মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৯
মির্জা সূচনা
ঠিক তখনই শিকদার বাড়িতে ঢুকে পড়ে ৪০-৫০ জন মতো লোক।
সবার মুখ ঢাকা।
ওদে দেখেই বোঝা যাচ্ছে—খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে।
রাজ কিছু একটা আশঙ্কা করেছিল বলেই
বাড়ির পাহারায় অনেক লোক নিয়োগ করেছিল।
কিন্তু…
তাদের সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছে।
এই জানোয়ারগুলোর মধ্যেও অনেকে মরেছে।
ওরা এখন ডাইরেক্ট উঠে যাচ্ছে উপরে—
মেহরিনের রুমের দিকে।
রূপা বেগম গুলির শব্দ শুনেই
দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
মেহবুবা আর লামিয়া মিলে সোফা এনে রেখেছে দরজার সামনে।
মালিহা বেগম “আল্লাহ্! আল্লাহ্!” করতে করতে বসে পড়েছেন জায়নামাজে।
হয়তো মেহরিন প্রেগন্যান্ট না থাকলে এত চিন্তা করতেন না,
কিন্তু এখন…
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেহরিনের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
এই সময়টাতে নড়া-চড়া করতেও কষ্ট হয়।
তার ওপর এই জানোয়ারগুলোর কি কোনো মায়া-দয়া আছে?
যদি বেকায়দায় লেগে মা-বাচ্চা দুজনেরই কিছু হয়—
সেই ভয়েই মালিহা বেগম জায়নামাজে বসে গেছেন।
আল্লাহ ছাড়া এই বিপদ থেকে উদ্ধারের সাধ্য কারও নেই।
সব ভালো-মন্দ থেকে রক্ষা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ।
মেহবুবা, লামিয়া একের পর এক কল করে যাচ্ছে লাবিব আর রাজকে,
শেষমেশ না পেরে মেহের আর রিদকে কল করে অনুরোধ করে আসতে।
রিদ সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে কল করে আর মেহেরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কিন্তু…
বিপদ যখন আসে সব দিক দিয়েই আসে।
ওরা বেরিয়েছে ঠিকই,
কিন্তু আসতে পারছে না।
কারণ—
তারা রাস্তায় আটকে গেছে।
একদল মানুষ রাস্তায় বসে ধর্মঘট করছে।
রাগে দুঃখে মেহের কেঁদেই ফেলে,
মা-বোনদের এমন বিপদে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা যায়?
শেষে মেহের রিদকে বলে,
বাড়ি চলো, বাইক নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হবে!
রিদও তাই করে। আর তার সাথে মেহের কল করে তাদের স্যার কে আর বলে শিকদার বাড়ির আশে পাশে ছড়িয়ে পরতে।
আর ওদিকে…
রূপা বেগম বলেন,
লামিয়া, মেহবুবা, আমার কথা মন দিয়ে শোনো—ভেঙে পড়ো না, এখানে কেউ নেই।
আমাদের নিজেদেরই আমাদের রক্ষা করতে হবে। তাই, যে যা পারো, হাতে তুলে নাও। মনে রেখো আমাদের ভয় পেলে চলবে না ভয় কে জয় করতে হবে। মেহু ও বেবি টা আমাদের আমানত যা রাজ বাবা আমাদের হাত এ তুলে দিয়ে গেছেন।
মেহবুবা আর লামিয়াও তাই করে।
কিন্তু মেহরিন?
তার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।
সে একদম আরামে বসে আছে, যেনো এমন কিছু হতেই পারে তা সে জানতো।
রূপা বেগম মেহরিনের দিকে তাকায়।
আর সাথে সাথেই সেই কালো রাতের কথা মনে পড়ে যায়—
যেদিন প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে হারিয়েছিলেন।
সে কিছুই করতে পারেনি, কারণ…
তখনও সে প্রেগন্যান্ট ছিল।
নিজের প্রতিচ্ছবিই যেনো মেহরিনের মধ্যে দেখে ফেলেন রূপা বেগম।
একঝলকে তাঁর চোখ ভরে ওঠে অজানা ভয় আর কান্নায়।
ঠিক তখনই রাজের বলা কথাটা মনে পড়ে যায়—
মামনি, ওকে তোমাদের পাহারায় রেখে গেলাম…
রূপা বেগম শক্ত করেন নিজেকে।
পানি টুকু মুছে নেন। আর মনে মনে বলেন নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমি এবার বাঁচাবো তোমাদের।
অপাশ থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ শোনা যায়।
হয়তো দরজা ভাঙার প্রস্তুতি!
সবাই নিজেকে প্রস্তুত করে,
তখন’ই
মেহরিন খুবই ঠান্ডা সরে বলে,
মেহবুবা…
মেহবুবা দৌরে যায়, বোনের কাছে গিয়ে বলে,
মেহু,তুই চিন্তা করিস না। আমার জীবন থাকতে আমি তোকে বা তোর সন্তানের কিছু হতে দেব না।
সব কইটাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেব। তুই একদম চিন্তা করবি না।
বলেই,
মেহরিনের সারা মুখে চুমু খায় আর বলে,
কিছুই হবে না, কিছু না।
মেহরিন হাসে, বোনের ভালোবাসা দেখে।
মেহবুবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আমি জানিনা ভাগ্যে কী আছে।
যদি আমার কিছু হয়, তুই আমার সন্তানকে কুলে তুলে নিস,আগলে রাখিস মায়ের মতন,
মায়ের ভালোবাসা দিবি… কী দিবি তো?
মেহবুবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
এমন বলিস না সোনা,… কিছুই হবে না তোদের, কিছু না।
মেহরিন বলে,
কান্না করিস না। আমাদের দুর্বল হলে চলবে না।
এক কাজ কর, খাটের নিচে একটা বক্স আছে, বের কর।
মেহবুবা ঝটপট তা বের করে।
মেহরিন বলে,
সবাই কিছু অস্ত্র তুলে নাও। এটা প্রিপ্ল্যান ছিল।
ওরা প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।
মেহরিনের কথায় রূপা বেগম অবাক হয়ে যায় মেহরিনের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে।
তারপর মনে মনে হাসে।
বলে,
এই না হলে, আমার বাঘিনী!
সবাই অস্ত্র তুলে নাও। কুড়াল, দা, ছুরি—সব আছে এখানে।
এটা রাজ গিফট করেছিল মেহরিনকে।
বলে ছিল, বিপদ আসলে ইউজ করতে।
আজ সেটাই কাজে লেগে গেলো।
রূপা বেগম আস্তে কুড়ালটা তুলে নেয়। বেশি বড় না হওয়ায় খুব সহজে তা চালানো যাবে।
মেহবুবা তুলে নেয় ছুরি।
লামিয়া তুলে নেয় দা।
মেহরিন বক্সটা নিজের কাছে রাখে।
ওদিকে, ধাক্কার জোর বাড়ে…
একসময় দরজাটা ভেঙেই যায়।
ভেঙে যেতেই মেহরিন একটা ছুরি তুলে ছুড়ে মারে সামনে থাকা লোকটার দিকে।
ছুরিটা ঠিক লাগে লোকটার কপাল বরাবর।
আর সাথে সাথেই লোকটা পড়ে যায়।
বাকিরা দ্রুত ঢুকে পড়ে ঘরে।
আর তাই ওদের কাল হয়ে দাঁড়ায়।
একসাথে মোট তিনজন ঢোকে।
বাকিরা পিছনে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
৩ নম্বর লোকটার বুক বরাবর কুড়ালের এক জবারদস কুপ বসায় রূপা বেগম।
লামিয়া এক কোপে ১ নম্বর লোকটার মাথা দেহ থেকে আলাদা করে দেয়।
এক চিৎকারে মেহবুবা ঝাঁপিয়ে পড়ে ২ নম্বর লোকটার ওপর,
ছুরির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে তার দেহ।
বাকি সবাই সতর্ক হয়ে যায়,
তবে মেহরিনের দৃষ্টি এরায় না কিছুই সে বাচ পাখির মতো চোখ গোরায় এদিক সেদিক—
একজন মেহবুবাকে লক্ষ্য করে গুলি করতে যাচ্ছে,
মেহরিন আরও একটা ছুরি মারে,
ঠিক লোকটার চোখে।
বাইরে থাকা সবাই সতর্ক হয়ে যায়।
সবাই একসাথে হামলা করতে চায়।
কুলসুম, যে মালিহা বেগমের পাশেই জায়নামাজে বসেছিল,
সে মোনাজাত শেষ করে “আল্লাহ” বলে এক চিৎকারে উঠে যায়।
মেহরিনের বক্স থেকে একটা দা তুলে নেয়।
আর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই,
দূরে বাইরে চলে যায়।
চোখ বন্ধ করে আবারও একবার“আল্লাহ!” বলে চিৎকার করে কুপ চালায় সামনে থাকা লোক গুলোর উপর।
ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে
যে কেউ কিছু বুঝে ওঠার সময় পায়না,
না মেহরিনরা,
না ওরা।
মুহূর্তেই ৪-৫ জন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যায় মাটিতে।
আর কুলসুমের শরীর ভরে ওঠে রক্তে।
রক্তে রঞ্জিত হয় শিকদার বাড়ি।
কুলসুমের এই কাজটা যেনো সবার ভিতর এনে দেয় জোশ।
সবাই মেতে ওঠে রক্তের খেলায়।
মালিহা বেগম জুড়ে জুড়ে দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।
মেহরিন ধীরে ধীরে উঠে আসে।
রূপা বেগম, লামিয়া আর মেহবুবা—তিনজন বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
আর চালায় এক জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ।
রূপা বেগম পাগলের মতো চিৎকার করছে আর কুড়ালের কুপ দিচ্ছে নর-পিশাচদের দেহে।
লামিয়ার চোখে জলে উঠে, প্রতিশোধের নেশা জেগে ওঠে—
বাবা আর ভাই হারানোর তীব্র ক্ষোভ।
মেহবুবার ভিতর চিলকে উঠে আসে—বোন আর তার সন্তানকে বাঁচানোর নেশা।
তিনজন নারী হয়ে ওঠে ভাগিনী আর ঝাপিয়ে পড়ে শত্রুর ওপর।
ওদের দেখে একটা কথাই বলা যায়—
নারী শুধু রান্নাঘরে মাছ বা মুরগি কাটে না,
প্রয়োজনে শত্রুর দেহ থেকে মাথাও নামাতে পারে নারী। নারী শক্তি একবার জেগে উঠলে তাদের মোকাবেলা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। নারীরা যেমন নরম ও কমল হয় তেমনি প্রোয়জনে হয়ে উঠে বিনাশিনী।
মাত্র পাঁচ মিনিটে চলতে থাকে সেই যুদ্ধের দামামা,
যা ডেকে আনে ঘুমিয়ে থাকা নারীর ভয়ঙ্কর রূপ। ঘুমিয়ে থাকা হিংস্র বাঘিনীর রূপ বেরিয়ে আসে।
তিনজন নারী হয়ে ওঠে রক্তচোষা কোন প্রাণী,
যেনো ওদের রক্তের নেশা লেগে গেছে।
রক্তের তৃষ্ণা নিবারণ করতেই
ওরা শুরু করে এই নর-পিশাচদের ধ্বংস।
বাহিরে চলছে ধংসলিলা আর এদিকে,
মেহরিন উঠে রাজের একটা ছবি হাতে তুলে নেয়।
চোখ গড়িয়ে পড়ে এক ফোঁটা নোনা জল।
ভাঙা ভাঙা গলায় বলে—
জানিনা… আপনার সাথে আর দেখা হবে কিনা।
যদি না হয়, আমাকে মাফ করবেন।
কিন্তু চিন্তা করবেন না,
আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আপনার সন্তানকে রক্ষা করবো।
আপনি যেনো আমাকে ভুলে যাবেন না কবি সাহেব।
লোকে বলে, চোখের আড়াল মানেই নাকি মনের আড়াল।
আমি যেনো আপনার মনের আড়াল না হই কবি সাহেব।
কবি সাহেব…
আপনার বউজান, আপনার Moonbem,
আপনার শুধুই, আপনার অ্যারিওনা…
যে আপনাকে অসম্ভব ভালোবাসে।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবাসবে…
এই মেহরিন শিকদার, তার স্বামীকে…
তার কবি সাহেবকে… খুব খুব খুব ভালোবাসে।
আমি মরে গিয়েও বেঁচে থাকবো,
আপনার প্রতিটি নিঃশ্বাসে।
আপনি তো বলেন, আমি আপনার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে মিশে গেছি…
তাই আমি মরে গিয়েও বেঁচে থাকবো,
আমার কবি সাহেবের মাঝে…
বলে চোখ বন্ধ করে মেহরিন।
তারপর নিজের পেটের ওপর হাত রাখে।
না, পেটের উপরে না সে তো তার অন্যগোতো সন্তানকে স্পর্শ করছে।
নিজের সন্তানকে স্পর্শ করে বলে—
একদম গুড বেবি হয়ে থাকবে, কেমন?
এখন আম্মু একটু দুষ্ট লোকদের ডিসুম ডিসুম করবে।
তুমি কিন্তু একদম ভয় পাবে না কেমন।
দুষ্ট বাবার দুষ্ট বেবি,
লক্ষ্মীটি হয়ে থাকবে, কেমন?
ঠিক তখনই বেবি একটা কিক করে।
মেহরিন হাসে।
হাতে একটা চুমু খায় আর তা ছুঁয়েই দেয় পেটের ওপর।
তারপর চোখের পানি মুছে বলে—
আমার সোনা বাচ্চা…
আর তারপর…
একটা হিংস্র হাসি দেয়।
আর তুলে নেয় তার অস্ত্র।
দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়,
যদিও কষ্ট হচ্ছিল,
তবু থামে না।
থামবে কিভাবে?
তার রক্ষাকারী যে এখন কাছে নেই…
নিজেকে আর নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে হবে।
মেহরিনও তাই করে।
অস্ত্র তুলে বেরিয়ে দেখে—
লামিয়া চিৎকার করছে আর কুপাচ্ছে।
মেহবুবা একজনের বুকে উঠে খন্ড-বিখন্ড করে দিচ্ছে।
রূপা বেগম একের পর এক কুপ দিচ্ছেন।
এক লোকের বুকে থেতলে দিয়েছে তবুও থামছে না—
ওই লোক গুলোর মধ্যে অনেকে জীবন বাঁচাতে বাইরে পালিয়ে গেছে।
বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়েছে।
মেহরিন হাসে কিছু বলবে ঠিক—
এমন সময় পিলারের পেছনে লুকিয়ে থাকা এক লোক বন্দুক তাক করে রূপা বেগমের দিকে।
আর মেহরিন…
তা দেখে বাঁকা হাসে।
ছুঁড়ে মারে তার হাতে থাকা ছুড়িটি।
ছুড়িটা ঠিক লাগে লোকটার কপালে।
আর সাথেসাথেই সে পড়ে যায়।
কাপুরুষের দল ভাগে গেছে!
মেহরিন বলে।
কুলসুম আসে।
মেহরিনকে ধরে বলে,
ভাবি! আপনে কইছিলাম না, বাইর হইবেন না! বাইর কেন হইলেন? চলেন! ঐ জানোয়ারের বাচ্চাগোরে এক কুপে লাউ যেমনে কাইট্টা ফালায়, ওমন কাইট্টা ফালামু! আপনে আসেন।
মেহরিন হাসে।
নিজের জামাটা একটু তোলে, কুলসুমের মুখটা মুছে দেয়।
বলে—
আমার বাঘিনী…
কুলসুম হাসে। হাসতে হাসতে বলে—
হ, এক্কেরে। আপনের আর আপনের বাচ্চার দিকে যে জানোয়ার বাচ্চা হাত বাড়াইবো, সেই হাত আমি কুলসুম বানু কাইট্টা কুচি কুচি কইরা ফেলমু, হুম!
মেহরিন হেসে জড়িয়ে ধরে কুলসুমকে।
রূপা বেগম এসে বলেন—
ঠিক আছো বউমা।
মেহরিন হ্যাঁ বলে মাথা নাড়ে।
লামিয়া আসে, বলে—
ভাবিমনি, তুমি চিন্তা করো না। আমরা আছি তো।
মেহরিন হেসে বলে—
তুমি যে এমন রূপ দেখাবে ভাবিনি।
লামিয়া হাসে।
বলে—
তুমি কি ভুলে যাচ্ছো? আমি বড় হয়েছি একটা মাফিয়ার কাছে! মামু আমাকে সব শিখিয়েছে—সব কিছু!
মেহরিন মাথা নাড়ে।
মেহবুবা আসে, বলে—
চল ঘরে চল।…
ওরা সবাই আবার মেহরিনকে ধরে উপরে যাচ্ছিল।
ঠিক তখনই আবার দরজা খুলে ঢুকে পড়ে ২০-২৫ জন লোক!
প্রথমেই গুলি করে কুলসুমকে।
কুলসুম এক চিৎকারে ঢলে পড়ে।
কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই আরও তিনটা গুলি ছোড়ে—
রূপা বেগম, লামিয়া আর মেহবুবা পড়ে যায়।
মেহরিন ঘুরে তাকায়।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, তাকে গুলি করা হয়নি।
যার মানে, তাকে মারার অনুমতি এখনো আসেনি।
উদ্দেশ্য জানে—মেরে ফেলা নয়, অন্য কিছু।
মেহরিন একে একে তাকায়—
লামিয়া, কুলসুম, মেহবুবা আর রূপা বেগমের দিকে।
সবাইকে দেখে সে বুঝে—
এই গুলিগুলো ইচ্ছে করেই সাবধানে করা হয়েছে। যাতে ওরা না মরে।
মেহরিন ভিতরে ভিতরে অস্থির হলেও,
তা প্রকাশ করে না।
সে এগিয়ে যায় লোকগুলোর সামনে।
বলে—
কে পাঠিয়েছে? আর কেন?
একজন বলে—
ওতকথা বলতে পারব না। আমাদের সাথে চলেন।
মেহরিন হেসে—হেসেই লোকটার কাছে যায়।
হাসতে হাসতেই বলে—
তুই আমাকে নিয়ে যাবি?
লোকগুলো একে অপরের দিকে তাকায়।
ওরা আসলে বুঝতে পারছে না—
এই মেয়ে, গর্ভবতী, সামনে এত আপনজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে,
তবুও সে হাসছে কেন?
সামনে থাকা লোকটা কিছু বলবে—
তার আগেই মেহরিন ওই লোকটার বুকে গেঁথে দেয় ছুরি।
লোকটার মুখ দিয়ে রক্ত আসে, সে পড়ে যায় মাটিতে।
হয়তো লোকটা মেহরিনের গায়েই পড়তো,
কিন্তু সে সরে যাওয়াতে পড়ে যায় ফ্লোরে।
সাথে থাকা লোকগুলো মেহরিনকে ঘিরে দাঁড়ায়।
মেহরিন হেসে একজনকে বলে—
এই দিকটায় আয়।
লোকটা গাবরে যায়।
মেহরিন হেসে বলে—
আর কিছু করবো না।
লোকটা ভয়ে ভয়ে যায়।
মেহরিন তাকে ধরে, নিজের এক পা উঁচু করে, নিজের অস্ত্রটা বের করে।
তা দেখে সবাই একটু হকচকিয়ে যায়।
কিন্তু মেহরিন সত্যিই ওই লোকটাকে কিছু করে না।
বরং বলে—
শোন, তুই আমার একটু হেল্প করেছিস। তাই তোকে মারবো না।
তুই সবার লিস্টে নেই।
একদম শেষে গিয়ে দাঁড়া।
লোকটা বোকার মতো চোখে তাকায় মেহরিনের দিকে।
মেহরিন গর্জে উঠে বলে—
“কি বললাম, শুনিস নাই? নাকি
তোকে দিয়েই শুরু করবো!
লোকটা ভয়ে পেছনে চলে যায়।
সত্যিই—পিছনে চলে যায়…
মেহরিন হেসে মাথা নাড়ে।
লোকগুলোর চোখ মেহরিনের দিকেই নিবদ্ধ।
তারা অবাক হচ্ছে এই অবস্থায়ও এই নারীর তেজ আর সাহস দেখে।
একটা লোক এগিয়ে আসে কিছু বলতে যায়—
ঠিক তখনই মেহরিন নিজের অস্ত্রটা ঢুকিয়ে দেয় লোকটার গলায়।
কণ্ঠনালিতে আঘাতে সবাই যেনো হোচট খায়।
মেহরিন সেই অস্ত্র এক টানে বের করে দুজন লোকের গায়ে লাগিয়ে দেয়।
শরীর সয়না,তাও সে লড়ছে—নিজের সন্তানের নিরাপত্তার জন্য।
হঠাৎ একটা লোক আসে।
মেহরিনকে জোরে একটা চড় মারে।
ঠোঁট কেটে যায় মেহরিনের।
এমন সময় মেহরিনের মা দৌড়ে আসে।
মেহরিন পড়ে যেতে নেই,
কিন্তু ধরে ফেলে মালিহা মির্জা।
তিনি চিৎকার করে বলেন—
ধংস হো তোরা জানোয়ার দল! ধংস হো তোরা! আল্লাহ তোদের ধ্বংস করুক!
লজ্জা করে না? একটা গর্ববতী নারীর গায়ে হাত তোলতে?
তোরা কোন মায়ের গর্ভে জন্মেছিস? জানোয়ার!
সেই মায়েদের আমি ধিক্কার জানাই তোদের মত জানোয়ার জন্ম দেওয়ার জন্য! তাদের উচিৎ ছিলো জন্মের সময় তোদের মেরা ফেলা। ধংস হো তোরা।
মেহরিন জ্ঞান হারায়, মায়ের কোলেই।
লোকগুলোর মাঝে একজন আগুন চোখে তাকায় মালিহা মির্জার দিকে।
সে বন্দুক তুলে মাথায় আঘাত করে মালিহা মির্জাকে।
মেহরিনকে ধরে থাকা অবস্থাতেই দুলে পড়ে যান মালিহা মির্জা।
আর সেই পশুগুলো মেহরিনকে তুলে নিয়ে যায়।
নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক জায়গায় কেটে যায় মেহরিনের।
আর যখন জ্ঞান ফেরে, তখন নিজেকে আবিষ্কার করে এই ঘরে।
কথা গুলো বলা শেষে!
মেহরিন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
কাসেম মেহরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
তার চোখে পানির আসা-যাওয়া চলছে।
মেহরিন কাসেমের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে—
কাসেম বলে,
বোন, তোর বর তোকে অনেক ভালোবাসে, তাই না?
মেহরিন হেসে হেসে বলে—
হুম অনেক।
ওরা যেহেতু আমাকে মারে নাই, তবে আমাকে আর কিছু করতেও পারবে না।
আমার স্বামী ঠিক আমাকে খুঁজে বের করবে—
প্রয়োজনে আকাশ পাতাল এক করে দেবে।
তাও সে আমাকে খুঁজে বের করবেই।
কাসেম অবাক হয়ে বলে—
এতটা বিশ্বাস?
মেহরিন হেসে বলে—
নিজের থেকেও বেশি।
কাসেম হেসে হঠাৎ করে বলে—
বোন, তোর বর এর নাম্বার মনে আছে তোর?
মেহরিন যেনো কিছু একটা বুঝে—
খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে—
কিন্ত ভাই, ওরা তোমার ক্ষতি করে দেবে।
কাসেম হেসে বলে—
এই দুনিয়ায় আমার কেউ নাই।
আমার জীবন দিয়ে যদি আমার বোন আর তার সন্তান বাঁচে,
তবে আমার জীবন দেওয়া সার্থক।
মেহরিন চোখে জল নিয়ে তাকায়।
কাসেম বলে—
তাড়াতাড়ি বল।
মেহরিন নম্বরটা বলে,
আর ঠিক শেষ হতেই… কেউ আসে।
কাসেম মেহরিনকে চোখ মেরে, ধমকে বলে—
এই মেয়ে, একদম চিৎকার চেঁচামেচি করবি না, একদম!জানে, মেরে ফেলবো।
মেহরিন বলে—
পানি… একটু পানি…
সদ্য আসা লোকটা কাসেমকে বলে—
কি হইছে কাসেম?
কাসেম বলে—
আর বলো না ভাই।
এই মাইয়া কখন থাইকা চিৎকার করতেছে—
কানের পোকা মরিয়া গেল আমার!
লোকটা একটু বিরক্ত হয়ে বলে—
থাক, কিছু বলো না।
এই মেয়ে কিন্তু খুব ভয়ানক।
এই অবস্থাতেও আমাদের অনেক লোক মেরে ফেলেছে! ওকে দূরে থাকাই ভালো।
বস যা বলছে শুধু তাই করাই উচিত।
চলো।
কাসেম মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
দরজা লাগিয়ে দেয় বাইরে থেকে।
মূলত, কাসেম একটু সুযোগ দিয়ে যায় মেহরিনকে হাঁটা-চলার জন্য। এ অবস্থায়
অনেকক্ষণ বসে থাকা যায় না—
তাই এই কাজটা করে যায় সে।
যেনো মেহরিন একটু হাটা-চরা করতে পারে।
ওদিকে রাজ গুডাউন এর সব দেখে বাড়ি ফেরে।
কিন্তু বাড়ি ফিরে যখন কার্ডদের রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখে, রাজের যেনো পায়ের নিচের মাটি সরে যায়।
লাবিবের দিকে তাকায়।
লাবিবও তাকায়।
আর দু’ভাই দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢোকে।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে শিকদার বাড়ি।
রাজের ভিতরটা যেনো কামড়ে ধরে।
দু’জনে ঢুকেই দেখে সিঁড়ির কাছে পড়ে আছে চারটা নারী দেহ।
লাবিব দৌড়ে যায়।
মেহবুবা আর লামিয়াকে দুই উরুর উপর তুলে ডাকে—
এই মেহবুবা, লামিয়া! কী হইসে! এই, উঠো! উঠো না!
রাজ কাঁপা কাঁপা হাতে রূপা বেগমের মাথাটা তুলে নেয় নিজের উরুতে। তাকায় পাশে থাকা কুলসুমের দিকে।
রাজের যেনো কথা বেরোচ্ছে না।
কেউ যেনো আষ্টে পিষ্টে ধরে আছে গলায়।
অনেক কষ্টে ডাকে—
মা… মা… মামনি…
লাবিব হঠাৎ বলে—
ভাবি! ভাবি! ভাবি কোথায়?
রাজ তাকায় লাবিবের দিকে।
ঠিক তখনই দৌড়ে বাড়িতে ঢোকে রিদ আর মেহের।
দূর থেকেই মেহের মালিহা মির্জাকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে—
মা!!
সে চিৎকারে রাজ আর লাবিব পেছনে তাকায়।
মেহের দৌড়ে আসে, মায়ের মাথা তুলে নেয় নিজের কোলে।
আর ডাকতে থাকে—
মা… মা…
রাজ যেনো জমে গেছে।
না কিছু বলেছে, না কিছু করেছে।
শুধু তাকিয়ে আছে।
লাবিব হঠাৎ করে দৌড়ে যায় উপরে—মেহরিনের রুমে।
সেখানে অনেকগুলা লাশ পায়।
কিন্তু মেহরিনকে পায় না।
লাবিব দৌড়ে আসে—
ভাবি! ভাবি! ভাবি!
রাজ তাকিয়ে আছে লাবিবের দিকে।
মেহের বলে—
মেহু! মেহু ঠিক আছে তো?
লাবিব বলে—
ভাবি নেই!
মেহের কান্নায় ভেঙে পড়ে।
রিদের দৌড়ে পানি আনে,
মালিহা মির্জার চোখ-মুখে দেয়…
মালিহা মির্জা আস্তে আস্তে চোখ মেলে,
চোখ মেলেই মেহেরকে দেখে জড়িয়ে ধরে,
ডুকরে উঠে বলে—
মেহের… আমার মেহু! মেহুকে ওরা নিয়ে গেছে!
ওকে বাঁচা?
ওই জানোয়ার গুলা যদি আমার মেয়ের কিছু করে ফেলে,
ও মেহের…
রাজ তো মরে যাবে রে…
ও আসার আগেই…
মেহুকে নিয়ে আয়!
রাজ শুধু তাকিয়ে আছে।
সব শুনছে, কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
বলতে চেয়েছে না, এমন না চায়ছে কিছু বলতে—কিন্তু পারছে না।
মনে হচ্ছে, চোখ বাদে শরীরের সব কিছু কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
রিদ লাবিবকে বলে—
লাবিব! জলদি ওদের তোল!
সবাইকে হাসপাতালে নিতে হবে।
অনেক ব্লিডিং হচ্ছে!
তাড়াতাড়ি!
লাবিব সায় দেয়।
রিদ আর লাবিব দু’জন মিলে সবাইকে গাড়িতে তোলে।
চলে যায়।
রিদ আর লাবিব জানে,
মেহের এই দিকটা সামলাবে।
মেহেরও তাই করে।
মেহের চোখের পানি মুছে বলে—
মা, তুমি আমাকে সবটা বলো।
প্লিজ, শুরু থেকে।
রাজ শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে, সব শুনে।
মালিহা মির্জা সব বলে।
মেহের মালিহা মির্জাকে সোফায় বসায়।
আদিক-ওদিক পায়চারি করছে,
একে-তাকে কল করছে।
মালিহা মির্জা রাজকে দেখে চমকে ওঠে।
আর রাজকে এমন চুপচাপ দেখে নানা চিন্তা বাসা বাঁধে মনে।
যে মেহরিনের একটুখানি আঁচড় লাগলে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতো,
সে মানুষ মেহরিন নিখোঁজ—এই খবর শুনেও চুপচাপ হয়ে আছে!
তাতে ভয় পায় মালিহা মির্জা।
তিনি উঠে এগিয়ে আসেন,
রাজকে ধরে বলেন—
“বাবা…”
রাজ তাকায় মালিহা মির্জার দিকে।
শান্ত দুটো চোখ।
যেখানে জ্বলছে না কোনো রাগ,
বরং জমে আছে
নিঃশব্দ ক্রোধ আর অসহায় কান্না।
মেহের ও এগিয়ে আসে রাজ এর কাছে, বলে—
ভাইয়া, তুমি কিছু একটা করো ভাইয়া!
রাজ হঠাৎ করেই মালিহা মির্জাকে জড়িয়ে ধরে,
আর বলে—
মা, আমার ভয় করছে মা…
আমার বউজান, আমার সন্তান…
ওরা ঠিক আছে তো?
ওদের কিছু হয়নি তো, মা?
মালিহা মির্জা ডুকরে ওঠেন।
মেহেরের মতো কঠিন মেয়ে পর্যন্ত কাঁদতে থাকে,
বোন আর তার অনাগত সন্তানের চিন্তায়।
আর ভাবে যেই রাজ—
যে তার Moonbem বলতে পাগল,
সে যে অবস্থায় আছে, তার ভিতরে কী চলছে কে জানে!
রাজ বলে চলেছে,
ও মা, বলুন না…
কিছু হবে না, তো?
…এমন তো হওয়ার কথা ছিল না মা।
এমন তো কথা ছিল না!
আল্লাহ তো এত নিষ্ঠুর না! তাই না মা?
আচ্ছা মা, আল্লাহ হয়তো আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন, তাই না?
কিন্তু মা, আমার তো খুব কষ্ট হচ্ছে মা!
আল্লাহ তো তার বান্দার প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারেন না, তাই না মা?
আল্লাহ ঠিক আমার বউ, বাচ্চাকে ঠিক রাখবেন।
তাই না মা?
হ্যাঁ… হ্যাঁ রাখবেন, আমি জানি রাখবেন…
আল্লাহ আমার সাথে এমন করতে পারেন না।
আমার Moonbem, আমার বউ, আমার সন্তানের কিছু হবে না!
না না কিছুই হবে না!
আল্লাহ কি এত নিষ্ঠুর?
না! কখনোই না!
আল্লাহ খুব দয়াবান!
তিনি আমাকেও দয়া করবেন!
তিনি তো আমার প্রভু, আমার মালিক, আমার খোদা!
তাহলে তিনি আমাকে এত কষ্ট দিতে পারেন না,
না না না… পারবেন না… কখনোই না!
আমার তো ছোট্ট একটা আব্বাজান, বা আম্মাজান হবে…
আমাকে বাবা ডাকবে!
রাজ মেহেরের কাছে গিয়ে বলে—
এই মেহের, তোমাকে খালামণি ডাকবে!
মেহের ডুকরে উঠে রাজের পাগলামি দেখে।
রাজ আবার ছুটে যায় মালিহা মির্জার কাছে—
মা, আপনাকে তো ‘নানুমণি’ ডাকবে, তাই না মা?
বলুন না মা, বলুন ডাকবে না!
মালিহা মির্জা কাঁদছেন।
রাজ বলে—
আমি তো এখনও আমার সন্তানের মুখ দেখলাম না।
এখনই তো কিছু হতে পারে না, তাই না মা?
বলুন মা, বলুন না!
হতে পারে না!
আমি মানবই না! না না না, কখনোই না!
হঠাৎ রাজ চিৎকার করে উঠে—
আল্লাহ!!!
তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না আল্লাহ!
তুমি তোমার এই বান্দাকে এত কষ্ট দিতে পারো না!
আমি তো তোমারই বান্দা আল্লাহ!
তুমি দিতে পারো না এমন কষ্ট…
তুমি আমার সন্তানের মুখ দেখার আগেই তাকে আমার থেকে দূরে করে দিতে পারো না আল্লাহ!
তুমি পারো না! পারো না!!!
তুমি… তুমি…
তুমি তো সেই ছোটবেলায় আমায় এতিম করে দিয়েছিলে!
বাবা, মা, বোন—সব কেড়ে নিয়েছো!
আমি তো কিছু বলিনি আল্লাহ!
এখন তুমি আমার বউ, বাচ্চাকেও কেড়ে নিচ্ছো?
আল্লাহ, না না না… এটা করো না!
তুমি ওদের ফিরিয়ে দাও!
আমাকে… আমাকে নিয়ে নাও…
আমার জীবন নিয়ে নাও…
তবু ওদের ফিরিয়ে দাও আল্লাহ…
তুমি ওদের ফিরিয়ে দাও!
বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে রাজ।
চিৎকার করে কাঁদতে থাকে—
আমার Moonbem… আমার সন্তান… আমার বউজান… আমার বাচ্চা…
এইসব বলে আহাজারি করতে থাকে রাজ।
মেহের, মালিহা মির্জা—সবার কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে যায়।
পুরুষ মানুষ কাঁদে না…
আর রাজের মতো পুরুষ তো কাঁদেই না।
সে মানুষটা কাঁদছে…
কী যন্ত্রণাদায়ক!
প্রতিটা আর্তনাদ যেনো বুক ফাটিয়ে বেরিয়ে আসছে…
প্রতিটা কান্না বুকের পাঁজর কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ মেহের এসে রাজকে ঝাঁকিয়ে বলে—
ভাইয়া, নিজেকে সামলাও ভাইয়া!
রাজ তাকায় মেহেরের দিকে।
আর বলে—
মেহের… আমার বউ… আমার বাচ্চা…
মেহের বলে—
ওদের খুঁজে বের করতে হবে ভাইয়া!
ওদের যদি মেরে ফেলার ইচ্ছা থাকতো, এখানেই মেরে ফেলতো!
আমার মন বলছে মেহরিন ঠিক আছে ভাইয়া! ও একদম ঠিক আছে!
আমাদের খুঁজে বের করতে হবে!
দয়া করে নিজেকে সামলাও!
আমরা সময় নষ্ট করলে চলবে না ভাইয়া!
খুঁজতে হবে!
রাজ মাথা নাড়ে, উঠে দাঁড়ায়।
আর বলে—
হ্যাঁ… হ্যাঁ… খুঁজে বের করবো!
করবোই!
আমি আমার বউজান আর আমার সন্তানকে খুঁজে বের করবো!
ওরা কোথায় রাখবে, আমি রাজ শিকদার—
আকাশ পাতাল এক করে হলেও খুঁজে বের করবো!
বলে **রাজ ফোন বের করে কল লাগায় সাব্বিরকে বলে—
সাব্বির, আমাদের যত লোক আছে, সবাইকে ছড়িয়ে দাও!
ইঁদুরের গর্ত পর্যন্ত বাদ দেওয়া চলবে না! চিরুনী তল্লাশি লাগাও সাব্বির আমি আমার বউ-বাচ্চাকে ফেরত চাই।
আমার বউ বাচ্চার কিছু হলে আমি সব ধ্বংস করে দেবো… সব।
সাব্বিরের কথা শোনা যায় না…
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৮
রাজ ফোন রেখে মেহেরকে বলে—
মেহের, তুমি মা’কে নিয়ে হাসপাতালে যাও।
আমি যাচ্ছি চিন্তা করো না আমি আমার বউ বাচ্চা নিয়েই ফিরবো ইনশাআল্লাহ।
বলেই রাজ বেরিয়ে পড়ে।