মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ১৩

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ১৩
সাদিয়া

মধ্যাহ্নের ভানু কিরণ গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে মায়রার লাস্যময়ী আনন। চোখ ধাঁধানো আভায় মেয়েটা যেন পৌরুষ শরীরে আরো নুয়ে যাচ্ছে। দৃঢ় ব্যক্তিত্বের ইহাম খানিকটা ছটফট করে উঠল। ভেতরটা যেন উদ্দাম হয়ে ছুটল। দ্রুত পা চালিয়ে সে এগিয়ে কটেজে উঠল। দুইতলায় ধুপধাপ পায়ে এগিয়ে গিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করল।
মায়রা কে নিজের টানটান পরিচ্ছন্ন শয্যায় শুয়িয়ে রেখে নিচেই হাটু গেড়ে বসল। মেয়েটার পরনে হাটু অবধি ফ্রগ আর জিন্স। ইহাম হাত বাড়িয়ে দিতেই মায়রা উচ্চ গলায় বলে উঠল,

“আমার পায়ে হাত দিবেন না আপনি।”
“তর্ক করো না মায়রা দেখতে দাও।”
“হবে না। আপনার ভাষ্যমতে আমার মতো বেয়াদব মেয়েকে দেখতে হবে না আপনার।”
দাঁত খিঁচে আনল ইহাম। লম্বা শ্বাস টেনে সে মায়রার দিকে তাকাল। ক্ষীণ গলাতেই বলল,
“দেখছি, কি করবে তুমি? আমি কাকে দেখব না দেখব সেটা তুমি ঠিক করবে?”
মায়রা তাকাল কপাল কুঁচকে। রাগ হলো তার। চোখে মুখে বিরক্তি ভাব তুলেই বলল,
“বিরক্ত করবেন না তো আমায়। আপনাকে দেখলেই বিরক্ত লাগছে। আপনি এখান থেকে যান।”
“বিরক্ত কাকে বলে জানো তুমি মায়রা? সময় হলে তোমায় বিরক্ত বিষয়টা ক্লিয়ার করছি। এখন পা দেখতে দাও।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চকিতে তাকাল মায়রা। বিস্মিত চোখ গুলি দিয়ে ইহাম কে দেখছে। শান্তশিষ্ট ভদ্র ভাবে বসে আছে ওই অভদ্র লোকটা।
“বেয়াদবি না করে পা এগিয়ে দাও।”
দপ করে জ্বলে উঠল মায়রা। আজকাল এই অভদ্র বেয়াদব শব্দ গুলি শুনলেই তার মাথায় আগুন জ্বলে যায়। দাঁত কটমট করে উঠে তার। নাক ফুলিয়ে বলে উঠল,
“আপনার মতো অসভ্য মানুষের কাজ থেকে আমি সাহায্য নিতে চাইনা। মরে গেলেও না।”
“এত তেজ তোমার? শরীরের কোথায় কোথায় রাখো এত তেজ? দেখো মায়রা শান্ত আছি। শান্ত থাকতে দাও। চটিও না আমায়।”
জ্বলে উঠল মায়রা নিজেও। নিজেকে কঠিন করে বলল,

“উল্টোপাল্টা কথা একদম বলবেন না। আপনি কি ভেবেছেন ভয় আমি আপনাকে? আমি বাঘও না ভাল্লুকও না ভয় পাবার কিছুই নেই আপনাকে। আর না রাক্ষস যে খেয়ে ফেলতে পারেন। কি করবেন আপনি? কি ই বা করার আছে আপনার? শুধু তো নিজের দা…”
“শাট আপ ড্যাম ইট। কানের নিচে একটা দিব বেয়াদব কোথাকার। কখন থেকে বলছি শুনার নাম নেই। বলছি না চুপচাপ বসে থাকতে? আর একটা কথা বললেও তোমার ঠোঁট সেলাই করে দিব আমি।”
“উহহহ।” মায়রা তাকাল চোখের পাতা মেলে। বিড়বিড় করেই বলল “সত্যি কথা বললেই গায়ে ফোসকা পড়ে। শুনতে কারোরই ভালো লাগে না।”

চোখ মুখ একদম স্থীর। চোয়াল শক্ত। মুখের আদল গম্ভীর তার। চুপটি করে বিছানার উপর বসল। নির্নিমেষ মায়রার হাটুর নিচে ধরতেই মেয়েটা অবাধ্য সাপের মতো মুচড়ে উঠল। তক্ষনি ইহাম গরম চোখে তাকাল তার দিক। মেয়েটা ওই তপ্ত চোখের তেজে খানিক মিয়ে গেলেও বুঝতে দিল না। কপালে সংশয় তুলে পা টা ইহামের কাছ থেকে টেনে আনতে চাইলো ইহাম কেমন করে তাকাল তার পানে। আচমকা টান দিতেই মায়রা তাল সামলাতে না পেরে নিজের জায়গা থেকে নড়ে উঠল। বাম হাতের তালু বিছানায় ঠেকিয়ে নিজের ভারসাম্য ঠিক করে নিল মেয়েটা। আস্তেধীরে নেত্রপল্লব ঝাপটে তাকাল ওই কঠিন বেড়াজাল বেষ্টিত পাষাণ মানবটার দিকে। ইহাম জহুরি নজরে তার পায়ের দিকেই তাকিয়ে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মায়রা দেখছে কেবল। ভেতরটা তার আবারও বেসামাল হয়ে গেল। ওই শক্ত হাতের তালুতে তার হাটুর নিচের মাংস স্তূপ। ইহাম তার পায়ের ক্যাফ মাসল টেনে নিজের উরুর উপর রাখল। সঙ্গেসঙ্গে কেমন তরঙ্গ স্রোত বয়ে গেল মায়রার হৃদয়ে। ভেতরটা ব্যাকুল হয়ে কেমন দিশেহারা হলো চোখের পলকে। অস্বস্তি তে নিশ্বাস ভারি হয়ে এলো মেয়েটার। চোখ বন্ধ করে দাঁত খিঁচে রইল সে। ইহাম দুই হাতের সাহায্যে মায়রার জিন্সটা উপরে তুলল। ক্যাফ মাসল এর আগ অবধি এসে ঠেকাতেই মায়রার ধবধবে সাদা পা ফুটে উঠল। সূক্ষ্ম নজরে ইহাম সবটা দেখল। দুজনের চোখাচোখি হবার আগেই মায়রা চেঁচিয়ে উঠল,

“একদম আমার পায়ে হাত দিবেন না অসভ্য বদ ক্যাপ্টেন। নয়তো খু’ন করে ফেলব আমি আপনায়। আপনাকে বলিনি আমার সাহায্য করতে। দূরে সরেন। যান এবার।”
তেজ দেখিয়ে মেয়েটা আবারও নিজের পা টেনে আনতে চাইল ইহামের কোল থেকে। তবে দুঃখের বিষয় হলো সেটা পারল না সে। ইহাম অবিচল অনড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে পায়ের ক্যাফ মাসল চেঁপে রেখেছে। মায়রা তাকালো তার দিক। তীক্ষ্ণ চোখের ওই শীতল হাড় কাঁপানো চাউনি তাকে দিশেহারা করে তুলল। গলা শুকিয়ে আসল ক্রমশ। তাকানোর সাহস শক্তি কোনোটা পাচ্ছে না নিজের মাঝে তবুও বেহলাজের মতো তাকিয়ে রইল কেবল। ওই চাউনি বড্ড অপরিচিত অস্বস্তিকর। ওই চোখের অতল দৃষ্টিতে যেন লুকিয়ে আছে কিছু ছন্দছাড়া এলোমেলো বাক্য। তার হদিস পাওয়া যেন বড় দুষ্কর। মায়রা দিকবেদিক শূন্য করো কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের ন্যায় তাকিয়ে রয়েছে ওই গভীর আধুত নয়ন পানে। কেমন হীম শীতল এক কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে হাতুড়ির মতো বারি খেলো তখনি।

“সাহায্য নিতে চাও না? তো তখন কোলে উঠলে কেন? এতটা রাস্তা যখন কষ্ট করে কোলে নিয়ে এলাম তখন বললে না কেন তোমায় ফেলে দিতে ওখানেই?”
‘কিসের মাঝে কি? পান্তাভাতে ঘী।’ ব্যাপারটা যেন এমন হয়ে গিয়েছে। হতবিহ্বলে মেয়েটা মিনিট সময় হা করে তাকিয়ে ছিল। কথার মানে না আন্তঃস্পটে ভাসতেই চিবুক দৃঢ় করল মেয়েটা। বিস্মিত ভাব কাটিয়ে তড়তড় করে বলল,
“কি বললেন? আপনি আমায় খুটা দিচ্ছেন? আমি কি আপনায় বলেছিলাম আমায় কোলে নিতে? নাকি আপনার ঘাড়ে চেঁপে বসেছিলাম কোলে উঠতে? সেঁধেপড়ে কোলে তুলতে গিয়েছিলেন কেন? এখন আবার কুটনি মহিলাদের মতো খুটা দেওয়া শুরু করেছেন।”
আশ্চর্যজনক ভাবে হলেও মায়রার এই কথা বেশি প্রভাব ফেলছে না ইহামের মাঝে। বরং তার চোখ মুখ বচন ভঙ্গিমা ও চোখের তেজ তাকে হাসাচ্ছে। স্বভাবের বাহিরে হাসিটা প্রকাশ্যে না এনে কেমন সংগোপনে তলিয়ে নিল। তাই শান্ত কন্ঠেই বলল,

“বারণও তো করোনি।”
“আপনি নিবেন কেন একজনের অনুমতি ছাড়া তাকে কোলে? কোন অধিকারে আপনি আমায় কোলে নিবেন? তখন দরকার ছিল দুই হাতে আপনার গলাটা চেঁপে ধরার। ধড়িবাজ একটা।”
ঠিক তখন দরজায় এসে উপস্থিত হয়েছে ইবরাহিম। তাদের এমন রূপে খোলা দরজার সামনে এসে বেশ অপ্রস্তুতই হলো সে। খানিক কেঁশে নিজের অবস্থা জানান দিল শ্যামলা বর্ণের সুপুরুষটা। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে দুজনই দরজার দিকে তাকাল। বিব্রত হয়ে মায়রা চট করে দৃষ্টি নত করল। মায়রার পা টা নিজের ক্রোর থেকে সরিয়ে আস্তে করে বিছানার উপর রাখল ইহাম। বসা থেকে উঠে এগিয়ে গেল দরজার কাছে। সটান করে সিনিয়রের প্রতি ফর্মালিটি জানিয়ে ইবরাহিম তাকাল ঘরের দিকে। ইতস্তত বোধে গুটিয়ে থাকা মায়রা জিন্স টা ক্যাফ মাসলের গণ্ডি থেকে সরাতে পারছে না বিধায় আরো বিরক্ত হচ্ছে। ইবরাহিম কে নীরব দেখে ইহাম ভ্রু সংকুচিত করল। ঘাড় খানিক কাত করে একটি নজর পিছনে তাকাল। ইবরাহিমের নজর মায়রার ফর্শা পায়ের উপর বিষয়টা ধরতেই কেমন ফুঁসে উঠল সে। অভ্যন্তর বুঝি জ্বলল। যদিও জানে ইবরাহিম সে ধরনের ছেলেই না তবুও সে তোপ বাড়ল তার। কেমন ধমকের সুরে বেশ গতিশীল ভাবে বলল,

“ইবরাহিম নিচ থেকে কয়েক টুকরো আইস কিউব নিয়ে আসো। রাইট নাউ।”
দিন দুনিয়া ভুলে ইবরাহিম চোখ ফেরালো। পিছন ঘুরে চলে যেতেই জোর লাগিয়েই দরজা বন্ধ করল ইহাম। দুপদাপ পায়ে এগিয়ে গেল ঘরে থাকা মাঝারি আকারে একটা ওয়ারড্রবের দিকে। কপাট খুলে কিছু একটা নাড়াচাড়া করছিল সে। কপট ক্রোধের সাথেই সে হাতে একটা বক্স নিয়ে এগিয়ে গেল বিছানার কাছে। তাকে এগিয়ে আসতে দেখে মায়রা সংবিৎ ফিরিয়ে বলল,
“দেখুন আপনি আম..”
“চুপপ। আর কোনো আওয়াজ বের হলে টেনে গালের নিচে একটা দিব। চুপচাপ বসে থাকো।”
মায়রা নাক ফুলালো। ওই শক্ত ধমকে ভেতর থেকে নরম হলেও বাহিরে তা প্রকাশ করল না। মানুষটা কি তাকে নিজের বশ্যত্ব বানাতে চায়নি? এতই সহজ? যে একটু ধমকেই নেতিয়ে যেতে হবে?

“আমি শুনব কেন আপনার কথা?”
ইহাম তাকাল ওদিক। পরক্ষণে দৃষ্টি নামিয়ে বক্স খুলে ঘাটাঘাটি করতে আরম্ভ করল। কাজ করতে করতেই বলল,
“সেটা তুমি জানো।”
“জানি না শুনান।”
“না জানলে আর জানতে হবে না। আমাকে আমার কাজ করতে দাও।”
“জানেন না না জানা জিনিসের প্রতি নিষিদ্ধ বারণের প্রতি মানুষের ঝোঁক থাকে প্রবল?”
ইহাম সেভাবে বসেই কেবল চোখ তুলে তাকাল মায়রার দিকে। বাঁকা হাসলও এক চিমটি। দর্প নিয়েই বলল,
“ওই নিষিদ্ধ বারণের মাঝে মরণ যন্ত্রণাও থাকে মেয়ে। কখনো কখনো পুড়তে পুড়তে ভেতরটা কয়লার খণ্ড বানিয়ে দেয়। হঠাৎ বুদ্ধিমানের মতো কথা বলছো কেন? তুমি তো একটা গাধা।”

মায়রা শুনল সবটা। কয়েক পল তাকিয়ে থেকে মাথা ঘুরালো। পরক্ষণেই আবার তাকিয়ে ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলল তুচ্ছ হাসি। যেন হাসির ভেতর লুকিয়ে রেখেছে তার ভেতরকার অবহেলা পাবার যন্ত্রণাটা। অদ্ভুত কন্ঠ তুলে বলেই ফেলল,
“তাই তো আমাকে আপনার পছন্দ না। আর না আমাকে নিজের কেউ বলে মানেন তবে এত শুশ্রূষার কোনো মানে আদৌও নেই।”
ইহাম স্থির চাউনিতে তাকিয়ে আছে। মায়রার গলাটা কেমন অদ্ভুত শুনাল। মেয়েটা ভার কোনো কথা বলেছে কি? নিজের কথার পেছনে অব্যক্ত কোনো কিছু লুকিয়ে কি রাখেনি সে? কথার ভেতরেই কি কোনো বার্তা ঠেসে দিয়েছে? ইহাম নিজেও যেন খানিক ইতস্তত বোধ করল।

“আপনি তো আবার আমার মতো অভদ্র নন। সভ্য দায়িত্ববান মানুষ আপনি। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও বোধহয় আপনি এমনটাই করতে। সেটা আমি জানি।”
ইহাম একটা ব্যথানাশক স্প্রে বের করল। মায়রার পা টা আবার নিজের কোলে টেনে এনে ঢেব করতেই শব্দ তুলে পায়ে বাষ্পের মতো ছুঁয়ে গেল। মায়রা চোখ জড়ালো। পা টা যেন হীম হয়ে অবশ লাগছে। ইহাম গম্ভীর মুখেই বক্স থেকে একটা ক্রেপ ব্যান্ডেজ হাতে তুলে। কোলের উপর রাখা মায়রার পায়ের নিচ থেকে ৮ ফিগার প্যাটার্নে পেঁচিয়ে নিল খানিক শক্ত ভাবেই। গোড়ালি থেকে আস্তেআস্তে সেটা উপরে পেঁচাতে পেঁচাতে ইহাম শান্ত কন্ঠেই জবাব দিল,
“তুমি আসলেই গণ্ড মার্কা বোকা মায়রা। এমনি তোমায় গাধা বলি না। হয়তো..”

“আমি তো জানি আমি গাধা। আর আপনি আমার সাথে থাকবেনও না তাও জানা। আমিও আপনার সাথে থাকতে পারব না এটা তিন মাসেই বুঝা গিয়েছে। তাই ভালো হয় এই নাম মাত্র সম্পর্কটা কে শেষ করেই দেওয়া।”
মায়রা যেন কঠোর ভাবে সাফসাফ জানিয়ে দিল এটা। ভুলক্রমেও প্রতিক্রিয়া দেখবার আশায় সে সেদিক চেয়ে নেই। দাঁত খিঁচে ইহাম ব্যান্ডেজ লাগানো শেষ হতেই পা টেনে মায়রাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। হকচকায় মেয়েটা। চাউনিতে লুকিয়ে রাখে তীব্র ব্যাকুলতা। লাল লাল চক্ষুর মাঝ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে লোকটার। সেই আগুনের তাপে জ্বলছে মায়রা নিজেও। তবুও সে শক্ত নির্বাক নির্লিপ্ত। ব্যাকুল দৃষ্টিতে দেখছে কেবল মানুষটার কোপ। ইহাম দাঁতে দাঁত পিষে হিসহিস করে বলল,

“কি মনে করো কি তুমি নিজেকে মায়রা?”
“ছাড়ুন। ব্যথা পাচ্ছি। আমি নিজেকে কিছুই মনে করি না মিস্টার ফাহাদ ইহাম চৌধুরী।”
ইহাম চট করে চোখ বন্ধ করল। হুট করে রাগ উঠে যাওয়া আজকাল তার বাজে স্বভাবে দাঁড়িয়েছে। নিজের ঠিক করার প্রয়াস করে সে চোখ মেলে তাকাল। ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগার মতো আচমকা বলে বসল,
“তুমি আমার ধারনার থেকেও আরো বেশি পর্যায়ের বোকা মায়রা। যাকে বলে নিরেট মুর্থ। নয়তো গভীর ভাবে খেয়াল করলে অনেক কিছু বুঝতে পারতে তুমি।”

উথালপাতাল ঢেউ এ আছড়ে পড়ছে বুকের ভেতর। তার দাপটে নাকি ওই কথার জোরে ভেতরটা ছটফট করে উঠল মায়রা জানে না। এক দৃষ্টে মন্ত্রপূতের মতো তাকিয়ে রয়েছে সে। কি বলল মানুষটা? এর মানে কি? আর তার কিসের দায় পড়েছে নিজ থেকে এত গভীর করে বুঝে নেবার? বুঝানোর মতো কি লোকটা আদৌও এখন পর্যন্ত কিছু করেছে? কক্ষনো না। কই তার তো মনে পড়ছে না। মায়রা চোখ ফিরিয়ে নিল। দাঁত কামড়ে বলল,
“অবান্তর অবাস্তব কথার কোনো মানে নেই এই পৃথিবীতে।”
ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। বাহির থেকে শিফু ডাকছে। দুজনই সেদিক তাকায়। ইহাম হাত বাড়িয়ে মায়রার পাশ থেকে ছোট কুশন টা তুলে আনল। সেটা ওর পায়ের কাছে রেখে উঠে দাঁড়াল সন্তপর্ণে।

“ভাবি এখন কেমন আছে তোমার পা?”
“ঠিক আছি শিফু। তুমি কি একটু ভাইয়া কে ডেকে দিতে পারবে?”
“আমি আসার সময় তো ওদের কাউকে দেখলাম না।”
ইবরাহিম এবার এসে দরজায় টোকা দিল।
“স্যার আসব?”
ইহাম তাকাল। ইশারায় আসতে বললে ইবরাহিম এগিয়ে এলো বাটি ভর্তি বরফ টুকরো নিয়ে। সেন্টার টেবিলে বাটিটা রেখে বলল,

“আরো কিছু লাগবে কি স্যার?”
“ইবরাহিম তুমি ম্যানেজার কে বলে আমার পাশের রুমের চাবিটা নিয়ে শিফু কে দাও। আর আমি একটু পর এসে দেখছি সবটা। শিফু” ইহামের ডাকে শিফুও তাকাল তার দিকে। “ওর সাথে যা চাবিটা নিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আগে।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
ইবরাহিম আর শিফু চলে যেতেই ইহাম আইসের বাটি নিয়ে বিছানায় বসল। দুটো আইস কিউব ব্যান্ডেজের উপর গোড়ালিতে চেঁপে ধরল। তারপর মায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পুরো বাটির আইস কিউব গুলি হাত দিয়ে পায়ে চেঁপে রাখবে। আমি এসে যেন দেখি তোমার কাজ কমপ্লিট। এটা তোমার শাস্তি ধরে নাও।”

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ১২

মায়রা তীক্ষ্ণ চোখে কপাল কুঁচকে তাকাল তার দিকে। বিতৃষ্ণা কন্ঠে বলল,
“কিসের শাস্তি? আর আপনি আমাকে শাস্তি দেবার কে? মানবই কেন আমি আপনার শাস্তি?”
“তোমার বেয়াদবি ঠিক করার মাষ্টার, জম, শত্রু এমনকি নিজের স্বামী যা ইচ্ছা ভাবতে পারো তুমি। নাউ দ্যাট ইউ লাইক ইয়্যুর চয়েজ ইজ হোয়াট ইউ ওয়েন্ট টু থিংক এবাউট।”

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ১৪