিয়েছেন অনেক কষ্ট দিয়েছেন ওগুলোর পাই পাই হিসাব নিবো। যদি না নিতে পারি আমিও মিসেস শিকদার নয়।আমাকে কাঁদিয়েছেন তাই না কষ্ট দিয়েছেন এখন বুঝবেন।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে রাজ।
নীল পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, ভেজা চুল থেকে এখনো টুপটাপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
মেহরিন চুপ করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
এই মানুষটা কি সত্যিই তার?
এই মানুষটিই কি তার কাব্যের নায়ক?
যার নাম রাজ, কিন্তু যার ভালোবাসায় সে হয়ে গেছে এক কবিতার চাঁদনী রাত্রি?
রাজ মেহরিনের চোখে সেই দৃষ্টিটা দেখে হেসে ফেলে।
— বউ… আমাকে কি আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে ?
মেহরিন চোখ নামিয়ে ফেলে।
মুখে কিছু না বললেও ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি।
রাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে দুটো জায়নামাজ নিয়ে আসে।
একটা মেহরিনের হাতে তুলে দেয়, আর একটা নিজের জন্য বিছিয়ে নেয়।
দু’জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যায়।
একসাথে তাকবির, একসাথে রুকু, একসাথে সিজদাহ…
দু’জনের নিঃশ্বাস যেন মিলিয়ে যায় সেই এক পবিত্র শ্বাসে।
নামাজ শেষে দু’জন হাত তুলে আল্লাহর দরবারে নিজেদের নতুন জীবনের জন্য মোনাজাত করে।
রাজের চোখ বন্ধ, ঠোঁটে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ—
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩২
— হে আল্লাহ, তুমি আমার জীবনে এই মানুষটিকে পাঠিয়েছো। আমি কৃতজ্ঞ… যতদিন এই প্রাণ থাকবে, আমি তার পাশে থাকতে চাই। তাকে সম্মান করতে চাই, ভালোবাসতে চাই।
মেহরিনের চোখ ছলছল করে ওঠে। সে নিজের মনের গভীর থেকে বলে,
— হে রব, এই মানুষটা যেনো আমার কবি হয়ে থাকে সারাজীবন… আর আমি তার চিরদিনের আরিওনা তার Moonbeam হয়ে থাকি…
দু’জনের হাত তখনও ওপরে, কিন্তু মন অনেক গভীরে গেঁথে গেছে একটাই অনুভবে—
ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আল্লাহর ছায়াতলে পবিত্রতা পায়।