মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫২
মির্জা সূচনা
সন্ধ্যা ৭টা। মির্জা বাড়িতে পা রাখে মেহরিন, রাজ, মেহের, লাবিব আর মেহবুবা।
লাবিব এখন মোটামুটি সুস্থ।
ওদের দেখেই সবাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
কাল বাদে পরশু এই বাড়িতেই বিয়ে।
আর বাড়ির ছেলে-মেয়েরাই কি না এখন বাড়িতে নেই — এটা কোনো কথা?
মালিহা মির্জা মেহরিনকে বললেন,
—তোমাদের কি কোনো আক্কেল-জ্ঞান নেই? কাল গায়েহলুদ, আর তোমরা নিজেদের মনমতো চলছো? বেশি স্বাধীনতা পেয়ে গেছো তাই না? অনেক বড় হয়ে গেছো তোমরা!
একটু চেঁচিয়েই বললেন তিনি।
সবাই মাথা নিচু করে আছে।
রাজ বলল,
—মা, আসলে…
মালিহা মির্জা বলে উঠলেন,
—তোমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করিনি, রাজ!
রাজ মাথা নিচু করে ফেলল।
মেহের কিছু বলবে, কিন্তু মালিহা মির্জা হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
—আর কোনো কথা না। যাও, রুমে যাও সবাই।
সবাই সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে।
রাজ লাবিবকে ধরে ধরে নিয়ে যায়।
তা দেখে রূপা বেগম বলেন,
— কি ব্যাপার, ওকে ধরে ধরে নিচ্ছো কেন?
সবাই চমকে ওঠে।
মেহবুবা খামচে ধরে মেহরিনকে।
মেহরিন কিছু বলতে যাবে এমন সময় রাজ বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— মামনি, কদিন পর তো ও বিয়ে করবে, তাই এখন একটু পাজাকোলা করে নিবো বুঝলে তখন তো, কদিন পর তো ওর কোলে তুলতে হবে মেহবুবাকে তাই এখন আমি ওকে একটু কোলে নিতে চাই, দেখো কেমনে!
বলে লাবিবকে কোলে তুলে নেয়।
লাবিব রাজের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
—উফফ, আমার লজ্জা করছে! তাড়াতাড়ি চল ভাই!
রাজ হাসতে হাসতে লাবিবকে নিয়ে চলে যায় ওর রুমে। উপস্থিত সবাই হেসে ফেলে রাজ লাবিবের কান্ডে।
মেহরিন, মেহের আর মেহবুবা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।
এত বড় কাহিনি, দামা চাপা পড়ে যায়!
কেউ জানতেই পারে না, ওদের উপর দিয়ে কত বড় ঝড় গিয়েছে।
রাত ১টা।
লাবিবের রুমে আসে রূপা বেগম।
এসে দেখে মেহরিন, রাজ, মেহবুবা আর মেহের রুমে।
তিনি হাসেন।
সবাই রূপা বেগমকে দেখে চমকে যায়।
ধরা পড়ার ভয়।
কারণ রূপা বেগম খুব চতুর আর বুদ্ধিমতী একজন মহিলা।
রাজ মনে মনে ভাবে —
“শেষ!”
রূপা বেগম দরজা আটকে দেয়,
আর তা দেখে সবার ভয় বাড়ে।
রূপা বেগম এগিয়ে এসে বসেন লাবিবের পাশে।
লাবিব মা’কে দেখে উঠে বসতে চায়।
রূপা বেগম বাধা দিয়ে বলেন,
—শুয়ে থাকো, অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠতে হবে না।
সবাই চমকে তাকায় রূপা বেগমের দিকে।
তিনি হাসেন।
তারপর বলেন,
—তোমরা এখনো অত বড় হওনি যে আমার চোখ ফাঁকি দেবে।
তারপর মেহবুবার হাত তুলে বলেন,
— তোমার হাতে চোট? পেলি কীভাবে?
মেহবুবা ঢুক গিলে।
সবাইয়ের মনে ধরা পড়ার ভয় আরও আষ্টে, পিষ্টে ধরে।
রূপা বেগম বলেন,
—তোমরা এমন চোরের মতো করেছো কেন? কী লুকাচ্ছো?
রাজ বলে,
— মামনি…
রূপা বেগম হাসেন,
—কারা করেছে? রেদু?
সবাই মাথা নিচু করে।
কারণ জানে — এখন মিথ্যে বলে লাভ নেই।
তিনি সব জানেন।
রাজ রূপা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
রূপা বেগম মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন,
—ওরা ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। যত ইচ্ছা উড়ুক… মরার আগে আকাশে ডানা মেলে উড়ুক…
মুখ থুবড়ে মরার সময় খুব কাছে…
রাজ বলে,
—উফফ মামনি, তুমি সব কী করে বুঝে যাও!
রূপা বেগম লাবিবকে ডাকেন।
লাবিবও এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
রূপা বেগম দুই ছেলেকে আগলে নিয়ে বলেন,
— তোমাদের ছোট থেকে মানুষ আমি করেছি, তোমরা আমাকে মানুষ করনি। তোমরা কখন, কেন,কোন ব্যবহার করে — সব আমার মুখস্থ!
সবাই হাসে।
একটা সুন্দর দিনের সূচনা।
আকাশে, বাতাসে আজ যেনো অন্যরকম রংয়ের খেলা।
আজ মেহের আর রিদের গায়ে হলুদ।
সব আচার অনুষ্ঠান হবে মির্জা বাড়িতেই।
সকাল থেকেই সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
রাজ স্টেজের কাজ নিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
আর বাড়ির মহিলারা ব্যস্ত রান্না-বান্না, সাজসজ্জা আর নানা রকম প্রস্তুতিতে।
তবে একমাত্র মেহরিনই আজ রেগে বোম হয়ে আছে।
সবাই চলে এসেছে, কিন্তু চুমকির কোনো খোঁজ নেই!যেখানে ওর আসার কথা ছিল সবার আগে।
না ফোনে পাওয়া যাচ্ছে, না অনলাইনে!
সবশেষে রাগে চুপচাপ বসে আছে সে।
মেহেরকে ঘিরে সবাই বসে আছে, নানা গল্প চলছে।
কিন্তু মেহেরের মনটা খারাপ — তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী যে আজ নেই পাশে!
জেরি আসতে চেয়েছিল, কিন্তু ফ্লাইটের টিকেট পায়নি।
হয়তো কাল বা পরশু এসে পড়বে।
মেহবুবা এখন তার প্রেমিক পুরুষের সেবা করছে।
রূপা বেগম দরজার কাছে এসে দাঁড়ান।
দেখতে এসেছিলেন, লাবিবের কিছু লাগবে কিনা।
কিন্ত এসে দেখেন, মেহবুবা লাবিবের সেবা করছে।
তা দেখে মুখে হালকা হাসি খেলে যায় তার।
মনে মনে বলেন—
আল্লাহ, তোমার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। আমার লাবিবকে এমন একজন জীবনসঙ্গী দেওয়ার জন্য। হাজার কষ্ট, দুঃখের পরও তুমি আমাকে অনেক খুশি আর সুখ দিয়েছো।
তিনি যেভাবে এসেছিলেন, ঠিক সেভাবেই চুপচাপ চলে যান।
রাজ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করছে।পরনের শার্ট টা ঘামে ভিজে লেপটে আছে তার শরীরে।
শুধু রাজ একা নয় রাজের লোকজনেরাও আছে যারা সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে পরিচালনা করছে।
এই কাজগুলো তাকে করতেই হতো না, তবু সে নিজেই সবটা গুছিয়ে নিতে চায়।
একজন বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করছে সে।
আর এই দায়িত্বে রাজ এক চুলও ফাঁকি দিতে রাজি নয়।
ঠিক তখনই—
আরশ এসে দাঁড়ায় রাজের পাশে।
হেসে বলে,
—সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ভাই, তুই ভাবতে পারছিস? আমার ছোটগুলারই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে রে!
রাজ ভ্রু কুঁচকে জবাব দেয়,
— কি বলতে চাস ঝেরে কাশ বাপ?
আরোশ দাঁত বের করে বলে,
—আমিও বিয়ে করতে চাই!
রাজ বলে,
—আমার বোন এখনো ছোট। বড় হোক, তখন ভেবে দেখবো। তার থেকেও বড় কথা, আগে একটা জব নে, তারপর পরিবার নিয়ে আসিস।
আরোশের চোখ কপালে ওঠার উপক্রম।
সে তো কিছু বলেইনি, অথচ রাজ এত কথা বলে দিল!
আবাক কণ্ঠে বলে,
—ভাই, তুই…?
রাজ, আরশের কাঁধে হাত রেখে কপাল ঢলতে ঢলতে বলে,
—তুই কি ক বললে আমি কলকাতা পর্যন্ত বুঝার ক্ষমতা রাখি।
আরোশ মাথা ঝুকায়।
রাজ বলে,
—আমার বোনের পেছনে ঘুরলে মার খাবি। বললাম!
আরশ বলে,
— মনে জায়গা তো বানাতে হবে ভাই।
রাজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
— WhatsApp, Messenger, Instagram—এসব জায়গার ব্যবহার করেও যদি মনে জায়গা করতে না পারিস, তাহলে তোর সিস্টেমেই সমস্যা!
আরশ আরেকবার হকচকিয়ে যায়।
এভাবে যে রাজ এত কিছু জানে, সেটা সে ভাবতেই পারেনি।
নিজের মনের কথা মনে আটকে না রেখে বলে ফেলে,
—ভাই, তুই কি… সিসিটিভি সব খবর কেমনে পাস?
রাজ হেসে বলে,
—আমার যে আরেকটা পরিচয় আছে, ভুলে গেছিস নাকি?
আরোশ সোজা হয়ে স্যালুট দিয়ে বলে,
— তোকে ১০১ বার স্যালুট ভাই। কী বুদ্ধি তোর! আমি নিশ্চিত, খুব তাড়াতাড়ি তুই একটা অস্কার পাবি!
রাজ বলে,
— বাজে না বকে, কাজ কর। বোন আমার একার না, তোরও। তাই বোনের বিয়ে কাজ কর।
আরোশ বলে,
— ওকে বস, যো হুকুম!
রাজ বলে,
— নাটকবাজ।
আরশ বলে,
—আমার তো দুঃখ এই এক জায়গাতেই রে ভাই! এত নাটক করেও তোর বোনের মন পেলাম না!এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি।মাঝেমধ্যে মন চায় এই দুঃখে সমুদ্রে গিয়ে তিনটা ডুব দিয়ে আসি,না মানে এই যদি আমার দুঃখ গুলো সমুদ্রের পানিতে ভেসে যায় তাই আর কী..!
রাজ হেসে বলে,
— ওটা রাজ শিকদারের বোন, অত সহজে ধরা দেওয়ার মেয়ে না। চেষ্টা চালিয়ে যা!
আরশ মাথা চুলকে বলে,
তুই কী তোর বোন কে লাইন মারার অনুমতি দিলে নাকি সমন্ধি।
রাজ ব্রুো কুচকে বলে,
সমন্ধি??? আই লাইক দিস নেম।যা তোকে অনুমতি দিলাম।
আরশ একটা চুমু ছুরে বলে,
জিও সমন্ধি দিও তোর মত সমন্ধি যেন,
ঘরে ঘরে জন্ম নেয়।
রাজ হেসে কাজ এ মন দেয়।
সন্ধ্যা ৭টা।
দুপুর ১টা তেই মেহেরকে গায়ে হলুদের গোসল দেওয়া হয়েছে।
এখন তাকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মেহের আর মেহরিন—দুজনেরই মন আজ কেমন খারাপ।
এই আনন্দের দিনে তাঁদের প্রিয় বান্ধবী পাশে নেই।
মেহরিন, মেহবুবা, লামিয়া আর আরফা—মিলে মেহেরকে স্টেজে বসিয়ে দেয়।
বক্সে বাজছে সুরেলা সঙ্গীত, চারপাশে হইচই, হাসি।
তবুও কোথায় যেনো আনন্দটা অসম্পূর্ণ।
সবাই পরেছে রঙিন শাড়ি—
মেহরিন পরেছে আকাশি রঙের শাড়ি।
মেহবুবা পরেছে মিষ্টি গোলাপি রঙের শাড়ি।
লামিয়াকে রূপালী মানে সিলভার রংয়ের শাড়িতে অপূর্ব লাগছে।
আর আরফা পরেছে কালো শাড়ি।
তাদের সবার রূপে যেনো পরীর ছোঁয়া।
রাজ, আরোশ, লাবিব আর মাহির—সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে।
বোনের বিয়েতে মেয়েরা হয় মহারানী ভিক্টোরিয়া,
আর ছেলেরা সেই রাজপ্রাসাদের ব্যস্ত কামের বেটা।
নাচ চলছে, গান চলছে—
তবু কারো উৎসাহ তেমন নেই।
ঠিক তখনই—
মিউজিক বক্সে বাজে—
♫♪♫♫♪♫♫♪♫
Heheee…aaaaa Hohohooo
Ahaha….hahaa Hohohooo
taaron ka chamakta gehna ho…!
taaron ka chamakta gehna ho…!
phoolon ki mehakti waadi ho…!
us ghar main khushhaali aaye…!
jis ghar main tumhari shadi ho….!
taaron ka chamakta gehna ho…!
phoolon ki mehakti waadi ho…!
us ghar main khushhaali aaye….!
jis ghar main tumhari shadi ho…!
গান চলছে আর গেট দিয়ে নাচতে নাচতে প্রবেশ করে—
চুমকি আর জেরি।
চুমকির পরনে ঠিক মেহরিনের মত শাড়ি,
আর জেরি পরে আছে হদল রঙের লেহেঙ্গা।
সবার দৃষ্টি তখন গেটের দিকে।
মেহের আর মেহরিনের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
চুমকি এগিয়ে এসে সবাইকে টেনে নিয়ে যায়—
নাচে ফেটে পড়ে চারদিক।
সবাই যেনো একঝটকায় প্রাণ ফিরে পায়।
মেহরিন, মেহবুবা, চুমকি, জেরি, লামিয়া, আর আরফা—
সবার মুখে ঝলমলে হাসি, চোখে চোখে আনন্দ।
নাচ শেষে মেহরিন গাল ফুলিয়ে বলে,
— আগে আসলি না কেন চুমকি?
চুমকি মেহরিনের গাল টেনে বলে,
—তুই তো আমার জানটুস রাগ করিস না। দেখ আমি আসলে তুই খুশি, কিন্তু বিয়ের কনের বেস্টি না থাকলে চলে?
তাকেই তো আনতে গিয়ে দেরি হলো।
মেহের, জেরিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— “I miss you, baby!”
জেরি হাসে,
— I miss you too baby! ভাবলি কি করে, তোর বিয়ে আর আমি আসব না?
তবে চুমকি না থাকলে এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিতেই পারতাম না!
চুমকি হেসে বলে,
—বন্ধু হয়ে যদি এতটুকু না করতে পারি, তাহলে কিসের বন্ধু!
সবাই হেসে ওঠে।
এক মুহূর্তে যেনো আনন্দের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
গান, হাসি, গল্প—সময়টা হঠাৎ করেই যেনো অত্যন্ত মধুর হয়ে ওঠে।
ঠিক তখনই আবার এক হিন্দি গান বেজে ওঠে বক্সে—
🎶
Oooo… Oooo,,,
Mehndi laga ke rakhna…!
Doli saja ke rakhna..!
Mehndi laga ke rakhna..!
Doli saja ke rakhna..!
Lene tujhe o gori…!
Aayenge tere sajna..!
Mehndi laga ke rakhna…!
Doli saja ke rakhna…!
Ohoo,,Ohoo
Oh.. ho.. oh.. ho..
O.. aa..
সবাই আরও খুশিতে ফেটে পড়ে।
নাচতে নাচতে প্রবেশ করে—
রিদ, শান্ত, রাকিব আর তাঁদের সাথে রাহি।
রিদ নাচতে নাচতে এগিয়ে আসে মেহেরের সামনে।
হাত বাড়িয়ে দেয়।
সবাই চিৎকার করে ওঠে,
—মেহের! মেহের!মেহের!
লজ্জা মুখে মেহের হাত রাখে রিদের হাতে।
ঠিক তখনই আরেকটা গান বেজে ওঠে—
🎶 “Le jayenge, le jayenge, dilwale dulhaniya le jayenge…”
ওদের নাচ শেষে দুজন গিয়ে বসে স্টেজে।
আর ঠিক তখনই—
এন্ট্রি নেয়—
রাজ, আরশ, লাবিব, মাহির, শান্ত আর রাকিব।
সবাই পরেছে লুঙ্গি, চোখে সানগ্লাস।
বক্সে বাজে—
🎶 “Lungi Dance!”
ওরা সেই গানে নাচতে শুরু করে।
লাবিব যে অসুস্থ—
তা কেউ বুঝবেই না ওর নাচ দেখলে।
নাচ শেষ হতেই—
ফের এন্ট্রি নেয়—
মেহরিন, চুমকি, মেহবুবা, জেরি আর আরফা।
বেজে ওঠে গান—
🎶 “Radha… Jeri Jumka!”
মেয়েরা স্টেপ ফলো করে শেষ করে—
এরপর আবার ছেলেরা ফিরে আসে, সবাই মিলে নাচে।
গান, হাসি, ভালোবাসায় ভরে ওঠে সেই সন্ধ্যা।
নাচ শেষ হতেই ছেলেরা একে একে সরে যায়।
মেয়েরা তখন আরেকটা গানে পাগলাটে নাচে মেতে ওঠে।
🎶 “Riba Riba” গানটা বাজতেই,পাগলাটে নাচ দেয় মেয়েরা।
তাদের নাচ দেখে—
রাজ, লাবিব, আরশ, শান্ত, রাকিব—
সবাই বুক চেপে ধরে একসাথে বলে ওঠে,
— “হায়!”
তারপর একসাথে পেছনের দিকে পড়ে যায়।
পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজের লোকজন তাড়াতাড়ি সবাইকে ধরে ফেলে।
তারা ফের আছে সব ছেলেরা লুঙ্গি পরেই সেই রিবা রিবা গানে তারাও নাচা শুরু করে।নাচতে নাচতে এক পর্যায়ে সবার লুঙ্গি খুলে যায়। তাদেরকে দেখে সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে।একজন হাসতে হাসতে আরেকজনের শরীরে পড়ে যায়। সবারই লুঙ্গির নিচে প্যান্ট ছিল। তারপরে লুঙ্গি খুলে যাওয়ার ব্যাপারটা খুবই লজ্জা জনক থাকায় ছেলেরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এই হাসি-ঠাট্টা, নাচ-গান আর আনন্দে শেষ হয় হলুদের পর্ব।
হলুদ শেষে রিদ আবার চলে যায় লাবিবের ফ্ল্যাটে।
সাথে রাজ আর লাবিব।
কারণ—কাল বর পক্ষ হয়ে তারা আসবে।
আর কনে পক্ষ হয়ে বিদায় দেবে।
এই নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্কও হয়েছে।
রাজের একটাই কথা—
সে তার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েতে বর পক্ষই হবে।
শেষে মেহরিন রাজি হয়।
রাত ৩টা।
সবাই যে যার জায়গায় শুয়ে পড়েছে।
সবাই ঘুমোচ্ছে—
শুধু রিদ আর রাজ ব্যালকনিতে বসে কফি খাচ্ছে।
রিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
—তোর মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
রাজ হেসে বলে,
— তোর মতো ও..”
কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ওরাও উঠে যায়।
অন্যদিকে—
সব মেয়েরা এক রুমে শুয়ে আছে।
ফ্লোরে আর খাটে মিলিয়ে এক একজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে—
তাদের কারোরই চোখে ঘুম নেই।
মেহরিন বকা বকি করে সবাইকে শোওয়ার জন্য বলে,
শেষমেশ একে একে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
আরও একটি সুন্দর সকাল।
বাড়ি জুড়ে বিয়ের আমেজ।
রান্নার গন্ধে পুরো বাড়ি ম-ম করছে।
বাচ্চাদের কিচিরমিচির, তার সাথে ফুল সাউন্ড বক্স থেকে বাজছে গান।
সকাল ৭টা।
সবাই কাজে ব্যস্ত।
ফাইজা চৌধুরী সবাইকে নাস্তা দিচ্ছেন।
রাজের লোকেরা সব কাজ করছে।
আর এক কোণে বসে—
আক্রাম চৌধুরী ও ফিরোজ মির্জা—
তাঁরা বসে বসে তদারকি করছেন।
আরশ আর মাহির এখনো ঘুমে অচেতন।
মালিহা মির্জা বলে ওঠেন,
—এদের দেখে কেউ বলবে, এদের বোনের আজ বিয়ে? এই হতচ্ছাড়া উঠ তোরা। গায়ে কিন্তু পানি ঢেলে দেবো উঠ তোরা।দুই নবাবের বংশধর।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিল লামিয়া।
মালিহার কথা শুনে এগিয়ে এসে বলে,
— কি হয়েছে আন্টি?
মালিহা বললেন,
— দেখো না! বিয়ে বাড়ি এত কাজ, আর এরা দুইজন পরে পরে ঘুমাচ্ছে!
লামিয়া একটুকু ডিভিল হাসি দিয়ে বলে,
—আন্টি, তুমি চিন্তা করো না। আমি ডাকি, তুমি যাও।
মালিহা মির্জা চলে যান।
লামিয়া যায় ওয়াশরুমে, একটা বালতি পানি নিয়ে এসে ছুঁড়ে মারে—
আরশের গায়ে!
অল্প একটু মাহিরের গায়েও লাগে।
দু’জন তড়াক করে উঠে বসে।
লামিয়া, মাহিরের দিকে ফিরে কান ধরে বলে,
—স্যরি, তোমার গায়ে লেগে গেছে। ইচ্ছা করে দিইনি।
তারপর আঙুল তুলে বলে,
— আরশ ভাইয়ার শরীর দিয়ে ছিলাম, বিশ্বাস করো!
মাহির চোখ কচলে বলে,
— আচ্ছা, আচ্ছা… বলে উঠে যায়।
আরশ লামিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে—
বোকার মতন।
লামিয়া সুযোগ বুঝে ছুটে পালায়।
সকাল ৮টা।
সবাই উঠে গিয়েছে, চারপাশে বিয়ের আমেজ, আনন্দে টইটম্বুর বাড়ি।
কিন্তু যার বিয়ে সে এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে।
না কোনো সাড়া, না কোনো শব্দ।
মেহরিন এসে ঝাঁকায়,
—উঠ মেহের! অনেক বেলা হয়ে গেছে। লোকজন কি বলবে?
মেহের উল্টো পাশ ফিরে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
মেহরিন কপাল চাপড়ায়।
বাকিরা হাসে।
জেরি এসে কানে কানে বলে,
—Get up baby! তোর বিয়ে আজ, ভুলে গেছিস নাকি?
তুই যদি এইভাবে ঘুমাস, তোর বর কিন্তু রাগ করে চলে যাবে রে!
চুমকি এসে বলে,
— উঠে পড় বইন! আজ তোর বিয়ে।
ওই যে, একটা কথা আছে না,
‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া-প্রতিবেশীর ঘুম নেই’,
আমাদেরও ঠিক সেই অবস্থা!
আমরা উঠে বসে আছি আর যার বিয়ে সে
নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
মেহরিন এগিয়ে এসে মেহেরের কানের কাছে বলে,
— বোন আমার, উঠ… আজ তোর বিয়ে।
মেহের মুখ বুজে বলে,
— বিয়ে কাল করব, আজ ঘুমাতে দে!
জালাস না তো!
সবাই হা হা করে হাসে!
মেহেরের কথায় হাসির রোল পড়ে যায়।
মেহরিন হেসে বলে,
— বইন, প্রথম বিয়েটা কীভাবে করছিলি মনে আছে?
উঠ বেডি! বিয়ের পর ইচ্ছে মতো ঘুমাস।
মেহের বালিশে মুখ চেপে বলে,
— বিয়ে পেছিয়ে দে কয়েক ঘণ্টা, এখন ঘুমাবো।
আর কোন কথা না।
তারপর একটা বালিশ টেনে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে।
সবাই গড়াগড়ি খেতে থাকে হাসতে হাসতে।
মেহবুবা একটা গ্লাসে পানি নিয়ে আসে।
বালিশটা সরিয়ে—
পানি টুকু ছুরে মারে মেহেরের মুখে!
মেহের হুট করে উঠে বসে,
রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫১
— কি করলি এটা!
সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে বলে,
— “Surprise!!”
তারপর সবাই ফেটে পড়ে অট্ট হাসিতে।