মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৭
মির্জা সূচনা
অন্ধকার একটা ঘর। সেখানে চেয়ার বাঁধা দুইটা মেয়ে—চোখে ভয়, মনে আতঙ্ক। বাচাঁর আশায় এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে ওরা।
হঠাৎ বন্ধ ঘরের দরজা খুলে গেল কেঁট শব্দ করে। ভেতরে ঢুকে এলো দু’জন পুরুষ।
একজনের পরনে কালো শার্ট, হাতা গুলো ভাঁজ করা কুনুই পর্যন্ত। ডান হাতে একটা ব্রেসলেট, বাম হাতে একটা খুব সুন্দর ঘড়ি। মুখে মায়াবী হাসি, ঘাড়সমান বাবরি চুল গুলো সুন্দর করে ভাবে গুছানো।
পাশের জনের পরনে সাদা শার্ট, হাতা ভাঁজ করা, চোখে একটা চশমা। চুলগুলো ছোট, তবে সুন্দর করে আঁচড়ানো। মুখে বাঁকা হাসি, হাতে দুটো ছোট ছোট সুই-এর মতো কিছু।
মেয়েরা তাকাতেই সাদা শার্ট পরা ছেলেটা হাতের সুইটা ছুঁড়ে মারলো। সুইটা গিয়ে লাগলো লাল টপস পরা মেয়েটার ঘাড়ে। সাথে সাথেই সে ছটফট করতে লাগলো। একই কাজ করলো পাশের মেয়েটা।
প্রেম সেটা দেখে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে মেয়ে দুটোর সামনে গিয়ে বলল—
“Hello sisters, what’s up?”
প্রেম পাশে থাকা একটা চেয়ার টেনে বসল। পাশে রাখা ঝুড়ি থেকে একটা কাঁচি হাতে নিলো আর তা পুরো হাত জুড়ে ঘুরাতে লাগলো আঙুলের সাহায্যে।
আর সাদা শার্ট পরা ‘তিব্র’ নামের ছেলেটা হেলে দুলে গিয়ে একটা টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। চোখে মোটা চশমা, হাতে গ্লাভস পরে, একটা কাচের গ্লাসে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের কিছু তরল দিয়ে অদ্ভুত কিছু বানাচ্ছে। সে তার কাজে ভীষণ মনোযোগী।
তিব্র আর প্রেম বেস্ট ফ্রেন্ড। আবার তাদের আরেকটা সম্পর্কও আছে—ওরা দুজন কাজিন। ওইদিন শপিং মল থেকে প্রেমের লোকেরাই এই মেয়েদুটোকে তুলে এনেছিল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ প্রেম হাতে থাকা কাঁচিটা দিয়ে মানুষের জামা-কাপড় যেমন করে কাটা হয়, ঠিক সেভাবেই খেঁচ খেঁচ করে কাটতে লাগলো,লাল টপস পরা মেয়েটার চামড়া। মেয়েটা চিৎকার করছে ব্যাথায়। প্রেম পাশে রাখা টেবিলের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। তারপর তিব্রর দিকে তাকিয়ে বলল—
মেহুর স্পেশাল একটা মসলা থেরাপি আছে, জানিস ভাই?
তিব্র হেসে বলল—
সে তো জানি, তবে নিজের চোখে দেখার খুব শখ।
প্রেম আবার বাঁকা হেসে বলল—
“আমারও।”
প্রেম মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল—
সিস্টার, তুমি ভুল করেছো। আমার মেহুকে কষ্ট দিয়ে। তোমার জন্য আমার মেহুর চোখে পানি এসেছে। আর সেটা আমাকে মৃত্যুসম যন্ত্রণা দিয়েছে। এটা কি ঠিক করেছো বলো তো? ওর চোখে পানি ঝরবে বলে আমি রাজ শিকদারের কোনো ক্ষতি আজ পর্যন্ত করি নাই। আর তুই শালার বেটি! তুই কিনা রাজ শিকদারের দিকে নজর দিস? কেন? দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব চু***নী? এই দুনিয়ার কোনো মেয়েকে আমি রাজ শিকদারের দিকে তাকাতে দেবো না,কারণ সেটা আমার মেহুর পছন্দ না। আর আমার মেহু যা পছন্দ করে না সেটা আমি হতে দেবো না।কখনোই না নেভার। যেখানে কোনো মেয়ে রাজ শিকদারের দিকে তাকালেই, আমি তাকে উড়িয়ে দেয়। আর তুই! আমার মেহুকে বলিস ওর শতীন হতে চাস? এত জা*লা তোর,যে বিবাহিত পুরুষের সাথে শুতে সতীনও হতে চাস বান্দির বাচ্চা।তোর সাহস দেখে আমি অবাক! তুই আমার মেহুর সাথে তর্ক করেছিস? How dare you! কথাটা চিৎকার করে বলে প্রেম। এই দুনিয়ার সব মেয়ের জন্য রাজ হারাম। রাজ শিকদারের দিকে তাকানোও হারাম। ওর দিকে তাকানো যাবে না। ও সবসময় আমার মেহুর। আমার মেহুর নিজস্ব জিনিসে আমি কারো নজর বরদাস্ত করি না। যে যে আমার মেহুর জিনিসে হাত বাড়াবে? সেই সেই হাত গুলো আমি প্রেম কেটে কুচি কুচি করে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো।
একটু থেমে প্রেম আবার হাসলো—
রাজ কে চকলেট বয় বলিস তাই না? চল আজ তোকে আমার মেহুর স্পেশাল মসলা থেরাপিটা দেখাই। ওর সতিন হতে চাস আর ওর খাতির যত্ন সম্পর্কে জানবি না তা তো হয় না।আজ তোকে মেহুর কিছু দিক দেখাবো।
মেয়েটা চোখ বড় বড় করে তাকায় ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চায় কিন্ত পারলো না। ওই সুই গুলোতে এক ধরনের কেমিকেল মেশানো ছিলো যা শরীরকে অকেজো করে দেয়। ভেতর থেকে শরীরের সবগুলো হাড় ভেঙে গেলে যেমন ব্যথা হয়, তেমন ব্যথা হচ্ছে শরীরে।
সাথে থাকা মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেল যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে।
প্রেম এবার হাতে একটা গ্লাভস পরে নিলো। তারপর পাশে থাকা একটা বক্স খুললো। বক্সের ভেতরে সব ধরনের মসলা—হলুদ, মরিচ গুঁড়ো, ধনিয়া গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, লবণ আর আরও কিছু। প্রেম একে একে সব মসলা নিলো, আর মেয়েটার গায়ে এমনভাবে লাগালো যেন মাংসকে মেরিনেট করছে।
ঠিক তখনই পিয়াস হন্ত দন্ত হয়ে কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই ঘরে ঢুকলো। হঠাৎ কাউকে অনুমতি ছাড়া ঢুকতে দেখে প্রেম ও তীব্র দুজনেই বিরক্ত হয়ে তাকাই। পিয়াসকে দেখে ব্রু কুচকে তাকাই। পিয়াসকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভয়ানক কিছু একটা হয়েছে, কারণ পিয়াশ খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ, বড় বড় বিপদেও মাথা ঠান্ডা করে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ওর। প্রেম কিছু বলতে যাবে, তার আগেই পিয়াশ বলে,
আই অ্যাম সরি ভাই,অনুমতি ছাড়া আসার জন্য কিন্তু আমার কাছে উপায় ছিল না, তাই এভাবে চলে এসেছি। প্রেম সন্দিহান কন্ঠে সুধায়,
কী হয়েছে? পিয়াস তোকে এমন লাগছে কেন?
পিয়াস এক পলক তীব্রর দিকে তাকিয়ে ঢুক গিলে মিন মিনিয়ে বলে,
ভাই, একটা ব্ল্যান্ডার হয়ে গেছে।
পিয়াস আড় চোখে একবার তীব্রর দিকে তাকায়, যে আগে থেকেই তার দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।পিয়াস চোখ বন্ধ করে এক দমে বলে,
ভাই, মেহু ম্যামের ছেলেকে ওরা তুলে নিয়ে গেছে। আর তাকে রক্ষা করতে গিয়ে চু..চুমকি ম্যাম অহতো হয়েছে। এখন হাসপাতালে আছে, ওনি প্রেগন্যান্ট, আর ওই কুত্তার বাচ্চারা তার পেটে আঘাত করেছে ভাই।
কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই তীব্র এসে পিয়াসের কলার ধরে বলে,
কি বলসিস তুই? চুমকির কী হয়েছে? বল, তুই মিথ্যা বলছিস তাই না? বল, বল মিথ্যা সব। আমার চুমকি ঠিক আছে, বল। পিয়াস মাথা নিচু করে চুপ করে আছে, সে জানতো এমনই কিছু হবে। তীব্রের হাত পা কাঁপছে। প্রেম কিছুক্ষণ থমকে থাকে, কথাগুলো যেন মাথায় ঢুকছে না। রাজ থাকতেও এমনটা কী করে হতে পারে, এটা তো ভাবতেই পারছেনা প্রেম। প্রেমের সব রাগ গিয়ে পরছে রাজের উপর। ও থাকা সত্ত্বেও কি করে এমন টা হতে পারে।
প্রেম নিজের চুলগুলো খামচে ধরে, ওদিকে তীব্র পাগলামি করছে। হঠাৎ প্রেম উঠে দাড়াই, গর্জে উঠে বলে,
পিয়াস…!!! তীব্র আর পিয়াসকে দুজনেই তাকায়। প্রেম বলে,
লোক লাগা, লোক লাগা পিয়াস। বাচ্চার যেন কিছু না হয়। পিয়াশ বলে,
কিছু হবে না ভাই বাচ্চা একা না, সাথে লাবিবকে ও নিয়ে গেছে।প্রেম নিজের ঠোঁট কামরে কিছুক্ষণ ভাবে এরপর তীব্রের কাছে যায়।
তীব্র প্রেমকে ধরে কান্না করে দেয়,
এই ভাই, ও কী বলেছে, আমার চুমকি?আমার চুমকির কিছু হলে আমি বাচঁবোনা ভাই।এমনিই তো আধমরা হয়ে বেঁচে আছি। শুধু ওর সুখের জন্য আমি হাসতে হাসতে বিষ পান করেছি ভাই। আমি ওকে দূর থেকে একটু দেখতে পায় এতেই তো আমি খুশি ভাই। ওর মুখের হাসির জন্য কত কিছু বিষর্জন দিয়েছি ভাই। এর পর ও যদি ওর কিছু হয় আমি মরে যাবো ভাই মরে যাবো আমি। এই ভাই বলনা ও সব মিথ্যা বলছে। আমার চুমকি ঠিক আছে তাই না ভাই বল?একদম ঠিক আছে তাই না আমার চুমকি। কিছু হবে না ওর আমি হতে দিব না। না না দিবো না কিছু হতে। প্রেম বুঝে ভাইয়ের মনের অবস্থা। ওরা দুজন যে একই পথের পথিক, প্রেম জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,
তীব্র ভাই আমার,নিজেকে সামলা। আমার কথা মন দিয়ে শোন। এখন ওদের শত্রুরা ঘিরে ধরবে,আমরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারব না, রিস্ক নেওয়া যাবে না। চুমকি হাসপাতলে আমার মন বলছে, আবার আক্রমণ হবে। তুই হাসপাতাল যা ভাই, আমি এ দিকটা সামলে নেব। বুঝতে পারছিস আমি কী বলছি? চুমকি কে সেভ রাখার দায়িত্ব তোর।
তীব্র হঠাৎ থামে যায়, কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়। প্রেম কিছু একটা ভাবে বলে,
পিয়াস ওরা কোন দিকে গেছে?
পিয়াস বলে,
ভাই, আমাদের লোকেরা ওদের লুকিয়ে ফলো করেছে, হালুয়া ঘাটের দিকে যাচ্ছে ভাই।
হঠাৎ প্রেম উচ্চ স্বরে হাসে উঠে, এমন সময় প্রেমের হাসার ব্যাপারটা বোধগম্য হলো না। পিয়াস তবুও কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।
কারণ সে জানে প্রেম নিজেই সময় মতো বলবে। পিয়াসের কথা কে সত্যি করে, প্রেম বলে উঠলো—
বুঝলি তো পিয়াস, ওর মরার চুলকানি উঠে গেছে রে। পিয়াস বাঁকা হাসে। প্রেম নিজের ফোনটা বের করে কাউকে একটি টেক্সট করে, আর পিয়াসকে বলে,
সবাইকে খবর দে বের হবো। আমরা আজ আল্লাহর রাস্তায় অনেক গুলো পশু কোরবানি করে ফিরবো রেডি হো সব।
পিয়াস হেসে সায় জানিয়ে বেরিয়ে যায়।
প্রেম কপালে আশা চুলগুলো ঠেলে দেয় পিছনে,আর কপালে দুই আঙ্গুল দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বলে,
তোর জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে রে,সালা।তোর কপালে যে কি নাচছে রে, ভাবতেই পারছিস না। তোর মৃত্যুটা হবে অতিশয় ভয়ঙ্কর। এতটাই ভয়ানক মৃত্যু হবে তোর? যতটা ভয়ঙ্কর মৃত্যু এখনো পর্যন্ত কারো হয়নি। আমি যদি খুব ভুল না হয়, তবে সেই ভয়ানক মৃত্যুটা তোকে দিবে আমার মেহু।
কথা দিচ্ছি তোর শরীরের এক বিন্দু রক্ত আমি রাখবো না রে,তোর কলিজা খানা আমি বীভৎস ভাবে টেনে বের করব। আমার বাচ্চাকে অপহরণ করার কথা, যে মস্তিষ্কে এসেছে তা আমি ধ্বংস করে দিব। যে কলিজার জোরে তুই এত কিছু করছিস সে কলিজা আমি শিয়াল কুকুর দিয়ে খাওয়াবো। আমার বাচ্চা প্রেম নেওয়াজের কলিজায় হাত দেওয়ার মূল্য চুকাতে হবে তোকে। হ্যাঁ, ওটা আমার বাচ্চা, আমার ছোট পরীর বাচ্চা, ওরা আমার মেহুর বাচ্চা। আমি না হই ওদের জন্মদাতা তাতে কী? তবুও তারা আমার সন্তান, আমার মেহুর সন্তান। ওদের ক্ষতি করা তো দূরে, সেই কথা যে চিন্তা করবে, সেই চিন্তা করা মাথা, আমি প্রেম তার দেহে রাখব না।
বিয়ে বাড়িটা এখন যেনো শ্রাদ্ধ বাড়িতে পরিণত হয়েছে। হাসি-মজা, দুষ্টুমিতে মেতে থাকা মানুষগুলো কেমন নিঃশব্দ নিথর হয়ে আছে, ঠিক যেমন ঝড় আসার আগে চারদিক স্তব্ধ হয়ে যায়, নিঃশব্দ চুপ চাপ হয়ে যায় ধরনী। তেমনি, এদের মৌনতা যেন কোনো ঝড় আসার পূর্বাভাস।
ফিরোজ মির্জা ও মেহরিনদের পাপা নামক লোকটি যখন তাদের আশেপাশে থাকা শত্রুদের পরপারে পাঠিয়ে নিচের দিকে আসছিল। ঠিক তখনই তারা দেখতে পায় লাবিবের রুমে চুমকি অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। পাপা নামক লোকটি দৌড়ে গিয়ে চুমকিকে ধরে,ফিরোজ মির্জা নিজেকে সামলে দৌড়ে সবাইকে ডেকে আনে। চুমকিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে সবাই যেন থমকে গিয়েছিল।
হাসপাতালের করিডোরে সবাই অবস্থান করছে রাজ, রিদ, আরশ, রাকিব– সবাই দাড়িয়ে আছে পাথরের মতো। জীবন একটা চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। শান্ত একটু দূরে বসে আছে, দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে তার চোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু বর্ষণ হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষকে এভাবে দেখে ছেলেটা একদম ভেঙে পরেছে।
অল্প দূরে দাড়িয়ে কান্না করছে মালিহা মির্জা। ফাইজা চৌধুরী তাকে সামলাচ্ছে যতটাই সম্ভব। বুঝতে চেষ্টা করছে। বুঝালেই কী, মায়ের মন কী আর তা মানে। যতই চুমকি কে পেটে না ধরুক, রক্তের সম্পর্ক না থাকুক, তবুও যে তিনি চুমকি কে ভালোবাসেন নিজের মেয়ের মতই। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেই কী তাদের যে আত্বার সম্পর্ক।
রূপা বেগম একটু দূরে মাহিমকে কোলে নিয়ে বসে আছে। তার চোখ মুখ শক্ত। মেহরিন কোনো কথা বলছে না, কেমন জানি থম মেরে গিয়েছে। এটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। একদিকে সন্তান, অন্যদিকে প্রাণপ্রিয় বন্ধুবি এমন সময় তার যেমন রিয়েক্ট করা উচিত, তা সে করছে না। এমন করলে যদি ওর কিছু হয়ে যায়? তাই মেহরিন কে কথা বলতে চেষ্টা করছে রাহি আর আরফা। ওদিকে, মেহবুবা কান্না করছে আর তাকে সামলাচ্ছে লামিয়া।একদিকে বড় বোনের মত চুমকি বোনের ছেলে আবার ভালোবাসার মানুষ সবাই বিপদে। মেহের একটু দূরে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। ফিরোজ মির্জা ও মেহরিনদের পাপা ইব্রাহিম হাওলাদার ও ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।
ইব্রাহীম হাওলাদার তিনি হলেন ফিরোজ মির্জার একমাত্র প্রিয় বন্ধু। তার সাথে এক মাত্র সালা মানে মালিহা মির্জার ভাই। ইব্রাহিম হাওলাদারের স্ত্রী তমা হাওলাদারের মা হওয়ার ক্ষমতা ছিলো না। তমা হাওলাদার ও মালিহা মির্জা ও ছিলেন প্রিয় বন্ধু তাই ফিরোজ মির্জা ও মালিহা মির্জা নিজেদের দুই রাজকন্যা থেকে একজন কে দিয়ে দেন। সেই থেকেই ইব্রাহিম হাওলাদার হয়ে উঠেন সবার পাপা। শুধু মেহের নয় মেহরিন, চুমকি,মেহের,মাহির ও মেহবুবা সবাইকেই তিনি বাবার মত ভালোবেসেছেন। সবাইকে পড়া শুনার পাশাপাশি নিজেদের রক্ষা করার কৌশল ও শিখিয়েছেন।
ইব্রাহিম হাওলাদার ভাবছেন চুমকির সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলোর কথা ভাবতেই চোখ গুলো ভিজে উঠলো।
এমন সময়ে দরজার খোলার আওয়াজ হলো। সবাই দৌড়ে আসে ডক্টরের কাছে। মেহরিন সজা এগিয়ে যায় আর শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
ডাক্তার, চুমকি কেমন আছে? ডাক্তারটি আর কেউ নয় তীব্র। তীব্রের মুখে মাক্স। মাক্স না পড়লে হয়তো মেহরিন চিনে ফেলতো। তীব্র কিছুক্ষণ মেহরিন এদিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
আপনারা শান্ত হন, প্রেসেন্ট ঠিক আছে। তবে মাথায় আঘাত লাগাই, অনেক রক্ত ঝরেছে, তাই শরীর দুর্বল, প্রোপার রেস্ট নিলে কদিনেই ঠিক হয়ে যাবে। একটু থেমে আবার শক্ত গলায় বলে, সম্ভবত ওর পেটে আঘাত করা হয়েছে।
এমন কথা শুনে সবাই আতঁকে ওঠে, শান্ত দৌড়ে এসে বলে,
ডক্টর আমার ওয়াইফ..! আমার ওয়াইফ ঠিক আছে তো? আমার বাচ্চা ঠিক আছে? ওদের কিছু হবে না তো ডক্টর।
তীব্র মলিন হাসে মনে মনে বলে,
আমি থাকতে ওর কিছু হতে দিবো ভাবলে কি করে। এরপর শান্তর দিকে ফিরে দুই দিকে মাথা নেড়ে বলে,
কুল ম্যান, কিছুই হয়নি। তবে ওর ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে,আর খেয়াল রাখতে হবে এমনটা যেন আর না হয় তা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।জানেন তো এ সময় কতটা সতর্ক থাকতে হয়। আল্লাহর রহমতে পেসেন্ট একদম ঠিক আছে। সবার মনের উপর থাকে যেন বড় একটি পাথর নেমে যায়। কাউকে কিছু না বলে মেহরিন সোজা ঢুকে যায় চুমকির কেবিনে। আস্তে ধীরে পাশে গিয়ে বসে। আকাশি রং এর হাসপাতালে পোশাক পরানো, মাথায় ব্যান্ডেজ বা হাতে ক্যানেলা। চুমকি কে এমন অবস্থায় দেখে মেহরিনের ভেতরটা মুচড়ে উঠে।চোখে হানা দেয় অশ্রুরা। মেহরিন ডান পাশের টুল টায় বসে চুমকির হাতটা তুলে চুমু খায়।চোখ বন্ধ করে নীরবে চোখের পানি ফেলে। চুমকি চোখ মেলে তাকিয়ে মেহরিনকে দেখে একটু হাসে। আবার পরক্ষনেই চিন্তিত হয়ে বলে, তুই এখনও এখানে কেন মেহু? বলেই অস্থির হয়ে উঠে। মেহরিন চুমকির পাশে আসে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে বলে, শান্ত হ, চুমকি।
চুমকি শোনে না, উল্টো অস্থির হয়ে বলে,
মেহু, আমার মেহিন, আমার বাচ্চা, আমার মাহিনকে ওরা আমার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে গেলো মেহু। আমি কিছু করতে পারিনি মেহু। আমার মাহিন, এটুকু বলেইকান্না করে দেয় চুমকি। মেহরিন উঠে চুমকির মাথা নিজের বুকে নেয় একটি চুমু খেয়ে বলে,
চুপ.. চুপ.. চুপ কর। তোর বাচ্চার কিছু হবে না, তুই ভুলে যাচ্ছিস কেন?তোর বাচ্চাদের মা জননী যে দুজন। আল্লাহ ব্যতীত কারো বাপের শদ্ধ আছে, যে আমাদের সন্তানদের ক্ষতি করবে।
চুমকি কান্না থামিয়ে মেহরিনের দিকে তাকায়। মেহরিন হাসে চুমকির দুই চোখ মুছিয়ে দেয় আর বলে,
মাহিম আর মাহিন বড় হয়ে জানবে ওদের মামনি ছেচকাঁদুনে। চুমকি হঠাৎ মেহরিনের হাতটা নিজের মাথায় নিয়ে বলে,
আমাকে কথা দে, ওদের তুই ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর মৃত্যু দিবি। এমনভাবে ওদের শাস্তি নিবি যেন পশু-পাখি ও ওদের দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
মেহরিন হাসে, মাথা নাড়ে। হঠাৎ চুমকি বাকা হাসে বলে,
জানিস তো মেহু, একটা প্রবাদ আছে – পিপিলিকার পাখা গজাই মরিবর তোরে। মেহরিন হাসে, মাথা নাড়ে। মেহরিন চুমকি কে বুঝিয়ে শুনিয়ে বের হয়। বের হতে-তেই হাসি হাসি মুখটা কঠোর হয়ে ওঠে।
এতখন আটকে ছিল শুধু প্রানপ্রিয় বন্ধুবির জন্য। যতটা নিজের সন্তানকে ভালোবাসে, ততটাই ভালোবাসে প্রাণপ্রিয় বন্ধুবিকে। যে বন্ধু-রূপী বোন তার সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের কথা, নিজের অনাগত সন্তানের কথা ভাবেনি। তাকে এমন অবস্থায় ফেলে কি করে চলে যাবে মেহরিন। মেহরিন নিজেকে শান্ত রেখেছে শুধু পরিবারের কথা ভাবে। ওর ভেতর কী হচ্ছে, তা কেউ জানে না। একজন সন্তানকে অপহরণ করার পর, একজন মায়ের উপর দিয়ে যে কী যায়, তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে। তার ওপর সে আবার দুধের বাচ্চা। মেহরিন কে বের হতে দেখে, সবাই ওকে ঘিরে ধরে। মেহরিন শান্তর দিকে তাকিয়ে বলে,
ভাইয়া, তুমি দেখা করো, আসো। শান্ত ঢুকে চুমকির কেবিনে। মেহরিন সোজা রাজের কাছে যায়। রাজের কোলার ধরে বলে,
আপনার এতো লোক থেকে কি লাভ, যদি নিজের সন্তান, নিজের পরিবারকে নিরাপত্তা না দিতে পারেন।
রাজ কিছুই বলে না, শুধু তাকিয়ে থাকে মেহরিনের চোখের দিকে।
মাফিয়া, গ্যাংস্টার জানা পরও, আপনাকে বিয়ে করেছি। জানি আপনার শত্রুের অভাব নেই তাও বিয়ে করেছি আপনাকে। কারণ আমি জানতাম, আপনি নিজ পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন। আপনার এত ক্ষমতা, এত লোক থাকার পরও, তার থেকেও বড় কথা! আপনি থাকা অবস্থায় নিজের বাড়ি থেকে আমার সন্তানকে কী করে শত্রুরা নিয়ে যায়। এত পাওয়ার এত ক্ষমতা দিয়ে কি লাভ জানতে চাই আমি।
রাজ মেহরিনের মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে। মেহরিন চোখ বুঝে নিজেকে শান্ত করে। রাজ শুধু বলে,
কি চাও?
মেহরিন যেন ওই কথার জন্য অপেক্ষা করছিল। মেহরিন সোজা হয়ে দাঁড়ায়, রাজের চোখে চোখ রাখে বলে,
আমার ওকে চাই, ওর প্রতিটি বডি পার্ট আমার চাই।
– কবি সাহেব।
যে মাথা দিয়ে ওই জানোয়ারের বাচ্চা চিন্তা করেছে আমার সন্তানকে আমার থেকে আলাদা করার। সেই মাথাটাই আমি ততক্ষণ হাতুড়ি চালাবো, যতক্ষণ ওর মাথার খুলি গুড়ো গুড়ো না হয়। ওর মগজ যতক্ষণ না পর্যন্ত বের হয় আমার হাত থামবে না। যেই মুখে অর্ডার দিয়েছিল আমার ভাই, আমার সন্তানকে নিয়ে যেতে, সেই মুখ আমি থেতলে দিব। যে চোখে আমার পরিবারের দিকে তাকিয়ে ছিলো সেই চোখগুলো আমি নিজ হাতে উপড়াবো। যে হাত আমার পরিবারের ক্ষতির জন্য বাড়িয়েছিল তা আমি কেটে কুচি কুচি করবো। শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে মেহরিন। হঠাৎ বাঁকা হেসে আবারো বলে ওঠে,
ওর কলিজা খানায় আমি মেহরিন শিকদার আগুন লাগাবো কবি সাহেব। ওজন করতে হবে তো কলিজা খানা কত কেজি? কত বড় কলিজা তার যে সে আমার মেহরিন শিকদারের পরিবারের ক্ষতি করতে চায়। ওর নিশংস মৃত্যুর সাক্ষী আমি আপনাদের বানাতে চাই। এতটাই নির্মম নিশংস ভাবে ও মরবে যেমন মৃত্যুর কথা এখনো পর্যন্ত কেউ না দেখেছে আর না শুনেছে।
মেহরিনের কথা শোনে সবার মুখে খেলে গেল দুর্লভ বাঁকা হাসি। এই হাসির অর্থ যারা বুঝবে—তারা নিজের জীবন নিয়ে পালাতো একখুনই।
রাজ গম্ভীর গলায় বলল,
এখন বের হবো।
তখনই জীবন বলল,
তুই যা বলেছিলি, ঠিক তাই রাজ। ওরা ওদিকেই যাচ্ছে।
রাজ হাসল।
কিছু বলবে, তার আগেই মেহের বলে উঠল—
যেতে দাও… যেতে দাও। ওরা ভাবতেই পারছে না, কী হতে চলেছে ওদের সাথে।
প্ল্যান করলো ওরা, সব ছক কষলো ওরা,
তবে শেষে ‘ছক্কা’—আমরাই মারব। নিশ্চিন্ত থাকো।
মেহেরের কথায় সবাই মাথা নাড়ল।
এমন সময় শান্ত এসে জানাল চুমকি সবারে ডাকছে।
বিলম্ব না করে সবাই চুমকির কাছে গেল।
সবাইকে দেখে চুমকি মুখটা কঠিন করে বলল—
তোমাদের কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে।
সবাই জানতে চাইল, কী?
চুমকি সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল—
আমার সন্তানকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও।
আর যারা নোংরা হাতে আমার সন্তানকে ছুঁয়েছে—
সেই হাত যেন আর তাদের দেহে না থাকে।
সবাই চুমকিকে আশ্বস্ত করল—তারা চুমকির কথা রাখবে।
চুমকির কেবিন থেকে বের হতেই রাজ কল দিল সাব্বিরকে।
শুধু একটা কথাই বলল—
৫ মিনিটে সব রেডি চাই। বের হবো।
ওপাশ থেকে কী বলে—শোনা গেল না।
সবার মুখের অভিব্যক্তি এখন এক রাগ, জেদ আর কাউকে পরপারে পাঠানোর তীব্র বাসনা।
সবার মনে একটাই কথা, সে জানোয়ারের নির্মম মৃত্যু।
রাজ তাদের প্ল্যান বোঝাচ্ছিল, এমন সময় রূপা বেগম এগিয়ে এলো,তার কোলে মহিম।
সবাই তাকাল রূপা বেগমের দিকে।
সবার উৎসুক দৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি গম্ভীর আর তেজ মেশানো কণ্ঠে বললেন—
ওর অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে মুছে দাও।
যার জন্য বিয়ে বাড়ির আনন্দে ভাটা পড়েছে,আমাদের সাময়িক আনন্দ যে কেড়ে নিয়েছে তার জীবনের সকল আনন্দ কেড়ে নাও তোমরা।তার বংশ নির্বংশ করে দাও।ওর অস্তিত্ব যেন পৃথিবীর কোনো প্রান্তে না থাকে।
তাকে বুঝিয়ে দাও।
সবাই স্রোতে ভাসলেও, আমার ছেলে ও বউমারা নিজেদের রাগ জেদ বুদ্ধিমত্তা ও ক্ষমতা দিয়ে স্রোত তৈরি করে।
আমি আমার ছেলেদের এমনভাবেই গড়ে তুলেছি,
যে বন্ধুর জন্য জীবন দিতে ও শত্রুর বংশ নির্বংশ করতে তারা পিছপা হবে না।
আমার ছেলেদের নাম শুনলে যেখানে ভয়ে মানুষ তটস্থ থাকে—
সেখানে আমার নাতি, আমার ছেলেকে তুলে নেওয়ার দুর্সাহস যে দেখিয়েছে,
তাকে তোমরা নিজ দায়িত্বে তার শেষ পরিণতি দেখিয়ে আসবে।
All the best!
হয় ওই জানোয়ারের বাচ্চাকে তার শেষ সীমানা বুঝিয়ে,
আমার ছেলে-নাতিকে নিয়ে ফিরবে।
নইলে সেখানে শহীদ হয়ে প্রাণ দেবে।
জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা—যদিও আমি শেখাইনি।
তবুও বলব, হয় মারবে নয় মরবে।যাই করবে, বীরের মতো করবে।কাপুরুষের মতো পালিয়ে আসবে না।
রাজ বাঁকা হেসে বলল—
তোমার কী মনে হয়, মামণি?
রূপা বেগম তেজি কণ্ঠে উত্তর দিলেন—
কতটা বিশ্বাস থাকলে একজন মা এই কথা বলতে পারে—
তা আশা করি বুঝিয়ে বলতে হবে না।
ওর কলিক্ষা যতটুকুই হোক—তা আমি নিজের চোখের সামনে দেখতে চাই।
আমার বাড়ি থেকে, আমার নাতি, আমার ছেলেকে তুলে নেওয়ার প্রাপ্য উপহারখানা বুঝিয়ে দিয়ে আসবে।”
রাজ হেসে বলে,
হঠাৎ নতুন পানি পাইলে মাছ একটু বেশিই লাফায়। মামনি তবে চিন্তা করো না। মাছ কে পানি থেকে তুলে, গরম তেলে ভেজে একদম ফিশ ফ্রাই করে সবাই মিলে মজা করে খেয়েই ফিরবো।
রাজের কথায় রূপা বেগম হাসলেন সানান্য। এরপর মেহরিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।মেহরিন রূপা বেগমের চোখে চোখ রাখল।
রূপা বেগম শান্ত কণ্ঠে বললেন—
আমরা দুজনই মা। আমাদের দুজনের সন্তানকেই কোনো এক নরপশু নিয়ে গেছে।
আমি আশা রাখি, একজন মা হিসেবে,
নিজের পাশে-পাশে আমার তরফ থেকেও তুমি কিছু উপহার ওদের দেবে তাকে।
মেহরিনের ঠোঁটে খেলে গেল রহস্যময় হাসি।
মামনি সে হয়তো জানেনা! আমরা বিপদকে ভয় করি না -কারন আমরা নিজেরাই বিপদ।
রূপা বেগম মাথা নেড়ে বললেন—
মহিমকে আমরা সেভ রাখব, চিন্তা করো না।
যাও, নিজের কাজ শেষ করে সোহেসালামতে ফিরে আসো আমার বুকে।
All the best, বউমা। মামনি তোমাদের বিজয়ের অপেক্ষায় থাকবে।
মেহরিন মহিমকে কোলে নিল, পাশের কেবিনে নিয়ে গিয়ে খাওয়াল,তারপর রূপা বেগমের হাতে দিয়ে দিল।
এখন ওরা বের হবে।সবাই যাচ্ছে না।
যাচ্ছে শুধু—রাজ, মেহরিন, মেহের, রিদ, আরশ, লামিয়া, রাকিব, মহবুবা, জীবন,
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ওরা।
ওরা প্রথমে এলো একটা ফাঁকা মাঠে।
সেখানে সারি বেঁধে দাঁড়ানো এগারোটা হেলিকপ্টার।
সবাই যার-যার মতো উঠে গেল।একেকটা হেলিকপ্টার আকাশপথে রওনা দিল যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে—
এই যুদ্ধ এক মায়ের তার সন্তানকে ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ।
পাপীকে শাস্তি দেওয়ার যুদ্ধ।
এই যুদ্ধ এক বাবার যুদ্ধ, এক ভাইয়ের যুদ্ধ,
এক বোনের, এক স্ত্রীর যুদ্ধ।
প্রায় এক ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে হেলিকপ্টারগুলো একে একে এসে থামল বিশাল খোলা মাঠে।
সবাই একে একে নেমে এলো।হেলিকপ্টারের পাখা তখনো ঘুরছে। ধুলো-বালিতে চারদিক ঢেকে গেছে। একসাথে থেমে যায় হেলিকপ্টারগুলোর পাখা আর আস্তে আস্তে ধুলো সরে গিয়ে সব স্পষ্ট হলো সকলের মুখ, সবার পরনে একি পোশাক—
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৬
সবাই কালো পোষাকে আবৃত।
সবাই এগিয়ে গেল। তাদের একটু সামনেই সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, সো খানিক বাইক। সবাই এগিয়ে যায় বাইকের পাশে ওরা যেতেই জঙ্গলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে প্রায় ৮০-৮৫ জন মত ছেলে। ওদের পরনেও কালো পোশাক, মাথায় হেলমেট। রাজকে দেখে সবাই হেসে উঠল রাজও হেসে ওঠে।
সবাই বাইকে উঠে, যে কেউ দেখলেই ভাববে—কোনো রেস চলছে। বাইকের তীব্র শব্দ তুলে এগিয়ে চলে সবাই নিজেদের গন্তব্যে।