মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২১
সাদিয়া
ক্যাম্পে খুব ভোরে উঠার অভ্যাস ইহামের। যেহেতু সে স্পেশাল ফোর্স ইউনিটের দায়িত্বে সেক্ষেত্রে অন্য অফিসারদের তুলনায় তাদের বেশ শৃঙ্খলা আর কঠিন নিয়মে থাকতে হয়। ভোর পাঁচটায় উঠে প্রাতঃকালের ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে শেভ টেভ করে ওয়ার্কআউটের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রতিদিন ৫-১০ কিলোমিটার দৌড়, ক্যালিসথেনিক্স (পুশ আপ, সিট আপ, পুল আপ) ভারোত্তোলন ইত্যাদির পর ঘন্টা সময় লাগিয়ে নিজেদের মাঝে অস্ত্র চালানোর অনুশীলন করে। যেমন, স্নাইপিং, ক্লোজ কমব্যাট শুটিং, CQB ট্রেনিং ইত্যাদি। তারপরই ব্রেকফাস্টের সময় আসে।
খুব কড়াকড়ি নিয়মে আবদ্ধ থেকেও আজ ঘুম থেকে উঠতে আটটা বাজিয়ে ফেলেছে। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় তাকিয়ে দেখতে পায় মায়রা এখনো ঘুমে বিভোর কাঁদা। ভিজে চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে একদম বিছানার কাছে যায়।তার কি ভাগ্য অন্যান্য দম্পতিদের মাঝে বিয়ের পর বউ ভিজে চুল এলে তার পানি দিয়ে স্বামীর ঘুম ভাঙ্গায়। আর এদিকে তার কপালে এমন একটা মাথা মোটা দিয়েছেন আল্লাহ যে এখনো গাঁধার মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাস ঝেড়ে খানিক ঝুঁকে গেল ইহাম। মায়রার গালে মৃদু চাঁপ দিতেই ঠোঁট জোড়া আলগা হয়ে গোল হলো। ওই শুকনো লালভ ঠোঁট মুহূর্তে গাঢ় ভাবে আবিষ্ট করে নিল তাকে। নিজের অদম্য স্পৃহা কে দমিয়ে না রেখে বরং সায় জানিয়ে টুক করেই সেই গোল গোল ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। ঠান্ডা হাতের স্পর্শে পাতলা হয়ে আসা ঘুমটা এবার শীতল ঠোঁটের নিগড়ানো অনুভূতি তে কেটে গেল পুরোটা। চোখ খুলে বুঝল এই মাত্র লোকটা তার ঠোঁটে চুমু দিয়ে আবার কেমন নিলজ্জের মতো তাকিয়ে আছে। ধড়ফড় করে মায়রা উঠতে চাইতে গিয়েও পারল না। ইহাম একই ভাবে তার দুই পাশে হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে আছে তার উপর। লোকটা কেমন ঘোর লাগা ফিসফিস কন্ঠে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কত সৌভাগ্য নিয়ে এসেছো দেখেছো? কোথায় তোমার আমার জায়গায় থাকার কথা ছিল। উল্টো গাধার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো।”
“কিভাবে উঠব সরুন আমার থেকে।”
“আমি কি তোমাকে ঝাপটে ধরে রেখেছি যে উঠতে পারছো না।”
এমনিতেই কাল রাতের ঘটনায় মায়রার ভীষণ লজ্জা করছে মানুষটার সামনাসামনি হতে তার উপর সে এমন করে চিপকে আছে দেখো। মায়রা মুখ ঘুরিয়ে নিল। তা দেখে ইহাম এক হাত দিয়ে আবারও আলতো করে চেঁপে ধরল মায়রার গাল। নিজের দিকে ফিরিয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,
“রাতে না খুব সোহাগি হয়ে গিয়েছিলে তবে এখন মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কেন? সারাক্ষণ জ্বালানোর পায়তারা করো নাকি?”
কপাল জড়িয়ে এলো মায়রার। সে ইহাম কে সরিয়ে নিজেও উঠে বসল। ব্যথায় শরীর জর্জরিত। বিছানা থেকে গা টা নামতেই চাইছে না। মুখে আবারও ঘুমের রেশটা ফুটে উঠল। তাকে ঝিমুতে দেখে ইহাম ভিজে টাওয়ালটা ছুড়ে দিল।
“কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের করার এই একটা সমস্যা। সবকিছু বলে বলে হাতে কলমে ধরিয়ে দিয়ে শিখিয়ে দিতে হয়। কেন বাপ, তোমরা কি একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি বুঝে নিতে পারো না? সব কিছু গিলিয়ে দিতে হবে কেন?”
“সবসময় খালি ছোট কম বয়সী কম বয়সী করবেন না তো। বিরক্ত লাগে।”
আয়নার সামনে গিয়ে ভিজে চুল ঠিক করতে করতেই প্রশ্ন করল ইহাম,
“তুমি বলতে চাইছো বেশ বড় হয়ে গিয়েছো তুমি? অবশ্য হবে নাই বা কেন কাল রাতের সম্পূর্ণ দায়টা তো তোমারই ছিল। তাই না?”
রাগে লজ্জায় জ্বলে উঠল মায়রা। এই লোকটা কি ঠিকঠাক ভাবে কথা বলতে পারে না? এতটা সোজা সহজ ভাবে কেন সবসময় বলতে হবে কথা সরাসরি? এই মানুষটা কি একটুও তার রিয়েকশনের কথাটা চিন্তা করে কথা বলতে পারে না? যখনি যা বলবে একদম সোজাসুজি। ফুঁসে উঠে মায়রা বলল,
“আপনি একটা অসভ্য লোক। একটা যা তা খচ্চর মানুষ।”
আবারও এগিয়ে এলো ইহাম। তার আসা কপাল কুঁচকে দিয়েছে মায়রার। ইহাম শান্ত ধীর কন্ঠে বলল,
“অসভ্য বলছো কোন এঙ্গেল থেকে মায়রা? ভুলে যেও না কাল রাতে কিন্তু আমাকে তুমি নিজেই নিজের দিকে উস্কে দিয়েছো। এখন আবার অসভ্য বললে তা আমি মেনে নিব না কিন্তু।”
রাগে মায়রা দাঁত কটমট করে নিল। কি বলবে তা খুঁজার চেষ্টাও করল না। রাতের বিষয় নিয়ে এমনিতেই ইতস্তত বোধ করছে সে। তারউপর এই লোকের এমন সোজাসুজি কথার ধরন তাকে যেন পিষে দিচ্ছে। মায়রার চোখ মুখ বিরক্তি ভাব দেখে ঠোঁট টিপে হাসল।
“এখন যেমন গোসলের সময় পার হচ্ছে।” তীক্ষ্ণ করে চাইল ইহাম। আরেক পা এগিয়ে দিল “সেটাও কি আমাকে বলতে হবে? এটা বুঝি জানো না পিচ্চি মেয়ে?”
“জানি” বলে চেঁচিয়ে উঠল মায়রা। টাওয়ালটা বিছানায় ছুড়ে “সারাক্ষণ শুধু বেফাঁস ত্যাড়াব্যাকা কথা। ঢেঁড়সের হাড্ডি।”
“কি বিরবির করছো তুমি।”
“আপনার মাথা। জায়গা দিন সরুন এখান থেকে।”
মায়রা নড়তে গিয়ে অস্ফুট স্বরে ব্যথাতুর শব্দ করতেই ইহাম ঠোঁট টিপে হেসে উঠল। পরক্ষণে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে ফিসফিস আওয়াজ তুলল।
“চিন্তা করো না মেয়ে। এটা স্বাভাবিক। ছোট কি না। আমার কিন্তু এতে দোষ নেই। তুমিই বলেছো আমার দূরত্ব তোমায় কষ্ট দেয়।”
রাগে প্রতিহিংসায় আগুন চোখে তাকালেও লজ্জায় মায়রার গাল লাল হয়ে গেল। নীরবেই বুঝি লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে নিজের রাগ প্রকাশ করছে। তার মুখশ্রী দেখে ইহাম ঠোঁট কামড়ে হাসল। আওয়াজ আরো ক্ষীণ করে বলল,
“তা মাথা মোটা মেয়ে আমাকে যে সেদিন কাপুরুষ বলেছিলে এখনো সেই ধারণা মনের কোথাও কি উঁকি দেয়?”
এবার আর সহ্য করতে পারে না মায়রা। প্রচন্ড ক্ষোভে হিসহিস করতে করতে ইহামের বুক বরাবর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল তাকে। তীক্ষ্ণ গরম চোখের ভাষায় ইহাম কে শাসিয়ে বলল,
“আপনি একটা অসভ্য খাডাস লোক। আপনার মুখ দিয়ে সবসময় তিক্ত বেফাঁস কথা বের হয়। যা একদম শরীর জ্বালিয়ে দেয়। আপনার মুখে দয়া করে টেপকস লাগিয়ে রাখবেন।”
মায়রা মুখ ভঙ্গি অসন্তোষ রেখে বিছানা ছাড়ল। শরীরের ব্যথার কথা ভুলে গিয়েছে লোকটার কথায়। তবুও গতর সূক্ষ্ম ভাবে অনুভব করে তা।
“তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি বাহির থেকে পেইন কিলার নিয়ে আসছি। তবুও প্লিজ ঘরের বাহিরে গিয়ে ন্যাকামি করে সবার সামনে আর ইজ্জতের দফারফা করো না। চিন্তা করতে হবে না এটস নরমাল।”
রাগান্বিত হয়ে মায়রা একপলক তাকিয়েছে শুধু।হনহন করে ছুটতে গিয়েও পীড়ার পিছুটানে ধীর পায়ে কদম বাড়ালো। তখন পিছন থেকেই ইহাম অমলিন কন্ঠে বলল,
“এক রাতের ডোজেই কি জ্বর বাঁধিয়ে শরীর কাহিল করে ফেলেছো মায়রা?”
“দূর অসহ্যকর” বলে চেঁচিয়ে মায়রা হাতে থাকা ভিজে টাওয়াল টা ছুড়ে দিল ইহামের দিকে। অতঃপর সকল বিষ ব্যথা পায়ে মাড়িয়ে এক প্রকার ছুটে সোজা ওয়াশরুমে গেল। ইহাম তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে ঠোঁট চেঁপে হাসতে লাগল।
সকালের নাস্তা সেরে ইহাম নিজ হাতেই মায়রা কে পেইন কিলার খায়িয়ে দিয়েছে। মায়রাও কোনো প্রকার তর্ক কিংবা অবাধ্যতা না দেখিয়ে খেয়ে নিয়েছে। ঔষধ খায়িয়ে দিয়ে ইহাম কেবল হিসহিস কন্ঠে বলেছিল,
“ডোন্ট ওরি, ফাহাদ ইহাম চৌধুরীর যন্ত্রণা বর্তমানে খুব বেশি সহ্য করতে হবে না তোমার এটাই স্বস্তির। যেহেতু আমি থাকছি না সেক্ষেত্রে ব্যথা গুলিও দীর্ঘস্থায়ী হবে না এটাই তোমার জন্যে ঢের নয়কি আমার পিচ্ছি মিসেস চৌধুরী?”
মায়রা তখন আর উত্তর দেয়নি লজ্জায় রঙ্গিম হয়ে ছুটে গিয়েছিল। সেই কথা মনে হতেই ইহাম এক গালে হাসল। সোফায় এক পা তুলে আয়েশ করে বসে আছে সে। ফোনটা হাতে তুলে দরকারি কিছু একটা করছিল। এমন সময় তুহিন স্বস্তি হীন ভাবে এসে তার কাছে দাঁড়ায়। কেমন ইতস্তত বোধ করেই লঘু আওয়াজ তুলে।
“ইহাম ভাই” তুহিন থামে। ভেতরে একটা জড়তা কাছ করছে তার। “আসলে আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাইছিলাম। যদি একটু সময় দিতেন।”
মাথা নুয়ায় তুহিন। ইহাম স্থির বসে থেকে সূক্ষ্ম নজরে দেখে নেয় তুহিন কে। সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তুহিন কোন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলতে চায়। সে নিজেও অবশ্য তার সাথে একটু কথা বলতে চেয়েছিল একান্ত। সব মিলিয়েই ঢাকায় আসার কারণ তার। সৌজন্য বোধে ইহাম খানিক হাসল। ফোনটা প্যান্টের প্যাকেটে রাখতে রাখতে উঠে দাঁড়াল। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“চলো বাগানের দিকটাই যাই।”
তুহিন হাসার চেষ্টা করল। তবে খুব বেশি চওড়া হলো না সেটা। ভেতরে তার অশান্তি। চিন্তা শুধু শিফুয়া চৌধুরী। মেয়েটার এড়িয়ে যাওয়া যেন তাকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে।
বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা বাগান আছে। মাঝখান দিয়ে সরু কংক্রিটের রাস্তা। দুই পাশে বাগান। ডান পাশে ফাতেমা বেগম সবজির বাগান করেছেন আর বা পাশে মায়রা বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ লাগিয়েছে। সেই পাশেই একটা বসার ব্যবস্থা করা আছে। দুজন নিঃশব্দে গিয়ে বসল সেখানে। অনেকক্ষণ নীরবতা চলল দুজনের মাঝে। আগ বাড়িয়ে কেউ কিছু বলল না। ইতস্তত বোধ করে প্রয়োজনের তাগিদে তুহিনই আগ বাড়িয়ে কথা শুরু করল। জড়তা নিয়ে থেমে থেমে বলল,
“আ আসলে ইহাম ভাই আমি এক… ”
শান্ত ভঙ্গিতে ইহাম হাতের ইশারায় তুহিন কে থামিয়ে দিল। মুখে একটু হাসি তুলে কোমল চাউনিতে তাকাল। তুহিনও কথায় দাঁড়ি টানতে না পারলেও সম্মানার্থে চুপ করল। ইহাম এক টুকরো হেসে হাত বাড়িয়ে কাঁধ স্পর্শ করল তার। মৃদু আঁচে দুটি চাপড় দিয়ে বলল,
“তুহিন আমি জানি তুমি খুব ভালো ছেলে। তোমায় কিছু কথা বলতে চাই। আশা করি মনোযোগ দিয়ে শুনবে।”
তুহিন জানে না ইহাম কি বলবে। তবুও কিছু আঁচ করতে পেরে মাথা নুয়িয়ে আনল।
“দেখো তুহিন তুমি বুঝবান। তোমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে ভালো মন্দ বুঝার। ঠিক বেঠিক সব কিছুর ধারনা তোমার আছে। শিফুর মতো তোমার এটা আবেগের বয়স নেই। তুমি হয়তো সব বুঝে শুনেই শিফুকে পছন্দ করেছো। সম্পর্কের ক্ষেত্রে বয়স অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। শিফুর বয়সটা আবেগের। ও এখনো ছোট। সবে ১৬ ওর। তুমি যেই বিষয়টা সবার সামনে উপস্থাপন করেছো সেটা কি যৌক্তিক কিংবা উচিৎ তুমিই বলো?”
“কিন্তু ভাইয়া আমিও তো কিছু বছরের জন্যে বিদেশ চলে যাবো। ততদিন শিফু ওর মতো থাক। আমি শুধু চাইছিলাম কাবিন টা করে রাখতে।”
“একটু প্র্যাকটিক্যালি বুঝার চেষ্টা করো তুহিন। তুমি যেটা বলছো তুমি নিজেও জানো সেটা সম্ভব নয়। হয়তো মনের চাওয়াটা গাঢ় ভাবে জোর দিয়ে প্রকাশ করতে চাইছো তবে আমি বলব সেটা একদমই ভালো হবে না তোমাদের। দেখো তুমি এখন বিদেশ যাবে। ওখানে বিলাসী জীবন আস্তেআস্তে তোমায় আকৃষ্ট করবে। হতেই পারে তুমি ওখানে থাকতে থাকতে তোমার আর শিফুকে পছন্দ হলো না। তুমি হয়তো ওর থেকে বেটার কাউকে পছন্দ করলে। ওকে আর ভালো লাগল না। তখন কাগজ কলমের সম্পর্কটা তোমায় প্যারা দিবে। ঝামেলা বাঁধবে। তুমি নিজেও অশান্তিতে থাকবে।”
তুহিন নরম গলায় জবাব দিল,
“আমি শিফুকে পছন্দ করি ভাইয়া। আমার ভালোবাসা টা ওরকম নয় যা আপনি ভাবছেন। ওকে পাওয়ার পর ছেড়ে দেবার কথা উঠবে কেন?”
ইহাম চেয়ারে শান্ত আয়েশ ভাবে বসল। কোমল কন্ঠে অদ্ভুত করে বলল, “ভালোবাসা বলতে কিছু হয় না তুহিন। এটা শুধু ভালো লাগা, মায়ার মারপ্যাঁচ। সময়ের সাথে সাথে তা কেটেও যেতে পারে। পুরুষ মানুষের মন অনেক সময়ই পরিবর্তন হয় এটা মিথ্যে নয়। শিফু ছোট। ওর স্কুল থেকে কলেজ ভার্সিটি পের হবে। তখন অনেক মানুষের সাথেই তার পরিচয় হবে। তখন তার মনেই হতে পারে তোমার থেকেও ভালো কাউকে সে ডিজার্ভ করে। তখন? কি করবে সেটার? সংসার কি তখন শান্তিপূর্ণ হবে কিংবা তোমরা দুজনই ভালো থাকবে? তুমি হয়তো আবেগে চিন্তা করছো কিন্তু আমি বাস্তবিক অর্থে বলছি।
একটু চিন্তা করো বিষয়টা আমার মতো করে।” একটু থামল সে। সূক্ষ্ম নজরে তাকাল নীরব তুহিনের দিকে। “দেখো আমি বলতে চাইছি কাবিনের কোনো দরকার নেই এই মুহূর্তে। তুমি মালেয়সিয়া যাও শিফুও নিজের মতো করে বড় হোক। ভালো মন্দটা বুঝতে শিখুক। ফিরে এসে তোমরা যদি এটাই চাও তবে আমি কিংবা বাবা কেউ অমত করব না। নিঃসন্দেহে তোমার হাতে শিফুকে তুলে দিবে। কিন্তু এই মুহূর্তেই না। আমি শুধু চাইছি এখন কাগজে কলমে বাঁধা না হয়ে স্বাধীন ভাবেই নিজেদের সময় কাটাও। দুজনই এগিয়ে যাও। এরপর দুজন দুজনকে চাইলে আমরা কেউ মাঝ পথে আসব না। তুমি বুঝতে পারছো তো আমি কি বলছি?”
তুহিন মাথা নিচু করে আছে। ঠোঁটে একটু খানি তুচ্ছ হাসি ফুটে উঠল অনাবিল ভাবে। সে ধীর গতিতে মাথা উপরে তুলল। ঠোঁটে ওই হাসিটুক রেখেই জবাব দিল,
“বড় ভাই হিসেবে আপনাকে সম্মান করে কথাটা রাখব আমি। কষ্ট হলেও রাখব চিন্তা করবেন না। হয়তো আপনি আমাদের ভালোর জন্যেই বলছেন এমনটা। তার আগে আপনি একজন ভাই হিসেবে নিজের দিকটা বেশি দেখলেন। যাইহোক, শুধু বলব শিফুকে আমার সাথে একেবারে যোগাযোগ ছিন্ন করতে বলবেন না। হঠাৎ হাঠাত যদি একটু কথা বলি সেটা বারণ করবেন না প্লিজ। ওকে বলে দিবেন যেন আমার সাথে মাঝেমাঝে হলেও কথা বলে। অন্তত স্বস্তি পাবো একটু।”
ইহামকে রেখেই তুহিন উঠে গেল। বুকের চাঁপা যন্ত্রণা টা চেঁপে রেখেই হনহন করে গেইটের দিকে এগিয়ে গেল। আপাদত বাসায় থাকতে একটুও ভালো লাগবে না তার। একটু মুক্ত হাওয়ায় যাওয়া প্রয়োজন। তবে তাকে বেশ ভাবাচ্ছে ইহামের কিছু কথা। একজন বড় ভাই হিসেবে ইহাম যেমন নিজের দিকটা বেশি দেখল মায়রার বড় ভাই হিসেবেও কি তার এই দিকটা একটু বিবেচনা করার দরকার নয়কি? সে কিভাবে বলতে পারল ভালোবাসা বলে দুনিয়ায় কিছু হয় না? ইহাম ভাই কি মায়রা কে তবে ভালোবাসে না? পুরুষ মানুষ পরিবর্তনও হতে পারে কথাটা দিয়ে কি বুঝাতে চাইল সে? কখনো কোনো পরিস্থিতিতে এসে সেও কি পরিবর্তন হয়ে যাবে নাকি?
কি দিক বিবেচনা করে কথাটা বলল? আচ্ছা ভালো পাত্র হাত ছাড়া হয়ে যাবে ভেবে তার আব্বা কি কোনো ভুল করে ফেলেছেন?
আকস্মিক ফোনের টোনটায় তার ধ্যান ভাঙ্গে। এক মনে সে তুহিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। তবুও সে এই বিষয়ে একটু কঠোরতাও দেখাতে বাধ্যই হয়েছে। শুরুর আবেগ কষ্টের কথা চিন্তা করে দুটি জীবনের অদূর ভবিষ্যতের অশান্তি কিংবা ধ্বংস সে হতে দিতে চায় না। তুহিনের জন্যে তার একটু খারাপ লাগলেও এই বিষয়ে সে দৃঢ়। যাক না সময় ক্ষতি কি এতে? বিদেশ থেকে ফিরে এসেও যদি তুহিন এটাই চায় তবে সে কোনোদিন বাঁধা দিবে না। তবে এখনই কোনো ধরাবাঁধা নিয়মে ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে চায় না সে। সব দিক থেকেও তুহিন একটা ভালো ভদ্র ছেলে। ফোঁস করে দম ছেড়ে দিয়ে ইহাম কল রিসিভ করল।
“আসসালামু আলাইকুম মা।”
“ওলাইকুম আসসালাম আব্বা। তুই কি আজ আসবি না? কাল দিন বাদেই তো ফিরে যাবি আবার।”
মায়ের কথায় অভিমানের সুর। খানিক ঠোঁট প্রসারিত করল সে। স্বাভাবিক গলায় বলল ইহাম,
“হাঁসের গোশত থাকলে রান্না করে রেখো মা। দুপুরের আগেই আসছি।”
“বাবা শুন আমার কথাটা।”
মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২০
“কি বলবে? ঘরে কিছু লাগবে? কিছু প্রয়োজন?”
“না বাবা। বলছি তুই তো দুদিন থাকবিই। যদি মায়রা আম্মা কে নিয়ে আসতি। তোর বাবাও খুব করে বলছিল। আমি না হয় বেয়ান কে বলে দেই?”
“তার দরকার নেই মা। চিন্তা করো না দুপুরের আগেই ওকে নিয়ে ফিরছি। হাঁসের কষা মাংস টা তুমি তৈরি রাখো শুধু।”